গল্পটা_আমারই পর্ব : ১৩

#গল্পটা_আমারই

পর্ব : ১৩
(সুরমা)

অর্ণবের সাথে বাড়ি এসে দেখলাম আন্টি রান্না করে আমাদের জন্য বসে আছেন। অর্ণবের বাসায় আসার পরও আন্টির সাথে আমার তেমন কথা হয়নি। আন্টি সকালে রান্না নিয়ে বিজি ছিলেন। রাতের বেলায় আমি ক্লান্ত ছিলাম। তাই শুয়েই ঘুমিয়ে গেছিলাম।

আমরা রুমে ঢুকতেই আন্টি বললেন,
– এতো সময় কোথায় ছিলি তোরা? খাবি না? আমি কিছু বললাম না। অর্ণব বললো,,,

– মীরাকে আমাদের এলকাটা ঘুরে দেখাচ্ছিলাম।
– এলাকা দেখাবি ভাল কথা। আগে সকালের খাবার খাবি না? তুই না খেলে তো সমস্যা নাই। একটা মেয়েকে নিয়ে এসেছিস তাকে তো অন্তত খেয়ার করবি। মেয়েটা সেই সকালে একটু পিঠা খেয়েছো। এখন কতো বেলা হয়ে গেছে। মেয়েটার নিশ্চয় ক্ষিধে পেয়েছে। আন্টির কথা শোনে আমি বললাম,,,

– সমস্যা নাই আন্টি। আমার ক্ষুধা লাগে নি। ক্ষুধা লাগলে নিজের থেকেই খাবারের কথা বলতাম। আন্টি আমার দিকে এগিয়ে এসে আমার মাথায় হাত দিয়ে বললেন,,,

– দেখো এখন কয়টা বাজে। এখনও ক্ষুধা লাগেনি এটা বললেই হলো? যাও, হাত মুখ ধুয়ে আসো আমি খাবার দিচ্ছি। অর্ণব তুও যা। হাত মুখ ধুয়ে খেতে আয়।

আমরা দুজনেই ফ্রেশ হয়ে আসলাম। খাবার টেবিলে বসতেই খাবারের ঘ্রাণ নাকে এসে সুড়সুড়ি দিতে লাগলো। আহ! কি সুন্দর ঘ্রাণ। খাবারের ঘ্রাণে আমার পেটের ক্ষুধাটা অনেক বেড়ে গেলো। এবার মনে হচ্ছে আমার সত্যি ক্ষুধা লেগেছে।

আন্টি মাছ ভাজি, মাছের ভর্তা, দুই তিন রকমের মাছের তরকারি, দেশি মুরগি রান্না করেছেন। মাছের ভর্তাটা এতো এতো টেস্টি আমি শুধু মাছের ভর্তা দিয়েই ভাত খেয়েছি।

আন্টি আমার প্লেইটে একের পর এক খাবার দিতে লাগলেন। আমি একটু একটু সব খেয়েছি। তবে মাছের ভর্তাটা আমার চোখে জল এনে দিয়েছিল। এর আগে এত টেস্টি ভর্তা খাই নি।

আন্টি এতো ভাল রান্না করেন বলার মতো না। আন্টির সাথে অনেক্ষণ গল্প করলাম। আন্টি আর আংকেলের জীবন সম্পর্কে অনেক কিছু জানলাম। আন্টি আর আংকেল একে অপরকে খুব ভালবাসতেন।

আংকেল স্কুল মাস্টার ছিলেন। আংকেল আন্টিকে খুব ভাল বুঝতেন। অর্ণব নাকি আংকেলের মতো হয়েছে। আংকেলেও নাকি অর্ণবের মতো লম্বা ছিল। চেহারায় নাকি ৮০% মিল আছে।

আন্টি আমার বাবা মা সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলেন। এও জিজ্ঞেস করলেন, আমি বিয়ের পর তাদের এই বাড়িতে থাকতে পারবো কিনা।

আমি বললাম, আমি অর্ণবকে ভালবাসি। ওর জন্য সব করতে পারবো। এ বাড়িতে থাকতে আমার কোনো রকম প্রবলেম হবে না। আমার কথায় আন্টি স্বস্তি পেলেন।

আন্টির সাথে কথা বলে উনাকে খারাপ লাগে নি। পৃথিবীতে যত ভাল মা আছেন সবার বিচার বিবেচনা করলে তিনিই হয়তো প্রথম লাইনে থাকবেন। আমি কোনো মাকে খারাপ বলছি না। তবে আমার দেখার মধ্যে অর্ণবের মা বেস্ট।

