গোধূলির রাঙা আলোয় পর্ব -০৩

#গোধূলির_রাঙা_আলোয়
লেখনীতেঃ তাহমিনা তমা
পর্ব-০৩

জানিস মুগ্ধ আর শুদ্ধ ভাইয়া দু’জনে জমজ ভাই।

বেলকনিতে বসে কফি খাচ্ছিলো উৎসা আর তামান্না। আজ দুদিন হলো এই বাড়িতে তাদের। হঠাৎ তামান্নার কথায় অবাক হয়ে তাকালো উৎসা। কারণ শুদ্ধ আর মুগ্ধের চেহারায় অনেকটা মিল থাকলেও তাদের জমজ মনে হয় না। শুদ্ধ উজ্জ্বল শ্যামবর্ন আর মুগ্ধ ফর্সা। মুখের আদুলে মিল থাকলেও হুবহু একইরকম নয়, জমজ ভাই-বোনদের যেমনটা থাকে আর দুদিনে শুদ্ধকে একটু অন্তমুর্খী মনে হলেও মুগ্ধকে বেশ মিশুক মনে হয়েছে।

তামান্না আবার বললো, শুদ্ধ ভাইয়া পনেরো মিনিটের বড় মুগ্ধ ভাইয়ার থেকে। তবে ছোটবেলা থেকেই তাদের জমজ মনে হতো না, চেহারায় মিল না থাকায়। আর তাদের আচরণেও মিল নেই। একজনের কালো পছন্দ হলে একজনের সাদা। একজন মাকে বেশি ভালোবাসে তো অন্যজন বাবাকে।

উৎসা অবাক হয়ে বললো, অদ্ভুত তো।

হুম দু’জনে সত্যিই অদ্ভুত।

উৎসা একটু চিন্তা করে বললো, তারমানে বড় ভাইয়ের আগে ছোট ভাই বিয়ে করে ফেলেছে।

তামান্না দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো, সেটা নিয়েই মুগ্ধ ভাইয়া আর ভাবির মাঝে এখনো ঝামেলা।

উৎসা বুঝতে না পেরে বললো, মানে বুঝলাম না ?

খালামুনির ইচ্ছে ছিলো দুই ভাইয়ের বিয়ে একসাথে দিবে। এরিশা আপুরা আর দু’বছর পরেই দেশে ফিরবে।

উৎসা বললো, এরিশা কে ?

এরিশা আপু আর এরিনা আপু খালামুনির বান্ধবীর মেয়ে। এরিশা আপুর সাথে শুদ্ধ ভাইয়ার আর এরিনা আপুর সাথে মুগ্ধ ভাইয়ার বিয়ে ঠিক হয়েছিলো।

উৎসা চমকে উঠলো তামান্নার কথায়। শুদ্ধ কারো বাগদত্তা, এটা সূক্ষ্ম ব্যাথার সৃষ্টি করলো তার মনে।

আপুরা দেশে ফিরলে তখন দুই ভাইয়ের একসাথে বিয়ে দিবে ঠিক করেছিলো। কিন্তু তার আগেই মুগ্ধ ভাইয়ার গোপন বিয়ের কথা সামনে আসে আর এটাও জানা যায় ভাবি প্রেগনেন্ট। সব জেনে খালামুনি সসম্মানে ভাবিকে ঘরে তুললেও ভাইয়াকে সবাই ইগনোর করে।

উৎসা নিজেকে সামলে বলে উঠলো, ভাবিকে দেখে তো প্রেগনেন্ট মনে হয় না।

উনার মিসক্যারেজ হয়ে গেছে।

উৎসা উত্তেজিত গলায় বললো, কীহ্ ?

ভাইয়ার বাইকে কী যেনো কাজে বাইরে গিয়েছিলো। ফেরার সময় ছোট একটা এক্সিডেন্ট হয়েছিলো৷ সেটার জন্য নাকি মিসক্যারেজ হয়ে গেছে।

উৎসা একের পর এক অবাক হচ্ছে তামান্নার কথায়।

উৎসা বললো, এ জন্য তোর খালামুনি বিকেলে মুগ্ধ ভাইয়াকে এসব বলেছিলো ?

তামান্না ছোট করে বললো, হুম।

উৎসার কাছে সব গন্ডগোল লাগছে। মুগ্ধ আর তিয়াসাকে দেখে মনে হয় না তারা ভালোবেসে গোপনে বিয়ে করেছে। তাদের দৃষ্টি যেনো অন্যকিছু বলে। গতকাল রাতে মুগ্ধের তিক্ত কথা শোনার পর সারাদিনে গলায় দিয়ে কিছু নামাতে পারেনি তিয়াসা। দূর্বলতার জন্য মাথা ঘুরে পরে গিয়েছিলো বিকেলে। সেটার জন্য মুগ্ধকে যা ইচ্ছা তাই কথা শুনিয়েছে আনোয়ারা বেগম। মুগ্ধের সন্তানের মৃত্যুর জন্য নাকি মুগ্ধ নিজেই দায়ী। এখন তিয়াসাকেও মারতে চাইছে নাকি এমন অনেক কথা শুনিয়েছে। সেসব নিয়েই কথা বলছে দুজন।

৩.
ছাঁদের এককোণে চুপচাপ বসে আছে তিয়াসা। চোখে নোনাজলের স্রোত। আজ আবার তার জন্য নির্দোষ মুগ্ধ মায়ের তিক্ত কথা শুনেছে৷ যার কোনো অস্তিত্বই ছিলো না এই পৃথিবীতে, তার মিথ্যা মৃত্যুর দায় মুগ্ধর কাঁধে। সব হয়েছে কেবল তার জন্য।

এবার শান্তি হয়েছে তোমার ?

