কৃষ্ণচূড়ার রং লাল পর্ব ৪১+৪২

কৃষ্ণচূড়ার রং লাল-৪১.🎈
@হাফসা আলম
_____________________
খোলা জানালা দিয়ে হু হু করে ঢুকছে দক্ষিণের বাতাস।আকাশে মস্ত এক চাঁদ।সফেদ রাত দেখতে কতই না মায়াবী।কত মায়া দিয়ে বিধাতা তৈরি করেছে এই পৃথিবী।ছেড়ে যেতে কি কষ্টই না হয়।ছাড়ার নিয়মটা যদি না হতো?সামনের বাড়িটিতে একটি কদম গাছ আছে।সে গাছের ডালে বসেছে দুটি শালিক পাখি।মেয়ে পাখিটার গলার কাছে মুখ লুকিয়ে বসে আছে ছেলে পাখিটি।প্রেমের নেশায় ডুবো ভালোবাসা তাদের।চাঁদের সফেদ আলোর পর্দায় ভাসছে দু’জন।কত ভালোবাসায় মাখা তাদের নির্জন প্রেম।রাতের অন্ধকারের রূপ যেনো আরো বাড়িয়ে দিচ্ছে তারা।কিছু জিনিসের জন্মই হয় ভালোবাসার জন্য।প্রকৃতি ঠিক তেমনেই।কেউ আঘাত করলেও সে ভালোবাসা ছাড়া বিনিময় মূল্য দিতে পারে না।এদের দেখে ভালোবাসার নতুন সুঘ্রাণ পাচ্ছে প্রকৃতি,গাছ,পাতা,সবুজের সমারহ সাথে রিঝ।পাখি গুলো যেন শেখাতে চাইছে আমরাও বিতরণ করতে পারি ভালোবাসা।ছেলে পাখিটি মেয়ে পাখির আরো পাশ ঘেষে বসলো।মৃদূ ধাক্কায় মেয়ে শালিক পাখিটি নড়ে উঠলো।পাশ ফিরে তাকালো।ছেলে পাখিটি আগে থেকেই গভীর নয়ন ভরে দেখছিলো তাকে।আকাশের চাঁদের আলো এসে পড়ছিলো একদম তাদের উপরে।গাছের পাতার কালো ছাঁয়ার নিচে বসা এই পাখিদের সৌন্দর্য্যের বর্ণনা করা যাচ্ছে না।রিঝ পারছে না।যতো দেখছে ততো দেখতে ইচ্ছে করছে।রিঝ এই প্রথম এতো আগ্রহ প্রকাশ করে কিছু দেখছে।পিছন দেখে কেউ ধাক্কা দেয়।রিঝ চমকায়।চোখ ফিরে পাশে তাকায়।দেখে আনাস।খুবই বিরক্ত হয়।মুখটা কেমন যেনো গুটিয়ে নেয়।আগ্রহ মরে যায়।আনাসের হাতে কফির দুটো মগ।একটা রিঝের দিকে এগিয়ে দিয়ে বললো,’এটা তোর।’
রিঝ হাত বাড়িয়ে নিলো।কিন্তু বিরক্তি মুখ লেগে রইলো।সে পুনোরায় গাছের দিকে তাকায়।এ কি?পাখি গেলো কই??দূরে দৃষ্টি দৌড়ে দেখলো পাখি উড়ে চলেছে।দুজন পাশাপাশি।এতো সুন্দর ভারসাম্য রেখে উড়ছে যেন হাত ধরে হাঁটছে।কি আশ্চর্য প্রেমিক যুগল ছিলো!পাখিরাও প্রেমে পড়ে?ওদেরও হয় ভালোবাসা?বিয়ে হয়??কি সব ভাবছে সে।রিঝ দোলনায় বসলো।মানুষ কত প্রেম করে।রোমাঞ্চ করে।কত রোমান্টিক হাবভাব থাকে।তার ভাবি রুচিকাও তো অনেক রোমান্টিক।কেয়ারি।গল্পের আসরে বসলে কয়েক শতবার কল আসে।সারা দিনে না জানি কত ফোন করে?ভাবতেই অবাক হয় সে।চোখ যায় সামনের বাড়ির জানালায়।লাইট জ্বলছে।তুতুল ঘুমচ্ছে।সাদা পর্দা গুলো যখন বাতাসে উড়ে যাচ্ছে তখন এক পলকের জন্য দেখা মিলছে।কিছুক্ষণ অপেক্ষা,তারপর আবার উড়ে পর্দা।একপাশ হয়ে ঘুমচ্ছে।কোঁকড়া চুল মুখের উপরে।গালের একটা পাশ ঢেকে রেখেছে।গায়ে কাঁথা।কোলে পিকু।পিকু তুতুলের টেডি।টেডির নামও দেয় এই মেয়ে?তার বউটা কেমন বাচ্চা বাচ্চা!রিঝ নিচের ঠোঁট কামড়ে ধরে।হাসি পাচ্ছে তার।হঠাৎ কি যেনো মনে পড়ে।ভাবে না তার বউ আর বাচ্চা নেই।বাচ্চা হলে আজ অনেক কাঁদতো।সেই আগের মতো ভ্যাঁ ভ্যাঁ করে কেঁদে বুক ভাসাতো।আজ এমন কিছুই হলো না।এতো বাজে কথা শুনার পরেও কাঁদলো না।বড় হয়ে গেছে!রিঝ খেয়াল করছে সে খুঁশি না।তার আফসোস হচ্ছে।কেনো বড় হলো?ছোটই তো ভালো ছিলো।যখন তখন বকা দিতো।মেয়েটা কোমড় বেঁধে ঝগড়া করতো।কি দারুন অনুভুতি সেটা ছিলো।সে ঠিক করে।তুতুলকে বলবে,’তুমি বাচ্চাই থেকো সারাটা জীবন।সবার কাছে না।শুধু আমার কাছে।’
আরো ঠিক করে তুতুলকে সে প্রপোজ করবে।অনেকটা ফিলমি টিপিক্যাল টাইপের।কেনো করবে সে জানে না।ইদানিং হঠাৎ বৃষ্টির মতো তারও হঠাৎ হঠাৎ অদ্ভুত কিছু করতে ইচ্ছে করে।আনাস পিঠ থাপড়ায়।রিঝ প্রচন্ড বিরক্তি নিয়ে বললো,’ সমস্যা কি ভাই??এমন করছিস কেনো??’
‘ কি করছি?’
‘ জানিস না??বিরক্ত করস ক্যান??’
‘ আমি!আল্লাহ আমি! আমি তোরে বিরক্ত করলাম??’ আনাস অবিশ্বাস্য চোখে তাকালো।রিঝ চোখ বাকিয়ে প্রশ্ন করে,’ কি হয়েছে??নার্ভাস??’
আনাস থতমত খেয়ে যায়।নিজেকে সাবধানে সারিয়ে নিয়ে বললো,’ নার্ভাস হতে যাবো কেনো??’
রিঝ কিছু বলে না।সামনে তাকিয়ে কফির মগে ঠোঁট ডুবিয়ে দেয়।আনাস বানিয়েছে।রিঝ একটু অবাক হয়ে তাকায়।কিছু সময় চলে যায় দুজনের নিরবতায়।কেউ কোনো কথা বলে না।আগে মাঝে মাঝেই দুই ভাই খুব গল্প করতো।এখন কম হয় গল্প।আনাস রুচিকার সাথে কলে ব্যস্ত।আর রিঝ কাজে।আনাস রয়ে সয়ে বললো,’ আগে বলে দিলেই পারতি?’
রিঝ প্রশ্নবৃদ্ধ চোখে তাকায়।আনাস বললো,’ তুই তুতুলকে ভালোবাসিস।’
‘ সে তো আগেই বলেছি।তুই তো জানতি।’
‘ আমি জানার কথা বলছি না।তুতুলকে বলে দিতি।একদম প্রথমে।ইয়াজের সাথে বিয়ের কথা হওয়ার আগেও জানাতে পারতি।বা বিয়ে ভেঙ্গে যাওয়ার পরে।আগে বললে এতো কিছু হতো না।সময় নিলি কেনো??’
ঠোঁটে দীর্ঘ হাসি টানে রিঝ।কফি শেষ করে।তারপর বলে,’ সব কিছুর একটা সময় থাকে।প্রথমে যদি আমি তুতুলকে বলে দিতাম আমি তাকে চাই তাহলে সে দূরত্ব বাড়িয়ে দিতো।তাই আমি আগে দূরত্ব নিঃশেষ করেছি।এখন চাইলেও দূরত্ব আসবে না।কারণ তার মনে আমার জায়গা আছে।আগে জায়গা তৈরি করা উঁচিত।তারপর ভালোবাসার কথা বলা উঁচিত।এতো দিনে ভালোবাসার জন্ম হয়েছে কিনা জানি না।কিন্তু প্রেমে সে পড়েছে।সবকিছুর উর্ধ্বে ও আমার ভাগ্যে ছিলো।ঘুড়ে ঘুড়ে আমার জীবনেই এসে পড়বে সে।আমি জানতাম।’
রিঝ আবার হাসলো।হাসতে ভালো লাগছে।সব সময় এই মুড কাজ করে না।যখন করে তখন উঁচিত অনেক হাসা।এটা তুতুলের কথা।কারণে অকারণে সে হাসে।পাগল বলে কথা।আনাস রিঝের দিকে তাকায়।অদ্ভুত সুন্দর তার ছোট ভাইটি।মায়ের মত একদম।আনাস শ্যামবর্ণের।বাবার মতো।বুদ্ধির দিক থেকে আবার উল্টো পড়েছে।সে মায়ের মতো।মোটামুটি।কিন্তু রিঝ বাবার মতো ভয়ংকর সব বুদ্ধির অধিকারী।স্কুলের প্রথম,কলেজের প্রথম,ভার্সিটিতেও তার রাজত্ব।সে জানে তার ভাই জীবনে যা চায় তা সে কঠিন পরিশ্রমের মাধ্যমে অর্জন করে নেয়।অর্জন করতে না পাড়লে কেড়ে নেয় সে।ছাড় দেয় না।ছেড়েও দেয় না।চাই মানে চাই।একটা মারাত্নক জিধ আছে তার মাঝে।লুকোনো জিধ।কিন্তু সব কিছুর মধ্যে একটা মেয়েকেই সে জীবনে সবচেয়ে বেশি চেয়েছিলো।এতো বেশি সে কিছুই চায়নি।কেড়েছে,অর্জন করেছে।নিজের করেছে।নিজের সব জাদু ছড়িয়ে দিয়েছে সেই মেয়ের মাঝে।অসাধারণ।আনাস হেসে বললো,’ তোর মাথায় এতো বুদ্ধি কেনো বলবি??আমারে কিছু ধারদে প্লিজ।’
‘ তোমার বুদ্ধি আমার থেকেও বেশি।রুচিকাকে কিভাবে পটিয়েছিলে আমার জানা আছে।’
আনাস রাগের অভিনয় করে বললো,’ চুপ বেয়াদপ।আমি তোর বড়।আমার বউরে ভাবি ডাক।আর তুই আমার আগে বিয়ে করতে গেলি কোন সাহসে??তোর সাহস দেখে আমার কি করতে ইচ্ছে করছে জানিস??’
‘ সামনের পুকুরে ডুবে মরতে।তাই তো??এটা তো লজ্জার ব্যাপার।তোর আগে বিয়ে করলাম।ছিঃ ভাই ছিঃ।বড় হয়েও পিছিয়ে গেলি?দুঃখ লাগছে।’
রিঝ মুখ দিয়ে চুক চুক শব্দ করলো।আনাস ভাব নিয়ে বললো,’ বাচ্চা তো আমারই আগে হবে।বিয়ে আগে হয়েও লাভ কি হলো??মধুচন্দ্রিমা তো আমারই হবে আগে।’
রিঝ হেসে উঠে বললো,’ মনে হচ্ছে এবারও আমিই প্রথম হবো।কারণ তুই তো এখানে।’
আনাস ভাবে,সত্যি তো সে এখানে কি করছে??তার তো বউয়ের কাছে থাকার কথা।পরক্ষণেই ভাবে সে রুচিকার সাথে বিনা করণে রেগে আছে।রিঝ উঠে দাঁড়িয়ে বললো,’ যা রুমে যা।এতো রাতে এখানে কি করছিস?’
‘ যামু না।তোর মন চাইনে তুই যা।’ আনাস মুখ ফঁসকে বলে ফেলে।রিঝ ভারী অবাক হয়ে বললো,’ আমি যাবো!’
কিছুক্ষণ পরে হাঁটা ধরে।আনাস পিছন থেকে ডাকে,’ ওই কই যাস??’
