কৃষ্ণবেণী পর্ব -১৩+১৪

#কৃষ্ণবেণী
#পর্ব_১৩
#নন্দিনী_নীলা

“আপনার না কাজ আছে? আপনি কাজ রেখে এখানে কি করছেন?” ঢোক গিলে বলল তৃষ্ণা।
জায়ান কপালে হাত বুলিয়ে রাগী চক্ষে তাকিয়ে আছে তৃষ্ণার দিকে। তৃষ্ণা থেকে থেকে শুকনো ঢোক গিলছে।
জায়ান শক্ত গলায় বলে,” এই মেয়ে তোমার প্রবলেম কি?”
তৃষ্ণা ভয়ে শাড়ির আঁচল শক্ত করে চেপে ধরে বলল,” আপনি কি বেশি ব্যথা পাইছেন? আমি না আসলে ভূত ভেবে চামচের বারি মেরে ভূত তাড়া চ্ছিলাম।”
“আমাকে তোমার ভূত মনে হলো!” ভ্রু কুঁচকে বলল।
” না মানে আসলে ভুলে আর ভয়ে উল্টোপাল্টা ভেবেছি। ক্ষমা করেদিন।” অসহায় মুখ করে বলল তৃষ্ণা।
জায়ান আগুন চক্ষু মেলে তাকিয়ে আছে তৃষ্ণার দিকে। ওর রোমান্টিকতার বারোটা বাজিয়ে এখন ক্ষমা চাওয়া হচ্ছে। ফাজিল মেয়ে।
“কফি দাও।”ধমক দিয়ে বলে উঠল জায়ান।
তৃষ্ণা ধমক খেয়ে থতমত খেয়ে গেল। আর এলোমেলো হাত মেলে তাড়াতাড়ি মগে কফি ঢালতে গিয়ে নিজের পায়ে গরম কফি ফেলে দিল।
কেবল চুলায় থেকে নামিয়ে ছিল আগুন গরম কফি। কফি পায়ে পরতেই তৃষ্ণা মৃদু আর্তনাদ করে চোখ মুখ কুঁচকে ফেলল। জায়ান তৃষ্ণার এমন বেখেয়ালি পনা দেখে রাগান্বিত চক্ষে একবার তৃষ্ণা মুখশ্রী দেখে পায়ের দিকে তাকাল। ফর্সা পায়ে গরম কফি পরতেই লাল বর্ণ ধারণ করেছে।
জায়ান বিড়বিড় করতে লাগল,”এ কাকে আমি কফি করার জন্য পাঠিয়ে ছিলাম! এ আমার সেবা করতে এসে নিজেই রোগী হয়ে গেল!!”
নিজের কপালে এখন নিজেই বারি মারতে ইচ্ছে করছে জায়ান এর।

“একটা কাজও ঠিকমতো করতে পারো না! তোমাকে কাজ দেওয়াটাই আমার ভুল হয়েছে। দিলে তো নিজের পা পুড়িয়ে।”
তৃষ্ণা দাঁতে দাঁত চেপে নিজের ব্যথা সহ্য করার আপ্রান চেষ্টা করছে। কাঁপা কাঁপা হাতে কফির মগ জায়ানের দিকে বারিয়ে দিল তবুও। জায়ান তৃষ্ণার হাত থেকে কফি না নিয়ে তৃষ্ণা কে পাঁজকোলে তুলে নেয়। হকচকিয়ে তৃষ্ণা কফির মগ দ্রুত পাশে রাখে। আতংকে উঠা গলায় বলে উঠে,” আপনি কি পাগল আমাকে পুড়িয়ে মারতে এভাবে কোলে নিতে আসছেন?”
” নিজের ভুলে পা পুড়িয়েছো আমি না হয় গা পুড়িয়ে দিব। সমস্যা কি সেই এক‌ই কষ্ট পাবে‌।”
” নামান আমাকে আমি আপনার কোলে থাকব না।”
” আর আমি নামাবো না।”
” আপনি সব কিছুতে জোর করেন কেন?”
” তুমি করতে পারো না তাই !”
তৃষ্ণা গাল ফুলিয়ে চুপ করে র‌ইল। জায়ান তৃষ্ণাকে কফির মগ হাতে নিতে বলে রুমের দিকে পা বাড়াল।

