#ক্যাসিনো
#পর্ব_৫৫
©লেখিকা_মায়া
রাম দা এর আঘাতে অনিতের অনেক খানি কেটে যায়। ঘাড়ে হাত দেয় সে কাঁপা কাঁপা হাতে, এবং দেখে রাত হাত রক্তে রঞ্জিত হয়ে গেছে। ভিষন ভাবে ঘাবড়ে গিয়ে পিছনে তাকায় অনিত।
এই দিকে এমন হঠাৎ আক্রমনে,, নিশান মেহমেত মরিয়ম এবং আরো লোক গুলো চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে আছে।
সামনে থাকা সাদা রঙের পোশাক পরিহিত রমনী কে দেখে বিস্ফোরিত নয়নে তাকিয়ে আছে মরিয়ম।
বড় বড় নিঃশ্বাস নিয়ে মরিয়ম বলে,,নির্জনী??
কি করলে এটা??
নিশান নির্জনীকে দেখে নির্বাক হয়ে তাকিয়ে আছে,,তার ছোট বোন,যে কোন পশু পাখি কে আঘাত করলে নিজেই কেঁদে দিতো,সেই মেয়ে অনিত কে আঘাত করেছে।
কারো কোন কথা বলার আগেই নির্জনী পর পর অনিতের শরীরে আঘাতের উপর আঘাত করতে থাকে। অনিতের শরীর থেকে টপ টপ করে রক্ত ঝড়তে থাকে,,
নির্জনী হুংকার দিয়ে বলতে থাকে,, দ্বিতীয় বার আর রিপিট হবে না এটা। কোন নারী কে আর তোর নোংরা হাতে স্পর্শ করতে পারবি না তুই,,কথা টা বলেই নির্জনী অনিতের একটা হাত কেটে ফেলে, শরীর থেকে আলাদা হওয়া হাত টি মাটিতে পড়ে যায়। রক্ত ফিনকি দিয়ে বের হয়, কিছু দূরে থাকা মরিয়মের মুখে সেই রক্ত ছিটকে পড়ে,
আর অনিত জবাই কৃত গরুর মতো ছটফট করতে থাকে।
শুধু তোকে নিজের হাতে খুন করার জন্য আমি বেঁচে আছি,,নয়তো কবেই আত্মহত্যা করে নিতাম। শুধু তোর কারনে ১০টা বছর আমি ঐ নরক পুরীতে থেকেছি। এক বার তুই সেখানে আসবি আর তোকে নিজের হাতে হত্যা করবো আমি। কিন্তু তুই আসিসনি। কিন্তু আমার ভাগ্য ভালো দেখে তোর শেষ নিঃশ্বাস আমার হাতে যাবে। রাগ মিশ্রিত কন্ঠে আর ঝংকার গলায় নির্জনী কথা গুলো শেষ করেই,, নিজের হাতের রাম দা উপরে উঠিয়ে
অনিতের গলায় আঘাত করে,, নিজের সর্ব শক্তি দিয়ে আর একটা আঘাত নির্জনী করে,আর অনিতের মাথা ধর থেকে আলাদা হয়ে যায়।
জিহ্বায় কামড় দেওয়া চোখ উল্টিয়ে ফেলা অনিতের মাথার দিকে নির্জনী এক ধ্যানে তাকিয়ে থেকে ,ধপ করে মাটিতে বসে, চোখ দিয়ে আজ তৃপ্তির পানি পড়ছে নির্জনীর।
মেহমেত নিশানের অনুভূতি গুলো কেমন তা তারা বুঝতে পারছে না। কিন্তু মরিয়ম মুখে হাত দিয়ে একটু দূরে দাঁড়িয়ে কিছু ক্ষন আগের ঘটনা গুলো ভাবছে,তার মাথা হ্যাং হয়ে যাচ্ছে। ভয়ঙ্কর মৃত্যু অনিতের,সেটাও মরিয়মের সামনে, মাথা ঘুরে উঠে মরিয়মের। পিছনে দেওয়ালে ঠেসে ধরে মরিয়ম।
নিশান এক পা দু পা করে নির্জনীর সামনে এসে হাঁটু গেড়ে বসে পড়ে।
নির্জনী কে ভয়ংকর লাগছে দেখতে,সারা মুখে রক্তের ছিঁটে ফোঁটা। সাদা রঙের গাউন টা লাল রং ধারন করেছে।
নির্জনীর কন্ঠ নরম করে ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে বলে,মেরে ফেলেছি আমি , ভাইয়া
