ক্লিওপেট্রা পর্ব- ১১

#ক্লিওপেট্রা
পর্ব- ১১

অকস্মাৎ আমার এমন আচরণে ক্লিওপেট্রা হতভম্ব হয়ে গেল। আমার দিকে এগিয়ে আসতে আসতে বলল, ‘কী হয়েছে আহান? তুমি এমন করছো কেন?’

আমি ওকে জবাব না দিয়ে শোবার ঘর ছেড়ে ড্রয়িংরুমে এসে বসলাম। ক্লিওপেট্রা ক্বাহাফকে কোলে নিয়ে আমার পিছু পিছু আসলো। আমাকে বলল, ‘তুমি কি কোনো ব্যাপার নিয়ে আমার ওপর রেগে আছো?’

আমি জবাব দিলাম না।

মা এসে জিজ্ঞেস করল, ‘কী হয়েছে ক্লিওপেট্রা? ‘

ক্লিওপেট্রা বলল, ‘জানিনা মা। ক্বাহাফকে খাওয়াচ্ছিলাম। হঠাৎ আহান ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে ওর সুজির বাটিটা ছুড়ে মারল।’

মা রাগত স্বরে আমাকে বলল, ‘কী রে আহান তুই দিন দিন এমন বদরাগী হচ্ছিস কেন বলতো! আগে কত শান্তশিষ্ট ছিলি কেউ হাজার বকলেও মুখ ফুটে কিছু বলতিস না। আর এখন! কিছুই ঘটতে পারে না। কেউ কিছু তোকে বলতেও পারে না। পান থেকে চুন খসলেই তুই রেগে যাস!’

আমি মায়ের কথা কানে তুললাম না। টিভি অন করে খবর দেখতে লাগলাম। মা আমার হাত থেকে রিমোটটা কেড়ে নিয়ে বলল, ‘কী হল উত্তর দিচ্ছিস না কেন?’

আমি সোফা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে হেটে বাড়ির বাইরে বেরিয়ে এলাম। মা পেছন থেকে আমাকে ডাকতে লাগল।

একঘন্টা যাবৎ একটা টং দোকানের বেঞ্চিতে বসে আছি। পরিচিত দোকান। প্রায়ই এখানে বসে চা খাই। তাই হয়তো দোকানি জিজ্ঞেস করল, ‘ভাইজান আপনের কিছু হইসে? আপনে কি কিছু নিয়া রাইগা আছেন?’

আমি মাথা ঝাঁকিয়ে না বললাম। তবুও দোকানি অদ্ভুত দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল।

দুঃশ্চিন্তায় আমার মাথা ফেটে যাচ্ছে। কেন ক্লিওপেট্রা আর ওর বড় বোন অ্যানি আমার পরিবারটাকে ধ্বংস করে দিতে চায়? কেন হত্যা করতে চায় আমাদের? আমাদের সাথে কি ওদের কোনো পুরোনো শত্রুতা আছে! না এমন কিছু তো মনে পড়ছে না! মা আর অহনাকে তো কোনোদিন কারো সাথে কথা কাটাকাটি করতেও দেখিনি। আমারো তো কারো সঙ্গে অমন কিছুই নেই। তবে!
অতীত ঘাটতে লাগলাম আমি। কারো সঙ্গে আমাদের পুরোনো শত্রুতা ছিল কি-না ভাবতে লাগলাম। কিছুই এলো না মনে। আমাদের তো কারো সঙ্গে অমন শত্রুতা নেই!
হঠাৎ একটা কথা মনে পড়ল। একজন আছে! ওই লোকটা! তবে কি ওই লোকটার জন্য ক্লিওপেট্রা আমাদের ক্ষতি করতে চায়! ওই জঘন্য লোকই কি তবে দায়ী এর জন্যে!

এ পরিস্থিতির জন্য যদি ওই লোক দায়ী হয়েও থাকে তবে এতে আমাদের কী দোষ? আমরা কেন এর শাস্তি ভোগ করব!
ক্লিওপেট্রা আর ওর বোন অ্যানি আমাদের কোনোরকম ক্ষতি করার আগেই আমার কিছু একটা করতে হবে। দরকার পরলে আমিই নিজের হাতে ওদের শেষ করে দেবো।