কারো গলা শুনে মুখ তুলে তাকালো তিয়াসা। সামনে মুগ্ধকে দেখে নোনাজলের স্রোত যেনো বৃদ্ধি পেলো। ছাঁদের কৃত্রিম আলোয় মুগ্ধের চোখ এড়ালো না তা।

রাগী গলায় বললো, শুরু হয়ে গেছে তোমার নাটক ? যার কোন অস্তিত্ব ছিলো না এই পৃথিবীতে, তার মৃত্যুর দায় আমার কাঁধে তুলে দিয়ে শান্তি হয়নি তোমার। প্রতিনিয়ত মায়ের বাজে ছেলেকে তার সামনে আরো বাজে প্রমাণ করার জন্য উঠে পড়ে লেগেছো তুমি।

তিয়াসা কিছু না বলে চুপচাপ মুগ্ধের প্রতিটা অভিযোগ মন দিয়ে শুনছে।

মুগ্ধ আবার বললো, মায়ের চোখে মুগ্ধ বরাবরই অপদার্থ একটা ছেলে। তুমি তাকে আরো অপদার্থ প্রমাণ করে দিয়েছো। তোমার রোজকার এই নাটক নিতে পারছি না আমি। প্লিজ আমাকে একটু রেহাই দাও।

হাতজোড় করে কথাটা বলে চলে গেলো মুগ্ধ। তিয়াসা এবার শব্দ করে কেঁদে উঠলো।

ছোটবেলা থেকে শুদ্ধ পড়াশোনায় ভালো আর মুগ্ধ দুষ্টুমিতে। সেজন্য আনোয়ারা বেগমের অতি আদরের ছেলে শুদ্ধ আর অপদার্থ ছেলে মুগ্ধ তার বাবার বড্ড আদরের। শত দুষ্টুমি করেও পাশে পেয়েছে নিজের বাবাকে। কিন্তু বছরখানেক ধরে সে দেশের বাইরে আছে। মুগ্ধ তাই এতো ঝামেলায় পরে নিজেকে সামলানো জন্য পাশে কাউকে পায়নি। বরং দূরত্ব বেড়েছে সবার সাথে।

তিয়াসা উঠে দাঁড়িয়ে চোখের পানি মুছে বললো, আমি আপনাকে সবার কাছে খারাপ করেছি আমি ভালো করবো আর মুক্তিও দিবো।

অনেক রাত হয়েছে তাই তিয়াসা রুমে চলে গেলো। মুগ্ধ বিছানার মাঝে শুয়ে আছে রোজকার মতো। না বলেও বুঝিয়ে দিচ্ছে আজও তার জন্য বিছানায় জায়গা নেই। তিয়াসা চুপচাপ সোফায় শুয়ে পড়লো।

উৎসা আজও বেলকনিতে দাঁড়িয়ে আছে আকাশ পানে চেয়ে। তামান্নার বলা তখনকার কথা এখনো মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে, শুদ্ধ অন্যকারো এটা মানতে কষ্ট হচ্ছে তার। মুগ্ধ নিজের ফোনটা নিয়ে বেলকনিতে এসেছিলো জরুরি কল করতে। ফোন কানে লাগিয়ে আশপাশে তাকাতেই উৎসাকে দেখতে পেলো। বেলকনির রেলিঙের উপর হাত রেখে দাঁড়িয়ে আছে৷ মৃদু বাতাসে ছোট চুলগুলো তিরতির করে নড়ছে। অজানা কারণে মেয়েটাকে দেখতে ভালো লাগছে শুদ্ধর। মেয়েটা বড্ড বেশি রহস্যময়। এই যে তার দিকে এতো গভীর দৃষ্টিতে কেউ তাকিয়ে আছে সেদিকে কোনো খেয়াল নেই।

কী ভেবে শুদ্ধ গম্ভীর গলায় বললো, এতো রাতে বেলকনিতে কী করছো ?

কারো আওয়াজে চমকে উঠলেও বাইরে প্রকাশ করলো না। স্বাভাবিক ভঙ্গিতে পাশে তাকিয়ে শুদ্ধকে দেখতে পেলো। আজ প্রথম তার সাথে কথা বললো শুদ্ধ। প্রশ্নবোধক চাহনিতে তাকিয়ে থাকতে দেখে উৎসা রিনরিনে শব্দে বললো, ঘুম পাচ্ছিল না তাই এখানে দাঁড়িয়েছি।

উৎসার আওয়াজ শুদ্ধের কোথাও একটা আঘাত করলো। এতো মিষ্টি আওয়াজে কোনো মেয়ে কথা বলতে পারে শুদ্ধর জানা ছিলো না। এখনো পর্যন্ত কোনো মেয়ের আওয়াজ তাকে এতোটা নাড়িয়ে তুলতে পারেনি।

