গল্পঃ ভাগ্যর_লিখন পর্বঃ ১০

গল্পঃ ভাগ্যর_লিখন
পর্বঃ ১০
লেখাঃ Shakil
..
..
..
—- একটুপর আপু এসে জানতে চাইলো আমি কেন কলেজ না গিয়ে বাসায় এসে পড়েছি ??
—– আপু কলেজ যেতে ভালো লাগছিলো নাহ। তাই কলেজ না যেয়ে থানা থেকে বাসায় চলে আসলাম।
—– ওহ,,। তাহলে কাল থেকে আবার কলেজে যাস। আর আব্বুও বলছিলো আজ নাকি উনি ওয়ার্কশপে যাবেন নাহ। আব্বু বাজারে গিয়েছেন কিছু ভালো বাজার করতে। উনি বাজার থেকে আসলে আজকে আমরা একসাথে রান্না করে খেয়ে বসে থেকে অনেক গল্প করবো।
—– আব্বু বাজার নিয়ে আসলে আপু রান্না সেরে ফেললো। খাওয়া-দাওয়া শেষে বসলাম গল্প করতে। আব্বু আমাদের অনেক ভালো ভালো গল্প শুনালো । এক পর্যায়ে আপু বললো…
—– ভাই আমরা আমাদের ভাগ্যটা লিখবো বলে যেই কাজটা শুরু করেছি হয়তো কিছু সমস্যা বা আমার জন্য তা অসমাপ্ত রয়ে গিয়েছে। এবার আমাদের সেই অসমাপ্ত কাজটি সমাপ্ত করতে হবে।
—– কাল থেকে আব্বু ও আমি একবারে ভালো মত কাজে লেগে পড়বো আর তুইও আমাদের পাশেই থাকবি পড়াশোনার পাশাপাশি।
—- আচ্ছা আপু।
—- আর শোন আর একটা কথা (কিছুটা গোলায় জোর দিয়ে)
এবার আমরা আমাদের ভাগ্যটাকে লিখবোই যতই বাধাঁ আসুক না কেন আমরা পিছ পা হবো না।
—— আপুর কথা শুনে মনে হলো আপু যেনো এবার উঠে পড়ে লেগেছে। আপুর চোখমুখে যেনো আজকে অন্য কিছুর ছায়া । ও মনে হয় মাসুদ ভাইয়ার সব কথা গুলো মুখ বুজে সহ্য করেছে শুধু,, সময় হলে তার উচিৎ জবাব টা দেওয়ার জন্য ।
—- গল্প শেষ হলো। আমি এসে আজ একটু পড়ার টেবিলে পড়াশোনার জন্য বসলাম । পড়া শেষ করে শুয়ে শুয়ে ভাবছি আপু ঠীকই বলেছে এবার আমাদের ভাগ্যটা লিখতেই হবে। ভাঙ্গতে হবে মিতু ও ওর ভাইয়ের অহংকার ৷
—– মিতুকে উচিৎ শিক্ষাটা অপুই দিবে। আমি শুধু অপুকে নিয়মিত উস্কানিটা মেরে যাবো । ভাবতে ভাবতে কখন যেনো ঘুমিয়ে পড়লাম।
—– সকালে উঠে ফ্রেশ হয়ে খাওয়া-দাওয়া শেষ করলাম। করে আপু ও আব্বুর সাথে ওয়ার্কশপ এ গেলাম। গিয়ে দেখি আজ আপু সবাইকে বেশ প্রণোদনামূলক কথা বলছে। ও যেনো চাইছে সব কর্মীরা কাজ করার জন্য একেবারে জেগে উঠুক সবাই সবার সর্বত্র টা দিক।
—- একটুপর আপুর সাথে আমিও যোগ দিলাম। সবাই আমাদের যথেষ্ট আশ্বাস দিলেন। আপু আমায় এবার কলেজ যেতে বললেন।
—– আমি বাসায় এসে একটু রেডি হয়ে কলেজের উদ্দেশ্য রওনা দিলাম । হঠাৎ বুজলাম পিছন থেকে কে যেনো বার বার বাইকের হর্ণ বাজাচ্ছে। ঘুরে তাকাতে দেখি অপু।
—– কি আবির কলেজ যাচ্ছিস নাকি??
