কোনো এক পূর্ণিমায় পর্ব -০৮+৯

#কোনো_এক_পূর্ণিমায় (৮ম পর্ব)

#লেখনীতে_ওয়াসেকা_তাবাসসুম

~প্যান্টের এক পকেটে হাত গুজে দাঁড়িয়ে আছে অভ্র। চোখে সানগ্লাস থাকায় বুঝা যাচ্ছে না তবে মনে হচ্ছে মিটিমিটি হাসছে। সানগ্লাসটা একটু নিচু করে এক নজর দেখে আবার ঠিক করে নিল।

–“সরে দাঁড়ান ম্যাডাম।”

–“সাইডে আরো জায়গা আছে। এই দিক দিয়েই কি দাওয়া জরুরি? অন্যদিক দিয়ে যান।”

–“ইসস বেয়াইনদের সাথে এমন ব্যবহার করেন আপনারা? এইতো একটু পরে একটা নতুন সম্পর্ক স্থাপন হতে যাচ্ছে। তার আগে এমন আচরণ মেনে নেওয়া যায়?”

–“পকপক না করে যান। এইদিক দিয়েই যান আমিই সরে দাঁড়াচ্ছি।”

–“সরতে হবে না, আমি অন্যদিক দিয়ে যাচ্ছি।”

আর অপেক্ষা না করে অভ্র আরেক পাশ দিয়ে হেঁটে চলে গেল। যাওয়ার আগে আর কিছু না করলেও মেজাজ বিগড়ে দিয়ে গেল। একটু পরে মনে হলো আমার ফোনটা ঘরের মধ্যে পড়ে আছে। তারাতাড়ি গেলাম রুমে ফোন আনতে। রুমে গিয়ে দেখলাম ফোনটা বিছানায় পড়ে আছে।

–“এতগুলো মিসকল কেন আবার? মানে একটা দিনও শান্তি নাই।”

ফোনের দিকে চেয়ে দেখলাম সেই আননোন নাম্বার। তার মানে রাফি ফোন দিয়েছে? কিন্তু কেন? আবার কেন ফোন দিল! এসব চিন্তা মাথার মধ্যে ঘুরপাক খাচ্ছে এমন সময়ে আবারো ফোন বেজে উঠলো।

–“হ্যালো?”

–“তোমাকে দেখছি কল দিলে পাওয়াই যায় না? ব্যাপার কি?”

–“আমাকে দিয়ে তোমার কোনো কাজ থাকার কথাও না বুঝেছো?”

–“বিল্ডিং এর নিচে আসো।”

–“তুমি বলবে আর আমি আসবো এই চিন্তা ঝেড়ে ফেলো।”

–“তুমি কি চাও বিয়ের মধ্যে গিয়ে সিন ক্রিয়েট করি? খুব ভালো লাগবে তখন তাইনা? চুপচাপ বিল্ডিং এর পিছনে দিকে নেমে আসো।”

–“রাফি বেশি বেশি হয়ে যাচ্ছে এখন। ঋতু আপুর বিয়ের দিন অন্তর এইসব করা বন্ধ করো।”

–“অতিরিক্ত করতে চাই না দেখেই বলছি ভালোয় ভালোয় নেমে আসো অনামিকা।”

–“কিন্তু আমি……

আর কিছু বলার সুযোগ পেলাম না তার আগেই কল কেটে দিল রাফি। ওর কথা শুনলে যদি সত্যিই উপরে এসে ঝামেলা করে? কি করবো তখন? বিয়েটার বারোটা বাজিয়ে ছাড়বে। না এইটা হতে দেওয়া যাবে না। এমনিতেও এখন আমার খুব একটা দরকার পড়ছে না, বিয়ে শুরু হতেও কিছুটা সময় বাকি আছে এটাই সুযোগ!