শুদ্ধ নিজেকে সামলে নিয়ে বললো, বাইরে ঠান্ডা পরছে ভিতরে চলে যাও।

উৎসা মুচকি হেঁসে বললো, গুড নাইট।

হাসিটা দেখে থম মেরে গেলো শুদ্ধ। সে নিজেকে দেখে নিজেই অবাক। মেয়েটা মাত্র কয়েক মুহূর্তে তাকে মুগ্ধতায় আটকে গেলো। শুদ্ধ উৎসার ব্যাপারটা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলে ফোনে মনোযোগ দিলো।

মুগ্ধ ড্রেসিংটেবিলের সামনে দাঁড়িয়ে চুলে ব্রাশ করছে৷ আজ শুক্রবার অফিস নেই তবু এতো সকালে উঠে রেডি হয়ে গেছে সে। তিয়াসা ব্রেকফাস্ট রেডি করে রুমে এসেছে একটু ফ্রেশ হতে। মুগ্ধকে এতো সকালে উঠতে দেখে খানিকটা অবাক হলো। কারণ শুক্রবারে সে বেলা দশটার আগে উঠে না।

তিয়াসা স্বাভাবিক গলায় বললো, কোথাও যাবেন ?

মুগ্ধ তিয়াসার দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে বললো, কেনো তার কৈফিয়ত দিতে হবে তোমার কাছে ?

না তা কেন হবে, আজ অফিস নেই তাই বলছিলাম।

আমি কোথায় যাবো না যাবো সেটা তোমার না জানলেও হবে।

তিয়াসা কিছু সময় চুপ করে তাকিয়ে রইলো মুগ্ধের দিকে। হঠাৎ আনমনে বলে উঠলো, আমি চলে গেলে এরিনাকে বিয়ে করবেন ?

মুগ্ধের হাত থমকে গেলো, কিছুটা সময় লাগলো তিয়াসার কথার মানে বুঝতে। বুকের ভেতরটা ধক করে উঠলেও পরক্ষণে নিজেকে সামলে নিলো।

মুগ্ধ হেয়ার ব্রাশ টেবিলে রেখে তিয়াসার দিকে ঘুরে তাকিয়ে বললো, তুমি আমার ঘাড় থেকে নামবে আর সেটা আমি স্বপ্নেও ভাবি না।

মুগ্ধ বের হয়ে গেলো রুম থেকে। তিয়াসা চোখের কোণে জমা পানিটুকু মুছে ওয়াশরুমে চলে গেলো। ফ্রেশ হয়ে ব্রেকফাস্ট টেবিলে গিয়ে খাবার সাজিয়ে নিলো। একে একে সবাই এসে বসলো। আজ সবাই একসাথেই খাবে।

আনোয়ারা বেগম বললো, শুদ্ধ বলছিলাম তামান্নারা এসেছে তিনদিন হলো। এখনো বাড়িতেই বসে আছে। আজ তো শুক্রবার কারো অফিস নেই। বিকেলে ওদের সবাইকে নিয়ে কোথাও ঘুরে আয়। ভার্সিটি শুরু হলে আর সময় হবে না।

শুদ্ধ একটু চিন্তা করে বললো, ঠিক আছে।

আনোয়ারা বেগম এবার গম্ভীর গলায় বললো, মুগ্ধ তুমিও যাচ্ছো।

মুগ্ধ বললো, আমার কাজ আছে।

আমার কথার অবাধ্য হওয়া আজকাল যেনো তোমার অভ্যাসে পরিণত হয়েছে।

মুগ্ধ টেবিল ছেড়ে উঠে দাঁড়িয়ে বললো, তোমার বাধ্য ছেলে তো আছেই তোমার কথা মানার জন্য। আমাকে আর কী প্রয়োজন ?

পেছন থেকে গম্ভীর গলায় শুদ্ধ বলে উঠলো, তুইও যাচ্ছিস এটাই ফাইনাল।

শুদ্ধের কথা শুনে মুগ্ধ একটু দাঁড়িয়ে আবার চলে গেলো। খাবার খেয়ে যার যার রুমে চলে গেলো। বিকেলে আনোয়ারা বেগম বাদে বাকি সবাই রেডি হয়ে নিলো বেড়াতে যাওয়ার জন্য। মুগ্ধও কথা বাড়ায়নি আর, সবার সাথেই গেলো। শুদ্ধ ড্রাইভ করছে, মিশু ড্রাইভিং সিটের পাশের সিটে বসেছে আর উৎসা তামান্না পিছনে। মুগ্ধ আর তিয়াসা অন্য গাড়িতে আসছে। শুদ্ধ লুকিং গ্লাসে একবার উৎসাকে দেখে নিলো। মেয়েটাকে তার শান্তশিষ্ট মনে হয়েছিলো কিন্তু এখন দেখছে পুরো উল্টো। তামান্না, মিশু আর উৎসা মিলে বকবক করে তার মাথা ধরিয়ে দিয়েছে। শুদ্ধ আবার মনোযোগ দিয়ে গাড়ি চালাতে লাগলো। এদিকে তিয়াসা এক দৃষ্টিতে বাইরের দিকে তাকিয়ে আছে। মুগ্ধ আড়চোখে তিয়াসার দিকে তাকাচ্ছে। মেয়েটাকে আজ খুব মায়াবী লাগছে আকাশী-নীল আর সাদা রঙের কম্বিনেশনের শাড়িটাতে, এককথায় পরী। তিয়াসার মনে হলো মুগ্ধ তাকে দেখছে তাই তাকালো মুগ্ধর দিকে। কিন্তু দেখতে পেলো সে খুব মনোযোগ দিয়ে ড্রাইভ করছে।

তিয়াসা হঠাৎ বললো, আজকে আমার একটা অনুরোধ রাখবেন।

মুগ্ধ ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে বললো, কী অনুরোধ ?

