ক্রাশ ডাক্তার বউ পর্ব ২০+২১

20+21
#ক্রাশ_ডাক্তার_বউ
#Writer_Sarjin_Islam [সারজীন]
#Part:20
বর্তমানে 🍁
মাহি : সবই তো শুনলে। এখন শুধু তোমার সিদ্ধান্তের উপর শুধু তোমার আর ভাইয়ার না রোদ আর রোদ্রি ভবিষ্যত নির্ভর করছে। আমাদের ভুলে গেলে চলবে না ভাবী ভাইয়া কিন্তু চক্রান্তে শিকার হয়েছে। একটা অনুরোধ যা করবে একটু ভেবে করো প্লিজ!
.
মাহি এই বলে কফি মগ দুটো নিয়ে চলে যায়।আর সারা কে ফেলে যায় এক রাশ চিন্তার মধ্যে।মাহি র কথা গুলো খুব ভাবাচ্ছে সারা কে।কি করবে ও?
.
দেখতে দেখতে আরো কিছুদিন কেটে যায়।সারার মনে কি চলছে একমাত্র সারা ই জানে। সারা এখন হাঁটতে পারে।তাও মাহির সারার সব কাজ করে দেয় এমনকি খাইয়ে পর্যন্ত দেয়। এরমধ্যে একদিন মাহিনের মা সারার সাথে জারা আর মাহিনের বিষয়ে কথা বলে। সারা বলে চৌধুরী বাড়ির সবার সাথে কথা বলতে।সারার কথা মত মাহিনের মা চৌধুরী বাড়ির লোকজনের সাথে কথা বলে। তাঁরা এক কথায় রাজি হয়ে যায়।মাহিনের মত ছেলে লাক্ষে একটা হয়। এমন ছেলেকে কেউ হাত ছাড়া করতে চায় না। জারা যখন শুনে মাহিনের সাথে ওর বিয়ে ঠিক হয়েছে তখন থেকে যখনি মাহিনের সাথে দেখা হয় মিরজাফর বলে তার মহামূল্যবান ভাষন শুরু করে দেয়। জারা ভেবেছিলো মাহিন ওকে প্রপোজ করবে! কিন্তু মাহিন করলো টা কি? সোজা বিয়ে! তাইতো জারা মাহিনের উপর ক্ষেপে আছে। মাহিন প্রতিদিন সকালে অফিসে যাওয়ার আগে রোদ আর রোদ্রি সাথে দেখা করে যায়।আজো ঠিক তাই, মাহিন এসে রোদ আর রোদ্রি সাথে দেখা করে যাওয়ার সময় দেখে মাহি, জারা, আরফিন ওরা ভার্সিটি যাচ্ছে, মাহিন ওদের লিফটের কথা বললে জারা মুখ ভেংচি দিয়ে না করে দেয়। অবশ্য মাহি আর আরফিনের জোরাজুরিতে জারা যেতে রাজি হয়। সমস্ত রাস্তা মাহিন জারার জারি খেতে খেতে এসেছে।মাহি আর আরফিনের হাসতে হাসতে অবস্থা শেষ।ওরা সবাই গাড়ি থেকে নামলে জারা মাহিনের সামনে গিয়ে বলে।
.
জারা : আমি জানি প্রেমিক-প্রেমিকারা, স্বামী-স্ত্রী অথবা উটবি এরা কেউ কাউকে ধন্যবাদ জানায় না। আমি আবার সবার মত না আমাকে যে সাহায্য করবে আমি তাকে ধন্যবাদ জানাই।সো থ্যাংক ইউ মিস্টার মিরজাফর।
.
জারা এই বলে হনহনিয়ে চলে যায়। আর মাহিন ক্যাবলা কান্তের মত দাঁড়িয়ে থাকে।মাহিনের অবস্থা দেখে মাহি আর আরফিন ওর কাছে গিয়ে হাসতে হাসতে বলে।
.
