কোনো এক পূর্ণিমায় পর্ব -১২+১৩

#কোনো_এক_পূর্ণিমায় (১২তম পর্ব)

#লেখনীতে_ওয়াসেকা_তাবাসসুম

~আবিদ আমার সামনে দাঁড়িয়ে দাঁত কেলিয়ে হেসেই চলেছে। এদিকে আমি নিজেকে শান্ত করছি, হঠাৎ সামনে চলে আসায় ভালোই ভয় পেয়েছি। আবিদ হাসতে হাসতে আমার দিকে তাকিয়ে বলতে শুরু করলেন,

–“সরি সরি ভয় পেয়ে থাকলে আসলে তোমরা এসেছো শুনে দেখা করতে এলাম আর কি। তুমি না কি অধরা আন্টির মেয়ে?”

–“জ্বি।”

–“বাহ্ ভালো ভালো। এতো দিন তোমার কথা খালি শুনেছি এর মধ্যে যে পরিচয় হয়ে গেছে আগে তো বুঝিনি। যাক সেসব ব্যাপার না নিচে খেতে ডাকছে চলো।”

–“হ্যা আসছি।”

আবিদ নিচে চলে গেল আমিও কিছুক্ষণ বাদে চলে গেলাম। সবার সাথে দেখা করে ডাইনিং টেবিলে বসলাম সকলে। খাবার পরিবেশনের পর সবাই খাওয়া শুরু করলো। এর মাঝেই একটু আকটু গল্পগুজব চলছে তবে খেয়াল করলাম এখানে অভ্র নেই। তাহলে কি উনি খাবেন না? না কি ঘুমিয়ে গেছেন? যাক আমার কি। লোকটা আজকে হেল্প করেছে সত্যিই না হলে বিপদে পড়ে যেতাম।

–“মা অভ্র খাবে না?”

ঋতু আপুর গলা পেয়ে সেদিকে দৃষ্টিপাত করলাম। আপু আন্টির দিকে তাকিয়ে রয়েছে। আন্টি খেতে খেতেই উত্তর দিলেন,

–“অভ্রর কথা বলো না আর ওকে খাবার টেবিলে পাওয়া তো ভাগ্যের ব্যাপার। কয়েকদিন হলো বিদেশ থেকে ফিরেছে এর মধ্যে এক নয় দুইবার হয় তো আমাদের সাথে বসে খেয়েছে। সে পুরো সময়টাই নিজের রুমে কাঁটায়। সারাক্ষণ ল্যাপটপের মধ্যে মুখ গুঁজে রাখে।”

একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে এক গ্লাস পানি পুরোটা শেষ করলেন আন্টি। যা বুঝলাম পরিবারের মানুষগুলোর সাথে অভ্রর সম্পর্ক খুব নড়বড়ে।তার উপরে এতদিন দেশের বাইরে থেকে মনে হচ্ছে আরো অবনতি হয়েছে।

•••••••••••••••••

কয়েকদিন পেরিয়ে গেছে এর মধ্যে। বাড়ির লোকজন গুলোও অনেকটা আপন হয়ে গেছে। বিশেষ করে অর্থির সাথে ভালোই ভাব জমেছে। মেয়েটি একদম বাচ্চাদের মতো এতো দিনে যা বুঝলাম ওর হয়তো বা একটা বোনের অভাব ছিল। আমার আর ঋতু আপুর সাথে একদম মিলেমিশে গেছে।

অনেকদিন পেরিয়ে গেছে তাই মনে হলো এখন বাসায় যাওয়া দরকার। বিয়েটাও শেষ তাই একেবারে নিজের বাসায় যাওয়াটাই ঠিক হবে। যেই ভাবা সেই কাজ নিচে চলে গেলাম আন্টির কাছে। রান্নাঘরে গিয়ে দেখি আপু আর আন্টি মিলে সন্ধ্যার নাস্তা বানাচ্ছে।

–“আরেহ অনামিকা এসেছিস আয় ভিতরে।”

–“নাহ আন্টি আসলে আমি কিছু বলতে এসেছিলাম।”

–“হ্যা মা বল।”