তিয়াসা অনেকটা সাহস নিয়ে বললো, গোধূলির রাঙা আলোয় আপনার হাতে হাত রেখে কিছুটা পথ পাশাপাশি হাঁটতে চাই। কথা দিচ্ছি আর কখনো এমন আবদার করবো না।

তিয়াসা কন্ঠে ছিলো আকুলতা যা মুগ্ধের হৃদয়ে আঘাত করলো। কিছু না বলে ড্রাইভিং করতে লাগলো। তিয়াসা ভাবলো মুগ্ধ তার কথা রাখবে না তাই বাইরের দিকে তাকিয়ে দীর্ঘ শ্বাস ছাড়লো। দিয়াবাড়িতেই গেলো সবাই, শুক্রবার হওয়ায় আরো অনেক মানুষ এসেছে। সবাই ঘুরে ঘুরে কাশফুলের রাজ্য দেখতে লাগলো। মেয়েরা ফুসকা খাচ্ছে মুগ্ধ আর শুদ্ধ খানিকটা দূরে দাঁড়িয়ে আছে।

শুদ্ধ হঠাৎ মুগ্ধের কাছে দাঁড়িয়ে বললো, তিয়াসা ভালো মেয়ে।

মুগ্ধ ভ্রু কুঁচকে তাকালো শুদ্ধের দিকে তা দেখে শুদ্ধ মুচকি হেঁসে বললো, বাড়ির কারো বুঝতে অসুবিধা হয়না তুই এখনো মেয়েটাকে মেনে নিতে পারিসনি। কেউ নিজের কাজের জন্য অনুতপ্ত হলে তাকে ক্ষমা করে দেওয়া উচিত। মেয়েটা বাধ্য হয়েছিলো মিথ্যের আশ্রয় নিতে।

মুগ্ধ অবাক হয়ে বললো, তুই জানতিস সত্যিটা ?

শুদ্ধ একটা রহস্যময় হাসি দিলো মুগ্ধের কথার বিপরীতে আর বললো, জীবন একটাই তার প্রত্যেকটা মুহূর্ত খুব মূল্যবান। সেটাকে হেলায় নষ্ট করিস না। আর একটা কথা মনে রাখিস কোনো মা কখনো তার সন্তানদের দুরকম ভালোবাসে না। তোর মনে আছে কিনা জানি না। তবে আমার মনে আছে, আমি একবার তোকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিয়েছিলাম। দুর্ভাগ্যবশত তুই ফুলের টবের উপর পরে গেলি আর তোর মাথা ফেটে যায়। সেদিন মা কতটা কেঁদেছিলো আর আমাকে মেরেছিলো তুই জানিস না কারণ সেন্সলেস হয়ে গিয়েছিলি। মা তোর সামনে আমাকে বেশি আদর করতো যাতে তুইও জেদ করে আমার মতো পড়াশোনা করিস। মা আমাকে যতটা ভালোবাসে তোকেও ঠিক ততটাই ভালোবাসে। আর মা মেনে নিয়েছে তিয়াসাকে এবার তুইও মেনে নে।

কথাগুলো বলে অন্যদিকে চলে গেলো শুদ্ধ। মুগ্ধ ডুবে গেলো এক গভীর ভাবনায়। সামনে চোখ যেতেই দেখতে পেলো তিয়াসাকে। সবার সাথে কথা বলার সময় মুখে হাসি ঝুলিয়ে রাখলেও ভেতরের চাঁপা কষ্টটা উপলব্ধি করতে বেগ পেতে হলো না মুগ্ধকে।

মুগ্ধ মনে মনে বললো, অনেক হয়েছে এবার ইতি টানা উচিত সবকিছুর।

ঘুরাঘুরি শেষে ফিরে আসার সময় মুগ্ধের কথা শুনে সবার থেকে একটু পিছনে গেলো তিয়াসা। সামনে পাশাপাশি হাঁটছে চারজন। একপাশে শুদ্ধ তারপর মিশু, তামান্না আর অপরপাশে উৎসা। সে আঁড়চোখে বারবার দেখছে শুদ্ধকে। গোধূলির রাঙা আলোয় অসম্ভব সুন্দর লাগছে শ্যামবর্ণ মানুষটাকে। উৎসার মনে পরে গেলো প্রথম দেখার কথা। উৎসা নিজেকে বোঝানোর চেষ্টা করলো সে অন্যকারো কিন্তু ব্যর্থ হলো।