আয়ান আজ সারাদিন বাসার বাইরে ছিল। আজ বাসায় আসার ইচ্ছাই ছিল না কিন্তু জেসমিন বেগম এর কল এ অতিষ্ঠ হয়ে বাসায় এসেছে। ড্রয়িং রুমে পা রাখতেই জায়ানের কোলে তৃষ্ণা কে দেখে ওর মেজাজ টাই খারাপ হয়ে যায়। আয়ান সোফার হাতল ধরে রাগ কিড়মিড় করতে লাগে।
ভাই তো দূরে ছিল তৃষ্ণার থেকে তাহলে এসব কি দুজনে এতো ঘনিষ্ঠ হয়ে আছে কেন? আর ভাই তৃষ্ণা কে নিজের রুমে নিয়ে যাচ্ছে কেন? কথা তো ছিল আলাদা রুমে থাকবে দুজন। কি হচ্ছে এসব?
একদিন দুইদিন এখন থেকে কি তাহলে দুজনে এক রুমে এক বিছানায় থাকবে পার্মানেন্টলি?
আয়ান নিজের রুমে এসে দেখে উষসী ফোনে ভিডিও কলে কথা বলছে নিজের ফ্রেন্ড সার্কেলের সাথে। উষসী আয়ান কে দেখে ফট করেই কল কেটে দেয়।
আর আহ্লাদ গলায় এগিয়ে এসে বলে,”তুমি তো আজ আসবে না বলেছিলে!”
” কেন এসে তোমায় বিপদে ফেলে দিলাম মনে হয়!”
” কি বলছো বিপদে ফেলবে কেন? আমি তো তোমাকে আসতেই বলছিলাম তুমিই তো আসবে না বললে। তুমি আসছো আমি কত খুশি হয়েছি জানো?”
” সরো তো তোমার ন্যাকামি বিরক্তকর লাগছে।”
“কার রূপে আবার ফাসলে যে আমাকে বিরক্ত লাগছে!”
আয়ান সরে আসতে চাইলে উষসী আয়ানের হাত ধরে আটকে বলে,”সেদিনের ব্যবহার কিন্তু আমি এখনো ভুলিনি আয়ান। তুমি আমায় আঘাত করেছিলে। এখনো আমি কাউকে কিছু জানায়নি। আমার প্রশ্নের উত্তর না দিলে এসব তোমার মাকে জানাতে বাধ্য হব।”
“তুমি আমাকে থ্রেট দিচ্ছো?”
“সাবধান করছি। আমায় ঠকানোর চেষ্টা করো না। না হলে তোমার সর্বনাশ করতে আমি দুইবার ভাববো না।”
“তোমারে ধমকিতে আমি আয়ান ভয় পাবো! ভাবলে কি করে? যা খুশি করে নাও। তোমাকে বিয়ে করেছি এই বেশি। এছাড়াও আমার ব‌উ হওয়ার কোনো যোগ্যতা নাই তোমার।”
“আমি তোমার মত একটা ছেলেকে বিয়ে করছি এটাই তোমার সাত কপালের ভাগ্য। না হলে কে বিয়ে করতো তোমার মতো চরিত্রহীন লম্পট ছেলেকে? আর তুমি আমায় বাধ্য হয়ে না নিজেদের স্বার্থ সিদ্ধির জন্য বিয়ে করেছো। আমার বাবা তোমাদের পাশে না থাকে তোমরা কবে মাটির সাথে মিশে যেতে। জায়ানের উপায় দুর্বল ছিলাম আমি জায়ান এর কাছে পাত্তা না পেয়ে আমি তোমায় বিয়ে করেছি। শুধু ওর মত দেখতে বলে। না হলে তোমার কোন যোগ্যতাই ছিল না আমার পাশে দাঁড়ানোর। আজ তুমি জায়ানের মতো চেহারা পেয়েছো বলেই আমাকে বিয়ে করতে পেরেছো। তোমার তো কোনো যোগ্যতাই নাই নিজে কিছু করার শুধু আছে মেয়েদের দিকে নিকৃষ্ট নজর দেওয়া আর তাদের ভোগের বস্তু ভাবা।”
রাগে আয়ান উষসী’র গাল চেপে ধরল। উষসী ধাক্কা দিয়ে আয়ান কে নিজের থেকে সরিয়ে জোরে জোরে শ্বাস নিতে লাগল।

