গোধূলি বেলায় তুমি এসেছিলে ২ পর্ব ১৮+১৯

#গোধূলি_বেলায়_তুমি_এসেছিলে
#আনিশা_সাবিহা
পর্ব ১৮ (২য় খণ্ড)

“চল! তোকে আরো একটা অফার দেই। তোকে আমি এতটাই ভালোবাসি যে তোকে মা/রতে গেলেও আমার ভাবতে হয়। তাই তোকে আবার আমার দলে ফিরে আসার সুযোগ দিলাম। সামনে একটা বড়ো মি/শন আছে। তুই যদি আমাদের সাথে মি/শনে নামতে পারিস তাহলে কিন্তু আমার চিন্তাই করতে হবে না।”

ফাহমিদ কথাগুলো বলতে বলতে ধুলোপড়া মেঝেতে পা দুটো ছড়িয়ে বসল। চশমাটা খুলে নিলো হাতে। আর ভালো লাগে না এই ভদ্র ছেলে সেজে থাকতে। গুড বয় হওয়াটা বেশ মুশকিল ব্যাপার স্যাপার মনে হয় তার কাছে। বড়ো শ্বাস নিয়ে অপেক্ষা করল রূপার উত্তরের। মেয়েটা কিছু বলছে না। শুধু তীক্ষ্ণ এবং দুর্বল দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। একসময় হুট করে থমথমে গলায় প্রশ্ন করে,
“তোকেও কেউ নির্দেশনা দেয়! আমি জানি! তোর এই অল্প বয়সী ব্রেইনে কেমিস্ট্রির বিক্রিয়া ছাড়া মাস্টারপ্ল্যান তৈরি করা সম্ভব নয়।”

ফাহমিদ কিছুটা চমকালো। অপ্রস্তুত হয়ে দৃষ্টিপাত করল রূপাঞ্জনার দিকে। রূপার ভাবমূর্তি দেখে মনে হচ্ছে সে একদমই নিশ্চিত এ ব্যাপারে।ফাহমিদকে চুপ দেখে রূপা যেন আরো বলার সুযোগ পায়।
“আগের থেকেই সন্দেহ হতো। নিশ্চিত তখন হলাম যখন তুই খবর পেলি আমি রাগিনীদের বাড়িতে। আমি যে ওদের বাড়িতে থাকতে পারি সেটা তোর চিন্তাভাবনাতেও আসার কথা নয়। এই খবর অন্যকেউ দিয়েছে। ওই বাড়ির কেউ মাস্টারমাইন্ড! যাকে তুই নিজ দায়িত্বে আড়ালে রেখেছিস।”

নিজের হাতের চশমাটা রূপাঞ্জনার দিকে ছুঁ’ড়ে দিয়ে ক্রো/ধে চিৎকার দিয়ে উঠল ফাহমিদ। চশমাটা গিয়ে লা/গল রূপার কপালের মাঝ বরাবর। চোখ খিঁচে আ/র্তনাদ করে উঠল রূপা। ফাহমিদ চোয়াল শক্ত করে এগিয়ে এসে রূপার দুটো গাল চেপে ধরতেই মেয়েটির আর্ত/নাদ বন্ধ হলো।
“তুইতোকারি করবি না আমার সাথে। নয়ত যতটুকু বেঁ/চে আছিস সেটাও থাকবি না। মা/থায় র/ক্ত উঠে যায়।”

হিসহিসিয়ে কথাগুলো বলে ছিটকে সরে আসে ফাহমিদ। রা/গটা নিয়ন্ত্রণে আসে না কোনোমতেই। রা/গ বের করতে না পারলে যেন সে নিজেই ম/রে যাবে। মাথাটার চুল চেপে ধরে বড়ো বড়ো শ্বাস নিয়ে নিজেকে স্থির করে সে। রূপা এক দৃষ্টিতে তাকে দেখছে। সেই চাহনিতে যেন ফাহমিদ নিজেই নিজের খু/ন হওয়ার কামনা দেখছে। তবে এসবে ফাহমিদের ভয়ডর কম। নেই বললেই চলে। সে প্রসঙ্গ পাল্টে বলে,
“খিদে পেয়েছে? খাবি কিছু? এদিকে আয় হাত-পায়ের বাঁধন খুলে দিই। ঠাণ্ডা মাথায় আলোচনা করি।”

রূপা কিছু বলল না। নিশ্চল রইল। এগিয়ে এসে প্রথমে হাতের বাঁধন খুলে দিতেই হুড়মুড়িয়ে পায়েরটা একা খুলে নিলো রূপা। ফাহমিদ সরে আসতেই তাকে ধা/ক্কা মা;রা হলো। এর জন্য প্রস্তুত না থাকায় আধশোয়া হয়ে পড়ল ফাহমিদ। ধা/ক্কাটা মে/রেছে রূপা নিজেই। এরপর আর দেরিও করেনি সে। ফাহমিদের গেঞ্জি উঠিয়ে প্যান্টের কাছ থেকে রি/ভলবা/রটা নিজ হাতে নিয়ে সরে এলো সে। ফাহমিদকে টার্গে/ট করে উঠে দাঁড়াল রূপা নড়বড়ে পায়ে। লাল চোখে তার ফাহমিদকে শে/ষ করার নেশা। তাকে দেখে ফাহমিদ ভীরু চোখে তাকাল। কিছুটা সরে গেল। তবে ভুলচুক হলো না রূপার নিশানায়। সে টার্গেট করেই যাচ্ছে। দ্রুত উঠে দাঁড়াল ফাহমিদ। হাত দিয়ে ইশারা করে বলল,
“ওটা নামা হাত থেকে।”