তিয়াসা হাঁটতে হাঁটতে বললো, কিছু বলবেন ? ওরা তো এগিয়ে গেলো অনেকটা।

মুগ্ধ বললো, যেতে দাও ওরা অন্য গাড়িতেই যাবে।

তিয়াসা কিছু না বলে হাঁটতে লাগলো, মুগ্ধ তাকালো তিয়াসার দিকে। গোধূলি নেমে এসেছে, রক্তিম আলো পড়ছে তিয়াসার মুখে। গায়ের শাড়িটাতে তাকে মনে হচ্ছে কোনো প্রকৃতি কন্যা। মুগ্ধ হঠাৎ তিয়াসার হাতটা নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে নিলো শক্ত করে। তিয়াসা কেঁপে উঠলো মুগ্ধের হঠাৎ এমন কোমল স্পর্শে। চমকে তাকালো মুগ্ধের দিকে। মুগ্ধ স্বাভাবিক ভঙ্গিতে সামনে তাকিয়ে হাঁটছে। তিয়াসার ঠোঁটের কোণে হাসি ফোটে উঠলো। সে ভেবেই নিয়েছিলো মুগ্ধ রাখবে না তার কথা।

তিয়াসা বিড়বিড় করে বললো, আপনি আমার আবদার রেখেছেন এবার আমার পালা।

চলবে,,,,
#গোধূলির_রাঙা_আলোয়
লেখনীতেঃ তাহমিনা তমা
পর্ব-০৪

বাড়িটা খুব সুন্দর করে সাজানো হয়েছে। শুদ্ধ আর মুগ্ধর একমাত্র আদরের বোন মাইশা সাদিক মিশুর জন্মদিন বলে কথা। মিশু আজ ১৬ বছরে পা দিলো। বোনটা দু-ভাইয়ের খুব আদরের, তাই বেশ বড় করেই পার্টির আয়োজন করা হয়েছে। সবাই অপেক্ষা করছে আজকের মধ্যমণির জন্য কিন্তু তার দেখা নেই এখনো।

আনোয়ারা বেগম তিয়াসাকে বললেন, বৌমা দেখো তো মেয়েটা এখনো উপরে কী করছে। সব গেস্ট এসে পরেছে তো। সবাই ওর কথা জানতে চাইছে।

তিয়াসা মুচকি হেঁসে বললো, তামান্না আর উৎসা ওর সাথেই আছে, চলে আসবে এখনই।

তিয়াসা আর আনোয়ারা বেগমের কথোপকথনের মধ্যেই মিশু সিঁড়ি দিয়ে নামতে লাগলো একটা সাদা প্রিন্সেস গ্রাউন পরে। তার পেছনেই তামান্না আর উৎসা। তিনজনকেই অসম্ভব সুন্দর লাগছে। এদিকে শুদ্ধ আর মুগ্ধ গেস্টদের সাথে কথা বলছে। মুগ্ধর অফিসের অনেকেই এসেছে পার্টিতে, তারা তিয়াসার দিকে বাঁকা চোখে তাকাচ্ছে আর কানাঘুঁষা করছে। সামান্য এমপ্লয়ি হিসাবে ঢোকে বসের বউ হয়ে গেছে। তিয়াসার কানে সবই যাচ্ছে কিন্তু মুখ বুজে সব সহ্য করছে৷ আর তো কিছুটা সময় তারপরই এসবের অবসান ঘটবে। উৎসা নিচ পর্যন্ত মিশুর সাথে এলেও নিচে এসে অন্যদিকে চলে গেলো। যতই হোক সে তো আর তাদের ফ্যামিলি মেম্বার নয় তাই কেক কাটার ওখানে না যাওয়াটাই বেটার। পার্পেল একটা গ্রাউন পরেছে উৎসা, ফর্সা গায়ে তা ফোটে উঠেছে। উৎসা আহামরি সুন্দরী না হলেও মন্দ নয় দেখতে। তামান্না উৎসাকে দেখে ইশারায় কাছে যেতে বললেও উৎসা যায় না। চুপচাপ এক কোণে দাঁড়িয়ে থাকে। পরিবারের সবাই মিশুর সাথে দাঁড়ায় কেক কাটার সময়। তিয়াসা আর মুগ্ধ পাশাপাশি দাঁড়িয়ে আছে।

তিয়াসা মুগ্ধর কানের কাছে ফিসফিস করে বললো, আজ জন্মদিন মিশুর তবে সারপ্রাইজ অপেক্ষা করছে আপনার জন্য।

মুগ্ধ প্রশ্নবোধক চাহনি দিলে তিয়াসা মুচকি হাঁসলো, যে হাসিতে ছিলো একরাশ বিষন্নতা আর রহস্য। কেক কাটা হলে মিশু একে একে সবাইকে খাইয়ে দেয়। এতক্ষণে শুদ্ধর মনে পরে উৎসার কথা। মেয়েটাকে আশেপাশে না দেখে খুঁজতে গিয়ে এক কোণে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে। মিশুকে উৎসার কাছে পাঠায় কেক খাইয়ে দিতে। মেয়েটা কেমন চঞ্চল হয়েও গম্ভীর। খোলা বইয়ের মতো হলেও রহস্যে মোড়ানো। মেয়েটা তার থেকে বয়সে অনেক ছোট তবু তার মনে জন্ম দিয়েছে তাকে জানার কৌতূহল।