মাহি : ভাইয়া আপনার সে তো খুব ক্ষেপে আছে!
.
আরফিন : ভাইয়া আপনি ওকে এখনো বলেনি আপনি যে ওকে ভালোবাসেন তাই এত ক্ষেপে আছে।( হেসে দিয়ে )
.
মাহিন : চিন্তা করো না খুব তাড়াতাড়ি মহারানীর রাগ ভাঙ্গিয়ে দেবো।( মুচকি হেসে )
.
কেউ একজন অশ্রু ভেজা চোখে তাকিয়ে আছে ওদের দিকে। জারাদের ভার্সিটির একজন প্রফেসর নাম আকাশ আহামেদ। আগের বছর লন্ডন থেকে লেখাপড়া শেষ করে দেশে ফিরছে। বড়ো সহজ সরল ছেলেটা। কখনো করো সাথে খারাপ ব্যবহার করে না।ওর বাবা ফাহিম আহামেদ আর বড় ভাই নিলয় আহামেদ ওদের বিজনেস সামলায়। আকাশের মা ওর ছোটবেলায় মারা যায়।ওর বড় ভাই যখন বিয়ে করে‌ তখন থেকে ওর ভাবী নীলা আহামেদ আকাশকে নিজের ছেলের মতো করে মানুষ করে। আকাশের একটা ভাইজি আছে অনেক মিষ্টি আর আকাশের প্রান নাম নিরা। বিজনেস ভালো লাগে না বলে ও পেশা হিসেবে শিক্ষকতা বেছে নিয়েছে। একদিন আরফিনদের ক্লাসে ইংরেজি শিক্ষক কোনো কারনে আসতে পারেনি তাই প্রিন্সিপাল দায়িত্ব দিলেন আকাশের উপর ক্লসটা নেওয়ার জন্য। সেদিন প্রথম দেখে আকাশ আরফিন কে। তখন থেকে শুরু হয় আকাশের এক তরফা ভালোবাসা। কখনো সাহস করে আরফিন কে ওর মনের কথা বলতে পারেনি। কিন্তু আজ আরফিন কে একটা ছেলের সাথে হেসে হেসে কথা বলতে দেখে ওর মনে হয় ও আরফিন কে ধীরে ধীরে হারিয়ে ফেলছে। আকাশ চোখ মুছে ওখান থেকে চলে যায়।
.
সারা সিদ্ধান্ত যা নেওয়ার তা নিয়ে ফেলেছে আর ২২ দিন পর রোদ আর রোদ্রি জন্মদিন সেদিন সারা ওর সিদ্ধান্তের কথা মাহির কে জানাবে। সারা এ বাড়িতে এসেছে সাড়ে তিন মাসের বেশি সময় হয়েছে। এরমধ্যে সবাই অনেক করে চেষ্টা করছে সারার মাম্মার সাথে ওর সম্পর্ক আগের মত করার। কিন্তু ফল যে কে সেই।ঐ বাড়ি থেকে সারা কে নিতে এসেছিল কিছুদিন ঘুরে আসার জন্য কিন্তু সারা সাফ না করে দিয়েছে। সারা ওদের মুখের উপর বলে দিয়েছে। মৃত ব্যক্তি কোথাও যেতে পারে না। সারা তো ঐ বাড়ির জন্য মৃত। তাহলে ঐ বাড়িতে যায় কি করে সারা।কাল রাতে ছোট মাম্মা এসেছিল সারার সাথে কথা বলতে, সারা যাবে না বলে অনেক কথা কাটাকাটি করে। ছোট মাম্মা সারার সাথে না পেরে তিনি তার কসম দিয়ে বসেন সারা কে। সারা অগোতা রাজি হয় যাবে বলে। পরেরদিন সকালে বেলা সারা,মাহির,রোদ,রোদ্রি,মাহিন,জারা,আরফিন,মাহি সবাই মিলে চৌধুরী বাড়িতে যায়। ওদের জন্য চৌধুরী বাড়িতে এলাহী আয়োজন করেছে।