কোন_এক_শ্রাবণে❤ পর্ব ১৫+১৬

#এক_রক্তিম_শ্রাবণে❤️
#লেখিকা_মালিহা_খান❤️
#পর্ব-১৫

শেষ বিকেলের রোদ আছড়ে পরেছে জানালার কাঁচ ভেদ করে।একটা সরু তেজস্ব রশ্মি তোহার মুখের উপর ছেঁয়ে আছে।
এখনো চোখ তুলে তাকায়নি তোহা।দৃষ্টি নিচের দিকে দিয়ে থম ধরে বসে আছে।তিহানের হাত এখনো তার গালে,ঠোঁটে।পাক্কা তিনমিনিট যাবত তার সারামুখে চোখ বুলিয়েই যাচ্ছে তিহান।তার মাদকমাখা গভীর দৃষ্টির বিপরীতে মাথা তুলতে পারছেনা তোহা।প্রচন্ড লজ্জায় শ্বাস-প্রশ্বাস যেন গলা অবধি এসে আটকে যাচ্ছে।
তিহানের হাতের বৃদ্ধাআঙ্গুল হাল্কা করে তোহার ঠোঁটে স্লাইড করে শেষমেশ ঠোঁটের কোঁণায় যেতেই তোহা মিনমিনে কন্ঠে বললো,

—“দেরি হয়ে যাচ্ছে।”

তিহান হাসলো।আচমকা হেসে ফেলা সেই হাসি দেখার ইচ্ছা থাকলেও লজ্জার কারণে তাকাতে পারলোনা তোহা।তিহান গাল থেকে হাত সরিয়ে নিলে তোহা মুখের উপর আসা চুলগুলো কানের পিছে গোঁজার জন্য হাত উঠাতেই তিহান নিজেই তা গুঁজে দিয়ে সরে গিয়ে সিটে বসলো।তোহার মুখে এখনো লজ্জাভাব স্পষ্ট।
গাড়ি স্টার্ট দিলো তিহান।হাতের মুঠোয় থাকা খোঁপার কাঁটাটা তোহার দিকে এগিয়ে দিয়ে বললো,
—“চুল বেঁধে জানালাটা খুলে দে।”

তোহা একবার তাকিয়ে কাঁটাটা দিয়ে পুনরায় খোঁপা করতে করতে বললো,
—“চুলগুলো শুধু শুধু খুললেন কেনো?”

তার কথার প্রেক্ষিতে কোনো কথা বললোনা তিহান।বরং কন্ঠে অস্থির অস্থির ভাব নিয়ে বললো,
—“জানালার কাঁচটা নামা তিহু,প্রচুর গরম লাগছে।”

তোহ্ বিরক্তি নিয়ে খোঁপা আটকে জানালাটা খুলতে খুলতে বললো,
—“এসি ছাড়লেই তো পারেন।”

—“এসির কৃত্রিম ঠান্ডায় কাজ হবেনা।প্রকৃতির অকৃত্রিম তাজা বাতাস লাগবে।”

তোহা পাল্টা জবাব দিলোনা।গাড়ি চলছে তুমুল গতিতে।গাড়ির গতির সাথে পাল্লা দিয়ে হু হু করে ঠান্ডা বাতাস ছুঁয়ে দিচ্ছে তাদেরকে।
জানালায় মাথা ঠেকিয়ে আকাশের দিকে চেয়ে রইলো তোহা।যদিও এদিকটায় আকাশ ততটা দেখা যাচ্ছেনা।রাস্তার দু পাশে সাড়ি সাড়ি গাছ।তাদের ছড়ানো ছিটানো ডালপালা দিয়েই আকাশটা আড়াল হয়ে রয়েছে।মাঝে মধ্য একটু আধটু রৌদ্র্যজ্জ্বল মেঘ উঁকি দিচ্ছে গাছের ফাঁকফোকর দিয়ে।
একদৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকতে থাকতে খানিকটা আচ্ছন্ন হয়ে পরে তোহা।আকাশের দিকে চেয়ে আনমনেই তিহানকে প্রশ্ন করে,
—“আচ্ছা,মেঘময়ূরী মানে কি?”