‘ তুই তো বললি তোর বউয়ের কাছে যাওয়ার জন্য।’
আনাস দ্রুত উঠে যায়।উদ্বেগী হয়ে বলে,’ পাগল হয়ে গেলি না কি??ও তোর ভাইয়ের বউ।তোর ভাবি হয়।’
‘ তো কি হয়েছে?ভাই নিজেই তো যেতে বলেছে।’
‘ মুখ ফঁসকে বলেছি বেয়াদপ।’
রিঝ মাথা চুলকাতে চুলকাতে হাসলো।আনাসের মুখটা দেখার মতো।রিঝ নিজের রুমে আসে।কালো আলমারির একটা পার্ট খুলে রাতের পোশাক বের করে নিয়ে ওয়াসরুমের দিকে যায়।ঢুকার আগে বলে,’রুমে যা।অপেক্ষা করছে সে।ভালোবাসায় রাগের জায়গা নেই।যা থাকবে সব অভিমান।ওর তো দোষ নেই।বোনটা একটু বেশি করেছে।যাই হোক যা।’
তাড়াহুড়ায় আনাস নিজের কফির মগ রিঝের টিভির নিচের লম্বা টেবিলের উপরে রাখতে চায়।সেটার ছোট ছোট খোঁপে রিঝ বই রাখে।ল্যাপটপ রাখে।কফির মগ রাখতে দেখেই চোখ রাঙ্গায় রিঝ।এসব তার পছন্দ না একদম।আনাস কিড়মিড় করে হাসে।মগ তুলে দেয় এক দৌড়।আবার এসে উঁকি মেরে বললো,’ আসলে আমি যাচ্ছি না আদ্রীতার জন্য।সবকটা দরজায় দাঁড়িয়ে আছে।টাকার জন্য।তুই যদি একটু যাইয়া খেতাই দিতি।মানে আমিই এটা করতাম।তুই তো জানছ আমারে ওরা ভয় পায় খুব।কিন্তু এখন এমন করলে তো কিপটা বলবে।’
‘ তাহলে টাকা দিয়ে দে।’
‘ পারমু না।’
‘ ভাই তুই সত্যি খুব কিপটা।তুতুল ঠিক বলে।’
আনাস এগিয়ে আসতে আসতে বললো,’ কি বলে ওই ছেমড়ি??’
‘ বলে আমার ভাই মানুষ হিসেবে ভালো কিন্তু পকেট নিয়ে খুব চিন্তিত।যা ভাগ।টাকা যত চায় দে।আমিও আসছি।আমারটাও দিতে হবে।’
আনাস বিস্ফারিত চোখে তাকিয়ে বললো,’ তুই ও নিবি??’
‘ অবশ্যয়।’
রিঝের কন্ঠে দীর্ঘ টান।সে নিয়েই ছাড়বে।আনাস বেঁচারার অবস্থা করুন।সে তো নিজের পায়ে নিজেই কুড়াল মারলো।বাকিদের সাথে কমে সারা যেতো।কিন্তু এই হারামি তো তার থেকে চারগুণ বেশি নিবে।জীবনে এক ঈদে রিঝ টাকা নিয়েছিলো।সালামি হিসেবে।যা নিয়েছে তা সারা জীবন মনে থাকবে।নেয় না নেয় না নিলে ফকির।ইতিহাস করে ছাড়ে।আনাস উদাসিন কন্ঠে উচ্চারণ করে,’ তুই একটা আহাম্মক।’
__________________________
আজকের সকালটা বিষাক্ত।বিষের প্রতিক্রিয়া কেমন জানে না রামিম।কিন্তু আজকের এই সকালের সূর্যের আলো বিষের চেয়েও ধারালো আঘাত দিচ্ছে তাকে।এই রোদে সে জ্বলছে।অন্তর পুড়ে ছাড়খার হচ্ছে।বিরহের কষ্টের চেয়ে বিচ্ছেদের বেদনা মৃত্যুর মতো।আজ তাদের বিচ্ছেদ!হুম বিচ্ছেদ।ভালোবাসার নিয়মটা বড্ড অদ্ভুত।যে তোমাকে ভালোবাসে না তাকে চেয়েও ভালোবাসানো যায় না।কেনো এমন নিয়ম??কেনো আমি যাকে ভালোবাসি সেও আমাকে ভালোবাসে না??কেনো ভালোবাসায় সব সমানসমান হয় না?কেনো একুই অনুভুতি দু’জনকে এক সাথে ঘায়েল করে না?কেনো কেনো কেনো??এতো কেনোর উত্তর খুঁজে পায় না রামিম।শার্টের বোতাম লাগাতে এসে মনে পড়ে আসমা এই বোতামটা সেলাই করে লাগিয়ে দিয়েছিলো।যে ১৫টা দিন ছিলো তার জীবনটাই বদলে দিয়েছিলো।১৫টা দিন যেনো ১৫ সেকেন্ডেই শেষ হয়ে গেলো।ভালো সময় গুলো এতো তাড়াতাড়ি কেনো যায়?? খারাপ সময় গুলো কত স্লো?দীর্ঘ সময় নিয়ে সে তৈরি হয়।বাবা মা আর ছোট বোন রাফিয়া তার সাথে থাকে।আসমা নিজেই ফোন করে নিয়ে এসেছে।একদিন রামিম অফিস থেকে এসে দেখে তার বাবা মা বোন।ভারী অবাক হয় সে।সাথে খুশি।আসমা বলে,’বাবা মাকে নিজের কাছে রাখ।বলদ আর কত দূরে থাকবে তারা।তোর সাথে সাথে চিপকাই রাখ।তাহলে আর বাহিরের খাবার খেতে হবে না।রোজ সকালে নাস্তার চিন্তা করতে হবে না।গুছিঁয়েও রাখতে হবে না কেনো কিছু।সব মা করে দিবে।বিয়ে করবি বলে তো মনে হয় না।তাই এই পদ্ধতি কাজে লাগিয়েছি।’
রামিম তখন মনে প্রাণে বলতে চেয়েছিলো,প্লিজ আসমা তোরে বন্ধুত্বের কসম আমারে ছেড়ে যাইছ না।তোরে আমি বড্ড বেশি ভালোবেসে ফেলেছি।ভিষণ প্রিয় হয়ে গেছিস তুই।তোকে ছাড়া চলবে না।তুই থেকে যা।প্লিজ প্লিজ।তোর দুটি পায়ে পড়ি।থেকে যা।ভালোবাসা লাগবে না।থাকলেই হবে।একসাথে থাকবো।ঝগড়া করবো।তবুও তুই আমার সাথেই থাক।তোর সঙ্গ আমার খুব নিরাপদ লাগে দোস্ত।’
কিন্তু বলতে পারলো না।অনেক সময় মানুষের খুব বলতে চাওয়া কথা গুলো গলায় এসে থেমে যায়।বাহিরে যতই নিয়ে আসতে চায় না কেনো আসেই না।এর চেয়ে হৃদয়ছিড়ার কষ্ট আর নেই।রামিমের মা বুঝে।ছেলে মেয়েটাকে ভালোবাসে।বিয়ের কথাও জানে।তিনি গ্রামের সহজসরল মেয়ে।বিয়ের খুব গুরুত্ব তার কাছে।আসমার কাছে তিনি বলেছিলেন।সম্পর্ক ঠিক রাখতে।আসমা মারাত্নক রেগে যায়।রামিম এ কথা কেনো বলেছে?সে রেগে বাড়ি ছেড়ে চলে যায়।যাওয়ার সময় বলে,’তোর সাথে কোনো কথা নেই।কেনো বললি উনাকে?’ রামিমের কোনো কথা শুনে না সে।ফোন ধরে না।রিপ্লাই করে না।বাড়ির নিচে গেলে নামে না।দেখা হলে এড়িয়ে চলে।আজ দীর্ঘ দু’মাস পরে তাদের দেখা হবে।তাও কোর্টে।হিমেল আসমার কাছে আসে।সহজ ভাবে নিজের ভয়ংকর অপরাধের কথা শিকার করে।সে বলে আসমার সাথে থাকার শর্তেও তার অন্য মেয়ের সাথে রিলেশন ছিলো।আসমার খুব খারাপ লাগে।সে ব্রেকাপ করতে চায়।কিন্তু পরে হিমেল ক্ষমা চায়।কেনো যেনো মাফ করে দিয়েছিলো।মনে হয়েছিলো সেও তো বিয়ের মতো কথা লুকিয়ে গেছে।ক্ষমা করলেই সম্পর্ক গুলো সুন্দর হয়।হিমেলকেই বিয়ে করবে বলে ঠিক করে।আজ রামিমের সাথে তার ডিভোর্স!

তুতুল আসতে রাজি হচ্ছিলো না।রামিমের মনের কথা সে রিঝের কাছে শুনেছিলো।আসমা আপু এমন করছে কেনো??তার একদম ভালো লাগছে না।বিরহ বিচ্ছেদ তার সবচাইতে অপছন্দের জিনিস।এসব ভালো লাগে না।রিঝ তবুও জোড় করে নিয়ে এসেছে।কোর্টে এসে হাজির হয় সবাই।আকাশ আর রূমাশ্রীও আসে।হিমেল আর মায়শাকে দেখে সবাই অবাক হয়।কারণ এরা জানে না।এদের কে ডেকেছে জিজ্ঞেস করতেই হিমেল বললো,’ আসমা বলেছে আসতে।মনে হচ্ছে আমাদের বিয়ে আজই হবে।এই মেয়ের মতিগতি তো বুঝি না।’
বলেই সে হাসলো।রিঝ তীর্যক চোখে তাকিয়ে রইলো।তুতুল প্রশ্ন করে,’ আর মায়শা আপু আপনি কেনো এসেছেন??’
মায়শা চুল ঠিক করছিলো।চুলগুলো এক পাশে নিয়ে এসে বললো,’ আমাকেও আসমাই ডেকেছে।’
আসমা আসে একটু পরেই।কেউ আসমার সাথে কথা বলে না।সে বুঝতে পারছে না এমন কেনো হচ্ছে??এমন তো হওয়ার কথা না।আকাশ রাগি দৃষ্টি নিক্ষেপ করে।তুতুল তীক্ষ্ন চোখে চেয়ে আছে।রূমাশ্রী ভালো চোখে তাকিয়ে নেই।বাকি সবার অবস্থা ভালো।মানে হিমেল আর মায়শা।আসমা জানতে চাইলো,’ রিঝ কেমন আছিস??’
রিঝ একটু চুপ থেকে পরে বললো,’ ভালো।তোকে তো ভালো ঠেকছে না??’
আসমা শুকিয়ে গেছে।ওজন কমেছে অনেক।দেখে চিকনা মনে হচ্ছে।গায়ের জামা ঢিলা অনেক।চোখের নিচে কালি জমেছে।ঘুম হয় না বোধ হয়।মুখটা কেমন যেনো রোগা রোগা লাগছে।খুব চিন্তা করে মনে হচ্ছে।আসমা নিজের মাঝে গোপনীয়তা রেখে বললো,’ তেমন কিছু না।আমি ভালো আছি।তোদের বিয়ে কবে??দাওয়াত দিবি না??’
রিঝ হাসলো।বললো,’ সেটা তো সম্ভব না।সম্ভব হলে অবশ্যয় না দিয়েই থাকতাম।’
‘ এতো কিপটামি করে কি করবি??গাড়ি বাড়ি তো আছেই।বাই দ্যা ওয়ে তুই কিন্তু আরো সুন্দর হয়ে গেছিস।কাহিনী কি মামু??’
আসমা দাঁত বেড় করে হাসে।চোখ টিপ মারে।রিঝ তুতুলের হাতটা আচমকা নিজের হাতে নেয়।মৃদূ স্বরে কাতর কন্ঠে বললো,’ কাহিনী ভালোবাসা।কাছে পেলেই রূপের সমুদ্র উপচে উপচে পড়ে।ভালোবাসতে শিখেনে তখন বুঝবি।’
হঠাৎ ঝড় যেমন সব লন্ড ভন্ড করে দেয় আসমার চেহারাটা ঠিক তেমন হয়।সবার শেষে আসে রামিম।গায়ে হালকা গোলাপি শার্ট।এই রংটা তার খুব অপছন্দ।কিন্তু আসমার পছন্দ।তাই কেনো যেনো মনের বিরুদ্ধে গিয়ে তারও পছন্দ হয়ে গেছে।ভালোবাসার জাদু সব দিকে চলে।সব জায়গায় চলে।শুধু অন্যের মনে চলে না।রামিম দীর্ঘ শ্বাস ছাড়ে।এগিয়ে আসে ছোট ভিরের কাছে।আসমা শান্ত চোখে একবার তাকায়।রামিমের এলোমেলো চুল দেখেই এলোমেলো মনের গভীরের অবস্থা বুঝতে পারছে সবাই।বুকটা কেঁপে উঠে আসমার।মনে মনে এই ভয়টাই পাচ্ছিলো সে।সত্যি হচ্ছে কেনো??আসমা নিজের মনকে নিয়ন্ত্রণ করে।তারপর সবাইকে উদ্দেশ্য করে পাহাড়ের ঘটনা খুলে বলে।মায়শা আর হিমেলের মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়ে।আকাশের সাথে যা হলো,রিঝের সাথে তাই হলো।এটুকু ঠিক ছিলো।কিন্তু আসমা রামিমও যে একুই নৌকার মাঝি ভাবতেই পারছে না তারা।মায়শা নিচেই বসে পড়ে।মাথায় হাত দিয়ে বললো,’ এসব কি ভাই??তোরা সবাই বিবাহিতো??একদিনে বিয়ে সেরে ফেলেছিস?সবাই??আর আজ এতো দিন পরে বলছিস?কিছু দিন পরে তোদের বিয়ের একবছর হবে??ইয়া মাবুদ।রামিম তুমি এটা কি করলে?’
