গল্পঃ ভাগ্যর_লিখন পর্বঃ ১১

0
2238

গল্পঃ ভাগ্যর_লিখন
পর্বঃ ১১
লিখাঃ Shakil
..
..
..
—- আমরা হাসপাতালে পৌঁছে গেলাম। সবাই হাসপাতালে ঢুকলো আর আমি এদিক-ওদিক দেখতে থাকলাম। একটু পর আপু আমায় ডাকলেও আমি গেলাম নাহ।
——দেখা করা শেষে আব্বু ও আপু বেরিয়ে আসলো। বাসায় চলে আসলাম। বাসায় এসে বসে আছি।
একটুপর আপু এসে আমার পাশে বসলো।
—– অপুর বিয়েতে যাবি ভাই ??
হুমম আপু। ও বড় মুখ নিয়ে সব ভুলে গিয়ে আমাদের কে দাওয়াত করেছেন। একদিন আগেই যেতে বলেছেন না গেলে কেমন হয় বল,,??
—– আচ্ছা আমরা তাহলে যাবো। আর অপুর বিয়েতে সবচেয়ে দামি গিফট টা আমরাই দিবো। আচ্ছা ঠীক আছে।
মনে মনে ভাবছি আমিও তো সেটাি চাই। গিফট টা মিতু ও ওর ভাই দেখবে আর জলে পুড়ে মরবে।
—– হঠাৎ ফোনটি বেজে উঠলো । হাতে নিতে দেখি অনু ফোন করেছে।
আমিঃ হুম অনু বলো
অনুঃ কেমন আছো?? আমরা মিতুর বিয়ের শপিং করতে যাচ্ছি তুমি আসবে??
—- নাহ অনু যাও তোমরা। আচ্ছা বলে অনু ফোনটা রেখে দিলো।
— একটা কথা বলবো ভাই??
হুমম বল
অনু মনে হয় তোকে অনেক ভালোবাসে। তুই ওর ভালোবাসার অমর্যাদা করিস না।
কি বলিস আপু,,, ওর সাথে কি আমার যাই আর ও অনেকটা পথ পাড়ি দিতে হবে আমাদেরকে তারপর না হয় অনুর সাথে আমাদের যাবে।
—- ভাই দেখিস যাই কি যাই না তা ভেবে যেনো অনুকে হারিয়ে বসিস না আবার। ও অনেক মিষ্টি একটা মেয়ে। এত বড় ফ্যামিলির মেয়ে হয়েও আমাদের সাথে মিশে।
—- আপু বাদ দেনা। এখন বল অপুর বিয়েতে কি গিফট দেওয়া যায়।
—- ভাই আমরা একটা স্বর্নের আংটি দিবো অপুকে। কেমন হবে বল?
—- আপু তুই কি বললি,,,?? স্বর্ণের আংটি তো অনেক মূল্যবান হবে।
হোক তাতে কি। আমরা এটাই দিবো।
—– কালকে অপুর বিয়ে। অপু বারবার ফোন করে আমাদের আজি যেতে বলছিলো তাই আমরা রাজি হয়ে বললাম আচ্ছা তাহলে আমরা সবাই আজই আসছি ।
— আমরা আংটি ওর্ডার করে রেখেছিলাম। আমি গহনার দোকানে আংটি আনতে গিয়ে দাঁড়িয়ে আছি। একটু পর মিতুর ভাই মিতুকে নিয়ে ঐ একই দোকানে হাজির হলেন।
আমি আংটির জন্য ২৫০০০ টাকা বার করে দিতে,, দোকানদার আরও এক হাজার টাকা চেয়ে বসলো যা ওর্ডারের চেয়েও বেশি ৷
দোকানদারঃ স্যার আংটিটার জন্য আরও একহাজার টাকা দিন নাহ প্লিজ । নতুবা আমাদের লস হয়ে যাবে,, প্লিজ স্যার।
—- আরে প্লিজ বলার কি আছে। এই নিন টাকা।
আমি টাকা দিতে দোকানদার অনেক খুশী হয়ে গেলেন। আংটি টা নিয়ে মাসুদ সাহেব এর দিকে একটু ঘুরে তাকিয়ে চলে আসলাম।
—- হয়তোবা উনি ও মিতুসহ কিছুটা অবাক হয়ে গেলেন।
—- বাসায় এসে দেখি আপু রেডি হয়ে গেছেন। আপুকে আংটিটা দিয়ে জানতে চাইলাম আব্বু কোথায় উনি যাবেন নাহ??