আজ সারা কত বছর পর নিজের শিকরে ফিরে এসেছে। বেড়ে উঠা এই বাড়িতে।সুখ দুঃখ ভাগাভাগি করে নিয়েছে এই বাড়িতে। স্মৃতি বিজড়িত বইয়ের পাতাগুলোতে উল্টাতে থাকে একের পর এক। সারা ছোট মাম্মা আর আরাফের সাথে কথা বলে নিজের রুমের দিকে পা বাড়ায়।সারার পাপা আর ছোট পাপা বাজারে গেছে আজ বাড়িতে দুই জামাই এসেছে বলে কথা। সারা রুমে ঢুকেই দেখে ওদের চার ভাই বোনের ছবিটা সারা বিছনায় উল্টো হয়ে বই পড়ছে, দুই বোন সারার দুই পাশে আর আরাফ মাঝখান থেকে সারা কে জড়িয়ে ধরে আছে। সারা কে একবারে বিছানার সাথে চেপে ধরছে। তখন ছোট মাম্মা এই ছবিটা তুলে দেয়। সেদিনের কথা মনে পড়ে সারার মুখে হাসি ফুটে উঠে। রুমে ভালো করে ঘুরে দেখে এখনো রুমটা আগের মতই আছে। সারা বারান্দার দরজা খুলে বারান্দায় দাঁড়িয়ে দেখে সারার হাতে লাগানো গাছগুলোর মধ্যে কিছু গাছ আছে আর কিছু গাছ নতুনে লাগানো হয়েছে।সারার প্রিয় হলুদ গোলাপ টা এখনো বেঁচে আছে দেখে সারার মন খুশি হয়ে যায়। কিন্তু গাছটায় আজ কোনো ফুল ফোটেনি, গাছে কিছু কলি আছে। কিছুক্ষণ পর সারা নিচে নেমে দেখে মাহিরা সবাই হল রুমে বসে গল্প করছে। সারা ওদিকে আর না গিয়ে কিচেনে চলে যায়। সারা কে কিচেনে কেউ খেয়াল করেনি।সারার মাম্মা সারার জন্য নিজেকে দোষারোপ করে কান্না করছে। ছোট মাম্মা বৃথা চেষ্টা করছে তার কান্না থামানোর।যতই পাহাড় সমান অভিমান থাকুক না কেনো কোনো সন্তান ই তার মায়ের চোখের পানি দেখতে পারে না। সারা ওখানে দাঁড়িয়ে শব্দ করে ওর মাম্মার দিকে এগিয়ে যায়।ওর মাম্মা আর ছোট মাম্মা শব্দ শুনে চমকে উঠে।মাম্মা তাড়াতাড়ি করে চোখ মুছে নেয়। সারা গিয়ে ঢাকা দেওয়া খাবার উল্টাতে উল্টাতে বলে।
.
সারা : আজ কি রান্না করেছো মাম্মা? বিরিয়ানি রান্না করোনি?
.
সারার ছোট মাম্মা কথা ভেবে কিছুক্ষণ পর সারার কথা বুঝে মুখ টিপে হাসে। সারা সেদিকে না তাকিয়ে সালাদের জন্য কেটে রাখা শসা একটুকরো খেতে খেতে বলে।
.
সারা : কি হলো রান্না করোনি?
.
ছোট মাম্মা : কি হলো ভাবী তোমার মেয়ে কিছু জিজ্ঞাসা করছে?( মুখ টিপে হেসে )
.
সারার মাম্মা আচমকা সারা কে জড়িয়ে ধরে কান্না করতে করতে বলে।
.
মাম্মা : মা তুই আমাকে ক্ষমা করে দে।যখন মাহির ঐ ছবিগুলো দেখায় তখন আমার মনে হয়েছিল আমি তোকে ঠিক মত মানুষ করতে পারিনি। আমি আর এই অপরাধের বোঝা নিয়ে বাঁচতে পারছি না।প্লিজ ক্ষমা করে দে আমায়।
.
