খেলাঘরে তুমি আমি পর্ব -০৭

#খেলাঘরে_তুমি_আমি
পর্ব—০৭
কাহিনী ও লেখা : প্রদীপ চন্দ্র তিয়াশ।

রাত বারোটার দিকে দোয়ার কাছে একটা ফোনকল আসে।ফোনটা রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে একটা কন্ঠ ভেসে আসলো।

—যা বলেছিলাম,ঠিকঠাক করতে পেরেছো তো?

—হ্যাঁ,পারমিতা ম্যাম।আমি আপনার হাসবেন্ডকে কথার জালে ভুলিয়ে নিজের বাসায় নিয়ে এসেছি।

—গুড জব।সেটা আমি অর্ণবের কথা শুনেই বুঝতে পেরেছি।খুব ভালো কাজ করেছো তুমি!

–আচ্ছা ম্যাম আমি রাখছি এখন,অর্ণবের ঘুম ভেঙে যেতে পারে যেকোনো সময়।

—রাখি মানে?যে কাজটা বলেছি সেটা কখন হবে?আজ রাতের ভেতরেই শেষ করে দাও ওকে।এই সুযোগ আর কোনোদিন হাতে আসবে না আমার।

—আচ্ছা ঠিক আছে।আশা করি আজ রাতের ভেতরেই আপনার কাজ হয়ে যাবে।

–দেখো আমি কিন্তু আজকে রাতের ভেতরেই কাজটা হওয়া চাই।একটু ভেবে দেখো অর্ণব যে আজ তোমার সাথেই আছে এটা আমি তুমি আর অর্ণব ছাড়া দুনিয়ার কেউ জানে না।ওকে মে রে লা শ টা লুকিয়ে রাখলে কেউ খুঁজে বের করতে পারবে না।

—সেসব না হয় বুঝলাম,কিন্তু ওনার মা।সে তো হন্যে হয়ে খুঁজবে নিজের ছেলেকে,তখন কি করবেন আপনি?

—সেটা আমি দেখো নেবো,তোমাকে যে কাজটা করছি সেটা করো।আমি কিন্তু সকালবেলা কোনো এক্সকিউজ শুনবো না তোমার।

—আচ্ছা ঠিক আছে,আমি একটু পরেই নিজের কাজ শেষ করছি।

পারমিতা কথা শেষ না করতেই রিসালাত জেগে উঠলো।উঠেই কাঁদতে লাগলো ও।ফোনটা রেখে পারমিতা এগিয়ে যায় ওর দিকে।দুধের ফিডারটা ওর মুখের কাছে নিয়ে পরক্ষণেই ফিরিয়ে আনলো।এতে রিসালাত আরো জোরে কান্না জুড়ে দিলো।

—কি হয়েছে বাবু,খুব ক্ষিধে পেয়েছে তাই না।একটু সহ্য করো,কারণ এখন থেকে যেটা চাইবে সেটা যে পাওয়া হবে না তোমার।তাই অভ্যেস করা শুরু করো।এই পৃথিবীতে যে মানুষটা সবথেকে বেশি ভালোবাসে তোমায় তাকে আমার লোক চিরতরে উপরে পাঠিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করছে।এরপর আর কে টেক কেয়ার করবে তোমার?আমি ছাড়া যে আর কেউ থাকবে না।তোমার মাকে মেরেও যে রাগ আমি মেটাতে পারিনি সেটা তোমার দ্বারা পূরণ করবো।

একটু পরে ঘরের ভেতরে মা ঢুকে পড়ে।মা পারমিতাকে উদ্দেশ্য করে বলতে লাগলো।

—একি বৌমা,তুমি দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে কি করছো?বাচ্চাটা কান্না করছে দেখতে পাচ্ছো না,নাকি?

—দেখতে তো পাচ্ছি মা,কিন্তু কি করবো বলুন।আমাকে তো ভালো লাগে না ওর,এই বয়সেই বুঝে গেছে যে সৎ মা হই আমি ওর।

—তোমার কি মাথা খারাপ হয়ে গেছে,কি বলছো একটা বাচ্চার নামে,ওর কি এতোই বুঝ হয়েছে।

—আমি তো পারছি না,আপনিই সামলান।

—হ্যাঁ,এই কারণেই তো তোমায় এই বাড়ির বৌ করে এনেছিলাম।দিন দিন তোমার আচার ব্যবহার দেখে অবাক না হয়ে পারছি না বৌমা।

—এই আপনি যান তো এখান থেকে,নিজের নাতিকে নিয়ে আমার চোখের সামনে থেকে সরে যান।নিতে পারছি না আপনাদের কাউকে।

মা রিসালাতকে কোলে তুলে নিয়ে চলে গেলো।পারমিতা রাগবশত রিসালাতের ফিডারটা তুলে ময়লার ঝুড়িতে ছুড়ে মারে।