ধীর পায়ে ঘরের থেকে বের হলাম। এই মুহূর্তে সবাই ছাদে আছে তাই এখন চুপচাপ নেমে গেলে কেউ টের পাবে না। উপর থেকে কেউ নামছে না কি নিশ্চিত করার জন্য সেদিকে নজর রেখেই নামা শুরু করলাম। ধীর গতিতে নামতে গিয়ে কিছু একটার সাথে ধাক্কা খেয়ে পড়ে যেতে নিলাম।

–“এই গেলো! মরে গেলাম না কি আবার। আল্লাহ বিয়ে খাওয়া হলো না আমার অ্যা।”

–“ওও হ্যালো মরেন নাই, বেঁচে আছেন। চক্ষুদ্ধয় কষ্ট করিয়ে খুলে দেখেন।”

চোখ পিটপিট করে খুলে সামনে তাকিয়ে দেখি অভ্র দাঁড়িয়ে! আবারো এই লোকটা?

–“ছেড়ে দিব না কি নিজে থেকে উঠবে?”

এতোক্ষণে মনে হলো অভ্র আমার দুই বাহু ধরে রেখেছেন। বুঝার সাথে সাথে সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে গেলাম। অভ্রও নিজেকে সামলে ঠিক হয়ে দাঁড়িয়ে গেলেন।

–“এতো তাড়া কিসের? আর নিচে কোথায় যাচ্ছো?”

–“আপনাকে বলবো কেন? আমার দরকার আছে তাই যাচ্ছি।”

–“আরেহ আস্তে এতো গরম হওয়ার কি আছে? আমি তো খালি জিজ্ঞেস করছিলাম।”

–“জিজ্ঞেস করা শেষ না? এখন গেলাম আর তখন পড়ে যাওয়া থেকে বাঁচানোর জন্য থ্যাংকস।”

সময় নষ্ট না করে তাড়াতাড়ি নিচে নেমে গেলাম। নিচে নেমে সোজা পিছনের দিকটায় চলে গেলাম।

••••••••••••••••••••

অনেকক্ষণ হয়ে গেল তারপরেও অনামিকার কোনো খোঁজ খবর নেই। প্রায় ১০ মিনিট বা ১৫ মিনিটের মতো মেয়েটাকে উপরে কোথাও পাওয়া যায়নি। ফোন করলেও ধরছে না।

–“ঋতু তুই কোথাও দেখেছিস অনামিকাকে? মেয়েটাকে সেই কখন থেকে কোথাও দেখতে পাচ্ছি না। আমার তো মাথা কাজ করছে না।”

–“টেনশন করছো কেন? বিয়ে বাড়িতে দেখো কোথাও কাজ করছে নয়তো গল্প করছে সবার সাথে।”

–“না রে নেই। তবে খুব বেশিক্ষণ হয়নি কিন্তু এতোক্ষণের জন্যও বা কোথায় গেল যে পাওয়াই যাচ্ছে না?”

–“আসলেও তো। অনুর তো কোথাও যাওয়ার কথা না। বেশিক্ষণ হয়নি তো ওকে পাওয়া যাচ্ছে না?”

–“না ১০ মিনিট অথবা ১৫ মিনিটের মতো হবে।”

–“তাহলে এখন কি করবে?”

–“সে তো আমিও বুঝতে পারছি না রে। বড্ড চিন্তা হচ্ছে। ছাদে নেই, বাসায় নেই তাহলে কোথায় যাবে। আচ্ছা অনু আবার নিচে গেল না কি? তোর বাবাকে একবার জিজ্ঞেস করে আসবো?”

–“দেরি করো না যাও জিজ্ঞেস করে আসো।”

–“হ্যা হ্যা যাচ্ছি।”

আর এক মূহুর্ত দেরি না করে ঋতুর বাবার কাছে চলে গেলেন ঋতুর মা। ছাদে গিয়ে ওনাকে খুঁজতে খুঁজতে দেখতে পেলেন এক জায়গায় দাঁড়িয়ে উনি কথা বলছেন। সেদিকে ছুটে গেলেন।

–“শুনছো”

–“কি হয়েছে এভাবে ছুটে এলে কেন?”

