কৃষ্ণবেণী পর্ব -২৮+২৯

#কৃষ্ণবেণী
#পর্ব_২৮
#নন্দিনী_নীলা

আয়ান হসপিটালে থেকে বাড়ি এলো উষসীর মৃত্যুর
একদিন পর‌‌ই। বাসার সবার মনে অবস্থা খারাপ।
উষসীর মৃত্যু তে পরিবেশ থমথমে হয়ে গেছে। হঠাৎ মৃত্যু কেউ‌ই মেনে নিতে পারছে না। এখানে সবাই মন মরা থাকলেও আয়ান আছে শান্তিতে নিশ্চিতে। সবার সামনে নিজের নাটক শুরু করে দেয়। কিন্তু বদ্ধ করে আনন্দ উল্লাসে মেতে থাকে। কেউ আর ওর দিকে এতোটা মনোযোগ দিচ্ছে না। এই সুযোগে ও ভালোই মাস্তি করতে পারছে।
উর্মি কে আজ আনতে গেছে জায়ান। ১০ লাখ টাকা চেয়ে কল করেছিল মিহির‌। টাকার দেওয়ার ইচ্ছা নাই। মন মেজাজ খিটখিটে আছে। আজ মিহির কে ধরে কি যে করবে জায়ান জানে না।
দুটি দিন আগেই লোক লাগিয়ে খবর নিয়েছিল কোথায় রেখেছে উর্মি কে। উষসীর মৃত্যু তে দুইদিন কোন কাজে হাত লাগায় নি। উষসীর ফ্যামিলি নিজেদের মতো সর্বোচ্চ চেষ্টা করে যাচ্ছে ওদের হেনস্তা করতে। এদিকে জায়ান এর বিরুদ্ধে কোন একশন নিচ্ছে না। ও নিরুত্তর হয়ে দেখছে আর যা করার সব করছে জায়ানের বাবা। সব কিছুর মোকাবেলা করছে একা। ছেলেকে ও নিজেদের রক্ষা করছে। জায়ানের এমন গা ছাড়া ভাব দেখে উনি নিজেও হতবাক।

জায়ান গন্তব্যে পৌঁছে নিজের লোক দিয়ে জায়গাটা ঘেরাও করে ফেলল। তখনি আরেকটা গাড়ি এসে থামে। গাড়ি থেকে নামে আরিফ।
অতঃপর একজন গার্ড নিয়ে ভেতরে প্রবেশ করল সবাই । জায়ান নির্দিষ্ট রুমে প্রবেশ করে স্তব্ধ। মিহির উর্মির গলায় চাকু ধরে দাঁড়িয়ে আছে। উর্মি ছলছল চোখে ওদের দিকেই তাকিয়ে আছে।

জায়ান ভ্রু কুঁচকে একবার পেছনে তাকিয়ে কিছু ইশারা করে মিহিরের দিকে তাকিয়ে বলল,” একা তুই আমার সাথে টক্কর দিবি?”

ভয়ে মিহিরের কপাল বেয়ে ঘাম পরছে। মিহির শুকনো ঠোঁট জিভ দিয়ে ভিজিয়ে বলল,” টাকা দিন। আমি উর্মি কে ছেড়ে দিব। আর কিছুই না। আপনি লাস্ট বার মুখের কথায় টাকা দিয়ে দিলে আমাকে আর এই কাজ করতে হতো না।”

” উর্মির পিছু ছাড়তে টাকা দিছিলাম। কিন্তু তাতে কাজ হয়নি তুই টাকা নিয়ে ওর পিছু ছাড়লেও ও তোকে ভুলে নাই। তোর মতো শয়তানকে মনে পুষে রেখেছিল। এজন্য লাস্টে টাকা দেইনি। যাতে এমন ভুল করে তুই উর্মির চোখে নিজের স্বরুপ খুলতে পারিস। তুই আসলে কেমন তা তো আর আমার বোন জানতো না তোর মতো কাপুরুষ কে ভালোবেসে কষ্ট পাচ্ছিল। আমি আসলে নিজেই তোকে ব্যবহার করেছি। তুই কি ভেবেছিলি‌ আমার বোনকে আমার চোখের আড়ালে কিডন্যাপ করে সাহসী হয়ে গেছিস? নো নেভার। আমি চেয়েছি বলেই তুই এই কাজে সফল হয়েছিল।”

মিহির নিজেকে যথেষ্ট সাহসী দেখানোর চেষ্টা করে বলল,,” টাকা কোথায়?”

জায়ানের পেছনের লোকটা হঠাৎ একটা লাঠি ছুড়ে মারলো মিহিরের মাথায়। মিহিরের হাত থেকে চাকু পরে গেছে ও উল্টো পরে যায়। উর্মি ছাড় পেতেই দৌড়ে জায়ান কে জড়িয়ে ধরে।
আরিফ দৌড়ে গিয়ে পরে থাকা মিহির কে টেনে তুলে এলোপাথাড়ি ঘুসি মারতে লাগে।
মিহির মার খেয়ে আর্তনাদ করছে শুধু জায়ান উর্মির মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে।
” ঠিক আছিস তুই?”

উর্মি মাথা নিচু করে সরে দাঁড়ালো।

” সরি ভাইয়া আমি মানুষ চিনতে ভুল করেছিলাম। আমি ওকে চিনতেই পারিনি। ও এমন ঘৃণ্য মন মানসিকতার ভাবতেও পারিনি।” বলেই ঠুকরে কেঁদে উঠল উর্মি।
জায়ান উর্মির চোখের জল মুছিয়ে দিয়ে বলল,” কাঁদিস না আমি আছি তো।”

উর্মি আরিফের দিকে তাকিয়ে দেখল রেগে আরিফ মিহিরকে মরছে। উর্মি কাঁদতে কাঁদতে লজ্জা বাইরে চলে এলো। গার্ড কে উর্মির পেছনে পাঠিয়ে দিলো জায়ান।
জায়ান আরিফকে অনেক কষ্টে মিহিরের থেকে ছাড়িয়ে নেয়। আর গার্ড দের কাছে মিহিরকে রেখে চলে আসে। মিহির মার খেয়ে চিৎকার করছে শুধু।
ওর চিৎকার এ রুমটা কেঁপে কেঁপে উঠছে।
__________________________

