গোধুলীর শেষ প্রহরে পর্ব -২৫+২৬ ও শেষ

#গোধুলীর_শেষ_প্রহরে
#পর্বঃ২৫ (অন্তিমপাতা প্রথম অংক)
#রাউফুন (ছদ্মনাম)

‘হিয়াকে নিশ্চয়ই মনে আছে তোমার? পারলে হিয়াকে বিয়ে করে নিও। মেয়েটা তোমার সন্তানের মা হতে চলেছে! হতে পারে এটাই তোমার প্রায়শ্চিত্তের প্রথম ধাপ।’

‘হোয়াট? কোন হিয়া?’

‘কেন ঠিক কত গুলো হিয়াকে চেনো তুমি? আমায় দেখো, চিনতে কষ্ট হচ্ছে খুব?’

চকিতে তাকালো শৈবাল। কারণ এই কন্ঠঃ তার পুর্ব পরিচিত। হিয়াকে দেখে তার মাথায় যেনো বিনা মেঘে বজ্রপাত হলো। চার মাস পর সে হিয়াকে দেখলো। নতুবা সে হিয়া নামের মেয়েটিকে একেবারে ভুলেই গেছিলো। কুহুও দাঁড়িয়ে পরলো হিয়া সামনে আসায়।

‘হ্যাঁ ঠিকই শুনেছো? দুর্ভাগ্যের বিষয় হলো এই আমি হিয়া তোমার সন্তানের মা হতে যাচ্ছি। যদি সত্যিই নিজের ভুলের মাসুল দিতে চাও তবে আমাকে বিয়ে করে নিজের ভুলের একটু প্রায়শ্চিত্ত করো!’

‘হিয়া তুমি এতো দিন পর?’

‘যাক চিনেছো তবে?’

‘কুহুলতা মেম তুমি হিয়াকে কিভাবে চেনো?’

‘সেটা না হয় হিয়ার থেকেই জেনে নাও। আমি আসছি।’

কুহু চলে এলো। আর দাঁড়ালো না একদন্ডও। শৈবাল অসহায় হয়ে তাকিয়ে রইলো কুহুর যাওয়ার দিকে। হিয়া শৈবাল কে ঘৃণার দৃষ্টিতে দেখে চোখ নামিয়ে নিলো। ওর মুখোমুখি হলো সে। হিয়া টলমলে চোখে শৈবাল এর চোখে চোখ রাখলো। লম্বা দম ফেলে বলে উঠলো,

‘একজন মদ্যক নেশাগ্রস্ত মানুষ কে ধাক্কা মেরে ফেলে দেওয়া সহজ কিন্তু মাটিতে পরে থাকা একজন মদ্যক কে টেনে তোলা অনেক কঠিন। এই কথাটি বেশ উচ্চতর। একজন পাপী কে গালাগাল, অভিযুক্ত করা সহজ কিন্তু তাকে পাপের পথ থেকে উদ্ধার করা বেশ কঠিন। আমরা এই ক্ষেত্রে বেশির ভাগ সময় সহজ কাজ টাই করি। কোনো পাপী কে ভালো করার চেষ্টা না করে উল্টো তাকে দোষারোপ করি,তার থেকে দূরে সরে যায়। তাই আমি কঠিন হলেও সেই পাপ থেকে তোমাকে বের করবো। আমার অনাগত সন্তানের মুখের দিকে চেয়ে আমি তোমাকে কোনো শাস্তি দিলাম না। কারণ আমাকে না ভালোবেসেও তোমার আমার সঙ্গে কাটানোই হবে সবচেয়ে বড় শাস্তি। আমার থেকেও তুমি শুধুই দয়া, আর ঘৃণাই পাবে শৈবাল। আমার এই বাচ্চা তো তার বাবাকে পাবে এর চেয়ে বেশি আর কিছুই চাই না আমি। কাজী রেডি আছে চলো। আর এই যে তোমার অবিশ্বাস হতে পারে ভেবেই রিপোর্ট নিয়েই এসেছি আমি।’

শৈবাল কি বলবে ভেবে পেলো না। থমকে দাঁড়িয়ে রইলো এক ধ্যানে। বাচ্চা টা তো তার এটা অস্বীকার করার তো আর কোনো কারণ নেই। হিয়া অত্যন্ত ভালো একটা মেয়ে। আর ওর সঙ্গে কিভাবে এতো কিছুর পরেও প্রতারণা করবে সে। আজকে তার বিবেক, বিবেচনা তাকে ভীষণ ভাবে পোড়াচ্ছে। সেদিন হিয়ার বলা কথা গুলো যে অক্ষরে অক্ষরে মিলে যাচ্ছে। কেন এই পাপের বোঝা এতো টা ভারী লাগছে? ভেতর থেকে দগ্ধ হতে হচ্ছে প্রতিনিয়ত। কেন এই অসহ্য যন্ত্রণা থেকে মুক্তি হচ্ছে না। কার কাছে গেলে একটু ভালোবাসা মিলবে? একটু শান্তি মিলবে। অজান্তেই চোখের কার্নিশ বেয়ে জল গড়িয়ে পরলো শৈবালের। হিয়ার নজর এড়ালো না তা। সে একটা আঙুলে সেই চোখের এক ফোঁটা পানি নিয়ে আঙুলের ডগা থেকে ছিটকে ফেলে দিলো। এরপরে শৈবাল কে তাচ্ছিল্য করে বলে,

