ক্যাসিনো পর্ব -১৮

#ক্যাসিনো ©লেখিকা_(মায়া)
#পর্ব_১৮

আগামী পর্বে রহস্য উন্মোচন শুরু হবে। সবাই লাইক কমেন্ট করুন। সাথে পেজটা ফলো করে রাখুন।

মাত্র এক ঘণ্টার ব্যাবধানে সব ভাইরাল হয়ে গেছে। ৭ম সফল ব্যবসায়ী আবদুল হামিদ খানের এক মাত্র ছেলে মেহমেত খান খুনের দায়ে জেলে। এবং জুয়া খেলায় নিজের সমস্ত সম্পত্তি এখন অন্যের দখলে।

আরো নানান ধরনের কুটুক্তি দিয়ে খবরের হ্যাড লাইন হয়ে উঠেছে,মেহমেত খান কে নিয়ে। এই ধরনের পরিস্থিতিতে এক জন মেয়ে হয়ে সব যেন সামলে নেওয়া দুষ্কর হয়ে উঠেছে মরিয়মের জন্য। চোখে মুখে বিষন্নতার ছাপ সুস্পষ্ট,, চিন্তায় রাগে মাথা যেন ফেটে যাচ্ছে। হাত পা থরথর করে কেঁপে চলেছে। এ কোন বিপদের মুখে এসে পড়লো সে???

বাসা থেকে এখন বের হয়ে কোথায় যাবে তারা?? মিহি তো সমানে কেঁদে চলেছে। আরিফার আতংকে উঠা মুখ খানি দেখে মরিয়মের যেন সব গুলিয়ে তুলছে। কিন্তু এখন ভেঙে পড়লে চলবে না। শক্ত হতে হবে তাকে। কিন্তু কি করবে সে এখন??

রহিমা খালা তরিঘরি কে সদর দরজা দিয়ে বাড়িতে প্রবেশ করছে। এমন দুঃসংবাদ শুনে সে ছুটে এসেছে তার স্বামী এখন মোটামুটি সুস্থ, কাল থেকে আবার সে কাজে আসতে চেয়েছিল কিন্তু আজ এমন সংবাদ শুনে ছুটে এসেছে সে। মিলন চাচা অসহায় মুখ করে দাঁড়িয়ে আছে মরিয়মের সামনে।
রহিমা খালা এসেই ভিজা কন্ঠে মলিন মুখে প্রশ্ন করেন। ম্যাম সাহেব এমনটা হলো কেমনে??
আমি বুঝতে পারছি না কিছু রহিমা খালা। এখন আমরা কি করবো কোথায় যাবো?? মেহমেত কে না ছাড়িয়ে আনা অব্দি কি করবো আমি??
রহিমা খালা বিচলিত কন্ঠে জবাব দেয়, আমারা আপনাদের চিনি,,মেহমেত সাহেব কখনো খুন করতে পারেন না। ছোট মুখে বড় কথা হয়ে যাবে কি মনে করবেন জানি না। আমার ছোট ঘর খানায় আপনি থাকতে পারেন। জানি কষ্ট হবে কিন্তু একটু মানিয়ে নিতে হবে। মরিয়ম মলিন মুখে ও মুচকি একটা হাসি দিল,, তোমারা কোথায় থাকবে তাহলে??! আমাদের কষ্ট হবে না ম্যাম সাহেব। মিলন চাচা আবার বললেন। আমার বাসা তে থাকতে পারবেন,,একা মানুষ থাকি,, কোন সমস্যা হবে না ইনশাআল্লাহ।

মরিয়ম এবার প্রশান্তির হাসি দিল। এই দুঃসময়ে মেহমেতের বন্ধ বান্ধব এমন কি অন্য কেউ যখন পাশে নেই যাদের মেহমেত উজাড় করে দিয়ে এসেছে কোন বিপদ হলে নিজ হাতে সামলিয়েছে। অথচ কেউ তাদের এখনো খোঁজ নিতেও আসেনি। কথায় আছে না বিপদে চিনা যায় মানুষ কে। তারা সাধারণ মানুষ হয়েও নিজের যে টুকু আছে এতেই সাহায্য করার জন্য কেমন বিচলিত হয়ে আছে। মরিয়ম মুচকি হেসে তাদের উদ্দেশ্যে বলেন,,তোমরা যে কথা টা বলেছো আমায় এতেই আমি এতো পরিমাণ খুশি হয়েছি তা হয়তো তোমাদের কাছে অকল্পনীয়। চিন্তা করো না। আমি কোন না কোন ব্যাবস্থা ইনশাল্লাহ করে নিবো। কিন্তু তোমাদের চাকরি হয়তো থাকছে না যার কারণে আমার ভিষন দুঃখ হচ্ছে। একি বলছেন ম্যাম সাহেব আমার যে বিপদে আপনি যেভাবে সাহায্য করছেন। তা এই যুগে ২ শতাংশ লোক জন করে কিনা সন্দেহ। এখন আপনাদের বিপদে যদি এতো টুকু সাহায্য আমার দ্বারায় হয় তবে হয়তো নিজের ঋনের পাল্লা এক কোনা পরিমাণ কম হতো। মিলন চাচা নিজেও সহমত জানালো।

