খেলাঘরে তুমি আমি পর্ব -০৮

#খেলাঘরে_তুমি_আমি
পর্ব—০৮
কাহিনী ও লেখা : প্রদীপ চন্দ্র তিয়াশ

গাড়িতে আমি আর দোয়া সাহিত্য চৌধুরীর ঠিকানার উদ্দেশ্য।দোয়া চুপ হয়ে গাড়ির এক কোনে বসে আছে।ওর এই নীরবতা দেখে কিছুটা অবাক হলাম আমি।

—কি ব্যপার,তুমি কি কথা বলতে ভুলে গেলে নাকি?চুপ করে আছো যে!

—একটা বিষয় নিয়ে ভাবছি…

—কোন বিষয় নিয়ে?

—আমরা এখন কোথায় যাচ্ছি?

—কোথায় যাচ্ছি মানে,তোমার স্মৃতিশক্তি এতো দূর্বল আগে তো জানতাম না।আমরা সাহিত্য চৌধুরীর বাড়িতে যাচ্ছি ভুলে গেলে?

—গাড়ি ঘুরান।আমরা ওনার বাড়িতে যাবো না?

—কি বলছো কি তুমি এসব?

—দেখুন আমি যা বলছি ভেবেই বলছি।এইসময়ে ওর কাছে গিয়ে কিচ্ছুই করতে পারবো না আমরা।আমাদের এমন কিছু করতে হবে যাতে ও আমাদের কাছে আসতে বাধ্য হয়।

—এ কথা যে আমার মাথাতে আসেনি এমন নয়। কিন্তু কিভাবে কি করবো সেটাই তো বুঝতে পারছি না।

—আপনাকে কিছু করতো হবে না।যা করার আমি করবো।এবার আগে বলুন কোথায় ওকে নিয়ে আসলে ভালো হয়,আপনার কোনো চেনা পরিচিত জায়গা আছে?

—হ্যাঁ আছে,কিন্তু সেখানে যেতে হলে তো গাড়ি ঘুরাতে হবে আমাদের।পুরনো ঢাকায় আমার কেনা একটা ফ্ল্যাট আছে।একটু ভেতরের দিকে,আর ওদিকটায় লোকজনও খুব কম।

—ব্যস।তাহলেই হবে।আপনি তাহলে এবার গাড়ি ঘুরিয়ে আপনার বাসার দিকে চলুন।আমি ওকে আনার ব্যবস্থা করছি।

—এমন ভাবে বলছো যেনো তুমি বললেই ও চলে আসবে,এতো সহজ নয় ব্যপারটা।

দোয়া ফোনটা বের করে একটা নম্বরে কল দিলো।একটু পরে তাকে উদ্দেশ্য করে বলতে লাগলো।

—হ্যালো,সাহিত্য সাহেব আমি জান্নাত মানে দোয়া বলছি।

—হ্যাঁ,দোয়া বলুন।
(সাহিত্য)

—আপনাকে আমার সাথে একটু দেখা করতে হবে।

—দেখা করতে হবে,কিন্তু কেনো?

—জরুরী একটা বিষয়ে আলোচনা আছে।

—যা বলার ফোনে বলুন,আমি বিজি আছি এখন।

—ফোনে বলবো,ঠিক আছে।পরে পুলিশের জেরার মুখে পড়লে কিন্ত আমি কিছু জানি না।

—মানে…পুলিশের জেরায় কেনো পড়তে হবে?কি হয়েছে বলবেন আমায়,

—সেটা বলার জন্যেই তো ডেকেছি।ফোনে কথাগুলো বলা যাবে না।আর যদি আপনি রিস্ক নিতে রাজি থাকেন আমি বলতে পারি,সমস্যা নেই।

—এ কি ঝামেলায় ফেললেন আপনি আমায় বলুন তো,আচ্ছা আমি একঘন্টার ভেতরে পৌঁছে যাবো,চিন্তা করবেন না।

আমি অবাক হয়ে তাকিয়ে আছি দোয়ার দিকে।ওর কথা বলা শেষ হলেই আমার মনের ভেতরে এতোক্ষণ ধরে জমে থাকা প্রশ্নগুলো একে একে ছুঁড়তে লাগলাম।

—তুমি ঐ লোকটাকে চেনো,আর ও তোমার কথাতে রাজিও হয়ে গেলো কিকরে?

—এসব প্রশ্নের উত্তর এখন দিতে পারবো না আমি আপনাকে,তাহলে হয়তো পায়ের নিচে মাটি থাকবে না আপনার।

—কী এমন কথা সেটাই তো বুঝতে পারছি না আমি,আসলে কে তুমি?আমার মনে হয় তুমি আমাকে আগে থেকেই চেনো,আমার ব্যপারে সব জানো।কাল সন্ধ্যা থেকে যেগুলো করে আসছো সবটাই তোমার নাটক।ইভেন এখনো।

—হ্যাঁ আমি আপনাকে চিনি।তবে নিজে থেকে নয়,একজন আমায় আপনাকে চিনিয়েছে।তার স্বার্থে।আপাতত তার নামটা বলতে পারছি না।

—এসব কি ভণিতা করছো,যা বলার স্পষ্ট করে বলো আমায়।

—বললাম তো এখন বলা যাবে না কিছুই।আমি সময় হলে আপনাকে সবটা বলবো,আগে নিজের স্ত্রী হ ত্যা রহস্যের কুলকিনারা খুঁজে বের করুন।আর আমি আপনাকে কথা দিচ্ছি আপনার মৃত স্ত্রীকে আর আপনাকে ন্যায় বিচার পাইয়ে দেয়ার জন্য যা করতে হয় তাই করবো আমি।

—আমার জন্য কেনো এতো চিন্তা করছছো তুমি,কিসের দায় পড়েছে তোমার?এসবের পেছনে কোনো মতলব নেই তোমার,আমাকে দুধের শিশু মনে করো তুমি?