আন্টির সাথে কথা বলার পর আমার মনে হলো, লোকে বলে মা যদি ভাল হয় তাহলে নাকি সন্তানও ভাল হয়। অর্ণব আর আন্টি হলেন তার প্রমাণ।

দুপুরে আমি ঘুমালাম। ঘুম ভাঙ্গলো আন্টির ডাক শুনে। চোখ খুলে দেখলাম আন্টির হাসি হাসি মুখ করে বসে আছেন। আন্টিকে দেখে আমিও একটু হাসলাম। আন্টি বললো,,

– আসার পর থেকে তুই তো টাইম মতো কিছুই খাচ্ছিস না। আমি উঠে বসে বললাম,
– একটু আগেই তো খেয়ে ঘুমালাম।

– সেই দশটায় খেয়েছিস। এখন দুইটা বাজে।
– আমি তখন অনেক খেয়েছি আন্টি। এখনও পেট খালি হয়নি। আমার কথা শোনে আন্টি হেসে বললেন,

– শুধু মাছের ভর্তা দিয়ে এটুকু খেয়েছিলি। এতটুকু খেলে হবে? আরো বেশি বেশি খেতে হবে। আমি চোখ দুটো বড় বড় করে বললাম,

– আন্টি, সারাদিন এতো খেলেতো আমি মটু হয়ে যাবো।
– মটু হবি কেন? তুই এখনও যথেষ্ট চিকন। আরেকটু মোটা হলে দেখতে ভাল লাগবে। মেয়েদের একটু লুতুপুতু না হলে ভাল লাগে না। তোর শরীর তো তক্তা। হাড্ডি হাড্ডি। মাংস নেই বললেই চলে। তুই বস, আমি এখানে তোর জন্য খাবার নিয়ে আসি।

– আন্টি আমার এখন খেতে ইচ্ছে করছে না।
– ইচ্ছে না হলেও খেতে হবে। আন্টি খাবার আনার জন্য চলে যায়। আমি উঠে ফ্রেশ হয়ে রুমে আসতেই দেখি আন্টি খাবার নিয়ে বসে আছেন। প্লেইট ভর্তি খাবার। খাবারের পরিমাণ দেখে আমার চোখ ছানাবড়া। আমি বললাম,,,

– আন্টি আমি এতো খেতে পারবো না। আমি অসহায় হয়ে আন্টির দিকে তাকালাম। আন্টি আমার হাত টেনে নিজের পাশে বসালো। তারপর নিজেই খাবার মাখাতে লাগলো। আন্টি আমার মুখের কাছে লোকমা এনে বললো,

– হা করর, আমি খাইয়ে দেই। তুই নিজে থেকে তো খাবি না বুঝতে পেরেছি। আমার চোখে পানি চলে এলো। আন্টির থেকে এতোটা ভালোবাসা আশা করিনি। আমি হা করলে আন্টি আমাকে খাইয়ে দিতে লাগে।

আমি শুধু আন্টির মুখের দিকে তাকিয়ে ছিলাম। আন্টি কথা বলছিলেন আর আমাকে খাইয়ে দিচ্ছিলেন। আমার কানে আন্টির কথা পৌঁছালো না। আমি শুধু আন্টির মায়াবী মুখের দিকে তাকিয়ে ছিলাম।

কখন যে প্লেইটের সব খাবার শেষ করে ফেলেছিলাম নিজেও জানি না। আন্টি আমাকে পানি খাইয়ে দিতে দিতে বললেন,,,,

– এবার কার পেটে গেলো খাবারটা? আমি কিছু বললাম না। আন্টির হাতের ছোঁয়ায় খাবারের স্বাদটা বেড়ে গিয়েছিল। আমার কেবল মনে হচ্ছিল আমি অমৃত খেলাম। আন্টি প্লেইট গুলো নিয়ে চলে যেতে লাগলে আমি বললাম,,,

– আন্টি। আমার ডাক শুনে আন্টি আমার দিকে ফিরে তাকায়। আমি উঠে গিয়ে আন্টিকে জড়িয়ে ধরলাম। আন্টিও আমাকে জড়িয়ে ধরে বলে,
– পাগলি মেয়ে।

– আন্টি তুমি অনেক ভালো। আমি সব সময় তোমার সাথে থাকতে চাই। আমাকে তোমার কাছে রাখবে? আমার কথা শোনে আন্টি হেসে বললো,,,

– তোর মতো লক্ষ্মী একটা মেয়েকে কি দূরে রাখা যায় বল? অর্ণবের একটা চাকরি হলেই আমি তোকে আমার কাছে নিয়ে আসবো।

চলবে——-

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here