কিছু ক্ষন পর নাজিম হন্তদন্ত হয়ে ছুটে আসলো। হাঁপিয়ে উঠেছে সে। পিছন পিছন নেহাল আর নেহালের মা অমিতা এসে উপস্থিত হলেন। এসেই তাদের একি প্রশ্ন এসব কি করে হলো??? মরিয়ম যেটুকু জানে তা বলল। এই বাসা টা ছাড়তে হবে। নাজিম তাদের বাসায় নিয়ে যাওয়ার জন্য জোরাজুরি করতে লাগলো। মরিয়ম আরিফা আর মিহি কে সাথে নিয়ে যেতে বলল। আর মরিয়ম এখন যাবে পুলিশ কাস্টেডি তে । মেহমেতের ব্লেজার টা কয় থেকে হারিয়েছে তা সঠিক ভাবে জানতে হবে।

নাজিম নিজেও যাবে মরিয়মের সাথে।

বাসা থেকে বের হওয়ার আগে মরিয়ম রহিমা খালা আর মিলন চাচার উদ্দেশ্য বললেন, চিন্তা করো না তোমাদের চাকরি যাবে না। রহিমা খালা তুমি পরিবারের সাথে কয়দিন ছুটি কাটাও আর মিলন চাচা দেশের বাড়ি থেকে কয় দিন ঘুরে আসো। তোমাদের কয়েক দিন ছুটি দেওয়া হলো। মিলন আর রহিমার হতভম্ভের মত মরিয়মের দিকে চেয়ে রইল।

মেহমেতের থেকে জানতে পারলো যে ,,মেহমেত নিউ মার্কেটের সামনে দাঁড়িয়ে ছিল,, অফিসের একটা মিটিং এর জন্য বের হতে হয়েছিল তাকে। হঠাৎ জ্যামে আটকা পড়ে যায়। গাড়ি থেকে বের হয়ে ব্লেজার টা খুলে গাড়ির উপরে রাখে গরমের কারনে
ঠিক তার কিছু ক্ষন পর ব্লেজার টা এক জন ছিচকে চোর নিয়ে দৌড় দেয়। জ্যামের কারণে খুব একটা দৌড়ানো যায়নি চোরের পিছনে। মেহমেতের লোকেশন অনুযায়ী নিউ মার্কেটের সামনে দাঁড়িয়ে আছে মরিয়ম আর নাজিম। তাদের মতে এখানে কার কোন দোকানের সিসি ক্যামেরা থেকে কিছু তো পাওয়া যেতে পারে। আলহামদুলিল্লাহ আল্লাহর অসীম রহমতে মেহমেত যেখানে আটকা পড়েছিলো তার সেখানে এক দোকানের সিসি ক্যামেরা থেকে সত্যতা পাওয়া গেল যে মেহমেত মিথ্যা বলেনি। একটা ছিচকে চোর মেহমেতের ব্লেজার টা চুরি করে।

এই সিসি ক্যামেরার ক্লিপ টা দিয়ে মেহমেত কে সাময়িক ভাবে বের করে নিয়ে আসা যাবে। কিন্তু পুলিশের সন্দেহের তালিকা থেকে মেহমেতের মুক্তি হবে না। মেহমেত কে ছাড়িয়ে আনার পর ও তাদের নজর রয়ে যাবে। এবং এখন শহর ছেড়ে কোথাও যাওয়া যাবে না। নূর মোহাম্মদের চাহনি টা ঠিক বুঝা গেল না। তার যুক্তি হলো যদি ব্লেজার চুরিই হয় তাহলে বোতামে ফ্রিঙ্গার প্রিন্ট রয়েই কেন গেল?? আর ছিচকে চোর ব্লেজার চুরি করে খুনের জায়গায় বোতাম টা গেল কি করে?? আর সেই জুতার নকশা দেখে জানা গেল সেই জুতার সাইজ ৪০ আর মেহমেতের জুতার সাইজ ৪২,, কেন মেহমেত কে এভাবে ফাঁসানো হচ্ছে??? মেহমেতের কাছে তারা জানতে চাইলো কাউকে সন্দেহ হচ্ছে কিনা??? এই প্রশ্নে মেহমেত পুরো দমে হচকচিয়ে যায়। অনেক ভেবে উত্তর দেয় যে সে কিছু জানে না। মরিয়ম মেহমেতের দিকে ক্ষীণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে দেখে ভাবতে লাগলো। এই খুনের পিছনে যে নিশান আছে তা সে নিশ্চিত। কিন্তু মেহমেত কেন বললো নিশানের নাম যেখানে নিশান তার সকল সম্পত্তি গ্রাস করে নিল???

