গল্পঃ ভাগ্যর_লিখন পর্বঃ ৯

গল্পঃ ভাগ্যর_লিখন
পর্বঃ ৯
লিখাঃ Shakil
~
~
~

— মাসুদ ভাইয়ার বাসায় পৌঁছে গেলাম । বাসায় ঢুকতেই দেখি মাসুদ ভাইয়া ও তার বোন মিতু বসে থেকে গল্প করছে।
— আমরা কেনও এসেছি আমাদের দেখেই হয়তো উনি বুঝে গিয়েছেন । উনি দাঁড়িয়ে গেলো । আপু উনার একটু কাছাকাছি গেলো । অন্যদিকে আমি চোখে জল নিয়ে মিতুর দিকে তাকিয়ে রইলাম ।
—- তুমি এটা কি করতে চাচ্ছ ?? এভাবে তুমি আমাকে পর করে দিবা ?? আমার হাতটি এভাবেই ছেড়ে দিতে পারবা ??

—- মাসুদ ভাইয়া কিছু না বলে আপুর হাত থাকা ডিভোর্স পেপার টি নিয়ে দেখলেন আপু তাতে সাইন করেছেন কিনা ৷ আপু সাইন করেন নি দেখে উনি নিজের পকেট থেকে একটা কলম বের করলেন। কলমসহ কাগজটা আপুর দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বললেন সাইন করো।
— আপু কিছু না বলে শুধু উনার দিকে চেয়ে রইলো । আচ্ছা আমাকে ডিভোর্স দিবে ঠীক আছে কিন্তু ডিভোর্স দেওয়ার আগে কেনও দিবে তার কারণটা তো বলে দাও,,!!কারণ জানতে চাস,,, কারণ হলো তোর সাথে আমার যাই না । তোর স্টাটাস আর আমার স্টাটাস সম্পূর্ণই আলাদা।
— এখন স্টাটাস এর কথা বলছো , বিয়ের আগে তো আমি তোমাকে এসব কথা বলেছি । তখন তুমি কি বলেছিলে এত তাড়াতাড়ি ভুলে গিয়েছো সব ??
— নাহ কিছুই ভুলে যাই নি ৷ তখন তো আমি পুরো আবেগে ভরপুর ছিলাম। বুজিনাই যে তোর মত এতিম-মিসকিনের সাথে আমার সংসার হবে নাহ । তুই বউ তো দুরে থাক আমার বাসায় কাজের মেয়ে হওয়ার ও যোগ্য না ।
— সাইন করবি নাকি জোর করে সাইন করে নিয়ে ঘাড় ধাক্কা মেরে বাড়ি থেকে বার করে দিবো । প্লিজ তুমি এভাবে বলো না আমি তোমার পায়ে পরি বলে আপু উনার পা ধরতে যাবে কি উনি একটু সরে গেলেন । আপুও সরে গিয়ে পা চেপে ধরলে আপুকে উনি একটা লাথি মেরে দিলো।

