খড়কুটোর বাসা পর্ব -১৬+১৭

#খড়কুটোর_বাসা
#পর্বঃ১৬
#Jhorna_Islam

একজন বেকার মানুষ বুঝে একটা কাজের মূল্য কতটা। কাজ ছাড়া বর্তমান জীবনে চলা যায় না। ছোট খাটো একটা কাজ পেতে ও কতো কা’ঠখ’ড় পো’ড়াতে হয়।

বেশি পড়াশোনা জানা শিক্ষিত মানুষ রা ও বেকার ঘুরে বেড়ায়। তাদের আশানুরূপ কাজ না পেয়ে ছোট খাটো কাজেই লেগে পরে।

ফলে অল্প পড়াশোনা জানা মানুষ গুলো আরো বি’পাকে পরে।

ইরহান প্রতিদিন একটা কাজ পাওয়ার উদ্দেশ্যে বাড়ি থেকে বের হয়।এমনভাবে আর কতোদিন চলবে? হাতে বেশি টাকা নেই।যা আছে হাতে গোণা কয়েকটা টাকা তা দিয়ে আর কয়দিন। এগুলো শেষ করলে একদিন ই শেষ করা যেতো।
কতো হিসাব করে চলে। ইরহান হয়তো আরো আগে ভেঙে ফেলতো এই টাকা শুধু যুথির জন্য হাতে এখনো কয়েকটা টাকা রয়েছে।

নয়তো ইরহান এতোদিনে নিঃশ্ব হয়ে বসে থাকতো। ঘরে চাল আছে ইরহান চাল কিনেছিলো দুই বস্তা। যদিও একটু ভালো চাল কিনতে চেয়েছিল। যুথি দেয়নি ইরহানকে। এতো দামী চাল কিনে খেতে হবে না।

যেই দাম দিয়ে এক বস্তা কিনতো সেই দামের সাথে আর কিছু টাকা মিলিয়ে একটু মোটা চালই যেনো কিনে ফেলে দুই বস্তা কারণ ঘরে চাল থাকলে লবণ দিয়ে এক মুঠো ভাত খেলে শান্তি। এতো দাম দিয়ে চিকন চালের ভাত খেতে হবে না। যারা মোটা চালের ভাত খায় তারা ও তো মানুষ। হয়তো দুয়েক দিন একটু কষ্ট হবে তারপর আস্তে আস্তে ঠিক হয়ে যাবে।

কয়েকদিন চিকন চালের ভাত খেয়ে পরে না খেয়ে থাকার চেয়ে একটু কষ্ট করে মোটা চালের ভাত খাওয়া ভালো।

চালের সমস্যা না হলেও নিত্য প্রয়োজনীয় কতো কিছুরই তো প্রয়োজন পরে। সবই আস্তে আস্তে ফোরাচ্ছে। লেখিকা ঝর্ণা ইসলাম। ইরহান জানে কিন্তু তার যুথি রানী তা বুঝতে দেয় না।

ইরহান যখন যুথিকে জিজ্ঞেস করে সব আছে কিনা।কিছু লাগবে কিনা যুথি তখন সুন্দর করে বলে সব আছে। কিচ্ছু লাগবে না এখন।

ইরহান বুঝে যুথি কতোটা চেষ্টা করছে সংসারে যেনো দুইটা টাকা ও বেশি না লাগে। কি পরিমাণ হিসাব করে যে চলে মেয়েটা।

যতোই হিসেব করে চলা হোকনা কেন এভাবে আর কতোদিন? বসে বসে খেলে তো রাজার ধ’ন ও ফুরিয়ে যায়। আর এখানে তো সামান্য টাকা মাত্র।

ইরহান প্রতিদিন একটা কাজের উদ্দেশ্যে বাড়ি থেকে বের হয়। আপাতত ছোট্ট একটা কাজ হলেই চলবে।অথচ কোথাও একটা ছোট খাটো কাজের দেখা ও মিলে না। সব জায়গায় পূর্ব অভিজ্ঞতা লাগবে। দুয়ারে দুয়ারে অনেক ঘুরে ও একটা কাজের সন্ধান পায় নি।