রামিম চুপ করে দাঁড়িয়ে আছে।সে কিছু বলছেও না শুনছেও না।হিমেল আসমার হাতটা ধরলো।সঙ্গে সঙ্গে গায়ে আগুন জ্বলে উঠলো তার।ইচ্ছে করলো হাত ভেঙ্গে দিতে।পিছনে ফিরে যায় সে।এদের দিকে তাকিয়ে নিজের আগুন আরো বাড়াতে চায় না সে।হিমেল আবার জানতে চেয়ে বললো,’ যা বলছো সত্যি??’
‘ হুম সত্যি।তবে বিয়ে হয়েছিলো মতের বিরুদ্ধে।তাই আজ আমি ডিভোর্স নিতে এসেছি।আশা করি তুমি বুঝতে পারছো?’
হিমেল মৃদূ হেসে হাতটা আরো শক্ত করে ধরে বললো,’ এই হাত মরে গেলেও ছাড়বো না বলেছি।ছাড়বো না এটাই সত্য।তোমার যদি বিয়ে হয়ে বাচ্চাও থাকতো আমার ভালোবাসা বদলাতো না।’
তুতুল ফোঁড়ন কাটলো,’ আসমা আপু তাহলে একটা কাজ করো তুমি রামিম ভাইয়ার কাছে চলে যাও।তারপর তোমাদের কিউট মেয়ে হবে।এরপরে এসে তুমি হিমেল ভাইয়াকে বিয়ে করিও।সুন্দর হবে না??ভাইয়ার কথাও রাখা হবে।তোমার মেয়েও হবে।’
রিঝ হেসে উঠে।সাথে প্রায় সবাই।মায়শা আর হিমেল ত্যাড়া চোখে তাকায় তুতুলের দিকে।সবার এমন চাহনি দেখে তুতুল ভরকে যায়।চোখ উল্টো বললো,’ ভুল বললাম??বলা উঁচিত ছিলো না মনে হচ্ছে?সেট।’
নিজের জিভ কামড়ে ধরে সে।মনে মনে হাসে।ইচ্ছে করেই বলেছে সে।সবাই ভেতরে ঢুকে পড়ে।আসমা আড়চোখে রামিমের দিকে তাকায়।রামিম সেই তখন থেকে চেয়ে আছে।তার মাঝে নতুনত্ব কিছু নেই।কাগজ দেওয়া হয়।সব আগেই ঠিক করাছিলো।উকিল মানুষটি পরিচিত।আকাশের বাবার বন্ধু ছেলে।তাই কাজ দ্রুত হয়।আকাশ মনে মনে নিজেকে গালি দিলো।আগে জানলে সে জীবনেও উকিলের নাম্বার দিতো না।আসমা তাকে বলেনি সে ডিভোর্স চায়।নিজের প্রতি রাগে ফেটে পড়ে সে।চুল টেনে ধরে।রূমাশ্রী বাঁধা দেয়।সাইন করতে এসে রামিমের দম আটকে আসে।সে ভয়ংকর কাজ করে বসে।সবার সামনে থেকে আসমাকে টেনে নিয়ে যায়।সবাই হতবিহ্বল!আসমা অবাক বিস্মিত!কিছু বুঝলো না সে।রামিমের হাত শক্ত।মুখের চোয়াল কঠিন।চোখ লাল।দেখে অসুস্থ মনে হচ্ছে।আসমা আজ সেলোয়ার কামিজ পড়েছে।তাই তাকে এলোমেলো লাগছে একটু।উড়না সামলাতে কষ্ট হয় তার।কিছুক্ষণ পর পর গলা থেকে পড়ে যেতে নেয়।এক হাতে ঠিক করতে হচ্ছে তাকে।রামিম টেনে নিয়ে আসে একটা রুমে।ফাঁকা রুম।কেউ নেই।ছিলো হয় তো কিছুক্ষণ আগে।চলে গেছে মাত্র।চিপসের পেকেট বাদামের খোশা দেখে বুঝা যাচ্ছে।আসমা হাত ছাড়াতে যায়।রাগে গজগজ করে উঠে বললো,’ তোর সমস্যা কি রামিম??টেনে নিয়া আসছিস কেনো?সাইন করতে বলেছিলো।হাত টানতে নয়।’
রামিম হাত আরো শক্ত করে ধরে।আসমার মাথার পিছনে একটা হাত রাখে।চুলের খাঁজে খাঁজে আঁটকে যায় পাঁচটি শক্ত আঙ্গুল।মাথাটা উপরের দিকে তুলে নিজের মুখের বরাবর নিয়ে আসে সে।আসমার চোখ বেড়িয়ে আসবে অবস্থা।হৃৎপিণ্ডের অবস্থা করুন।রামিম কি করতে চাচ্ছে?চোখ এতো লাল কেনো??রাগে কাঁপছে কেনো??আসমার চোখে মুখে ফুটে উঠে প্রশ্ন।রামিম দাঁতে দাঁত চাপে বললো,’ তুই সত্যি বিয়ে ভাঙ্গতে চাস??ডিভোর্স দিতে চাস?’
আসমা দ্বিগুণ রাগ দেখিয়ে বললো,’ সেটা তো বিয়ের দিনেই ঠিক হয়েছিলো।তুই আমার চুল ছাড়।’
রামিম আরো শক্ত করে ধরে।আর একটা হাত দিয়ে পিছনে নিয়ে নেয় আসমার হাতটা।পিঠের সাথে ঠেকিয়ে আরো সামনে নিয়ে আসে তাকে।ব্যথায় কুঁকড়ে উঠে সে।এসব কি করছে রামিম??এই রামিমের সাথে তার পরিচয় নেই।রামিমের চোখ জোড়া জ্বলজ্বল করে উঠে।হাতের বাঁধন গুলো শক্ত হয় আরো।আসমার চোখে জল চলে আসে।টলটল করে নোনা জলের সমুদ্র।মৃদূ অর্তনাদ করে সে বললো,’ রামিম লাগছে আমার।হাত ছাড়।চুল ছাড়।পাগল হয়ে গেলি না কি?আহ্ ছাড়।’
রামিমের সম্বিৎ ফিরে।হাতটা ছুটে যায়।হালকা হয় বাঁধন।আসমা জোড়ে জোড়ে শ্বাস ফেলে।রামিম চুলের পিছনে হাত বুলাতে বুলাতে বললো,’ বেশি লেগেছে তোর??স্যরি দোস্ত।’
‘ তুই কথাই বলবি না।হারামি একটা।দম কেড়ে নেওয়ার ইচ্ছে হয়েছে তোর?’
‘ নিলে তো শোধ করা হবে।’
‘ কিভাবে শোধ হবে?’
‘ তুই কেড়ে নিয়েছিস।আমিও নিচ্ছি।সমান সমান।’ রামিমের নিভু নিভু কন্ঠ।আসমা ভারী আশ্চর্য হয়ে বললো,’ আমি কার দম কেড়েছি??’
‘ কেনো আমার।’
রামিমের চোখে ব্যাকুল আবেদন।সে আসমার হাত ধরে টেনে নিচে বসিয়ে দেয়।ফ্লোরে সব বালি।খবর নেই কারো।আসমার হাতগুলো নিজের হাতের মধ্যে নিয়ে রামিম বললো,’ দোস্ত তোর দোহাই লাগে ডিভোর্স দিছ না।’
‘ কি বলছিস তুই?’
‘ সত্যি বলছি।তোরে ভালোবেসে ফেলেছি।অনেক ভালোবাসি।প্লিজ দোস্ত ছেড়ে যাইছ না।দেখ আমার পরিবারের সবার তোকে পছন্দ।তোর পরিবারের সবার ত মাথাই বিগড়ে আছে।তাদের বলে লাভ নেই।আমরা এক সাথে থাবো।তুই আর আমি।প্লিজ।’
‘ রামিম তুই পাগল হয়ে গেলি না কি?’ আসমা হাত সরিয়ে নেয়।দাঁড়িয়ে যেতে চায়।রামিম হাত টেনে ধরে।আসমার পা কাঁপছে।পায়ের নিচের ফ্লোরও দুলছে।ভুমিকম্প হচ্ছে না কি?সব কেমন গোল গোল দেখছে।আসমার মনে হচ্ছে সে এখনি এই মুহূর্তে পড়ে যাবে।রামিমের চোখের দিকে একবার তাকায়।দ্রুত চোখ সরিয়ে নেয় সে।রামিম আকুতি করে বললো,’ আমি তোর সব কথা শুনবো।তুই যা বলবি সব।ঝগড়াও করবো না।তোরে মোটাও বলবো না।তুই যেমন চাস তেমন হবে।প্লিজ তুই এটা করিস না।’
আসমা নিচের দিকে তাকিয়ে থাকে।কিছু বলার ভাষা খুঁজে পায় না।
সবাই পিছনে পিছনে আসে।মাঝ পথে রিঝ থামিয়ে দেয়।অপেক্ষা করছে সবাই।কি হচ্ছে ভেতরে জানার জন্য।
আসমা কঠিন গলায় বললো,’ রামিম দেখ এখন এসব হবে না।বিয়েটা তো তুইও মানতি না।তাহলে এখন কি হয়েছে??কেনো এমন করছিস?
রামিম রেগে যায়।চিৎকার করে বলে,’ ভালোবাসি তাই এমন করছি।তুই বুঝছ না কেনো??’
‘ না বুঝতে পারছি না।চল সাইন করবি।আমার হিমেলের সাথে বিয়ে।ওকে আমি ভালোবাসি।আমি শুধু হিমেলকেই ভালোবাসি।তোকে না।’
রামিম আর কিছু বলে না।ছেলে বলে সে কাঁদছে না?না কি কোনো অনুভুতি কাজ করছে না?বুঝতে পারলো না সে।আসমার হাতটা ছেড়ে দিলো সে।রাগে অভিমানে দম ধরে বসে রইলো কিছুক্ষণ।তার ভালোবাসার একটু দামও দিলো না আসমা!এটা মানতেই কষ্ট হচ্ছে তার।ইচ্ছে করছে আসমা হিমলকে খুন করে নিজেও খুন হতে।’আমি হিমেলকে ভালোবাসি’ কথাটা কাঁটা তারের আঘাতের মতো কষ্ট দায়ক তার জন্য।রামিম উঠে যায়।আসমার আগে ভিতরে ঢুকে পড়ে।কিছু না ভেবে না বুঝে রেগে গটগট করে সাইন শেষ করে দেয়।আসমা দরজার সামনে এসে দাড়ায়।দেখে সাইন শেষ।কেনো যেনো খুব খারাপ লাগলো।ধ্বংষ হয়ে গেলো মনে হচ্ছে সব।প্রতিটি হাড় ভাঙ্গার ব্যথা একবারেই অনুভব হচ্ছে।সে কি ভালোবেসে ফেলেছে রামিমকে??এটাই কি বিচ্ছেদের বিরহের কষ্ট??ভালোবাসার মানুষ ছাড়া এই ব্যথা কারো জন্য অনুভব হওয়ার কথা না।রামিমের পিছনে সবাই বেড়িয়ে আসে।হিমেল আর মায়শা থাকে ভিতরে।হিমেল কলম এগিয়ে দেয় আসমার দিকে।

আকাশ রিঝ তুতুল রূমাশ্রী রামিমের পিছনে পিছনে আসে।রামিম একটা গাছের গায়ে নিজের রাগ ঝারে।ইচ্ছে মতো ঘুষি মেরে হাত করে রক্তাক্ত।গড়গড় করে গড়িয়ে পরে তাজা রক্ত।রিঝ দৌড়ে এসে ধরে।রামিমকে ছাড়াতে পারে না।সে উম্মাদের মতো করছে।রিঝ না পেরে রামিমের গালে চড় বসিয়ে দেয়।রাগ জিধ,অভিমান এক পাশে রেখে রামিম বাচ্চাদের মতো হাউ মাউ করে কেঁদে উঠে।সবাই বিস্ময়ে হতভম্ভ।রিঝকে জড়িয়ে ধরে দু’হাতে।কান্নায় জড়িয়ে আসা কষ্টে বলতে শুরু করে,’ আমার অনেক কষ্ট হচ্ছে।কেনো হচ্ছে বলবি??কলিজা ছিড়ে গেলে কি এমন কষ্ট হয়?’