–“অনেক দিন তো হলো এখানে এসেছি। ভাবছি আব্বুকে ফোন দিয়ে বলবো কালকে এসে আমাকে নিয়ে যেতে।”

–“ফোন দিতে হবে না।”

আন্টি কিছু মুখ ভার করে বললেন কথাটা। পাশে ঋতু আপুর ঠোঁটের কোণে মৃদু হাসি খেয়াল করলাম। দুজনে একে অপরের দিকে তাকিয়ে ফিক করে হেসে দিল। আমি কিছুই বুঝে উঠতে পারলাম না।

–“তোর খালুকে ফোন দিতে হবে না।”

–“কিন্তু কেন?”

–“কারণ তোমার আব্বু নিজেই আসছেন আজকে।”

–“কিহ!!? আব্বু আসছে?”

–“হ্যা আমিই আসতে বলেছি। ওনার সাথে জরুরী কথা আছে আমার।”

–“কি কথা আন্টি?”

–“সেটা তুমি পরে জানতে পারবে। আগে তোমার আব্বুর সাথে কথা বলবো তারপর তোমাকে জানানো হবে।”

আর কি বলবো মৃদু হেসে সেখান থেকে প্রস্থান নিলাম। আন্টি যে ঠিক কেন আব্বুকে আসতে বলেছেন সেটাই মাথায় আসছে না। অন্যমনস্ক হয়ে উপরে উঠছিলাম কিছুটা দূরে যাওয়ার পর মনে হলো কেউ দাঁড়িয়ে আছে পিছনে, সাথে সাথে ঘুরে তাকালাম।

–“আপনি এখানে দাঁড়িয়ে কেন?”

–“আমার বাসায় আমি দাঁড়াতে পারবো না?”

–“দাঁড়াতে মানা করিনি খালি জিজ্ঞেস করেছি।”

–“নিজের কথা ভাবো। যেভাবে হেঁটে যাচ্ছিলে ঠা’স ঠুস করে তো পরতে যেকোন সময়।”

ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে রইলাম অভ্রর দিকে। লোকটা যেকোন কারো মেজাজ খারাপ করে দিতে পারে। আমাকে তাকিয়ে থাকতে দেখে অভ্রও ভ্রু কুঁচকে তাকালেন।

–“এভাবে তাকিয়ে থাকার কি আছে? আমি হ্যান্ডসাম সেটা ভালো মতোই জানি ঠিক আছে।”

–“আপনি চুপ করুন তো।”

–“আচ্ছা সে যাই হোক আম্মু তোমাকে কিছু বলেছে?”

–“কি বিষয়?”

–“বুঝেছি। কোথাও যাচ্ছিলে মনে হয় যাও।”

–“কিন্তু কি বিষয় সেটা তো বলবেন?”

অভ্র হনহন করে হেঁটে বেড়িয়ে গেল। আমার মাথায় কিছুই ঢুকছে না হচ্ছে কি? আব্বুকে ঠিক কি দরকারে আসতে বলেছে আন্টি?

•••••••••••••••••

আব্বু এসেছে কিছুক্ষণ হয়েছে। বড়রা একটা ঘরে বসে কথা বলছে। আমি,অর্থি আর ঋতু আপু বসে বসে গল্প করছি তবে আমার এগুলোতে মন বসছে না। মাথায় খালি ওনাদের আলোচনার চিন্তা কাজ করছে। কি কথা বলছে সেটাই বুঝতে পারছি না।

–“অনু আপু? এই আপু!”

–“হ্যা হ্যা বলো অর্থি।”

–“এতো কি ভাবছো বলো তো তুমি?”

–“কোথায় কিছু না তো।”

–“ও আর কি বলবে অর্থি? সারাদিনই তো কিছু না কিছু ভেবেই চলেছে।”

–“আরেহ না ঋতু আপু আমি তো অন্যকিছু ভাবছিলাম আসলে ওই যে নিচে সবাই কি নিয়ে কথা বলছে সেটাই।”

–“খুব জানতে ইচ্ছে করছে তোর?”