বিপদের সময় পরিচিত লোক গুলো ও অপরিচিত হয়ে যায়। কাজের সময় কাউকে পাওয়া যায় না। এক সময় যারা ইরহানের থেকে সাহায্য পেয়েছে।আজ অনেক বলেও তাদের থেকে সাহায্য পাওয়া যায় না। মুখের উপর বারণ করে দেয়।

অথচ এই লোক গুলো ইরহান দেশের বাইরে থাকা অবস্থায় ফোন দিয়ে বলতো ইরহান ভাই এটা দিতে পারবা ওটা দিতে পারবা।কই তখন তো ইরহান কারো থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয় নি।বরং তার হাত খরচের টাকা থেকে ওদের দিতো।আর নিজে কষ্ট করে চালিয়ে নিতো।আর এখন সবাই মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে।

আজ সকাল সকাল খেয়ে একটা কাজ পাওয়ার উদ্দেশ্যে বাড়ি থেকে বের হয়েছে। হাতে একটা ব্যাগ কাজ না পেলে এটা তাকে করতেই হবে। ঘরে যে আজ একটা তরকারি ও নেই সেটা ইরহানের জানা আছে।

কতোদিন এভাবে বাচিয়ে বাচিয়ে চলা যায়? মেয়েটা এখন একটু শুকিয়ে গেছে। ভালো মন্দ না খেতে পারলে তো শুকাবেই।ইরহান কিছু করতে পারে না। তার পৃথিবীর সবচেয়ে অসহায় মানুষ মনে হয় নিজেকে।

সকাল থেকে অনেক জায়গায় ঘুরেও একটা কাজ পায়নি।হয় অভিজ্ঞতা লাগবে নয়তো এসব ছোট কাজেও ঘুষ দেওয়া লাগবে।

অনেক ঘুরে একজনের মাধ্যমে একটা কাপড়ের দোকানের সন্ধান পায় ইরহান। ঐ দোকানে একজন লোক লাগবে।আগের যে ছিলো সে কম টাকা বেতন বলে চলে গেছে।

কম টাকা বেতন এটা ইরহান মাথায় রাখলো না।এখন তার কাজের প্রয়োজন ব্যস এই কাজ টাই তার কাছে মহামূল্য বা’ন। ইরহান দ্রুত গিয়ে ঐ দোকানে যোগাযোগ করে।

ইরহান কে দেখে লোকটার পছন্দ হয়।ইরহান কে রাখার জন্য রাজি হয়। মাসে বেতন সাত হাজার টাকা। ইরহান দ্বিমত করেনি।।এই সাত হাজার টাকাই ইরহানের কাছে এখন সাত লাখ টাকা।

সবই ঠিক আছে কিন্তু ইরহান কে এই মাসের পর থেকে কাজে লাগতে হবে।এই মাসের দশ দিন চলে গেছে তাই এখন নিতে পারবে না। মাসের শুরুতে এসে কাজে লাগতে হবে।

ইরহান অবশ্য বলেছে কয়েকটা টাকা দিলেই হবে একটু চেষ্টা করে এখনই যেনো নেয়।মাত্র তো দশ দিন গেছে। এটা তো তেমন বেশি দিন না। লোকটা তাতে বেশ বিরক্ত প্রকাশ করে। চোখ মুখ কোচকে ফেলে বলে,,নিতেছি এই অনেক। এখন সারাদিন আমার পায়ে ধরে বসে থাকলেও নিবো না। আগামী মাস থেকে নিবো বলছি মানে আগামী মাস থেকেই।

লোকটার কথার ধরণে ইরহান খুবই কষ্ট পায় এবং অপমানিত বোধ করে। তাও মুখ ফোটে কিছু বলতে পারেনি।কিইবা বলবে। চুপচাপ সব সহ্য করার সময় এখন।পেটের দায়ে সব মুখ বুঁজে সহ্য করে নিতে হবে। অপমান গুলোও ঢুক গিলে ফেলতে হবে।