আরিফ আর উর্মির সামনে গেল না। নিজের গাড়ি করে বেরিয়ে গেছে। উর্মি গাড়িতে হেলান দিয়ে কাঁদছে। জায়ান উর্মি কে নিজের মতো কাঁদতে দিয়েছে। ওর এখন কাঁদা দরকার। মনটা হালকা হবে এতেই। ওই জানোয়ার টাকে মন থেকে মুছতে কান্না দরকার।
বাসায় এসে উর্মি আরেকটা শক খেলো। উষসীর এমন অবাঞ্চিত মৃত্যুর খবর শুনে ও আরো ভেঙে পরে। ওই শয়তান মিহিরের জন্য উষসী শেষ দেখাটাও পেল না। উর্মি পাগলের মতো কাঁদছে। এতো কষ্ট হচ্ছে বুকের ভেতর ও সহ্য করতে পারছে না। মৃত্যু, ঠকানো সব মিলিয়ে ও অসুস্থ হয়ে পরে।
তৃষ্ণা উর্মির এমন বেহাল দশা দেখে নিজেও উর্মির সাথে কাঁদছে। জেসমিন বেগম সহ পরিবারের সবাই এই দুঃসময়ে উর্মি কে সুস্থ অবস্থায় ফিরে পেয়ে একটু শান্তি অনুভব করছে।

আয়ান উর্মিকে জড়িয়ে ধরে ন্যাকা কান্না করছে। যা জায়ান ছাড়া আর কেউ বুঝতে পারলো না। সবাই ভাবছে আয়ান উষসী কে হারিয়ে সত্যি ভেঙে পরেছে।

এদিকে তৃষ্ণা চোখ বড়ো বড়ো করে তাকিয়ে আছে আয়ানের দিকে। আয়ানের কান্না আহাজারি দেখে ও স্তব্ধ। উষসী ভাবিকে আয়ান এতো ভালোবাসতো
যে সারাদিন দরজা বন্ধ করে রুমে পরে থাকে। আবার এমন আর্তনাদ করে কাঁদে। ছেলে মানুষ কে ও কাঁদতে খুব কম দেখেছে। এই আয়ান প্রথম যে তার ব‌উয়ের জন্য দিন রাত এক করে কান্নাকাটি করছে। এতো ভালোবাসলে অন্য নারীর দিকে খারাপ দৃষ্টি দেয় কীভাবে?
সব ওর মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে।

জায়ান তৃষ্ণা কে টেনে রুমে নিয়ে এলো। তৃষ্ণা আয়ানের ভাবভঙ্গি দেখছিল হা করে তখনি জায়ান টেনে তৃষ্ণা কে রুমে নিয়ে আসে।
তৃষ্ণা জায়ানের থেকে হাত ছাড়িয়ে বলে,” কি হয়েছে? আমাকে এভাবে টেনে আনলেন কেন?”

জায়ান গম্ভীর গলায় বললেন,” তুমি আয়ানের দিকে হা করে তাকিয়ে ছিলে কেন? ওমন করে তো কখনো আমার দিকে ও তাকাও নাই‌।”

তৃষ্ণা ফট করেই মজা করে বলে উঠল,” আপনাকে আর আপনার ভাইকে দেখা তো একি কথা।”

জায়ান তৃষ্ণার কথা শুনে রেগে তৃষ্ণার কোমর শক্ত করে চেপে ধরে বললেন,” কি বললে?”

তৃষ্ণা শ্বাসরুদ্ধকর পরিস্থিতিতে পরেছে। জায়ানের হাতের চাপে ও ব্যথায় মৃদু আর্তনাদ করে উঠে। আর বলে,” আমি তো মজা করেছি। আমি তো অবাক হয়ে উনার দিকে তাকিয়ে ছিলাম। ভাবির প্রতি এতো ভালোবাসা তো ভাবি থাকতে দেখি নাই। হঠাৎ এতো ভালোবাসা কোথা থেকে উদয় হলো?”

” মজা করেও কখনো আমি ছাড়া অন্য পুরুষের দিকে তাকিয়ে থাকবে না ওমন করে। যত তাকিয়ে থাকতে ইচ্ছে করবে আমার দিকে তাকিয়ে থাকবে। আমি কিন্তু আমার জিনিস এক ইঞ্চিও শেয়ার করতে পছন্দ করি না। আর সেটা যদি হয় আমার অতি প্রিয় মানুষ তাহলে তো নয়‌ই।”

তৃষ্ণা জায়ানের বুকে মাথা ঠেকিয়ে চোখ বন্ধ করে বলল,” এই জনমে আমি শুধু আপনার‌ই। পরের জন্ম বলে কিছু নাই। যদি থাকত। তাহলেও আমি উপর‌ ওয়ালার কাছে চাইতাম আপনাকে‌ই যেন সে জন্মেও আমার স্বামী করে পাঠান।”

জায়ানের হাত বাঁধন আলগা হয়ে এলো। এবার আলতো হাতে ধরলো। যে স্পর্শে আছে অপরিসীম আদর,ভালোবাসা। নেই কোন হিংস্রতা। জায়ান মাথা নিচু করে আনলো। একহাতে তৃষ্ণার কাঁধে থেকে চুল সরিয়ে কাঁধ উন্মুক্ত করল। অধর ছুঁইয়ে গাঢ় স্পর্শ দিতে লাগল। তৃষ্ণা সারা শরীর ঝাকুনি দিয়ে উঠল। তৃষ্ণা চোখ খিচে বন্ধ করে থেকে থেকে কেঁপে উঠছে। দুহাতে জায়ানের শার্ট খামচে ধরে আছে। জায়ানের স্পর্শে নিজের ভারসাম্য হারিয়ে ফেলছে। নিজেকে শক্তি শূন্য লাগছে। নিজের সমস্ত ভার জায়ানের বক্ষস্থলে ছেড়ে দেয়।
__________________________