“নামাব না। আমাকে দেওয়া এতদিনের ক/ষ্টের শোধ তুলব।”

ফাহমিদ কিছু বলল না আর। সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে রইল। এই বুঝি প্রাণ যায়। রূপা আর কিছুই না ভেবে ট্রি/গার চেপে নিলো। আশায় রইল কখন বু/লেট বের হবে এবং এফোঁড়ওফোঁড় করবে এই কালো অধ্যায়ের মানুষটির বু/ক। কিন্তু তা পূর্ণ হলো না। নীরব রইল ঘর। আচমকা ফাহমিদ নামক কূটবুদ্ধি সম্পন্ন মানুষটি হাসিতে ফেটে পড়ল। পেটে হাত দিয়ে ইচ্ছেমতো হাসতে থাকল। রূপা বোকা হয়ে দাঁড়িয়ে রইল দেয়াল ঘেঁষে। কী হচ্ছে? কিছু বুঝে ওঠার আগেই এবার তার হাত মুচ/ড়ে ধরে ঘুরিয়ে হাতের রি/ভলবার কেঁড়ে নিয়ে মূহুর্তেই পকেট থেকে বু/লেট ঢুকিয়ে রূপার মাথার পাশে ঠেকাল ফাহমিদ।
“আমার সঙ্গে সেই ছোট্ট থেকে আছিস। একটু তো ধারণা থাকা উচিত তোর। আমি জেনে-বুঝেই তোর বাঁধন খুলে দিয়েছি এটা বোঝা উচিত ছিল এবং কৃতজ্ঞ থাকা উচিত ছিল।”

সারা শরীর কাঁপতে থাকল রূপার। ছটফটিয়ে ছাড়াতে চাইল নিজেকে। পেরে উঠল না। ফাহমিদ আবারও বলে,
“ভেবেছিলাম আমাকে এবার নিরাশ করবি না। আমার সঙ্গে তালে তাল মিলিয়ে চলতে শুরু করবি। এতে আমার লাভ হতো আর তুইও জীবনের খুঁজে পেতিস।”

“রূপাঞ্জনার জীবনের কোনো মানে আদেও ছিল না। তাই শেষ সময় এসে জীবনের মানে খুঁজে এই বোকামি করতে চাই না।”

ফাহমিদ রূপাকে ছেড়ে দিলো এবার। তার দিকে ঘুরে দাঁড়াল রূপা। ফাহমিদ একটু হেলে অবিশ্বাস্য সুরে বলল,
“কিন্তু শেষ সময় এসে নিজের পরিচয় জানতে পারলে জীবনের মানে হয়ত আপনাআপনিই বেরিয়ে পড়বে।”

থমকালো রূপা। র/ক্তপ্রবাহে শীতল ধারা বয়ে গেল যেন। কানে কি ঠিক শুনল নাকি ভুল সেটা ভাবতেই দিশাহারা হয়ে গেল। ফাহমিদ তখন রূপার প্রতিক্রিয়া দেখে বেশ সন্তুষ্ট। সে মেয়েটার চোখে এমনই কৌতূহল দেখতে চেয়েছিল। এখন এটা দ্বারাই হতে পারে সে কাবু। এবার রূপার কাঁপা স্বরটা ভেসে এলো।
“পরিচয়? কীসের পরিচয়? আমি তো একটা বে** মেয়ে। এটা ছোটো থেকে আমাকে গবেষক বাবা বলে এসেছে।”

“হুমম বলেছে। কারণ তখন তোকে দিয়ে কাজ করাতে পরিচয় জানানোর দরকার পড়েনি। এখন মনে হলো তোকে অফারটা দেওয়া উচিত।”

বিস্ময়ের সীমানা রইল না রূপার। এ কী হচ্ছে? কেন এতবছর পর তাকে জানতে হচ্ছে কেউ তার জন্মের পরিচয় জানে অথচ বলেনি! মস্তিষ্ক খালি খালি লাগছে। যেন এখনি পড়ে যাবে ভীমড়ি খেয়ে। দেয়ালটা একহাতে ধরল সে। আগের সুরেই শুধালো,
“আপনি আমার পরিচয় জানেন?”