এখন কতো কিছু সহ্য করতে হবে।কথায় আছে না,,

“হাতি কাঁদায় পরলে চা’মচিকা ও লা’থি মারে।”

পরের মাস থেকে কাজে আসবে বলে বেরিয়ে যাওয়ার সময় খেয়াল হয় ইরহানের হাতের ব্যাগটার কথা।।

তাই ইরহান হাতে করে সকালে নিয়ে আসা ব্যাগটা সামনে ধরে। এতে ইরহানের তিনটা শার্ট আর প্যান্ট রয়েছে।ঐ দেশ থেকে নিয়ে এসেছিল পরার জন্য। নতুন ই আছে এই তিনটা এখনো পড়া হয়নি।

এগুলো ই বেঁচে দিবে।এই গুলো বেচার টাকা দিয়ে আপাতত কয়েকদিন চলে যাবে দুইজনের।

বাড়িতে ইরহানের আরো চার সেট আছে।ঐগুলা পড়া হয়েছে। ঠিক করে নিয়েছে দুইটা বাড়িতে পরবে আর দুইটা কাজে পরে আসবে।

যুথি অবশ্য জানে না ইরহান যে তার পোশাক নিয়ে এসেছে বেচার জন্য। জানলে হয়তো মেয়েটা অনেক কষ্ট পেতো।

দোকানির সামনে নিয়ে ইরহান জামা গুলো বের করে দেখায় এবং বলে বিক্রি করবে।

লোকটা জামা গুলো ভালো করে দেখে।মুখ দেখে মনে হচ্ছে অনেক পছন্দ হয়েছে।

ইরহান কে জানায় লোকটা নিজের জন্যই কিনতে চায় জামাগুলো। বিদেশি জামা তার উপর কোয়ালিটি অনেক ভালো।

ইরহান কে বলে,, জামাগুলো হাজার টাকা দিবে।অথচ জামাগুলো ইরহান তিন হাজার টাকা দিয়ে কিনেছে। আরেকটু বাড়িয়ে দিতে বললে লোকটা পনেরোশো টাকায় রাজি হয়। এর চেয়ে বেশি একটা টাকা ও দিবে না জানায়।অগত্যা কি করার এতেই রাজি হয়ে যায় ইরহান। অন্য কোথাও বেচার চেষ্টা করলে হয়তো আরেকটু বাড়িয়ে বেচতে পারতো।কিন্তু লোকটার থেকে নিয়ে গেলে যদি আর কাজটা না দেয়।তাই এতেই রাজি হয়ে যায়

তারপর বাজারে চলে যায়। পাঁচশো টাকা হাতে রেখে আর বাকি টাকার মাঝে সব বাজার সদাই করে নেয় ইরহান।

———————————–
যুথি ভাত আর শাকপাতা রান্না করে রেখেছে সেই বিকেলে রাতে খাওয়ার জন্য।

সন্ধা হয়ে গেছে। আজান ও দিয়ে দিয়েছে কিছু সময় আগে। ইরহান যে সেই সকালে বের হয়ে গেছে এখনো পর্যন্ত বাড়ি ফিরে নি।

যুথি কিছু সময় পর পর উঁকি দিয়ে গেইটের দিকে তাকায় যদি লোকটা আসে।কিন্তু আসেনা।

যুথি মনে মনে ভাবছে কোথায় চলে গেলো লোকটা।ভিতরে অস্থির হয়ে পরছে ক্ষনে ক্ষনে কল যে দিবে তার ও উপায় নেই। মোবাইলে টাকা নেই।

ইরহানের মোবাইলে ও যে টাকা নেই সেটা আর যুথির বুঝতে বাকি নেই। নয়তো এতক্ষনে একটা কল দিয়ে নিশ্চয়ই জানাতো।ইরহান যে মোবাইলে টাকা ভরে টাকা নষ্ট করবে না এটাও যুথি খুব ভালো করেই জানে।