ঘাড় বাঁকিয়ে একবার তোহাকে দেখে নিলো তিহান।তারপর শান্ত শীতল স্নিগ্ধ কন্ঠে বললো,
—“মেঘময়ূরী মানে”তুমি”।তুমিই মেঘময়ূরী।”

—“আহা,বলুননা এটার অর্থ কি?”অধৈর্য কৌতুহলী শোনায় তোহার কন্ঠ।

তিহান আবারো হেসে ফেলে।গাড়ির গতি কমিয়ে তোহার দিকে চেয়ে বলতে থাকে,
—“মেঘময়ূরী হচ্ছে মেঘের রাজ্য বিরাজ করা এক অনন্য ময়ূরপরী।যার সর্বাঙ্গে ছেঁয়ে আছে ঘোরলাগা সৌন্দর্য।যার দিকে তাকালে চোখ ধাঁধিয়ে যায়।দৃষ্টি ফেরানো দায়।আমি হলাম সেই মেঘ আর তুমি হচ্ছো আমার রাজ্য বিরাজ করা সেই অতিসুন্দরী রমণী।বুঝলে?

প্রত্যত্তুর না করে চোখ বন্ধ করে ফেললো তোহা।হঠাৎ এমন ঘুম ঘুম পাচ্ছে কেনো?অতিশান্তি তে কি সব মানুষের ঘুম আসে?নাকি শুধু তারই?

________________
তাদের গাড়ি থামার পরে বাকিদের দুটো গাড়ি পিছনে থামে।সুতরাং তারাই আগে পৌঁছেছে।
তিহান ব্যস্তহাতে নিজের সিটবেল্ট খুলে তোহার সিটবেল্ট খুলে দিতে দিতে ঝাড়ি দিয়ে বলে,

—“আমরাই সবার আগে পৌঁছেছি।অযথাই দেরি হবে দেরি হবে করে মাথা খাচ্ছিলি আমার।”

তোহা ভ্রু কুচকে তাকায়।প্রতিবাদী স্বরে বলে,
—“আমি একবারই বলেছি।তাতেই আপনার মাথা খাওয়া হয়ে গেলো?”

—“হ্যাঁ,হয়ে গেলো।”বলে তোহার পাশের দরজা খুলে দেয় তিহান।বলে,”নাম,আমি গাড়ি পার্ক করে আসছি।”

তোহা নামতেই পেছন থেকে এগিয়ে আসে সবাই।তার দিকে চোখ বুলিয়ে সর্বপ্রথম অনন্ত জিজ্ঞেস করে,
—“তোহা,আসার সময়তো তোমার কানে দুল দেখলাম না।এখন কোথা থেকে এলো?”

তার সাথে সাথে নিশাও ভ্রু কুচকিয়ে সন্ধিহান কন্ঠে বলে,
—“তাই তো।তোর তো এমন দুলও নেই।”

বিপাকে পড়ে যায় তোহা।তাদেরকে তো আর বলতে পারবেনা এটা যে তিহান দিয়েছে।কিছুক্ষণ আমতা আমতা করে সে বলে,
—“আসলে..এটা…”

—“মার্কেটের সামনে জ্যামে আটকেছিলো গাড়ি।গাড়ি থেকেই পাশের দোকানে দুলটা চোখে পরতেই কেনার জন্য জেদ করছিলো তাই বাধ্য হয়ে কিনে দিলাম।তোর বোনতো আবার কিছু না দিলে কান্নাকাটি শুরু করে দেয়।জানিসইতো?”পেছন থেকে এসে কথাটা বলে বিদ্রুপাত্মক হাসলো তিহান।

নিশাও তার সাথে হেসে বললো,
—“সে তো ছোটবেলায় কাঁদতো তিহান ভাই।এখন তো বড় হয়েছে।আপনি না কিনে দিলেও পারতেন।শুধু শুধু টাকা নষ্ট।”

—“আমি হলেতো ওকে ওখানের সবকটা কানেরদুল কিনে দিতাম।আপনি তো মাত্র একটা কিনে দিয়েছেন”খানিকটা তাচ্ছিল্য মেশানো স্বরে বললো অনন্ত।

তোহা একরাশ বিরক্তি নিয়ে অনন্তের দিকে চাইলো।এই লোকটা সবসময় বেশি কথা।সেই দুপুর থেকে একটু একটু করে একেবারে অসহ্যকর হয়ে উঠছে লোকটা।কড়া কিছু কথা শোনাতে গিয়েও সৌজন্যতার খাতিরে চুপ করে গেলো সে।