হুমম কলেজ যাচ্ছি।
তা অনেক দিনপর কলেজ যাচ্ছিস যে,,,?? আয় উঠ পিছনে আমিও কলেজে যাচ্ছি ।
অপুর বাইকের পিছনে উঠতে,, যদিও আমার ভয় করছিলো কিন্তু ওর মুখ-চোখ দেখে বুজলাম ওর কোন বাজে উদ্দেশ্য বা আমার ওপর কোন রাগ নেই।
তাই ওর বাইকের পিছনে উঠে পড়লাম ।
—– ও বাইক চালাচ্ছে আর গান বলছে ওর সাথে আমাকেও ও গাইতে বলছে কিন্তু আমি না গেয়ে ওকে উৎসাহ দিয়ে যাচ্ছি।
আর ভাবছি আজকে অপুর সাথে কলেজে ঢুকলে আর কেউ না হোক মিতু নিশ্চিত অবাক হয়ে যাবে। যাক ভালোই হবে তাহলে মিতুও চাইবে অপুকে আমার থেকে আলাদা করতে।
—— কলেজ পৌঁছে গেলাম। আমি বাইক থেকে নেমে ক্লাসের দিকে যেতে অপু বললো আবির দারা আমিও তো ক্লাসে যাবো। আমি দাঁড়িয়ে গেলাম। পরে দুজনে একসাথে ক্লাসে যেতে দুইতালায় খেয়াল করে দেখলাম অনু আর মিতু দাঁড়িয়ে রয়েছে।
—- সিঁড়ি বেয়ে দুইতলায় উঠতে উপরে চোখ যেতে দেখি,, সিঁড়ির শেষ মাথায় মিতু দাঁড়িয়ে রয়েছে। আমরা দুইতালায় পৌঁছে গেলে মিতু অপুকে উদ্দেশ্য করে বললো…
—– তুমি এত নিচ হয়ে গিয়েছো যে আমার বিএফ হয়ে এই এতিম ছোট-লোকের বাচ্চাটার সাথে কলেজ আসলে আবার একসাথে ক্লাসে যাচ্ছ।
আমি কার সাথে কি করবো সেটা কী তুমি ঠীক করে দিবে নাকি,,,??
অপু থাক আমি যাইরে বলে পাশ কেটে চলে যেতে অপু আমাকে দাঁড়িয়ে যেতে বললো।
—- আমি অপুর কথা না শুনে চলে গেলাম ক্লাসে। ক্লাসে এসে বসে আছি। একটুপর মিতু ও অপু ক্লাসে ঢুকে দুইজন দুই জায়গায় গিয়ে বসলো। বুজেছি অপু ও মিতুর সাথে ঝগড়া হয়েছে। এবার অনু আসলেই মিতুকে আমি একটু তেল আগুনে জলাবে ।
——- অনু এসে আমার পাশে বসলো । আজ আমি অনুর অনেক কাছাকাছি গিয়ে বসলাম। বসে শুরু করে দিলাম গল্প। কেউ বলবে নাহ আমরা ফেন্ড। এমন আচরণ করছি যে আমরা যেনো গার্লফেন্ড বয়ফেন্ড।
—- খেয়াল করে দেখছি মিতু মনে হয় আমাদের এভাবে দেখে তেল আগুনে জলে যাচ্ছে। একটুপর ও অপুর পাশে গিয়ে বসলো এবং অপুর সাথে গল্প করতে লাগলো।
—- যাক তাহলে থিওড়িটা কাজে লেগেছে। মনে মনে আমার কিছুটা হাসি পেলো। মিতু তুই খাল-কেটে কুমিড় ডেকে আনতে বসেচিস। আর আমিও তোকে সেই কাজ করতে উৎসাহ দিয়ে যাবো।
—– স্যার আসলো এবং ক্লাস শুরু হয়ে গেলো। ক্লাস শেষে বাসায় আসবো বলে অনুর সাথে কলেজ মাঠ দিয়ে হেটে আসছি। অনু বললো আমায় বাসা অবদি এগিয়ে দিবে।
অনু গাড়ি আনতে গেলে আমি দাঁড়িয়ে থাকলাম। অনু গাড়ী নিয়ে আসলে ওর গাড়ীতে উঠে বাসায় আসছি। আর দুজন গল্প করছি।
—– জানালা দিয়ে তাকাতে দেখিমিতু অপুর বাইকের পিছনে বসে আছে। অপুর বাইক গাড়ির পাশাপাশি আসলে মিতু যেনো আমার দিকে তাকিয়ে বলতে চাইছে তুই একাই পারিস নাকী দেখাতে,,,!! এই দেখ আমিও পারি কিনা।
—– ওরা চলে গেলো । অনুও আমায় বাসা অবদি এগিয়ে দিয়ে চলে গেলো। বাসায় এসে দেখছি আপু ও আব্বু বাসায় ফিরে নাই। দুপুরের খাবারটা খেয়ে আপু ও আব্বুর জন্য খাবার নিয়ে ছুটলাম ওয়ার্কশপে।
—– গিয়ে দেখি আপু আর আব্বুও আজ কর্মীদের সাথে কাজে নেমে পড়েছে। আমি কিছুটা অবাক হয়ে গেলাম। দুপুর পেরিয়ে যাচ্ছে এখনো খাওয়া-দাওয়ার খোঁজ খবর নেই কোনো অথচ এভাবে কাজ করেই যাচ্ছে।