যুথি আবার গিয়ে গেইটের বাইরে উঁকি ঝুঁকি মেরে আসে।নাহ আসছে না।ঘরে এসে ছোট্ট জানালাটার পাশে দাঁড়ায় বকুল গাছটার দিকে একমনে তাকিয়ে তাকিয়ে ভাবতে থাকে।

সকালে খাওয়ার সময় পোলাও মাংসের গন্ধ দুইজনেরই নাকে এসেছে। বাতাসে ঐ বাড়ি থেকে এসেছে। অথচ তারা দুইজন শাকপাতা দিয়ে খেতে বসেছে। ইরহান কি সুন্দর চুপচাপ এগুলো দিয়েই খেয়ে উঠে গেছে। খাবার নিয়ে একটা টু শব্দ ও করে না।যুথি যা দিবে চুপচাপ খেয়ে উঠবে।

যার টাকা সে শাকপাতা দিয়ে খায় আর ওরা মাছ,মাংস খায়।ভাবতে ভাবতে যুথির দুই চোখ ভরে উঠে।

চোখের পানি গাল বেয়ে টুপ টুপ করে নিচে পরতে থাকে। খারাপ মানুষ গুলোই দিন শেষে অন্য কে ঠ’কিয়ে ভালো থাকে।

যুথির ভাবনার মাঝেই হুট করে পিছন থেকে কেউ জড়িয়ে ধরে। যুথি কিছু টা ঘা’বড়ে যায়। পরমুহূর্তেই বুঝতে পারে এটা আর কেউ নয় তার বোকা পুরুষ।

তারাতাড়ি করে চোখের পানি মুছে।

চুলে কিছু একটা গুঁজে দিচ্ছে ইরহান যুথি হাত দিয়ে বুঝতে পারে একটা গা’জরা।

ইরহান যুথিকে নিজের দিকে ঘুরিয়ে গলায় একটা পুতির মালা পরিয়ে দেয়।হাতে লাল রেশমি চুরি পরিয়ে দেয়।

এগুলা কি?

গরিবের ভালোবাসা!

এসব কেন আনতে গেছেন টাকা খরচ করে?

আমার রানীকে তো দামি উপহার দেওয়ার এখন আমার সামর্থ্য নেই তাই এই সামান্য একটু উপহার। আর এখানে তেমন টাকা খরচ ও হয়নি একশো টাকা মাত্র । তোমার পছন্দ হয়নি তাই না?

এসব কি বলেন আপনি? আমার কাছে এগুলো পৃথিবীর সবচেয়ে দামী গয়নার চেয়ে ও মূল্যবান। এর মূল্য আমার কাছে অনেক।

ইরহান যুথির কপালে একটা চুমু খায়। একদিন তোমায় আমি সব দিবো যুথি রানী।এখন এই গরিবের ভালোবাসা টুকু নেও শুধু।

যুথি ইরহানের দিকে তাকিয়ে ব’লে উঠে,,,,

“আমি চাই না বাড়ি গাড়ি আর।
তোকে পেলে চলবে আমার!
অল্প আলো থাকনা ঘরে,বিলাসিতার কি দরকার?”
#খড়কুটোর_বাসা
#পর্বঃ১৭
#Jhorna_Islam

জায়গা ভাগাভাগি নিয়ে তুমুল আলোচনা চলছে ইমন আর ইশানের মাঝে। তারা চায় দুইজনের নামে যেনো সব জায়গা সম্পত্তি লিখে দেয় তাছলিমা বানু।

সব অবশ্য চলবে আগের মতোই।তবে জায়গা ভাগাভাগি করে ফেলতে চায় এখন।যার যার ভাগ সে বুঝে নিতে চায়।

দুই ভাই চায় নিজেদের নামে সব নিয়ে নিতে এখনই।দুই ভাই আলোচনা করে তারপর তাছলিমা বানুর কাছে গিয়ে বলে,,যেনো তাদের নামে এখনই লিখে দেয় সব।

তাছলিমা বানু সব শুনে ছেলেদের দিকে তাকিয়ে বলে,, তোরা এতো পা’গল হয়েছিস কেন?