অনন্তের কথায় তিহান চমৎকার করে হেসে স্বাভাবিক স্বরেই বললো,
—“তিহু আসলে অপচয় একদমই পছন্দ করেনা।আর বাড়াবাড়ি করা তো সহ্যেই করতে পারেনা।”

তিহানের ঠান্ডা মাথার অপমানটা বুঝতে অসুবিধা হলোনা অনন্তর।তথাপি কোনো জবাব দিলোনা সে।
তবে মুখে অপমানের রাগটা ফুটে উঠলো।মনে মনে হাসলো তোহা।লোকটাকে অপমান হতে দেখে বেশ ভালো লাগছে এখন।
____________
রেস্টুরেন্টটা অনেক খোলামেলা।খোলামেলা বলতে ছাদের উপর চেয়ার টেবিল গাছপালা দিয়ে খুবই সুন্দর মনোরম পরিবেশ।নয়তালার উপর হওয়ায় মৃদু হিমেল হাওয়া বইছে।রেলিংয়ের পাশে বসেনি তোহা।উঁচুতে ভয় লাগে তার।সে বসেছে তিহান আর তূর্যর মাঝে।তার মুখোমুখি বসেছে অনন্ত।তার বাঁকা চাহনীতে রীতিমত গা জ্বলে যাচ্ছে তিহানের।ওয়েটার মেনু দিয়ে যেতেই খাবার পছন্দ করতে ব্যস্ত হয়ে পরলো সবাই।
ওয়েটারকে দুটো পিজ্জার অর্ডার নিতে বলতেই তিহান বললো,
—“সাথে একটা চিকেন রাইস আর ওয়াইট সস পাস্তা।”

অনন্ত কৌতুহলী চোখে তাকিয়ে বললো,
—“আপনি পিজ্জা খাননা ভাইয়া?”

ফোন থেকে চোখ উঠালো তিহান।হেসে বললো,
—“তিহুর মাশরুমে এ্যালার্জি।পিজ্জায় মাশরুম থাকবে তো।সেজন্যই আরকি।”

অনন্ত এবার তোহাকে বললো,
—“আর ইউ শিওর তোহা?তুমি ওগুলাই খাবে?নাকি অন্যকিছু?”

একপলক তিহানের দিকে তাকালো তোহা।তাকে ফোনে ব্যস্ত দেখে মুচকি হেসে বললো,
—“জি,আমি ওগুলাই খাই।অন্যকিছু না।”

মুখটা চুপসে গেলো অনন্তের।ওয়েটার অর্ডার নিয়ে যেতেই ছবি তোলার জন্য জন্য সবাইকে দাড়া করালো নিশা।
অনন্ত সুযোগ পেয়ে পেছন থেকে তোহাকে স্পর্শ করতেই তোহার বাহু টেনে তাকে তূর্যর সামনে দাড় করিয়ে দিলো তিহান।অত:পর নিজে তূর্যর পাশে দাড়িয়ে খুব সন্তর্পনে জায়গাটা লক করে ফেললো।ছবি তোলা শেষ হতেই চুপচাপ অনন্তের দিকে এগিয়ে শান্ত ধীরস্হির কন্ঠে বললো,
—“স্টে ইন ইউর লিমিটস্।
___________________
সন্ধ্যা শেষে রাত নামতে চলেছে।ফেরার পথেও তিহানের সাথেই আসছে তোহা।গাড়ির ভিতরে হলুদ লাইট জ্বালানো।
এলোমেলো চুলে নিষ্প্রভ নয়নে নিশ্চুপ হয়ে বসে আছে তোহা।তার চুলের খোঁপা একটু আগে আবারো খুলে দিয়েছে তিহান।এবার আর কাঁটাটা ফেরত দেয়নি।বলেছে গাড়ি থেকে নামার আগে দিবে।তার আগে না।

গাড়ি ড্রাইভ করতে করতেই তিহান বলে,
—“তিহু দেখতো ড্রয়েরে পানি আছে নাকি?”

—“পানি দিয়ে কি করবেন?”