–“অনুকে খুঁজে পাচ্ছি না কোথাও মেয়েটা যে কই গেল কিছুই বুঝতে পারছি না।”

–“ছাদেও তো অনামিকাকে দেখিনি। তুমি বাসায় গিয়ে দেখেছো?”

–“আমি তো বাসা থেকেই আসছি। ঋতুকে জিজ্ঞেস করলাম ঋতুও জানে না কিছু।”

–“ঋতু কি বাসায় না কি ওকে উপরে এনেছো?”

–“বাসায় থাকবে কেন? ছাদের ওই ঘরটায় আছে। আমি বাসায় গিয়ে দেখে এসেছি নেই।”

কিছুটা দূরে দাঁড়িয়ে থাকায় সব কথা শুনতে পেল অভ্র। দুজনের কাছে এসে দাড়ালো তারপর জিজ্ঞেস করলো,

–“আংকেল, আন্টি কিছু মনে না করলে একটা কথা বলতাম। আসলে আপনাদের কথাগুলো শুনতে পেয়েছি আমি।”

–“বলো বাবা কি বলবে।”

–“আমি অনামিকাকে দেখেছি।”

–“কিহ!? কোথায় দেখেছো? কোথায় গেছে তোমাকে বলেছে?”

–“আন্টি আপনি শান্ত হোন আগে। আমি ওকে নিচে যেতে দেখেছি আর বেশ তাড়াহুড়োতে ছিল। আমি জিজ্ঞেস করেছিলাম কোথায় যাচ্ছে তবে কোনো উত্তর দেয়নি।”

–“নিচে গেছে? কিন্তু কেন যাবে। সেখানে তো কোনো কাজ নেই। মেয়েটাকে কয়েকদিন বেশ টেনশন করতে দেখেছি কিন্তু জিজ্ঞেস করা হয়নি কিছুই।”

–“এসব কথা বাদ দাও ঋতুর মা। ফোন দাও একটা।”

–“ফোন দিয়েছিলাম তবে ধরেনি।”

এতক্ষণ সব মনোযোগ দিয়ে শুনে কিছু একটা ভাবলো অভ্র। তারপর কি মনে করে বলে বসলো,

–“আমি দেখে আসি?”

–“মানে?”

–“আমি গিয়ে দেখে আসি অনামিকা কোথায় গেল।”

–“সে কি বাবা তুমি কেন যাবে? তুমি থাকো ঋতুর বাবা যাচ্ছে।”

–“না আন্টি থাক। আংকেলকে যেতে হবে না আর অনামিকাকে তো আমি যেতে দেখেছি।”

–“কিন্তু বাবা…..

হঠাৎ করে সেখানে অভ্রর মা উপস্থিত হলেন। ছেলের কাছে জানতে চাইলেন কি হয়েছে। অভ্র ওনাকে সবটা বুঝিয়ে বললো।

–“অভ্র তুই যা তাড়াতাড়ি।”

–“বেয়াইন অভ্র কেন যাবে বলুন তো আমাদের মধ্যে একজন গিয়ে দেখে আসছে।”

–“আচ্ছা আম্মু, আন্টি দেখুন এখানে দাঁড়িয়ে সময় নষ্টই করছি আমরা। আপনাদের যেতে হবে না আমি বলছি তো। আমি গিয়ে দেখে আসছি।”

আর কথা না বাড়িয়ে অভ্র দৌড়ে নিচে নেমে গেল। ঋতুর মা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলতে লাগলেন,

–“কি যে হচ্ছে মাথা কাজ করছে না আমার।”

–“বেয়াইন দেখুন আমার ছেলে যখন নিজে থেকে যেতে চেয়েছে কোনো কারণ অবশ্যই আছে। আপনি চিন্তা করবেন না একদম ওরা চলে আসবে।”