লিখে দিলেই কি না দিলেই কি এসব তো তোদেরই।আমার সব কিছু মানেই তোদের দুইজনের। বুঝলাম না তোদের মাথায় এখন লিখে দেওয়ার ভূ’ত চাপলো কেন?

ইমন বলল,,মা তোমার ভালোর জন্য বলছি, বয়স হয়েছে তোমার এসব নিয়ে চিন্তা করলে অসুস্থ হয়ে পরবা।তাছাড়া এসব দেখাশোনা তো আমাদের ই করতে হবে তাই লিখে দিতে সমস্যা কি?

কোনো সমস্যা নেই তো এসব তো তোদের জন্যই করেছি।

তাহলে?

কিছু দিন যাক দিয়ে দিবো।আর এসব লিখে কেন দিতে হবে বুঝলামনা।তোরাই তো সব পাবি। সব সমান সমান ভাগ পাবি তাহলে?

সমান ভাগ পেলেও লিখে দিলে ভালো কোনো ঝামেলার সৃষ্টি হবে না।

তাছলিমা বানু বলে বুঝলাম।তোরা যেভাবে চাবি সেই ভাবেই হবে।

ইশান বলে,,খুব তারাতাড়ি যেনো সেই দিন টা আসে মা।

তোরা কি জায়গা জমি বেচে দেওয়ার চিন্তা ভাবনা করছিস নাকি? একদম ভুলেও এমন চিন্তা মাথায় আনবি না।

ইমন ইতস্তত করে বলে,,আরে মা কি বলছো জায়গায় জমি বেচবো কেন?

দরকার পরলে এক বেলা না খেয়ে থাকবি তবুও জায়গা বেচার কথা কখনো মাথায় আনবি না। যার জায়গা আছে মানেই তার নিরাপদ আশ্রয় আছে। মাথা গোঁজার ঠাঁই থাকলে দুনিয়ায় টিকে থাকা যায় বুঝলে?

দুই ভাই মিলে এবার কিছু একটা করার চেষ্টা কর।এতোদিন তো ঐ ইরহান ছিলো।আমাদের সব খরচা সে চালাতো।এখন তো নাই যা টাকা আছে আর কয়মাস যাবে। এই টাকা গুলো শেষ হলে পরে কি করবো? পরেতো ইরহানের এখন যা অবস্থা তখন আমাদের ও হবে।তাই হাতের টাকা পয়সা শেষ হয়ে যাওয়ার আগেই কিছু একটা করার চেষ্টা কর।

ইশান কথাটা শুনে চোখ মুখ কোচকে ফেলে। মা ঐ ইরহানের সাথে আমাদের তুলনা দিতে আসবে না কখনো।

ইরহান পরের কা’মলা গিরি খাটার জন্য জন্ম নিয়েছে। তাকে ঐ সবেই মানায়। আমরা কোনো পরের কাজ করবোনা।

অন্য লোক কেনো আমাদের হুকুম দিবে? আমরা এমন কিছু করবো যাতে করে আমরা অন্য কে হুকুম দিবো পায়ের উপর পা তুলে।

ইমন ভাই আর আমি তাই সিদ্ধান্ত নিয়ে বলছি তোমাকে যেনো আমাদের নামে সব লিখে দেও।পরে ঐ জায়গা বিদেশি কোম্পানির লোকদের কাছে ভাড়া দিবো। শুধু টাকা আর টাকা আসবে।তারপর দুই ভাই সারাজীবন নিজেদের পায়ের উপর পা তুলে বসে বসে খাবো।

ইমন ও ইশানের সাথে তাল মিলায়।হ্যা মা ইশান ঠিকই বলেছে। ঐ জায়গা বিদেশি কোম্পানিদের কাছে ভাড়া দিবো। টাকার কু’মির তৈরি হবে।এই গ্রামে কেন আশে পাশে সকল গ্রামে সবচাইতে বেশি ধনী হবো আমরা দুই ভাই। লোকে আমাদের মান্য করে চলবে।