—আপনার একটা ছেলে আছে না,কি যেনো বললেন রিসালাত নাম।ধরে নিন আমি ওর জন্য করছি,ওর কথা ভেবে করছি।ওর ও তো অধিকার আছে নিজের মায়ের অপরাধীদের শাস্তি পেতে দেখা।

দোয়াকে এখনো পুরোপুরি বিশ্বাস করতে পারছি না আমি,কেউ কারোর জন্য বিনা স্বার্থে এতোটা ভাবতে পারে।এ যে অসম্ভব।আমি কোনো ভুল করছি না তো ওর কথা শুনে?কিন্তু এই মুহুর্তে সাহিত্য চৌধুরীকে ধরতে হলে ওর সাহায্য যে নিতেই হবে আমায়,এছাড়া কোনো অপশন নেই।

পুরনো বাসায় যেতে যেতে প্রায় একঘন্টা লেগে গেলো আমাদের।দোয়ার কথামতো একটু পরেই লোকটা এসে এখানে উপস্থিত হবে।
বেশ কিছুক্ষণ পরে একটা গাড়ি এসে থামলো আমার বাসার সামনে।দোয়া আমাকে সরে যেতে বললো,আমি তাই করলাম।দোয়া এরপর নিচে নেমে লোকটাকে রিসিভ করে ওপরে নিয়ে আসে।তারপর একটা রুমের ভেতরে ঢুকলো।আমি আড়ালে দাঁড়িয়ে দোয়া আর ওর সাহিত্য চৌধুরীর কথা শোনার চেষ্টা করছি।

—কি ব্যপার দোয়া,আপনি কী এমন বলার জন্য এতো জরুরী তলব করলেন আমায় সেটাই তো বুঝতে পারছি না।

—ডাক্তারদের ব্রেইন অনেক শার্প হয় জানতাম,কিন্তু আপনাকে দেখে সে ধারণা পাল্টে যাচ্ছে আমার।কি বলেছিলাম মনে নেই?

—দেখুন যা বলার ক্লিয়ার করে বলুন আমায়,আপনার এমনিতেও একটু বেশী কথা বলার রোগ আছে।

—হুমমম,সবাই একই কথা বলে,আসুন এবার রুমের ভেতরে আসুন।

দোয়া লোকটাকে নিয়ে রুমের ভেতরে ঢুকলো।

–আপনি কি করতে চাইছেন বলবেন আমায় একটু?

—সাহিত্য সাহেব একজন লোক এসেছে আজ আমার সাথে।তার একটা ছোট্ট ইন্টারভিউ নেওয়ার আছে আপনার থেকে।

—আপনার সাথে আবার কে আসলো,কই আপনি তো সেই নিয়ে কিছুই বললেন না আমায়।

–এখন তো বললাম,চলুন কথা বলুন তার সাথে।

দোয়া আমাকে নক করতেই আমি গিয়ে রুমের ভেতরে ঢুকলাম।লোকটাকে দেখেই আমি খানিকটা ভরকে গেলাম।সেদিন এই কারণেই এতো পরিচিত মনে হচ্ছিলো একে আমার।

—একি তুমি,তার মানে তুমি সেই সাহিত্য…তুমি ডাক্তার হলে কিভাবে?
লোকটার দিকে অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে প্রশ্ন করি।

—সরি আপনাকে চিনতে পারলাম না আমি,আপনার হয়তো কোথাও ভুল হচ্ছে।

—আমার ভুল হচ্ছে?সিরিয়াসলি,আমার মাথার স্ক্রু এতোটাও ঢিলে নয় যে নিজের বর্তমান স্ত্রীর প্রাক্তন প্রেমিককে চিনতে পারবো না।তুমি একসময় পারমিতার বয়ফ্রেন্ড ছিলে তাই তো?

—কে পারমিতা,আমি কোনো পারমিতাকে চিনি না।দোয়া আপনি সাথে করে এটা কাকে নিয়ে এসেছেন,লোকটা পাগলের মতো এসব কি অবান্তর প্রশ্ন করছে আমায়?

আমি আর নিজেকে স্থির রাখতে পারলাম না।সাহিত্যের গালে সজোরে এক চড় বসিয়ে দিলাম।সে ঘুরে চেয়ারের ওপরে গিয়ে পড়ে।আমি গিয়ে তার চুলের মুঠিটা চেপে ধরে বলতে লাগলাম।

—পারমিতাকে চিনিস না?আর কতো নাটক করবি আমার সাথে,বল আমার স্ত্রীকে কেনো পুড়িয়ে মে রে ছি স তুই,কী ক্ষতি করেছিলো ও তোদের?

চলবে……

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here