ফাহমিদ খুশি হলো। শুঁকনো সেই ঠোঁটে ফুটল রাজ্যের হাসি। এতক্ষণ পর এই ত্যাঁড়া মেয়েটা লাইনে এসেছে। আত্মবিশ্বাসের সাথে বলল,
“অবশ্যই।”

“বিশ্বাস হয় না। যদি সত্যি জানা থাকত আমাকে আগেই বলে দেওয়া হতো।”

“আমাকে কখনো স্বার্থ ছাড়া কিছু করতে দেখেছিস? তোকে যদি বলতাম তুই তো তোর পরিবারের খোঁজে চলে আসতি। তোকে দিয়ে এত কাজ কী করে করাতাম তখন?”

কথাগুলো বলতে বলতে আবারও আগের জায়গায় রি/ভলবার গুঁজে নিলো ফাহমিদ। রূপাঞ্জনার কান্না পাচ্ছে। কপাল বেয়ে পড়ছে ঘাম। বিশ্বাস-অবিশ্বাসের মাঝামাঝিতে অবস্থান করছে সে। সেই কাঁদো কাঁদো গলায় বলল,
“বিশ্বাস করিনা এসব। আমাকে আবার দলে টানার জন্য এসব বলছেন।”

“তুই কোন হসপিটালে, কোনদিন হয়েছিস, কেন তোকে আমাদের এখানে নিয়ে আসা হলো সব আমি জানি। ডিসিশন তোর। সামনে বড়ো একটা মি/শন আছে। সেখানে আমাদের সঙ্গে নামতে পারলে প্রমাণ সহ নিজের পরিচয় পাবি।”

রূপার তবুও বিশ্বাস হলো না। টলমল করতে থাকল সে। ফাহমিদ বড়ো একটা হাই নিলো। কিছুক্ষণ অপেক্ষা করল। তারপর হঠাৎ চিল্লিয়ে ডেকে উঠল,
“এই কে কোথায় আছিস? এরে দিয়ে আর কোনো লাভ নাই। এরে বেঁধে দিয়ে যা।”

ডাকতেই যতটা সময় লাগল। আসতে সময় লাগল না বাহির থেকে। দুজন ছেলে ভেতরে ঢুকে আসতেই রূপা হুড়মুড়িয়ে বলে বসল,
“আমি এই মি;শনে নামছি সকলের সঙ্গে। প্রস্তুতি আজ থেকেই শুরু হবে আমার।”
ফাহমিদ হাসে। এ যেন আগের থেকেই এক বিজয়ের হাসি!

পাঁচটি দিন কেটে গেল। সময় অল্প গড়িয়েছে। দিন থেকে রাত হয়েছে। রাত থেকে দিন। এই সময়ের সঙ্গে বদলে গেল কিছু সম্পর্কের সমীকরণ। আজ নবীন সকালে উর্মিলা চা খেতে খেতে ভার চোখেমুখে অপেক্ষা করছিল কারোর। পায়ের সমস্যা হওয়ায় ভার্সিটিতেও যাওয়া হয় না তার। মনটা আজকাল টিকছে না তার। বিরক্ত লাগে ভীষণ। অবাক করার বিষয় হলো এই বিরক্তির কারণটা হয়ে উঠেছে নোমান। হ্যাঁ, লোকটা নেই এই দেশে। নিজ দেশে পাড়ি জমিয়েছ। এটাই এখন হয়ে উঠেছে উর্মিলার সবচেয়ে অসহ্যের কারণ। উঠতে, বসতে, ঘুমোতে, খেতে সবসময় এই বদ লোকটির কথা স্মরণে না এলে যেন তা চলেই না। এক কথায় মানুষটিকে এতটাই মনে পড়ে যে তাকে ছাড়া আর কিছুই ভাবা হয়ে উঠছে না। মাঝে মাঝে ঘুমের ঘোরে স্বপ্ন দেখে চলেছে যে সেই মানবটি ফিরে এসেছে। সেই চেনা গা জ্বালানো হাসিটা দিয়ে আবার তাকে জ্বালাচ্ছে। স্বপ্ন যে সত্যি হয় না! নোমান বাস্তবে আসে না।

নিজ ঘর থেকে রাগিনীর গলা পেয়ে উৎকণ্ঠা হয় উর্মিলা। পাশে থাকা চশমাটা দ্রুত পরে নিয়ে দরজার দিকে তাকাতেই মিষ্টি হাসি দেওয়া রাগিনীকে দেখে যেন অপেক্ষার প্রহর শেষ হয় তার। সোজা হয়ে তড়িঘড়ি করে বসে। রাগিনী সন্নিকটে আসতেই উর্মিলা বলে,
“এত দেরি করলি যে! বস এখানে।”

রাগিনীর হাত ধরে টেনে বসায় উর্মিলা। রাগিনী বসতে বসতে জবাব দেয়,
“আরে আসতে তো একটু সময় লাগবে নাকি!”

“আচ্ছা, ঠিক আছে। তা কেমন আছিস?”

“এটা জানতে আমাকে ডাকলি বুঝি?”

ঠোঁট চেপে হেঁসে জিজ্ঞেস করে রাগিনী। উর্মিলা দম নিয়ে বলে,
“তোকে প্রশ্নও করা যাবে না? আমি বুঝি জানতে চাইতে পারি না তুই কেমন আছিস?”