••••••••••••••••••••

লিফ নিচ তলায় ওর উপরে আসতে আসতে অভ্রর নিচে যাওয়া হয়ে যাবে এইভাবে সিড়ি ধরলো অভ্র। সিড়ি দিয়ে নামার সময় মনে মনে তার চিন্তা কাজ করতে লাগলো,

–“আমি যা ভাবছি তাই হয়েছে হয়তো। অনামিকা বেশ চিন্তিত আর তাড়াহুড়োয় ছিল। বড়দের নীচে যাওয়াটা ঠিক হতো না কারণ নিচের দৃশ্যটা কেমন হতে পারে আমার বুঝা হয়েছে। এই মেয়েগুলো আসলেই পারে! ওইদিকে আন্টি টেনশনে অস্থির আর আরেকজন নিচে প্রেমিকের সাথে আলাপ করতে গেছে!”

চলবে………………….^_^#কোনো_এক_পূর্ণিমায় (৯ম পর্ব)

#লেখনীতে_ওয়াসেকা_তাবাসসুম

~অভ্র নিচে এসে অনেকক্ষন খুঁজেও অনামিকাকে পেল না। বাড়ির সামনের দিকটা দেখলো কয়েকবার। নাহ! এখানে তো নেই, কিছুটা দূরে গিয়েও দেখলো। নিচে কয়েকজন পাঞ্জাবি এবং কোর্ট প্যান্ট পরিহিত মানুষের ঘুরাফেরা এরা যে বিয়েতে এসেছে বুঝতে অসুবিধা হলো না অভ্রর। বাড়ির সামনে ডানে ও বামে দুই রাস্তা চলে গেছে, দুটোতেই অভ্র এগিয়ে গিয়ে দেখে এসেছে তবে অনামিকা নেই। এর মাঝেই ফোন বেজে উঠায় তা রিসিভ করেই কানে ধরলো,

–“হ্যালো?”

–“বাবা পেলি মেয়েটাকে?”

–“না গো আম্মু। আমি খুঁজছি ওকে পেয়ে গেলেই তোমায় জানাবো।”

–“ভালো মতো একটু খুঁজে দেখ রে বাবা। আমার অনুটাকে নিয়ে আয়।”

–“টেনশন করো না আম্মু আসছি আমি আর ওকে নিয়েই আসবো।”

বলেই ফোন কেটে দিল অভ্র। মাথা শান্ত করে দাঁড়িয়ে রইলো। মনে মনে ভাবা শুরু করলো,

–“বিল্ডিং এর সামনের দিকে নেই। দূরে কোথাও গেল না কি? আচ্ছা যদি গিয়েও থাকে তাহলে দূরে গিয়েই খুঁজতে হবে। কিন্তু এইদিকে সব জায়গায় কি খুঁজেছি? নাহ নাহ বাড়ির পিছনের দিকটা বাদ পড়েছে। আমার যতদূর মনে পড়ছে আমি যখন নিচে গাড়ি থেকে আম্মুর হ্যান্ড ব্যাগটা নিতে নেমেছিলাম ওই ছেলেটাকে বাড়ির সামনেই পায়চারি করতে দেখেছি। একটাবার পিছনের দিকটা দেখে আসতে হবে।”

যেই ভাবনা সেই কাজ আর দেরি না করে অভ্র এগিয়ে গেল সেদিকে। তবে কিছুটা যেতেই শুনতে পেল দুইজন মানুষ কথা বলছে। একটা মেয়েলি কণ্ঠ আরেকটা পুরুষালি কন্ঠ ভেসে আসছে অভ্রর কানে। ধীর পায়ে এগিয়ে গিয়ে এক কোণায় দাঁড়িয়ে পরিস্থিতি বুঝার চেষ্টা করলো অভ্র।

–“অনামিকা তোমাকে আমি ভালোবাসি বুঝেছো ভালোবাসি!! কেন বুঝো না তুমি আমাকে বলো তো?”

