গল্পটা_আমারই পর্ব : ১১

গল্পটা_আমারই

পর্ব : ১১
(সুরমা)

সারাদিন জার্নি করার ফলে আমি এক ঘুমে রাত কাবার করে ফেলি। রাতে আমি বিছানায় শুয়েছিলাম এর বাহিরে কোনো কথা মনে নেই।

সকালে কারো স্পর্শে আমার ঘুম ভেঙ্গে যায়। অর্ণব আমার মুখের উপর থেকে চুলগুলো আলতো করে সরিয়ে দেয়। ওর স্পর্শে আমি চোখ খুলে দেখি অর্ণব আমার পাশে বসে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। অর্ণবকে দেখে আমি লাফ দিয়ে উঠে বসি। অর্ণব আমার দিকে কিছুটা ঝুকে ছিল। আমি উঠে বসাতে অর্ণবও সাথে সাথে সোজা হয়ে যায়। আমার হঠাৎ এমন লাফ দেওয়াতে অর্ণবও কিছু চমকে উঠে। অর্ণব হাত দিয়ে ইশারা করতে করতে বলে,,,,,,

– রিলেক্স। আমি অনেকটা দূরত্ব বজায় রেখে বসি। দুই হাত দিয়ে নিজের হাত কচলাই। তারপর আবার অর্ণবকে দেখি। না, এ সত্যি অর্ণব। আমি প্রথমে অর্ণবকে দেখে ভেবেছিলাম স্বপ্ন দেখছি।

আগে কখনও ঘুম থেকে জেগে চোখ মেলেই অর্ণবকে দেখার সৌভাগ্য হয়নি। এই প্রথম। কাল আমি অর্ণবের সাথে ওর বাসায় এসেছি এটাও ভুলে গেছি। আমি বললাম,,,,,

– তুমি এখানে কিভাবে আসছো? আমার কথা শোনে অর্ণব অনেকটা অবাক হয়। সে ভালই বুঝতে পারছে কালকের কথা আমি ভুলে গেছি। অর্ণব বলে,,,,,

– তুমি কি আমাকে কোনোভাবে স্বপ্ন মনে করছো নাতো? একটু নিজেকে সময় দাও। চোখ থেকে ঘুমটা চলে গেলে বুঝতে পারবে আমি এখানে কিভাবে এলাম। অর্ণবের কথা শোনে আমি অর্ণবের দিকে চোখ বড় বড় করে তাকাই। অর্ণব আমার দিকে এক কাপ চা এগিয়ে দিয়ে বলে,,,,,
– নাও, চা খাও। আমি নিজের হাতে বানিয়েছি।
– আমি অর্ণবের হাত থেকে কাপ নিতে গিয়ে খেয়াল করলাম আমি মেসে নেই। আমার মনে পড়ল কাল অর্ণবের বাসায় আসার কথাটা। আমি একটা হাসি দিয়ে বলি,,,,,,,
– আসলে আমি বেশিক্ষণ ঘুমালে এরকম প্রবলেম হয়। মনে থাকে না আগের কথা। তখন কিছুটা সময় মনে হয় আমি কোথায়? এখন সকাল না বিকাল। এরকম। আমার কথা শোনে অর্ণব হাসলো। অর্ণবের হাসিটা জাস্ট এসে আমার বুকে দক করে লাগলো।

এতো এতো সুন্দর করে কিভাবে হাসে? ওও কি সত্যি এতো সুন্দর হাসে নাকি আমার কাছে সুন্দর মনে হয়। শুনেছি, যাকে ভালোবাসে তার সব কিছুই নাকি ভাললাগে। আমারও কি তাই?