–“হ্যা মানে একটু আকটু।”

–“এতো ভেবে লাভ নেই একটু পরেই ডাক পরবে দেখিস।”

সত্যি সত্যিই কিছুক্ষণ পরেই আন্টি সবাইকে ডাক দিলেন। সবাই তাড়াতাড়ি করে নিচে নেমে গেলাম। আন্টি, আংকেল আর আব্বু বসে আছে সোফায়। আমি যেতেই আমাকে বসতে বললেন। আমিও বসে পড়লাম আব্বুর পাশে। আব্বু আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বলতে শুরু করল,

–“মা একটা সিদ্ধান্ত নিয়েছি।”

–“কি সিদ্ধান্ত?”

এরমধ্যেই আন্টি সোফা ছেড়ে দাঁড়িয়ে গেলেন। আনন্দিত গলায় বলতে লাগলেন,

–“আমি বলবো। অনামিকা মা দেখো সিদ্ধান্তটা আমরা বড়রা মিলে নিয়েছি এবং অনেকটা ভেবেই নিয়েছি।”

–“আন্টি তোমরা কেউ আসল কথা বলছো না কেন? আমি তো কিছুই বুঝতে পারছি না।”

–“অভ্র এদিকে আয় আগে।”

অভ্রকে ডাকতেই উনি মুখ তুলে তাকালেন সবার দিকে। তারপর গুটিগুটি পায়ে এগিয়ে এলেন এদিকটায়।

–“বলো কি বলবে।”

–“আমরা চাইছি অভ্র আর অনামিকার বিয়ে দিতে এবং সেটা খুব তাড়াতাড়ি।”

–“কিহ!!!

মাথার উপর পুরো আকাশটাই যেন ভেঙ্গে পড়লো। বিয়ে আমার? তাও আবার এই অদ্ভুত লোকটার সাথে? উনার দিকে তাকাতেই খেয়াল করলাম লোকটা একইভাবে দাঁড়িয়ে আছে। ওনার মাঝে কোনো পরিবর্তনই নেই। উনি কি তাহলে সবটা আগের থেকেই জানতেন না কি?

চলবে………………^_^#কোনো_এক_পূর্ণিমায় (১৩তম পর্ব)

#লেখনীতে_ওয়াসেকা_তাবাসসুম

~রুমে এসে বসে আছি আর আমার সামনে রয়েছে আব্বু। এই মুহূর্তে কিছু বলার মতো বা তর্ক করার মতো অবস্থায় নেই আমি। আব্বুর দিকে পলকহীন দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছি। আব্বু চুপচাপ বসে আছে তার মুখেও কোনো কথা নেই। সব চিন্তা এক পাশে রেখে আমিই কথার সূচনা করলাম,

–“কি ভেবে রাজি হলে তুমি? আমাকে একটু দয়া করে বলবে? আমাকে আগে বিষয়টা আগে জানাতে তো পারতে? তারপর না হয় নিজের সিদ্ধান্ত জানাতে।”

–“মা আমার কথাটা শোন তুই। দেখ আমি সবদিক ভেবেই হ্যা বলেছি।”

–“আচ্ছা তাই? তা কি কি ভাবলে তুমি? এমন কি মাথায় এলো তোমার যে চট করে নিজের মেয়ের বিয়ের সিদ্ধান্ত নিয়ে নিলে?”

–“অনু আমি তোর বাবা। তোর জন্য কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে অবশ্যই আমি ভেবে নিবো তাই না?”

–“আমি খালি তোমার ভাবনাটা জানতে চাইছি।”