‘আহারে বেচারা! তোমার মতো হতভাগা, অসহায়, হতভাগ্য, মানুষ আমি এই জীবন দেখিনি বিশ্বাস করো। মানুষ ভালোবাসা হীন নিঃস্ব! আর আজ তোমার ও সেই একই অবস্থা। যাক গে আর নিজেকে নিচে নামিও না শৈবাল। আমাকে বিয়ে করা ছাড়া আর কোনো উপায় নেই তোমার কাছে।’

শৈবাল পাথরের মতো এগিয়ে চললো। মূর্তির ন্যায় স্তম্ভিত সে। কাতরতা , অনুভূতি প্রবণতার ভীরে নিজেকে হারিয়ে ফেলছে সে। হিয়াকে বিয়ে করে কাজী অফিস থেকে শৈবাল বাড়ি ফিরছিলো। তখনই ওর বন্ধুরা ওর সামনে দাঁড়িয়ে পরলো। শৈবাল এই এক মাসে একবারও ওর বন্ধুদের একজন কেও দেখতে পাইনি। মোর্শেদ, শিশির, রিমন, আশিক, শাহেদ এবং স্বপন কাউকেই না। ও যখন হসপিটালের ব্যাডে শুয়ে মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছিলো তখনো একজন ও ওর সঙ্গে দেখা করতে আসেনি। আর না খোঁজ নিয়েছিলো।
সত্যিই বিপদের সময় অনেকের আসল রুপ সামনে চলে আসে।

শিশির ঠেস মেরে শৈবাল কে উদ্দেশ্য করে বলে,

‘কিরে বিয়ে করে নিলি আর আমাদের একবার জানালি না পর্যন্ত? এই তোর বন্ধুত্ব ?’

স্বপন বলে, ‘শেষ মেষ তুই সেই রিজেক্ট করা মেয়েকেই বিয়ে করলি? তুই নাকি এঁটো জিনিস দ্বিতীয় বার ছুঁয়ে দেখিস না? তবে এখন কি হলো রে?’

শৈবাল ক্ষুব্ধ হয়ে ক্রুর গলায় বলে, ‘তোরা এখানে? কি সমস্যা তোদের? এই বন্ধুত্ব কোথায় ছিলো এতোদিন যখন আমি সুই’সাই’ড করার চেষ্টা করেছিলাম। ধারে কাছে তো আসিস নি। ভেবেছিলি যদি পুলিশ ক্যাসে ফেসে যাস! তাই কেউই আমার একটা খোঁজ ও নিস নি। এটাই কি তোদের বন্ধুত্ব?’

চুপসানো গলায় শাহেদ বলে,
‘বাহ বাহ! এখন তোর আমাদের সমস্যা মনে হয়? আমরা কেন পুলিশ কে’সে জড়াবো বলতো?

‘আরেব্বাস! এটা তোর আবার কি নতুন ভোল। ভোল পালটে নতুন ভোল ধরেছিস নাকি? পুরাই চেঞ্জ! মাথায় টুপি, সাদা পাঞ্জাবি। ওহো আতুর ও লাগিয়েছিস দেখছি!’

রিমন এর কথায় রাগ টা মাথা চাড়া দিয়ে উঠলো শৈবালের। শৈবাল কে ব্যাঙ্গ করে শব্দ করে হাসছে ওরা সবাই। হিয়া চুপ থাকতে চেয়েও পারলো না আর। সে তীব্র আক্রোশে বলে,

‘শৈবাল কি করবে না করবে সেসব কি তোমাদেরকে বলে বলে শাক্ষী রেখে করবে? ও যখন হসপিটালের ব্যাডে শুয়ে মৃত্যুর শেষ প্রহর গুনছিলো তখন তোমরা কোথায় ছিলে? কোথায় ছিলো তোমাদের বন্ধুত্ব? আর আজ ও বিয়ে করছে শুনে এসে ওঁকে নোংরা কথা বলছো! এতে যে নিজেদের নোংরা মন মানসিকতার পরিচয় দিচ্ছো তা কি জানো? ওঁকে নিয়ে ঠাট্টা করছো? এই যে ওর পরিবর্তন নিয়ে তোমরা ওঁকে ব্যাঙ্গ করছো এটা কি খুব ভালো করছো তোমরা? সবার প্রথম ও একজন মানুষ। আশরাফুল মাখলুকাত! আর একজন মানুষের মধ্যে পরিবর্তন আসবে এটা স্বাভাবিক! ঠাট্টা না করে পারলে ওর মতো তোমরাও নিজেকে বদলাও।’

মোর্শেদ ঠোঁট বাকিয়ে হেসে বলে, ‘ ভাসন দিও না যাও যাও! যে মেয়ে বিয়ের আগেই নিজের বয়ফ্রেন্ডের সঙ্গে*** সে আবার বড় বড় কথা বলছে।

শৈবাল দাঁতে দাঁত চেপে বলে, ‘তোরা চুপ করবি নাকি আমি চুপ করার ব্যবস্থা করবো? ভাবিস না শৈবাল চুপ আছে বলে ও দুর্বল!’