আমি নিজের হাতে মেরেছি, শেষ করে দিয়েছি। আমার মা বাবার হত্যাকারী আমার ভাইয়ের ফুলের মতো জীবন কে ধ্বংস কারী,আর হাজারো পরিবারের বুকের মানিক ছিনিয়ে নেওয়া সেই জাহেল কে মেরে ফেলেছি ভাইয়া আমি!! নির্জনী হাতের রক্ত দেখে দেখে বলে,দেখো ভাইয়া রক্ত!! আমাকে এখনি গোসল দিতে হবে,, এখনি,ঐ জাহেলের রক্ত আমার শরীরে লেগে আছে। নির্জনী পাগলের মত নিজের শরীরের রক্ত মুছতে চেষ্টা করছে। বাকি লোক গুলো ভয়ে পালিয়ে যায়। মরিয়ম কে মেহমেত ধরে আছে, তার মাথা ঘুরাচ্ছে। চোখ মুখ খিঁচিয়ে রেখেছে। তবু ও ধরা গলায় বলে,,এখান থেকে তারাতারি বের হতে। নয়লে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে পারে। চলো তারাতারি এখান থেকে।
চট জলদি সেই বাড়ি থেকে নিশানরা বেরিয়ে পড়ে। মেহমেত ড্রাইভ করছে মরিয়ম মাথা ধরে পাশের সিটে বসে আছে। নিশান এখনো যেন ঘোরের মধ্যে আছে তেমন লাগছে তার। তার মনে হচ্ছে না সে এই জগতে আছে। নির্জনী হাতের রক্ত শুঁকে গেছে তার পর ও সে সেই রক্তে ঘৃনা ভরা দৃষ্টি নিক্ষেপ করছে। আজ নির্জনীর হালকা লাগছে খুব। ১০বছরে আজ মনে হচ্ছে সে অনেক ফুরফুরে হয়ে গেছে। মাথার ভারী পাথর টা খুলে পড়েছে। সে মাথা উঁচু করে তাকাতে পারছে। হঠাৎ নির্জনী মেহমেত আর নিশানের ফোন চায়। নিশান মেহমেত নিজের ফোন নির্জনীর হাতে দেয়। ফোনের ভিতরের সিম খুলে ভেঙে ফেলে তার পর
সে ফোন গুলো বাইরে ছুড়ে মারে। নির্জনীর এমন কান্ডে হতবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে তারা। নির্জনী নরম স্বরে বলে, এগুলো আমাদের ক্ষতি করতে পারে। মরিয়ম বুঝতে পারলো আসলে নির্জনী কি বুঝানোর চেষ্টা করছে।
🥀____________🥀
সেদিন রাত থেকেই , ব্রেকিং নিউজ বুনে যায় অনিত কে নিয়ে,, কুখ্যাত ক্রিমিনাল অনিত শরীফ কে কেউ নৃশংস ভাবে হত্যা করেছে।
গত এক মাস আগেই যাকে যাবত জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে সে জেলের বাইরে কি করে তা নিয়ে বিশাল কান্ড তৈরি হয়েছে মিডিয়া জগতে। কে করলো তাকে খুন এই নিয়ে ও জল্পনা কল্পনার শেষ হচ্ছে না।
তদন্ত কমিটি কে জলদি করে নিয়োজিত করা হয়েছে এই খুনের ব্যাপারে … খুব শীঘ্রই জানা যাবে কে খুন করেছে অনিত কে।
নিউজ দেখে আতংকে উঠে মেহমেত ভীতি চোখে মরিয়মের দিকে তাকায় এক বার নিশানের দিকে তাকায়। নিশান ভাবনাচিত্তে মগ্ন,,তার কোন ভাবান্তর নেই। নির্জনী গুনগুন করে গান গাইছে,,আর রাতের খাবার তৈরি করছে। তাকে দেখে মনে হচ্ছে না যে সে খুন করে এসেছে। এতো স্বাভাবিক আচারন করছে যে সবাই চমকে যাচ্ছে। কিছু ক্ষন আগে সবাইকে জিজ্ঞেস করে গেছে কে কি খাবে?? আজ বিশেষ রান্না হবে।
নিশান নিজেও কম খুন করেনি। কিন্তু সে জীবিত শুধু দপ্তরী কেই মেরেছে,বাকি সবাই কে প্লান করে মেরেছে। প্রতিশোধের আগুন কত টা ভয়ঙ্কর হলে, নিশান মৃত্যু ব্যাক্তি গুলো কেও ছাড় দেয়নি। কবর থেকে লাশ উঠিয়ে জানোয়ারদের মতো কুপিয়েছে। কিন্তু নিজের বোন কে এই অবস্থায় দেখে নিশান হতভম্ব হয়ে পড়েছে। তার ভয় শুধু একটা যদি নির্জনী কে পুলিশ ধরে নিয়ে যায়। নাহ কিছু তেই না। নির্জনীর কিছু হতে দিতে পারে না নিশান। অনেক হয়েছে এই খেলা,আর নয়, নিজের বোন কে, নিজের বেঁচে থাকার শেষ সম্বল কে কেরে নিতে নিশান কিছুতেই দিবে না। অনিত কে মেরে ফেলার পর নিশান চেয়েছিল নির্জনী কে নিয়ে এই দেশ ছেড়ে চলে যাবে অনেক দূরে। কিন্তু এখন কি সেটা বাস্তবায়ন হতে পারে???
