#গল্পটা_আমারই
(সুরমা)
পর্ব : ১৪
বাড়ির সামনে একা একা হাঁটাহাটি করছি। অর্ণব কোথায় আছে জানি না। মনে হলো ও হয়তো ঘুমাচ্ছে। তাই ওকে ডাকতে যাই নি। আমি হাঁটতে হাঁটতে বাড়ির সামনে পুকুরপাড়ে চলে আসলাম। এসে দেখি অর্ণব বরশী দিয়ে মাছ ধরছে। অর্ণবকে দেখে আমি দৌঁড়ে অর্ণবের কাছে গেলাম। অর্ণব আমাকে দেখে বলে,,
– কি ব্যাপার মহারাণী। ঘুম শেষ।
– হুম। তুমি এখানে আমাকে ডাকনি কেন?
– তুমি ঘুমাচ্ছিলে। ভাবলাম কি দরকার তার এতো সুন্দর আরামের ঘুমটা নষ্ট করার। আমি কথা বললাম না। অর্ণব বরশীতে টোপ দিলো। আমি বললাম,
– তুমি মাছ ধরতে পারো?
– হুম। ছোট বেলায় আমার সাথে মাছ ধরে কেউ পারতো না। আমি অর্ণবের পাশে বসলাম। ও একটু পরপর মাছ তুলতেছে। অর্ণবের মাছ ধরা দেখে আমার খুব ভাল্লাগছে। আমারও ইচ্ছে করছে মাছ ধরতে। আমি আগে কখনও মাছ ধরী নি। তবে এবার ইচ্ছে করছে। খুব ইচ্ছে করছে। আমি বললাম,
– আমিও মাছ ধরবো। আমার কথা শুনে অর্ণব আমার দিকে তাকিয়ে একটা হাসি দিয়ে বলে,
– তোমাকে মাছ ধরতে হবে না। তুমি পারবে না।
– না, আমি ধরবো।
– তুমি পারবে না। তুমি বসে থেকে দেখো। আমি অর্ণবের বাহু ধরে ঝাকিয়ে বললাম,
– আমি ধরবো। আমাকে একটা বরশী দাওনা। প্লীজ দাও। আমি কন্টিনিউয়াস অর্ণবকে ডিস্টার্ব করতে লাগলাম। অর্ণব আমার দিকে চেয়ে বলে,
– অহ, মীরা। তুমি খুব জেদ করো ইদানীং। অর্ণবের কথা শোনে আমি মুখটা কালো করে বললাম,
– আমি জেদ করি? তুমি আমাকে আর আগের মতো ভালোবাসো না। আমার কথা শোনে অর্ণব আমার দিকে ফিরে কেমন করে জানি তাকায়। ওর তাকানো দেখে আমি অসহায় দৃষ্টিতে তাকালাম। আমার চোখ ছলছল করছে। অর্ণব শান্ত কণ্ঠে বলে,
– তুমি পারবে না। তাছাড়া তোমাকে এখন বরশী এনে দিলে আমার আর মাছ ধরা হবে না। তুমি বরং চুপ করে বসে দেখো আমি কিভাবে মাছ ধরী।
– তুমি আমাকে বরশী এনে দিবে নাতো?
– তুমি এমন করছো কেন? সব কিছুতে জিদ করছো। আগে তুমি এমন ছিলে না। এখন সব কিছুতে জেদ করো। বায়না ধরো। এটা কিন্তু ঠিক না।
– তুমি আমাকে এভাবে বলতে পারলে? আমি কেঁদেই দিলাম। আমার কান্না দেখে অর্ণব বিস্মিত হয়ে গেলো। অর্ণব বরশী রেখে আমার গালে হাত দিয়ে চোখের পানিটা মুছে দিয়ে বলে,
– কি করছো? এভাবে ছোটদের মতো কাঁদছো কেন? চুপ করো। লোকজন দেখলে কি ভাববে? আমি কেঁদে কেঁদে বললাম,
– তুমি আমাকে বকা দিছো।
– আমি বকা দেইনি। আমিতো নর্মালি বললাম।
– না, একটু আগে তুমি আমাকে বকাই দিছো। আমি কান্নার গতি আরো বাড়িয়ে দিলাম। অর্ণব বলে,
– প্লীজ বন্ধ করো। আমি তোমার জন্য বর্শী নিয়ে আসছি। তবুও কান্না করো না। অর্ণব কোথায় থেকে জানি আমার জন্য একটা বরশী নিয়ে আসে। আমি অর্নবের কাছেই বসি। কিন্তু ওও বললো একটু দূরে বসতে। তাই একটু দূরে গিয়ে বসলাম। অর্ণব আমাকে সব দেখিয়ে দেওয়ার পরও আমি পারছিলাম না। এই সময়ে অর্ণব চার পাঁচটা মাছ ধরে ফেলে। আর আমি কিছুই পারছিলাম না। আমি বললাম,
– আমার বরশীতে মাছ ধরে না কেন?