শিশির মোর্শেদের পক্ষ নিয়ে বলে,

‘কেন ভুল কি বলেছে মোর্শেদ। আমরা তোকে আর ভয় পাই না যাহ। আর আমরা তো এইসবই জানি তোর আর হিয়ার ব্যাপারে। শুধু হিয়া কেন কত মেয়ের কথায় তো জানি আমরা। তা হিয়া আমরা তো হসপিটালে যায়নি তুমি গেছিলো তো? আমরাও তো এটা বলতে পারি যে তুমি শৈবাল কে টাকার জন্য বিয়ে করেছো!’

অপমানে, রাগে, ঘেন্নায় সর্বাঙ্গ রি-রি করছে হিয়ার। কথা বলার প্রয়োজন মনে করলো না হিয়া। মুখ থেকে কথা বের হচ্ছে না ওর। শৈবাল আর নিজেকে সামলাতে পারছে না। রাগে থরথর করে কাঁপছে ওর শরীর। এরাই কি সেই বন্ধুগুলো তার। কাদের সঙ্গে মিশিতো সে। এদের পাল্লাই পরে তার অন্যায়ের মাত্রা টা অনেকটা বেড়ে গেছিলো। যারা শৈবাল এর নাম শুনে ভয় কাঁপতো আর আজ কিনা তারাই ওঁকে কথা শুনাচ্ছে। দুনিয়ায় স্বার্থপর মানুষের আনাগোনা আজকাল বড্ড বেশি। যখন শৈবাল ওঁদের কে টাকা পয়সা দিতো তখন শৈবাল ওদের কাছে খুব ভালো ছিলো। আর আজকে ওর পরিবর্তনে ওঁকেই হাসির খোড়াক করছে। শৈবাল নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে না পেরে শিশিরকে মা’র’তে নিলে হিয়া বাঁধা দিলো। ওঁকে টেনে ধরে বলে,

‘নোংরা লোক কে মেরে নিজের হাত নোংরা করার মানেই হয়না। আর হ্যাঁ তোমাদের কে বলছি আমি শৈবাল কে হসপিটালে দেখতে গেছিলাম কি না গেছিলাম সেই কৈফিয়ত আমি তোমাদের কে দেবো না। আরও একটা কথা, আমার স্বামীর থেকে দূরে থাকবে! নইলে অন্য ব্যবস্থা নেবো আমরা।’

ওঁদের সবাইকে ক্রস করে হিয়া শৈবাল কে টেনে নিয়ে গাড়িতে বসলো। ড্রাইভার গাড়ি চালানো শুরু করলো। হিয়া শৈবাল কে ওয়াটার বটল এগিয়ে দিলো। শৈবাল ঢকঢক করে পানি খেলো। রাগ এখনো তার শিরায় শিরায়। বেশ কিছুক্ষন চুপ থেকে নিজেকে সামলালো শৈবাল। হাতের বটল টা এগিয়ে দিতে দিতে হিয়াকে জিজ্ঞেস করলো,

‘বললে না তো কুহুলতাকে কিভাবে চেনো তুমি?’

হিয়া সাবলীল, অকপটে সহজ সরল ভাবে স্বীকারোক্তি দিলো,

‘সেদিন আমি তোমাকে হসপিটালে দেখতে গেছিলাম। আড়ালেই দেখে চলে আসছিলাম তখনই কুহুলতার সঙ্গে পরিচয়। আমাকে কান্না করতে দেখে ফেলেছিলো। এরপর আমাকে চেপে ধরাই আমি ওঁকে সবটা বলি।’

শৈবাল ঠোঁট গোল করে বলে,
‘ ওহ আচ্ছা। কিন্তু তোমাকে আমার সুই’সাই’ডের খবর কে দিলো?’

‘আমি এক মাস আগেই ঠিক ঠাক ভাবে বুঝতে পারি আমি প্রেগন্যান্ট। তুমি ওষুধ খাইয়েছিলে তাই আমি ভেবেছিলাম সেজন্য আমার মেন্সট্রুয়েশন বন্ধ আছে। কিন্তু দুই মাসের মাথায় আমার মাথা ঘুরা সহ, বমিও হতে লাগলো। এরপর টেস্ট করে দেখি আমি প্রেগন্যান্ট। মা বাবা এটা জানতে পেরে আমাকে সেদিনই বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছিলো। তাই আমি তোমার খোঁজে তোমার বাড়ি যায় আর তখন দারোয়ান চাচাকে জিজ্ঞেস করে জানতে পারি তুমি সুই’সা’ইড এটেম্ব করার চেষ্টা করেছো।’

‘ তাহলে এতোদিন তুমি কোথায় ছিলে?’