একমাস পর।
আয়ান ও ওর পরিবারের নামে মামলা করেছে উষসীর পরিবারের লোক। অদ্ভুত ভাবে জায়ানের নামে করেনি। এখন আয়ান আর আয়ানের বাবা দুজনেই পলাতক হয়ে ঘুরছে। দুজনের রেষারেষি মধ্যে একজন ও এবার ইলেকশনে জয়ী হতে পারে নি। মাঝখানে দিয়ে নতুন একজন পাশ করে গেছে।
আয়ান ওর বাবাকে বলেছে,” বাবা জায়ান তলে তলে ওই দলের সাথে হাত মিলিয়েছে। দেখ না ওরা তোমার আর আমার নামে মামলা করল কিন্তু জায়ানের নাম দিলো না। এতে রহস্য আছে। জায়ান ইচ্ছে করে তোমাকে জিততে দেয়নি। ও চাইলেই তোমাকে জেতাতে পারতো। ”
বাপ বেটা এখন পলাতক হয়ে ঘুরছে।
আর এই সুযোগে আয়ান বাবার কাছে জায়ানের হয়ে নিন্দা করে যাচ্ছে। জায়ান কে একদম মন থেকে উঠিয়ে দিচ্ছে আয়ান। সবার চোখে জায়ান কে খারাপ প্রমাণ করাই ও মুখ্য উদ্দেশ্য।

#চলবে…..#কৃষ্ণবেণী
#পর্ব_২৯(১)
#নন্দিনী_নীলা

প্রথমবারের মতো জায়ান তৃষ্ণাকে নিয়ে বেড়াতে বের হবে। ব‌উকে নিয়ে আজ একটু ভালোবাসা বাসি করবে। তৃষ্ণা জায়ানের সাথে ঘুরতে যাবে শুনেই পরিপাটি হয়ে নিয়েছে।
” তোমার রুপের আগুন আমি জ্বলে পুড়ে ছারখার হয়ে যাচ্ছি। এই রুপে ডুব দেওয়ার সময় এসে গেছে!”
তৃষ্ণা জায়ানের চোখের দিকে চেয়ে আছে। জায়ান তৃষ্ণার হাত নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে হাতের উল্টো পিঠে চুমু খায়। তৃষ্ণা লজ্জায় কাঁচুমাচু করতে থাকে। জায়ান তৃষ্ণার হাত ছেড়ে সোজা হয়ে দাঁড়ায় দরজার দিকে মুখ করে।
তৃষ্ণার দিকে হাত ভাঁজ করে বাহু ফুলিয়ে দেখিয়ে বলেন,” চলেন মিসেস একটু প্রেম ভালোবাসা করে আসি।”
তৃষ্ণা হেসে জায়ানের বাহু ধরে দুহাতে। জায়ান ঘাড় বাঁকা করে তৃষ্ণার দিকে তাকায়। মাথা নিচু তৃষ্ণার গালে চুমু খেয়ে নিজেও হাসলো।

এদিকে আয়ান এবং জায়ানের বাবা দুজনেই আজ বাড়িতে। তারা লুকিয়ে বাড়িতে আসে আবার পুলিশ বাড়ি দিকে আসলে তখন পালিয়ে যায়। দুজনেই ড্রয়িং রুমে বসে গুজুর ফুজুর করছিল। তখনি জায়ান আর তৃষ্ণা রেডি হয়ে বাইরে বের হতে যায় তা দেখে দুজনেই চোখ বড়ো বড়ো করে তাকায়।
জায়ানের উদ্দেশ্যে সাদিকুর রহমান বলেন,,” তোমরা রাতে বেলা কোথায় যাচ্ছ?”
জায়ান হাঁটার গতি থামিয়ে উত্তর দেয়,” বাইরে।”
” হঠাৎ এতো ফিটফাট হয়ে দুজনে বাইরে কেন যাচ্ছ?”
এতো প্রশ্ন করায় জায়ানের বিরক্ত লাগে।
” আপনি কোনদিন ব‌উকে নিয়ে বাইরে যান নাই? ছেলে ছেলের ব‌উ কেন যাচ্ছে এভাবে জিজ্ঞেস করছেন! লজ্জা করছে না!”
সাদিকুর রহমান এতোক্ষণ লজ্জা না পেলেও এবার লজ্জা পেল। ছেলে যে তার এভাবে নাক কাটবে কে জানতো? তিনি আর কিছু জিজ্ঞেস করল না।
এদিকে আয়ান তখন বলে উঠল,,” আমরা জান হাতে নিয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছি। আর তুই ব‌উ নিয়ে ফুর্তি করছিস?”
জায়ান তৃষ্ণার হাত ছেড়ে বললেন,” তুমি গাড়িতে গিয়ে বসো আমি আসছি।”
তৃষ্ণা মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে ছিল। জায়ানের কথায় একপলক জায়ানের দিকে তাকিয়ে বাইরে চলে যায়।
জায়ান দুজনের দিকে তাকিয়ে বলে উঠে,,” হ্যাঁ ফুর্তি করছি তোর সমস্যা?”
আয়ান সঙ্গে সঙ্গে জবাব দেয়,,” অফকোর্স সমস্যা! তুই এতোটা শান্ত হয়ে কীভাবে থাকতে পারছিস? সত্যি করে বলতো! তুই শত্রুর পক্ষের সাথে হাত মিলিয়েছিস তাই না?”
জায়ান ভ্রু কুটি করে ঠোঁটে প্রসস্থ করে হেসে উঠল,”হাত মিলালেই কি? তুই যদি কিছু করে নাই থাকিস! তোর এতো ভয় কিসের?”
আয়ান থতমত খেয়ে গেল। ঢোক গিলে আমতা আমতা করে বলল,” আমি ভয় পাব কেন? উষসী কে আমি মেরেছি এটাই তো প্রমাণ করতে চাস‌‌। আর আমাকে জেলে পাঠিয়ে সব কিছু নিজে একা ভোগ করতে চাস বুঝি না ভেবেছিস!”
জায়ান তাড়া দেখিয়ে বলল,” তোকে জেলে পাঠিয়ে এসব ভোগ করার প্রয়োজন আমার নেই। তুই না থাকলেও আমি ছাড়া অন্য কেউ কিছুই ভোগ করতে বা নিতে পারবে না। সো বানোয়াট কথা বলে সত্য ডাকার চেস্টা করছিস না। যেটা সত্য সেটা সামনে আসবেই তুই আমি আটকাতে পারব না শুধু সময়ের অপেক্ষা।”
বিদায় নিয়ে বেরিয়ে এলো জায়ান‌। এদিকে আয়ান ভয়ে ঘামতে শুরু করে। আরেকটা জিনিস ভাবে জায়ান কি বলল ও না থাকলেও অন্য কেউ ভোগ করতে পারবে না মানে কি?
__________________________