“এখনো পুরানো নাগরের প্রতি তোর টান যায়নি। তুই আমার সামনে জায়ানের গুন গান গাইছিস! তোকে তো আজ আমি মেরেই ফেলব।”
এগিয়ে ধরতে যাবে তখনি রুমে প্রবেশ করে জেসমিন বেগম দুজনের এমন রেষারেষি দেখে তাড়াতাড়ি এসে আয়ানকে ধমক দেয়।
আয়ান রাগে ফুঁসতে ফুঁসতে বাথরুমে ঢুকে যায়।
জেসমিন বেগম উষসীর দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করে কি হয়েছে? উষসী কিছু না বলে বিছানায় শুয়ে পরে।
আয়ান বেরিয়ে আসতেই জেসমিন বেগম তাকে তার রুমে যেতে বলে বেরিয়ে যায় রুম থেকে। আয়ান নিজেও একটু পর মায়ের রুমে এসে উপস্থিত হয়।

তৃষ্ণাকে বিছানায় বসিয়ে জায়ান বরফ আনতে যায় একহাতে কফি নিয়েই।
ফিরে এসে তৃষ্ণার পা টেনে বরফ দিতে দিতে বলে,”তোমায় একটা কাজ দিলাম। উল্টো তুমি আমার দশটা কাজ বাড়িয়ে দিলে। কোথায় আমার হেল্প করবে আমার কাজ কমিয়ে দিবে। তা না ঝামেলায় ফেলে দিলে।”
তৃষ্ণা কাঁচুমাচু মুখ করে পা টেনে সরিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছে। স্বামী হয়ে জায়ান ওর পা ধরেছে ও লজ্জায় পা টেনে নেওয়ার চেষ্টা করছে। জায়ান সেটা বুঝতে পেরে একটা ধমক মারলো। তৃষ্ণা কেঁপে উঠল।
“পা টানছো কেন? দেখছো না বরফ লাগাচ্ছি! এমনিতে আমার রোমান্টিকতার বারোটা বাজিয়েছো। এখন সেবা করতে ও দিবানা। পায়ে ফোসকা ফেলে আমাকে আরো ভোগান্তি করতে চাচ্ছো?”
” আমি ইচ্ছে করে আপনাকে আঘাত করিনি।”
“আমার গায়ে কেউ টোকা দেওয়ার সাহস করতে পারে না। আর তুমি আমায় যখন তখন মারার হুমকি দিচ্ছো এবং কি মেরেও দিচ্ছো!”
“ওসব তো ভুলে করেছি ইচ্ছে করে করে নি সত্যি।”
“তোমার সেবা যত্ন করতে করতে আমার কফি ঠান্ডা শরবত হয়ে গেছে। ওদিকে দেখো ১১:৪৫ বাজে এখন রাত জেগে আমার কাজ করতে হবে। বউয়ের সাথে যে একটু শান্তিতে ঘুমাবো সে উপায় ও রাখলে না।”
“এত রাত হয়ে গেছে? আপনি যদি সারারাত কাজ করেন তাহলে তো সারা রাতে ঘরে লাইট জ্বালানো থাকবে আমি ঘুমাবো কি করে?”
“এজন্যই তো তোমার জন্য আলাদা রুম বরাদ্দ করেছিলাম। তুমি তো এখানে থাকার বায়না ধরলে।”
“রাতে কি কাজ করেন? আপনি কি চাকরি করেন?”
“সেসব তোমার না জানলেও চলবে। শুয়ে ঘুমানোর চেষ্টা করো আমি কাজ করি।”
” আমি ঘুমাতে পারব না।”
” তাহলে জেগে আমার সাথে প্রেম করো। করবে?”
তৃষ্ণা লজ্জা পেয়ে মাথা নিচু করে ফেলল।
জায়ান ওর মাথায় টোকা মেরে নিজের জায়গায় গিয়ে বসল। তৃষ্ণা শুয়ে জায়ানের দিকে তাকিয়ে আছে। জায়ান মনোযোগ দিয়ে কাজ করছে তার ফাঁকে ফাঁকে একটু পর পর তৃষ্ণার দিকে তাকাচ্ছে। যতবারই তাকিয়েছে ততবার দেখেছে তৃষ্ণা ওর দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। জায়ান চোখের ইশারার তৃষ্ণা কে ঘুমাতে বলছে অন্যদিকে ফিরতে বলছে তৃষ্ণা মাথা মুন্ডু কিছুই বুঝে নি। ও এক‌ই ভাবে আছে।