‘আমি একটা হোস্টেলে ছিলাম। কুহুলতা আপু টাকা পয়সা দিয়ে আমাকে অনেক সাহায্য করেছে।’

‘আমায় ক্ষমা করে দিও হিয়া। ভালো স্বামী হইতো হতে পারবো না কিন্তু একজন ভালো বাবা হয়ে দেখাবো। কথা দিচ্ছি তোমাকে।’

হিয়া ফিচেল হাসলো। কিছু বললো না। সে জানে শৈবাল তাকে ভালোবাসবে না। কিন্তু তাও এই অবচেতন মন চাই শৈবাল তাকে অনেক ভালোবাসুক। হইতো এটাই ওর ভবিতব্য। একটা দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে আপনা আপনি। শৈবাল আর ঘাটাইনি হিয়াকে। সে জানে এখন হিয়া কি ভাবছে। সে মনে মনে আওড়ালো,

‘আ’ম স্যরি হিয়া। আমি সত্যিই আমার কুহুলতা মেমের জায়গায় অন্য কাউকে বসাতে পারবো না। কোনো এক গোধুলীর শেষ প্রহরেও আমি কুহুলতাকেই খুজে নেবো। আমার অন্তরের অন্তস্থলে শুধুই কুহুলতার বাস থাকবে। দিনের সূচনায় রাতের শেষ প্রহরে আমার অস্তিত্ব জুড়ে শুধুই কুহুলতার অস্তিত্ব থাকবে।’
#গোধুলীর_শেষ_প্রহরে
#পর্বঃ২৬ (অন্তিম পাতা শেষ অংক)
#রাউফুন (ছদ্মনাম)

সপ্তাহ জুড়ে পুরোদমে বিয়ের তোরজোর চলেছে। অবশেষে আরও দুই জোড়া ভালোবাসার মানুষ এক হয়েছে। তৌহিদ আর কুহুর বিয়ে হয়েছে আর তানহার আর সুপ্রিয়র। মজার বিষয় হলো তানহা এই বিয়েতে কিছুতেই রাজি হবে না শেষে ভাইয়ের ইমোশনাল ব্ল্যাক মেইলের শিকার হয়ে বিয়েটা করেছে। কবুল বলার পর শব্দ করে ভেঁভেঁ করে কেঁদে বুক ভাসিয়েছে। আহাজারি করে বলেছে, ‘এখন আমার কি হবে গো? শেষে কিনা এমন একটা আজগুবি মানুষের সঙ্গে বিয়ে হলো ? আমার ভাইয়া টা এতো নিষ্ঠুর কেন? দেখে শুনে এমন একজন বদ নজর লোকের সঙ্গে আমাকে বিয়ে দিলো। একেবারে ছোঁচা লোকটা!’

এদিকে তৌহিদ কি আর এমনি এমনি বোনকে বিয়ের জন্য ব্ল্যাকমেইল করেছে। কুহুলতা খা’ড়া’র উপর রেখেছিলো তাকে। প্রথমে তো তৌহিদ বিয়ের কথা বলতে এসেছিলো তখন তার সেকি ভয়! সালমান হোসেনের সামনে এসে এক ঘন্টা দাঁড়িয়েছিলো কিন্তু কোনো কথায় বলতে পারে নি। সালমান হোসেনের সামনে দাঁড়িয়ে হাটু কাঁপছিলো তার। অনেক অবাক হয়ে গেছিলেন সালমান হোসেন এতে। তৌহিদ উনার সাথে যতক্ষণ কথা বলেছে সে বসেনি। দাঁড়িয়েই ছিলো পুরো সময়। এটা সেটা বলে গল্প করেছে তারা কিন্তু আসল কথায় বলতে পারেনি শেষ পর্যন্ত। সেদিন কুহুলতার যা ঝাড় খেয়েছে ভুলার নয়। অতঃপর কুহুলতা যখন বুঝতে পারলো তৌহিদের দ্বারা হবেই না বিয়ের কথা বলা। তখন সে বলেছিলো,

‘আপনি যদি না বলেন বিয়ের কথা তবে সুপ্রিয়র সঙ্গে আমার বিয়েটা হয়ে যাবে। ইহ জন্মে তো আপনি বলতে পারবেন না তাই আমার একটা প্ল্যান আছে। আপনি তানহার সঙ্গে সুপ্রিয়র বিয়ে দিন। এরপরে আমাদের লাইন ক্লিয়ার হলেই আমি বাবাকে বোঝাতে পারবো। বাবাও রাজি হয়ে যাবে তখন। যে করেই হোক তানহাকে রাজি করানোর দায়িত্ব আপনার। আর যদি না পারেন তবে আমি সুপ্রিয় কেই বিয়ে করে নিচ্ছি।’