তৃষ্ণা গাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে ছিল। জায়ান এসে তৃষ্ণাকে গাড়িতে উঠায় এবং নিজেও উঠে বসে‌। সামনে ড্রাইভার গাড়ি ড্রাইভ করছে।
তৃষ্ণা জায়ানের থেকে দূরত্ব রেখে বসে আছে। জায়ানের ফোনে গাড়িতে উঠতেই একটা কল এসেছে ও কলে কথা বলছে।
খুব রেগে রেগে কথা বলছে। তৃষ্ণা একবার জানালা দিয়ে বাইরে দেখছে তো একবার জায়ানের রাগী মুখশ্রী দেখছে।
জায়ান কল কেটে তৃষ্ণার দিকে তাকিয়ে বললেন,” এই ফোনের জন্য মেজাজ ঠিক রাখাই কঠিন। এটা খোলা থাকলে আরো কত যে কল আসবে ঠিক নাই এটা বন্ধ থাকাই বেটার।”
ফোন অফ করে একটা শান্তির নিঃশ্বাস ছাড়লো জায়ান। তৃষ্ণা ওর দিকেই তাকিয়ে আছে।
” কি হয়েছে মুড অফ?” প্রশ্ন করল তৃষ্ণাকে।
তৃষ্ণা এখন একটু আধটু ইংরেজির মানে জানে। অনেকদিন ধরেই ওর লেখাপড়া চলছে। ও মাথা নাড়িয়ে না বলল।
জায়ান তৃষ্ণার বাহু ধরে টেনে নিজের নিকটে নিয়ে এলো।
” তাহলে এতো দূরে বসেছো কেন? এতো দূরত্ব থাকলে প্রেম ভালোবাসা হবে কি করে? তুমি কি আমার ভালোবাসা চাও না।”
তৃষ্ণা লজ্জায় মাথা নিচু করে বলল,” চাই তো।”
জায়ান তৃষ্ণার থুতনি ধরে মুখটা উঁচু করে বলল,” তাহলে দূরে দূরে থাকো কেন? আজ কোন দূরত্ব নয়‌। আজ যতটা কাছে যাওয়া যায় ততটাই কাছে যেতে চাই। আমার এই পাগলি ব‌উটাকে আদরে আদরে ভরিয়ে দিতে চাই।”
তৃষ্ণা লজ্জা তাকাতে পারছে না গাড়িতে ড্রিম লাইট চলছে। কিন্তু বাইরের ল্যাম্পপোস্টের আলোতে গাড়ি একটু পর পর আলোকিত হয়ে উঠছে।
জায়ান তৃষ্ণার লজ্জা মাখা মুখটা দেখে নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারলো না। তৃষ্ণার ঠোঁটে গাঢ় স্পর্শ দিলো।
তৃষ্ণা জায়ানের থেকে ছাড়া পেতেই মাথা ঘুরিয়ে জোরে জোরে শ্বাস নিতে লাগল। জায়ান পেছনে থেকেই তৃষ্ণা কে জড়িয়ে ধরে কাঁধে মুখ ঠেকিয়ে রেখেছে। তৃষ্ণা জোরে জোরে শ্বাস নিচ্ছে।
________________________

গন্তব্যে আসতেই গাড়ি থেমে যায়। জায়ান তৃষ্ণাকে হাত ধরে গাড়ি থেকে নামায়। ড্রাইভার কে গাড়ি নিয়ে ফিরে যেতে বলে। হোটেলের ভেতরে প্রবেশ করে দুজন। এই হোটেলের মালিক জায়ান নিজেই। কিন্তু তৃষ্ণা জানে না। তৃষ্ণা মাথা নিচু ধীর গতিতে হাঁটছে। জায়ান তৃষ্ণার হাত ধরে ভেতরে প্রবেশ করে। সবাই স্যার ম্যাম বলে ওদের স্বাগতম জানায়।
তৃষ্ণাকে নিয়ে একটা রুমে প্রবেশ করে‌। দরজাটা খোলাই ছিল জায়ান শুধু ধাক্কা দেয়। ভেতরে থেকে মনোমুগ্ধকর ফুলের সুবাস ভেসে আসে। তৃষ্ণা সুগন্ধে চোখ বন্ধ করে নেয়। চোখ মেলে দেখে ভেতরে ঘুটঘুটে অন্ধকার। পাশে তাকিয়ে জায়ান কে কিছু বলবে কিন্তু হায় জায়ান কোথায়? আশেপাশে তাকিয়ে দেখে ও ছাড়া কেউ নাই। জায়ান কোথায় গেল? ভয়ে ও গুটিয়ে যায়।‌ এমন নিস্তব্ধ জায়গায় ওকে একা রেখে জায়ান কোথায় গেল?