জায়ান ফট করে দাঁড়িয়ে পরল। আর তৃষ্ণা দিকে এসে ঝুঁকে বলল, ” কি হচ্ছে ডিস্টার্ব করছো কেন?”
তৃষ্ণা হকচকিয়ে বলে,” কি?”
“বিরক্ত করছো কেন?”
“বিরক্ত কোথায় করলাম আমি তো শান্ত হয়ে শুয়ে আছি?”
” শান্ত হয়ে আছো রিয়েলি?”
” কি করেছি আমি বলুন আপনি!”
” আমার দিকে ওইভাবে তাকিয়ে আছো কেন? আমার সমস্যা হচ্ছে বুঝতে পারছো না? একদম ঐ ভাবে আমার দিকে তাকিয়ে থাকবে না। নাহলে একদম মেরে ফেলব। তোমার জন্য আমি মায়ের কাছে কথা শুনতে পারব না। আমার কাজ শেষ করতে দাও।”
” আমার ঘুম আসছে না। আমি দেখছি আপনার কাজ।”
জায়ান চাদর নিয়ে তৃষ্ণার মাথা ডেকে দিল।
” এবার ঘুমাও একদম মুখ খুলবে না।”

#চলবে….#কৃষ্ণবেণী
#পর্ব_১৪
#নন্দিনী_নীলা

” উষসীর সাথে আবার খারাপ বিহেভ করেছো?” শক্ত গলার বলল জেসমিন বেগম।
“ওর কথা বাদ দাও তো। তুমি আমাকে বাসায় আসার জন্য তারা কেন দিলে সেটা বলো!”
“বাদ দেব কেন? বলেছিনা ওর সাথে কোন রকম খারাপ বিহেভ করবে না।”
“আম্মু, ওকে জাস্ট আমার এখন সহ্য হয় না। তুমি তো জানোই প্রথম থেকে ওকে আমি সহ্য করতে পারি না। তবুও ওকে আমি এক বছর ধরে সহ্য করে আসছি। আর কতদিন ওকে আমার সহ্য করতে হবে? দিন দিনও নিজের সীমা পেড়িয়ে যাচ্ছে। আমার কাছে আমার কাজের জন্য কৈফিয়ত চাচ্ছে। আমি কি করব না করব ওই ফকিন্নির বাচ্চাকে তার কৈফিয়ত দেবো?”
” নিজের রাগকে সংযত করো। উষসীর সাথে কোন রকম খারাপ ব্যবহার করবে না এটাই আমার লাস্ট ওয়ার্নিং। ওর প্রয়োজন যতদিন আছে ততদিন ওকে ওর মতো থাকতে দাও। ওর কথা মেনে নেওয়ার চেষ্টা করো।”
” ওকে এতোই তোমার প্রয়োজন জায়ানের বউ করে আনলেই পারতে। সব প্রয়োজনে আমাকে কেন বলি দিতে হবে?”
“তুমি এখন আমাকেও প্রশ্ন করতে শুরু করে দিয়েছো?”
“আমি প্রশ্ন করলে আমাকে ধমক দিতে পারো। অথচ ভাইকে ধমক দেওয়ার সাহস তোমার নেই কিন্তু কেন?”
” যে কাজের জন্য তোমাকে এনেছি সেই কাজটা করো। অযথা প্রশ্ন করে টাইম ওয়েস্ট না করে।”
আয়ান রাগে ফুঁসতে লাগল। জেসমিন বেগম আয়ানকে একটা রুমে নিয়ে আসলো। আয়ান নিজের কাজ শেষ করে আর একবারও জেসমিন বেগমের দিকে তাকালো না নিজের রুমে চলে আসলো।