রিঝ বুঝতে পারেনি ব্যাপারটা এতো সিরিয়াস হবে।রামিম এতো ভালোবাসে জানলে সে তাদের বিচ্ছেদ কখনই হতে দিতো না।সে তো মনে করেছিলো পছন্দ মাত্র।বেশি হলে মায়া।কিন্তু এতো কঠিন ভালোবাসা!রিঝ সান্ত্বনা দেওয়ার ভাষা খুঁজে পাচ্ছে না।সে বরফের মতো জমে দাঁড়িয়ে রইলো।রামিম চিৎকার করছে।মানুষ জড়ো হয়েছে অনেক।সবাই বুঝার চেষ্টা করছে।একটা ছোট ভির জমে গেছে কোর্ট চত্তরে।রামিম রিঝের বাহু ছেড়ে।নিজের চোখ মুছে নেয়।হঠাৎ হঠাৎ অদ্ভুত কাণ্ড করছে সে।হাতে খামঁচি দিচ্ছে।চুল টানছে।শার্টের সব বোতাম ছিড়ে ফেলেছে।রিঝ আকাশকে ইশারা করে।আকাশ দু’ হাত ধরে।রিঝ পানি নিয়ে এসে হাতে ঢালতে থাকে।রামিমকে পাগল মনে হচ্ছে।ভালোবেসে মানুষ পাগল হয়!তুতুল আগে কখনো এই কথাটা বিশ্বাস করতো না।চোখের দেখা অবিশ্বাস করতে পারছে না।চোখের পর্দা না নাড়িয়ে সে দেখছে সব।কি ভয়াবহ ঘটনা!এ বেলায় সান্ত্বনা আসে না।কেউ তো আর কাছে এসে বলবে না,থাক অন্য একটা আসমা নিয়ে আসবো তোমার জন্য’
কি অদ্ভুত মায়া দিয়ে তৈরি এই ভালোবাসা।মায়ার চেয়েও জঘন্য জালে বোনা এই অনুভুতির নাম ভালোবাসা!এই ভালোবাসার সাথে যোগ হয়েছে পবিত্রতা।একজন স্ত্রীর প্রতি তার স্বামীর প্রথম ভালোবাসা!কি আকুতি ভরা ভালোবাসা!ইশ্ যদি আসমা আপু ফিরে আসতো।

রামিমের মাথায় পানি ঢালছে রিঝ।বেশ অনেক সময় হয়ে গেছে।আসমা এখনো আসছে না কেনো?আবার বিয়ে করে নিবে না কি??তুতুল উঁকিঝুঁকি দিচ্ছে।দেখছে না।রামিমের হাতের রক্ত কিভাবে থামাবে??ভাবতে ভাবতে সে নিজের উড়না ছিড়ে নেয়।রিঝের দিকে এগিয়ে দিয়ে বললো,’ ভাইয়ার হাতে বেঁধে দেওয়ার জন্য।রক্ত অনেক ঝরছে।গাছে ধারালো কিছু ছিলো মনে হয়।’
রিঝ উড়না নিলো।হাত বেঁধে দিতে শুরু করলো।রামিম শান্ত হয়ে বসে আছে।আর পাগলের মতো করছে না।ক্লান্ত দেখাচ্ছে তাকে।রিঝ আকাশ ধরে দাঁড় করায়।গাড়ির দিকে এগিয়ে যায় সবাই।কেউ চিৎকার করে ডাকে,’ ওই রামিম্মা বউ রেখে কই যাছ?কেইস করে দিবো একদম।’
সবাই পিছনে ফিরে তাকায়।আসমা দৌড়ে আসে।উড়না ফেলে।উড়ান সাথে পেরে উঠছিলো না সে।রামিমের চোখ ফেঁটে পড়ছিলো।এসব অবাস্তব লাগছিলো।সবাই অবাক হলো।আসমা এসে পড়ে রামিমের বুকে।ধপ করে।শার্টের বোতাম সব ছিড়া ছিলো।বুক খালি।লোমশ বুকের উপরে আসমা।রামিম শক্তি পেলো না জড়িয়ে ধরার।কেমন যেনো সব স্বপ্ন মনে হচ্ছে তার।কি আশ্চর্য তাদের তো ডিভোর্স হয়ে গেছে।রামিম ভাবে যদি জড়িয়ে ধরে তাহলে কি খুব পাপ হবে??এখন তো সে তার বউ নয়??রামিম মন,মস্তিষ্ক সবার কথা উপেক্ষা করে দু’হাতে জাপ্টে ধরে।রামিম কেঁদে ফেলে।আসমার চোখের বারান্দায় বৃষ্টির ধারা নামে।ফুঁফিয়ে ফুঁফিয়ে সে বললো,’ তুই একটা কুত্তা জানছ??’
রামিম আরো শক্ত করে ধরে বললো,’ জানি।শুধু কুত্তা না আরো অনেক কিছু।’
‘ জানি।তুই একটা হারামি।একটা বলদ।একটা থাক মনে পড়ছে না এখন।পরে বলবো।’
‘ পরে কিভাবে বলবিরে?তুই তো চলে যাবি একটু পরেই।হিমেলের সাথে বিয়ে হয়ে যাবে।তখন তো আর আমাকে খুঁজে পাবি না।বলবি কখন?’
‘ মা* অসভ্য হিমেলরে বিয়ে করতে যামু কেনো??তুই থাকতে।’
রামিম দ্রুত আসমাকে ছেড়ে দেয়।মুখের দিতে তাকিয়ে করুন কন্ঠে বলে,’ যদি এটা হতো!ইশ যদি তুই ওরে বিয়ে না করতি?যদি তুই আমারই থাকতি?’
‘ তাহলে কি দিতি বল?তাড়াতাড়ি।
‘ যা চাইতি তাই।’
‘ তাহলে আবার শক্ত করে জড়াই ধর হারামি।’
রামিম ক্রমাগত চোখ ঘুরিয়ে আসমাকে দেখে।কি বলছে বিশ্বাস হচ্ছে না তার।আসমা হেসে উঠে বললো,’ আমি সাইন করি নাই।এই দেখ কাগজের টুকরো।’
আসমা হাতের মুঠো খোলে।কুঁচি কুঁচি অসংখ্যা কাগজের টুকরো গড়িয়ে পরে।আসমা শব্দ করে হেসে উড়িয়ে দেয় কাগজ।রামিম এখনো বিস্মিত।আসমা মুখ ফুলিয়ে বললো,’ জড়িয়ে না ধরলে আবার ডিভোর্স দিয়ে দিমু।’
রামিম বিদ্যুৎ বেগে জড়িয়ে ধরে।এতো শক্ত করে ধরে যে হাড় সহ সে রামিমের খোলা বুকের ভেতরে প্রবেশ করবে।উড়ছে কাগজ।ফুলের মতো দেখাচ্ছে বাদামি কাগজের টুকরো গুলোকে।তুতুলের চোখে পানি।সে কেঁদে একাকার।রিঝ কারণ বুঝলো না।যখন কান্নার কথা ছিলো তখন তো কাঁদছিলো না।যখন হাসার সময় তখন কাঁদছে।ভারী অদ্ভুত সব।রিঝ তুতুলের চোখ মুছে দেয়।তুতুল সবার সামনে জড়িয়ে ধরে শক্ত করে।রিঝের কানের কাছে ফিঁসফিঁস করে বলে,’ আপনিও শক্ত করে জড়িয়ে ধরুন।যতটা শক্ত করে ধরলে কেউ আলাদা করতে পারবে না।’
হাসলো রিঝ।তারপর দু হাতে শক্ত করে কোমড় জড়িয়ে উপরে তুলে নেয়।তুতুল মুখ তুলে দেখে সে শূন্যে।মেয়েরা ড্যাব ড্যাব করে রিঝকে দেখছে।কেউ কেউ তো কমেন্ট করছে ওয়াও!কত হ্যান্ডসাম।ওয়াও কত কেয়ারি।ওয়াও কত ভালোবাসে দেখ।ইশ যদি আমিও পাইতাম উনার মতো কাউরে??তুতুল জেলাস ফিল করে।রিঝের দিকে তাকায়।কপালে কপাল ঠেকিয়ে ভাবে,রিঝ তার থেকেও বেশি সুন্দর।ছেলেরা মেয়েদের চেয়ে সুন্দর হতে নেই।কিন্তু রিঝ এতো সুন্দর কেনো হলো??’
রূমাশ্রী আকাশের পাশে দাঁড়াতেই আকাশ দু হাত উপরে করে বললো,’ ভুলেও বলবে না রামিম বা রিঝের মত হতে।ওদের মতো হয়ে কাজ নেই।আমি আকাশ।আকাশের হাত পা তেমন কাজের হয় না।বুকটা আকাশের অসীম।বিশাল বুক পেতে দিবো।তুমি বরং বুকে এসো।’
রূমাশ্রী মুচকি হাসলো।আকাশ আলতো হাতে জড়িয়ে ধরলো রূমাশ্রীকে।রূমাশ্রী বললো,’ আমার আকাশই চাই।অন্য কেউ নয়।’

হিমেলের ফিল হচ্ছে শেষ মুহূর্তে এসে ভালোবাসার তীরটা তার তরী ডুবিয়ে দিলো।শূন্য হাতে দাঁড়িয়ে থাকার মতো নিদারূণ কষ্টের আর কিছু নেই।তবুও তার ভালো লাগছে।ভালোবাসার মানুষকে আনন্দে থাকতে দেখলে বুঝি ভালো লাগার অনুভুতিই হয়?হিমেল অনুভব করতে পারছে সে আসমাকে সত্যিকারের ভালোবেসে ফেলেছে।তারও কষ্ট হচ্ছে।সাথে অদ্ভুত ভালো লাগা কাজ করছে।এটাই ভালোবাসার সার্থকতা।মায়শারও খুব জ্বলছে।এতো দিনের প্রেমে রামিম কখনো হাত ধরেনি।অথচ কিভাবে জড়িয়ে ধরেছে?বিয়েতে এতো পাওয়ার হয় না কি?আগে জানলে বসে থাকতো না বিয়েই করে নিতো।যতসব।প্রেম তার কাছে আজাইরা মনে হলো।সে হনহনিয়ে জায়গা ত্যাগ করলো।তুতুল সবার দিকে তাকিয়ে বললো,’ সবাইকে কত সুন্দর দেখাচ্ছে তাই না?’
রিঝ চোখ বুঝে ছিলো।সেভাবে থেকে বললো,’ হুম।অনেক সুন্দর।তোমার আর আমার মতো।’
‘ সবাই মিলে মিশে আছে তাই না?’
‘ হুম।’
রিঝ একটু থেমে আবার বললো,’ ওহ্ তোমাকে একটা কথা বলা হয়নি।’
কন্ঠে জড়ুরী ভাব।তুতুল উদ্বেগী হয়ে বললো,’ কি কথা তাড়াতাড়ি বলুন।’
‘ তোমাকে আমি ভিষণ ভালোবাসি।ভালোবাসা বুঝো তো না কি?’
‘ না ভালোবাসা বুঝি না।কিন্তু আপনাকে বুঝি।’
‘ এতেই চলবে।’
রিঝ হাসলো।তুতুলের সরু নাকটাতে নাক ঘঁষে দিলো।তুতুল মুচকি হেসে গলাটা আরো শক্ত করে খামচে ধরলো।
কৃষ্ণচূড়ার রং লাল-৪২.🎈
@হাফসা আলম
_____________________
ঝলমলে রোদেলা দুপুর।চারদিকে একটা তৃষ্ণার্তক ভাব।সেই তৃষ্ণার্তক ভাবকে পুরো দমে উপেক্ষা করে ভালোবাসার তৃষ্ণায় নিজেদের মিশিয়ে হাঁটছে দুটি মানুষ।এ জাতি বড়ই অদ্ভুত।কি চায় কি করে কিছুই তারা জানে না।কিন্তু পৃথিবীর সকল শক্তিতে উপেক্ষা করার মতো দুরসাহস রাখে নিজেদের মাঝে।চলার পথে কোথাও তারা আঁটকে গেলেও তা উপেক্ষা করে চলাই তাদের কাজ।ভরপুর দুপুর।রোদের তাপে কারো রাস্তায় থাকতে ইচ্ছে করছে না।সেখানে খুবই নম্র আরাম দায়ক ভাব দেখিয়ে হাঁটছে রামিম আর আসমা।তাদের দেখে মনে হচ্ছে এই বুঝি ছুঁটে আসছে ফুলের দল।এই বুঝি বাতাসের ছাপটা এসে উড়িয়ে দিচ্ছে মনের শুকনো পাতা।ছড়িয়ে দিচ্ছে সবুজের সতেজতা।ভালোবাসার রঙ্গে উড়ছে দুজন।হাতের মুঠোয় বন্ধি হাত জোড়া জড়িয়ে হাঁটছে ফুটপাত ধরে।রামিম নিচু কন্ঠে বললো,’ আজকের পরিবেশ খুব সুন্দর তাই না?’