ও কেঁদে দিবে এমন অবস্থা তখনি অন্ধকার রুমের ভেতরে থেকে কেউ ওকে ভেতরে টেনে দরজা আটকে দেয়। ও চেঁচিয়ে উঠবে তখনি রুমে আলো জ্বলে উঠে। আলো জ্বলতেই উপর থেকে এক ঝাঁক ফুলের পাপড়ি ওর গায়ে ঢলে পরে। ও স্তব্ধ, হতবিহ্বল চোখে দাঁড়িয়ে আছে। ওর থেকে একটু দূরে জায়ান দাঁড়িয়ে ওর দিকে তাকিয়ে হাসছে।
সমস্ত ফুলের পাপড়ি নিচে পরা শেষ হতেই জায়ান ওর নিকটে আসে। একহাতে ওর কোমর
চেপে ধরে অন্য হাতে তৃষ্ণার হাত ধরে নিজের কাঁধে তুলে দেয়।
” ভয় পেয়েছো?”
তৃষ্ণার চোখ ছলছল করে ওঠে।
জায়ান আঙুল স্পর্শ করে অশ্রু মুছিয়ে দেয়।
” একটু চমকে দিতে, সারপ্রাইজ দিতে একটু ভয় পেতেই হয়। এতেই কাঁদলে চলবে? তুমি মিসেস জায়ান আহনাফ। তোমাকে সাহসী হতে হবে। একটুতেই ভয় পেলে চলবে না। বুঝেছ মিসেস?”
তৃষ্ণা উত্তর দেয় না। জায়ান তৃষ্ণার চোখের পাতায় অধর স্পর্শ করে। তৃষ্ণা নিমিষেই চোখ বন্ধ করে নেয়।
জায়ান তৃষ্ণাকে নিয়ে একটু কাপল ডান্স করে। তৃষ্ণা শুধু জায়ানের সঙ্গে তাল মিলিয়েছে। জায়ান তৃষ্ণাকে ছেড়ে দেয়। তৃষ্ণা সাজানো রুমটা খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখতে লাগল। ফুলের রাজ্য মনে হচ্ছে। সম্পূর্ণ রুমটা বাহারি ফুল দিয়ে সাজানো হয়েছে।ও মুগ্ধ হয়ে দেখছে।
” সাজানো পছন্দ হয়েছে?”
তৃষ্ণা,” অনেক বেশি।” বলে উত্তর দেয়।
জায়ান তৃষ্ণাকে রুমে রেখে একটু বাইরে আসে‌। খাবার অর্ডার করতে। ফোন অফ তাই নিজেকেই বাইরে আসতে হয়।
পনেরো মিনিট পর খাবার আসে। জায়ান খাবার সহ রুমে আসে। তৃষ্ণা বিছানায় পা ঝুলিয়ে বসে ছিল।
” বাথরুমে থেকে হাত মুখ ধুয়ে আসো।” জায়ানের আদেশে তৃষ্ণা বাধ্য মেয়ের মতো হাত মুখ ধুয়ে আসে।
জায়ান তৃষ্ণাকে সোফায় বসিয়ে হাতে খাবারের প্লেট দিয়ে বলেন,” এবার স্বামী সেবা কর‌। খাইয়ে দাও।”
তৃষ্ণা জায়ানকে খাইয়ে দিচ্ছে। জায়ান তৃষ্ণার হাতে পেট ভরে খেয়ে উঠে দাঁড়ালো।
” এবার তুমি খেয়ে নাও। আমি একটু আসছি বাইরে থেকে।”
জায়ান পানি পান করে বাইরে চলে যায়। তৃষ্ণা নিজে খাওয়া শেষ করে জায়ানের অপেক্ষা করতে লাগে।
জায়ানের আসতে দের ঘন্টা লেগে যায়।
তৃষ্ণা অপেক্ষা করতে করতে সোফায় হেলান দিয়ে ঘুমিয়ে পরে।
জায়ান একটা শপিং ব্যাগ এনে সোফার উপর রেখে ঘুমন্ত তৃষ্ণা কে ডেকে তুলে। তৃষ্ণা ঘুম ঘুম চোখে জায়ানের উপস্থিতি টের পেয়ে চোখ পিটপিট করে তাকায়।
জায়ান তৃষ্ণার কানে ফিসফিস করে বলেন,” আজ তো ঘুমালে চলবে না জান। বুকের ভেতর থাকা সমস্ত ভালোবাসা আজ তোমায় নিগড়ে দিতে চাই। গ্রহণ করবে তো আমার এই ভালোবাসার।”
” আপনি কাছে টানলে আমার কি সাধ্য আছে আপনাকে ফিরিয়ে দেবার?”
তৃষ্ণা ঘুম ছুটাতে আরেকবার চোখে মুখে পানি দিয়ে আসে। তোয়ালে দিয়ে মুখ মুছে এসে দেখে জায়ান কসমেটিকস, নতুন শাড়ি, চুড়ি, হাতে নিয়ে বসে আছে।

তৃষ্ণা কে নিজের সামনে দাঁড় করিয়ে শাড়ি তৃষ্ণার গায়ে ধরে বলেন,” মাশাআল্লাহ। তোমার জন্য এই শাড়ি অর্ডার করে এক পিস বানিয়ে এনেছি। পছন্দ হয়েছে?”
তৃষ্ণা সিলভার কালারের পাতলা জর্জেট শাড়ির দিকে তাকিয়ে আছে। এতো পাতলা কেন সেটাই ভাবছে। এমনিতেই সুন্দর‌ই।
জায়ান তৃষ্ণার হাতে পেটিকোট আর ব্লাউজ দিয়ে বলল পরে আসতে। তৃষ্ণা লজ্জায় পরে আর বেরুতে পারছে না। তাই আগে যে শাড়ি ছিল ওটাই গায়ে জড়িয়ে বেরিয়ে এলো। জায়ান তৃষ্ণার এমন অবস্থা দেখে হাসতে হাসতে শেষ।
” এভাবে থাকলে শাড়ি পরবে কি ভাবে?”
তৃষ্ণা মাথা নিচু করে বলে,” আমার কাছে দিন আমি বাথরুমে থেকে পরে আসি।”
জায়ান শাড়ি দিল না। উল্টো তৃষ্ণার গায়ে পেঁচিয়ে রাখা শাড়িটা এক টানে খুলে নিলো। তৃষ্ণা লজ্জা দুহাত দিয়ে মুখ চোখ ঢেকে ঘনঘন শ্বাস নিতে লাগে। ওর সারা শরীর কাঁপছে লজ্জায়। জায়ান তৃষ্ণার লজ্জা পাওয়া দেখে বললেন,” আজ তো লজ্জা ভাঙানোর দিন। তুমি লজ্জা পাচ্ছ কেন? তোমার হাজব্যান্ড‌ই তো দেখছে অন্য কেউ তো দেখছে না।”
তৃষ্ণা জায়ানের দিকে পিঠ করে দাঁড়ালো মুখ ঠেকেই। জায়ান শাড়ি হাতে উঠে দাঁড়ালো।
” আজ আমি আমার হৃদয়ের রানীকে নিজের হাতে শাড়ি পরাবো, নিজের হাতে যত্ন সহকারে সাজাবো। অতঃপর নিজেই সেই সাজ সজ্জা নষ্ট করব।”
জায়ান তৃষ্ণাকে শাড়ি পরাতে শুরু করে দিয়েছে। শরীর বিভিন্ন স্থানে জায়ানের হাতের স্পর্শ লাগছে। তৃষ্ণা জায়ানের স্পর্শে কেঁপে কেঁপে উঠছে। পায়ের আঙুল ফ্লোরে ঘর্ষণ করছে। জায়ান শাড়ি পরাতে ওতোটা পারফেক্ট নয়। এজন্য তেমন ভালো হয়নি। কোন রকম পেঁচিয়ে পরিয়ে দিল। কিন্তু এতো টুকু তেই জায়ানের খুশির সীমা নাই। জায়ান শাড়ি পরানো শেষ করে বলল,” এই যে আমার লজ্জাবতী এবার তাকাও। দেখতো তোমার বর কেমন শাড়ি পরালো।”