আব্বু ও আপুকে ডেকে খেয়ে নিতে বললাম। আর আমি সব কিছু ঘুড়ে ঘুড়ে দেখলাম বেশ কাজ করেছে সবাই।
—– আপু ও আব্বুর খাওয়া-দাওয়া শেষ হয়ে গেলে আমিসহ আবার তিনজন মিলেই কাজে নেমে পড়লাম।
কাজ শেষ করে সবাই বাসায় ফিরলাম। আজ আপু ও আব্বু অনেক ক্লান্ত তাই আজকের রান্নাটা আমিই সেরে ফেললাম।
—- রাতে খেতে বসলে আপু বললো এভাবে যদি প্রতিদিন কাজ হয় তাহলে খুব বেশিদিন লাগবে নাহ আমাদের ছোট্ট ওয়ার্কশপটা বৃহদায়তন এ রুপ নিতে। আব্বু বললো হুম ঠীক বলেচিস লাবণ্য। আমরা এভাবেই প্রতিদিন নিজেদের সর্বত্র টা দিয়ে কাজ করে যাবো। তাহলে একদিন না একদিন উপরওয়ালা ঠীক আমাদের দিকে মুখ তুলে তাকাবেনই।
—– একসপ্তাহ পার হয়ে গেলো। আপু হিসাব করে জানালো আমাদের একসপ্তাহ কাজের ফলেই আমরা আরও পাঁচটি সেলাইমেশিন যোগ করতে পারবো।
আমি কিছুটা অবাকই হলাম বটে তবে এ ছোট্ট সাফল্যর হাত ধরেই যে একদিন আমরা আমাদের ভাগ্যটাকে লিখে ফেলবো তার কোন সন্দেহ নেই।
—– রাতে ঘুমাতে গিয়ে আজ আমার মনটা যেনো অন্য কিছু বলছে। আমি একসময় যার পিছনে ছুটেছি সে আমাকে ছুঁড়ে ফেলে দিয়েছে। আজ অনুও আমার পিছনে ছুঁটছে। অনুকে দেখলে মনে হয় ও আমায় হয়তো অনেক কিছুই বলতে চাই কিন্তু বলতে পারে নাহ। ওকে দেখে মনে হয় ও যেনো পুরোটাই মিতুর উল্টো। মিতুর ওপর প্রতিশোধ নিতে গিয়ে অনুর আবার আমার বন্ধুত্ত্বের হাতটি ছেড়ে দিয়ে চলে যাবে নাতো,,,!!
—– তাহলে কী অনুকে আমি আপন করেই নিবো। আমিই কী ও যা বলতে চাই তা বলে দিবো ওকে। নাহ এখন বলা যাবে নাহ। এখন বললে অনু হয়তো আমায় গ্রহণ নাও করতে পারে আবার অনুর বাবাও কোন মতেই হয়তো আমায় মেনে নিবে নাহ। সো আগে অনুর পাশে দাঁড়ানোর মত যোগ্যতা অর্জন করি তারপর না হয় সব ভেবে দেখবো।
—– এখন আপাতত অনুর সাথে এভাবেই থাকি। এদিকে তো মিতু আবার অপুর প্রেমে হাবুডুবু খাচ্ছে। শুধু সময়ের অপেক্ষা কবে যে আমি মিতুর বিয়েটা দেখবো আর আমাদের এই অবস্থাটাও পরিবর্তন হবে।
—– কয়েকটি মাস এভাবে কেটে গেলো।
আজ আমাদের অবস্থাটা অনেকটাই পরিবর্তন এসেছে। বাড়ি পাল্টিয়েছি একটা গাড়িও হয়েছে আমাদের। আমাদের অবস্থাটা মোটামুটি ভালো হয়েছে। তবে এখনো অনেক কিছুই হতে বাকি রয়ে গিয়েছে।
—— আমার ইন্টার প্রথম বর্ষ পরীক্ষা আর কয়েকদিন পর তাই মন দিয়ে পড়াশোনা শুরু করে দিলাম। রাতভর পড়াশোনার পাশাপাশি অনুর সাথে ভালই চ্যাটিংও চলে।
—– পরীক্ষা চলে এলো । এক পর্যায়ে পরীক্ষা শেষও হয়ে গেলো। শেষ পরীক্ষার দিন আমি আর অনু আসছি অপু আমাদের ডেকে নিয়ে বললো আই সবাই আজকে ঘুরতে যাই। আমি না করলাম অপু বললো আচ্ছা আজ তাহলে আবার সবাই কলেজের ঐ পুরনো চা-ওয়ালা দোকানের সামনে যাই।
—– চা ও খাওয়া হবে আবার আড্ডাও দেওয়া যাবে।
আচ্ছা আমরা আসবো তাহলে বলে বাসায় চলে আসলাম।
—- বাসায় এসে খাবার টেবিলে বসলাম। আপু একে একে রান্নাঘর হতে খাবার নিয়ে আসছে । কেউ যেনো দরজার কলিংবেলটা বাজাতে আপু আমাকে গিয়ে দেখতে বললো । আমি গিয়ে দরজা খুলে দেখি একটা মেয়ে বয়সটা খুব বেশিও নাহ আবার কমও নাহ মাঝামাঝি হবে।
—– কে আপনি আর কী চাই??
