#কোনো_এক_পূর্ণিমায় (১৪তম পর্ব)
#লেখনীতে_ওয়াসেকা_তাবাসসুম
~আন্টি আমার দিকে তাকিয়ে মৃদু হাসলেন। তারপর একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলতে লাগলেন,
–“অভ্রটা কিছু জানায়নি তাহলে? আমারই ভুল হয়েছে, নিজের থেকে আদেশ দিলে হয় তো বা তোর সাথে আলোচনা করতো। সত্যি বলতে করতো না কি সন্দেহ আছে তারপরও কিছুটা সুযোগ ছিল। তোদের নিয়ে মাঝে মধ্যেই আমি সবার সাথে আলোচনা করতাম, অভ্রকেও বলেছিলাম যে তোর সাথে ওর বিয়ে দেওয়ার খুব শখ ছিল আমার। কিন্তু তোদের সাথে সম্পূর্ণভাবে যোগাযোগ ব’ন্ধ হয়ে যাওয়ার কারণে আমার ইচ্ছেটা জলে গেছিলো একদম। আমার অভ্রটা আগে ভীষণ ছটপটে ছিল তবে সময়ের সাথে সাথে কেমন চাপা স্বভাবের হয়ে গেছে। ওকে যখন বলতাম তোর সাথে বিয়ে দিব খালি মজা নিতো বলত যে,”দিও তোমার সেই গল্পের রমনীকেই বিয়ে করবো যাও।” আমিও জানতাম কোনদিন হয় তো সম্ভব না। তবে আল্লাহ তায়ালা যে এভাবে আমার ইচ্ছা পূরণ করে দিবেন ভাবিনি কখনো। অনু আমার ছেলেটাকে কেমন ঘরছাড়া হয়ে যাচ্ছে। আমি চাই তুই ওকে একদম বেঁধে রাখ। বল পারবি না?”
আরেক দফা অবাকের উচ্চ পর্যায়ে পৌঁছে গেলাম। উনি গতকাল এগুলো নিয়েই আমার মনে কৌতুহল জাগিয়ে গেছিলেন তাহলে? আজকে অভ্রর সাথে কথা বলতে হবে যেভাবেই হোক।
সবাই রাতের খাবার খেয়ে উঠে গেল টেবিল থেকে। মজার ব্যাপার হচ্ছে আজকে অভ্রও সবার সাথে টেবিলে এসে খেয়েছেন। খাবার শেষ করে সাথে সাথেই উঠে নিজের ঘরে চলে গেছেন আবার। খাবার টেবিলে বারবার কেউ আড়চোখে তাকাচ্ছিল এটাও খেয়াল করেছি আমি। আর সেটা হলো আবিদ,ওকে দেখে মনে হচ্ছিল কিছু একটা বলতে চায় কিন্তু বলতে পারছে না হয় তো।
সবার চলে যাওয়ার পর আমিও উঠে গেলাম। নিজের ঘরে যাওয়ার পথে অভ্রর রুমটা পড়ে। এটাই সুযোগ ওনাকে আজকে রাতে আবার ছাদে আসার জন্য বলতে হবে। সবাই জেগে থাকা অবস্থায় কথা বললে বিষয়টা কেমন যেন হয়ে যাবে। অভ্রর রুমের দিকে এগিয়ে গিয়ে দরজায় নক করলাম সাথে সাথে উত্তরও পেলাম। গুটিগুটি পায়ে ওনার রুমের দরজা খুলে ভেতরে ঢুকলাম।
সুন্দর গোছানো একটা ঘর। বিছানা থেকে শুরু করে বুকসেফ্ল সব কিছুই ওনার গুছানো স্বভাবের পরিচয় দিচ্ছে। অভ্র টেবিলে বসে ল্যাপটপে কাজ করছিলেন। আমার দিকে একবার তাকিয়ে আবার ল্যাপটপে চোখ রাখলেন। আমি কিছুটা এগিয়ে গেলাম ওনার দিকে।
–“কথা ছিল আপনার সাথে।”
–“বলো কি বলবে।”
–“এখানে না মানে গতকালের মতো আজকে আবার একটু ছাদে আসবেন?”
অভ্র ল্যাপটপ থেকে নজর সরিয়ে, ঘুরে আমার দিকে তাকালেন। উনার দৃষ্টি ঠিক কি বলতে চাইছে বুঝতে পারলাম না। এক হাত নিজের মুখশ্রীতে রেখে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে বলতে লাগলেন,
–“হুম ঠিক আছে।”
–“সত্যি আসবেন তো?”