–“শোন তবে, তোর আন্টি যখন অভ্রর সাথে বিয়ের কথাটা বললো প্রথমে আমিও মত দেইনি কারণ এভাবে হুট করে আর যাই হোক বিয়ে হয়না। আমি এটাও ভেবে দেখলাম যে আমার মেয়ের মনে কারো বসবাস আছে না কি? মনে পড়লো নাহ নেই। কারণ থাকলে তা আমি অবশ্যই জানতাম এইটুকু আস্থা তোর উপরে আছে আমার। তারপর মনে হলো তোর মায়ের কথা সে আমাকে মাঝে মধ্যে বলতো মেয়েকে যেখানে দিবে সেখানে আগে ভালো মতো পরিচিত হবে যাতে মেয়ের কোনো অসুবিধা না হয়। কেন যেন মনে হলো সবটা মিলিয়ে এই প্রস্তাব খারাপ না। বিয়ে তো তোকে একদিন করতেই হবে তাই না? তুই মাকে পাসনি কত বছর। এই যে তোর আন্টি তোকে কত ভালোবাসে দেখেছিস? আর অভ্রর কথা যদি বলি ওকে ছোট থাকতে দেখেছিলাম বার কয়েক। তবে বর্তমানে যেই অভ্রকে দেখছি তাকে ছেলে হিসেবে আমার অন্তত খারাপ মনে হয়নি। এই বাড়িতে বিয়ে হলে আমি কিছুটা নিশ্চিন্ত হতে পারবো এই ভেবে যে মেয়েকে মনের মতো কোথাও দিয়েছি। আমি শুধুমাত্র আমার পক্ষ থেকে পসিটিভ কথা বলেছি এবার তুই ভেবে দেখবি বিয়েটা করবি না কি। না করতে চাইলে কেউ জোর করবে না মা। সিদ্ধান্তটা সম্পূর্ণ তোর এবার তুই ভেবে দেখ।”

আব্বু আমার মাথায় স্নেহের পরশ বুলিয়ে চলে গেল। আমি পরে গেলাম দোটানায়! কি করবো আমি? বিয়েতে না করার জন্য যেমন কোনো নির্দিষ্ট কারণ নেই তেমনই হ্যা বলারও কোনো যুক্তি নেই আমার কাছে। কেন একটা অচেনা মানুষের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হবো আমি? কিছুই ভালো লাগছে না এখন। রুমের দরজা বন্ধ করে শুয়ে পড়লাম বিছানায়। আব্বু হয় তো এতক্ষণে চলে গেছে।

••••••••••••••••••••

রাত ১টা বেজে ২৩ মিনিট এখন। হঠাৎ ঘুম ভেঙ্গে যাওয়ায় ফোন অন করে সময়টা দেখে নিয়েছি। আবারো ঘুমের ঘোরে যাওয়ার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হলাম। ঘুম যেন চোখে ধরছে না আর। তখনকার আব্বুর বলা কথাগুলো মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে।এটা নিয়ে কি ভাবা উচিত আমার? ভালো কিছু বয়ে আনতে পারে? আচ্ছা মা থাকলেও কি অভ্রকে বিয়ে করতে বলতো? কি জানি আমার জানা নেই তার উত্তর।

গুটিগুটি পায়ে ঘর থেকে বের হয়ে গেলাম। মন চাইছে ছাদে গিয়ে খোলা হাওয়া ছুঁয়ে আসতে। আমার যতদূর মনে আছে ছাদে তালা দেওয়া হয় না। খালি ছিটকিনি দিয়ে লাগিয়ে রাখা হয় যা চাইলেই খুলা সম্ভব। অনেক রাত এখন কারো আসার সম্ভাবনা নেই তাই এগিয়ে গেলাম ছাদের উদ্দেশ্যে। কিছুটা উপরে যেতেই মনে হলো ছাদ খোলা কিন্তু এতো রাতে কে আসবে? একটু উঁকি দেওয়ার চেষ্টা করলাম। কালো প্যান্ট আর একটা সাদা গেঞ্জি পরিহিত এক পুরুষ দাঁড়িয়ে আছে। পিছন থেকে বুঝা যাচ্ছে না ঠিক মতো তবে মনে হচ্ছে লোকটা কে সেটা আমি জানি।

না ছাদে যাওয়ার ইচ্ছা যাক ম’রতে! অলরেডি কেউ দখল দিয়ে আছে সেখানে আমি গিয়ে কি করবো? উল্টো দিকে ঘুরে হাঁটা শুরু করবো ঠিক তখনি কানে এলো সেই কঠিন পুরুষালি কন্ঠ!

–“পালাচ্ছো না কি?”