—ভুল করেছি,চরম ভূল করেছি।উচিত ছিলো দুধের সাথে বি ষ মিশিয়ে দেওয়া।বাপের সাথে ছেলেরও পরপারের টিকিট কাটা হয়ে যেতো।শেষে কিনা এই মহিলার কাছেও কথা শুনতে হচ্ছে।কতো প্ল্যান করলাম অর্ণবের কাছে এই মহিলাকে খারাপ প্রমাণ করার জন্য,কিন্তু অর্ণব।ওর ভেতরে কোনো প্রতিক্রিয়াই নেই।নয়তো সেদিন কিচেনে নিজের মায়ের আর আমার কথাগুলো যা ঐ মহিলাকে কায়দা করে বলতে বাধ্য করেছিলাম,তারপর ড্রয়ারে আমার রেখে দেওয়া বিষের শিশি যা বিয়ের দিন আমি নিজের হাতে মিশিয়ে দিয়েছিলাম ওর খাবারে এসব দেখেও চুপ রইলো কিকরে?ওর মনে কি একটিবারের জন্যেও সন্দেহ হয়নি সবকিছুর পেছনে ওর মা আছে,মাই ওর ক্ষতি করছে।যাই হোক,আজকের পরে এমনিতেও আর কোনোকিছু ভাবার মতো অবস্থায় থাকবে না ও।দোয়া এতোক্ষণে হয়তো নিজের কাজ করে ফেলেছে।এখন শুধু অপেক্ষা সকাল হবার।

গুড বাই অর্ণব,যাও নিজের স্ত্রীর সাথে সাক্ষাৎ করো গিয়ে।আর আমার প্রতি কৃতজ্ঞ থেকো,এতো বড়ো একটা সুযোগ আমার দয়াতেই কিন্তু পেলে তুমি।

এই বলে পারমিতা হেসে উঠলো,ওর অট্টহাসির শব্দে পুরো ঘর আন্দোলিত হয়ে উঠে।




এদিকে দোয়া একটা ধারলো ছুরি নিয়ে আমার ঘরের দিকে এগিয়ে যেতে থাকে।ঘরের দরজাটা খোলা রেখেই ঘুমিয়েছিলাম।ও ধীরে ধীরে এসে আমার বিছানার সামনে দাঁড়ায়।তারপর নিঃশব্দে বিছানার ওপরে উঠতে লাগলো।ধারালো ছুরিটা আমার বুক বরাবর তাক করে ধরে।ওর নিঃশ্বাস ক্রমেই দ্রুত থেকে দ্রুততর হচ্ছে।জীবনে প্রথম কারোর প্রান নিতে চলছে তাই কাজটা খুব সহজে হবে না এটা স্বাভাবিক।ছুরির অগ্রভাগ আমার টিশার্ট স্পর্শ করতেই ঘুম ভেঙে গেলো আমার।চোখ মেলেই দেখি দোয়া বসে আছে আমার সামনে।ও তৎক্ষনাৎ ছুরিটা সরিয়ে ফেললো।আমি ঘুমঘুম অস্পষ্ট স্বরে বলে উঠলাম।

—একি দোয়া তুমি এতো রাতে এখানে কি করছো?

—কিছু না,কিছু না এমনিই।

—তোমার হাতে কি ওটা…?একটু দেখি তো আমি।

—কিছু না আমার হাতে।তুমি ঘুমিয়ে পড়ো,ঘুমিয়ে পড়ো তুমি।

—আমি স্পষ্ট দেখলাম তুমি কিছু একটা লুকোলে,দেখাও আমায় কি আছে হাতে।আর তুমি এতো রাতে আমার কাছে কেনো এসেছো বলো,

—কেনো এসেছি জানতে চাও,বলছি তবে।আমি ভালোবাসা পেতে এসেছি তোমার,তোমার আদর পেতে খুব ইচ্ছে করছে আমার।

এইবলে দোয়া আমার বুকের ওপরে ঝাঁপিয়ে পড়লো।ওর ঠোঁটটা আমার ঠোঁটের কাছে নিয়ে আসে।

—একদম ঠিক হচ্ছে না কিন্তু,তুমি এগুলো করতে পারো না আমার সাথে।আমি একজন বিবাহিত পুরুষ,একটা বাচ্চা আছে আমার।এসব সম্ভব নয় আমার দ্বারা।

—আমি কোনোকিছু শুনতে চাই না,শুধু তোমাকে চাই আজকের জন্যে।প্লীজ আপন করে নাও আমায়,প্লিজ অর্ণব।

দোয়া ইতিমধ্যে তার হাতটা আমার টি শার্ট ভেদ করে বুকের ওপরে নিয়ে গিয়েছে।ওর কোমল হাতের স্পর্শে আমি যেনো হারিয়ে যেতে লাগলাম।উত্তেজনায় চোখদুটো বন্ধ হয়ে আসে আমার।একটু পরে হঠাৎ সবকিছু কেমন জানি থেমে গেলো,চোখ মেলতেই দেখতে পাই কেউ নেই আমার সামনে।আমার বুঝতে বাকি রইলো না দোয়া সুযোগের ব্যবহার করে পালিয়ে গিয়েছে।ও যে উদ্দেশ্য নিয়ে আমার কাছে এসেছিলো সেটা পুরণ করতে পারেনি।জানি না মাঝরাতে ঘুমটা না ভাঙলে কি হতো আমার সাথে।কিন্তু ও এতো রাতে আর এভাবে কেনো আসলো আমার কাছে বুঝতে পারছি না।



পরেরদিন সকালবেলা।ফোনের রিংটোন এর আওয়াজে ঘুম ভাঙলো আমার।স্ক্রিনের দিকে তাকাতেই চোখের ঘুম নিমেষে উধাও হয়ে গেলো গেলো আমার।

—দোস্ত বল,কিছু জানতে পেরেছিস?