পরের দিন,, সাজ সকালে,কেবল ৮টা বাজে খান বাড়ির ডোর বেল বেজে উঠে, মরিয়ম চট জলদি গিয়ে দরজা খুলে,এতো সকালে কে আসতে পারে এটা ভাবতে ভাবতে মরিয়ম দরজা খুলে দেয়। সামনে থাকা ব্যাক্তিদ্বয় কে দেখে , মরিয়মের হার্ট রেসপন্স করা বন্ধ হয়ে যায়।
নিশান মেহমেত মরিয়ম পাশাপাশি বসে আছে, সামনে বসে আছে নূর মোহাম্মদ,আর পুলিশ অফিসার। নিশানের কপালে জুমে গেছে বিন্দু বিন্দু ঘাম। সে বৃদ্ধাঙ্গুল দিয়ে বার বার ঘাম মুছছে । মরিয়ম আর মেহমেত নিজেও ভীতি চোখে তাকিয়ে আছে।
নূর মোহাম্মদ শান্ত স্বরে মরিয়মের উদ্দেশ্যে বলে, শুনলাম গত কাল নাকি আপনাকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না। কোথায় গেছিলেন আপনি?? নূর মোহাম্মদের এমন শান্ত প্রশ্নে সবার গলা শুকিয়ে আসে। এখন কি জবাব দিবে মরিয়ম?? নূর মোহাম্মদ খুব ভালো করেই জানতো যে মরিয়মের থেকে কোন উত্তর পাওয়া যাবে না। তিনি আবার বলেন!! কাল বাসায় কখন ফিরেছেন? আর গত কাল রাতের নিউজ টা দেখেছিলেন?? অনিত শরীফ,যাকে মাস খানেক আগে আপনি নিজে তার বিরুদ্ধে স্টেপ নিয়ে তার মতো বেশ কুখ্যাত ক্রিমিনাল কে আইনের আওতায় নিয়ে এসেছিলেন। তাকে খুন করা হয়েছে। কে খুন করেছে??
কারো মুখে স্পষ্টতর উত্তর নেয়। নিশানের দিকে চোখ ফেরায় নূর মোহাম্মদ! তার পর বলে, সবার থেকে প্রতিশোধে নেওয়া শেষ?? নাকি আরো বাকি আছে?? মিস্টার নিশান,মেহমেত এন্ড মরিয়ম, আপনাদের একটু কষ্ট করে পুলিশ কাস্টেডি তে যেতে হবে আমার সাথে! লাস্ট ট্র্যাকিং ডিভাইস মোতাবেক কাল অনিতের খুন কৃত জায়গায়,মেহমেতের নাম্বারের লোকেশন পাওয়া যায়। মানে খুন তোমারা করেছো!
আমার হাতে বেশি সময় নেই, আমার মনে হয় তোমাদের এখন আমার সাথে যাওয়া উচিত!!
নিশান উঠে দাঁড়ায়, এবং বলে ঠিক আছে আমাকে নিয়ে চলুন, মেহমেত আর মরিয়ম এসবের পিছনে নেই।
নূর মোহাম্মদ ভ্রু কুঁচকে তাকায় নিশানের দিকে। কিছু বলতে যাবে তখনই, পিছন থেকে আওয়াজ আসে। ভাইয়া,মেহমেত ভাই, মরিয়ম আপু,এরা কেউ খুনি নয় । খুন আমি করেছি।
নির্জনীর দেখে বেশ উৎসুক হয়ে নূর মোহাম্মদ এবং পুলিশ অফিসার ঘাড় ঘুরিয়ে দৃষ্টিপাত করে। নিশান ধমকের সুরে বলে,তোমাকে আমি বের হতে বারন করেছিলাম। যাও এখান থেকে। কি সব আবোল তাবোল বলছো।
আবোল তাবোল কি বলছি ভাইয়া ,, খুন আমি করেছি, ঠিক আছে কিন্তু প্রমান কোথায়??
ঐ ট্র্যাকিং ডিভাইস?? নির্জনী ডোন্ট কেয়ার মুড নিয়ে সামনে থাকা একটা চেয়ারে আয়েশি ভঙ্গিতে বসে তার পর নাটকের ভুঙ্গিতে বলে
আসলে কি জানেন, মরিয়ম আপু কাল কে গায়েব হয়নি,মেহমেত ভাইয়ের সাথে একটু মনমালিন্য হয়,তাই উনি রাগ করে বাড়িতে চলে আসেন। আর থাকলো ঐ ট্র্যাকিং ডিভাইস,তোমরা বলোনি,যে কাল তোমাদের কে ছিনতাই কারী ধরেছিল?? আর মেহমেত ভাই আর নিশান ভাইয়ার পার্স ক্রেডিট কার্ড ডেবিট কার্ড সাথে ফোন টাও তারা নিয়ে নেয়। হয়তো তার কারনে ট্র্যাকিং ডিভাইস টা ঐ এলাকায় দেখা দিয়েছে। গ্রাম থেকে শহরে আসার রাস্তা তো ঐটাই। আপনারা বরং দেশের ছিনতাই কারী দের কে জেলে ভরুন। কারন বড় বড় ক্রিমিনাল কে তো আপনাদের আইন ধরে রাখতে পারে না। আপনাদের আইন শুধু নির্দোষ দের সাজা দিতে পারে। দোষীদের তো মাত্র এক মাসে ফেরত দেওয়া হয়েছে। বিনা দোষে ১০টা বছর আমার ভাই জেল হাজতে ছিল। আমার মা বাবাকে মেরে ফেলা হয়েছিল। আমার জীবন টাকে নরকে ছুড়ে ফেলা হয়েছিল!! এতো কিছু হয়ে যাওয়ার পর ও আদালত আমাদের ক্ষতি পূরণ হিসেবে,টাকা দিতে চাচ্ছে?? ভুল স্বীকার করছে। এসবে কি শাহানা , আমার মা বাবা কি ফিরিয়ে আসবে?? নাকি আমাদের ভাই বোনের জীবন টা আবার আগের মত হবে??