–“মিথ্যা বললে কি কোনো লাভ হবে আমার?”
আমি মৃদু হেসে চুপচাপ বেড়িয়ে আসলাম ওনার রুম থেকে। মাথার মধ্যে কাজ করতে লাগলো সব। আব্বুর বলা কথাগুলো ভাবলাম তারপর আন্টির বলা কথাগুলোও কয়েকবার মনে করলাম। বিয়েটা করা কি ঠিক হবে..?
–“অনামিকা এই অনামিকা…”
–“হ্যা হ্যা কে?”
–“তুমি আমাকে দেখনি পর্যন্ত? কি এতো ভাবছো?”
–“ওহ্ আবিদ তুমি। নাহ মানে কিছু ভাবছি না।”
–“বিয়ে নিয়ে ভাবছো বুঝি? তো কি সিদ্ধান্ত নিলে?”
–“কিসের সিদ্ধান্ত? না এখানো কিছু ভাবিনি আমি।”
–“তুমি বিয়েটা করবে তাই তো? করতেই পারো অভ্র ভাইয়া অনেক ভালো। পরিবারের সবাই তাকে ভীষণ পছন্দ করে। আর ভাইয়া ভালো একজন মানুষ তুমি ভালোই থাকবে।”
আবিদের মুখে কেমন জোর পূর্বক হাঁসি। ছেলেটা কি তবে আমার আর অভ্রর বিয়ের কথা শুনে খুশি হয়নি? হবে না কেন?
–“ঘরে যাও। রাত হয়েছে অনেক।”
–“আচ্ছা। আসছি তবে।”
দুজনে একে অপরের দিকে তাকিয়ে হালকা হেসে চলে গেলাম যে যার গন্তব্যে।
••••••••••••••••
চোখ বুজে শুয়ে ছিলাম। চাঁদের কিরণ এসে মুখশ্রীতে পরতেই চোখ খুললাম। অভ্র কি এসেছেন ছাদে? ঘড়িতে তাকিয়ে দেখলাম ১:৩০ টা বাজে। এতক্ষণে অভ্রর চলে আসার কথা। বিছানা ছেড়ে উঠে একটা ওড়না পেঁচিয়ে ছাদের উদ্দেশ্যে বেড়িয়ে গেলাম।
ছাদের দরজা খুলা তারমানে অভ্র এসেছেন। ধীর পায়ে ভিতরে ঢুকলাম। সামনে অভ্র দাঁড়িয়ে আছেন, ওনার দৃষ্টি সেই আকাশের দিকে। ওনার পাশে গিয়ে দাঁড়িয়ে পড়লাম চুপচাপ। কিছুক্ষণ যাবত দুজনের মধ্যেই কোনো কথা হলো না। নিস্তব্ধতা বিরাজ করছে চারপাশ জুড়ে তবে বাতাস বয়ে যাওয়ার আওয়াজ কানে আসছে।
–“বলো কি বলবে।”
–“আপনি বিয়ের বিষয়টা আগের থেকেই জানতেন তাই না? আমাকে ওইদিন বললেন না যে?”
উনি মৃদু হাসলেন। তবে আজকে ওনার এই হাসি আমায় অজান্তেই মুগ্ধ করলো। এই বিয়ে শব্দটা শুনার পর থেকেই কি মানুষের অনুভূতি পাল্টে যেতে থাকে না কি? এতো অদ্ভুত কেন?
–“এভাবে তাকিয়ে থেকো না তো।”
–“আমি কোথায় তাকিয়ে ছিলাম না তো।”
ওনার থেকে দৃষ্টি সরিয়ে নিলাম তাড়াতাড়ি! আজকে মান সম্মান সব শেষ হয়ে গেল। অভ্র মিটিমিটি হাসছেন এখনো। ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলাম,
–“কাজের কথা হচ্ছে না কিন্তু! আসল কথা বলুন তো।”
–“ওহ্ কি জানি?”
–“নাটক করছেন? জিজ্ঞেস করলাম না? বিয়ের কথা জানতেন আগের থেকেই?”
–“জানতাম।”
–“হেহ? তাহলে আমাকে কেন বলেননি কিছু?”
–“কি বলতাম তোমাকে? ‘অনামিকা আমি না তোমাকে বিয়ে করতে চাই।’ এটা বলতাম?”