তৃষ্ণা আস্তে আস্তে চোখ মেলে তাকালো। জায়ান ওর দিকে কেমন করে নেশাতুর দৃষ্টিতে যেন তাকিয়ে আছে। ও নিজের দিকে তাকালো। শাড়ি তো পরিয়েছে। কিন্তু এটা কি শাড়ি? শরীরের প্রতিবিম্ব সম্পুর্ন তো দেখা যাচ্ছে। লজ্জায় ওর কান গরম হয়ে এলো।
” আর মুখ ঠেকো না এবার তোমার মুখ মন্ডল সাজাবো আসো।”
” শাড়ি এমন ধারা কেন? আমার খুব লজ্জা লাগছে আমি এভাবে আপনার সামনে থাকতে পারব না।”
জায়ান তৃষ্ণাকে সোফায় বসিয়ে বললেন,” ওরে আমার লজ্জাবতী! একটু পর সব ছাড়াই থাকতে হবে। চুপ করে বসো এখন নো সাউন্ড।”
তৃষ্ণা জায়ানের কথা শুনে চোখ বড়ো বড়ো করে তাকালো। জায়ান ওকে সুন্দর করে সাজিয়ে দিচ্ছে। গলায় ডায়মন্ডের নেকলেস পরিয়ে দিলো। হাতে চুড়ি পরিয়ে দিলো। ঠোঁটে লিপস্টিক, চোখে কাজল, কপালে টিপ‌। এরপর তৃষ্ণা কে দাড় করিয়ে প্রিয় সেই কেশ পিঠে ছেড়ে দিলো। জায়ান তৃষ্ণার চুল আঁচড়ে বেলি ফুলের তোড়া চুলে লাগিয়ে দিল।
তৃষ্ণা কে আয়নার সামনে দাড় করিয়ে বললেন,” দেখতো তোমার হাজব্যান্ড কেমন সাজালো।”
তৃষ্ণা লজ্জা মাখা হাসি দিলো। জায়ান তৃষ্ণার চুলে নাক ডুবিয়ে ঘ্রাণ নিতে নিতে লাগল।
তৃষ্ণা হাত দিয়ে শাড়ির আঁচল খামচে শক্ত হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। ওর অঙ্গ প্রতঙ্গ থরথরিয়ে কাঁপছে।
” সাজ পছন্দ হয়েছে?”
তৃষ্ণা মাথা নাড়িয়ে সম্মতি দিলো।
” তোমাকে খুব আবেদনময়ী লাগছে জান। ”
জায়ান তৃষ্ণাকে নিজের দিকে ঘুরিয়ে কপালে চুমু খেল। তৃষ্ণা চোখ বন্ধ করে জায়ানের বুকে মাথা রাখল।
আজ দুটি দেহ, মন এক সুতোয় বাঁধা পরবে। স্বামী স্ত্রীর বৈধ সম্পর্ক ভালোবাসার পূর্ণতা পাবে।
এভাবে ভালোবাসায় এক সুতোয় গাঁথা থাকতে পারবে তো জায়ান তৃষ্ণা নাকি অশুভ ছায়ায় সব শেষ হয়ে যাবে?
#কৃষ্ণবেণী
#পর্ব_২৯(২)
#নন্দিনী_নীলা

সকাল বেলায় জায়ান দের বাসায় পুলিশ এসে হাজির। বাপ বেটা তখন ঘুমে আচ্ছন্ন আছে। এদিকে পুলিশসহ এসেছে উষসীর ভাই। পালানোর কোন রাস্তাই পেল না। দুজনেই ধরা খেলো। আয়ান কে নিয়ে যেতে পারলেও সাদিকুর রহমানকে নিয়ে যেতে পারল না।

সাদিকুর রহমান বললেন,,” দেখুন অফিসার আপনারা মিথ্যা মামলার দোহাই দিয়ে আমাকে জেলে নিতে পারেন না। আমি সমাজের একজন সম্মানিত লোক। তবুও অনেক পালিয়ে বেরিয়েছি আর না। আমার ছেলে জায়ান যদি জানতে পারে আপনি আমায় থানায় নিয়ে গেছেন আপনার কি হাল হয়ে বুঝতে পারছেন? আমি আমার ছেলের ব‌উকে যথেষ্ট স্নেহ করতাম তাকে আমরা কেউ মারি নি। ”

অফিসার জায়ানের কথা শুনে একটু ভয় পেল তিনি উষসীর ভাইকে সাইডে নিয়ে বললেন,” আমার মনে হয় উনার নামে মামলায় না রাখাই ভালো। ছেলের ব‌উকে উনি মারতে চাইবেন না। আমরা আয়ান কে নিয়ে ফিরে যাই?”