সারা ওর মাম্মা কে ছাড়িয়ে চোখ মুছে দিয়ে বলে।
.
সারা : তুমি আমার মা। আমার মাম্মা। আমি ভুল করি বা না করি তোমার আমাকে শাসন করার অধিকার আছে। এখানে ক্ষমা চাওয়ার কিছু হয়নি। আমি শুধু একটু অভিমান করে ছিলাম তোমার উপর এই আর কি।
.
সারার মাম্মা কান্নামাখা হাসি দিয়ে সারা কে জড়িয়ে ধরে। অবশেষে মা মেয়ের মান অভিমানের পালা মিটলো।
.
এক সপ্তাহ পর রোদ আর রোদ্রির জন্মদিন। দেখতে দেখতে অনেকগুলো দিন সারা এ বাড়িতে কাটিয়ে দিয়েছে।কাল সারারা চলে যাবে তাই সন্ধ্যার পর থেকে সবাই হল রুমে বসে জমিয়ে আড্ডা দিচ্ছে টপিক হলো রোদ আর রোদ্রির জন্মদিন পার্টি কেমন হবে। এরমধ্যে দুজন লোক হল রুমের দিকে হেঁটে আসছে। একজন ছেলে আর একজন মেয়ে তাদের পিছনে ড্রাইভার কিছু ফল মিষ্টির প্যাকেট নিয়ে আসছে।সারার পাপা এগিয়ে যায় তাদের দিকে।সবাই উত্তেজিত হয়ে আছে তারা কে জানার জন্য।
.
পাপা : তোমরা কে বাবা তোমাদের তো চিনলাম না!
.
– আসসালামুয়ালাইকুম আঙ্কেল। আমি নিরব আহামেদ।আর আমার স্ত্রী নীলা আহামেদ। আমার বাবার নাম ফাহিম আহামেদ।
.
পাপা : তুমি আহামেদ কোম্পানির মালিক ফাহিম আহামেদের কথা বলছো?
.
নিরব : জ্বী আঙ্কেল।
.
পাপা : দাঁড়িয়ে আছো কেনো বসো।
.
নিরব আর নীলা বসতে বসতে বলে।
.
নীলা : আঙ্কেল আমারা আজ আপনার কাছে একটা অনুরোধ নিয়ে এসেছি।
.
পাপা : কি অনুরোধ মা?( চিন্তিত হয়ে )
.
নীলা : আপনাদের বাড়ির মেয়ে আরফিন চৌধুরী। ওর কি বিয়ে ঠিক হয়েছে বা ওর কি কোনো বয়ফ্রেন্ড আছে?
.
এমন কথা শুনে সবাই চোখ বড় বড় করে আরেফিনের দিকে তাকায়। আরফিন তখন কফি মগে সবে চুমুক দিয়েছিল এমন কথা শুনে ওর মুখের সব কফি গিয়ে সামনে বসে থাকা জারার গায়ে পড়ে। এরমধ্যে আরাফ লাফ দিয়ে উঠে বলে।
.
আরাফ : আপু আর প্রেম অসম্ভব। আপনাদের কোথাও ভুল হচ্ছে।
.
নীলা দৈর্ঘ্য শ্বাস ফেলে বলে শুরু করে।
.