আচ্ছা কোন মানুষ টা চাইবে তার ভালোবাসার মানুষ কে অন্য একজনের হোক? অবশেষে উপায়ন্তর না দেখে বোনকে ইমোশনাল ব্ল্যাকমেইল করে রাজি করিয়েছে। সুপ্রিয় আর কুহুর প্ল্যান ছিলো অন্য। কিন্তু যেহেতু শৈবাল কে সুপ্রিয় ক্ষমা করে দিয়েছে সেহেতু প্ল্যান টা বদলে গেছে। প্ল্যান টা ছিলো এমন, সেদিন সুপ্রিয় তানহার ছবি দেখিয়ে বলেছিলো সে তানহাকে ভালোবাসে। কিন্তু তানহা তার প্রস্তাব গ্রহন করছে না কিছুতেই। যেদিন তাদের বিয়ে থাকবে সেদিন তো তানহা, তৌহিদ আসবেই আসবে। সেদিন সুপ্রিয় বলে দিতো সবার সামনে তানহাকে বিয়ে করবে সে। মায়ের কথায় বাধ্য হয়েছে এই বিয়েতে রাজি হয়ে। এতে করে শৈবাল যখন শুনবে কুহুর বিয়ের কথা তখন শৈবাল কেও শান্তি দেওয়া হবে আর তানহাকেও তার পাওয়া হবে। কিন্তু মাঝে ঘটে গেলো অন্য এক অনবদ্য, অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা। এরপর সুপ্রিয় যখন তানহাকে বিয়ে করবে তখন কুহুলতা তৌহিদ কে বিয়ে করে নিবে। উপায় না পেয়ে প্রিতি, সালমান ও রাজি হয়ে যাবেন। ঝামেলা তো হতোই এতে। বেশ বড় ঝামেলা হতো। যাক কোনো রকম ঝামেলা ছাড়াই বিয়েটা হয়েছে। অবশ্য সুপ্রিয় পরে জানতে পেরেছিলো কুহুলতা যাকে ভালোবাসে সে আসলে তানহার ভাই।

তানহা বাসর ঘরে বসে আছে। নাক তার লাল হয়ে আছে। সেটা রাগে নাকি কান্নার ফলে বুঝতে পারছে না সুপ্রিয়। সুপ্রিয় এসে শিটিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। লাইটের হলদে নীলাভ আলোই তানহাকে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে। ইশ কি সুন্দর লাগছে তার বউটাকে। আচ্ছা মেয়েটা এমন হেয়ালিপনা কেন করছে বাচ্চাদের মতো? বিয়ের সময় কবুল বলেই কাঁন্না-কাটি শুরু করলো। এরপর সারা রাস্তায় কেঁদেছে আর খনে খনে কটমট করে তাকিয়েছে তার দিকে। বার বার ওর চাহনিতে নার্ভাস হয়েছে সে। এরপর এখন ঘরে এসে সেই কখন থেকে যে তার সামনে তার বিয়ে করা স্বামী দাঁড়িয়ে আছে সেটা কি তার চোখে পরছে না? কয়েকবার মিথ্যা মিথ্যা গলা খাকারী দিয়েছে সে। কিন্তু কাজ হয়নি। তানহা মুখ টা অব্দি তুলেনি। না আর তো সহ্য হচ্ছে না। হনহনিয়ে এগিয়ে গেলো সুপ্রিয়। সোজা তানহাকে পা’জা কোলে তুলে বারান্দায় গিয়ে বসলো একটা মুড়াই।

তানহা বিরাগ নিয়ে হাত পা ছুটাছুটি করছে। কিন্তু মুখ থেকে কোনো কথা বের করছে না। এই লোকটার সাথে সে কথায় বলবে না। বড্ড অস’ভ্য লোকটা। কোন সাহসে তাকে স্পর্শ করেছে। সহ্য হয় না এক্কেবারে সহ্য হয় না সুপ্রিয় নামের কুপ্রিয়কে। ছুটাছুটি করতে করতে এবার হাল ছাড়লো সে। কিন্তু সুপ্রিয় তাকে ছাড়েনি। একই ভাবে শক্ত হাতে ধরে আছে। সে সরস গলায় বললো,

‘এই শরীর নিয়ে আমার সঙ্গে পেরে উঠবে না তুমি সো চুপচাপ বসে থাকো। এখনো অব্দি একটাও কথা বলো নি তুমি আমার সঙ্গে! এতো জেদ কেন করছো?’

‘জেদের দেখেছেন কি?’

‘আচ্ছা আরও বাকি আছে বুঝি?’

তানহা সে কথার পরিপ্রেক্ষিতে কোনো উত্তর করলো না। খড়া গলায় বলে,

‘আপনি অত্যন্ত অভদ্র, অসহ্য একটা লোক। একজন মেয়েকে তার অনুমতি না নিয়েই স্পর্শ করেছেন। আমাকে স্পর্শ করার সাহস হয় কি করে আপনার? ছাড়ুন বা’দ’র লোক একটা।’

সুপ্রিয়ের মধ্যে কোনো হেলদোল নেই। সে তেছড়া ভাবে উত্তর দিলো, ‘আমার বিয়ে করা বউ তুমি পর নারী নও। আমার হোক আছে তাই আমি ছুঁয়েছি তাতে তোমার কি? আর এখনো তো কিছুই করিনি তাও অসভ্য উপাধী পেয়েছি! তাহলে তো অবশ্যই সেটা করবো যেটা আমি আজ করতে চাইনি। তবে শুরু করি অসভ্যতামো?’