—- ভাই আব্বু যাবেন নাহ। আব্বু আমাদের দুজন কে যেতে বললো ।
আচ্ছা আপু আমি তাহলে রেডি হয়ে আসি।
—- আমি রেডি হয়ে গেলাম। আপুকে নিয়ে একটা ভাড়ায় চালিত গাড়িতে উঠলাম। কেননা আমি এবং আপু দুজনেই এখনো আমাদের গাড়ীটা ডাইভিং করতে পারি না এখনো শিখি নাই আরকি।
—- অপুর বাসায় পৌঁছে দেখি পুরো বাড়িতে মানুষে ভরা।
আপু আর আমি সন্ধ্যা হলে দাঁড়িয়ে গল্প করছি। একটুপর অনুসহ কয়েকজন মেয়ে অপুকে হলুদ পড়াতে আসলো।
—– অপুর বাসায় অনু আমাকে দেখে কিছু একটা বলতে গিয়েও বললো নাহ। ওরা হলুদ পড়ানো শেষে সবাই চলে গেলো।
—- পরেরদিন বরযাত্রী সবাই বিয়ে বাড়ি যাওয়ার জন্য রেডি হয়ে গেলো। আমরা সবাই চলে গেলাম বিয়ে বাড়িতে। বেশ ধুমধামে বিয়েটা দিচ্ছে দেখি মাসুদ সাহেব৷
—– বাসার দরজার সামনে সবাইকে উনি একে একে নিমন্ত্রণ জানাচ্ছে। আমি আর আপু উনার সামনে দিয়ে ঢুকতে গেলেই উনি আমাদের কে আটকে দিলেন ।
— আমার বোনের বিয়েতে তোদেরকে দাওয়াত দিয়েছে কে ?? আমি তো তোদের আমার বোনের বিয়ের কোন কার্ড দেই নাই। ফখিরের মত বিনা কার্ডে বিনা দাওয়াতে বিয়ে খেতে চলে এসেচিস নাকি তোরা।
—- আমি আর আপু কিছু না বলে চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকলাম। মাসুদ সাহেব গলা বাজিয়ে আমাদের বেশ কিছু কথা শুনাতে শুরু করে দিলেন। এমন চেচামেচি দেখে অনেক মানুষজন হাজির হয়ে গেলো।
—- আমি একজন মানুষকে বললাম ভিতরে গিয়ে বরকে বলুন আবির নামের এক ছেলেকে বিয়ে বাড়িতে ঢুকতে দিচ্ছে নাহ।
লোকটি আমার কথা মত বরকে ( অপুকে) বলতে বাড়ির ভিতরে চলে গেলো।
—- কয়েক সেকেন্ডর মধ্যেই অপু এসে হাজির হয়ে গেলো। কি হয়েছে এখানে??
—– অপু এই অপমানের জন্যই কি তুই আমাদের তোর বিয়ের কার্ডটা দিয়েছিলি?? এতগুলো মানুষের সামনে আমাদের ফকিরের সাথে তুলনা করে কতই না কথা শুনিয়ে দিলো তোর ভাসুর ৷
—- আমি কি শুনছি এসব সত্যিই কি আপনি এগুলো করেছেন??
মাসুদ সাহেবঃঃ নাহ মানে আমি আসলে…
—– মানে আমি কি,,,,,?? আমার বন্ধুকে ফকির বলে অপমান করা এগুলো কি?? এই সব চল,, এই বিয়ে আমি করবো নাহ।
—– মাসুদ সাহেব অপুর হাতটি চেপে ধরলেন ৷ প্লিজ অপু তুমি এমন করোনা । আমার ভুলের শাস্তি আমার বোনটাকে দিওনা ৷ তুমি চলে গেলে আমার সব মান-সম্মান শেষ হয়ে যাবে।
—– অপুঃ ওকে আপনি সবার সামনে আমার বন্ধুর কাছে মাফ চেয়ে বলুন আপনার ভুল হয়ে গিয়েছে সরি।
—– অপুর কথা মত মাসুদ সাহেব আমাদের কাছে মাফ চেয়ে সরি বললেন।
আমি ইটস ওকে বললাম।
—- মনে মনে বেশ খুশীই হলাম। উনি যখন আমাদের অপমান করছিলো আমরা কিসের জন্য চুপ করে ছিলাম শুধু এভাবেই মাসুদ সাহেবের নাকটা কাটবো বলে।
—– বিয়ে বাড়িতে ঢুকতে অনুকে দেখে আমি কিছুটা টাশকি খেয়ে গেলাম। এত সুন্দর করে ও সেজেছে যে আমি ওর দিকে তাকিয়ে চোখটা বুজতেই পারছি নাহ ৷
—- কি আবির সাহেব এভাবে কি দেখছেন ?? (অনু)
—- নাহ মানে,, কিছু নাহ।
তোমাকে বেশ সুন্দর দেখাচ্ছে এই সাজে।
—– ওহ আচ্ছা। সুন্দর দেখালে কি লাভ আর বলুন যার জন্য সাজি সে তো আর সব বুজে নাহ।
—- আমি কি বলবো বুজছি নাহ। অনু যে ইন্ডাইরেক্টলি এভাবে কিছু বলবে ভাবতে পারি নাই।
আচ্ছা আমি একটু ঐ দিকটায় যাই বলে অনুর সামনে থেকে কেটে পড়লাম।
— কি ব্যাপার আপুকে কোথাও দেখছি নাহ কেন,, কোথায় গেলো বলে খুঁজতে আপুকে এক পাশে দেখলাম দাঁড়িয়ে রয়েছে ৷
আপুর কাছে যেতে দেখি আপুর চোখে পানি।
—– আপু কি হয়েছে তোর??