“হুমম অবশ্যই পারিস। আচ্ছা, আমি তো ভালোই আছি। তোর কী অবস্থা? পায়ের কন্ডিশন আগের চেয়ে বেটার?”

“হুমম অনেকটা ভালো।”

বলেই থম মে/রে বসে রইল উর্মিলা। কিছু একটা বলতে চেয়েও বলতে পারল না যেন। রাগিনী তার চোখমুখের ভাবভঙ্গি দেখে বুঝেই নিয়েছে সে কিছু বলতে চাইছে। উর্মিলা পরক্ষণেই ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে বলল,
“তা তোর অতিথিদের কী অবস্থা? অভিরূপ! উনি তো এখানেই আছেন তাই না?”

“হুমম। তা তো আছেন। উনার মা-বাবা অনেক প্রেশার দিচ্ছেন যেন দেশে ফিরে যান। কিন্তু জানি না কেন আছেন এখানে।”

উর্মিলা এবার ঢক গিলে ইনিয়েবিনিয়ে বলল,
“তা উনার বন্ধু তো চলে গেলেন আগেভাগেই। উনাকে এখন সামলে দেশে নিয়ে যাবেন কী করে? নাকি উনার ফেরার চান্স আছে?”

রাগিনী এবার পুরো বিষয়টা বুঝল। মুচকি হেঁসেও লুকিয়ে ফেলল হাসিটা। তৎক্ষণাৎ না বোঝার ভান করে বলল,
“উনিটা কে?”

উর্মিলা বিরক্ত হলো এমন প্রশ্নে। অপ্রসন্ন গলায় উত্তর দিলো,
“আরে উনি! নোমান।”

“জানি না রে। উনার সাথে তো কথা হয় না।”

মুখটা ফ্যাকাশে হলো উর্মিলার। লোকটি কী করে এভাবে হাওয়া হয়ে যেতে পারে? ভাবতেই রাগ লাগছ তার। একবারও কিনা খোঁজ খবর রাখারও চেষ্টা করল না? এ তো পুরো স্বার্থপর মানুষ! তবুও নিজেকে সামলে বলল,
“উনার নম্বর তোর কাছে আছে?”

এবার উর্মিলার কাঁধ চেপে ধরল রাগিনী। তাকে আলতো ধা/ক্কিয়ে বলল,
“ব্যাপার কী? তুই তো তাকে সহ্যও করতে পারিস না। কী হলো হঠাৎ?”

আমতা আমতা করতে থাকল উর্মিলা।
“স…সহ্য করতে পারিনা বলে কি আমার দায়িত্ব নেই? থাক তোকে নম্বর দিতে হবে না।”

রাগিনী ফোন বের করল এবার ব্যাগ থেকে। উর্মিলাকে শান্তনা দিতে দিতে বলল,
“মজা করছিলাম তো। নম্বর নে।”

যথারীতি নম্বরটা নিজের ফোনে তুলে নিলো উর্মিলা। কাজটা শেষ হওয়ার পরপরই এবার রাগিনী মজা করেই বলল,
“দেখিস! সাবধানে কল দিস। তোর কল পেয়ে বেচারা হার্ট অ্যা/টাকও করতে পারে।”

হসপিটালের তেরো নম্বর কেবিন। মিসেস. রমিলা সোফায় বসে থেকে স্যুপের বাটিতে চামুচ দিয়ে স্যুপ নাড়াচ্ছেন। পাশেই গম্ভীর মুখে পুলিশের ইউনিফর্ম পরিহিত ছেলেটা রায়ান। আধশোয়া হয়ে বাঁকা চোখে নয়নতাঁরা পর্যবেক্ষণ করছে তার ইন্সপেক্টরকে। রায়ান অফিসে যাওয়ার আগে তার মাকে নয়নের কাছে ছেড়ে দিতে এসেছিল। আরেকটি উদ্দেশ্য হলো নয়নকে একটু দেখে যাওয়া। মেয়েটার অবস্থা এই কদিনে কাহিল হয়ে গিয়েছিল পিঠে গু/লি লাগার ফলে। কোহিনূরের অবস্থা হয়েছিল পা/গল প্রায়। সারা দিনরাত ছেলেটা নিজের প্রতি রা/গ ঝে/ড়ে গিয়েছে। সামাল দিতে হয়েছে রায়ানকে। মিসেস. রমিলার কথায় ধ্যান ভাঙে রায়ানের।
“রায়ান, আমার হাতটা ব্যথা করছে। তুমি একটু নয়নকে স্যুপ খাইয়ে দাও তো।”

বিষম খায় রায়ান। ঘনঘন চোখের পলক ফেলে নয়নের দিকে তাকায়। নয়নও উসখুস করছে। তার মা দেশে আসার পর থেকেই নয়নের সামনে তাকে অপ্রস্তুত করে তুলছে। নিজেকে ধাতস্থ করে রায়ান জবাব দিলো,
“আমি?”