– বলেছিলাম না তুমি পারবে না। সবাই সব কিছু পারে না। আমি একটু রেগে বললাম,
– চেষ্টা করলেই পারে।
– ঠিক আছে। তুমি চেষ্টা করো। আমি আবার মাছ ধরার চেষ্টা করতে লাগলাম। কিন্তু পারছি না। আমি বরশীতে টোপটাও লাগাতে পারছিনা। এটার জন্যও অর্ণবকে ডিস্টার্ব করি। আমি অসহায় হয়ে বসে আছি। আমি একটাও মাছ পেলাম না। আর অর্ণব মিনিটে মিনিটেই মাছ ধরে। হঠাৎ আমার মাথায় একটা বুদ্ধি এলো। আমি অর্ণবের সাথে গা মিশে দাঁড়িয়ে বললাম,,,
– আমি তোমার জায়গায় বসবো। তুমি উঠো। আমার কথা শোনে অর্ণব অবাক হয়ে বললো,
– মানে?
– তুমি যেখানে বসছো সব মাছ গুলো এখানে। আমায় জায়গায় একটাও মাছ নাই। আমি এখানে বসবো। তুমি উঠো।
– মাছ এখানে মানে কি? পুকুরে সব জায়গায় মাছ আছে। তুমি ধরতে পারছো না তাই বলো।
– তুমি বজ্জাত। আমাকে পচা জায়গা সিলেক্ট করে দিসো। যাতে আমি মাছ না পাই। আর নিজের জন্য ভালো জায়গা সিলেক্ট করছো। আমার কথা শোনে অর্ণব চোখ গোল গোল করে হা করে আছে। আমি অর্ণবের হাত ধরে টেনে তুলে বললাম
– সরো আমি মাছ ধরবো। এবার মাছ ধরে দেখাবো। হুম।
– মীরা, কি সব ছেলে মানুষী করছো বলোতো।এখান মাছ আছে ওখানে নেই এটা কোনো কথা?
– হ্যাঁ। এটাই কথা। আমি অর্ণবকে তুলে দিয়ে ওর জায়গায় বসলাম। এবার বেশ ভালো লাগছে। এবার আমি অনেক মাছ ধরবো। অর্ণব কিছুক্ষণ আমার দিকে চেয়ে থেকে আমার জায়গায় গিয়ে বসে। কিন্তু কি আশ্চর্য, ওখানে বসেও অর্ণব দুটো মাছ ধরে ফেলেছে। আর আমি একটাও না। মনটা খুব খারাপ হলো। আমার কান্নাও পাচ্ছে। আমি অর্ণবকে ডাক দিয়ে বললাম,
– ওই শোন না।
– বলো,
– আমি মাছ ধরতে পারছি না
– আচ্ছা তোমাকে ধরতে হবে না। তুমি দেখো আমি কিভাবে মাছ ধরী।
– না, আমিও ধরতে চাই।
– আচ্ছা তাহলে চেষ্টা করতে থাকো।
– চেষ্টা করেতো পারছি না।
– তাহলে বাদ দাও।
– বাদ দেবো কেন? আরো চেষ্টা করবো।
– আচ্ছা করো। এক সময় সফল হবাই। অর্ণব আবার নিজের কাজে মন দিলো। আমার এবার রাগ লাগছে। কি রকম স্বার্থপর মানুষ। আমিযে একটাও মাছ পাচ্ছি না সেটা একবারো বলছে না। ইচ্ছে করছে ওকে ধাক্কা মেরে পুকুরে ফেলে দিয়ে দৌঁড় দেই। কিন্তু দৌঁড় দিয়ে যাবো কোথায়? সেই তো ওদের ঘরেই যেতে হবে। যাওয়ার মতো জায়গা থাকলে সত্যি একটা ধাক্কা দিতাম ওকে। আমি মন খারাপ করে চুপ করে বসে রইলাম কিছুক্ষণ। চিন্তা করছি কি উপায়ে মাছ ধরা যায়। হঠাৎ মাথায় একটা গ্রেট বুদ্ধি এলো। এবার নিশ্চয় আমি সফল হবো। আহ! এবার খুশিতে আমার মনটা ডান্স দিচ্ছে। আমি দৌঁড়ে অর্ণবের কাছে গেলাম। অর্ণব আমার দিকে তাকিয়ে বললো,
– এবার কি মনে হচ্ছে সব মাছে এখানে চলে এসেছে?