কথাটা শুনে চোখ গিয়ে কপালে ঠেকলো। লোকটার কি মাথা নষ্ট না কি? আবার নিজের কথায় নিজেই হাসলাম। আসলেই তো উনি ঠিক কি বলতেন আমাকে?
–“শুনো।”
–“হ্যা বলুন।”
–“বিয়ে করবে না কি করবে না আম্মুকে জানিয়েছো?”
–“নাহ এখনো জানাইনি।”
আমার কথায় কপাল কুঁচকে তাকিয়ে রইলেন অভ্র।যেন আমার কথা শুনে ওনার মেজাজ বিগড়ে গেছে। রাগী
রাগী চোখ নিয়ে তাকিয়ে আছেন।
–“এভাবে তাকিয়ে আছেন কেন আপনি?”
–“তুমি বিয়ে করবে কি করবে না?”
–“আপনি আমাকে জিজ্ঞেস করছেন না কি হুমকি দিচ্ছেন?”
–“তোমার যেটা মনে হয় সেটাই। কালকের মধ্যে আম্মুকে তোমার সিদ্ধান্ত জানাবে বলে দিলাম। এতো কাহিনী আমার পছন্দ না।”
–“কিন্তু আপনি যে আমার প্রশ্নের উত্তর দিলেন না?”
কথা শেষ না করেই উনি চলে যেতে লাগলেন।দুই কদম হেঁটেই আবার দাঁড়িয়ে গেলেন উনি। কিছুক্ষণ সেইভাবেই দাঁড়িয়ে থেকে আমার দিকে ঘুরে দাঁড়ালেন।
ঠোঁটের কোণে এক চিলতে হাসি ফুটিয়ে বললেন,
–“যদি বিয়েতে হ্যা বলো তাহলে হয় তো উত্তর পেতে পারো। মনে থাকে যেন আমার কালকের মধ্যে সিদ্ধান্ত জানা চাই। আসছি এখন, ঘুমিয়ে পড়ো গিয়ে।”
হনহন করে হেঁটে বেড়িয়ে গেলেন ছাদ থেকে। আমি মূর্তির ন্যায় দাঁড়িয়ে রইলাম কিয়ৎক্ষণ। কিছুই বুঝে আসছে না আমার। কালকে কি তবে সিদ্ধান্ত জানাতেই হবে?
#কোনো_এক_পূর্ণিমায় (১৫তম পর্ব)
#লেখনীতে_ওয়াসেকা_তাবাসসুম
~সবার সামনে কেমন আসামির মতো বসে আছি, সবার কড়া দৃষ্টি আমার দিকে। আজকে আব্বুকে আসতে বলেছেন আন্টি। এই মুহূর্তে আব্বু, আংকেল আর আন্টি আমার সামনে রয়েছেন। কিছুটা দূরে দাঁড়িয়ে আছে ঋতু আপু আর অর্থি। অভ্র আর অনিক ভাইয়া অফিসে চলে গেছেন। আবিদ না কি সকাল সকাল তার ভার্সিটিতে গেছে।
–“কিরে এতো কি ভাবিস তুই? দেখ আমি মনে প্রাণে চাই তোকে আমার বাড়ির বউ করে আনতে। তুই তাড়াতাড়ি তোর মতামত দে তো।”
আন্টির কথায় ভাবনার জগৎ থেকে বেড়িয়ে এলাম। সবার দৃষ্টি আমার দিকেই স্থির। এদিকে এখনো মাথায় হাজার চিন্তা ঘুরপাক খাচ্ছে। এই “বিয়ে” নামক শব্দটা এতো ভয়ংকর আগে জানতাম না! এর মাঝেই আব্বুর গলা শুনতে পেলাম,
–“মা এইবার বল? বিয়েটা করবি না কি না? দেখ তোর আন্টির মতো আমিও চাই এখানেই তোর বিয়ে হোক। নিজেদের চেনা জানার মধ্যে হলে আমি চিন্তামুক্ত থাকতে পারবো।”
–“আমি.. বিয়েতে রাজি আছি।”
এক বাক্য উচ্চারিত হওয়ার সাথে সাথে সবাই লাফিয়ে উঠলো। আন্টি তো উঠে এসে আমাকে জড়িয়ে ধরলেন। ঋতু আপুও এগিয়ে এলো আর অর্থি আনন্দে লাফাচ্ছে।
–“ইয়েস! আমার মনেই হচ্ছিল অনু আপু হ্যা বলবে!”