“তো কে? রায়ান বলতে আর কেউ আছে ঘরে?”

রায়ান আমতা আমতা করতে থাকে। মাঝে নয়নতাঁরা নিজেই নিচু সুরে বলে,
“আমি একাই খেতে পারব আন্টি। আমাকে দিন বাটিটা।”

মিসেস. রমিলা নারাজ হয় বিষয়টাতে। রায়ানের দিকে তাকিয়ে কড়া গলায় বলেন,
“প্রশ্নই আসে না। পিঠের আ/ঘাত এখনো ঠিক করে শুকিয়ে যায়নি। ঠিক আছে ওকে খাওয়াতে হবে না। আমিই আমার হাতব্যথা নিয়ে খাওয়াব।”

উপায়ন্তর না পেয়ে মায়ের হাত থেকে বাটি নিয়ে নয়নের কাছে গিয়ে বসে রায়ান। চামুচে স্যুপ তুলে একটু করে ফুঁ দিয়ে নয়নের মুখের সামনে এগিয়ে ধরতেই সেটা ইতস্ততবোধ করে মুখে নেয় সে। কিন্তু সমস্যা হয় তাতে। মুখে হাত দিয়ে চোখ বড়ো বড়ো করে তাকায়। রায়ান দ্রুত পানি হাতে নিয়ে বলে,
“গরম হয়েছে বেশি স্যুপ? দ্রুত পানি খাও।”

গ্লাস ঠোঁটে লাগায় নয়নতাঁরা। লোকটা আজকাল বেশি কেয়ার দেখায়। এটা তার ভুল ধারণা নাকি সঠিক সেটা খুঁজে পাচ্ছে না। পানি পান করা শেষে রায়ান যত্ন করে হাতে টিস্যু নিয়ে মুখটা মুছে দিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়ে স্যুপটা ফুঁ দিয়ে খাওয়াতে। মিসেস. রমিলা গালে হাত দিয়ে একমনে ছেলেটাকে দেখে একটু আমিষ ভাব খুঁজে পান। আসল ব্যাপার উনার হাতে ব্যথা কিছুই নয়। সবই বাহানা!

এরইমাঝে রাগিনী প্রবেশ করে কেবিনে। আচমকা তাকে দেখে নয়নতাঁরা হেঁসে ওঠে। রাগিনী প্রথমেই নিজের নেত্রপল্লব দ্বারা খুঁজে নেয় কোহিনূরকে। মানুষটি আজকেও নেই এখানে। গত পাঁচদিন ধরে সে দেখা দিচ্ছে না রাগিনীর সামনে। বিষয়টা অদ্ভুত লাগছে রাগিনীর কাছে। কল দিলে কল ধরে না অথবা বিজি দেখায়। সেদিন গাড়িতে ওমন সুন্দর কথায় সে ভেবেছিল হয়ত কোহিনূরের রা/গটা কমেছে। কিন্তু গত দিনগুলোর ব্যবহার অন্যকিছুই বলে দেয়। দুইবার কোহিনূরের অফিসেও গিয়েছে রাগিনী। মেহরাজ বার বার বলেছে, কোহিনূর নেই কাজে গিয়েছে বাহিরে। সে কেবিন চেক করেও তাকে পায়নি। সব মিলিয়ে রাগিনী ভালো নেই। কোহিনূরকে সামনাসামনি করে বিষয়টা পরিষ্কার করা প্রয়োজন তার। কিন্তু হচ্ছে কোথায়?

“ভাবিজান!”

“কেমন আছো এখন?”

রাগিনীর কথায় নয়নতাঁরা হাত উঠিয়ে বলে,
“একদম ফিট।”

“ভয় পাইয়ে দিয়েছিলে আমাদের।”

নয়নতাঁরা এবার তার সামনের চুলগুলো ভাব নিয়ে ফু়ঁ দিয়ে উড়িয়ে দিয়ে বলে,
“টেনশন নট ভাবিজান। আমি এত তাড়াতাড়ি যাচ্ছি না। তোমাকে পরিপূর্ণ আমার ভাবিজান হিসেবে দেখতেই হবে আমায়।”

রাগিনী নয়নতাঁরার মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়। আরো কথা বলে তখন আগমন ঘটে মেহরাজেরও। কিছু ফলমূল নিয়ে এসেছে সে। সেসব কিছু দিয়ে তড়িঘড়ি করে কাজের বাহানা দিয়ে কেবিন থেকে সময় না দিয়েই বেরিয়ে পড়ে। তবে এবার নিস্তার নেই মেহরাজের। এই ভেবেই রাগিনীও বিদায় নিয়ে বেরিয়ে আসে কেবিন থেকে। মেহরাজ সামনে ছুটতেই দ্রুত রাগিনী গিয়ে তার সামনে দাঁড়ায়। শক্ত গলায় জিজ্ঞেস করে,
“আপনার স্যার কোথায়?”

