গল্পটা আমারই পর্ব : ১২

#গল্পটা আমারই

পর্ব : ১২
(সুরমা)

আমি প্রায় এক ঘণ্টার মতো দৌঁড়ালাম। অনেক গুলো ছবিও তুলেছি। অর্ণব দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতে উচু একটা জায়গার উপর বসে পড়ে। কিন্তু আমার ঘুরা শেষ হয়না। এক সময় আমিও ক্লান্ত হয়ে গেলাম।

আমি অর্ণবের পাশে বসে ওর পিঠের উপর নিজের শরীরের সবটা ভর ছেড়ে দেই। অর্ণবকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরি। অর্ণব বলে,,,,
– ঘুরা হয়েছে?
– হুম। কি সুন্দর। আমার খুব ভাল লেগেছে।
– তা তো তোমাকে দেখেই বুঝতে পারছি।

– জানো, এর আগে কখনও এতোটা আনন্দ পাইনি।
– এর থেকেও সুন্দর দৃশ্য দেখাবো। এর থেকেও বেশি আনন্দ পাবা। এটাতো কিছুই না। অর্ণবের কথা শোনে আমি অবাক হয়ে বললাম,,,,,
– সত্যি?
– হুম
– কি দৃশ্য বল না
– এখন বলা যাবে না। বললে ইন্টারেস্ট কমে যাবে।
– কমবে না। বল না কি দেখাবে।

– উহু। আমি অর্ণবকে ছেড়ে দিয়ে রাগি কণ্ঠে বললাম,,,

– সবটা যখন বলবে না তাহলে একটু বললে কেন? আমার কথা শোনে অর্ণব আমার দিকে ফিরে তাকায়। আমি কথাটা একটু হাইফার হয়েই বললাম। অর্ণব আমার দিকে তাকিয়েই আছে। আমি উঠে হাঁটতে শুরু করলাম। আমাকে চলে আসতে দেখে অর্ণব আমাকে পিছন থেকে ডাকতে থাকে আর দৌঁড়ে আসতে থাকে।

আমি ফিরেও তাকালাম না। অর্ণব দৌঁড়ে এসে আমার সামনে দাঁড়ায়। আমি অর্ণবের দিকে না তাকিয়ে অন্য দিকে তাকালাম। তবে আড়চোখে অর্ণবকে দেখলাম। অর্ণবের মুখটা দেখার মতো ছিল।

বেচারা সত্যি ভেবে নিয়েছে আমি রাগ করেছি। আমিও সেরকম ভাব নিলাম। কিন্তু আমি একটুকুও অর্ণবের উপর রেগে নেই। ওর উপর রাগ করে থাকা যায় না। অর্ণব করুণ ভাবে বলে,,,,,

– সরি। আর এরকম করবো না। আমি অর্ণবের দিকে ফিরে মুখে ভেংচি দিলাম। অর্ণব বেচারা আমার দিকে অসহায় ভঙ্গিতে তাকিয়ে আছে। তবে অর্ণবের ফেইসটা এতোটা ইনোসেন্স লাগছি। আমার খুব হাসি পাচ্ছিল। আমি নিজের হাসি আটকাতে না পেরে হেসেই দিলাম। অর্ণব আমার হাসি দেখে বেকুব হয়ে গেছে। অর্ণব বলে,,,,,

– হাসছো কেন?
– তোমার মুখটা দেখে। আমার কথা শোনে অর্ণব নিজের মুখে হাত বুলিয়ে বলে,,,,

– আমার মুখে কি হয়েছে? অর্ণবের কাণ্ড দেখে আমি হাসতে হাসতে কুটিকুটি হয়ে যাচ্ছি। অর্ণব বেচারা এবার অনেকটা বিস্মিত হলো। আমার এক হাত ধরে টেনে নিজের কাছে নিয়ে আসে।

আমি অর্ণবের বুকের সাথে মিশে যাই। সাথে সাথে আমার মুখ থেকে হাসি উদাও হয়ে যায়। অর্ণব আমাকে শক্ত করে নিজের সাথে চেপে ধরে। আমার শরীর কাঁপছে। হার্টবিটও শীতল হয়ে গেছে বরফের মতো। আমি অর্ণবের বুকে ধাক্কা দিয়ে বললাম,,,,
– ছা,ড়ো। অর্ণব ছাড়লো না। বরং আরেকটু আঁকড়ে ধরে বললো,,,,

– এবার হাসো। আমি মাথা নিচু করে ফেললাম। অর্ণব আমার থুতনি ধরে মাথা উচু করায়। এবার অর্ণবের নিঃশ্বাস আমার মুখের উপর পড়ছিল। অর্ণবের চোখে তাকাতেই আমার বুকটা ধরাম করে উঠে। অর্ণবের চোখ দুটো কেমন নেশার মতো ছিল। অর্ণবের চোখের ভাষা আমি বুঝতে পারছিলাম।

এই চোখ দুটি আজ অন্য কিছু বলছে। অর্ণবও আমার দিকে অপলকে তাকিয়ে ছিল। অর্ণবের মুখটা প্রায় আমার মুখের সাথে লাগে লাগে অবস্থা। কি হতে যাচ্ছে কিছুই বুঝতেছিনা। শুধু জানি, আমার অবস্থা এটাক্ট করার মতো।