—“নিশ্চয় তোর মাথায় ঢালবোনা।খাবো অবশ্যই।গাধী কোথাকার!”

মুখ লটকিয়ে গাড়ির সামনের ড্রয়ারটা খুলে তোহা।কোঁণায় একটা পানির বোতল দেখতে পেয়ে বলে,”আছে।”

—“মুখটা খুলে দে।”ক্লান্ত কন্ঠ তিহানের।

বোতলের মুখটা খুলে তোহা।অত:পর তিহানের মুখের কাছে বোতলটা ধরে নিরস কন্ঠে বলে,
—“হা করুন।আপনিতো ড্রাইভ করছেন।আমি খাইয়ে দেই।”

তিহানের ঠোঁটের কোঁণে এক চিলতে হাসি দেখা যায়।হাসিটা চোখ এড়ায়না তোহার।বরং চোখে আটকে থাকে।

তিহান মুখ হা করতেই একটু ঝুঁকে গিয়ে খুব যত্ন করে তাকে পানি খাইয়ে দেয় তোহা।তবুও অসাবধানতায় একটু পানি চিবুক গড়িয়ে গলা অবধি পৌছে যায়।সেদিকে চোখ পরতেই পানির বোতলটা রেখে তিহানের আরো একটু কাছে এগিয়ে যায় তোহা।নিজহাতে তিহানের চিবুক আর গলা মুছিয়ে দিতে দিতেই বুঝতে পারে তার চুলের ভাঁজে কারো পাঁচআঙ্গুল ডুবে গিয়েছে।মুখ তুলে প্রশ্নাত্মক দৃষ্টিতে তিহানের দিকে তাকাতেই তিহান তার ধূসর সম্মোহনী দৃষ্টি নি:ক্ষেপ করে প্রগাঢ়,ভরাট কন্ঠে বলে,

—“আমার এতটা কাছে এসোনা মেঘময়ূরী।তোমাকে ছোঁয়া নয় বরং ‘অনুভব’ করাটাই আমার জন্য যথেষ্ট।”
#এক_রক্তিম_শ্রাবণে❤️
#লেখিকা_মালিহা_খান❤️
#পর্ব-১৬

নির্জন মাঝরাস্তায় থেমে আছে গাড়ি।রাত বাজে ন’টা দশ।তিন চারবার চাবি ঘুরিয়েও গাড়ি স্টার্ট দিতে ব্যর্থ তিহান।খুব সম্ভবত টায়ার পান্চার হয়ে গেছে।মেজাজ বিগড়ে গেলো তিহানের।রাগের চোটে হাত দিয়ে বারি দিতে যেয়েও থেমে গেলো সে।
পাশের সিটে ঘুমিয়ে আছে তোহা।আওয়াজে তার ঘুম ভেঙে যাবে।ঠান্ডা বাতাসের ঝাপটা এসে তোহার রেশমি কালো চুলগুলো উড়িয়ে দিচ্ছে বারবার।

প্রচন্ড জ্যামে প্রায় একঘন্টা আটকে থেকে বহুকষ্টে গাড়ি ঘুরিয়ে উল্টো রাস্তায় এসেছে তিহান।এদিকটায় জ্যাম নেই।তবে মানুষজনও নেই।নিরব পরিবেশ।তবে জ্যামের মধ্য বসে থাকলে আজ আর বাড়ি ফিরা লাগতোনা।এখানে এসেও বাঁধলো বিপত্তি।মাঝপথেই টায়ার পান্চার হয়ে গেলো।
তখন জ্যামের মধ্যেই বসে থাকতে থাকতে ঘুমিয়ে পরেছে তোহা।তিহানও আর ডাকেনি।

একবার ঘড়িতে সময়টা দেখে নিয়ে ছোট্ট একটা শ্বাস ফেলে সিটবেল্ট খুলে ফেললো তিহান।বের হওয়ার জন্য গেট খুলতেই তোহা ঘুম জড়ানো কন্ঠে বলে উঠলো,
—“কোথায় যাচ্ছেন?”