আসমা চারপাশে তাকায়।মানুষের মুখের ভাব দেখে মনে হচ্ছে আজকের মতো ভয়ংকর দুপুর খুব কমই চোখে পড়ে।রামিম সুন্দর বলছে!হয় তো সুন্দর।আসমা মৃদূ হাসে।উত্তরে বলে,’ হুম অনেক সুন্দর।বল কে সুন্দর বেশি।আমি না আজকের দুপুর।’
রামিম থমকে দাড়াঁয়।আসমা ভ্রু কুটি করে।রামিম ভেবে ভেবে বললো,’ প্রকৃতির চেয়ে মানুষ সুন্দর হয় না।তার মানে তোর থেকেও পরিবেশ সুন্দর বেশি।’
আসমা রেগে যায়।হাত ঝাড়ি মেরে চেঁচিয়ে উঠে বললো,’ তুই এতো খারাপ কা??যা তোর সাথে সংসার করবো না।তুই না ভালোবাসিস?তারিফও করতে পারছ না।’
আসমা হেঁটে চলে যেতে চায়।রামিম হাত টেনে ধরে।রাগি চোখে তাকাতেই রামিম হাত ছেড়ে দেয়।কিন্তু আগের মতো হাত বাড়িয়ে রাখলো।আসমা নিজের হাত এগিয়ে দিয়ে হাতে রাখলো।রামিম হাসলো।বললো,’ হাত দিলি যে?’
আসমা আবার টেনে নিয়ে বললো,’ অসভ্য একটা।এখনো তুই করে ডাকছ?তোরে না মানা করছি?কানে যায় না কথা?থাকমু না তোর লগে।বাপের বাড়ি চলে যামু।সংসার করমু না।যা ভাগ।’
রামিম দৌড়ে সামনে হাটু ভেঙ্গে বসে।কান ধরে বলে,’ স্যরি স্যরি।কিন্তু তুই স্যরি তুমিও তো তুই বলেই ডাকো।’
আসমা আড়চোখে তাকায়।চাপা রাগ দেখিয়ে বলে,’ আবার আমার দোষ ধরছ?আজকে সত্যি চলে যাবো।’
রামিম হাত শক্ত করে ধরে।হেসে বলে,’ তুই এখনো আগের মতোই আছস।পাগল।’
‘ ভালো হইছে।সবাই ভালো হলে সমস্যা।কিছু মানুষের পাগল হওয়া উঁচিত।বিশেষ করে বউদের।সব বউ না আবার কিছু কিছু।’
দুজনে আবার হাঁটছে।তাদের পাশ দিয়ে একজন মধ্যবয়ষ্ক লোক যাচ্ছিলো।রামিম পরিবেশের সৌন্দর্য্য বর্ণনা করছিলো।শুনে তিনি দাঁড়িয়ে পরে।অদ্ভুত চোখে তাকিয়ে বলেন,’ এই গরমেও তোমার মনে হচ্ছে সব শীতল??’
রামিম চমকায়।হঠাৎ করে কথাটা শুনায় একটু থ বনে যায়।লোকটি আবার বললো,’ এখন কার ছেলে মেয়েদের যে কি হয়েছে আল্লাহ্ ভালো জানে।পাশে মেয়ে থাকলেই দুনিয়া সুন্দর।বাহিরের চোখে দেখো।বুঝবে বাস্তবতা প্রচন্ড গরম।’
রামিম কিছু বলার আগেই লোকটি আফসোসের সুর টেনে চলে গেলন।বিস্মিত চোখে রামিম তাকিয়ে রইলো যাওয়ার দিকে।আসমা মিটমিট করে হেঁসে বললো,’ তুই বড্ড চাপা মারছ।’
রামিম সেদিকে তাকিয়ে থেকে বললেন,’ চাপা মারিনি।আমার কাছে পরিবেশ সুন্দরই লাগছে।সবার কি হলো বুঝলাম না।একটু শান্তিতে বউয়ের সাথে গরম পরিবেশ শান্ত ভাবতেও দিচ্ছে না।আশ্চর্য।সব ভালোবাসার অভাব।জ্বলে বুঝলি।আমাদের দেখে।’
আসমা শব্দ করে হেসে বললো,’ সত্যি কি পরিবেশ তোর কাছে শীতল??’
‘ আরে না।ভয়ংকর গরম পড়ছে।আমার তো এক ছুটে পালাতে ইচ্ছে করছিলো।কিন্তু তুই কি মনে করছ তাই আর গেলাম না।’
আসমা ভারী অবাক হয়ে বললো,’ তুই আমারে ভয় পাছ??’
‘ হ বহুত।বউ জাতিরে ভয় পেতে হয়।আব্বা বলে।এতে তারা খুব খুশি হয়।আর এজাতি খুশি তো ঘর খুশি।ঘর খুশি তো দুনিয়া খুশি।শান্ত।’
আসমা দুই কোমড়ে হাত রাখে।আকাশী জামার হাতা ভাজ করে।চোয়াল শক্ত করে বলে,’ আব্বা বলে নাই এ জাতি রেগে গেলে কি করে?’
‘ অবশ্যয় বলেছে।এরা না কি আগুন হয়।আম্মারে দেখছি।রাগলে ঘর মাথায় তুলে নেয়।’ রামিম পাশে তাকায়।হায় আল্লাহ্ বলতে বলতে তো সে নিজের বউকেই রাগিয়ে দিয়েছে।আসমা আগেপিছে দেখে না।রামিমের বাহুতে ইচ্ছা মতো কিল ঘুষি মারে।রাস্তার অনেকেই তাকিয়ে থাকে।রামিম হেসে উঠে সবাইকে বলে,’ভাই বউ আমার।যারা বিয়ে করেছেন তাদের জন্য সান্ত্বনা ছাড়া কিছু নেই।যারা করোনি।তাদের সুযোগ আছে।ভুলেও এই ভুল করবে না।’
আসমা হাসে।এ কয়েকদিনে সে খুব জ্বালিয়েছে।কখনো বলেছে পানির গ্লাস নিয়ে আয়।রামিম সহজ ভাবে যায়।নিয়ে আসে।আবার পাঠায়।কম করে হলেও দশ বারোবার।বেচারা।কখনো তার সাথে ফুচকা খেতে হয়।রামিম ভুলেও এই জিনিস মুখে দিতো না।আসমা জানে।ছেলেরা একদম পছন্দ করে না এই জিনিস।রামিম আর রিঝ আরো দুই ধাপ উপরে।তাই ইচ্ছে করে রামিমকে খাইয়েছে।রাতের দুই কি একটা বাজে আইসক্রিম খাতে চাওয়া।ভোরে ঘুম ভেঙ্গে হাঁটতে নিয়ে যাওয়া।আজ এই ভর দুপুরে রোদের তাপ গায়ে মাখাতে নিয়ে আসা।সব মিলিয়ে রামিম শেষ।যদি না বলে সাথে সাথে ট্রলি মেইন ডোরের সামনে চলে যায়।রামিম বিশ্বাস করতেই পারছিলো না আসমা এতোটা বাচ্চাদের মতো করতে পারে।তার ধারণা ছিলো একটা স্ট্রং মেয়ে।অফিস করে।টায়ার্ড থাকে।এর মাঝে এতো অনুভুতি নেই।আগে তো হিমেলের সাথে দেখেছে।দুজনে আলাদা কথাও তেমন বলতো না।রাতের দশটা বাজে কল করলেই শুনতে পেতো সে ঘুমায়।হিমেলের সাথে তেমন কথাও বলতো না।সে মেয়ে এখন রাত জেগে রামিমের সাথে গল্প করে।হুট হাট কাণ্ড ঘটায়।কি আশ্চর্য মেয়ে!কিন্তু রামিমের খুব ভালো লাগে।আসমা বাচ্চাদের মতো রামিমের এক হাত জড়িয়ে ধরে।কাঁধে মাথা রেখে হাঁটে।একটু হেঁটে থেমে যায়।রামিমের দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করে,’ তোরে কি আমি খুব বিরক্ত করি??’
রামিম রাগে মুখটাকে থমথমে করে বললো,’ কোন সন্দেহ আছে তোর??কি অত্যাচারটাই না করছ আমার উপরে।জীবন তেজপাতা।’
আসমা গোমড়া মুখে বললো,’ ভালোবাসি তাই তো তোরে বিরক্ত করি।আমার ভালো লাগে তোরে জ্বালাতে।তুই রাগ করলে আর করবো না।’ রামিম পিছনে ফিরে তাকায়।যাদের কিছুক্ষণ আগে সে বলেছিলো বিয়ে করবেন না।তাদের খুব জোরে ডাকে।চিৎকার করে বলে,’ যারা বিয়ে করেছেন তাদের খুব ভাগ্য।জ্বালানের অতি আপন নিজের কাউকে পেয়েছেন।আর যারা বিয়ে করেননি তাদের বলছি বিয়ে করেনিন।বউ ভালোবাসার জিনিস।যত ভালোবাসা দিবেন ততো পাবেন।জ্ঞান যেমন দিলেই বৃদ্ধিপায় ভালোবাসাও বিতরন করলেই বাড়ে।ভালোবাসা নামক অগ্নিকুণ্ডে জ্বলার মতো আনন্দের আর কিছু নেই।শুনছেন সবাই।’ আসমা দ্রুত টেনে নিয়ে আসে।সবাই হাসে।কেউ কেউ বলে পাগল টাগল মনে হয়।কেউ কেউ অবাক চোখে তাকিয়ে থাকে।কিছু মানুষের বড্ড বিয়ে করতে ইচ্ছে করছে।আসমা টানতে টানতে বললো,’ ওই পাগল থামবি তুই?’
‘ না শুধু জ্বলবো।তোর প্রেমে।’
‘ খুব প্রেমিক হয়েছিস দেখছি।’
‘ তোর প্রেমের জাদু সব।যেদিকে যাই শুধু সেই জাদুই চলে।’
‘ তাহলে তো আরো জ্বালানো উঁচিত তোকে।যা ওপাশ থেকে গরম চা নিয়ে আয়।’
‘ এই গরমে তুই চা খাবি?তাও গরম??’ রামিম চমকিত।আসমা ঠোঁট চেপে হাসি থামিয়ে বললো,’ হুম খাবো।একা না সাথে তুইও খাবি।বেশী গরম যেনো হয়।’
রামিম সামনে এগিয়ে যায়।ত্যাড়া চোখে একবার তাকিয়ে বলে,’ তুই সত্যি খুব জ্বালাবি।অবশ্য তোর দোষ নেই।জ্বলার জন্যেই তো ঢাক ঢোল পিটিয়ে তোদের নিয়ে আসি।জ্বালা।ইচ্ছে মতো।পারলে গরম চায়ে ডুবিয়ে জ্বালা।’
আসমা হু হা করে হাসতে থাকে।রামিমের মনে হয় এই হাসি উত্তপ্ত সূর্যের চেয়েও গরম।এই গরমে মরাও আনন্দের।
_____________________________
রিঝের দেখা মিলছে না দীর্ঘ একটি সাপ্তাহ।তুতুলের অবস্থা বড্ড এলোমেলো।ভালোবাসার দিনগুলো খুব বেশিই সুন্দর হয়।কোন ফাঁকে কখন দৌড়ে পার হয়ে যায় বুঝা যায় না।যেনো মাত্র চোখের পর্দা পড়েছে।সময় শেষ।রিঝের সাথে তার প্রথম সম্পর্ক হয়েছিলো ভালো বন্ধুর।তাদের মাঝে দারুন বন্ধুত্ব হয়ে গিয়েছিলো।রিঝ প্রতিদিন অফিস থেকে এসে তার সারাটা দিনের গল্প করতো তুতুলের কাছে।তুতুলও ভার্সিটির গল্প জুড়ে দিতো।একটা ছেলের সাথে তার বন্ধুত্ব হয়েছে।সেটাও রিঝের কাছে বলেছে সে।রিঝ অবশ্য কিছু বলেনি।ভালো বলেছিলো।কিন্তু আশ্চর্যের ব্যাপার হলো ছেলেটা প্রথম কয়েকদিন তার সাথে যেভাবে কথা বলেছে ধিরে ধিরে তা কমিয়ে দিয়েছে।তুতুল তেমন ভাবে না এসব বিষয়ে।রিঝের সব কিছু এখন তার ভালো লাগে।ঘন্টার পর ঘন্টা রাত জেগে কথা এখন অভ্যাস।এ কয়েক দিনে,মাসে মিলিয়ে এতো ভালোবেসেছে মানুষটা! এখন খুব বাজে অভ্যাসে পরিণত হয়েছে সে।তুতুলের ঘুম হারাম হয়ে গেছে।রাতে তার ঘুম হয় না।দিনে তার কিছুই ভালো লাগে না।ভালোবাসা নামক রোগ ভয়ংকর!এই রোগে আক্রান্ত হলে এর ঔষুধ শুধু ভালোবাসা।তুতুল উপুত হয়ে শুয়ে ছিলো।এলোমেলো চুল।অন্ধকার রুম।হঠাৎ কিছু একটা ধপ করে পড়লো তার পাশে।তুতুল চমকায়।পাশ ফিরে তাকাতে চায়।তার আগেই কেউ চুলে হাত রাখে।তারপর,গলার কাছ থেকে সরিয়ে নেয় চুল।টান খায়।কেউ ঠিক করে দিচ্ছে।তুতুল ভাবে,কে হবে?আম্মু হলে অবশ্যয় এসেই বলতো অন্ধকারে বসে আছিস কেনো?ভাইয়া এসে চুল টানতো।কথা বলতো।বাবা এসে হাসতো।লাইট জ্বালিয়ে পাশে বসতো।এরা কেউ আসেনি।কে এলো?তুতুল পাশে তাকাতে চায়।চুলে টান পড়ে।শব্দ করে চুলের মুঠো ধরে সে।বেশ কড়া গলায় প্রশ্ন করে,’ কে??চুল ছাড়ো।’
তুতুল ঘ্রাণ পাচ্ছে।একটা সুন্দর ঘ্রাণ নাকে এসে বাড়ি খাচ্ছে।পরিচিত সুঘ্রাণ।খুব পরিচিত।চুল ঠিক করতে করতে মানুষটা বললো,’ তুমি এতো অগোছালো কেনো তুতুল?’