বেঞ্চি থেকে উঠে দাঁড়িয়ে বাড়ির উদ্দেশ্যে হাটা ধরলাম।
বাসায় ফিরে কলিংবেল বাজাতেই ক্লিওপেট্রা দরজা খুলে দিল। ওকে থেকে আমার মাথায় আগুন জ্বলে উঠল। রাগটা যা একটু হালকা-পাতলা কমেছিল তা যেন মুহূর্তেই দ্বিগুণ পরিমাণে বেড়ে গেল।
ক্লিওপেট্রা আমাকে দেখে মুখটাকে এমন করে ফেলল যেন সে খুবই চিন্তিত আমাকে নিয়ে। বলল, ‘না খেয়ে কোথায় চলে গিয়েছিলে বলো তো! সেই সকালবেলা কোনোরকম একটা রুটি খেয়েছিলে। এত বেলা হয়ে গেল এখনো খাওয়ার নাম নেই! শুধু শুধু রাগ করে বাইরে গিয়ে বসে আছেন উনি।’

আমার হাসি পেল। মনে মনে হাসলাম আমি। ও ভেবেছিল ওর ছলনা বুঝি কখনোই ধরতে পারব না! এমন ভান করছে যেন কতোই না ভালোবাসে ও আমায়!

আমি ওকে ধাক্কা দিয়ে সামনে থেকে সরিয়ে ঘরের ভেতরে ঢুকে গেলাম। নিজের রুমে এসে বসতেই মা, অহনা এসে খাওয়ার জন্য ডাকতে লাগল। আমি বিরক্ত হয়ে বললাম, ‘প্লিজ তোমরা এখন আমাকে ডাকাডাকি করো না। আমার যখন খিদে পাবে তখন আমি নিজে থেকেই খেয়ে নেব।’

মা, অহনা থামলেও ক্লিওপেট্রা থামল না। আমার সামনে এসে যেন আবৃত্তি করতে লাগল, ‘খেতে এসো! খেতে এসো!’

আমি ক্লিওপেট্রাকে ধাক্কা দিয়ে রুম থেকে বের করে দিলাম। তখনই আমার চোখ পরল ড্রয়িংরুমে হাঁটতে থাকা মিথির ওপর। আর নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারলাম না রাগটাকে৷ জানিনা আমার কী হয়ে গেল! আমি হন্তদন্ত হয়ে রান্নাঘরে চলে গেলাম। রান্নাঘরে ঢুকতেই সর্বপ্রথম বটিটার ওপর আমার নজর পরল। ওটাকেই হাতে তুলে নিলাম। ড্রয়িংরুমে একপ্রকার দৌড়ে এসে শুয়ে জিরোতে থাকা মিথির ওপর বসিয়ে দিলাম এক কোপ। রক্ত ছিটকে এসে লাগল আমার শরীরে। থামলাম না। পরপর কয়েক কোপ দিতেই মিথির শরীরটা দু’ভাগ হয়ে গেল। গলগলিয়ে রক্ত বেরোতে লাগল। কিছুক্ষণ মিথির শরীরটা মৃদু লাফালো। একপর্যায়ে নিস্তেজ হয়ে পরে রইল ওর প্রাণহীন নিথর দেহটা।

এতক্ষণ আশেপাশে তাকাইনি। এখন ঘরে চোখ বুলাতেই দেখলাম অহনা, ভয়ে মাকে জড়িয়ে ধরে দূরে দাঁড়িয়ে আছে। মায়ের কোলে ক্বাহাফ ঘুমিয়ে। মা এমন ভাবে আমার দিকে তাকাল যেন আমি কোনো মানুষ নই। একটা অমানুষ! ক্লিওপেট্রা দরজার পাশে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে কাঁপছে। সবাই আমার দিকে ঘৃণা ও ভয় দুটো মিশ্রিত দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। আমি বটিটা কিনারে ছুড়ে ফেলে আমার ঘরে চলে গেলাম।
ফিরে এলাম হাতে করে চামড়ার লেদারের বেল্টটা নিয়ে। ক্লিওপেট্রাকে টেনে ঘরে নিয়ে এসে মাটিতে ফেলে দিলাম। রুম ভেতর থেকে ছিটকিনি লাগিয়ে এলাম। ক্লিওপেট্রা আমার দিকে ভয়ার্ত দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল। আমি সেদিকে গ্রাহ্য করলাম না। ওকে চমকে দিয়ে ওর ওপর আক্রমণ করে বসলাম। চামড়ার বেল্টটা দিয়ে ইচ্ছে মতোন মারতে লাগলাম ওকে। ও প্রতিবার ব্যাথায় ককিঁয়ে উঠতে লাগল। মা আর অহনা বাইরে থেকে দরজা ধাক্কাতে লাগল। আমার হাতে বেল্ট দেখেই হয়তো বুঝে নিয়েছে ওকে মারার জন্যই ঘরে টেনে এনেছি।
আমি থামলাম না। মারতেই থাকলাম ওকে। ক্লিওপেট্রা হাত দিয়ে আমাকে বাঁধা দেওয়ার চেষ্টা করল। আওয়াজ করে কাঁদতে কাঁদতে বলতে লাগল, ‘আমার খুব কষ্ট হচ্ছে আহান! আমার খুব কষ্ট হচ্ছে! আমি সহ্য করতে পারছি না। ‘
তবুও আমি থামলাম না। তাই হয়তো ও হাল ছেড়ে দিল। আর বাঁধা দেবার চেষ্টা না করে শূন্য দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে রইল। ওর চোখ বেয়ে অনবরত জল গড়াতে লাগল। কেন জানি আমি আর বেল্ট চালাতে পারলাম না ওর ওপর। হাত থেকে বেল্টটাকে ছুড়ে ফেলে চলে যেতে পা বাড়ালাম। হঠাৎই তখন ক্লিওপেট্রা আমার পা জড়িয়ে ধরল। পা জড়িয়েই কাঁদতে কাঁদতে বলল, ‘আমি কী করেছি আহান! কেন আমাকে এভাবে শাস্তি দিচ্ছো তুমি! প্লিজ বলো আহান! প্লিজ বলো!’