তিহান তাকালো।একটু থেমে তোহার মাথায় একবার হাত বুলিয়ে দিয়ে মোলায়েম কন্ঠে বললো,
—“তুই ঘুমা।”

তিহানের কথায় চোখ পিটপিট করে তাকালো তোহা।আশেপাশে তাকিয়ে নড়েচড়ে বসে হাত বাড়িয়ে তিহানের কব্জি ধরে আটকে বললো,
—“আমি ঘুমাবো আর আপনি আমাকে এইখানে একা রেখে চলে যাবেন?”

—“পাগল নাকি তুই তিহু?টায়ার ফেটে গেছে।নতুন টায়ার লাগাতে হবে।সেজন্যই যাচ্ছি।তোকে রেখে চলে যাবো কেনো?”ঝাঁঝালো কন্ঠে বললো তিহান।

তিহানের কথায় বোকা বনে গেলো তোহা।ঘুমের ঘোরে কি বলেছে নিজেই বুঝেনি।আমতা আমতা করে সে বললো,
—“ওহ আচ্ছা,আমি ভাবলাম..”

—“তোর কিছু ভাবা লাগবেনা,চুপচাপ ঘুমিয়ে থাক।আমি আসছি।”বলে হাতের দিকে তাকাতেই তিহানের হাতটা ছেড়ে দিলো তোহা।চুলগুলো কানের পিছে গুঁজে নিয়ে শাড়ির আচঁল ঠি ক করে বসলো।তিহান ক্ষীণ হেসে বেরিয়ে গাড়ির দরজা আটকে দিলো।
পিছে থেকে এক্সট্রা টায়ারটা আর কিছু যন্ত্রপাতি বের করে নিয়ে রাস্তায় একহাঁটু গেড়ে বসতেই বুঝলো তার পাশে এসে দাড়িয়েছে তোহা।তিহান তাকালোনা,প্লাস ঘুরিয়ে ট্রায়ারটা খুলতে খুলতে বললো,
—“নামলি কেনো?ঘুমাতে বললাম না?”

—“ঘুম আসবেনা আর।”বলে তিহানের কাঁধে একহাত রেখে একটু ঝুঁকে গেলো তোহা।খোলা চুলগুলো তিহানের গালে ঝাঁপটে পরতেই তিহান কাজ করতে করতেই সন্দিহান কন্ঠে বললো,
—“কি দেখিস?”

তোহা আরো নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করে বিষন্ন কন্ঠে বললো,
—“আপনি পারবেন?কষ্ট হবেনা?মিস্ত্রি ডেকে নিতেন।”

—“বেকুবের মতো কথা বলিস কেনো তিহু?।এখানে মিস্ত্রি কোথায় পাবো?আর এটা এমনও কিছুনা।দশ-বিশমিনিটেই হয়ে যাবে।মাথা ঘামাসনা।”

কাঁধ থেকে হাত সরিয়ে সোজা হয়ে দাড়ালো তোহা।তিহানের উরুর উপর ঠেকানো ফ্ল্যাশলাইট জ্বালিয়ে রাখা ফোনটা বারবার পরে যাচ্ছে।অন্ধকারে দেখতে বেশ অসুবিধা হচ্ছে তিহানের।হাতে ময়লা লেগে গেছে বিধায় ফোনটা বারবার তুলে সোজাও করতে পারছেনা তিহান।মুখ দিয়ে বিরক্তিসূচক “ধুর” শব্দটা বের হতেই তোহা ফোনটা নিজের হাতে নিয়ে সুন্দরমতো ধরে দাড়াতেই মাথা নিচে ঝুঁকিয়ে নি:শব্দে হেসে ফেললো তিহান।
মেয়েটার যে তার কষ্ট করাটা সহ্য হয়না সে জানে।তবে কখনো কিছু বলেনা।
মুহুর্তেই ভাবভঙ্গি স্বাভাবিক করে মাথা তুলে বামহাতটা তোহার দিকে এগিয়ে দিয়ে সে বলে,
—“ঘড়িটা খোলতো তিহু।ময়লা হয়ে যাচ্ছে।”

তোহা চুপচাপ লাইটটা গাড়ির উপর রেখে একহাতের উপর তিহানের হাত নিয়ে আরেকহাত দিয়ে ঘড়িটা খোলে ।সেটা হাতের মুঠোয় নিয়ে পুনরায় লাইট ধরে ঘড়িতে চোখ পরতেই আৎকে উঠে সে।একপ্রকার চিল্লিয়ে বলে,
—“তিহান ভাই,সাড়ে ন’টার বেশি বাজে।”