নীলা : প্লিজ কিছু মনে করবেন না। আমি আপনাদের সব বুঝিয়ে বলছি। আমার শ্বাশুড়ি আমার দেবরের জন্মের কিছু বছর পর মারা যায়। আমার যখন বিয়ে করে ঐ বাড়িতে আসি তবে থেকে আমি ওকে নিজের ছেলের মতো করে মানুষ করি। খুব সহজ সরল একটা মানুষ।ও কারো সাত পাঁচে থাকে না।এক বছর আগে লন্ডন থেকে লেখাপড়া শেষ করে দেশে ফিরে। আমার শ্বশুর ওকে অফিস জয়েন করতে বললে,ও নিজের ইচ্ছে মত একটা ভার্সিটিতে প্রফেসর হিসেবে জয়েন করে। ওখানেই প্রথম দেখে আরফিন কে।এক তরফা ভাবেই ভালোবাসতে শুরু করে আরফিন কে। কিছুদিন আগে আরফিন কে কোনো ছেলে গাড়ি করে ভার্সিটিতে দিয়ে আসে। তখন ও মনে করে ওর হয়তো বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে। তারপর থেকে বাড়ি থেকে বের হয় না। ঠিক মত খাওয়া দাওয়া করে না। আমার মেয়ে নিরা ওর প্রান।ওর সাথেও ঠিক মত খেলে না।নিরব ওকে জিজ্ঞাসা করলে ও এরিয়ে যায়।পরে আমি আর নিরব দুজনে যখন ওকে চেপে ধরি তখন সব কিছু বলে দেয়।আমারা পরে খোঁজ নিয়ে জানতে পারি আরফিন হলো চৌধুরী বাড়ির মেয়ে। আঙ্কেল আপনাদের অনুমতি থাকলে আমি আপনাদের বাড়ির মেয়েকে আমার জা করে নিয়ে যেতে চাই।
.
আরফিন ভেবে পায়না এমন ছেলে এখনকার যুগে আছে না কি?এত ভালোবাসে অথচ একবারও মুখে বলেনি।নিরবে ভালোবাসে গেছে।আরফিনের অবাকের শেষ নেই।
.
সারা : তা আমাদের রোমিও নাম কি? এখন কোথায় আছে সে?( মুচকি হেসে বললো )
.
নীলা : আকাশ আহামেদ।ও বাড়িতে ই আছে।ও জানে না আমরা এখানে এসেছি।( হেসে বললো )
.
সারা আরফিনের দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বললো।
.
সারা : আকাশশশশ।

To be continue…🍁

#ক্রাশ_ডাক্তার_বউ
#Writer_Sarjin_Islam [সারজীন]
#Part:21
আরফিন ভেবে পায়না এমন ছেলে এখনকার যুগে আছে না কি?এত ভালোবাসে অথচ একবারও মুখে বলেনি।নিরবে ভালোবাসে গেছে।আরফিনের অবাকের শেষ নেই।
.
সারা : তা আমাদের রোমিও নাম কি? এখন কোথায় আছে সে?( মুচকি হেসে বললো )
.
নীলা : আকাশ আহামেদ।ও বাড়িতে ই আছে।ও জানে না আমরা এখানে এসেছি।( হেসে বললো )
.
সারা আরফিনের দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বললো।
.
সারা : আকাশশশশ।
.
মাহি আর জারা একে অপরকে দিকে তাকিয়ে বলে।
.
মাহি,জারা : আকাশ স্যার!
.
মাহির : তোরা চিনিস?
.
জারা : হ্যা জিজু। তিনি খুব ভালো মানুষ।ক্লাস এসে কোনো মেয়ের দিকে তাকান না।ক্লাস করিয়ে সোজা চলে যান। আমাদের ইংলিশ ক্লাস টা ও আকাশ স্যার করায়।এক কথায় বলতে গেলে তার মত মানুষ হয় না। তাছাড়া তিনি গোপনে আমাদের ক্লাসের কিছু গরিব ছাত্র ছাত্রীদের তিনি আর্থিক ভাবে সাহায্য করেন। কিন্তু সত্যি কখনো চাপা থাকে না ঠিক তেমনি একথা ও সবাই জেনে যায়।স্যারের একটা অদ্ভুত আর ভালো দিক হলো ছোট বড় সবাইকে আপনি বলে সম্বোধন করে।
.
ছোট পাপা : একাকার যুগে এমন ছেলে আছে আমারতো বিশ্বাস ই হচ্ছে না।
.
মাহি : এই জারা।জারা।( চেঁচিয়ে উঠে )
.