অর্ণব বললো,,,,,,,
– বিয়ের পর কি এমন হওয়ার পসিবিলিটি আছে? ঘুম থেকে উঠে আমাকে চিনতে না পেরে মার শুরু করলা? আমি অর্ণবের দিকে তাকালাম। অর্ণব আমাকে কিছু বলতে না দিয়ে নিজেই বললো,,,,,

– চিন্তা করো না। বিয়ের পর আমি তোমাকে এতো ঘুমাতে দিবো না। অর্ণবের কথায় আমি বেশ লজ্জা পেলাম। মাথাটা নিচু করে চায়ের কাপে চুমুক দিলাম। অর্ণব আবার বললো,,,,,

– ঘুমের সময় তোমাকে অপরূপ লাগছিল। মনে হচ্ছিল কোনো অপ্সরীকে দেখছিলাম আমি। ছোট বাচ্চাদের মতো শুয়ে ছিলে। আমার চোখে তো ঘোর লেগে গেছিল।

ঘুমের মাঝে কাউকে যে এতটা মায়াবী লাগতে পারে আমার জানা ছিল না। এর আগে ঘুমের মধ্যে কোনো মেয়েকে দেখার সৌভাগ্য আমার হয়নি। আমি শুধু অর্ণবকেই দেখছিলাম। ওও আমার ঘুমের এতো এতো প্রশংসা করছে? ওর প্রত্যেকটা কথা ভাল লাগছিল। আবার লজ্জাও পাচ্ছিলাম।

আমি প্রসঙ্গ পাল্টাতে বললাম,,,,,,
-চা টা তুমি বানিয়েছো?
-হুম, কেমন হয়েছে বলো? যদিও আমি জানি আমি অনেক ভাল চা বানাই। হলএ আমিই সব সময় চা বানাই। তবুও তোমার মুখ থেকে শোনতে চাই। তোমার কেমন লেগেছে?

-খুব ভাল। তবে আমি এতো ভাল চা বানাতে পারিনা। আমার কথা শোনে অর্ণব হেসে বললো,,,,
-সমস্যা নাই। বিয়ের পর চা বানানোর দায়িত্বটা আমার। চা টা না হয় আমি বানাবো।

-শুধু চা এর দায়িত্ব নিবে?
-না, তোমার দায়িত্বও আমার। না চাইতেও আমি হেসে দিলাম। অর্ণবও হাসলো। আমি বললাম,,,,,
-এখন কয়টা বাজে??
– ৬টা। আমি অবাক হয়ে বললাম,,,,,
– ছয়টা? ঢাকায় থাকলে তো এখন মনে হতো ৮টা বাজে

– হুম, গ্রামের পরিবেশটা একটু দেরিতে উষ্ণ হয়। চা টা খেয়ে ফ্রেশ হয়ে চলো। আজ তোমাকে একটা জিনিস দেখাবো। তোমার ভাল লাগবে।
– কি দেখাবা?

– সারপ্রাইজ ভেবে নাও। এখন বলবো না। নিজের চোখে দেখবে। গ্রাম এলাকায় ভাল ঠাণ্ডা শীত শীত একটা আমেজ। ঢাকা শহরে এসময় তেমন শীত লাগে না। এখন ফ্যান চালিয়ে ঘুমাতে হয়।

সারপ্রাইজ দেখার জন্য আমি আর ওয়েট করতে পারলাম না। তাই তাড়াতাড়ি চা শেষ করলাম। ফ্রেশ হয়ে বাইরে বের হয়ে দেখলাম আন্টি রান্না করছেন।

মাটির চুলায় রান্না করছেন। সকালের মৃদু বাতাসে আমার শীত অনুভূতি হলো। আমি ঘর থেকে বাইরে বের হয়ে দাঁড়ালাম। অর্ণবদের বাসাটা হাফ বিল্ডিং। চারপাশ ইটের দেয়াল। উপরে টিনের চাউনি। তবে বাড়িটা বেশ পুরোনো।

অর্ণব আন্টির পাশে বসে আছে। আমাকে দেখে আন্টি বলে,,,,,

– ঘুম কেমন হলোরে মা?
– জ্বি আন্টি ভাল।
– এদিকে আয়। আমি আন্টির পাশে গিয়ে দাঁড়ালাম। আন্টি আমার দিকে একটা মোড়া এগিয়ে দিয়ে বললো,,,,

– বস এখানে। পিঠা বানিয়েছি। গরম গরম কয়েকটা খা। বেশ মজার পিঠা। আমি খেয়াল করে দেখলাম আন্টি অলরেডি চার পাঁচ রকমের পিঠার আইটেম করেছেন।

এতো পিঠার নামও আমি জানি না। তবে পিঠা গুলো দেখে মনে হচ্ছে লোভনীয়। বেশ মজা হবে। আমি সব রকম একটা একটা করে নিলাম। সব গুলোই মজা ছিল। তবে আন্টি জোর করতে লাগলেন আরো খাওয়ার জন্য।