উনি মাথাটা নিচু করে বললো বাবা আমি তোমার সৎমা।
কিহ বললেন আপনি আবার বলুন।
বাবা আমি তোমার সৎমা।
ওহ তারমানে ঐদিন আব্বুকে আপনি আর আপনার বাবা আমাদের থেকে আলাদা করেছিলেন,,,?? আর আপুকে আমাকে আমার পরিবারকে পথে বসিয়েছিলাম।
—– এখনি এই বাসা হতে বেরিয়ে যান বলছি। নইলে কিন্তু,,,বাবা তোমার আব্বুকে একটু ডেকে দাও উনার সাথে কিছু কথা বলেই আমি চলে যাবো।
আব্বু বাসায় নেই আর আব্বুর সাথে আপনার কোনও কথা বলার দরকারও নেই। চলে যান বলছি…
—– কি হয়েছে ভাই,,?? বলে আপু এসে উনার সব কথা শুনে বাসার ভিতরে আসতে বললো। আমি আপুর দয়া দেখে অবাক হয়ে গেলাম। শুধু রাগে আমার হাত-পা কামড়াচ্ছে।
—-একটুপর আব্বু আসলো। আব্বু এসেই তো আমার থেকেও উনাকে দেখে বেশি রেগে গেলেন। কিন্তু আপুর কথায় আব্বু কিছুটা শান্ত হয়ে গেলেন। এবং কি জন্য এসেছে তা জানতে চাইলেন।
—— সৎমাঃ- আমার বাবা হাসপাতালে। উনার ক্যান্সার হয়েছে। ডাক্তার বলেছে আর বেশিদিন বাঁচবেন নাহ উনি। বাবার শেষ ইচ্ছে তোমাকে দেখার,, তোমার কাছে ক্ষমা চাওয়ার। প্লিজ আমার সাথে চলো তুমি।
আব্বু কিছুতেই রাজি হলেন নাহ। এক পর্যায়ে সৎমা আমাদের সামনেই আব্বুর পা জরিয়ে ধরলেন। বলো মেয়ে হয়ে আমি কী আমার আব্বুর শেষ ইচ্ছেটা পূরণ করতে পারি নাহ।
—– তোমার যত ইচ্ছে আমাকে শাস্তি দাও প্লিজ তবুও একটিবার চলো। আপু এসে উনাকে তুললেন এবং আপুও আব্বুকে একটু বোঝালেন। অবশেষে আব্বু রাজি হয়ে গেলেন। আমরা সবাই গাড়িতে উঠলাম। আব্বু গাড়ী স্টার্ট দিতেই এক ব্যক্তি এসে গাড়ির জানালা দিয়ে আমাকে একটা কার্ড দিলো।
—– আমি কার্ডটি খুলতেই অবাক হয়ে গেলাম।
আপুঃ- কিসের কার্ড ওটা ভাই??
মিতু ও অপুর বিয়ের কার্ড আপু।
বলিস কি উনি কী তাহলে আমাদের মিতুর বিয়ের কার্ড দিয়েছেন??
—- নাহ আপু এই কার্ড অপু আমায় দিয়েছেন বন্ধু হিসাবে আর আব্বুসহ আমাদের অবশ্যই ওর বিয়েতে যেতে বলেছেন। ওহ আচ্ছা
আমি কার্ডটি রেখে দিয়ে ভাবছি বাহ বাহ এবার বিয়েটা হবেই তাহলে।
বিয়ের পরেই মিতু বুজবে জালা ।
কিন্তু মিতুর বিয়ে দিতে মাসুদ সাহেব রাজি হয়ে গেলো,,,!! কিন্তু কেনও রাজি হলো উনি তো অপুকে দেখতেই পারেননা….
..

..
..
..
চলবে??
(গল্পটি আপনাদের ভালো লাগলে
ছোট্ট একটি কমেন্ট করে জানিয়ে দিবেন আর
গল্পটি দিতে দেরি হওয়াই আন্তরিক ভাবে দুঃখিত আমি)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here