৪.
সবার খাওয়া দাওয়া হয়ে পার্টি শেষের দিকে কিন্তু মুগ্ধ তিয়াসাকে কোথাও দেখছে না। ভেতরটা কেমন খচখচ করছে তিয়াসার তখনকার বলা কথাটার মানে জানার জন্য। হঠাৎ তিয়াসার আওয়াজে পা থেমে গেলো মুগ্ধর। সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করতে সক্ষম হয়েছে সেই আওয়াজ।

অ্যাটেনশন প্লিজ

হঠাৎ সব আলো নিভে গিয়ে বড় পর্দায় ভেসে উঠলো তিয়াসার মলিন মুখটা। সবাই বেশ কৌতূহল নিয়ে তাকিয়ে আছে পর্দার দিকে। মুগ্ধ ধীর পায়ে এগিয়ে গেলো সেদিকে।

পর্দার তিয়াসা মুচকি হেঁসে বললো, আপনাদের সবার মূল্যবান কিছু সময় নষ্ট করবো। তার জন্য আগেই ক্ষমা পেয়ে নিচ্ছি। আজ আমি আপনাদের একটা গল্প শোনাবো, আমার জীবনের গল্প। আপনাদের জানাটা প্রয়োজন।

বাবা-মায়ের আদরের বড় মেয়ে আমি। মধ্যবিত্ত পরিবারে বড় হয়েছি। ছোট থেকে স্বপ্ন ছিলো বড় হয়ে বাবার পাশে দাঁড়াবো একটা ছেলের মতো। সেই জন্য মন দিয়ে পড়াশোনা করেছি। ছোটবেলা থেকে চার ভাইবোনের সংসার চালাতে হিমসিম খেতে হতো বাবাকে। তাই এসএসসি পরীক্ষার পর থেকে টিউশনি করতাম যাতে বাবার একটু হেল্প হয়। এভাবেই অনার্স শেষ করলাম আর চাকরির খোঁজে বেড়িয়ে পড়লাম। চাকরি, সে তো সোনার হরিণের মতো, আমার থেকে কত যোগ্যতা সম্পন্ন মানুষ সার্টিফিকেট নিয়ে মানুষের দাঁড়ে দাঁড়ে ঘুরছে। উপায় না পেয়ে এক বান্ধবীর কাছে হেল্প চাইলাম। সে নিরাশ করলো না, তার বাবার বন্ধুর অফিসে একটা ছোটখাটো চাকরির জোগাড় করে দিলো। জীবনের তেইশ বসন্ত পেড়িয়ে আসা মেয়েটার মনে কখনো কোনো পুরুষের জন্য ভালোলাগা কিংবা ভালোবাসা তৈরি হয়নি। তবে সেই নিয়ম ভেঙে মেয়েটা ভালোবেসে ফেলে এক হাসিখুশি পুরুষকে। হাজার ক্লান্তিতে তার মুখের হাসিটা যেনো হারাতে দিতো না। অফিসের পিয়ন থেকে শুরু করে বড় বড় পদস্থ সকলে তার চোখে ছিলো সমান। মনকে বুঝালাম সে তোমার জন্য আকাশের চাঁদ আর তুমি বামুন। সে ছিলো সেই অফিসের বস আর আমি সামান্য এমপ্লয়ি। কিন্তু মন তো বেহায়া, দিন কাটতে লাগলো লুকোচুরি ভালোবাসার খেলায়। কিন্তু হঠাৎ কালো ছায়ায় মতো জীবনে এলো এক নেশাখোর ছেলে। তার হাত থেকে বাঁচতেই মানুষটার নাম নিয়েছিলাম। কিন্তু আমার একটা ভুলে এতকিছু হয়ে যাবে বুঝতেই পারিনি। কিছু বুঝে উঠার আগেই তার ঘরের বউ হয়ে গেলাম। এতক্ষণে হয়তো সবাই বুঝে গেছেন আমি কার কথা বলছি। আপনারা ঠিক বুঝেছেন আমি মিস্টার আরমান সাদিক মুগ্ধর কথা বলছি। যাকে সবার চোখে আমি একদিন নিচে নামিয়ে দিয়েছিলাম অনিচ্ছা সত্ত্বেও। আজ সকলের কাছে সত্যিটা প্রকাশ করে তার গায়ে লাগা কালি মুছে দিলাম। সে নির্দোষ, নিষ্পাপ যা হয়েছে সব আমার জন্য। মা আপনাকে জানাতে চাই, আপনার ছেলে কোনো অন্যায় করেনি। আপনি যার মৃত্যুর জন্য তাকে দায়ী মনে করেন তার কোনো অস্তিত্ব ছিলো না এই পৃথিবীতে। পারলে আমাকে মাফ করে দিবেন। এই কথাগুলো সামনে দাঁড়িয়ে বলার সাহস আমার ছিলো না তাই এভাবে বলতে হলো। আপনাদের জীবনে যেমন ভেসে আসা মেঘের মতো এসেছিলাম আবার সেভাবেই চলে গেলাম। পারলে আমাকে মাফ করে দিবেন।

ভিডিও শেষ হতেই সব লাইট জ্বলে উঠলো। মুগ্ধ স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে সবার মাঝে। সবার দৃষ্টি এখন তার দিকেই। কিছুটা সময় লাগলো মুগ্ধর নিজেকে সামলে নিতে।

নিজের মাঝে ফিরতেই চিৎকার করে ডেকে উঠলো, তিয়াসা ?