জারা : তোর আবার কি হয়েছে?( বিরক্ত হয়ে )
.
মাহি : ভাবী এক্সিডেন্ট হওয়ার পর ভাবী যখন হসপিটালে থেকে বাড়িতে নিয়ে আসা হয় তারপর থেকে তুই আর আরফিন আপু আমাদের বাড়িতে থাকতিস রোদ আর রোদ্রি কে সামলানো জন্য।এই চার মাস আমরা তিন জন একসাথে ভার্সিটি যাওয়া আসা করছি। শুধু একদিন মাহিন ভাইয়া আমাদের ভার্সিটিতে পৌঁছে দিয়েছিল তোর মনে আছে। সারা রাস্তা তুই ভাইয়া সাথে রাগা রাগি করতে করতে এসেছিস।গাড়ি থেকে নেমে তুই ভাইয়া কে এক ঝুড়ি বকা দিয়ে চলে যাস। আমি আর আপু তখন হাসতে হাসতে আমাদের অবস্থা খারাপ। ভাইয়ার মুখটা তখন দেখার মত ছিলো।আই থিংক তখন আকাশ স্যার আরফিন আপুকে ভুল বুঝে।
.
জারা : ঐ তোকে এখন কেউ সব কথা জিজ্ঞেস করছে। আমি কাকে বকা দিছি না কি?( রেগে )
.
মাহিন : শালি সাহেবা এবার আপনি চুপ থাকুন না হয় আমার মত আপনার অবস্থায় খারাপ করে দেবে!( জারার দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে )
.
জারা : তোদের দুটোকে আমি দেখে নেবো।( বিরবির করে বলে )
.
ছোট পাপা : সে না হয় বুঝলাম কিন্তু তোমার বাবা আসেনি কেনো?
.
নিরব : তিনি বাইরে গেছেন কিছু দিনের জন্য। তিন চার দিনের মধ্যে চলে আসবে।
.
পাপা : শোনো বাবা আমি এখনি তোমাদের কিছু বলতে পারছি না। আমি পরিবারের সবাই সাথে একটু আলোচনা করে নেই।আর শোনো সাত দিন পর আমার দাদু ভাইদের জন্মদিন সেদিন তোমার বাবা আর আকাশকে নিয়ে এসো তখন এই বিষয়ে কথা হবে।
.
নিরব : আচ্ছা আঙ্কেল তাই হবে। এখন আমরা আসি।
.
পাপা : সে কি এই প্রথম আমাদের বাড়িতে এসেছো না খেয়ে যেতে পারবে না।
.
নীলা : না আঙ্কেল নিরা আর আকাশ বাড়িতে একা আছে ওরা আমাদের জন্য অপেক্ষা করছে।আজ আমরা যাই।অন্যদিন না হয় জমিয়ে খাওয়া দাওয়া করা যাবে।
.
কাল রোদ আর রোদ্রির জন্মদিন।এই সাতদিনের অনেক কিছু পরিবর্তন হয়েছে। আকাশের বাবা দেশে ফিরেই সারার পাপা আর ছোট পাপার সাথে দেখা করে। আকাশের ছবি দেখে তাদের আকাশকে পছন্দ হয়।তারা বিয়ের পাকা কথা দিয়ে ফেলে।এক কথা শুধু বড়রা আর সারা, মাহির জানে। সারা মাহিন কে দিয়ে আকাশের বেপারে ভালো ভাবে খোঁজ নিয়েছে।সবদিক থেকেই আকাশের তুলনা হয় না। কাল শুধু রোদ আর রোদ্রির জন্মদিন না জারা-মাহিন আর আরফিন-আকাশের এনগেজমেন্ট। একথা এরা চার জনের কেউ জানে না। খান বাড়ির চেনা যাচ্ছে না। কোনো রাজবাড়ির থেকে কম সুন্দর লাগছে না।এই পাঁচ বছরে রোদ,রোদ্রি যতোগুলো জন্মদিন গেছে সবগুলোর আনন্দ একসাথে উপভোগ করতে চায় সবাই।
.