—হ্যাঁ পেরেছি!সেই কারণেই তোকে ফোন করা।

—আমি জানতাম ঠিক একটা ভালো নিউজ পাবো তোর কাছ থেকে।

—আচ্ছা তুই ঠিকানাটা নোট করে রাখ।আমি বলছি।

এক বন্ধুর মারফত সাহিত্য চৌধুরীর বর্তমান ঠিকানাটা জোগাড় করেছি।এ সেই ডাক্তার যে মিথালাকে পু ড়ি য়ে মে রে ছি লো।একে হাতে নাতে ধরতে পারলে আমার অনেক রহস্যের সমাধান হবে।তাই সিদ্ধান্ত নিলাম আজ বাসায় না গিয়ে এর কাছে যেতে হবে।যা হবার তারপরেই হবে।বাথরুম থেকে হালকা ফ্রেশ হয়ে রুমের বাইরে পা বাড়াতেই দোয়া এসে সামনে দাঁড়ালো।আমি বেশ বিরক্ত হই ওর উপস্থিততে।

—পথ ছাড়ো আমাকে যেতে হবে।

—আমাকে না জানিয়েই এভাবে চলে যাচ্ছেন।

—হ্যাঁ,চলে যাচ্ছি।

—কিন্তু এটাকে তো চলে যাওয়া বলে না,পালিয়ে যাওয়া বলে।

—যদি আপনার তাই মনে হয় তবে হ্যাঁ পালিয়ে যাচ্ছি আমি।কারণ আপনি মানুষটা একদম সুবিধার নন।

—কেনো কি করেছি আমি?

—লজ্জা নেই আপনার,কাল রাতে নোংরামি করতে এসেছিলেন ভুলে গেলেন সেগুলো?

—কি নোংরামি করেছি আমি আপনার সাথে?

—রাতে চুপিচুপি একটা পুরুষের বিছানায় উঠে তার সাথে ঘনিষ্ঠ হওয়ার চেষ্টা করাটাকে যদি নোংরামি মনে হয় না সেটা আপনার মেন্টালগত সমস্যা,আমার নয়।

—এমনভাবে কথা বলছেন যেনো আমি আপনার মহা সর্বনাশ করে দিয়েছি।

—আমি আপনার সাথে আর একটাও কথা বলতে চাই না,এবার দয়া করে আমাকে আমার পথে ছেড়ে দিন।

এই বলে আমি ঘর থেকে বেরিয়ে গেলাম।দোয়া আমার পেছন পেছন আসতে লাগলো।সিঁড়ি, তারপর ড্রয়িংরুম পেরিয়ে মেইন দরজার দিকে পা বাড়াতেই দোয়া পেছন থেকে বলে উঠলো।

—আমিও আপনার সাথে যেতে চাই,প্লিজ নিয়ে যান আমায়।

—আপনি আমার সাথে কোথায় যেতে চান,আমার বাড়িতে?

—না,আপনি এখন যেখানে যাচ্ছেন।

—আমি কোথায় যাচ্ছি আপনি জানলেন কিকরে?

—আমি আপনার বন্ধুর সাথে বলা সব কথা শুনেছি।আপনি সেখানেই যাচ্ছেন যেখানে আপনার স্ত্রীর মৃত্যুর রহস্যের সমাধান মিলবে,তাই তো?

—হুমমম,একদম তাই।কিন্তু আমার ব্যপারে এতো ইন্টারেস্টেড কেনো জানতে পারি?

—সেটা না হয় পরে জানতে পারবেন।আগে আমায় আপনার সাথে নিয়ে চলুন।কথা দিচ্ছি আপনার স্ত্রীর অপরাধীকে শাস্তি পাইয়ে দিতে আমি নিঃস্বার্থ সাহায্য করবো আপনায়।আর কেউ আমাকে নিজের ইচ্ছে অনুসারে পরিচালিত করতে পারবে না।এবার যা করার আমি শুধু নিজের জন্যে করবো।

—আপনার এতো কথার অর্থ বুঝতে পারছি না আমি তবে আমায় মন থেকে সাহায্য করতে চাইলে নিঃস্বার্থ ভাবেই করতে হবে,কারণ আমার কাছে আপনাকে দেয়ার মতো কিছু নেই।বুঝতে পেরেছেন তো?

আমার সম্মতিতে দোয়া ভীষণ খুশি হলো।এরপর আমরা দুজন সাহিত্য চৌধুরী অর্থাৎ আমার স্ত্রীর উদ্দেশ্য বেরিয়ে পড়ি।

চলবে…..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here