তৃষ্ণা জাগ্রত হতে দেখতে পায় সকাল হয়ে গেছে আর জায়ান সোফায় হেলান দিয়ে ঘুমিয়ে আছে। তৃষ্ণা শোয়া থেকে উঠে বসে জায়ানের দিকে তাকিয়ে ভাবে।
উনি কি তাহলে সত্যি সারারাত জেগে কাজ করেছে? বিছানার আশায় সময়টুকু পায়নি! ঘুমিয়েছে কখন?
তৃষ্ণা ওঠে জায়ানের সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে হাত নাড়ায়। ঘাড় বাঁকা করে ঘুমিয়ে আছে উনার কি ঘাড় ব্যথা করবে না? ডাকবে না কি ডাকবে না ভেবে ডেকেই উঠে। জায়ান ঘুমঘুম চক্ষু মেলে তাকিয়ে সামনে সদ্য ঘুম থেকে ওঠা তৃষ্ণাকে দেখে থমকে যায়। তৃষ্ণা এলোমেলো চুলগুলো বড় খোপা করে দাঁড়িয়ে আছে তার সামনে। ঘুম থেকে উঠেছে কেবলই এজন্য মুখের উপর তৈলাক্ত ভাব ফুটে উঠে আছে। জায়ান তৃষ্ণার এই রুপ দেখে কিছুক্ষণ হাঁ করে তাকিয়ে আছে। কথা বলতে পারছে না। ওর চোখে তৃষ্ণা কে এই রুপে অপরুপ সুন্দর লাগছে।সাথে প্রচন্ড খুশি হলো ঘুম থেকে উঠে এমন একটা দৃশ্য দেখে ওর মনটা ফুরফুরে হয়ে গেল। ও ঘুমিয়েছে ঘন্টাখানিক হবে। সারারাত ধরে কাজ করেছে। কাজ আর কি করেছে বেশিরভাগ সময় তৃষ্ণার ঘুমন্ত মুখের দিকে হা করে তাকিয়ে থেকেছে। কিন্তু কাছে যেতে পারে নি কাছে গেলে যে আর কাজে আসতে পারবে না। আর রাতের মধ্যে কাজ কমপ্লিট না হলে কাল বড় একটা ক্ষতি হয়ে যাবে। এমনিতেই মায়ের মুখে সারাক্ষণ বউ এনে নাকি কাজের গাফিলতি করে এসব শুনতে হয়। এজন্য জিদ্দি মনে আজকে কাজটা শেষ করবে ভেবেছিল।

জায়ান নেশাক্ত চোখে তাকিয়ে আছে আর এদিকে তৃষ্ণা জায়ান কে অদ্ভুত ভঙ্গিতেই তাকিয়ে থাকতে দেখে ডেকে যাচ্ছে বিছানায় গিয়ে শুতে বলছে। সারারাত কাজ করেছে ক্লান্ত এখানে না শুয়ে বিছানায় গিয়ে ঘুমিয়ে নিতে। জায়ান ওর কথার কোন উত্তরও দিচ্ছে না নড়ছেও না। এক দৃষ্টিতে ওর দিকে তাকিয়ে আছে।
তৃষ্ণা মুখটা বিকৃত করে চেয়ে আছে। জায়ান চোখ বন্ধ করে আবার তাকিয়ে উঠে ওয়াশরুমে চলে গেল। বেরিয়ে এলো চোখে মুখে পানি দিয়ে। সারারাত জেগে থাকার ফলে চোখ দুটো লাল বর্ণ হয়ে আছে। তৃষ্ণা দাঁড়িয়ে জায়ানের কান্ড কারখানা দেখছে। জায়ান তোয়ালে দিয়ে মুখ মুছে রেডি হতে লাগল বাইরে যাওয়ার জন্য। তৃষ্ণা জায়ানকে পরিপাটি হতে দেখে ধরে ফেলেছে জায়ান আর বিশ্রাম নেবে না। তৃষ্ণা এগিয়ে এলো ডেসিং টেবিলের সামনে। জায়ান তখন চুল পরিপাটি করছিল।