মেহরাজ থতমত খেয়ে জবাব দেয়,
“বাহিরে কাজে আছে। অফিসেও নেই, বাড়িতেও নেই।”

রাগ হয় রাগিনীর। চোখ গরম করে বলে,
“তো আছেটা কোথায়? মঙ্গল গ্রহে?”

“তা তো জানি না। আমার কাজ আছে ম্যাডাম। আমি যাই।”

মেহরাজ রাগিনীর পাশ কাটিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে তবে রাগিনী তখনি জোর গলায় বলে ওঠে,
“খবরদার আমার সব কথা না শুনে যাবেন না। আপনার সঙ্গে কিছু কথা আছে আমার।”

মেহরাজ ঢক গিলে বলল,
“স্যারের সম্পর্কে হলে কিছুই বলতে পারব না।”

“বলতে আপনি বাধ্য!”
#গোধূলি_বেলায়_তুমি_এসেছিলে
#আনিশা_সাবিহা
পর্ব ১৯ (২য় খণ্ড)

গাড়িতে বসে আছে মেহরাজ আর রাগিনী। মেহরাজ চুপচাপ। রাগিনীর কঠোর চেহারার দিকে মাঝে মাঝে চো/রের মতো তাকাচ্ছে সে। অনেক বলেও রাগিনীকে এড়িয়ে আসা গেল না আর। মেহরাজ বেচারা পড়েছে রাগিনী এবং কোহিনূর উভয়ের তোপের মুখে। সুযোগ পেলে দুজনই শা/সায়। দীর্ঘশ্বাস ফেলে রাগিনী গম্ভীর গলায় প্রশ্ন করল,
“আপনার স্যার এখন কোথায় আছেন?”

বোকার মতো মাথা চুলকাতে শুরু করে মেহরাজ। শুকনো ঢক গিলে আমতা আমতা করতে করতেই রাগিনী আবারও জিজ্ঞেস করে,
“আপনার স্যারকে আমি খে/য়ে ফেলব না। সো সহজভাবে বলে দিলে ভালো হয়।”

“অফিসেই আছেন উনি। এখন কাজে বেশি ব্যস্ত। কারণটা হয়ত আপনি বুঝতে পারছেন ম্যাডাম। এই কেসটা ক্রমশ জটিল হচ্ছে। এমনকি ব্যক্তিগত আ;ক্রমণ করতেও ছাড়ছে না সেই ভয়ানক আ/তঙ্কবাদীর দল।”

“উনি সেজন্যই ব্যস্ত রয়েছেন? নাকি অন্য কোনো কারণ আছে?”

বেশ সন্দিহান হয়ে প্রশ্নটা মেহরাজের দিকে ছুঁ/ড়ল রাগিনী। মেহরাজের চেহারায় এবার কিছুটা পরিবর্তন লক্ষ্য করা গেল। অনুজ্জ্বল হলো মুখ। মাথা নুইয়ে নিয়ে নিচু সুরে বলল,
“আসলে আমারই উচিত ছিল কথাগুলো আপনাকে আগে বলা। কিন্তু স্যার আমাকে অনেকটা হু/মকি দিয়ে রেখেছে বলা চলে। স্যার অনেক মানসিক চাপের মধ্যে আছেন। যেদিন নয়নতাঁরা ম্যাডামকে শ্যু/ট করা হলো ওইদিন থেকে উনি নিজেকে এমনভাবে দোষা/রোপ করা শুরু করলেন যে আস্তে আস্তে উনি অন্যরকম হয়ে উঠতে লাগলেন। আপনার সঙ্গে যোগাযোগ কমিয়ে দেওয়ার একমাত্র কারণ হলো ভয়। উনার মতে, আ/তঙ্কবা;দীর লক্ষ্য আগে থেকেই আপনি রয়েছেন। এরপর যদি স্যারের সঙ্গে আপনাকে তারা মিশতে দেখে আপনারও ক্ষ;তি করার চেষ্টা করে তখন স্যার এটা মোটেও মানতে পারবেন না। ঠিক এই কারণে উনি আপনাকে এড়িয়ে চলছেন কয়দিন ধরে।”

বিষাদযুক্ত সেইসব কথা কানে আসতেই বুকটা ভার হয়ে আসে রাগিনীর। মাঝে মাঝে সে ভেবে পায় না লোকটা কি আসলেই পা/গল জাতীয় কিছু? হয়ত তাই হবে! এই লোকটার প্রয়োজন চিকিৎসার। নয়ত এতটা অদ্ভুত চিন্তাভাবনা কেউ করতে পারে? ম্লান মুখ নিয়ে গাড়ির দরজাটা খুলতেই মেহরাজ এবার অনুরোধ করে বসে তাকে।
“ম্যাডাম, প্লিজ স্যারকে বলবেন আমি এসব বলেছি। তাহলে আমার খবর করে দেবেন।”

“হুমম বলব না।”

রাগিনী নেমে গেল। তবে এবার সে যেকোনো মূল্যে কোহিনূরের সঙ্গে কথা বলবে। নয়ত লোকটি তার ভুল ধারণা থেকে সরবে না কিছুতেই।