তানহা শুকনো ঢুক গিলে নিলো। এই লোককে বিশ্বাস নেই। যা ইচ্ছে করতে পারে। তবুও মনে সাহস সঞ্চার করলো সে,

‘এই বিয়ে আমি মানি না। কাল ই আমি চলে যাবো।’

‘আচ্ছা তাই? রাত টা কাটুক দেখি কিভাবে যাও!’

বলেই তানহার ঘাড়ে ঠোঁট ছোঁয়ালো সুপ্রিয়। তানহা বিমুঢ় হয়ে গেলো। দু চোখ বন্ধ করে ঠোঁট কামড়ে ধরলো সে। সারা শরীর অস্বাভাবিক ভাবে কাঁপছে তার। সুপ্রিয়ের হাতের বাঁধন আলগা হতেই তানহা ঝামটা মেরে উঠে পরলো আর তীব্র আক্রোশে বলে উঠলো,

‘আপনি আমাকে স্পর্শ করবেন না। আমাকে ভালোবাসি ভালোবাসি করতেন কিন্তু যেই আমার চেয়ে সুন্দরী মেয়েকে দেখলেন সেই গলে গিয়ে তাকে বিয়ে করতে রাজি হয়ে গেলেন। আর এখন আবার আমাকে জোর করে বিয়ে করলেন। কি চাইছেন টা কি? আপনি তলারো খাবেন গোরারো খাবেন তাই না? ধান্দা’বাজ, ধুর’ন্ধর লোক একটা।’

সুপ্রিয় সন্দিহান গলায় বলে,

‘হিংসা হচ্ছে খুব? যাকে বলে জ্বলে পুড়ে খাক হয়ে যাওয়া!’

‘না হিংসা কেন করবো? সত্যি টা বলেছি।’

‘উহু পুরো পুরি সত্যি টা বলো নাই। কুহুলতা নিঃসন্দেহে সুন্দরী কিন্তু তাকে আমি ভালোবাসিনি। আমি একমাত্র তোমাকেই ভালোবেসেছি। এখনো তোমাকেই ভালোবাসি। তুমি তো সবটাই জানো তবুও এভাবে বলছো?’

‘হুম বলছি!’

শান্ত ভাবে কথাটি বললো তানহা। গলা ভারী হয়ে এলো তার। মুহুর্তের মধ্যে চোখ ভরে উঠলো। মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে রইলো সে। সেদিন তাকে না বলে সুপ্রিয় চলে গেছিলো সেই অভিমান এখনো রয়েই গেছে তার। অভিমান টা জড়ালো হয় তখন যখন এক মাসেও সুপ্রিয় তার সঙ্গে একটা বার দেখা করেনি।

সুপ্রিয় বুঝলো এখন তানহা কান্না করছে। বুঝলো তার বউয়ের অভিমান গুলো এখন গলে জল। তাই পিছনে থেকে জড়িয়ে ধরলো সে। তানহা কিছু বললো না। চুপচাপ শুধু সুপ্রিয়ের হাতে হাত রাখলো। সুপ্রিয় উচ্ছ্বাসের হাসি হাসলো। তার পা’গ’লি বউটার রাগ ভাঙলো তবে। নিঃশব্দে হেসে হাতের বাঁধন আরও শক্ত করলো সে।

‘কুহুলতা? কুহুলতা? এদিকে একটু আসুন তো! আমার টাই টা একটু বেঁধে দিন। আমার অভ্যাস টা একদম খারাপ করে দিয়েছেন আপনি। এখন আর একা বাঁধতে পারিনা।

‘আসতেছি। একটু অপেক্ষা করুন’

রান্না ঘর থেকে একটু জোরেই বললো কুহু।
তৌহিদ ঠোঁট প্রসারিত করে এক গাল হাসলো।

‘জলদি আসুন লেট হয়ে যাচ্ছে তো।’

কুহু শাড়ীর আঁচলে হাত মুছতে মুছতে ঘরে ঢুকলো। মিথ্যা রেগে বললো,

‘আগে তো একাই দিব্বি বেঁধে যেতেন টাই। আর এখন আলসেমি তাই না?’

‘হ্যাঁ বউ পেলে সবাই আলসে হয়।’

বলেই চোখ মারলো তৌহিদ। কুহু টাই বাঁধছিলো তৌহিদ ওর কোমড় চেপে ধরলো। এরপর কানে কানে ফিসফিস করে বললো,

‘ঘেঁমেও আপনাকে দারুন লাগছে কুহুলতা। নেশা লেগে যাচ্ছে একদম।’

‘আমাকে আপনার কাছে কখন সুন্দর দেখাই না বলুন তো? সব সময় বেশি বেশি বলেন।’

‘আমার বউ আমার কাছে মোস্ট বিউটিফুল লেডি! সুন্দর জিনিসের কদর করতে জানে তৌহিদ।’

‘এখন আপনার লেট হচ্ছে না। ছাড়ুন আমাকে।’

এরপরে একটু দম নিয়ে তৌহিদের কানে কানে বললো,

‘আজ আসার সময় একটা প্র‍্যাগনেন্সি কীট আনবেন তো! শিওর হওয়ার জন্য লাগবে আর কি।’

তৌহিদের চোখ জ্বলজ্বল করে উঠলো খুশিতে। আনন্দের সহিতে প্রসন্ন গলায় বললো,

‘আপনি সত্যি বলছেন? আমি বাবা হচ্ছি?’