সবার আগে আমার গল্প পড়তে চাইলে “নীল ক্যাফের ভালোবাসা” পেজে পাবেন।

— আমার আর যেনো সহ্য হলো নাহ।
বেস অনেক হয়েছে মাসুদ সাহেব,, (আপুকে মাটি থেকে তুললাম)
আইন অনুযায়ী আপুর গায়ে হাত তুলার জন্য আপনার আর এখন কোন অধিকারই নেই । কেননা আপনি আপুকে ডিভোর্স দিয়ে
দিয়েছেন ।
—- আজ যাকে লাথি মেরে কুকুরের মত দূরে সরিয়ে দিচ্ছেন,, মনে রাখবেন তার জন্যই আজও আপনার দেহে প্রাণটা রয়েছে । আপনার জন্যই সে নিজের জীবনটা দিতে বসেছিলো ।
—- যে বোনকে নিয়ে আজ আপনি এত নাঁচছেন মনে রাখবেন একদিন তার জন্যই আপনার মুখে চুনকালি পড়বে। আর মিতু আজ তো তুমি খুব খুশী তাই না ?? তোমার মিথ্যা অভিনয়টা তোমার ভাইয়ের চোখে এমন ভাবেই পটি হিসাবে লেগে দিয়েছো যা হয়তো আর সরবে নাহ ।
—– যেদিন তোমাকে তোমার স্বামী ডিভোর্স করবে সেদিনই বুজবে একটা মেয়েকে তার স্বামী বিনা দোষে ডিভোর্স দিলে তাতে ঠীক কতটা কষ্ট হয়।
— নে আপু সই করে দে । আপু ডিভোর্স পেপার ও কলম হাতে নিয়ে বললো না ভাই উনাকে আমি অনেক ভালোবাসি । আমি তা পারবো নাহ।
— আমি তোমাকে কোনদিনও ডিভোর্স দিবো নাহ । ভয় পেয়ো নাহ,,কেননা আমি তোমার সামনে এসে কখনও আর স্ত্রীর অধিকার নিয়ে দাঁড়াবো না । শুধু তোমার কাছে আমার একটা অনুরোধ রইলো ,,,
আমি যেদিন মরে যাবো ঐদিন শুধু স্বামী হিসাবে তোমার পায়ের ধুলোটুকু দেওয়ার জন্য আমার জানাজার নামাযে গিয়ে দাঁড়াইও।
—- চল ভাই।
মাসুদ সাহেব যাওয়ার আগে একটা কথা বলে যাচ্ছি ঐ দিন সত্যিই সবটাই আপনার বোনের সাজানো নাটক ছিলো । আর হ্যাঁ একদিন এই এতিম-মিসকিন আর এতিম মিসকিন থাকবে নাহ। একদিন ঠীকই এরা নিজেদের ভাগ্যটাকে লিখবে।
— আবার ডিভোর্স লেটারটি নিয়ে বাসায় চলে আসলাম। এসে দেখি আব্বু বিছানায় বসে রয়েছেন। আপু ও আমি গিয়ে আব্বুর দুই পায়ের দুই পাশে বসলাম। কি হয়েছে বাবা তোদের??
—- আপু ডিভোর্স লেটারটা আব্বুকে দিলো। উনি পড়ে দেখে কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে বললেন,, বাবা এসব ধনী মানুষেরা আমাদের মতো মানুষদের সাথে শুধু স্বার্থ্যর জন্যই মিশে। যেমনটা আমাকে ঐ দিন ফাঁশিয়ে তোদের থেকে আলাদা হতে বাধ্য হয়েছিলো।
—- তোরা বাসায় নেই দেখে ভাবলাম আমি রান্নার কাজটা সেরে ফেলি। নিজ হাতে রান্না করেছি চল তোদের দুজনকে আমি আজ খাইয়ে দিবো। আব্বু রান্না করছে শুনে আমি কিছুটা অবাক হলাম।
—- আপু না খেতে চাইলেও আমার আব্বুর জোরাজুরি তে রাজি হয়ে গেলো। আব্বু আমাকে ও আপুকে খাইয়ে দিচ্ছে। প্রথমবার খাবার মুখে দিতেই এতটা স্বাদ লাগলো যে আমি অবাক হয়ে ভাবতে লাগলাম আব্বু এত সুন্দর রান্না পারেন।
—- এভাবেই বেশকিছুদিন কেটে গেলো ৷ আব্বু এসে একদিন বললো তুই কলেজ যাস না তাই প্রতিদিন এ
অনু নামের একটা মেয়ে এসে আমার কাছে কলেজ কেনও যাস না তা জানতে চাই।
—- আজ এসে বললো তোদের পরীক্ষার নাকি আর বেশিদিন নেই। কাল থেকে তুই কলেজ যাহ । আব্বু আমি আর পড়াশোনা করবো নাহ। আপু আমি তুমি আমাদের ওয়ার্কশপে কাজ করবো।
— না ভাই পড়াশোনা বাদ দিস নাহ । তুই বরং পড়াশোনার পাশাপাশি একটু আমাদের সাথে থাকিস তাহলে আব্বু আর আমিই পারবো সব দেখাশোনা করতে । আচ্ছা তাহলে কাল থেকে আমি কলেজ যাবো।
—- কিন্তু কাল আপু আমাকে আর তোকে থানার এস আই সাহেব ডেকেছেন । আব্বুর মামলার বিষয়ে কিছু কথা বলবেন।
—- আমি সন্ধ্যায় অনুর বাসায় রওনা দিলাম । অনুর আব্বুর জন্য নিচে সোফায় বসে আছি। উনি আসলে বললাম। স্যার আমি অনুর বন্ধু একটু দরকারে আপনার কাছে এসেছি।
—- ও আচ্ছা। অনুতো বাসায় নেই ওর বান্ধবীর বাসায় যাবে বলে গিয়েছে।