–“তাহলে আগে বলিস নাই কেন?”
–“আরেহ আম্মু আগে বলে দিলে মজা নষ্ট হয়ে যেতো।”
সাথে সাথে আন্টি অর্থির দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকালেন। অর্থি অস্বস্তির হাসি হেসে আবার লাফানো শুরু করলো। আন্টি আনন্দের স্বরে বললেন,
–“শেষমেষ আল্লাহ আমার ইচ্ছা পূরণ করলেন। কি যে খুশি লাগছে আমার। নাহ এখন আর দেরি করবো না বিয়েটা যতো তাড়াতাড়ি পারি করিয়ে দিব।”
আংকেল চেয়ার ছাড়তে ছাড়তে বলতে লাগলেন,
–“করাও করাও। ঘরছাড়া হয়ে থাকা ছেলেটার ঘরে আসার একটা কারণ ভীষণ দরকার এবার।”
–“একদম ঠিক কথা! আজকে অভ্র আসুক ওর সাথে কথা বলে একদম সব ঠিকঠাক করে নিব।”
–“তাই ভালো।”
আন্টি আর আংকেল চলে গেলেন। আব্বু আমার দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে চলে গেলেন। ঋতু আপু আর অর্থি আর পাশ ঘেঁষে বসে পড়লো।
–“কিরে অনু? তাহলে রাজি হয়েই গেলি? তুই তাহলে আমার জা হবি? ভাবতেই তো মজা লাগে।”
–“আসলেই ভাবী! আমি আরেকটা ভাবী এতো তাড়াতাড়ি পাবো নিজেও চিন্তা করিনি।”
–“এই অনু তুই চুপ কেন এতো?”
–“হ্যা না এমনি।”
–“কি হয়েছে বল তো? এখনও এটাই ভাবছিস যে হ্যা বলে ঠিক করেছিস না কি?”
উত্তর দিলাম না কিছু গতকাল রাতের কথা মনে পড়লো। অভ্রর রুম থেকে আসার খানিকক্ষণ বাদে আন্টি আমার রুমে আসে।
••••••••••••••••••
–“অনামিকা আসবো?”
–“আরেহ আন্টি ভিতরে আসুন।”
–“তোমার সাথে কথা ছিল।”
–“বিয়ের বিষয়?”
উনি মৃদু হেসে বিছানায় বসলেন। আমি চেয়ারে বসা ছিলাম তখন। উনি একটা দীর্ঘশ্বাস নিয়ে বলা শুরু করলেন,
–“তোমাদের বিয়েটা শুধুমাত্র আমার ইচ্ছা এইজন্য দিতে চাইছি এমনটা না। আমি এখনো অনেক আফসোস করি জানো? তোমার আম্মুর সাথে শেষ দেখাটাও করতে পারিনি আমি। নিজের সংসার সামলাতে গিয়ে বন্ধুত্বের বন্ধন আলগা হয়ে গেছে কখন টের পাইনি। তারপর তোদের খোঁজখবরও পেলাম না। আজ এতো বছর পর তোকে দেখে মনে হচ্ছে যেন আমার অধরা আমার সামনে রয়েছে। তোকে দেখলেই অধরার কথা মনে হয়। আমি চাই অভ্রকে বিয়ে করে তুই এই বাড়িতে থেকে যা। আমার ছেলেটা খারাপ না রে, ওর মনে জায়গা করে নিতেও বেশি সময় লাগবে না দেখিস। ছেলেটা বাইরে থেকে নিজেকে খুব শক্ত দেখায় তবে ভিতরে ভিতরে অনেক নরম স্বভাবের। আজকাল ওকে মাঝে মাঝে আমিও বুঝে উঠতে পারি না। এখন মনে হয় ওকে বুঝার মতো একটা মানুষের খুব প্রয়োজন। সত্যি বলতে তোকে কেউ জোর করবে না, তোর আপত্তি থাকলে কোনো সমস্যা নেই। বাকিটা তোর উপরে, আমি এখন আসি।”
তারপর আন্টি চলে গেলেন রুম থেকে। আমি বসে রইলাম এক আকাশ চিন্তা নিয়ে।
•••••••••••••••••••••
সবাই খাবার টেবিলে বসে রয়েছে। খাবার সার্ভ করার পর সকলে খাওয়া শুরু করলো। আংকেল খেতে খেতে সকলের দিকে দৃষ্টি রাখলেন একবার। অতঃপর গম্ভীর গলায় সবার উদ্দেশ্যে বললেন,
–“খাবার শেষে সবাই ড্রয়িংরুমে বসবে। অভ্র আর অনামিকার বিয়ে নিয়ে আলোচনা করবো আজকে। সবাইকে যেন ড্রয়িংরুমে পাওয়া যায়।”
অভ্র আড়চোখে আমার দিকে তাকালেন। ওনার সাথে দৃষ্টির মিলন ঘটতেই চোখ ফিরিয়ে নিলাম। লোকটার আবার এদিকে তাকানোর কি আছে আজব তো?