‘হ্যাঁ সত্যিই?’

বলেই লজ্জায় মুখ লুকালো তৌহিদের বুকে। বিয়ের পর কুহু স্পষ্ট ভাবে জানিয়ে দিয়েছিলো তারা কখনো একে অপরকে তুমি করে বলবে না। আপনি ডাক টাতেও এক অভুত পুর্ন সুখ আছে। এই ডাকেই মধুমাখা, ছন্দে ছন্দ ভালোবাসা খুঁজে পাই কুহু। তৌহিদ হাতের বেষ্টনী মজবুত করলো। সুন্দর মুহুর্ত গুলো কত তারাতাড়ি চলে যাচ্ছে। দেখতে দেখতে কখন যে তাদের বিয়ের একবছর হয়ে গেছে টের ই পেলো না। এখন আরেকটা অস্তিত্ব আসবে জেনেই মুহুর্তের মধ্যে সারা শরীরে খুশির জোয়ার বয়ে এলো যেনো। এভাবেই যেনো সারাটা জীবন তারা একে অপরের সাথে কাটিয়ে দিতে পারে।

পরিশিষ্ঠঃ

জার্মানির প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের আধার রুগেন দ্বীপে রয়েছে অসংখ্য রিসোর্ট। এসব রিসোর্টে দম্পতিদের বেশি দেখা যায়। দ্বীপটি পর্যটকদের আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু। এছাড়া এখানে অনেক প্রাচীন শহর এবং সমুদ্রসৈকত রয়েছে। সেই বিখ্যাত দ্বীপের পাড়ে এক জোড়া কপতকপতী বসে তাদের মিষ্টি মুহুর্তে কাটাচ্ছে। বাতাসে মিষ্টতা ছড়িয়ে আছে। এখানে আরও হাজার খানেক কাপল রয়েছে।কেউ কারোর দিকে নজর দেওয়ার সময় নেই। সবাই নিজেদের ভালোবাসার মানুষ দের নিয়ে সময় কাটাতে ব্যস্ত।

মুহু সারাফের হাতের ভাজে নিজের হাত ডুবালো শক্ত করে। সুর্য ডুবু ডুবু। গোধুলীর শেষ প্রহর চলছে এখন। সূর্যের লালচে আঁভা আকাশের বুকে ঢলে পরেছে। দ্বীপের মাঝে সুর্যের সেই তেজস্বীহীন লালচে-ধূসর আভা ছড়িয়ে দ্বীপের সৌন্দর্য বাড়াতে ব্যস্ত। জার্মানিতেই সে আর সারাফ থাকছে এখন। সারাফ এখন আর নির্বাক নয়। এর পেছনেও মুহুর কৃতিত্ব রয়েছে। একদিন তারা ঘুরতে গেছিলো। মুহু সেদিন ইচ্ছে করেই আড়ালে চলে যায়। ঘুরতে গিয়ে মুহুকে হাড়িয়ে দিশাহারা অবস্থা সারাফের। কথাও বলতে পারে না সে। তার উপর তখন তার ফোন টাও তার কাছে ছিলো না। অনেক কেই ইশারা করে বুঝানোর চেষ্টা করেছে কিন্তু কেউই তার কথা বুঝতে পারেনি। ব্যস্ত রাস্তায় খুঁজতে খুঁজতে না পেয়ে ক্লান্ত হয়ে পরে সারাফ। বক্ষস্থলে মনে হয়েছে কেউ ভারী কোনো পাথর চাপিয়ে দিয়েছিলো। উত্তেজিত হয়ে রাস্তায় চিৎকার করে মুহুর নাম ধরে ডেকেছিলো কয়েকবার। অতঃপর মুহু তার সামনে এসে দাঁড়িয়েছে। সেদিন যে কি খুশি হয়েছিলো মুহু।বাড়ির সবাই খুব খুশি হয়েছিলো সেদিন। এরপর থেকেই সারাফ কথা বলতে পারে। কথা না বলতে পারার কারনে সারাফের জার্মানির চাকরিটা ছাড়তে হয়েছিলো। সবাই অবাক হয়েছিলো বটে এতো ভালো জব রিজেক্ট করায়। কারণ তার জব টাই স্পিচ দিতে হতো রোজ। পরবর্তীতে সারাফ মেইল করে জানিয়ে দেই সে মাঝে তার অসুস্থতার জন্য কথা বলতে পারেনি এখন কথা বলতে পারে। তাই আবার চাকরি টা করতে চাইছে।