তাছলিমা বানু দুই ছেলের দিকে তাকিয়ে বলে,, তোরা ভেবে চিন্তে সিদ্ধান্ত নিবি এবার।একবার কিন্তু ধো’কা খাইছস।এইবার এমন হলে পথে বসা লাগবো।

ইশান তাছলিমা বানুর হাত ধরে বলে,, কিছুই হবে না মা।এইবার কোনো ভুল হবে না।

ঠিক আছে তোরা যা ভালো বুঝিস।কিছু দিন সময় দে তারপর তোদের নামে সব করে দিবো।বলেই তাছলিমা বানু রুমে চলে যায়।

ইমন আর ইশান দুইজন দুইজনের দিকে তাকিয়ে হেসে বলে,, আমরা আরো বড়লোক হয়ে যাবো।

————————————

যুথি ক্লাস টেন পর্যন্ত পড়াশোনা করেছে। সে মধ্যে পর্যায়ের ছাত্রী ছিলো।

দাদি তো বাড়িতে ছাড়া অন্য কোথাও কাজ করতে দিতো না।তাই বাড়ির কাজ শেষ করে স্কুলে চলে যেতো। এই বাড়িতে কেউ অবশ্য জানেনা যুথি ক্লাস টেন পর্যন্ত পড়াশোনা করেছে।

হুট করে একদিন ইরহানের কাছে আবদার ধরে সে কাজ করবে।

ইরহান কে রাগানোর জন্য যুথির এই একটা কথাই যথেষ্ট ছিলো।

“তোমার মাথা খারাপ হয়ে গেছে যুথি।আমি বেঁচে থাকতে তুমি গিয়ে কাজ করবে? ”

আপনি আমার কথাটা আগে শুনুন বোকা পুরুষ।

কিছু শুনতে হবে না যুথি।তোমার কোনো দোষ নেই। আমিই স্বামী হিসাবে ব্যর্থ।তোমার চাওয়া পাওয়া কিছু পূর্ণ করতে পারছিনা।তোমার কাজ করতে চাওয়া টা অস্বাভাবিক কিছু না। আসলে আমার মরে যাওয়া উচিত।

যুথি ইরহানের মুখে হাত দিয়ে থামিয়ে দেয়। বোকা পুরুষ চুপ করুন। এই কথাটা মুখে ও আনবেন না। আপনি না থাকলে যে এই যুথির ও অস্তিত্ব বিলীন হয়ে যাবে। আপনিই তো আমার সব। কে বলেছে আপনি স্বামী হিসাবে ব্যর্থ? আমার চোখে পৃথিবীর সেরা স্বামী আপনি।

আপনার কিছু হয়ে যাওয়ার আগে যেনো আমার কিছু হয়ে যায় গো।

ইরহান এবার যুথিকে থামিয়ে দেয়। এসব কি কথা যুথি রানী?

ঠিকই বলেছি।

তোমাকে কে বলেছে ঠিক বলতে? এসব কথা মুখে আনবে দূরে থাক ভাবনা তে ও যেনো না আসে।

কেন আসবে না? আপনি বলেন সময় ও আমার খারাপ লাগে।আপনি বলতে পারলে আমি কেনো বলবো না?

ঠিক আছে কেউই এসব কথা বলবো না আমরা।

হুম। এবার আমার কথাটা আগে মন দিয়ে শুনুন। কিছু দূরে একটা স্কুল আছে না? কিন্টারগার্ডেন যে ঐটায় চাকরি করতে চাইছিলাম।আমি তো বাড়িতেই বসে থাকি সারাদিন। তেমন কোনো কাজ ও নেই। আপনি ও দোকানে লেগেছেন সারাদিন বাড়িতে থাকেন না। আমার একা একা সময় কাটেই না।তাই ভাবছিলাম ঐটায় বাচ্চাদেরকে পড়ানোর দায়িত্ব নিতে। আমার সময় ও কেটে যাবে কিছু টাকা ও আসবে।

আপনি একদম না করবেন না।এই সংসারটা আপনার একা না আমারও। আপনি এতো কষ্ট করতে পারলে আমি কেন পারবো না? তাছাড়া বাচ্চাদের পড়ানো তো খারাপ কিছু না তাই না?