—“খালু কে ফোন দিয়ে বলেছি আমি।ফিরতে একটু দেরি হবে।সমস্যা নেই।চিল্লাচিল্লি করিসনা।”

বেশ কিছু সময় সব নিরব।গাড়ি চলাচল নেই এখানে।মাঝেমধ্য একটা দুটো রিক্সা পাশ কাটিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে।পেছনের ঝাঁড় থেকে গাছ নড়ার শব্দ হতেই জমে যায় তোহা।ফাঁকা ঢোক গিলে তিহানের গা ঘেঁষে দাড়িয়ে তার কাঁধে আলতো করে হাত রাখতেই ঝোঁপ থেকে একটা কমলা লাল রংয়ের কুকুর বেরিয়ে ঘাউ ঘাউ করতেই চিৎকার করে উঠে তোহা।তিহানের কাঁধে নখগুলো প্রায় দাবিয়ে দিয়ে বলে,
—“তিহান ভাই…কুকুর।”

কুকুরটা নিজেই যেন তোহার চিৎকারে ভয় পেয়ে যায়।কয়েককদম দৌড়ে দুরত্ব নিয়ে দাড়িয়ে তোহার দিকে তাকিয়ে লেজ নাড়াতে থাকে অনবরত।তিহান ফুঁসে উঠে।টায়ারটা লাগিয়ে দিয়ে উঠে দাড়িয়ে সাদা পান্জাবিতে ময়লা হাতটা মুছে তোহার হাতটা কাঁধ থেকে নামিয়ে নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে কাছে টেনে বলে,
—“তোর চিৎকারে কুকুরটাই ভয় পেয়ে গেছে তিহু।ও কি করবে তোকে?গাধা।”

তোহা উওর দিলোনা।তাদের দিকে কিছুক্ষণ চেয়ে থেকে কুকুরটা চলে গেলে তিহান ছোট্ট একটা শ্বাস ফেলে নষ্ট টায়ারটা আর জিনিসপত্র গুলা পিছে ঢুকিয়ে রেখে ফিরে আসতেই দেখলো গাড়ির সামনের জায়গাটায় উঠে পা ঝুলিয়ে বসেছে তোহা।মায়াবী দৃষ্টিজোড়া হয়তো অন্ধকার আকাশে তারা গোনায় ব্যস্ত।ঠোঁটে হাসি নেই।মুখে প্রাণবন্ত ভাব নেই।নির্জীব উদাস মুখশ্রীটা নজরে আসতেই বুকের কোথাও একটা মোচর দিয়ে উঠলো তিহানের।ধীরপায়ে এগিয়ে এসে তোহার কঁনুই ধরে শান্তভাবে বলল,
—“নাম তিহু,রাত হয়েছে।।বাড়ি ফিরতে হবে।”

তোহা নামলোনা।বরং আচমকাই তিহানকে দুহাতে জড়িয়ে ধরে বুকে মাথা ঠেকাতেই চমকে উঠলো তিহান।সাথে অবাকও হলো বেশ।তোহার উষ্ণ নি:শ্বাস পান্জাবির পাতলা কাপড় ভেদ করে বুকে ছড়িয়ে পরতেই আরো একটু থমকে গেলো সে।কিছুক্ষণ নিশ্চুপ,নির্বাক থেকে নিজেকে সামলে নিয়ে একহাত তোহার গালে আর আরেকহাত মাথার পিছে রেখে নরম কোমল কন্ঠে বললো,
—“কি হয়েছে?”

—“ভালো লাগছেনা।”প্রাণহীন কন্ঠে জবাবে দিলো তোহা।

তোহার মুখের দিকে চাইলে তিহান।বিষন্নতার ছাপ স্পষ্ট ফুটে উঠেছে তার চোখেমুখে।চোখ বন্ধ।গলার স্বর আরো একটু নামালো তিহান।বললো,
—“মন খারাপ?”