–“তোমার ভালোবাসা স্বাভাবিক না বুঝেছো? তুমি পাগল হয়ে গেছো। যেটাকে তোমার ভালোবাসা মনে হচ্ছে ওইটা তোমার জেদ! তুমি জোর করে পেতে চাচ্ছো সব কিন্তু তা সম্ভব নয়।”

–“হ্যা জোর করেই পেতে চাচ্ছি! এমনি এমনি না হলে জোর করেই তোমাকে নিজের করবো। দুই বছর নিজের অনুভূতি চেপে রেখেছি আর সম্ভব না আমার পক্ষে।”

–“অনেক হয়েছে এতোক্ষণ দাঁড়িয়ে তোমার কথাগুলো শুনাই আমার ভুল হয়েছে। চলে যাচ্ছি আমি আর যদি পরবর্তীতে তুমি আবারো আমাকে ডিস্টার্ব করতে আসো আমি আব্বুকে সবটা জানাতে দ্বিতীয়বার ভাববো না। গট ইট?”

আর কিছু না বলে সেখান থেকে বেড়িয়ে যেতে নিলাম এমন সময় রাফি আর হাত ধরে নিল। আচমকা এমন হওয়ায় বুঝে উঠতে কিছুটা সময় লাগলো। রাগটা দিগুন বাড়িতে বললাম,

–“ভালোয় ভালোয় হাতটা ছেড়ে দাও বলছি।”

–“আর যদি না ছাড়ি? এসেছি যখন এতো সহজে ছেড়ে দিব ভাবলে কি করে?”

–“রাফি লিমিট ক্রস করো না। থা’প্প’ড়টা গালে পরার আগে আমার হাত ছেড়ে দাও।”

–“আমায় মারবে? মেরে দেখাও তো।”

কন্ঠে স্পষ্ট তাচ্ছিল্য মিশে আছে। মন চাইছে এখনি মে’রে ওর গাল লাল করে দিতে। তবে কিছু করতে যাবো তার আগেই রাফি আমার হাত ধরে টান দিল। টাল সামলাতে না পেরে ওর কাছে গিয়ে ঠেকলাম। নিজেকে ছাড়িয়ে নিতে চাইলেও ওর শক্ত বাঁধনে কাছে হেরে যাচ্ছি।

–“ওকে ছেড়ে দাও।”

আরেক দফা সেই কঠিন পুরুষালি কন্ঠ কানে এলো। দৃষ্টি সামনে নিতেই অভ্রকে চোখে পড়লো। উনি এখানে কি করছেন? আর কেনই বা এসেছেন? উনি আবার ভুল বুঝবেন না তো এসব দেখে? এর মাঝেই রাফি আমাকে ছেড়ে কিছুটা এগিয়ে গেল অভ্রর দিকে। তবুও ওর হাত দিয়ে আমার হাতটা শক্ত করে ধরে রইলো। ব্যাথা পেয়ে তা ছাড়ানোর চেষ্টা করেও ব্যর্থ হচ্ছি শুধু।

–“তুমি কে হ্যা? কি কাজে এসেছো এখানে? আমি আমার প্রেমিকার সাথে ব্যস্ত আছি তাই নিঃশব্দে বেড়িয়ে যাও।”

–“সরি তবে এইটা মনে হয় সঠিক স্থান নয় আপনার জন্য। আর আপনার প্রেমিকার হাত যেভাবে ধরে আছেন সে ব্যাথা পাচ্ছে তা স্পষ্ট বুঝা যাচ্ছে। কোনো প্রেমিক যে এভাবে কষ্ট দেয় তা আমার জানা ছিল না।”

–“তোর কাছ থেকে শিখবো না কি রে?”