আবার ওনার দিকে ফিরলাম। এখনো আগের অবস্থানে দাঁড়িয়ে আছে কোনো হেলদোল নেই। পরক্ষনেই মনে পড়লো কি যেন বললেন? আমি পালাচ্ছি? ভ্রু কুঁচকে গেল আপনা আপনি। এগিয়ে গেলাম সামনে, অভ্রর পাশে দাঁড়িয়ে সূক্ষ্ম দৃষ্টিতে ওনার দিকে তাকিয়ে রইলাম কিছুক্ষণ। তারপর শান্ত গলায় বললাম,

–“পালাচ্ছি না আমি। কেউ ছাদে এসে হাওয়া খাচ্ছে দেখে মনে হলো ডিস্টার্ব করা ঠিক হবে না তাই চলে যাচ্ছিলাম।”

–“বাহ্ বুদ্ধিমতি মেয়ে! এতো বুদ্ধি দেখেই মনে হয় রাতে ঘুমাতে পারো না।”

–“মোটেও না। হঠাৎ ঘুম ভেঙ্গে গেছে তাই এসেছি। কিন্তু আপনি এখানে কি করছেন?”

অভ্র মৃদু হাসলেন। আজকে প্রথমবার উপলব্ধি করলাম তাকে চাঁদের আলোতে অন্যরকম লাগে। এতদিন মানুষটাকে অদ্ভুত লাগতো খুব তবে আজকে আসলেই ওনাকে সুদর্শন লাগছে। কারণ কি এর? আমাদের বিয়ের কথা চলছে দেখেই কি এমন হচ্ছে? না না সব চিন্তা ঝেড়ে ফেললাম মূহুর্তেই। অভ্র তার নতদৃষ্টি চাঁদের দিকে তাক করলেন,

–“চাঁদটা সুন্দর তাই না?”

–“হ্যা সুন্দর।”

–“তুমি চাইলে বিয়েতে না করে দিতে পারো। কেউ জোরাজুরি করবে না তোমাকে। আর আম্মুর সব কথায় কান দিও না সে তোমাকে ইমোশনাল কথাবার্তা বলে রাজি করিয়ে নেওয়ার ক্ষমতা রাখে।”

ওনার কথায় হাসি পেল ভীষণ। নিজেকে সামলানোর চেষ্টা করেও হেসে ফেললাম। আমার দৃষ্টি এতক্ষণে নিচে তবে অভ্র? কে আমার দিকে তাকিয়ে আছে তা বুঝতে অসুবিধা হলো না। মাথা তুলে ওনার দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলাম,

–“কি দেখছেন? আমি জানি আমি সুন্দরী। এভাবে তাকিয়ে থাকার কিছুই নেই।”

অভ্রও হেসে উঠলেন, ওনাকে আরো অপরূপ লাগছে। না লোকটার দিকে আপনা আপনি দৃষ্টি চলে যাচ্ছে কেন! আমি চাঁদের দিকে তাকিয়ে রইলাম। ভালো লাগছে ভীষণ! রাতের আঁধারেও এই কিরণ ছুঁয়ে দিচ্ছ চারপাশ।

–“অনামিকা…

–“বলুন?”

–“আপনার সিদ্ধান্ত কি তবে?”

–“হঠাৎ আপনি আপনি করছেন যে? এতো সম্মান আবার গায়ে লাগছে।”

উনি নমনীয় চোখে তাকালেন কিছুক্ষণ আবার চোখ সরিয়ে নিলেন। মানুষটা নিজেকে সামলে নেয় কি সুন্দর!

–“ঠিক আছে সম্মান না চাইলে দিব না। কিন্তু আমার প্রশ্নের উত্তর কোথায়?”

–“এখনো কিছু ভাবিনি।”

–“তাড়াতাড়ি ভাবো। যদি না বলতে হয় তাড়াতাড়ি বলতে হবে নাহলে আম্মুকে সুযোগ পেয়ে তোমাকে রাজি করিয়ে নিবে।”

–“খালি আমার কথা জিজ্ঞেস করছেন যে? নিজের বিষয়ে বলুন। আপনি কি বিয়েতে রাজি আছেন?”