সকালে সারা ঘুম থেকে উঠে নামাজ পড়ে এক নজর বিছানার দিকে তাকায়।তিন জনকে কি অপূর্ব লাগছে ঘুমন্ত অবস্থায়। সারা মাহিরের পাশে বসে মাহিরের মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে আস্তে করে ডাক দেয়। মাহির ঘুম থেকে উঠে অদ্ভুত ভাবে সারার দিকে তাকিয়ে থাকে। সারা আজ নিজে থেকে ওর এত কাছে এসেছে ভাবতেই মাহিরের কেমন লাগছে। মাহির আপাতত ভাবা ভাবি বাঁধ দিয়ে ওযু করে মসজিদে চলে যায়। সারা মাহিরের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে এক রহস্যময় হাসি দেয়। সারা রোদ,রোদ্রি ঘুমন্ত অবস্থায় সমস্ত মুখে আদর দিয়ে ভরিয়ে দেয়। সারা কিছুক্ষণ ওদের আদর করে ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখে পাঁচটা বাজবে বাজবে অবস্থা। সারা আর দেরি না করে কিচেনে চলে আসে। সারা কালকে ই বলে দিয়েছিল আজ সমস্ত রান্না সারা একা করবে। সারা সকালের ব্রেকফাস্ট রোদ আর রোদ্রির পছন্দ মত তৈরি করে।হিয়া আর মামনি সারা কে রান্নার কাজে সাহায্য করবে এই নিয়ে একবার সারার সাথে বিশ্ব যুদ্ধ হয়ে যায়। কিন্তু সারার একি কথা আজ শুধু সারা রান্না করবে। সারাদিন হই হুল্লোড়ার মধ্যে কেটে যায়। সারা মাহি কে দিয়ে জারা আর আরফিনকে পার্লারে পাঠিয়ে দেয়। মাহির রোদ আর রোদ্রির জন্য পুরো খেলনার দোকান তুলে এনেছে। রোদ আর রোদ্রির খুশি দেখে কে? সন্ধ্যায় একে একে অতিথিরা আসতে শুরু করে। বলতে গেলে শহরের প্রায় অর্ধেক লোক খান বাড়িতে আমন্ত্রিত।মাহিনের পরিবার, সারার পরিবার, আকাশের পরিবারের সবাই চলে এসেছে। সারা রোদ রোদ্রি কে রেডী করিয়ে মামনির রুমে রেখে আসে। মামনি খুব তাড়া দিচ্ছে সারার তৈরি হওয়া নিয়ে। সারা হাতের কাজ শেষ করে মাহিরের আনা শাড়ি পরে মাহিরের পছন্দ অনুযায়ী সেজে নেয়। মাহির সারার খোঁপায় সাদা গোলাপ দিয়ে খোঁপা করা খুব পছন্দ করে।আজ সারা মাহিরের ইচ্ছে অনুযায়ী খোঁপায় সাদা গোলাপ দিয়েছে।জারা রা কিছুক্ষণ হলো পার্লার থেকে এসেছে।যে যার বন্ধু বান্ধবদের সাথে কথা বলতে ব্যস্ত। আরফিনের সাথে আকাশের ভাবী নীলার দেখা হয়।তার সাথে কিছুক্ষণ কথা বলে বুঝাতে আকাশ আজ এখানে এসেছে। আরফিনের চোখ শুধু এখন আকাশকে খুঁজছে। এখনো অনুষ্ঠান শুরু হতে দেরী আছে রোদ আর রোদ্রি এখনো নিচে আসেনি। আরফিন আর দেরি না করে বাড়ির ভিতরে ভালো ভাবে একবার চোখ বুলায় কিন্তু আকাশের দেখা মিলে না। কাউকে জিজ্ঞেস করবে তারও উপায় নেই। বাগানে খুঁজে না পেয়ে কি মনে করে গেটের বাইরে যায় আরফিন। গিয়ে দেখে আকাশ রাস্তায় পাইচারি করছে। আরফিন আস্তে আস্তে আকাশের পিছনে গিয়ে দাঁড়ায়।
.