আমার আচমকা কী হল জানিনা। ঘটে যাওয়া সবকিছুর জন্য আফসোস করতে লাগলাম। সবচাইতে বেশি কষ্ট হতে লাগল ক্লিওপেট্রার জন্য। ওকে এভাবে অমানুষের মতোন মারলাম আমি! একটাবার কী জানতে চাওয়া উচিত ছিল না সত্যিটা কী!
আমি ক্লিওপেট্রার পাশে ধপ করে বসে পড়লাম। ক্লিওপেট্রা আমার সামনে এগিয়ে এসে আমাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে লাগল। আমি আর সহ্য করতে পারলাম না। ওকে বুকের সাথে পিষে ফেললাম। আমিও যে কখন কাঁদতে শুরু করেছি বুঝতে পারিনি। ক্লিওপেট্রা আমাকে আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরল। কাঁদতে কাঁদতে বলল, ‘প্লিজ বলো আহান আমি কী দোষ করেছি? তুমি না বললে আমি কীভাবে বুঝব!’

আমি ওকে জড়িয়ে ধরেই বললাম, ‘দোষ তো করেছি আমি। তোকে নিজের চাইতেও বেশি ভালোবেসে ফেলে। সেজন্যেই বোধহয় তুই আমাকে এভাবে ধোঁকা দিলি!’

কাঁদতে কাঁদতে ক্লিওপেট্রার হেঁচকি উঠে গেছে। ও ওভাবেই বলল, ‘একটাবার পরিষ্কার করে বলো আহান আমি কী করেছি!’

আমি ঠান্ডা গলায় বললাম, ‘আমাদের সবাইকে মেরে ফেলতে চাইছো কেন?’

ক্লিওপেট্রা আমার থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে হঠাৎ দূরে সরে গেল। তারপর বলল, ‘তুমি আমাকে এই দেড়বছরে এ-ই চিনলে!’

চলবে…

লেখা: #ত্রয়ী_আনআমতা

(এটা আমার তিন নম্বর গল্প। এর আগে একটা এগারো পর্বের আর একটা নয় পর্বের গল্প লিখেছিলাম। শুনেই হয়তো বুঝতে পারছেন লেখায় আমি কতোটা নতুন! অনেক অসঙ্গতি, ভুল-ত্রুটি আছে আমার লেখায়। আমি প্রতিনিয়ত শিখছি। ভুলগুলো সংশোধন করার চেষ্টা করছি। কিন্তু, এ গল্পটা প্রতিদিন দেওয়ায় সময়ই পাচ্ছি না পড়ার। তাই শব্দচয়ন উন্নতও হচ্ছে না। যেটুকু জানতাম ততটুকুতেই সীমাবদ্ধ হয়ে আছে। আবার বানান ভুলও বড় একটা ফ্যাক্টর। সঠিকগুলোও শিখতে পারছি না নতুন করে। রোজ গল্প দেওয়ার ফল।
সুতরাং ভুল-ত্রুটি চোখে পড়লে ধরিয়ে দেবেন। তবে সুন্দরভাবে। আক্রমনাত্মকভাবে নয়।)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here