আর আপনাদের এটা মনে হলো কেন? যে আমরা মারতে পারি অনিত কে।যদি তাকে মেরে ফেলার হতো তাহলে আইনের হাতে তাকে তুলে না দিয়ে নিজেরাই হত্যা করতে পারতাম।
নূর মোহাম্মদ নির্জনীর দিকে তাকিয়ে আছে নিস্পলক চোখে। কেন জানি তার নির্জনীর কথা গুলো শুনতে খুব ভালো লাগছে। নূর মোহাম্মদ মুচকি হাসি ঝুলিয়ে রেখেছে নিজের ঠোঁটে। নূর মোহাম্মদ কন্ঠ নরম করে বলে,
আইন সবার বিষয়ে তো ভুল করতে পারে না । পারে কি??
চলবে _____?????#ক্যাসিনো
#অন্তিম_পর্ব
©লেখিকা_মায়া
অপরাধ করলে আইন সবাইকে শাস্তি দেয় এটাই স্বাভাবিক। আর অপরাধী কে শাস্তি আইন দিবে নাকি কোন সাধারণ মানুষ দিবে। আইন নিজের হাতে তুলে নেওয়া অন্যায়। তাই আমরা যাদের সন্দেহের তালিকায় রাখছি তাকে আমরা জবাবদিহি অবশ্যই করতে পারি।
নির্জনী তাচ্ছিল্যের হাসি হেসে বলে,,আইন কোন আইন ?? কোথায় ছিল আপনাদের আইন তখন যখন আমার কৈশোর শরীরে প্রথম বার অনিতের মতো নোংরা লোকের স্পর্শ পেয়েছিল?? যখন আমাকে অন্ধকার গলির সকলের সামনে ধর্ষন করা হয়েছিল??
নিশান সহ বাকি সবাই চমকে যায় নির্জনীর এই কোথায়! অনিত নির্জনী কে ধর্ষন করেছিল?? নির্জনীর চোখ ছলছল করছে। তবু ও চোয়াল শক্ত করে বলে,,১০টা বছর প্রতি টা রাত যখন আমার শরীর নিয়ে অত্যাচার শুরু হয়েছিল তখন আপনার আইন কোথায় ছিল?? বাকি রইল আপনাদের শাস্তি দেওয়ার কথা!! এক জন ওয়ান্টেড সন্ত্রাসীকে গ্রেফতার করার পর ও খোলা মেলা
কিভাবে ঘুরতে পারে ?? বলুন আমায়?
আইন সবার জন্য উন্মুক্ত হলেও আইন সবাই কে ন্যায় দিতে অক্ষম।
টাকার কাছে বিক্রয় হওয়া আইন। শুধু সাধারণ মানুষদের কে পিষে ফেলার জন্য এখনকার আইন। সবাই নির্জনীর কথা গুলো মনোযোগ সহকারে শুনছে। তার কথা গুলো সবার হজম হলেও অফিসারের হজম হচ্ছে না। সে বার বার কিছু বলার চেষ্টা করছে কিন্তু নূর মোহাম্মদ তাকে বার বার থামিয়ে দিচ্ছে।
নির্জনী একটা বড় নিঃশ্বাস ছেড়ে বলে,,
আর যাই হোক আপনার কাছে যথেষ্ট কোন প্রমান নেই। তাই কাউকে আপনি এরেস্ট করতে পারেন না। সুতরাং আমার মনে হয় আপনাদের যাওয়া উচিত।
নূর মোহাম্মদ মুচকি একটা হাসি দিল। তার এই রহস্যময় মুচকি হাসির পিছনে কি ছিল তা অফিসার ব্যাতিত কেউ জানে না।
আর শুনুন,,ধনী এবং কালো ব্যাবসায়ীর জন্য জীবন বিলাসীতা, এবং তাদের কাছে তাদের জীবন ক্যাসিনোর মত। এই আছে এই নেই,, তাদের সব কিছু ক্ষনিকের বদৌলতে হয়ে থাকে। আর মধ্যবিত্ত, নিম্নবিত্ত, এবং প্রতি টা সাধারণ মানুষের জীবন হয়ে থাকে, এক একটা যুদ্ধ, জীবন তাদের কাছে যুদ্ধক্ষেত্র। আমাদের মতো সাধারণ মানুষরা এক একটা যুদ্ধা।
তাই এই সাধারণ জীবন গুলোর পিছনে সময় নষ্ট না করে, নিজের এই আইন ভালো কাজে ব্যাবহার করুন। ন্যায় বিচার দিতে চেষ্টা করুন। নাহলে পরবর্তী প্রজন্ম আইনের উপর ভরসা না রেখে নিজের দাবিতে নিজেই লড়াই করবে,,আর এতে খুন খারাবি, অশান্তি,
বিশৃঙ্খলা, এবং ধ্বংসের মুখে চলে যাবে। তাই বিক্রি হবেন না আপনারা।
নূর মোহাম্মদ ফুরফুরে গলায় বলে,, হুমম বুঝলাম। কিন্তু আপনার কি মনে হয় কে খুন
করতে পারে??