খাওয়া শেষে সবাই যথারীতি ড্রয়িংরুমে এসে বসে পড়লো। সবার মুখেই হাসি এর মাঝে আবিদকে খুব নিরস লাগছে। তবে সেদিকে তাকিয়ে এখন কোনো কাজ নেই। অভ্র ডাইনিং রুম থেকে এসে সোফায় বসে পড়লেন। আমার সামনাসামনি সোফায় এসে বসলেন, একবার এদিকে তাকিয়ে নিজের ফোনে মনোযোগ দিলেন। আন্টি আর আংকেল একসাথে এসে বসে পড়লেন। আন্টি উৎসুক কন্ঠে বলা শুরু করলেন,
–“দেখো আমি আগে বলবো ঠিক আছে? অভ্র তুই বল যে তোর সুবিধা অনুযায়ী কবে তারিখ ঠিক করবো?”
–“আমার আবার সুবিধা অসুবিধা কি? তোমাদের যেইদিন ঠিক মনে হবে সেদিনই।”
–“আল্লাহ আল্লাহ তোর মুখে এই কথা সম্ভব কিভাবে রে? যেই ছেলে আগে আগে নিজের মতামত রাখে সেই ছেলে বলছে আমরা যা ঠিক করবো তাই?”
অভ্র মৃদু কাশলেন আন্টির কথায়। এদিকে আমার ভালোই হাঁসি পাচ্ছে। কিন্তু এই ভরা সমাবেশে হাসলে মান সম্মান থাকবে না। অভ্র ভ্রু কুঁচকে আন্টির দিকে তাকিয়ে রইলেন কিন্তু তাতে পাত্তা না দিয়ে আন্টি আমাকে জিজ্ঞেস করলেন,
–“তুই বল অনামিকা। তোর জন্য সুবিধা কবে? আচ্ছা এক মিনিট আমার মাথায় একটা ভালো কথা এসেছে।”
–“কি কথা?”
–“ঋতু আর অনিকের বিয়ের অনুষ্ঠান করা হয়নি আর তোদের সামনে বিয়ে দিবো। একটা কাজ করা যায় অভ্র আর অনামিকার কাবিন করিয়ে দেই তারপর দুই জোড়া অনুষ্ঠান একসাথে করবো কি বলিস?”
সবাই সম্মতি জানালো আন্টির প্রস্তাবে। এদিকে আমি কি বলবো? ওনারা যা ঠিক মনে করে তাই হবে। অনিক ভাইয়া অভ্রর পাশে গিয়ে বসে ওনার কাঁধে হাত রেখে বললেন,
–“আমার ভাইটা যে এতো তাড়াতাড়ি বিপদে পড়বে কে জানতো?”
ভাইয়ার কথায় আপু চোখ গরম করে তাকালো। সূক্ষ্ম দৃষ্টিতে কন্ঠে বিরক্তি নিয়ে বলতে লাগলো,
–“আমাকে বিপদ মনে হয় তোমার? আর নিজের ভাইয়ের মাথায় এইসব ঢুকাচ্ছো তুমি?”