সবাই কানাঘুঁষার করছে তিয়াসাকে নিয়ে। এদিকে মুগ্ধর মতো বাড়ির বাকি সবার একই অবস্থা। স্তব্ধ হয়ে নিজের জায়গায় জমে আছে। কেবল শুদ্ধ আর উৎসা স্বাভাবিক। উৎসা কিছুটা অবাক তবে শুদ্ধ একদমই স্বাভাবিক। উৎসার কাছে একটু গোলমেলে লাগলেও এতটা কল্পনা করেনি সে। তবে শুদ্ধ যেনো এমন কিছুই হবে মনে করেছিলো। মুগ্ধ দৌড়ে নিজের রুমে চলে গেলো তিয়াসাকে খুঁজতে।

রুমের সামনে এসেই চিৎকার করে বললো, তিয়াসা এটা কী ধরণের ফাজলামো ? এসবের মানে কী ?

রুমে গিয়ে চুপ হয়ে গেলো মুগ্ধ। কারণ পুরো রুম ফাঁকা পরে আছে। মুগ্ধ একবার সারা রুমে চোখ বুলিয়ে নিলো। তিয়াসা আসার আগে তার রুমটা যেমন ছিলো ঠিক তেমন করে সাজিয়ে রাখা। দেখে মনেই হচ্ছে না এখানে একটা মেয়েও থাকতো। তিয়াসা আসার পর, না চাইতেও রুমের অনেক পরিবর্তন মেনে নিতে হয়েছিলো মুগ্ধর। তবে আজ সব আগের মতো, রুমের কোথাও তিয়াসার ব্যবহৃত একটা জিনিসও চোখে পরলো না তার। হঠাৎ একরাশ শূন্যতা ভড় করলো মুগ্ধর বুকে। মেয়েটা কী সত্যি চলে গেছে ? মুগ্ধ ধীর পায়ে এগিয়ে গেলো রুমে। ধপ করে বেডে বসে পড়লো। অজানা ভয়ে সারা শরীর কাঁপছে তার। বেডে বসতেই সাইড টেবিলে কাঁচের গ্লাসের নিচে চাপা দেওয়া একটা ভাজ করা কাগজ আর একটা খাম দেখতে পেলো। কাঁপা হাতে সেটা তুলে নিলো মুগ্ধ। আগে ভাজ করা কাগজটা খোলে দেখলো তিয়াসার লেখা চিঠি।

প্রিয় মুগ্ধ
প্রিয় সম্মোধন করার কারণ আমি আপনার প্রিয় না হলেও আপনি সবসময় আমার প্রিয় ছিলেন আর থাকবেন। থাক সেসব কথা, আজকের দিনের অপেক্ষায় তো ছিলেন তাই না ? চাইলে আরো আগেই চলে আসতে পারতাম কিন্তু আপনাকে সবার কাছে নির্দোষ প্রমাণ করতে আজকের দিনের অপেক্ষায় ছিলাম। আমি আপনাকে সবার সামনে দোষী করেছিলাম, আমিই নির্দোষ করে গেলাম। পারলে মাফ করে দিয়েন, এতদিন আপনাকে বিরক্ত করার জন্য। আপনাকে ডিভোর্স দিতে পারবো না আমি। আমার জীবনের প্রথম আর শেষ পুরুষ আপনি। আপনার জীবন থেকে নিজেকে মুছে দিলেও নিজের জীবন থেকে আপনাকে মুছে দিতে পারবো না। আপনি যাতে আবার বিয়ে করে নিজের জীবন গুছিয়ে নিতে পারেন তাই দ্বিতীয় বিয়ের জন্য প্রথম স্ত্রীর অনুমতির প্রমাণ খামে আছে। যদিও আমি আপনার কাছে আপনার স্ত্রী কোনো কালেই ছিলাম না, এটা ফর্মালিটি মাত্র। ভয় পাবেন না, আর কখনো আপনার জীবনে আমার আগমন হবে না। আমার বাবা-মায়ের কাছে ক্ষমা চাইতে পারলাম না। আমি আপনাকে সবার কাছে নির্দোষ প্রমাণ করেছি, আপনি পারলে শুধু আমার বাবা-মায়ের ভুলটা ভাঙিয়ে দিয়েন। আর একটা কথা আজ না বললে হয়তো আর কোনোদিন বলার সুযোগ হবে না। অনেকটা ভালোবাসি আপনাকে , ভালো থাকবেন।

ইতি
আপনার না মানা বউ
তিয়াসা

মুগ্ধর হৃদয়ে রক্তক্ষরণ হচ্ছে, তীব্র ব্যাথা হচ্ছে বুকের পা পাশে। মিশুর জন্মদিনের পার্টি নিয়ে এতটা ব্যস্ত হয়ে গিয়েছিলো তিয়াসার এসব চিন্তা ভাবনার আঁচ করতে পারেনি একটুও। তিয়াসার চিঠি পড়ে এটা বুঝতে অসুবিধা হচ্ছে না, সে তার বাবা-মায়ের কাছে যায়নি। মুগ্ধ এবার খামটা খুলে তিয়াসার সাইন পরা দ্বিতীয় বিয়ের অনুমতিপত্র পেলো। মুহূর্তে সেটা ছিঁড়ে টুকরো টুকরো করে ফেলে দিলো।