ঠিক আছে এটায় বাঁধা দিবো না আমি। কিন্তু ওরা কি তোমায় নিবে?

কেন নিবে না? মেট্রিক পাশ করলেই কিন্টার গার্ডেনে চাকরি করা যায়। তাছাড়া আমি একজনের সাথে কথা বলেছি।ঐ যে রাস্তার ঐ পাশে বাড়ি মেয়েটা সিমা। ও ঐখানে চাকরি করে এখন একটা নতুন টিচার লাগবে সে আমাকে বলতেছে করার জন্য।

কিন্তু তোমার পড়াশোনা?

আপনার কি আমাকে মূর্খ মনে হয়? ব্রু নাচিয়ে জানতে চায় যুথি।

না মানে,,,,,

আমি এস.এস.সি দিয়েছি।এটা আপনাদের বাড়ির কেউই জানে না। আমিই বলিনি। দাদিকে নিষেধ করেছিলাম বলতে।ভাগ্যিস করেছিলাম নয়তো ঐ কু’টনি বুড়ি তো আমায় আপনার বউই করতো না। লেখিকা ঝর্ণা ইসলাম। আমি আমার এই বোকা পুরুষ আর তার ভালোবাসা কই পেতাম তাহলে?

এই বোকা পুরুষের কাছে শুধু ভালোবাসা পাচ্ছো না কষ্ট ও পাচ্ছো।

আপনার ভালোবাসার কাছে এসব কষ্ট তুচ্ছ। এবার বলেন কি করবো।

তাহলে আমি আর কি বলবো? আমার যুথি রানী বাচ্চাদের যুথি ম্যাডাম হয়ে যাক।

তারপর দুইজন ই এক সাথে হেসে উঠে।

————————————
একদিন রাতে দোকান থেকে আসার সময় হুট করেই একজনের সাথে দেখা হয়ে যায় ইরহানের।

লোকটা বিদেশ ইরহানের তত্বাবধানেই কাজ করে।জিজ্ঞেস করে জানতে পারলো লোকটা ও ছুটি তে এসেছে। কয়েক গ্রাম পরই লোকটার বাড়ি।এই দিকে বোনের বাসায় এসেছে বেড়াতে।

ইরহান কে দেখে লোকটা কি খুশি। ইরহান কে জোর করে ধরে নিয়ে দোকানে বসায়। এটা ওটা কতো কিছু দিতে বলতেছে ইরহান কে খাওয়ার জন্য।

ইরহান সব মানা করে দেয়। শেষে এক কাপ চা খেতে রাজি হয়।

চা খেতে খেতে দুইজনের আলাপ চলে।

তা স্যার আপনার ছুটির আর কয়দিন আছে?

আছে অনেক দিনই।

— আমি শুনেছিলাম আপনি নাকি আর ফিরবেন না?

— আমারও তেমন ইচ্ছে ই ছিলো।দেশে কিছু একটা করবো ভেবে ছিলাম।তারপর সব উল্টো হয়ে গেলো।থাক সেসব কথা। এখন ভাবতেছি ঐ দেশে আবার পাড়ি জমাবো।

আরো কয়েকমাস ছুটি রয়েছে। তা বাতিল করে খুব শিঘ্রই চলে যাবো।

ঐসময় ইশান সিগারেট কিনার জন্য ঐ দোকানেই গিয়েছিল। ইরহানের আবার দেশের বাইরে যাওয়ার কথাটা তার শুনতে একটুও ভুল হয়নি। কিছু সময় দাড়িয়ে থেকে ইরহানের পিছন থেকে নীরবে প্রস্থান করে।

ইশান ইরহানের পিছনে ছিল বলে,, ইরহান ইশানকে দেখেনি।সে লোকটার সাথে আরো নানান বিষয়ে কথা বলতে থাকে।

#চলবে,,,,,
#চলবে,,,,,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here