উষসীর ভাই অফিসারের কলার ধরে বলল,,” কি বললি তুই? তোর থেকে আমি শিখব কার নামে মামলা দিব না দিব। চুপচাপ বেটা দুইটাকে থানায় নিয়ে যা।”

অফিসার রেখে উষসীর ভাইকে ঘুসি মেরে নিজের থেকে সরিয়ে বললেন,” আইনের লোকের গায়ে হাত দিস।‌ তোরে তো আগে জেলে নেওয়া উচিত।”

বলেই উনি কনস্টেবল পুলিশের সাহায্যে আয়ান আর উষসীর ভাই দুজনকেই থানা নিয়ে আসে। আর এক জেলে বন্দি করে।
আয়ান বিদ্রুপ হাসি হাসছে সুলাইমানের দিকে তাকিয়ে। সুলাইমানের গা জ্বলে উঠছে ওর হাসি দেখে ও এগিয়ে এসে ঘুসি মারল আয়ান কে। আয়ান ও কম কি নিজের পাল্টা আঘাত করে বলল,,” আমারে জেলের ভাত খাওয়াবি বলছিলি না? আয় দুজনে মিলে খাই।”

” শু*য়ারের বা*চ্চা তোর আজ শেষ দিন।”
” তুই আমারে শেষ করতে আসবি,আর আমি চাইয়া চাইয়া দেখুম তাই না। আয় দেখি কার শেষ দিন হয়।”

লেগে গেল দুজনের হাত্তাহাত্তি লড়াই‌। জেল পুলিশ তাড়াতাড়ি এগিয়ে এলো দুজনকে থামতে বলল
কিন্তু কেউ কথা শুনছে না রক্তারক্তি কান্ড ঘটিয়ে ফেলছে। অফিসার দরজা খুলে ভেতরে ঢুকল আরো দুজন কনস্টেবল পুলিশ দুজনকে ধরে থামালো। আয়ানকে একা রেখে সুলাইমান কে আলাদা রুমে দেওয়া হলো।
____________________

আজকের সকালটা তৃষ্ণার কাছে মধুর। অন্যরকম এক অনুভূতির, ভালোবাসার। গতরাতের কথা মনে হতেই লজ্জা কাঁচুমাচু করতে থাকে। ইশ কি লজ্জা, কত্ত ভালোবাসার। জায়ান ওর দিকে পিঠ করে ঘুমিয়ে আছে। ও রাতে কথা ভেবে মুখ লুকিয়ে লজ্জা নিবারণের চেষ্টা করছে।
স্বামীর ভালোবাসায় যে এতো সুখ থাকে ও জানতো না। এতো ভালোবাসা কেন দিল জায়ান ওকে। এখন এই মুখ জায়ান কে দেখাবে কি করে?
তৃষ্ণা উঠে শাওয়ার নিলো। আর গতকালের শাড়ি পরে নিলো। ভেজা চুল মুছল না জায়ান ওর অভ্যাস খারাপ করে দিয়েছে এখন এই চুলের যত্ন ওর নিতে ইচ্ছে করে না। জায়ানের যত্ন করে চুল মুছিয়ে দেওয়া, চুলে তেল দেওয়া, বেঁধে দেওয়া সেসবই অভ্যাস হয়ে গেছে। জায়ান কে ডাকতেও ইচ্ছে করছে না। কি সুন্দর নিষ্পাপ শিশুর মতো ঘুমিয়ে আছে। কত আদুরে লাগছে। তৃষ্ণা সোফায় বসে চুল ফ্লোরে ফেলে রেখে বসে আছে গালে হাত দিয়ে। ওর চুল বেয়ে পানি পরে ফ্লোর ভেসে যাচ্ছে তৃষ্ণার সেদিকে খেয়াল নেই। ও পলকহীন চোখে তাকিয়ে আছে জায়ানের ঘুমন্ত মূখটার দিকে। জায়ান ভ্রু কুঁচকে ঘুমিয়ে আছে। যেন ঘুমের মধ্যে ও কিছু কিছু গভীর চিন্তায় বিভোর হয়ে আছে।
তৃষ্ণা জায়ানকে দেখছে আর ভাবছে এই মানুষটা শুধু আমার একান্তই আমার ভাবতেই অবাক লাগছে, শান্তি লাগছে।
তাকিয়ে থাকতে থাকতে তৃষ্ণা গভীর ভাবনায় ঢুকে গেছে। জায়ানকে নিয়ে হাজারো কল্পনা জল্পনা করছে। এদিকে জায়ান হঠাৎ জাগ্রত হয়ে যায়। তৃষ্ণাকে বিছানায় না পেয়ে দেখে সোফায় গালে হাত নিয়ে আছে। ভালো করে তাকিয়ে দেখে ভেজা চুল বেয়ে পানি পরে ফ্লোর ভেসে যাচ্ছে। ও লাফ দিয়ে উঠে বসে। এই মেয়ে কি পাগল নাকি? এই ভাবে কেন ভেজা চুল ছেড়ে বসে থাকে।
জায়ান তোয়ালে এনে তৃষ্ণার চুলে রাখতেই তৃষ্ণার সব ধ্যান ভঙ্গ হয় চমকে তাকিয়ে দেখে জায়ান ওর মাথার কাছে দাঁড়িয়ে চুল মুছে দিচ্ছে।
তৃষ্ণা চমকানো গলায় বলল,” আপনি এখানে কেন? ঘুমিয়ে না ছিলেন?”
” ঘুমাব কি করে? আমার একটা পাগল ব‌উ‌ আছে এতো দিন কম পাগলামী করত। এখন আমার ভালোবাসা পেয়ে বদ্ধ পাগল হয়ে ভেজা চুল মাথায় বসে আছে।”
” ইশ বললেই হলো! পাগল হলেও আপনার জন্য হয়েছি আপনি আমার অভ্যাস খারাপ করে দিয়েছেন এখন এই চুলে আমার হাত দিয়ে ইচ্ছে করে না। এই যে আপনি যত্ন করে মুছিয়ে দিচ্ছে কত শান্তি লাগছে জানেন? আমি মুছে নিলে এই যত্ন পেতাম নাকি?”
” একদিনেই আমার বোবা পাখির মুখে তোতাপাখির মতো কথা ফুটেছে। নিজের ভালো লাগা নিজেই বলছে। আদর করলে তোমার সব সংকোচ গিয়ে মিষ্টি ভালোবাসায় পরিণত হবে জানলে তো এতো দিন বসেই থাকতাম না।”