তুতুল খুব শক্তি দিয়ে চুল ছাড়ালো।পাশ ফিরে তাকিয়ে খুশিতে আত্নহারা গলায় বললো,’ আপনি!’
রিঝ ভারী অবাক হলো।কিন্তু হাসিতে তা প্রকাশ ফেলো না।সে আধশোয়া হয়ে বিছানায় বসে।তুতুল উঠে বসে দ্রুত।দু’পা ভাঁজ করে।রিঝের হাতে জোরে চিমটি কাটে।চমকে উঠে হাত ঘঁষে রিঝ।তুতুলের কি যেনো হলো সে হুট করে জড়িয়ে ধরে আধশোয়া রিঝকে।দুজনেই একদম গড়িয়ে পরে বিছানার নিচে।ধপ করে শব্দ হয়।তুতুল উঠে বসে চুল ঠিক করে মিনমিনে গলায় বললো,’ স্যরি।আসলে ‘
আলভী ছুটে আসে।রিঝকে নিচে পড়ে থাকতে দেখে সে ভ্রু বাঁকিয়ে বললো,’ তুই পড়লি কিভাবে?’
তুতুল রিঝের দিকে তাকায়।বলে দিবে?রিঝ বলে না।সে উঠে বসে।আলভীর দিকে তাকিয়ে বলে,’ কফি নিয়ে আয়।আমি টায়ার্ড।’
আলভী কিছু বুঝে না।হেঁটে চলে যায়।রিঝ তুতুলের কাছে আসে।কিছু একটা হাতে।দিবে এমন সময় তুতুল ক্ষিপ্ত কন্ঠে বললো,’আপনি এতোগুলো দিন কোথায় ছিলেন??আমাকে বলেও গেলেন না।এতো খারাপ কেনো আপনি? আপনার সাথে কথা নেই।’
তুতুল মুখ গোমড়া করে উল্টো হয়ে বসে।রিঝ হাসে।হাত টেনে দাঁড় করিয়ে দেয়।তুতুল রাগি রাগি গলায় বললো,’হাসবেন না।আমার শরীর জ্বলে যায় আপনার হাসি দেখলে।’
‘ শুধু শরীর?মন জ্বলে না?’
‘ না জ্বলে না।’
‘ আমার জ্বলে।তোমার হাসি দেখলে আমার বুকে মিষ্টি আগুন জ্বলে।হাসো।’
তুতুল চোখ ছোট করে বললো,’ আগুন মিষ্টি হয় কখনো শুনিনি।’
‘ তুমি শুনবে কিভাবে?শুনতে হলে ভালোবাসতে হয়।ভালোবাসো??’
‘ আপনার থেকেও বেশি…’
তুতুল থেমে গেলো।আর বললো না।জিভ কাঁটে।রিঝ ভ্রু জোড়া নাচালো।তুতুল ঘরের আলো জ্বালিয়ে দিলো।ব্যস্ত একটা ভাব নিলো।রিঝ হাসলো।টেবিলের সাথে ঠেসে দাঁড়ালো।তুতুলের হাত ধরে টেনে আনে কাছে।এক হাতের আঙ্গুল দিয়ে তুতুলের মুখের উপরে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা চুল গুলো সরিয়ে বললো,’ আমি ঢাকার বাহিরে ছিলাম।খুব সকালে যাওয়ার প্রয়োজন পড়লো।তোমার সাথে সবে কথা শেষ করেছি।তাও তুমি ফোন কানে রেখে ঘুমিয়ে পড়েছিলে।তাই আর ফোন করে বলতে পারিনি।রাস্তায় আমার ফোন চুরি হয়ে গেছে।এক লোকের সাহায্য করতে গিয়েছিলাম।দেখি সে চোর।অফিসের কাজে ছিলাম।ফোন করার সময়ই পাইনি।ফোন কিনতে হতো।আমাকে শপিং মলে বা অর্ডার করতে হতো।কিন্তু যেখানে গিয়েছি দুটোরই ব্যবস্থা ছিলো না।ভিতরের রাস্তা।খাবারের হোটেল নেই।শপিংমলের তো প্রশ্নই আসে না।আম্মুকেও ফোন করতে পারিনি।’
‘ কারো ফোন নিয়ে করলেই পারতেন?’ তুতুল অভিমানের সুর টানে।রিঝ তুতুলকে পিছনে ঘুরিয়ে নেয়।কোমড় পেঁচিয়ে হাত রাখে সামনে।পিঠের এক পাশের চুল সরিয়ে দেয়।ঘাড়ে থুতনী ঠেকিয়ে চোখ বুঝে।গরম নিঃশ্বাসের তাপ ছড়িয়ে পড়ছে তুতুলের উন্মুক্ত গলা,কাধ,ঘাড়ের আশেপাশে।শরীর অদ্ভুত শিহরন দিয়ে উঠছে।মনে উতাল পাতাল হচ্ছে।অবাধ্য হৃৎপিন্ডের শব্দ শুনতে পাচ্ছে সে।কি ভয়ংকর অনুভুতি?তুতুল কম্পিত কন্ঠে বললো,’ সরুন।ভাইয়া চলে আসবে।’
‘ আসুক।বউকে জড়িয়ে ধরেছি।ওর বোনকে তো না।’
‘ দু’জন একুই মানুষ।আপনি ফোন করেননি কেনো?ছাড়ুন।’
‘ অন্যের ফোন দিয়ে তোমাকে কল করতে যাবো কেনো?এসব ফালতু কাজ আমি করিনা।অন্যের কাছে তোমার নাম্বার জেচে দেওয়ার চেয়েও তোমাকে টেনশনে রাখা আমার কাছে ভালো মনে হয়েছে।’
তুতুল অবাক হয়ে পিছনে তাকায়।রিঝ চোখ খুলে,ঘাড়ে ঠোঁট ছুঁয়ে দেয়।তুতুলের নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে আসার উপক্রম।সরে যেতে চায় সে।রিঝ আরো শক্ত করে ধরে।গভীর ভাবে নিজের সাথে মিশিয়ে রিঝ মৃদূ কন্ঠে বললো,’ তুমি কি পারফিউম ইউজ করো??’
শরীর কাপঁছে।নিঃশ্বাসের গতি বাড়ছে।তুতুলের মনে হচ্ছে মাটির নিচটাও দুলছে।নিঃশ্বাস নিতে পারছে না সে।দমবন্ধ কর ভালো লাগা অনুভুতি।এতো সুন্দর অনুভুতিতে তার দম কেনো বন্ধ হয়ে আসছে সে বুঝতে পারছে না।তুতুল রিঝের সামনের হাত খামঁচে ধরে বললো,’ আপনি ছাড়বেন?’
‘ না।’ রিঝের কাট কাট গলা।সে আবার প্রশ্ন করে,’ কি পারফিউম বললে না যে??’
‘ কোন পারফিউমই না।’
রিঝ তুতুলকে সামনে ফিরায়।চোখ বড় বড় করে আতঁকে উঠা গলায় বললো,’ তোমার গায়ের ঘ্রাণ এতো সুন্দর??’
তুতুল বিস্মিত।হা করে তাকিয়ে আছে সে।রিঝ আতঙ্কে গর্জে ওঠে বললো,’ আল্লাহ তোমাকে বাঁচিয়ে দিয়েছে।তুমি জ্য ব্যাপ্টিস্ট গ্রানুইলির সামনে পড়োনি।তা না হলে তেরো তম বোতল সে তোমার মাধ্যমেই ভরাতো।না তোমাকে দিয়েই সে একটি আলাদা মনকাড়া ভয়াবহ পারফিউম তৈরি করে নিতো।আমি শিউর।’
তুতুল ভয় পেয়ে যায়।চোখে মুখে আতঙ্ক ছড়িয়ে পরে।থেমে থেমে সে প্রশ্ন করে,’ সে কে??কেনো আমাকে দিয়ে পারফিউম তৈরি করতো?’
তুতুলের ভীতু মুখের দিকে তাকিয়ে রিঝের দারুন হাসি পেলো।সিরিয়াস ভাব আর ধরে রাখতে পারলো না।সে শব্দ করে হাসতে লাগলো।তুতুল হতবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো সেই হাসির দিকে।আলভী এসে পাশে দাঁড়ায়।তুতুলের দিকে ইশারা করে।কি হয়েছে জানতে চায়?রিঝের হাসিই অদ্ভুত।তার মাঝে এতো জোড়ে হাসছে।অবাক লাগারই কথা।তুতুল মাথা দুলালো।সে জানে না।আলভী কফির মগ এগিয়ে দিতে দিতে বললো,’ কি হয়েছে তোর?পাগলের মতো হাসছিস কেনো??’
‘ তোর বোনের মুখ দেখে।’
আলভী তুতুলের দিকে তাকিয়ে দেখলো সে ভয় পেয়েছে।রিঝের দিকে কড়া চোখে তাকিয়ে সে বললো,’ ও ভয় পেলো কেনো??’
‘ গ্রানুইলির কথা শুনে।’
‘ পারফিউম মুভি??’
‘ হ।’
রিঝ আরো বললো,’ আমি বলেছি গ্রানুইলির থাকলে তোর বোনের শরীরের ঘ্রাণ দিয়েও বিখ্যাত পারফিউম তৈরি করতো।যদিও তার জন্য তুতুলকে খুন হওয়ার প্রয়োজন পড়তো।জীবিত মানুষের তো সে পারফিউম তৈরি করে না তাই না।’
তুতুল আগ্রহ নিয়ে বললো,’ সে কে??’
আলভী কথা ঘুরিয়ে বললো,’ ফালতু স্টোরি।ভালো লাগে না আমার।যদিও রিঝের পছন্দের।হালার সব সময় অদ্ভুত জিনিসে ইন্টারেস্ট।তুই ভুলেও দেখিছ না।আমার যা ভালো লাগে নাই।তোরও লাগবে না।’
রিঝ হাসলো।আলভী চলে গেলো।তুতুল ভাবতে শুরু করলো।রিঝ তুতুলের হাতে একটা পেকেট ধরিয়ে দিয়ে বললো,’ আজকে বিকেলে দেখতে চাই।নিচে এসো।’
তুতুল এক গাল হেসে বললো,’ ঘুরতে নিবেন??’