এদিকে পরিস্থিতি বুঝতে পেরে শুদ্ধ গেস্টদের কোনোরকম সামলে নিলো। সবাই নিজেদের মধ্যে আলোচনা করতে করতে বের হয় গেলো ধীরে ধীরে। আনোয়ারা বেগম তখনো নিজের বিস্ময় কাটিয়ে উঠতে পারেনি। সোফায় বসে আছে থম মেরে। তামান্না আর মিশুর অবস্থাও একই রকম। উৎসার রিয়াকশন বুঝার উপায় নেই। আগামীকাল তামান্না আর উৎসার হোস্টেলে উঠে যাওয়ার কথা ছিলো। কয়েকদিনে তিয়াসার সাথে উৎসারও বেশ ভাব হয়ে গিয়েছিলো। বড় বোনের মতো উৎসাকে আদর করতো। আগামীকাল চলে যাবে বলে একটা ঘড়িও গিফট করেছে উৎসাকে। উৎসা বুঝতেই পারেনি সে যাওয়ার আগে তিয়াসাই এ বাড়ি থেকে চলে যাবে।

শুদ্ধ উৎসার কাছে এগিয়ে গিয়ে বললো, মাকে আর মিশুকে একটু সামলাতে পারবে ?

উৎসা অবাক চোখে তাকালো শুদ্ধের দিকে। শুদ্ধের কণ্ঠে ছিলো অসহায়ত্ব। সে কোনদিক সামলাবে ঠিক বুঝে উঠতে পারছে না। মুগ্ধর কাছে যাওয়া প্রয়োজন আর মায়ের কাছেও কারো থাকা জরুরি। মিশু আর তামান্না নিজেরাই হতবুদ্ধি হয়ে বসে আছে।

উৎসা ছোট করে বললো, হুম।

শুদ্ধ ধন্যবাদ বলে মুগ্ধর রুমের দিকে ছুঁটে গেলো। শুদ্ধর অজানা কারণে প্রচন্ড অশান্তি লাগছে। হয়তো জমজ হওয়ার জন্য মুগ্ধর বিষন্নতা কিছুটা আঁচ করতে পারছে। শুদ্ধ মুগ্ধর রুমে গিয়ে দেখে চিঠি হাতে ফ্লোরে বসে আছে মুগ্ধ আর চারপাশে পরে আছে ছোট ছোট কাগজের টুকরো।

শুদ্ধ এগিয়ে গিয়ে মুগ্ধর সামনে হাঁটু গেড়ে বসলো আর কাঁধে হাত রেখে বললো, মুগ্ধ।

আমি এমন কিছু কল্পনাও করিনি ভাই।

মুগ্ধর কথা শুনে শুদ্ধ দীর্ঘ শ্বাস ছেড়ে বললো, আমি আগেই তোকে সাবধান করেছিলাম।

কোথায় খুঁজবো ওকে আমি এখন ?

শুদ্ধ এবার ফ্লোরে বসে পড়লো মুগ্ধর পাশে আর বললো, এতোটা যখন ভালোবাসিস তাহলে এতো অবহেলা কেনো করতে গিয়েছিলি।

রাগ ছিলো ওর উপর ৷ আমাকে দেখে সম্মানে যারা মাথা নিচু করতো, তারাই আমাকে দেখে কানাঘুঁষা শুরু করে ওর জন্য, তাই রাগ ছিলো।

এবার তো সবার কাছে সবটা পরিষ্কার হয়ে গেছে।

আমি ওর থেকে মুক্তি চাইনি কখনো।

মুগ্ধ হঠাৎ জড়িয়ে ধরলো শুদ্ধকে আর বাচ্চাদের মতো কাঁদতে লাগলো।

কান্নাভেজা গলায় বললো, ছোট ভাই হিসাবে কখনো কিছু চাইনি তোর কাছে। কয়েক মিনিটের বড় হলেও তুই আমার বড়। আজ তোর ছোট ভাই হিসাবে প্রথমবার কিছু চাইছি। প্লিজ ওকে ফিরিয়ে এনে দে। কথা দিচ্ছি একটুও কষ্ট দিবো না। ওকে ছাড়া দমবন্ধ হয়ে আসছে আমার।

মুগ্ধর এমন আকুতি শুদ্ধর হৃদয় ক্ষতবিক্ষত করে দিচ্ছে। ভাইবোন দুটোকে প্রচন্ড ভালোবাসে শুদ্ধ, হয়তো নিজের অন্তর্মুখী স্বভাবের জন্য প্রকাশ করা হয়নি কখনো। কিন্তু তাদের জন্য নিজের জীবন দিতেও পিছপা হবে না।

শুদ্ধ মুগ্ধর মাথায় হাত বুলিয়ে বললো, তুই শান্ত হ একটু৷ পাতাল থেকে হলেও খোঁজে বের করবো তোর ভালোবাসা। এই প্রথম আমার ছোটভাই আমার থেকে কিছু চেয়েছে৷ সেটা আমি কীভাবে না দিয়ে পারি ?

চলবে,,,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here