বেশ কিছুক্ষণ চুপ থাকলো তোহা।অত:পর তিহানের পিঠের দিকের পান্জাবিটা দু হাতে খামছে ধরে সিক্ত কন্ঠে বললো,
—“ওই লোকটা আমাকে খারাপভাবে স্পর্শ করেছে।”

এতক্ষণে বিষয়টা বুঝে আসলো তিহানের।তোহার মন খারাপের কারণটাও স্পষ্ট হয়ে গেলো তার কাছে।যদিও তখন দেখামাত্রই তোহাকে টেনে নিয়েছিলো সে তবুও তোহা তো আর বাচ্চা না যে ভালো খারাপের তফাত বুঝবেনা।
এইযে সে তার বুকে মাথা রেখেছে।নিশ্চয় সে জানে তিহান তাকে খারাপভাবে কখনোই স্পর্শ করবেনা।সেই ভরসা থেকেই তার মধ্য এখন কোন ভয় নেই।
মূহুর্তেই চোখমুখ শক্ত করে ফেললো তিহান।গম্ভীর কন্ঠে বললো,
—“তখনই চড় মেরে দিলিনা কেনো?”

—“উনি আপুর দেবর।আ…”

তোহার মুখের কথা ছিনিয়ে নিলো তিহান।ধমকের স্বরে বললো,
—“সে যেই হোক তিহু।তোর আত্মসম্মানের থেকে বড় কিছু না।”

পাল্টা জবাব না দিয়ে ফুঁপিয়ে উঠলো তোহা।তিহান আবারো ধমকে বললো,
—“এখন কাঁদছিস কেনো?তখনতো একটা কথাও বলিসনি।”

তিহানের ধমকে তোহার কান্না বাড়লো বই কমলোনা।এবার একটু শিথিল হলো তিহান।শান্তশীতল কন্ঠে তোহার হাত মাথায় বুলাতে বুলাতে বললো,
—“যদি কখনো আমাকেও কোনদিক দিয়ে খারাপ মনে হয় অথবা আমার স্পর্শে তোমার অসস্তি হয় বা মনে হয় আমি তোমাকে খারাপভাবে ধরছি তখন আমাকেও চড় মারতে কোন দ্বিধা করবানা।
মূলত সে যেই হোক না কেনো এক চড়ে তাকে বুঝিয়ে দিবা তোমার সম্মান টা ঠি ক কত উপরে।নিজের গুরুত্ব বুঝতে শিখো।একটা মেয়ের জন্য আত্মসম্মানের উপরে কিছু নেই।”

বলে হাত দিয়ে তোহার চোখের পানিগুলো দিতেই মুচকি হাসলো তোহা।তিহান ছাড়াতে চাইলেও সে ছাড়লোনা।বরং শক্ত করে জাপটে ধরে তিহানের বুকে পরম শান্তিতে মাথা গুঁজে রইলো।

~চলবে~

[গতকাল রাত থেকে বামচোখে প্রচন্ড ব্যাথা আমার।তাকাতে পারছিনা।চোখের চারপাশ ফুলে গেছে।একটু লিখে আবার কিছুক্ষন রেস্ট নিয়ে আবার লিখি।বেশিক্ষন তাকিয়ে থাকলে মাথাব্যাথা করে।তাই আজকে একটু ছোট হলো।সরি।😓]
~চলবে~

[ফেসবুকে ঢোকাটাই দুষ্কর হয়ে উঠেছে আমার।ভিপিএন ইউস করছিনা কারণ অনেকের নাকি আইডি লক বা ডিজেবল হয়ে যাচ্ছে ভিপিএন এ বারবার লোকেশন চেন্জ হওয়ার কারণে।সেই রিস্ক আমি নিতে পারবোনা।তাছাড়া গল্পের রেসপন্স খুবই কম।রিচ হচ্ছে না পোস্টে।সবাই গল্প পড়তেও পারছেনা।শুধু শুধু এখন গল্পের গুরুত্বপূর্ণ পর্বগুলো দিয়ে লাভ নেই।আগামী পর্ব কবে দিবো বলতে পারছিনা।ফেসবুক আগের অবস্থায় ফিরে এলে তবেই দিবো।কিছু করার নাই আমার।আমি নিরুপায়।আশাকরি আপনারা বুঝতে পারছেন।তবে সার্ভার স্বাভাবিক হয়ে গেলে বোনাস পার্ট দিয়ে এই কয় দিনের টা পুশিয়ে দিব ইনশাআল্লাহ❤️।]কি

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here