‘ দেখা যাক।’
রিঝ প্রতি শুক্র শনিবার তাকে ঘুরতে নেয়।অদ্ভুত সব জায়গা।যেখানে সে কখনো যায়নি।এমনকি নামও শুনেনি।তার ভালো লাগে।রিঝ রুমের বাহিরে যেতে নেয়।কি মনে করে আবার ফিরে আসে।তুতুল প্রশ্নবিদ্ধ চোখে তাকিয়ে থাকে।রিঝ তুতুলকে অবাক করে দিয়ে চট করে দু’গাল হাতের তালুতে নিয়ে কপালে চুমু বসিয়ে বড় বড় পা বাড়িয়ে চলে যায়।তুতুল রিঝের এমন হুট হাট কাজে ভারী অবাক হয়।কিন্তু ভালোলাগে।পাগলাটে কাজ সব।অতি অদ্ভুত মানুষের সব কাজই অদ্ভুত।
_________________________
ভালোবাসায় মাখামাখি হয়ে সময় গুলো কেটে গেছে।কখন গ্রীষ্মের তাপে মাঠঘাটের মতো চৌচির হয়েছে,বা কখন বর্ষার ঋতুতে ভিজেছে।হেমন্ত,শীত,বসন্ত পেরিয়ে আবার গরম।তারপরেই ঝমঝমিয়ে বৃষ্টির মৌসুম।এখন বর্ষাকাল।রাত দুপুরে বৃষ্টির আমেজ।পরিবেশ ভিজা।চারদিকে একটা স্নিগ্ধ প্রকৃতির জন্ম।সতেজ ভাব।আজ দুপুরে খুব বৃষ্টি হয়েছিলো।মাটি ভিজে আছে।তুতুল কালো খয়েরি রঙ্গের জামদানি পড়েছে।কনুই পর্যন্ত ব্লাউজ।শাড়িটা সামলাতে পারছে না সে।পায়ের দিক থেকে অনেকটা উপরে তুলে সিঁড়ি বেয়ে নিচে নামতে হচ্ছে তাকে।রাস্তায় পানি জমেছে।বৃষ্টির কারণে চারপাশটা শান্ত।নিরিবিলি।রিঝ কালো বাইকের পাশে ঠেসে দাড়িয়ে ছিলো।গায়ের চকলেট শার্ট যেনো তার জন্যেই সৃষ্টি।মারাত্নক সুন্দর ভাবে ফুটে উঠেছে রংটি তার শরীরে।শাড়ি ঠিক করতে করতে তুতুল পড়ে যেতে নেয়।দু’হাতে শক্ত করে ধরে রিঝ।তুতুল হালকা হাসলো।শাড়ি সে পড়তে পারে না।মা পড়িয়ে দিয়েছে।কিন্তু সামলাতে তো হবে তাকে।রিঝ বিমুগ্ধ হয়ে কিছুক্ষণ চেয়ে রইলো।শাড়িতে নারীকে অপূর্ব লাগে।সে জানে।কিন্তু এই নারীটিকে বোধ হয় একটু বেশিই সুন্দর লাগছে।

বাইকের একটা গ্লাস একটু ঘুরিয়ে পিছনের দিকে দিলো রিঝ।বাইক চলছে রিঝের নিজস্ব গতিতে।রিঝের পেট জড়িয়ে তুতুল বসে আছে পিছনের সিটে।চারদিকের শীতল পরিবেশের বাতাস।নিস্তবদ্ধতায় ছেঁয়ে আছে সব।পরন্ত বিকেল।গোধূলির আমাজের হৈ হৈ চলছে।বাতাসে স্নিগ্ধ ঢেউ।কোলাহল নেই।শুধু একটু শব্দ।বাতাস,গোধূলির লাল লীলা খেলা।আগুনের ফুলকির মতো দূরের সূর্য ডুবছে।ঝিরিঝিরি হাওয়া কোমল বেগে তুতুলের কোঁকড়া দীঘল কালো চুলগুলো এলোমেলো পতাকার মতো উড়াচ্ছে।শাড়ির আঁচল হাওয়ায় হাওয়ায় দুলছে।রিঝের চুলগুলো কপাল থেকে সরে গেছে।আয়নায় দু’জন দুজনকে দেখছে কিছুক্ষন পর পর।স্বপ্ন!কল্পনা!এমনই হয় বুঝি?সময় ছুটে চলেছে।দূরে দেখা যাচ্ছে আকাশ জুড়ে রংধনু।তুতুল এক ঝলক দেখেই খুশিতে ঠোঁট চেপে ধরে।রিঝকে আরো শক্ত করে আকঁড়ে নেয়।নিরবতার পর্দা সরিয়ে তুতুল মৃদূ কন্ঠে বললো,’ আপনি দেখছেন কি সুন্দর রংধনু??’
রিঝ আয়নায় তাকায়।লাল আভা লেপ্টে আছে দুটি গালে।চুলগুলো মুখের উপরে এসে পড়ছে।বাতাসে ঠোঁটজোড়া কাঁপছে মৃদূ মৃদূ।রিঝ বললো,’ হুম দেখছি।আমার রংধনুকে।
চোখ জোড়া আয়নায় যায়।রিঝের চোখজোড়া তৃপ্ত হয়ে তাকিয়ে আছে তার দিকে।মোহনীয় সুন্দর চোখ জোড়া দেখে গভীর অনুভুতিতে তলিয়ে যাচ্ছে তুতুল।মেয়েদের চোখের আকৃতিতে জাদু থাকে।ঘায়েল করার জাদু।আর,ছেলেদের চোখের চাহনিতে জাদু থাকে।অনুভুতিতে ভাসিয়ে নেওয়ার জাদু।তুতুল আরো শক্ত করে বুক চেপে ধরে।দু হাতে আঁকড়ে ধরে বুকের দুটি পাশ।রিঝ একটা হাত দুটি হাতের উপরে রাখে।গভীর আবেগী কন্ঠে বলে,’ এটা আমার স্বপ্ন ছিলো।স্বপ্ন পুরোন হলে যে কি আনন্দ হয় তা প্রকাশ করার ভাষা থাকে না।তুমি আমার সেই স্বপ্ন।আমার ভালোবাসা।ভালোবাসি।ভিষণ ভালোবাসি।’
তুতুল কিছু বলে না।মাথাটা রাখে পিঠের উপরে।মন থেকে বলতে চায় ভালোবাসি আমিও।হয় তো একটু কম।নয় তো একটু বেশি।কিন্তু বাসি খুব বেশি।বলা হয় না।কিছু কথা না বললে কি হয়?বিপরীত ব্যক্তি কি বুঝতে পারে?দুপাশ অন্ধকার হয়ে আসে।কতক্ষণ ধরে চলছে তারা জানে না।গন্তব্য জানেনা তুতুল।কিছু মানুষের সঙ্গ গন্তব্যবিহিন ভালো লাগে।আকাঁবাঁকা রাস্তা শেষ করে রিঝ অন্য পথে যাত্রা করে।অন্ধকার ক্রমেই ঘনিয়ে আসে।শুধু বাইকের হলুদ আলোটি ছাড়া কোনো আলো চোখে পড়ে না।হঠাৎ শীতল ঠান্ডা বাতাস শরীরময় ছড়িয়ে পড়ে।উড়ে আসে জোনাকি পোকা।তুতুলের শাড়িতে গায়ে মাথায় এসে জায়গা করে নেয় শতশত জোনাকি।বিস্মিত তুতুল শুধু চোখ ঘুরিয়ে চারপাশে তাকায়।নানান রঙ্গের প্রজাপতির দেখা মিলে।গহিন জঙ্গল।চারপাশে গাছ আর গাছ।কালো দানবের মতো দাড়িয়ে আছে।পানির শব্দ কানে আসে।পাশে কোথাও পানি রয়েছে।স্নিগ্ধ মনোরম বাতাসে শরীর মন জুড়িয়ে যায়।আশ্চর্য সুন্দর মায়াবী জায়গার নাম জানে না তুতুল।রিঝ বাইক থামায়।তুতুলকে নামতে বলে।সে মুগ্ধতার চরমে রয়েছে।শুনতে পায় তিনবারের সময়।নেমে দাঁড়ায়।মুগ্ধচোখে প্রশ্ন ছুড়ে,’ আমরা মনে হয় রূপকথার রাজ্যে চলে এসেছি।’
রিঝ হাসলো।তুতুল দেখলো রিঝের ঠোঁটে এসে বসেছে জোনাকিপোকা।গালে এসে বসছে।শরীর মুক্তর মতো জ্বলজ্বল করছে।কি সুন্দর সব!তুতুল দেখে দু’পাশে সারিসারি গাছ।হাঁটতে থাকে দু’জনে।হাতে হাত রেখে।দূরে এসে দেখে দীঘি।কি দীর্ঘ দীঘি।তার উপরে ভাসছে নৌকো।এই নৌকোর বর্ণনা করতে গিয়ে তুতুলের চোখ জোড়া উজ্জ্বল হয়ে উঠে।পাশে তাকায়।মানুষটা এই কোন রাজ্যে নিয়ে এসেছে তাকে?ফুলে ভরা নৌকো।ভাসছে সবুজ পানির উপরিভাগে।আশেপাশে জ্বলছে অসংখ্য তারার মতো বাতি।ঝিকিঝিকি আলো।চারপাশটা দেখতে অসম্ভব সৌন্দর্য্যে মন্ডিত।রিঝ তুতুলের হাত ধরে।নৌকোয় উঠায়।তারপর পাঁজাকোলা করে নেয়।তুতুল বাকরূদ্ধ!গলায় আঁটকে যাচ্ছে সব কথা।সব প্রশ্ন।কিছু বলতে পারছে না।জিজ্ঞাসাবাদ করতে পারছে না।রিঝ তুতুলকে বসায় একদম মাঝে।বৈঠা হাতে সে মাঝি সাজে।মাথায় বাঁধে তুতুলের বিয়ের সাদা উড়না।তুতুল অবাক।এই উড়না রিঝের কাছে ছিলো?সে জানতো না।পা গুলো দ-য়ের মতো ভেঙ্গে বসে থাকে তুতুল।একপাশের আঁচল ছড়িয়ে দেয় ফুলের বিছানার উপরে।নিচে ফুল।উপরে ফুলের ছাদ।পাশে ফুলের দেয়াল।ফুলের গন্ধে চারপাশের সব প্রজাপতি সব জোনাকি ভর করেছে নৌকোর উপরে।রূপ বাড়িয়ে দিচ্ছে আরো বেশি।গুণে গুণে অনেক গুন বাড়িয়ে তুলেছে সৌন্দর্য।তুতুল শুধু দেখছে।ভাসমান নৌকোর উপরে মোমবাতি।মোটা সাদা মোমগুলো জ্বলজ্বল করে জ্বলছে।বাতাসে দুলছে এদিক ওদিক।কিন্তু নিভছে না।কেনো নিভছেনা??সে বুঝতে পারছে না।রিঝকে মাঝির রূপে তুতুলের মনে হচ্ছে অপূর্ব।তুতুল নিজে নিজে হেসে উঠে বললো,’ আপনি মাঝি হলে ভালো হতো।আমি মাঝির বউ হতাম।’
রিঝের মুখের উপরে এসে পড়ছে সাদা উড়না।সরিয়ে দিয়ে সে বললো,’ কেনো?ইঞ্জিনিয়ার পছন্দ না বুঝি?’
‘ মাঝির বেশে বেশি পছন্দ হচ্ছে।’
রিঝ হাসলো।সেই হাসির শব্দ ছড়িয়ে পড়লো দীঘির চারপাশে।মাঝ দীঘিতে নৌকা নিয়ে আসে রিঝ।ধীরে ধীরে তুতুলের সামনে বসে।পিছন থেকে একগুচ্ছো কৃষ্ণচূড়া বের করে।তুতুল বিস্ময়ে কিংকর্তব্যবিমূঢ়!এই ফুল তার চোখে পড়েনি কেনো?রিঝ ফুল এগিয়ে দিয়ে নায়কের মতো করে কিছু বললো না।সে ফুলের ভাজ থেকে কিছু ফুল ছিড়ে নেয়।তুতুল দ্রুত বাঁধা দিতে চেয়ে বললো,’ কি করছেন??ফুল কেনো ছিড়ছেন?’
তুতুলের পিছনে এসে বসে সে।চুলগুলোর পাশে গেঁথে দেয় ফুল।বাতাস বাড়ে।নৌকা দোলে।রিঝ তুতুলের কানের পাশে নিজের ঠোঁট ছুঁয়ে দেয়।স্নিগ্ধ সন্ধ্যার সূর্য ডুবে যায়।চাঁদের আবির্ভাব হয়।সফেদ আলো ছড়িয়ে পড়ে আশেপাশে।কানায় কানায় ভরে উঠে মুগ্ধতা।মেঘের দেখা মিলে।চাঁদের উপরে ভাসছে একদলা মেঘ।মাঝে মাঝে ঢেকে দিচ্ছে চাঁদের সৌন্দর্য।তুতুলের গায়ের সেই মন-মাতানো ঘ্রাণ ছড়িয়ে পড়ছে রিঝের অস্তিত্বে।নাড়িয়ে দিচ্ছে নিজের আপন অবাধ্য সত্ত্বাকে।কি মাধূর্যে তৈরি সে?কি মায়ায় বাঁধিয়ে রেখেছে তাকে?কে সে?কার জন্যে সৃষ্টি সে?রিঝ আপন মনে উত্তর দেয় আমার জন্য।শুধু আমার জন্য।অবিশ্বাস্য ভালোবাসায় বাঁধা তার হৃৎপিন্ডটা কেঁপে উঠে।তুতুল সেই কম্পিত ভালোবাসায় ভেসে বেড়ায়।দু’জন দু’জনকে জড়িয়ে ধরে রাখে অনেক্ষণ।আকাশ বাতাস যেনো বলছে তোমাদের সৃষ্টি একের জন্য অপরের।বিচ্ছেদ যেনো তোমাদের ছুঁয়ে দেখতে না পারে।হঠাৎ বাতাস বেড়ে গেলো।মোম নিভে গেলো।তুতুল রিঝের দিকে তাকালো।রিঝ আবার জ্বালিয়ে দিলো।মাতাল কন্ঠে বললো,’ যতবার তোমার জীবনের আলো নিভে যাবে আমি জ্বালিয়ে দিবো।’
তুতুলের চোখ মোমের আলোর মতো জ্বলজ্বল করে উঠে।এতো ভয়ংকর ভালোবাসার মনে কি?সে জানে না।শুধু চায় ভালোবাসাটাই থাকুক।তুতুল রিঝের গালে একটি হাত রেখে বললো,’আমার না একটা সীমাবদ্ধতার রেখা টানতে ইচ্ছে করে।এই যেমন ধরেন এটুকুনি বা এতোটুকুনি ভালোবাসা যাবে।এর বেশি হবে না।লিমিট শেষ বলে সিগনাল দিবে।যেমনটা ফোনের টাকা শেষ হয়ে গেলে দেয়।বেশ ভালো হবে না?’