রাগে ফুঁসতে ফুঁসতে অভ্রর দিকে দ্রুত পায়ে হাঁটা ধরল রাফি। এখন যে এখানে একটা ঝামেলা হবে বুঝতে বাকি রইলো না। রাফি অভ্রর কাছে গিয়ে হাত তুলতে যাবে তখনই চক্ষুদ্বয় বন্ধ করে নিলাম। এই দৃশ্য দেখা আমার পক্ষে সম্ভব নয়। হঠাৎ কানে “আহ্” শব্দ ভেসে আসতেই চোখ পিটপিট করে মেললাম। সামনে অভ্র ঠাই দাঁড়িয়ে সেই প্যান্টে এক হাত গুজে। রাফি কোথায় গেল? আশপাশ তাকিয়ে নিচে তাকালাম। তাকাতেই চক্ষু চড়কগাছ! রাফি মাটিতে পড়ে ব্যাথায় ককরাচ্ছে। অভ্র রাফির দিকে তাকিয়ে ভ্রু কুঁচকে বললেন,

–“কি প্রেমিক পুরুষ? ভালো লাগছে? এত প্রেম সবার সহ্য হয় না বুঝলে? গায়ে নেই জোর এসেছে অভ্র চৌধুরীকে মারতে! হাস্যকর!”

আমি খালি চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে আছি। রাফি তখনো মাটিতে, ওকে দেখেই বুঝা যাচ্ছে উঠার মতো শক্তি পর্যন্ত নেই ওর। হঠাৎ অভ্র আমার দিকে তাকিয়ে চোখ দুটো ছোট ছোট করে বললেন,

–“এই যে ম্যাডাম উপরে যাওয়ার ইচ্ছা আছে না কি সবাইকে আরো টেনশন দিতে ইচ্ছুক আপনি?”

–“হ্যা না মানে ওর কি হবে?”

রাফির দিকে উদ্দেশ্য করে বললাম আমি। অভ্র কপালে হাত দিয়ে একবার আশেপাশে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলেন,

–“অনেক চিন্তা হচ্ছে বুঝি? তাহলে ওর সাথেই পড়ে থাকো আমি আসছি।”

–“না না দাঁড়ান প্লিজ আমি যাবো আপনার সাথে।”

দৌড়ে ওনার পাশে গিয়ে দাঁড়ালাম আমি। ইশারা করে আমাকে সামনে হাঁটতে বললেন উনি। আমি আরো একবার রাফির দিকে তাকিয়ে সামনে হাঁটতে লাগলাম। অভ্রও আমার পিছনে হাঁটা ধরলেন। বাড়ির সামনে এসে দেখলাম তেমন কেউই নেই তারমানে সবাই উপরে চলে গেছে। যেতে যেতে শুনতে পেলাম অভ্র ফোন করে জানাচ্ছেন আমাকে পেয়ে গেছেন সেই খবর।

–“প্রেমিকের সাথে দেখা করার এতো শখ? মেয়েরা পারেও।”

–“আপনি কি আমাকে বললেন কথাটা?”

–“আর কেউ আছে এখানে? উপরে সবাইকে চিন্তায় ফেলে এদিকে যে এই করতে এসেছো আগেই বুঝেছি আমি।”

–“কি বলতে চাইছেন আপনি? পরিষ্কার করে বলুন।”

–“এইযে তখন এতো তাড়াহুড়ো করে নামলে। আমি নিচে থেকে আসার সময়ই ওই ছেলেটাকে দেখেই আর কিছুটা কথপোকথন আমার কানে এসেছে। ছেলেটা তোমার নাম নিয়েছে সেটা শুনেই বুঝতে পেরেছি তুমি নিচে কেন গিয়েছো।”

–“বাহ্ আপনার কি বুদ্ধি! প্রশংসা করার মতো একদম বলতেই হচ্ছে।”

–“নতুন কিছু বলো যা আমি জানিনা।”

ওনার দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে আবার হাঁটা ধরলাম আমি। উনিও সাথে সাথে হাঁটতে লাগলেন।

–“একটা কথা বলছি মনোযোগ দিয়ে শোনো।”

–“হুম।”

–“নিচে যা হয়েছে সেসব উপরে গিয়ে বলবে না বুঝেছো?”

–“অ্যা? মানে?”