নির্জনী বাঁকা হেসে বলল,হয়তো কোন বিদেশী খুন করেছে তাকে, ৬দিনের রিমান্ডে তো সে কিছুই বলেনি, আবার তাকে রিমান্ডে নেওয়ার কথা ছিল। লোক টা তো দেশের ক্রিমিনাল ছিলেন না । বিদেশ ও বড় বড় লোকের সাথে তার চলাফেরা ছিল,হয়তো তারা ফেঁসে যাবেন এই ভয়ে তাকে খুন করেছেন।
।
হুমম লজিক আছে,আমি ইনশাল্লাহ এই বিষয় নিয়ে তদন্ত করবো। আসছি!! সকাল সকাল বিরক্ত করার জন্য মাফ করবেন। মেহমেত আর নিশানের সাথে নূর মোহাম্মদ হ্যান্ডশেক করলো। তার পর আবার নির্জনীর দিকে তাকিয়ে রহস্যময় হেসে চলে যেতে লাগলো।
বাইরে বের হয় তারা। অফিসার বিরক্তিকর মুখে নূর মোহাম্মদ কে থামিয়ে দিয়ে বলে,কি হলো এটা ?? এতো নাটক কি জন্য করলে?? আমাদের কোন প্রমানের প্রয়োজন আছে বলে তো মনে হয় না। নিজের চোখে আমরা দেখেছি,ঐ মেয়েটা অনিত কে খুন করেছে। কি নির্মম ভাবেই না মেরেছে তাকে। আর নিশান কেও তো আমরা এরেস্ট করতে এসেছিলাম। তাকেও কিছু করলে না।কি চাচ্ছো কি তুমি???
নূর মোহাম্মদ উপহাসের ন্যায় হাসলো,,তার পর বলল, অফিসার,, কিছু জিনিস আমাদের মাঝে মাঝে প্রকৃতির উপর ছেড়ে দিতে হয়। সব সময় মস্তিষ্কের উপর চাপ না ফেলে মনের উপর ও ছেড়ে দিতে হয়।
অফিসার ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করে
বলতে কি চাচ্ছো তুমি??
তোমার কি মাঝে মাঝে এই আজকের যুগের আইনের উপর রাগ উঠে না?? মেয়ে টা তো ঠিকি বলেছে,ধনী পরিবারের কাছে আমাদের আইন বিক্রয় হয়। টাকার জরে কত আসামী প্রতিনিয়ত বুক ফুলিয়ে আমাদের সমাজে চলাফেরা করছে। অথচ নিপীড়িত হয় ঐ সব মানুষ যারা ন্যায় বিচারের দাবিতে আইনের আশ্রয় নিয়েছিল।
অফিসার হঠাৎ রাগ মাখা মুখে বলে, আমার তো মনে চাই ঐ সমস্ত লোক গুলো কে তখন খুন করতে , যদি পারতাম তো ক্রোস ফায়ারে মেরে ফেলতাম। কিন্তু আমার হাত তো বাধা তাই কিছু করতে পারি না। মাঝে মাঝে ইচ্ছে করে এই চাকরী টাই ছেড়ে দেয়।
নূর মোহাম্মদ দাঁত বের করে হেসে বলে, আমাদের হাত বাঁধা কিন্তু, নিশান আর ঐ মেয়েটার হাত বাঁধা ছিল না। নিশান যাদের খুন করেছে,তারা একেক জনের নামে ক্রোস ফায়ারের warrant ছিল। কিন্তু প্রতি মাসে মোটা অংকের টাকা দেওয়ার কারনে তাদের ছেড়ে দেওয়া হতো। আর এই কালো ব্যাবসা গুলো দিন দিন মহামারির মতো প্রতি টা পরিবারের তরুন প্রজন্ম কে অন্ধকারের নিচে নিয়ে যাচ্ছে,আর তারা হয়ে উঠছে এক একটা নরপিশাচ।
আর অনিত তার শাস্তি কখনোই আইন দিতো না। আমাদের শুধু চেয়ে থাকা ছাড়া কোন কাজ থাকতো না। সে যদি বেঁচে থাকতো আবার ঐ সব কুৎসিত কাজে লিপ্ত হতো।
কত পরিবার আবার রক্তের কান্না কাঁদতে হতো ,তার কোন হিসাব পাবে কি??