অফিসার তমালের টার্গেট এখন সেই ছিচকে চোর কে ধরা। যদি এক বার তাকে ধরা যায় তাহলেই জানা যাবে এই ব্লেজার সে কি করেছে?? নিশ্চই এই চোর এসব খুন করেনি। মাত্র কয়েক ঘন্টার মধ্যেই মেহমেতের উপর ভালোই মারধর করা হয়েছে। মেহমেত কেমন নিশ্চুপ হয়ে আছে। মুখে কোন কথা নেই কেমন বেহাল অবস্থা হয়েছে তার। মরিয়ম কে হঠাৎ সবার সামনে জরিয়ে ধরলো মেহমেত। মেহমেতের এমন কান্ডে থতমত খেয়ে যায় সে। মেহমেত কখনো সবার সামনে এমন করেনি। তার মতে স্বামী স্ত্রীর ভালোবাসা সব সময় দেখিয়ে দেখিয়ে লুতুপুতু করার দরকার নেই। যে তার স্ত্রী কে আকাশ সমান ভালোবাসে।
স্বামী স্ত্রীর ভালোবাসা নিজস্ব এবং একান্ত।

মেহমেত মরিয়ম কে কিছু ক্ষন পর ছেড়ে দিয়ে হাতে চুমু খায় এবং ছলছল চোখে বলে,তোমাকে স্ত্রী রুপে আল্লাহ শুধু পাঠাইনি এক জন উত্তম জীবন সঙ্গিনী পেয়েছি। যে সব সময় আমার বিপদে রহমতের মত নাজিল হয়। মরিয়মের চোখের কোণে পানি জমে উঠেছে। পুলিশ কাস্টেডির সবাই তাকিয়ে আছে হা হয়ে। সহচরাচর স্বামী স্ত্রীর মাঝে এমন সুখকর দৃশ্য দেখা যায় না। আর এমন দুঃসময়ে ও স্বামী স্ত্রীর ভরসা করা হাত একে উপর কে এমন ভাবে আকরে ধরে রাখার মূহুর্ত যেন এক টুকরো জান্নাতের সুখ।

মেহমেত এখনো মরিয়ম জিজ্ঞেস করেনি যে সকল সম্পত্তি কেন নিশানের নামে এখন?? আর এই নিশান কে?? তা দেখে প্রচন্ড রকম ঘাবড়ে যাচ্ছে মেহমেত। কি বলবে মরিয়ম কে সেই নিয়েও দ্বিধাদন্দে ভুগছে। মরিয়ম মেহমেতের ভাব সাব দেখে বুঝতে পারছে,,যে মেহমেত কি ভাবছে??
নাজিমের বাসায় পৌঁছে মেহমেত কে গোসল দিতে বলে। কিছু ক্ষনের মধ্যেই আবদুর হামিদ, জাবেদ আর শাশুড়ি মা সবাই উপস্থিত। শাশুড়ি মা এসেই কান্না শুরু করে দিয়েছে। আবদুল হামিদ আর জাবেদ মরিয়ম কে দেখে যেন প্রান ফিরে পায়। চোখে মুখে দুশ্চিন্তার ছাপ নিয়ে জিজ্ঞেস করে মেহমেত কোথায়?? আমার ছেলে কোথায়?? মাসুমা কেঁদে কেঁদে বুক ভাসিয়ে বলছেন আমার ছেলে কখনই খুন করতে পারে না‌। আমার ছেলে কে ফাঁসানো হয়েছে। মরিয়ম সবাই কে শান্ত করে বলে। বাবা মা থামুন এবার মেহমেত কে বাসায় নিয়ে এসেছি চিন্তা করবেন না। এই জন্য আপনাদের কিছু বলেছিলাম না। এতো হাইপার হবেন না।

আবদুল হামিদ আর সবাই শান্ত হয়ে বসলেন।
অমিতা সবার জন্য শরবত নিয়ে আসলেন। আবদুল হামিদ খানের মাথায় এখন শুধু একটা জিনিষ গিজগিজ করছে। তার সকল সম্পত্তি তো তার নামে আছে তাহলে মেহমেত ক্যাসিনো তে কি ভাবে এসব হাড়লো?? আর তার ছেলে কখনো জুয়া খেলেনা তাহলে জুয়া খেলায় কিভাবে এসব অন্যের নামে হয়। এতো কষ্টের তার ব্যাবসা বানিজ্য তার ছেলে এভাবে উরিয়ে দিল??? মনের যত ক্ষোভ কথা আবদুর হামিদ মরিয়মের কাছে বলল,,তার মনের যত প্রশ্ন। মরিয়ম শুধু সরল ভাষায় জবাব দেয় আপনি চিন্তা করবেন না বাবা আপনার সকল সম্পত্তি আপনার নামেই আছে। কোন কিছু কারো নামে উইল হয়নি।