কিন্তু আমার পেটে আর জায়গা নেই। তাই আন্টিকে বললাম পরে খাবো।

পিঠা দিয়ে সকালের নাস্তা করলাম। আজ দিনটা একটা নতুন রুটিনে চলছে। সকালটাও শুরু নতুন করে। আমি অর্ণবদের বাড়ির চারপাশটা একটু ঘুরে দেখলাম। বাড়ির সামনে একটা পুকুর আছে।

চারপাশে বিভিন্ন ফলের গাছ। পুকুর পাড়ে বসার মতো জায়গাও করে রেখেছে। অর্ণব আমার পাশে এসে বলে,,,,,

-কি দেখছো? আমরা তোমাদের মত বড়লোক না। গরীব। গরীবের কি আছে কি দেখবা? আমি অর্ণবের কথা শোনে অর্ণবের দিকে তাকিয়ে বললাম,,,,,

-হাত, পা, কান, চোখ এসব থাকতে কেউ গরীব হয়না। আমি এসব কথা পছন্দ করিনা। তবুও কেন বলছো? আমি কি তোমার টাকা পয়সা দেখে প্রেম করছি? তোমাকে ভালবাসি। তোমার কিছু থাক বা না থাক, তুমি তবুও আমার। আমি কিছুটা হাইপার হয়েই কথাটা বললাম। অর্ণব আমার হাত চেপে ধরে বলে,,,,,

-রাগ করছো কেন? আমি সিরিয়াসলি বলি নি। অর্ণবের চাহনি দেখে আমি নিজেকে শান্ত করলাম।

অর্ণব আমাকে নিয়ে বের হলো। দুজন হাঁটছি। আমার ইচ্ছে করছিল অর্ণবের হাত ধরে হাঁটি। বাট সাহস হলো না। গ্রাম এলাকা। কেউ দেখলে যদি অন্য কিছু মনে করে। অর্ণব হাঁটছে একটু সামনে সামনে। আমি তার খানিকটা পেছনে।

প্রায় দশ পনেরো মিনিট হাঁটার পর আমরা একটা অন্য জগতে চলে এলাম। হলুদ পরীর জগত হয়তো এটা। চোখ যতদূর যায় মাঠে হলুদে হলুদে খেলা করছে।

এতো সুন্দর দৃশ্য দেখে আমি লাফিয়ে উঠলাম। অর্ণবকে জড়িয়ে ধরে বললাম,,,,,

-ওয়াও, কি সুন্দর। আই য়্যাম জাস্ট স্পিসলেসনেস। এগুলো কি? এর আগে এতো সুন্দর জিনিস আমি দেখিনি। আমার চোখ জুড়িয়ে গেলো। আমাকে এভাবে লাফাতে দেখে অর্ণব হাসতে হাসতে বললো,,,,

-পাগলি একটা। এগুলো সর্ষেফুল।
-এতো সুন্দর?
-হুম। এখন তো সুন্দর্য কমে গেছে।ডিসেম্বর জানুয়ারিতে এরচেয়ে কয়েকগুণ বেশি সুন্দর দেখায়। এখন তো সব তুলে নিয়ে যাবে। অর্ণবের কথা শোনে আমি অর্ণবের শার্ট কামছি দিয়ে ধরে আহ্লাদী কণ্ঠে বললাম,,,,,,

-তুমি আমাকে আরো আগে নিয়ে আসলে না কেন? আমি ভরপুর সুন্দর্য উপভোগ করতে পারলাম না। আমার কান্না পাচ্ছে। আমি আবার বললাম,,,,

-আমি এই ফুল গুলোর ভেতরে একটু ঘুরে আসি?
-যাও, দেখো এর ভেতরে সরু রাস্তা আছে। ঐ রাস্তা দিয়ে হাঁটবে। অর্ণবের কথা শোনে আমি সর্ষে ক্ষেতের ভেতরে দৌঁড়াতে শুরু করলাম। আমার ইচ্ছে করছিল সর্ষের উপর গড়াগড়ি খাই। আমার এতো ভাল লাগছিল।

চলবে——–

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here