তাই যা হয়েছে ভালো হয়েছে। এই কেইস এখানেই closed.. এটা নিয়ে কোন বাড়াবাড়ি আর হবে না। যা প্রমান আমাদের কাছে আছে তাকেও শেষ করে দিবো। যেন তদন্ত কমিটি কোন সূত্র না পায়।
অফিসার চিন্তিত স্বরে বলে, আসামীদের সাহায্য করছি আমরা?? নাহ আসামি নয়। নির্দোষ তারা ছিল, কিন্তু নির্দোষ হয়েও তাদের ভুক্তভুগী হতে হয়েছে । এতো কিছু হারিয়েছে তারা। তার প্রতিদান হিসেবে নিজের হাতে অনিত কে শাস্তি দেওয়া টা আমি খারাপ কিছু ভাবে নিচ্ছি না। অফিসার,মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানালো।
প্যারিস ____
আলিশান বাড়ি ভেদ করে এক জন ভদ্র মহিলার কান্নার আওয়াজ ভেসে আসছে। আহাজারি করে কান্না করছে।
তার এক মাত্র ছেলের হত্যার সংবাদ পাওয়ার পর থেকে সে কান্না করছে।
বাসার মেইডরা শোকাহত সময় পালন করছে। ডিভানে বসে থাকা এক সুন্দর রমনী মুখে প্রশান্তির হাসি ঝুলিয়ে বেশ কিছু ক্ষন ধরে নিজের মায়ের এমন কান্না মাখা চেহারা পরখ করছেন। মনে মনে ভাবছে সে, ইশ্ কত সুন্দর তার মা,কান্নামাখা মুখেও কত মায়াবী লাগছে। কিন্তু যদি এই চেহারার মতো মানুষ টার মন টাও যদি সুন্দর হতো।তাহলে হয়তো তাদের জীবন সুন্দর এবং স্বাভাবিক হতো।
ঘরে তখনি এক আর এক জন মেয়ে প্রবেশ করে। দুই বোন অনিতের,জমজ তারা। শুধু চেহারার দিক দিয়ে তারা জমজ নয়, তাদের মন মানসিকতা ও একি রকম। নিজের ভাই মারা যাওয়ার দুঃখ তাদের মনে কোন প্রভাব ফেলেনি। কারন অনিতের মা চাইলেই নিজের ছেলে কে সহী সালামত ফিরিয়ে নিয়ে আসতে পারতো। কিন্তু সে নিজেই বেঈমানী করেছে। শুধু মাত্র এই পাপের সাম্রাজ্যের কুইন হওয়ার জন্য। অনিত কে তার মা প্রচন্ড রূপে ভালোবাসলেও এক সময় অনিতের ব্যাবহারে বিষিয়ে উঠে অনিতের মায়ের মন। যেদিন সামান্য কারনে অনিত নিজের মায়ের কপালে বন্দুক ধরেছিল। অবশ্য এটা স্বাভাবিক কেননা, খারাপের গর্ভ ভালো কিছু আসলেও ধীরে ধীরে তাকে এই পাপের সাম্রাজ্যে ঠেলে দিয়েছে তার মা নিজে। এখন ন্যাকা কান্না করে তার মেয়েদের দেখাচ্ছে যে সে সত্যিই খুব কষ্ট পেয়েছে। ভাইয়ার সব টাকা ব্যাংক থেকে তুলে নিজের ব্যাংকে টান্সফার করে তার মা। এবং অনিত পুলিশের কাছে ধরা পরার পর তার সাথে কোন যোগাযোগ করার চেষ্টা ও করেনি সে। দুই বোন কফির মগে চুমুক দিয়ে ভাবছে, লোভ মানুষ কে কতটা নিচে নামিয়ে দিতে পারে তা নিজের মাকে না দেখলে তারা বুঝতেই পারতো না। শুধু পাপের সাম্রাজ্যের কুইন হওয়ার জন্য নিজের ছেলেকেও মরনের বুকে ঠেলে দিতে পারে যে মা তার দুই সন্তান তো এখনো বেঁচে আছে,হয়তো দেখা গেল তারাও খুব শীঘ্রই তার মাকে হত্যা করে নিজে কুইন হয়ে যাবে।
!০________________০!
দুই বছর অতিবাহিত হয়ে গেছে, মরিয়ম মেহমেতের জীবন এখন অনেক স্বাভাবিক। আজ মরিয়মের খুশির সীমা নেই,কারন সে আবার কনসিভ করেছে। হাতে প্রেগন্যান্সি কীটে ২টা লাল রঙের দাগ দেখে খুশি তে মাতোয়ারা হয়ে উঠে সে। মেহমেত কে কীট টা দেখাতে সে হাসি মাখা মুখে বলে
মাসাআল্লাহ্ আলহামদুলিল্লাহ!! তার পর মরিয়মের কপালে ঠোঁট ছোঁয়ালো। মিহিরিমা কে তার বাবা বলে,যে তার একটা খেলার সাথী আসতে চলেছে। মিহিরিমা খুশিতে গদগদ হয়ে বলে,সত্যি আব্বু?? কোথায় আমার খেলার সাথি?? কখন আসবে?? ১০মাস পর আসবে,এখন সে তোমার আম্মুর পেটে আছে। এই কথা বলার পর থেকে মিহি চোখ ফেলে মরিয়মের পেটের দিকে তাকিয়ে আছে। আর একটু পর পর মরিয়ম কে জিজ্ঞেস করছে, আম্মু আপনার পেটে বাবু আছে?? বাবু টাকে জলদি বের করেন না?? কখন বাবু আসবে?? বলেন না আম্মু??