কিছু না ভাই।
আপু কেন কাঁদছে তা জানি। তাই আমি আর আপুকে কিছু বললাম নাহ।
—– বিয়ে শেষ হয়ে গেলো। পরেরদিন সন্ধ্যায় আমি আর আপু বাসায় চলে আসলাম।
—- ভাই দেখেচিস উনার কি রাগ আমাদের উপর কিভাবে নাহ আমাদেরকে অপমানটা করলেন।
আপু বাদ দেতো উনিও তো কম অপমান হলেন নাহ।
হুমমমম ভাই।
—- তিনদিন পর
আমি রুমে বসে থেকে পড়ছি হঠাৎ আব্বু চিৎকার দিয়ে উঠলো।
কি হয়েছে দেখতে বাইরে যেতে দেখি
আব্বু আপুকে মাটি থেকে তুলছেন।
—– আমি দৌড়ে গিয়ে আব্বুর সাথে আপুকে মাটি হতে তুললাম। ও গাড়িতে করে নিয়ে হাসপাতালে চলে আসলাম।
—– ডাক্তার সাহেব আপুকে দেখে বললেন বেশি চিন্তা ও মানসিক দিক দিয়ে উনি অনেক টেনশন করেছেন তাই সেন্সলেস হয়ে গিয়েছেন।
আব্বুঃ ওহ আচ্ছা
— ডাক্তারঃঃ আর একটা খুশীর খবর আছে।

উনি মা হতে চলেছেন।
—- What,,, আপনি এগুলো কি বলছেন ডাক্তার ,,,??
হুমম আমি ঠীকই বলছি।
ডাক্তার সাহেব চলে গেলেন। আব্বু এখন কি হবে,,,??
—-কি হবে আবার কিছুই নাহ । আমি নানা হবো আর তুই মামা হবি। আব্বু বেশ খুশীর সাথেই হাসিমুখে বললো ৷
—- একটুপর অনু ফোন করলে আমার ফোনটা বেজে উঠলো।
ফোন রিসিভ করে আমি কথা বলতে বাইরে গেলাম,,, হুমম বলো..
—- আবির তুমি কোথায় কিছু শুনেছো কী??
আমি হাসপাতালে,, আর কি শুনবো কি হয়েছে??
—- তুমি হাসপাতালে তাও জানো না,,, তুমি হাসপাতালে কি মিতুকে দেখতে গিয়েছো নাকি??
—- নাহ,, আমি মিতুকে দেখতে যাবো কেনও আপু অসুস্থ তাই হাসপাতালে নিয়ে এসেছি।
—– ওহ আচ্ছা শুনো তাহলে,, অপু নাকি মিতুকে অনেক মারধর করেছেন। মিতুর নাকি খুব খারাপ অবস্থা। আমরা সব মিতুকে দেখতে যাচ্ছি এই হাসাপাতালে (হাসপাতালের নাম বলে)
—- আচ্ছা যাও বলে ফোন রেখে দিয়ে ভাবছি আমরাও তো এই হাসপাতালেই রয়েছি। মিতু কোন রুমে ভর্তি হয়েছে তাহলে। নাকি ওকে হাসপাতালে নিয়ে আসছে,,,!!
— আমি আপুর কাছে যেয়ে দেখি আপুর জ্ঞান ফিরেছে। উঠে বসে আছে।
আপু তুই অন্তঃসত্ত্বা আমাদের আগে বলতে পারিস নাই।
তাহলে আমরা বাচ্চাটাকে নষ্ট করে ফলতে পারতাম।
ঠাশশশশশ
আপু আমাকে ঠাশশশশশ করে চড় বসিয়ে দিলো….
..
..
..
..
চলবে??
..
(গল্পটি ভালো লাগলে জানাবেন)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here