অভ্র একবার আমার দিকে তাকিয়ে আবার সেই আকাশের চাঁদের পানে চেয়ে রইলো। কি চলছে ওনার মাথায়? ওনাকে এখনি বুঝতে পারছি না তাহলে বিয়ের পর কিভাবে বুঝবো হ্যা?

–“রুমে যাও এখন। অনেক রাত হয়েছে বেশিক্ষণ থাকলে ঠান্ডা লেগে যাবে।”

–“আপনি কিন্তু কথা এড়িয়ে যাচ্ছেন। আসল কথার উভয় দিন তো।”

–“বেশি প্রশ্ন মাথায় থাকলে ঘুমাতে কষ্ট হবে। এসব ঝেড়ে ফেলো আর একটা ঘুম দাও গিয়ে।”

–“প্রশ্নের উত্তর দিন তাহলেই তো হয়। এই আপনি কথা ঘুরানো বন্ধ করুন তো।”

–“বিয়েটা করবে না কি আম্মুকে জানিয়ে দিও। আমি আসছি এখন।”

এক মূহুর্ত দেরি করলেন না উনি। ঘটনা স্থল ত্যাগ করে বেড়িয়ে যেতে নিলেন। গেটের সামনে গিয়ে হঠাৎ দাঁড়িয়ে পড়লেন উনি। পিছনে ঘুরলেন না তবে শুনতে পেলাম ওনাকে বলতে,

–“যদি ভাগ্যে থাকে কোনো এক পূর্ণিমায় তোমাকে সব বলবো।”

তারপর উনি চলে গেলেন। এবারো কৌতুহলের মধ্যে পড়ে রয়ে গেলাম আমি। কেন চারপাশ এতোটা কৌতুহলময় হয়ে উঠছে। অভ্রও কেমন কথাবার্তা বলে গেলেন। এখন আমার মাথা কাজ করা বন্ধ করে দিচ্ছে।

••••••••••••••••••

সকাল থেকেই কেমন যেন লাগছে। ঋতু আপু আর অনিক ভাইয়া বাইরে গেছেন। অর্থিও আজকে কলেজে গেছে। অভ্রকেও সকাল থেকে দেখিনি ওনার রাতে বলা বাক্য গুলো এখনো ভাবাচ্ছে আমাকে। আবিদও বেরিয়ে কিছুক্ষণ আগে। ভাবছিলাম আজকে যদি কোনো ভাবে ভার্সিটিতে যাওয়া যায়। ফোন দিয়ে জানতে পারলাম কি একটা অনুষ্ঠান আছে যার কারণে ক্লাস হবে না। এই সুযোগে সব না কি বাসায় ঘুমাবে তাই ঘুরতে যাওয়ার সুযোগটাও হাতছাড়া হয়ে গেল।

–“আসবো?”

তাকিয়ে দেখি আন্টি ঠোঁটের কোণে মৃদু হাসি নিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন। ওনাকে ভিতরে এসে বসতে বললাম। উনি আমাকে সাথে নিয়ে বসলেন।

–“বলো কি ভাবলে শেষমেষ?”

–“আন্টি আসলে আমি না………

–“এখনো ভাবিসনি তাই তো? বুঝতে পেরেছি এখনো মনে সংকোচ কাজ করছে। জানিস অনু এই বিয়ের বিষয়টা তোর কাছে নতুন হলেও আমার কাছে নয়। সেই কবের ইচ্ছা আমার অধরার মেয়ের সাথে আমার ছেলের বিয়ে দিবো। তোর মাকে বললে সে শুধু হাসতো আর বলতো,”যা দিস”। শেষমেষ তোদের দেখা পেয়ে যেন পুরনো ইচ্ছেটা জেগে উঠলো। তুই যদি একবার রাজি হোস তাহলেই হবে।”

–“অভ্র? ওনার মতামতের কি হবে আন্টি?”

–“ওর আবার মতামত? ও তো আগের থেকেই জানে।”

–“হেহ!? আগের জানে মানে? কি জানেন?”

চলবে……………..^_^

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here