“আপনি এই সাত সকালে কোথায় যাবেন?”
জায়ান নিজের কাজ করতে করতেই বললেন,,”সারারাত যে কাজ করলাম সেটা সম্পূর্ণ করে আসি। তুমি এখন আমায় ডেকে ভালোই করেছো। বাঁকা হয়ে শুলেও দুই তিন ঘন্টার আগে জাগ্রত হতে পারতাম না। থ্যাঙ্ক ইউ।”
বলেই তৃষ্ণার দিকে তাকিয়ে হাসলো। তৃষ্ণা বোকা চোখে তাকিয়ে আছে।
“আপনি ঐ কাগজ পাতিতে কি করলেন রাতভর? এতো সকালে আবার কি কাজ সম্পন্ন করতে যাবেন? ঘুমাবেন না অসুস্থ হয়ে যাবেন তো।”
“বললেই কি তুমি বুঝতে পারবে? জেগে থাকার অভ্যাস আছে এতো সহজে আমি অসুস্থ হয় না।”
থতমতো খেয়ে গেল তৃষ্ণা। মাথা নিচু করে বলল,,”বুঝতে পারব না বলে আপনি আমাকে কিছুই বলবেন না? যখন জানেন আমি কিছু জানতে বুঝতে পারব না। তাহলে আমার মত অশিক্ষিত মেয়েকে আপনি বিয়ে করলেন কেন? এখন বুঝতে পারব না বলছেন।”
“তোমার যেমন জানার বোঝার এত আগ্রহ। আমার তো জানানোর আর বোঝানোর এত আগ্রহ নাই। তুমি এসব না জানলে বিরাট কোন ক্ষতি হয়ে যাবে না তাই তুমি তোমার মতোই থাকো।”
তৃষ্ণা মাথা নিচু করে ফট করে একটা কথা বলে উঠল,”আমি শুনেছি গেরামের মেয়েকে শহরের ছেলেরা বিয়ে করে আনে ঠকানোর জন্য তাদেরকে কাজের লোকের মত খাটানোর জন্য। আপনিও কি সেই রকম মনোভাব থেকে আমাকে বিয়ে করেছেন? আপনি আবার আমাকে ঠকাবেন না তো?”
বলেই ঢোক গিলল।
মুখ ফসকে কথাটা তো বলে ফেলল এখন যদি এর জন্য ধমক খেতে হয়।

জায়ান অবাক চক্ষে তাকিয়ে আছে তৃষ্ণার দিকে। তৃষ্ণার কথা শুনে জায়ানের চোখ দুটো বড়ো বড়ো হয়ে উঠেছে। এমন প্রশ্নের সম্মুখীন হবে ও কল্পনা করতে পারেনি।
“তোমার মাথায় এসব কথা আবার কে ঢুকিয়েছে? কাজের লোকের মতো কি তোমাকে তো কাজ‌ই করাই না।”
“কে ঢুকাবে? এটা তো সত্য কথাই‌। এবার যখন বাসায় গিয়েছিলাম তখনও তো আমার চাচিরা এসে বলছিল এতো বড়লোক বাড়ি থেকে আমাকে কেন বিয়ে করে নিয়ে গেল! আমিতো আপনাদের বাড়ির বউ হওয়ার যোগ্য না।”
“বিয়ে করেছি আমি। আমার ব‌উয়ের যোগ্যতা আমি দেখব নাকি আমার বউয়ের যোগ্যতা আছে কিনা সেটা তোমার চাচীরা ঠিক করে দেবে?” রাগান্বিত গলায় বলল।
তৃষ্ণা জায়ানের রাগান্বিত কন্ঠস্বর শুনে চুপ মেরে গেল আর কথা বলা সাহস করল না। জায়ান তৃষ্ণার দুই বাহুতে হাত রেখে বলল,”তোমার ঐ থার্ড ক্লাস চাচীদের জন্য তুমি তোমার বাড়িতে যাওয়ার অধিকার হারালে। যারা আমার নামে তোমার কাছে খারাপ কথা বলতে আসবে তারা কেউ তোমার জীবনে থাকতে পারবে না। মনে রেখো।”
তৃষ্ণা বিস্মিত চোখে তাকাল জায়ানের দিকে।
” কি বলছেন এসব?”
জায়ান একটা ফাইল হাতে রুম থেকে বেরিয়ে গেল। তৃষ্ণা জায়ানের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে রইল রুমের বাইরে একটা লোক দাঁড়ানো ছিল। জায়ান বের হতেই হাত থেকে ফাইল সেই লোকটা নিয়ে পেছনে যেতে লাগল।