আরফিন : স্যার!
.
আকাশ পিছন ফিরে আরফিন কে দেখে চমকে উঠে বলে।
.
আকাশ : আরে আরফিন আপনি এখানে?
.
আরফিন : যাদের জন্মদিনে এসেছেন তার আমার আপুর ছেলে মেয়ে।তাই আমি এখানে।
.
আকাশ : ও আমি জানতাম না। ভাবী আমাকে জোর করে নিয়ে এসেছে।
.
আরফিন : এতদিন কোথায় ছিলেন ভার্সিটিতে আসেনি কেনো?
.
আকাশ : এমনি! মন ভালো ছিলো না।
.
আরফিন : না কি ভালোবাসার মানুষকে অন্য মানুষের পাশে সহ্য করতে পারেনি?
.
আকাশ : কি সব বলছে আপনি?( অন্যদিকে তাকিয়ে )
.
আরফিন : আমার চোখের দিকে তাকান।
.
আকাশ তাও আরেফিনের চোখের দিকে তাকায় না। আরফিন আকাশের সামনে গিয়ে বলে।
.
আরফিন : ভালোবাসেন আমায়?
.
আকাশ কিছু না বলে মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে থাকে।বেশ কিছুক্ষণ কেটে যাবার পর আরফিন নিজে আকাশের থুতনি ধরে মুখটা উঁচু করে দেখে আকাশ কান্না করছে।
.
আরফিন : এ কি আপনি কান্না করছেন কেনো?( বিচলিত হয়ে )
.
আকাশ : হ্যা ভালোবাসি আপনাকে অনেক বেশি। কিন্তু আপনি তো এখন অন্য কারো। কিন্তু আপনি কোনো চিন্তা কখনো ভালোবাসার দাবি নিয়ে আপনাকে বিরক্ত করবো না।নিরবে ভালোবাসে যাবো।( চোখ দিয়ে পানি পড়ছে )
.
আরফিন : বিয়ে করবেন আমায়?
.
আকাশ অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে। আরফিন সেদিকে না তাকিয়ে বলে।
.
আরফিন : সেদিন ভার্সিটিতে যে আমাদের পৌঁছে দিতে গেছিলো সে আমার ছোট বোনের হবু বর। আর যদি আপনি আমাকে বিয়ে করতে চান তাহলে কি করতে হবে তা আপনি নিশ্চয়ই জানেন। এখন আসি অনুষ্ঠানে অনেক কাজ আছে।( মুচকি হেসে চলে যায় )
.
অনুষ্ঠানে প্রায় সবাই এসে গেছে। সারা রোদ আর রোদ্রির হাত ধরে আস্তে আস্তে হেটে সিড়ি দিয়ে নামছে। ওদের তিন জনের দিকে সবাই এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।মাহিরের পৃথিবী থমকে দাঁড়ায় সারা কে দেখে।আজ সারা কে দেখে মাহির যখন সারা কে এভাবে সাজিয়ে দিতো সে দিনগুলোর কথা মনে পড়ে যায়। রোদ আর রোদ্রি কে ছোট কোনো রাজকন্যা আর রাজপুত্রের মতো লাগছে। মাহির এগিয়ে গিয়ে ওদের নিয়ে আসে। রোদ আর রোদ্রি কে একে একে সবাই শুভেচ্ছা জানায়। মাহির কিছুক্ষণ পর পর সারার দিকে তাকাচ্ছে। মাহির বুঝতে পারে না সারা তো এখন আর ওকে ভালোবাসে না তাহলে ওর পছন্দ মত সেজেছে কেনো? এমনকি খোঁপায় সাদা গোলাপ ও দিয়েছে।

To be continue…🍁

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here