বলো কি খাবে,,?? না থাক স্যার আসলে আমার দরকারটা…
— হুম সেটা তো শুনবই,,, উনি একজন কে ডেকে নাস্তার জন্য কিছু নিয়ে আসতে বললেন। নাস্তা খেতে খেতে বললেন বলো কী দরকার ??
—- আসলে অপুসহ ওর কয়েকজন বন্ধু আমার বোনকে ইভটিজিং এর দায়ে জেলে যে কেসে আটকে আছে ,, আমার আপু ঐ কেস টা উইথড্র করবেন ।
—- ওহ আচ্ছা তাহলে কাল সকাল ৯ টায় তোমার আপুকে থানায় এসে একটা কাগজে সই করে দিয়ে যেতে বলো তাহলেই হবে। আচ্ছা তাহলে কাল যাবো থানায়।
নাস্তা খেয়ে বাসা থেকে বের হয়ে রাস্তা দিয়ে বাসায় আসছি,,
হঠাৎ অনু আমাকে দেখে ও গাড়ি ব্রেক করে,, গাড়ি হতে নামলো। আরে আবির কোথায় হারিয়ে গিয়েছিলে তুমি,,,?? অনেক দিন ধরে কলেজে আসো নাহ যে ??
— এমনি যাই নাহ। এমনি মানে ?? কি হয়েছে বলো??
কিছু নাহ কাল থেকে আবার কলেজ যাবো এখন আমি যাই আমার কিছু কাজ আছে।
ওহ,, চলো তাহলে আমি তোমাকে এগিয়ে আসি। নাহ তুমি বাসায় যাও বলে আমি চলে আসলাম অনু গাড়ির পাশে আমার দিকে তাকিয়েই রইলো।
—- পরেরদিন আপুকে থানায় নিয়ে গিয়ে একটা কাগজে সই করতে বললাম। আপু সই করলে বললাম আপু তুই বাসায় যাহ আমার একটু কাজ আছে সেরে এ পাশ দিয়ে কলেজে যাবো।
—- আপু চলে গেলে আমি গিয়ে থানার বাইরে দাঁড়িয়ে আছি,, অপুসহ ওর বন্ধুরা বার হয়ে আসলো । আমি ওদের দিকে যেতেই অপু আমাকে মারতে ধেঁয়ে আসলো। ঘুষি মারবে বলে হাত তুলেছে ওমনি আমি দুই হাতজোড় করায় ও হাতটা নামিয়ে নিলো।
—- ভাই প্রথমেই আমি মাফ চেয়ে নিচ্ছি সরি ।
তোমার সাথে কিছু কথা বলার ছিলো। বল কি বলবি,, ভাই আমি জানি তুমি হয়তো ভাবছো আমি আর আমার বোন যে এসব করেছি তা কিন্তু সত্যি নয়। মানে,,??
মানেটা হলো মিতুর ভাই আমাদেরকে এগুলো করতে বাধ্য করেছিলো। ঐদিন পার্কের মধ্যে মিতুকে চড় মারতে মিতুর ভাই ই আমাকে বলেছিলো।
—- এই সব মিতুর ভাইয়ের খেলা । তোমার থেকে ওনার বোনকে দূরে সরে রাখবে বলেই উনি এসব করেছেন। মিতু তোমাকে সত্যিই ভালোবাসে। ধুর ওর ভালোবাসা এতদিন জেলে আছি একটাবার খোঁজ নিয়ে দেখেনি। ঐ শালীর জন্যই আজ আমার জেল খাঁটা লাগলো । আর ওকে কে ভালোবাসে আমি ওর সাথে ভালোবাসার নাটক করেছি ওর বাবার টাকা-পয়সার লোভে,, ভেবেছিলাম বিয়ে করে সব হাতিয়ে নিবো। কিন্তু শালি এখন পাল্টি মেরে দিয়েছে।
— না ভাই মারে নিহ ও এখনো ভালোবাসে তোমায় ।
ওর ভালোবাসা বার করবো।
ভাই এখন আমাকে মাফ করে দাও প্লিজ। তোর কোন দোষ নেই,, তোর সাথে আমার কোন শত্রুতা নেই। আমার শত্রুতা মিতু ও ওর ভাইয়ের সাথে। দুই -ভাই বোনকে জব্দ করবো মিতুকে বিয়েটা করে।
—– আমি তাহলে এখন আসি ভাই ?? হুমম যাহহ,,আর ভালো থাকিস।
বাসায় আসলাম একটুপর আপুর ফোন বাজলে আমি গিয়ে দেখলাম মাসুদ ভাই ফোন করেছে। আমি আস্ত করে ফোনটা কেটে দিয়ে নম্বর টা ব্লকলিস্টে দিয়ে দিলাম।
— কে ফোন করেছিলো ভাই,,,?? সিম অফিস থেকে আপু। ওহ
আমি মনে মনে বলছি মাসুদ ভাই নিশ্চয়ই ফোন ধরলে বলতো,, লাবণ্য তুমি এটা কি করেছো?? অপুর কেসটি তুমি… ছিঃ লাবণ্য
— ভাবছি মিস্টার মাসুদ সাহেব এবার তুই বুজবি অপু যখন তোর বোনকে বিয়ে করে ঘাড়ে লাথি মেরে বাসা থেকে বার করে দিবে, তখন বুজবি বোনের ডিভোর্সটা কতটা কষ্টের হয় আর মিতু তুই আমার জীবন নিয়ে খেলেচিস আমার আপুর সংসারটা নাটক করে ভেঙ্গেচিস নাহ এবার দেখ তোর সাথেও কি হয়,,, তুইও বুজবি। শুধু সময়ের অপেক্ষা…..
..
..
..
চলবে?
..
(গল্পটি যদি আপনাদের ভালোলাগে
তাহলে ছোট্ট একটা কমেন্ট করে
জানিয়ে দিবেন)……./

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here