তৃষ্ণা লজ্জা পেয়ে মাথা নিচু করে ফেলল।
জায়ান সঙ্গে সঙ্গে তৃষ্ণাকে ঠেলে নিজে সোফায় বসে তৃষ্ণাকে টেনে কোলের উপর বসিয়ে দিলো। তৃষ্ণার পিঠ জায়ানের উন্মুক্ত বুক ঘেসে আছে।
” একি লজ্জা পাচ্ছ এখনো? এখন আর কিসের লজ্জা? সব লজ্জা তো হরণ করে ফেলেছি তাও লজ্জা আসছে কোথা থেকে মেয়ে?”
” ধ্যাত চুপ করেন দয়া করে।”
” আচ্ছা এসব কথা বাদ।”
” বাসায় যাবেন কখন?”
” আজ নাও যেতে পারি।”
” এখানেই থাকবেন?”
” তুমি চাইলে থাকব।”
“আপনার এতো বড় বাসা থাকতে ভাড়া হোটেলে থাকার দরকার কি?”
” তোমাকে কে বলেছে ভাড়া হোটেলে থাকছি?”
” তাই তো। এই হোটেল তো আর আপনার নয় যে আপনাকে ভাড়া ছাড়াই রাখবে।”
” ওরে আমার বোকা ব‌উটা রে। এই হোটেলের মালিক তোমার হাজব্যান্ড। এটা আমার নামে দলিল করা। আমি নিজে করেছি।”
তৃষ্ণা ইয়া বড়ো চোখ করে বলল,” মিথ্যা বলছেন? এতো বড়ো হোটেল আপনার?”
” তো কি বড়ো‌ই তো থাকবে। এতো টাকা ইনকাম করতেছি এই হোটেল করা কি আমার জন্য অনেক কষ্টের নাকি। তোমার অবাক হ‌‌ওয়া স্বাভাবিক বিকজ তুমি তো কিছুই জানো না। আস্তে ধীরে সব জানতে পারবে। আমার সবকিছুই তো তোমার।”
তৃষ্ণা চুপ করে জায়ানের কথা শুনছিল জায়ান তৃষ্ণার ভেজা চুলে মুখ গুজে অনেক কথাই বলল। এবার তৃষ্ণাকে নিজের দিকে ঘুরিয়ে কপালে কপাল ঠেকিয়ে বলল,” খুব ভালোবাসি তোমায়।”
তৃষ্ণার কি হলো ও নিজেও বলল,” আমিও।”
জায়ান তৃষ্ণার কপালে চুমু খেলো, তৃষ্ণা চোখ বন্ধ করে ফেলল। জায়ান আবার তৃষ্ণা চোখের পাতায় অধর স্পর্শ করল তৃষ্ণা ঘনঘন শ্বাস নিচ্ছে।
জায়ান এক হাতে তৃষ্ণার চুলের ভেতরে প্রবেশ করিয়ে ঘারে রেখে তৃষ্ণাকে আরেকটু কাছে এনে ঠোঁটে গভীর ভাবে ছুঁয়ে দিলো নিজের অধর দ্বারা। তৃষ্ণা জায়ানের গলা জড়িয়ে ধরে তাল মিলিয়ে যাচ্ছে। জায়ান তৃষ্ণাকে ছাড়তেই তৃষ্ণা উল্টো ঘুরে মুখ দুহাত দিয়ে ডেকে বসে র‌ইল।

জায়ান উঠে দাঁড়িয়ে বলল,” তুমি মুখ ডেকে বসে থাকো আমি ফ্রেশ হয়ে আসছি।”
__________________________

জায়ান শাওয়ার শেষ করে এসে খাবার অর্ডার দিতে ফোন হাতে নিলো। তৃষ্ণা জায়ানের মাথার চুল মুছে দিচ্ছে জায়ান বিছানায় বসে ফোন ওপেন করল। ফোন ওপেন হতেই বাড়ি থেকে অগনিত কল মেসেজ পেল। ওর সিমে মিসকল সার্ভিস অন করা আছে এজন্য অফ থাকলেও কয়জন কল দিয়েছে জানা যায়।
এতো কল মেসেজ দেখে চমকে বসা থেকে দাঁড়িয়ে পরল। তৃষ্ণা জায়ানের পেছনে উঁচু হয়ে চুল মুছে দিচ্ছিল আচমকা দাঁড়িয়ে পরাতে তৃষ্ণা থুতনিতে ব্যথা পেল। আহ করে বসে পরল বিছানায়। জায়ান উফ সরি বলে ফোন বিছানার রেখে তৃষ্ণার থুতনি ঠলতে লাগল।
” বেশি ব্যথা পেয়েছ।”
তৃষ্ণার মুখ নোনতা লাগছে ও উঠে ব্যাসিং গিয়ে থুথু ফেলতেই রক্ত বের হলো। জায়ান ওর পেছনে পেছনে এসেছিল রক্ত দেখে ওর আত্মা কেঁপে উঠে।
” ও গড ব্লাড আসলো কি করে? দেখি কি করে ফেললাম! ফোনটা আমাদের জন্য বিপদজনক ওটা ওপেন করতেই এতো বড়ো কান্ড ঘটল। তাড়াতাড়ি চলো হসপিটালে যাই।”
জায়ান তৃষ্ণাকে টেনে বাথরুমে থেকে এনে ঠোট চেক করতে লাগল। ঠোঁটের কোনায় কেটে গেছে। জায়ানের মাথা গিয়ে ওখানেই লাগছিল নরম জায়গা তাই কেটে রক্ত বেরিয়েছে। জায়ান অস্থির হয়ে উঠছে।
তৃষ্ণা জায়ানের হাত ধরে টেনে বলল,” শান্ত হোন আমি ঠিক আছি। ওটা এমনিতেই চলে যাবে। হসপিটালে যাওয়ার প্রয়োজন নেই।”

জায়ান অপরাধের ন্যায় বলল,” সরি জান, আমার জন্য কত কষ্ট পেলে।”
” বেশি ব্যথা লাগে নাই।”
” সিউর”
” হুম।”
জায়ান তৃষ্ণার ঠোঁটে আলতো স্পর্শ করে ফোন আর করল না বাসায়। খাবার আসতেই দুজনে খেয়ে নিল। তৃষ্ণার খেতে খারাপ লাগছিল কিন্তু প্রকাশ করেনি।‌ জায়ান এমনিতেই টেনশন‌ করছে বললে আরো পাগলামি করবে।
জায়ানের ফোন আরো দুবার বাজলো খাওয়ায় ব্যাঘাত করে উঠল না। খাওয়া-দাওয়া শেষ করে ফোন হাতে নিয়ে দেখে ফোন অফ হয়ে গেছে।
জায়ান ফোন চার্জে লাগিয়ে রেডি হতে লাগল। তৃষ্ণাকেও রেডি হতে বলল।

#চলবে….
#চলবে……

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here