অবাক হয় সবাই বিশেষ ভাবে মেহমেত !! গোসল করে মা বাবাদের কথা শুনে তাদের কাছে আসতে যেয়ে মরিয়মের এমন কথা শুনতে পায় সে।

জাবেদ তখন জিজ্ঞেস করে তাহলে এই সব নিউজ??? সব ফেইক বাবা। কিছু কারো নামে যায়নি। তাহলে আমরা এই বাসায় কেন??? গভীর জলের মাছ কে পানির উপরে উঠিয়ে নিয়ে আসার জন্য মাঝে মাঝে নিজের খাবারের শেষ টুকু দিয়েও লোভ ধরাতে হয় যেন মাছ টাকে পরবর্তী ধরা যায়।

মরিয়মের কথার আগা মাথা কিছুই বুঝে উঠতে পারে না কেউ। কিন্তু মেহমেত কিছু টা আন্দাজ করছে যে মরিয়ম নিশানের কথা কোন ভাবে জেনে গেছে নাকি????

মরিয়ম সবাইকে খাওয়া দাওয়া করিয়ে আগামী কাল গ্রামে চলে যেতে বলে। মরিয়মের সেই রহস্যময় উত্তর নিয়ে বাকিরা জানতে চাইলে বলেছে সে,, আমাকে ভরসা করুন বাবা আমি নিরাশ করবো না আপনাদের। নিশ্চিন্তে থাকুন। আপনার ছেলে থেকে শুরু করে সকল কিছু দেখে রাখার দায়িত্ব আমার। মরিয়মের এমন ভরসা যুক্ত উক্তি তে সবাই নিশ্চিত না হতে পারলেও কিছু টা চিন্তা মুক্ত হয়েছে।

মরিয়ম আর মেহমেত বারান্দায় বসে আছে,রাত অনেক গভির সবাই ঘুমে আচ্ছন্ন ।
রাতের আকাশ সামান্য কালো মেঘে ছেয়ে আছে। হয়তো বৃষ্টি হতে পারে। হালকা ঠান্ডা বাতাস বয়ে যাচ্ছে। মরিয়ম চুল গুলো ছেড়ে রেখেছে সারাদিনের ধকলে মাত্র গোসল দিয়েছে। সামনের মাথার চুল গুলো হালকা বাতাসে নরছে । এমন সুন্দর দৃশ্য দেখে হয়তো অন্য সময় হলে প্রেম প্রেম অনুভূতি হতো কিন্তু এখন
মেহমেত ভয়ে ভয়ে লাগছে মরিয়ম কে দেখে। মেহমেত গলা খাকারি দিয়ে যেই কথা বলতে যাবে ঠিক তখনি মরিয়ম মেহমেতের কথা কেড়ে নিয়ে বলতে আরম্ভ করে। আমি সব জানি গত ৬মাস ধরে কি কি হয়েছে তোমার সাথে!! নিশান নামক একজন ব‌্যক্তির জন্য।
মেহমেত এবার অবাকের চরম পর্যায়ে পৌঁছে যায়। তুমি জানলে কি ভাবে???

বউকে L.L.B পাস করিয়েছো । শুধু মুখে দেখতে নাকি??? প্রথম কোন কেস সামলাতে হলো সেটাও নিজের হাসবেন্ড কে জেল থেকে ছাড়ানোর জন্য। হায় আফসোস!! মরিয়ম শান্ত স্বরে বলতে আরম্ভ করে,,,,

নিশান কেন এই খুন গুলো করছে??? মেহমেত শুকনো ঢুক গিললো। মরিয়ম যখন সব জেনেই গেছে তাহলে আর লুকিয়ে লাভ নেই। সেটা পুরোনো অতীতের বদলা নিচ্ছে সে। কি সেই পুরনো অতীত??
কে এই নিশান?? কেন তাকে জেল হাজতে যাবত জীবন কারাদণ্ডের শাস্তি দেওয়া হয়েছিল। যেখানে শাহানা তার স্ত্রী ছিলেন!! কে সেই রক্ষক সে ভক্ষকে পরিনত হয়েছিল?? তোমার এক্সিডেন্ট হয়েছিল তুমি ও তো এই বিয়ের সাক্ষী ছিলে। সুস্থ হওয়ার পর কিছু করোনি কেন???

চলবে _____????

সবাই পেজটা ফলো করে রাখুন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here