মরিয়ম মেয়ের দুই গালে চুমু দিয়ে বলে,,বাবু আসবে তো আম্মু, কিন্তু এখনো তো বাবু হাত পা তৈরি হয়নি। যখন হাত পা হবে চোখ হবে নাক হবে তখন সে চলে আসবে বুঝেছো??
নিশান আর নির্জনীর জীবন নদীর মত বয়ে যাচ্ছে। তারা এখন মুক্ত। আইন অনিতের খুনের কোন যুগসূত্র পায়নি বলে,তারা ধরে নিয়েছে এটা সত্যি কোন বিদেশীর কাছ। তদন্ত এখনো জারি থাকলেও,দেখা যাবে এক সময় এই কেইস হাজার হাজার কেইসের ফাইলের মাঝে চাপা পড়ে যাবে। তবে তারা দেশের ক্রাইম একাংশ আটকাতে সক্ষম হয়েছিল। বাকি ৯৯% তারা কখনই পাইনি ঠিক করতে। দূর্নীতি যত দিন রয়েছে হয়তো কখনো কেউ এই ক্রাইম আটকাতে পারবে না।
নূর মোহাম্মদ একটা ক্যাফে তে বসে আছে,কফির মগের দিকে এক বার দৃষ্টি দিচ্ছে এক বার ম্যানেজারের দিকে দৃষ্টিপাত করছে।
রোজ কার মতো এখনো নূর মোহাম্মদ বিল পে করতে যায় ম্যানেজারের কাছে,তার পর পকেটে থাকা চিরকুট বের করে টাকার উপরে রাখে। নির্জনী বিরক্তিকর দৃষ্টি নিক্ষেপ করে, চিরকুট টা না পড়েই ছিঁড়ে ডাস্টবিনে ছুড়ে ফেলে দেয়। নূর মোহাম্মদ চোখ বড় বড় করে বলে,, ওমা কি করলে এটা?? আমার এতো সাধের লেখা চিঠি কে টুকরো টুকরো করে ফেললে?? রোজ আমার ক্যাফে তে আসা,তার পর কফি অর্ডার করে ঘড়ি ধরে এক ঘন্টা বসে থাকা। তার পর ওয়েটার কে বিল না দিয়ে আমার কাছে আসা ,তার এই চিরকুট দেওয়া। যাতে লেখা রয়েছে, বিয়ে করবে?? এছাড়া নতুন কিছু আছে আপনার?? নূর মোহাম্মদ খুশি হয়ে বলে,
ওহহ ওয়াও আমার সব কিছু মুখস্ত করে রেখেছো তুমি?? আই থিক তুমি আমাকে বিয়ে করতে চাও তাহলে, নাহলে এতো ভাবে আমাকে জাজ করতে না।
ওহ হ্যালো এই ড্রামা না এক বছর ধরে করে আসছেন। আমি বার বার বলছি আমি কোন ভালো মেয়ে নয় তার পর ছ্যাচরার মতো আমার মাথা খেতে চলে আসেন। আমাকে আপনার ফ্যামিলি কোন দিন ও মেনে নিবে না আপনার বউ হিসাবে। সো প্লিজ আপনি এখন আসুন!! আমার তো ফ্যামিলিই নেই। মেনে নেওয়া কিংবা না নেওয়ার ভয় ও নেই। মা বাবা দুজনেই এই দুনিয়া থেকে বিদায় নিয়েছেন। ছোট ভাই আছে,সে এই বিষয় নিয়ে মাথা ঘামাবে না। প্লিজ নির্জনী you will merry me??? plz!! ..