কথাটা বলে কি নিজের পায়ে নিজে কুড়াল মারলাম। আচ্ছা উনি তো এমনি কথাটা বলতে পারে। আমি এতো ভাবছি কেন? সামান্য একটা ব্যাপার নিয়ে উনি আমায় এতো বড়ো শাস্তি কেন দিবে? বেশি ভাবছি ধুর বকুল কি করছে দেখে আসি।
তৃষ্ণা ফ্রেশ হয়ে বকুলের খোঁজ করতে গেল। উর্মি এখনো ঘুমাচ্ছে কিন্তু বকুল নাই তৃষ্ণার আগমনে উর্মির ঘুম পাতলা হয়ে আসে।
উর্মি বলে, কি হয়েছে ভাবী?”
“বকুল কোথায় ওকে দেখতে পাচ্ছি না!”
“ও তো আরো কিছুক্ষণ আগেই উঠে বাইরে চলে গেছে। আমাকে ডেকেছিল আমি রাতে একটু বেশি সময় জেগে ছিলাম এজন্য উঠতে পারিনি ও বলল ও নাকি তোমার কাছে যাবে। আর আমি তো জানি আজকে ভাইয়া সকালে চলে যাবে। তুমিও জেগে গেছো। তোমাদের রুম ও চেনে এজন্য আমি আর বাইরে যায়নি। দেখো বাসায় ভেতরেই কোথাও আছে হয়তোবা ঘুরতেসে।”
” হুম। ”
তৃষ্ণা তাড়াতাড়ি বেরিয়ে আসে। এই বাসার প্রত্যেকটা মানুষ রহস্যজনক। ও একা একা কোথায় চলে গেল? এই মেয়েটা ও না আমার কাছে না গিয়ে একা কোথায় চলে গেছে। সব রহস্যজনক মানুষের মাঝে ও ওই খারাপ লোকটাও আছে সেখানে বকুল একা একা ঘুরতেছে না জানি আবার তার চোখে পড়ে যায়।
তৃষ্ণার যত ভয় আয়ান কে নিয়ে যদি আয়ান বকুলের কোন ক্ষতি করে দেয় তার ছোট্ট বোনটা যদি কোন ক্ষতি হয়ে যায় আয়ানকে একটু ও বিশ্বাস নাই। যে তার ভাবীর দিকে এমন কুনজর দিতে পারে সে যে কারো সর্বনাশ করে দিতে পারে।

সারা বাসা তন্ন তন্ন করে খুজলো বকুলকে। তৃষ্ণা কোথাও বকুলের দেখা না পেয়ে ছাদে পর্যন্ত গেল বাসার আরেকটা কাজের মেয়েকে নিয়ে। কারণ লিয়া তখন সকালের ব্রেকফাস্ট তৈরি করছিল। ভয়ে তৃষ্ণার হাত পা কাঁপছে কি করবে ভেবে না পেয়ে দিশেহারা হয়ে পরছে।
তখন দেখা হয় উষসীর সাথে তৃষ্ণা কে উদ্বিগ্ন হয়ে হাঁটতে দেখে এগিয়ে এসে জিজ্ঞেস করে কি হয়েছে?
তৃষ্ণা কান্না করে দিয়ে বলে,”বকুল কে কোথাও খোঁজে পাচ্ছি না। ঘুম থেকে উঠে কোথায় চলে গেল!”
“আরে তুমি কাঁদছো কেন? আশেপাশেও কোথাও আছে ভালো করে খুঁজে দেখো। ভোর সকালে কোথায় যাবে?”
“সারা বাসা তো খুঁজলাম কোথাও নাই।”
“বাগানে দেখেছো?”
“না বাইরে তো যাইনি‌।”
“সিউর বাইরে গেছে তুমি একবার বাইরে চেক করো। বোকা মেয়ে একটুতে কান্না করে দিয়েছো। এতো সিকিউরিটি গার্ড এই বাসায় কারো কোন ক্ষতি হবে না টেনশন নিও না।”

#চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here