সবেমাত্র শাওয়ার শেষে ওয়াশরুম থেকে বেরিয়েছে অভিরূপ। আজকাল ভিজে চুলগুলো নুইয়ে থাকলে চোখ দুটো ঢেকে যায় তার। বুঝতে পারে চুলগুলো বেশি বড়ো হয়েছে অযত্নে। তবুও কোনো হেলদোল সৃষ্টি হয় না তার মাঝে। ঠান্ডা লাগছে বেশ। দ্রুত হাতে আরেকটা টাওয়াল নিয়ে বুকে পানি মুছতে ব্যস্ত হয়ে পড়ল সে। জানালার কাছে রোদের সামনে দাঁড়াতেই ফোনের সবচেয়ে বিরক্তিকর মেসেজ টোনটা কানে আসায় চোখমুখ জড়িয়ে এলো তার। হয়ত নোমানের মেসেজ! এটা ভেবেই বিরক্তি সরিয়ে কাবার্ডের ওপরে রাখা ফোনটা হাতে নিয়ে আরো বেশি অসন্তুষ্ট হলো। আননোন নম্বরে মেসেজ! এটা তার কাছে অস্বাভাবিক ব্যাপার নয়। বাংলাদেশে থাকার খবর পাওয়ায় অনেক অনুষ্ঠানের গেস্ট হিসেবে তার ডাক পড়েছে। অনেক ডিল করতে চেয়েছে অনেকেই। ইতিমধ্যে একটা অনুষ্ঠানের ডিল ফাইনালও করেছে সে। এটাও যথেষ্ট! তবুও ফোনটা যখন হাতে ধরেছে মেসেজটা না দেখলেই নয়। তাই ফোনের লক খুলতেই মাত্র এক লাইনের অদ্ভুত বার্তায় কপালের ভাঁজটা প্রগাঢ় হলো তার। ‘বি এলার্ট, বি সেফ।’

হালকা মস্তিষ্কে জোর দিতেই না চাইতেও রূপাঞ্জনার কথাটা মনে ধা/ক্কা দিলো। বিলম্ব না করে কল অপশনে গিয়ে ফট করে কল দিয়ে ফেলল সে। প্রথমে কল রিসিভ না হলেও পরবর্তীতে প্রথমেই কল ধরল কেউ। অভিরূপ তীক্ষ্ণ প্রশ্ন করে ফেলল,
“হ্যালো! হু ইজ দিস?”

“ই…ইটস রং নম্বর! সরি।”

বেশ চিকন সুর। বোঝাই যাচ্ছে অপরপ্রান্তে থাকা এই মানবী কম চেষ্টা রাখছে না অচেনা হিসেবে পরিচিতি দিতে। তবে অভিরূপ বেশ জোর দিয়েই বলল,
“রূপাঞ্জনা। ডোন্ট অ্যাক্ট ইন ফ্রন্ট ওফ মি।”

অপরপ্রান্ত এবার একেবারেই চুপ, নির্জীব! অভিরূপ আবারও বলে,
“আমি জানি তুমি গলার সুর পাল্টাতে, নকল করতে বেশ ভালোই পারো। ঠিক এই একটা কারণেও তোমাকে রাগিনী ভেবে অনেকবারই ভুল করেছি। কিন্তু মানুষ ভুল থেকেই শিক্ষা নেয়। এর মধ্যে আমিও একজন।”

রূপাঞ্জনার শ্বাস ঘন হলো এবার। নিজের মনের বিরুদ্ধে গিয়ে অভিরূপকে মেসেজ করেছে অনেক কষ্টে। জানিয়ে দিতে চেয়েছিল শুধুমাত্র তাকে সাবধানে থাকতে। কারণ পৃথিবী উল্টে গেলেও সে কখনো কোনোভাবেই চাইবে না এই মানুষটির শরীর থেকে এক ফোঁটাও র/ক্ত পড়ুক। কারণ রূপার মনে এবং মস্তিষ্কে এটা গেঁথে গিয়েছে যে অভিরূপকে সে একসময় পরা’স্ত করতে চাইলেও লোকটি নির্বিঘ্নে সব জেনেও তার জন্য মায়া করে গিয়েছে। কিন্তু অভিরূপ চৌধুরী বেশ জেদি মানুষ। ঠিক এই কারণেই হয়ত সে বেশ আত্মবিশ্বাসের সাথেই কল দিয়েছে রূপাকে।
“রূপা! কথা বলো! চুপচাপ থাকা সাজছে না। এমনিতেই অ/ন্যায়ের পাল্লায় তোমার ওজন কম নয়।”

“জানি আমি। সেকারণেই কম করার চেষ্টা করিও না।”

“চলে গেলে কেন এভাবে না বলে?”
অভিরূপের সোজা প্রশ্ন এবার রূপার কাছে জটিল প্রশ্ন হয়ে দাঁড়াল। তাই সে কাঠকাঠ গলায় প্রশ্ন করল,
“কেন? থেকে গেলে তো পুলিশে ধরিয়ে দিতেন।”

অভিরূপের রাগ হলো বেশ। চোয়াল শক্ত হলো। তবুও কণ্ঠে তা প্রকাশ না করে বলল,
“এই চিনলে আমায়?”