আমি চোখ দুটি বন্ধ করে এক হাত দিয়ে অর্ণবের গলা জড়িয়ে ধরলাম। অর্ণব নিজের নাক দিয়ে আমার নাকে ঘষা দিতেই আমার সারা শরীর ফ্রিজ্ড হয়ে যায়। আমি মূর্তিমান হয়ে যাই। আমার শরীরটা যেন ৪৪০ বোল্টের একটা শকট খেয়ে গেলো। আমি অর্ণবের হাতে কামছি দিয়ে ধরলাম।

অর্ণবের সাথে রিলেশনের অনেকদিন হয়ে গেছিল। কিন্তু কখনও অর্ণব আমাকে একটা চুমুও খায় নি। আমার মাঝে মাঝে অনেক ইচ্ছে করতো। বাট এসব কথা অর্ণবকে বলতে পারতাম না। আমাদের রিলেশনটা অন্য রিলেশন গুলোর মতো ছিল না। একদম অন্যরকম ছিল।

আজ যখন অর্ণব আমার এতটা কাছে এসেছিল আমি ধরেই নিয়েছিলাম অর্ণব আমাকে,,,,,,,,,,,,
কিন্তু না। অর্ণব আমাকে অন্যভাবে অবাক করে দিয়েছিল।

অর্ণব হুট করে আমাকে কোলে তোলে নেয়। আমি অর্ণবকে আঁকড়ে ধরি। চোখ মেলে তাকিয়ে দেখি অর্ণব আমার দিকে তাকিয়ে আছে। আমি বেশ লজ্জা পেলাম। মুখটা অর্ণবের বুকে লুকালাম। অর্ণব আমাকে কোলে নিয়ে হাঁটতে লাগলো।

আমিও অর্ণবের বুকের সাথে মিশে রইলাম। অর্ণব বলে,,,,,
– কি ভাবছিলে?? দিনদিন চিন্তা শক্তি সব লুপ্ত হয়ে যাচ্ছে??? বেয়াদব মেয়ে। নেক্সট টাইম এমন চিন্তাভাবনা করলে ঢিল মেরে ফেলে দিবো ডাস্টবিনে। আমি অবাক হয়ে অর্ণবের দিকে তাকালাম। আশ্চর্য, অর্ণব কিভাবে জানলো আমি কি ভাবছি? অর্ণব আবার বললো,,,

– আমি সব জানি। তোমাকে দেখলেই আমি বুঝতে পারি তোমার ভেতরে কি চলছে। আমি কিছু বললাম না। তবে খুব লজ্জা লাগছে। ইচ্ছে করছে মাটির নিচে চলে যাই।

এই প্রথম আমি অর্ণবের এতটা কাছে। এতোটাই কাছে যে, আমি অর্ণবের হার্টবিটটা গুণতে পারছিলাম। ওর হার্টবিটটা বলছিল,,
‘ভালোবাসি মীরা’
ওর নিঃশ্বাসটা ফিল করছিলাম। ওর স্পন্দনটা আমি ঠের পাচ্ছিলাম।

আমি অর্ণবের দিকে চেয়ে রইলাম। খুব খুব কাছ থেকে অর্ণবকে দেখছিলাম। এতো ভাল করে আগে কখনও ওকে দেখার সুযোগ হয়নি।

রাস্তায় উঠে অর্ণব আমাকে কোল থেকে নামিয়ে দেয়। আমি অবাক হয়ে অর্ণবের দিকে তাকিয়ে রইলাম। এতোটা রাস্তা যখন আনতে পারলো বাকি রাস্তাটা নিলে কি এমন ক্ষতি হতো??

আমি কি বেশি ভারী নাকি? আমার অভিমান হলো। ইচ্ছে করছিল অর্ণবকে দুটো ঘুষি মেরে দেই। অর্ণব বললো,,,,

– এটা রাস্তা। এদিক দিয়ে লোকজন যাতায়াত করে। গ্রামের কেউ তোমাকে আর আমাকে এভাবে দেখলে সমালোচনা করতে শুরু করবে। তোমাকে খারাপ ভাববে। মাঠে লোকজন ছিল না বলে কোলে করে এনেছি।

আর আমি চাইনা কেউ তোমাকে নিয়ে কথা বলুক। তোমাকে কেউ কিছু বললে আমি বেশি কষ্ট পাবো। চলো। অর্ণব একটু সামনে সামনে হাঁটছিল। আমি পেছনে। আমার ওর প্রতি ভালোবাসা বেড়ে গেলো। ইচ্ছে করছিল বলি,,,,

– অর্ণব, তোমাকে স্যালুট। আমি কতটা ভাগ্যবতী তোমার মতো জীবন সঙ্গী পেলাম। কিন্তু বলা হলো না। আমরা অনেক কথাই বলতে চাই। কিন্তু পারি না। পরিস্থিতি আমাদের বাঁধা দেয়। বা আবেগ আপ্লুত থাকার কারণে বলা হয়না।

তবে কিছু না বলা কথাও প্রিয় মানুষটা বুঝে নেয়। সব কথা যদি সবাইকে বুঝিয়ে বলতে হয় তাহলে আলাদা করে প্রিয়জন শব্দটা ব্যবহার করার কি দরকার? আমি জানি, আমার এই না বলা বাক্য অর্ণব ঠিক বুঝে নিবে।

চলবে——-

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here