তুতুলের এমন বাচ্চামু কথা শুনে রিঝের হাসি পেলো।কিন্তু ঠোঁট টিপে সে হাসি থামিয়ে দীঘির সচ্ছ পানি থেকে চোখ তুলে সে পূর্ন্য দৃষ্টি মেলে তুতুলকে একপলক দেখে নেয়।নাকের ডগায় নেমে আসা চশমাটা ঠেলে সরিয়ে দিতে দিতে বলে,’ সেটা তো হয় না।এটা অনুভুতির ব্যাপার।এতে তো মোবাইল কোম্পানির মতো লাভক্ষতির হিসেব নেই।’
‘ থাকা উঁচিত ছিলো।’
রিঝ হাসলো।গাল টেনে দিয়ে বললো,’ তুমি একটা পাগল।’
‘ আপনার সাথে থাকতে থাকতে হয়েছি।আপনি করেছেন পাগল আমায়।’
‘ ভালোবাসো?’ রিঝের চোখ জোড়া অদ্ভুত ভাবে দীপ্তিমান হয়ে উঠে।তুতুল হেসে উঠে বললো,’ না বাসি না।অতো সময় নেই।’
রিঝও হাসলো।বললো,’ কবে বলবে ভালোবাসো?’
‘ আমার মৃত্যুর সময়।ততোদিন পর্যন্ত অপেক্ষা করুন।’
রিঝের আগুন চোখে তাকালো।হঠাৎ নৌকা নাড়িয়ে তুললো।দুজনেই ধপ করে পড়লো দীঘির অথৈয় জলে।তুতুল আকর্ষিক কাজে কিছুই বুঝে উঠতে পারলো না।সে ডুবতে শুরু করলো।রিঝ পানিতে ডুব দিয়ে উঠে প্রশ্ন করে,’ আর বলবে??’
তুতুলের নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে যাচ্ছে।হাঁপড়ের মতো শব্দ করতে থাকে সে।কয়েক সেকেন্ড পরে সে বললো,’ বলবো না প্লিজ রিঝ ভাই বাঁচান।’
রিঝ দু’হাতে উন্মুক্ত কোমড় জড়িয়ে ধরে।অনেক পানি খেয়ে তুতুলের চোখমুখ লাল হয়ে যায়।রিঝের গলা জড়িয়ে নিজেকে উপরে তুলে আনে অনেকটা।জোড়ে জোড়ে নিঃশ্বাস নিতে শুরু করে।সব আয়োজন পানিতে ভাসছে।রিঝ হাসতে শুরু করে।তুতুল নিজেকে সামলে বললো,’ আপনি সত্যি পাগল রিঝ ভাই।এসব কেউ করে??আমি তো মরেই যেতাম।আপনি জানেন না আমি সাঁতার পারিনা।’
তুতুল কাশতে শুরু করে।মাথার চুল,শাড়ি,শরীর সব ভিজে একাকার।রিঝ হাসিতে ফেঁটে পড়ে বললো,’ মৃত্যু তোমার জন্যে এতো তাড়াতাড়ি আসেনি।আমি আছি তো না কি?’
‘ আপনিই তো মারতেন।থেকে কি লাভ হলো।’
রিঝ তুতুলকে আরো গভীর আলিঙ্গন করে বললো,’ এই যে ধরে রেখেছি।বলতে গেলে কেনো ওসব।আমি ভালোবাসা যেমন ভয়ংকর শাস্তিও।বুঝলে তুলাপাখি।’
হঠাৎ শব্দ করে মেঘ ডাকে।ঝুমঝুমিয়ে বৃষ্টি নামে।তুতুল হতভম্ভ হয়ে বললো,’ আপনি পরিবেশটাই নষ্ট করে দিলেন।’
‘ আমি??’ রিঝের কন্ঠে অবাকতা।
‘ তা নয় তো কে?’
‘ বৃষ্টি আল্লাহ দিয়েছে।’
‘ নৌকায় ভিজলে আরো ভালো হতো।’
‘ কে বলেছে।আচ্ছা এখন তুমি আমার সাথে ডুব দিবে।পানিতে।চোখ খোলা রাখবে।’
তুতুল দ্রুত বললো,’ না না।আমি পারবো না।’
‘ আরে চেষ্টা করো পারবে।আমি ধরেছি।’
রিঝ তুতুলের দু’হাত নিজের হাতে নেয়।বৃষ্টির পানিতে কিছুই দেখা যাচ্ছে না।তাকাতে পারছেনা ভালো করে।দু’জনে ডুব দেয়।তুতুল চোখ খোলা রেখেও রিঝকে দেখতে পেলো না।পায়ে কিছু অনুভব করে।ভয়ে আঁতকে উঠে তুতুল।কিন্তু সে উঠতে পারছে না।কিছুক্ষণ পরে দু’জনেই উঠে আসে।তুতুলের চোখ রক্তের মতো লাল।গাল লাল।তুতুল চিৎকার করে বলে,’ পায়ে কিছু ছিলো।’
কোমড় পর্যন্ত পানিতে এসে দাঁড়ায় দু’জনে।তুতুলের এখন অন্যরকম ভালো লাগছে।নতুন অভিজ্ঞতা হয়েছে তার।রিঝ পাঁজাকোলা করে।তুতুল পা পানিতে নাচায়।পানির ছিটে পড়ে চোখেমুখে।সে দেখলো পায়ে সাদা কিছু একটা জ্বলজ্বল করছে।পা’টা কাছে নিয়ে এসে দেখলো পায়েল।রিঝের দিকে তাকায়।রিঝ হেসে বললো,’ তোমার পায়ে আমার হাত ছিলো।বোকা মেয়ে।’
খুশি,আনন্দ,ভালো লাগায় তুতুল নিজের শরীর ভাসিয়ে দেয়।দু’জনে ভাসতে শুরু করে।তুতুল সেই প্রথম সাঁতার কাঁটে।রিঝের হাত ধরে।একা পারে না।ভালোবাসার মায়াবী মোহনায় ভাসে দু্’জন।মাঝে যায়।আবার এক সাথে ডুব দেয়।বৃষ্টির বর্ষণ বাড়ে।তুতুলের দু’টি হাত জড়িয়ে আছে রিঝের গলা।রিঝের দু’টি হাত আকঁড়ে আছে তুতুলের সরু হয়ে বেঁকে যাওয়া কোমড়।ঠোঁট দু’টি কাঁপছে দুজনের।রাত বাড়ছে।আশেপাশের লাইট জ্বলে উঠে।উজ্জ্বল আলোয় রিঝ আবিষ্কার করে এক অবিশ্বাস্য সৌন্দর্যের রাজকন্যাকে।মুখ বেয়ে গড়িয়ে পড়ছে পানি।বৃষ্টির পানি।ঠোঁটের কোণ ঘেঁষে কালো তিল উজ্জ্বল হয়ে উঠে।রিঝের দৃষ্টি এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে।বুকের অবাধ্য পাখি ডানা ঝাপটে বেড়াচ্ছে ছন্নছাড়া ভাবে।সে নিজের হুশ হারিয়ে বসে।তুতুলের শরীর মন জুড়ে বাজচ্ছে তুফানের ধ্বনি।বুক কাঁপছে ধকধক শব্দে।রিঝ প্রশ্ন করলো না।জানতে চাইলো না।কথা বললো না।নিরব হয়ে শুধু চেয়ে রইলো।হঠাৎ বিদ্যুৎ বেগে ভয়ংকর কাজ করে বসে।নিজের ওষ্ঠাধর চেপে ধরে তুতুলের ওষ্ঠাধরে।অপ্রতিরোধ্য কিছু ছোঁয়ার বর্ষণ করে সে।তুতুল প্রথমে অবাক হয়।কিছুসময় শুধু হিতাহিত জ্ঞান শূন্যের মতো চেয়েরয়।কিছুসময় পরে রিঝ ছেড়ে দেয়।চোখ বুঝে শ্বাস নেয়।তুতুল খারাপ কিছু ভাবলো না কি ভেবে সে চট করে তাকায়।তুতুলের গোলগোল চোখ আরো গোল হয়ে আসে।এক হাতে নিজের ঠোঁটের উপরে আলতো ভাবে ছুঁয়ে ঝিমধরা চোখে তাকিয়ে রইলো সে।রিঝ বললো,’ আমি আসলে কি ক…’
রিঝ কি বলবে খুঁজে পেলো না।অপ্রস্তুত হয়ে পড়ে সে।হাতজোড়া ছেড়ে দেয় সে।তুতুল ডুবে যেতে নেয়।রিঝ ঝুঁকে ধরে।উত্তেজিত কন্ঠে বলে,’ আমি স্যরি।খুব স্যরি।’
তুতুল হেসে ফেলে।কেনো হাসলো সে জানে না।তার খুব লজ্জাপাচ্ছে।ইচ্ছে করছে পানিতে ডুব দিতে।কিন্তু সে একা কিভাবে ডুব দিবে?একা তো ডুব দিতে পারে না সে।ডুবে যাবে।তুতুল রিঝের কাধের কাছে আসে।ফিসফিস করে বলে,’ আপনার ঠোঁট জোড়া পানসে।আমারটা কেমন??’
বলেই তুতুল হাসলো।রিঝও হাসলো।কন্ঠে মোহনীয় মাতালতা মিশিয়ে বললো,’ অনেক মিষ্টি।মধু হার মানবে।মিষ্টি হিংসে করবে।আমার ঠোঁট তৃপ্তির আগুনে জ্বলবে।’
তুতুল লজ্জায় রিঝের বুকে মুখ লুকালো।রিঝ আবার ডুব দিলো।এই ডুবটারই প্রয়োজন ছিলো।উঠে এসে তুতুলের কানে চুমু দিলো।ঠোঁটে ডুবিয়ে দিলো ঠোঁট।আলতো স্পর্শ আকঁড়ে নিলো ঠোঁটের উষ্ণতাকে।কতক্ষণ পরে ছেড়েছে তারা জানে না।রিঝ এক মুঠো পানি তুতুলের গালে ছড়িয়ে দিলো।দু’টি শরীর উষ্ণতা খুঁজে পাচ্ছে নিজেদের ছোঁয়ায়।রিঝ তুতুলকে ঘুরিয়ে নেয়।পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে কাঁধে মুখ ডুবিয়ে দিয়ে নেশাকাতর কন্ঠে বললো,
‘ প্রথম দেখায় আমি প্রেমে পড়েছি।
সদ্য ফোটা গোলাপের মত আমি সতেজ হয়েছি।
তার চোখের ভাষায় নিজেকে হারিয়েছি
আমি দেউলিয়া হয়েছি
আমি পাগল হয়েছি
হ্যাঁ আমি ভালোবেসেছি।
গভীর নেশায় মেতেছি
তার কোঁকড়া চুলের বাহার দেখেছি।
নিজেকে বিলিন করেছি।
তার কৃষ্ণচূড়ায় মরেছি।
তার রঙে ভেসেছি
আজ আমি প্রেমিক হয়েছি
তার প্রেমের নেশায় মত্ত হয়েছি
আমি দিওয়ানা হয়ে ঘুরছি
তার কৃষ্ণচূড়ার রঙের সন্ধান করছি।
আর নিজেকে উজাড় করে শুধু তাকেই ভালোবাসছি।
শুধু বেসেই যাবো।
অনন্ত কাল আমি শুধু এই ভালোবাসার সাগরে ডুবেই রইবো।’

__________
#চলবে…………
ভুলগুলো আল্লাহর দেওয়া মহান গুন ক্ষমার চোখে দেখবেন।
__________
#চলবে…………
ভুলগুলো আল্লাহর দেওয়া মহান গুন ক্ষমার চোখে দেখবেন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here