–“এই না ঋতু আমি ওইভাবে বলিনি।”
–“শুনতেই তো পেলাম কীভাবে বললে তুমি। একদম ওর মাথায় উল্টা পাল্টা ঢুকাবে না। আমার অনু কোনো বিপদ না বুঝলে? দুজনে খুব ভালো থাকবে আমি জানি।”
–“তা ঠিক। আমার শালী সাহেবার উপর বড়সড় একটা দায়িত্ব পড়বে এইবার। কারণ এই গোমড়া মুখর মুখে হাসি ফুটানোর অনেক বড় দায়িত্ব।”
অভ্র আবার তাচ্ছিল্যের হাসি হেসে বললেন,
–“নিজের খেয়াল রাখতে পারে না। সে আমার দায়িত্ব নিবে? ভালোই মজা করতে পারো তুমি ভাইয়া। তোমার শালী সাহেবাকে বলো আগে নিজের খেয়াল রাখা শিখতে।”
এবার আমার মেজাজ বিগড়ে গেলো! সবার সামনে আমাকে বাচ্চা প্রমাণ করতে চাচ্ছেন উনি? আমি এখনো ছোট? মানছি দু একবার ধাক্কা লেগে ঠাস ঠুস করে পড়ে গেছি তাই বলে এইভাবে কে বলে?
–“আমাকে আপনার বাচ্চা মানুষ মনে হয়? নিজের খেয়াল রাখতে পারিনা আমি?”
–“কত ভালো খেয়াল রাখতে পারো জানা আছে আমার থাক। তোমাকে কষ্ট করে আমার দায়িত্ব নিতে হবে না। দেখা যাবে বিয়ের পর আমাকেই তোমায় কোলছ নিয়ে ঘুরতে হবে।”
ওনার শেষ কথায় চক্ষু বড় বড় হয়ে গেল আমার। আন্টি আর আংকেলও অভ্রর দিকে তাকিয়ে আছেন। বাকিরাও অবাক চোখে চেয়ে আছে। অভ্র সবার দিকে চোখ বুলিয়ে বুঝতে পারলেন নিজের কথায় নিজেই ফেঁ’সে গেছেন উনি! আমতা আমতা করে বলা শুরু করলেন,
–“না মানে আমি কথার কথা বলেছি। আসলে আমি ভুল করেই বলেছি এটা বলতে চাই নি। যাই হোক আমার কাজ আছে, তোমরা তোমাদের আলোচনা শেষে আমাকে জানিয়ে দিও আমি আসি।”
আর এক মূহুর্ত অপেক্ষা না করে পালিয়ে গেলেন অভ্র। ওনার যাওয়ার পানে চেয়ে রইলাম আমি। ইস! নিজে গেল আমার মান সম্মানের বারোটা বাজিয়ে দিয়ে গেল!
কোথায় কি বলতে হয় এটাও কি জানে না লোকটা?
আন্টি হালকা কেশে গলা পরিষ্কার করে নিলেন তারপর বললেন,
–“আচ্ছা তো আমরা দুইদিন পরে তারিখ ঠিক করি? ঋতু আর অনামিকার বাসায় আমি জানিয়ে দিব পরে। তুই কি বলিস অনু?”
–“ঠিক আছে আমার সমস্যা নেই আন্টি।”
–“আচ্ছা ঠিক আছে। আমরা ঘরে গেলাম।”
আন্টি আর আংকেলও নিজেদের ঘরে চলে গেলেন। সাথে সাথে আপু,অনিক ভাইয়া,অর্থি আর আবিদ আমাকে ঘিরে বসলো। অর্থি আগে বলা শুরু করলো,
–“অনু আপু……….কি ব্যাপার বলো তো? মেজো ভাইয়ার মুখে এমন কথা? আমার তো বিশ্বাসই হচ্ছে না।”
অনিক ভাইয়া আর আবিদও কথায় তাল মিলিয়ে বললো,
–“আসলেই তো অভ্রর কাছ থেকে এমন কথা কেউই আশা করেনি! এটা কিভাবে হলো অনামিকা?”
–“আমারও একই প্রশ্ন। কি জাদু করেছো অনামিকা হ্যা?”
–“আমি কিছু করিনি।”
ঋতু আপু আমার বাহুতে ধাক্কা দিয়ে হাসতে হাসতে বললো,
–“তোদের কি আমাদের আড়ালে কথা হয় না কি রে? কি চলছে বল তো?”
–“আপু তুমিও? আরেহ আমি কিছু করিনি! সরো তো তোমরা আমি রুমে গেলাম।”
উঠে এক দৌড় দিলাম উপরে। এখন এখানে থাকলে সব কথা আমাকেই হজম করতে হবে!
চলবে……………….^_^
চলবে…………..^_^
[গতকাল ব্যস্তটার কারণে দিতে পারিনি। আজকের পর্বটাও অনেকটা ছোট হওয়ার ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি আগেই। হ্যাপি রিডিং♡]