–“আবার মানে কি? বাংলাতেই তো বললাম না বুঝার কি আছে? আন্টি কতটা চিন্তায় ছিল আমি দেখেছি। তুমি যদি এসব কথা ওনাকে বলো উনি টেনশনেই জ্ঞান হারাবেন। এইজন্যই বলছি এগুলো কিছু বলো না। যদি বলতেই হয় বানিয়ে টানিয়ে বলে দিবে যা খুশি।”

–“জ্বি আপনার উপদেশের জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি।”

লিফটের মুখে দাঁড়িয়ে ছিলাম দুজনে। লিফট আসতেই উঠে পড়লাম তাতে, উদ্দেশ্য এখন উপরে যেতে হবে। কারণ সবাইকে ভালোই ফেলে দিয়েছি এইটা এতক্ষণে বুঝা হয়ে গেছে।

–“নাম কি?”

–“অনামিকা।”

–“আরেহ তোমার না ওই যে তোমার প্রেমিকের।”

–“আমার প্রেমিক না বুঝেছেন? ওখানে যা হলো এরপরেও ওকে আমার প্রেমিক বলেই সম্বোধন করছেন আপনি?”

–“হ্যা হ্যা বুঝেছি এই না সেই না। আগে নামটা বলো ওর।”

–“কেন?”

–“এই তুমি প্রশ্নের উপর প্রশ্ন করো কেন বলো তো? আমার জন্মের পর থেকে তোমার মতো ত্যাড়া মেয়ে আমি দেখিনি।”

–“কারণ আপনার যখন জন্ম হয়েছে তখন আমি পৃথিবীতেই আসিনি তাহলে দেখবেন কি করে?”

আমার কথায় ভ্রু কুঁচকে তাকালেন অভ্র। ওনার দিকে তাকিয়ে আমারও কপাল কুঁচকে গেল।

–“নাম বলো তাড়াতাড়ি।”

–“রাফি।”

–“কোথায় পড়ে?”

–“আমার ভার্সিটিতেই পড়ে আর আমার সাথেই।”

–“বুঝলাম ঠিক আছে। ওকে নিয়ে টেনশন করতে হবে না আর।”

–“করবো না? কিন্তু কেন?”

–“অতকিছু জানতে হবে না যা বললাম মাথায় রেখো তাহলেই চলবে।”

আর কিছু বললাম না খালি ঠোঁট উল্টে ঠাই দাঁড়িয়ে থাকলাম। লিফট এতোক্ষণে উপরে পৌঁছে গেছে আর একটা ফ্লোর বাকি এর মধ্যেই বিকট একটা শব্দ হলো। হঠাৎ লিফট বন্ধ হয়ে গেল।

–“একি! এইটা কি হলো!?”

–“আমিও তো বুঝতে পারছি না। ওয়েট ফোন দিচ্ছি কাউকে।”

অভ্র ফোন বের করে কাউকে কল দিতে লাগলেন। এদিকে সময় পার হতে হতে আমার দম বন্ধ হয়ে আসার উপক্রম। এসব অবস্থায় শ্বাস নিতে খুব অসুবিধে হয় আমার। মাথাটাও ঘুরতে শুরু করেছে। মনে হচ্ছে চারপাশের অক্সিজেন ফুরিয়ে যাচ্ছে। নিজেকে সামলানোর আগেই ধপ করে বসে পড়লাম। অভ্র আওয়াজ পেয়ে ফিরে তাকালেন। আমার চারপাশ অন্ধকার হয়ে যেতে লাগল। সবটা আঁধার হয়ে যাওয়ার আগে খালি অভ্রর চিন্তিত মুখশ্রী দেখতে পেলাম আর কিছুটা শুনতে পেলাম উনি আমায় ডাকছেন!

চলবে…………….^_^

[কেমন হয়েছে জানাবেন🥲 আজকে কিন্তু মন্তব্য চাই। লেখিকা এবং গল্পের সাথেই থাকবেন আশা করি 🥲♡]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here