– না।
– তাহলে উঠে এলে যে? মাছ ধরবে না?
– ধরবো। তোমার বরশীটা দাও। আমার কথা শোনে অর্ণব ভ্যাবাচেকা খেয়ে বলে,,
– কি দেবো?
– তোমার বরশীটা দাও। তোমারটা বেশি ভালো। তাই তোমারটায় মাছ ধরে। আমারটা ভালে না। তাই আমারটায় একটি মাছও ধরে না।
– দুটো বরশীই এক। দুটোই ভালো।
– তবুও তোমারটা দিয়ে ধরবো। দাওনা। তুমি আমারটা নাও
– ইস! একটু পরপর কি করছো? একবার জায়গা চেঞ্জ করো। এখন আসছো বরশী চেঞ্জ করতে। তোমার প্রবলেমটা কি?
– দাওনা। আমি ওটা দিয়ে মাছ ধরবো। আমি অর্ণনবের হাত থেকে বরশীটা কেড়ে নিলাম। এবার মনে হলো পারবো। বরশী টা নেওয়ার সময় অর্ণব অদ্ভুত ভাবে তাকিয়ে ছিল আমার দিকে। আমি অর্ণবের বরশী নিয়েও বেশ খানিকক্ষণ ট্রাই করলাম। বাট আমাকে দিয়ে কিছু হলো না। অবশেষে হতাশ হলাম। কিন্তু অর্ণব আমার বরশী দিয়েও মাছ ধরেছে। আমি বুঝতে পারলাম জায়গা বা বরশীতে কোনো সমস্যা নেই। আমি নিজেই পারছিনা কিছু। আমার মনটা খারাপ হলো। আমি অর্ণবের কাছে বরশী দিয়ে দিলাম। মন খারাপ থাকার কারণে কোনো কথা বললাম না। আমি চলে আসতে নিলে অর্ণব আমাকে ডাক দেয়,
– মীরা? অর্ণবের ডাকে আমি পিছন ফিরে তাকাই। অর্ণব বলে,,,
– এদিকে আসো। আমি অর্ণবের কাছে গেলে ওও আমাকে টেনে নিজের কোলে বসায়। আমি অবাক হয়ে হয়ে অর্ণবের মুখের দিকে তাকাই। অর্ণব আমাকে ঘুরিয়ে বসায়। আমার পিঠ অর্ণবের বুকের সাথে মিশে। আমার শরীর থরথর করে কাঁপছে। আগে কখনও এতো কাছে আসে নি। এভাবেও জড়িয়ে ধরে নি। নতুন ফিলিংসে বরফ হয়ে যাচ্ছিলাম আমি। কিন্তু ভালোলাগাও কাজ করছিল। ভালোবাসার মানুষের স্পর্শ। আমি চোখ দুটো বন্ধ করে ফেললাম। অর্ণব আস্তে করে বললো,,
– চলো, দুজন একসাথে মাছ ধরি।অর্ণব আমার হাতও বরশীর কাঠিতে রাখলো। আমার মন বরশী বা মাছ ধরায় এখন নেই। আমার মন হারিয়ে গেলো অর্ণবের উষ্ণ স্পর্শে।
চলবে—–