নির্জনী একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে, আপনাকে বুঝানো আর ঐ দেওয়াল কে বুঝানো একি ব্যাপার।
সবাই তার জীবন নিয়ে অভ্যস্ত হলেও নিশান এখনো শাহানা তেই মুগ্ধ। তার কবরের পাশে বিকাল হলেই এসে বসে থাকে সে, সন্ধ্যা অব্দি , কবরের পাশেই শুয়ে থাকে সে, আকাশ পানে চেয়ে কি যেন খুঁজতে থাকে। আর এই নিশান কে কেউ রোজ লুকিয়ে লুকিয়ে দেখে তাঁর ব্যাপারেও নিশান অবগত আছেন। কিন্তু মহুয়া কে কিছুতেই শাহানার জায়গায় বসাতে পারবে না নিশান। শুধু মহুয়া কেন? হয়তো অন্য কোন নারী ও পারবে না শাহানার জায়গা টা নিতে। কিছু কিছু ভালোবাসার অন্তিম রেখা থাকে না। সে আমার থাক বা অন্য কারোর কিংবা সে এই পৃথিবীতে না থাক, কিন্তু তার প্রতি ভালোবাসা টা সব সময় অক্ষত থেকে যায়। এক মানুষে যে আসক্ত হয়ে পড়ে,সে সেই মায়া কাটাতে তার আমৃত্যু লেগে যায়। হয়তো সময়ের ব্যাবধানে ভালোবাসা প্রকাশ হয় না। কিন্তু মনের ভিতরে এক সুষ্ক অনুভূতি আজীবন থেকে যায়।
পরের দিন, নূর মোহাম্মদ আজ ক্যাফে তে আসেনি, তাতে নির্জনীর কোন মাথা ব্যাথা নেই, দ্বিতীয় দিন ও সে আসেনি ,এবার নির্জনী একটু ভাবতে বসে, কিন্তু ওতটাও পাত্তা দেয়না। কিন্তু পাঁচ দিন অতিবাহিত হয়ে যাওয়ার পর,নির্জনী চিন্তিত হয়ে পড়ে।
নিজের ভিতরে যেন অস্থিরতা বিরাজ করছে।
ক্যাফে বন্ধ করে নির্জনী ১০টায়, ফাঁকা রাস্তায় হাটছে সে,গাড়ি নিতে ইচ্ছে করছে না।তার হাঁটতে ভালো লাগছে। আনমনে, অনেক কিছু ভাবছে সে। নিজেই বুঝতে পারছে না কেন তার এতো অস্থির লাগছে। হঠাৎ চিরচিনা কারো আওয়াজে নির্জনী পিছন ফিরে তাকাই সামনে হাঁটু তে হাত দিয়ে নূর মোহাম্মদ হাঁপাচ্ছে। চোখ তুলে,নির্জনীর দিকে তাকায়। বাপরে কি মেয়ে তুমি?? পাঁচ দিন চোখের আড়ালে থাকলাম এই ভেবে যে তুমি আমাকে না দেখলে খুঁজবে কিন্তু নাহ ,একটা খোঁজ নাওনি আমার। অনেক হয়েছে আর নয়, তুমি আমাকে বিয়ে করে নাও না প্লিজ! আপনার কি পৃথিবীতে মেয়ের অভাব পড়ছে?? নাহ দুনিয়াতে মেয়ের অভাব পড়েনি । তাহলে আমার পিছু ছাড়ছেন না কেন? কি পেয়েছেন আমার মধ্যে?? দুনিয়াতে অনেক মেয়ে কিন্তু সবাই নির্জনীর মতো লেডি কিলার নয়। নির্জনী মুচকি হাসলো। তার পর আবার হাঁটতে শুরু করলো। নূর মোহাম্মদ পিছন পিছন হাঁটছে আর বলছে হেঁটে যাচ্ছো কেন? রিক্সা নেয়। নাহ প্রয়োজন নেই,হাঁটতে ভালো লাগছে। আপনি সাথে থাকলে আরো ভালো লাগবে!! নূর মোহাম্মদ অবাক চোখে তাকিয়ে বলে,আমাকে সাথে নিবে? নির্জনী স্বাভাবিক ভাবেই উত্তর দেয়। কালকে আমাদের বাসায় আসবেন,ভাইয়ার সাথে কথা বলতে!!
নূর মোহাম্মদ বিস্ফোরিত নয়নে তাকিয়ে বলে, তুমি ফাইনালি রাজি হলে?? সত্যি বলছো?? নাহ মিথ্যা বলছি।
নির্জনীর জীবন একটা নতুন মোর পেয়ে গেছে। এখান থেকে নির্জনী বুঝতে পেরেছিল যে জীবন ছাই হয়ে গেলেও সব শেষ হয়ে যায়না হয়তো সেই ছাই থেকে আবার নতুন কোন চারা গজে যায়। হয়তো এক সময় নিশানের ভিতরেও মহুয়ার জন্য অনুভূতির জন্ম নিবে। মহুয়া হাল ছেড়ে দেয়নি। হয়তো কখনো দিবেও না। নিশান কে না পেলেও এক তরফা ভালোবাসা নিয়েই হয়তো সে সারা জীবন কেটে দিবে।
প্যারিস শহরে আজ নিউজে হ্যাডলাইন হয়েছেন অনিতের মা। কুখ্যাত নারী, যে কিনা মাফিয়া চক্রের লিডার ছিলেন। তার বিরুদ্ধে যত স্টেপ নেওয়া হয়েছে এতো দিনে তার ভালো কোনো ফলাফল পাওয়া যায়নি। টাকার জরে সব প্রমান সে চপাট করে নির্দোষ বনে যেতো। কিন্তু গতকাল রাতে তার দ্বি খন্ডিত লাশ উদ্ধার করা হয়। কে খুন করেছে তার কোন সূত্র এখনো পাওয়া যায়নি। নিজের মায়ের মৃত্যু মুখ দেখে
দুই বোনের ঠোঁটে এক রহস্যময় হাসির রেখা পাওয়া যায়। পুলিশ অফিসার আসতেই তারা ছলনাময়ী রূপে কাঁদতে আরম্ভ করে।
পাপ বাপ কেও ছাড়ে না। নিজের কর্ম একদিন নিজের কাল হয়ে দাঁড়ায়।
সমাপ্ত!!!