মুহুকে নিয়ে সেকেন্ড টাইম হানিমুনে এসেছে সারাফ। গতবার হানিমুনে সাজেক গেছিলো মুহুর ইচ্ছে তে। তবে এবারে সারাফের ইচ্ছে তে জার্মানির বিখ্যাত রুগেন দ্বীপে এসেছে। মুহু সত্যিই অভিভুত হয়েছে এই সুন্দর দ্বীপে এসে। মুহু সন্তর্পণে সারাফের কাধে মাথা এলিয়ে দিলো। সারাফ বিগলিত হাসলো। নিরবে কেটে গেলো আরও কিছু মুহুর্ত৷ দুজনেই বিভোর দুজনায়। ফোনের রিংটোনে ধ্যান ভাঙলো মুহুর। সারাফকে ফোন করেছে শৈবাল। সারাফ ফোন রিসিভ করলো। কথা বলে সে দীর্ঘ শ্বাস ফেললো। সারাফের মন উচাটন দেখে মুহু চিন্তিত হয়ে জিজ্ঞেস করলো,

‘কি হয়েছে ফুলবাবু? শৈবাল ভাইয়া কি বললো?’

‘মিস্টার শাহরিয়ার সাইফ কে পুলিশ গ্রেফতার করেছেন। বাচ্চা পা’চা’র চক্রে তিনি যুক্ত ছিলেন। এতো দিন পাকাপোক্ত কোনো প্রমান না থাকাই তাকে এরেস্ট করতে পারেন নি। এবারে প্রমান সমেত তাকে গ্রেফতার করেছেন পু’লি’শ। এটাই জানালো শৈবাল।’

সাহিরাকে এখন শৈবাল মা ডাকে। তার হাতের রান্না না হলে শৈবাল এক বেলা খাবার খাবে না। হিয়া আর ওদের সম্পর্ক টা এখন এগিয়ে গেছে অনেকটাই। ওঁদের এক বছরের একটা ছেলে আছে। ওর নাম মুগ্ধ। বেশ মিষ্টি হয়েছে ছেলেটা। একদম বাবা নেউটে হয়েছে। মুহু আফসোস করে বললো,

‘পাপ বাপকেও ছাড়ে না! টাকার লোভ ছিলো বড্ড মানুষ টার। এতোদিনে তার অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রমান পাওয়া গেলো। তবে এটা তো একদিন হওয়ার ই ছিলো। মিথ্যা যতোই জোড়ালো করার চেষ্টা করুক না কেন শেষে সত্যিরই জোর ই বেশি থাকে। যায় হোক এটা নিয়ে মন খারাপ করো না তো।’

‘হুম। মুহু?’

‘হ্যাঁ বলো ফুলবাবু?’

‘তুমি খুশি তো আমাকে নিয়ে?’

মুহু সারাফের আরও একটু ঘনিষ্ঠ হয়ে বসলো। নিবিড়ভাবে চোখে হাসলো সে। নেশাত্বক কন্ঠে বলে উঠলো,

‘খুব খুশি আমি তোমায় পেয়ে। আমি তো ভাবিওনি তোমার মতো কাউকে আমার জীবন সঙ্গী হিসেবে পাবো। আ’ম সো হ্যাপি ফর ইউ ফুলবাবু।’

সারাফ উঠে দাঁড়িয়ে পরলো। আনন্দে আত্মহারা হয়ে চিৎকার করে বলে উঠলো,

‘আই লাভ ইউ! আই ফল ইন লাভ উইদ ইউ মেডলি মুহুলতা।’

ওর চিৎকার করে বলা কথাটি সমুদ্রের স্রোতের সাথে বারি খেয়ে আবার তার প্রতিধ্বনি হলো। দ্বীপের সৌন্দর্য বিভোর কয়েকজন ও তার দিকে তাকালো। তার চিৎকারে প্রায় সবাই ওঁদের কে দেখে হাসলো। মুহু লজ্জা পেয়ে সারাফের বুকে মাথা রাখলো। সারাফ দু’হাতে ওঁকে আগলে নিয়ে ওর ছোট ছোট ঘাড় চুলে ঠোঁট ডোবালো। মুহু আস্তে আস্তে বললো,

‘আই লাভ ইউ টু মাই হার হাইনেজ। এ জীবন তোমার নামে সঁপে দিয়েছি প্রথম থেকে। তোমার নামে আমার জীবন সারা জীবনের জন্য উৎসর্গ করলাম গোধুলীর শেষ প্রহরে।’

ভালোবাসা সবসময় সুন্দর যখন দুইজন মানুষ দু’জনকে খুব বুঝতে শিখবে, ভালোবাসায় মান অভিমান দুটোই থাকবে। মান অভিমান না থাকলে ভালোবাসার গভীরত্ব খুঁজে পাওয়া যায় না। ভালোবাসার মানুষ যেমনই হক না কেন যদি তাকে মন থেকে ভালোবাসা যায় তাহলে পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দর মানুষ টাই তার কাছে সে। সত্যিই তাই, সত্যিকারের ভালোবাসা গুলো রূপ দেখে নয়, মানুষ টাকে দেখে তার মনকে বিচার করেই হয়।

‘দুমুঠো পরচর্চা আর একমুঠো ভালবাসা। ভালবাসা বেঁচে থাক, পরচর্চা নিপাত যাক।’

সমাপ্ত

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here