“আমি কাউকে চিনতে চাই না। বিশেষ করে আপনাকে তো একদমই না। আপনি মানুষটাকে চিনতে গেলে হয়ত আমায় নিষ্ক্রিয় হতে হবে আপনাতে।”

“তার উল্টোটা হলে বুঝি খুশি হবে তুমি? আমি তোমাতে মিশে যেতে চেয়েছিলাম।”

রূপাঞ্জনার নিঃশ্বাস ঘন হয়। ফট করে অভিরূপের কথা ধরে বলে,
“চেয়েছিলেন। এখন চান না তাই না?”

“এখনো চাই। সবসময় চাইব। সব জেনেও চাইব। মন মানুষের কর্মকাণ্ডের চেয়েও বেশি নিবারিত। কারণ তারা সব চেয়েও নি/ষিদ্ধ জিনিসের প্রতি আকৃষ্ট হয়।”

অভিরূপের সোজাসাপটা উত্তরে প্রতিত্তোরে আর কিছু বলার সুযোগটা হলো না রূপার। হতবিহ্বল হয়ে জানতে চাইল,
“এখনো স্বপ্ন দেখেন কীসের আশায়?”

“আশা আমি নিজে তৈরি করে নিয়েছি। স্বপ্ন দেখি তুমি আমি পালাব কখনো। কোথাও ছোট্ট বেড়ার বাড়ি হলেও করব। সেখানেই গড়ব সংসার!”

রূপাঞ্জনা দিশাহারা হয়। লোকটির সঙ্গে কেন কথা বলতে এলো সেটা ভেবে কপাল চাপড়াতে চায়। অভিরূপ আবারও বলে,
“তোমার অপেক্ষায় আছি। আশা করি তুমি আসবে। চলে এসো প্লিজ। আমি সেই পথে চেয়ে থাকব যেই পথ দিয়ে তুমি আসবে।”

ব্যস…আর কোনো উত্তর পাওয়া গেল না। কলটা হঠাৎ কাটল। পরবর্তীতে কল করতে গিয়ে নম্বর বন্ধ পাওয়া গেল। তবে প্রত্যাশা হারাল না। কোথাও যেন মনে হলো মৌনতায় সম্মতি!

“কঙ্কালটা অনেক পুরোনো ছিল স্যার। ডিএনএ রিপোর্টের সঙ্গে ডার্ক ম্যাক্সের ডিএনএ ম্যাচও করেছে। তাই এটা বলায় যায় কঙ্কালটা ডার্ক ম্যাক্সের ভাই শরিফ দেওয়ানের।”

কোহিনূর চেয়ারে মাথা লাগিয়ে দিলো কথাগুলো শুনে। মুখে গাম্ভীর্যের ভাবটা খানিকটা বাড়ল। তার সামনে সহকারী অফিসার নিহান কথাগুলো অনবরত বলে চুপ করে রইলেন কোহিনূরের নির্দেশের আশায়। কোহিনূর এবার চোখ বুঁজে প্রশ্ন করল,
“তাহলে শফিক দেওয়ানকে গতদিন আগে মা/রা হয়েছে বলে ধারণা করেছে ফরেনসিক ডক্টর?”

“প্রায় তিন বছর আগেই। আর এটাকে কঙ্কাল তৈরি করার জন্য আলাদা করে এসিডও দেওয়া হয়েছে।”

কোহিনূর হতাশ হলো। ভেবেছিল এই লোকের দেখা মিললে কিছুটা হলেও কেইসের সমাধান হতে পারত। কিন্তু মনে হচ্ছে নকল ডার্ক ম্যাক্স আগেই সব প্ল্যানিং করে মাঠে নেমেছে। কোহিনূর আবারও ভার গলায় বলে উঠল,
“দেওয়ান বাড়ির ফাঁকা জায়গায় মাটির নিচে আর কিছু পাওয়া গিয়েছে?”

“না স্যার।”

কোহিনূর বড়ো একটা শ্বাস নেয় নিজেকে শান্ত করতে। তৎক্ষনাৎ মেহরাজের আগমন ঘটে। দেরি না করেই বলে,
“স্যার, রাগিনী ম্যাডাম এসেছেন। উনি আপনার সঙ্গে এখনি, এই মূহুর্তে দেখা করতে চাইছেন।”

ভ্রু কুঁচকালো কোহিনূর। প্রখর সুরে বলল,
“তুমি বলো নি আমি অফিসে নেই?”

“জি স্যার বলেছি। কিন্তু একই বাহানা দিয়ে আর কত ম্যানেজ করা যায়? ম্যাডাম বলছেন আপনি দেখা না করা পর্যন্ত উনি বাড়ি ফিরবেন না আজ।”

বেশ কষ্টেই নিজের মেজাজটা সামলে নেয় কোহিনূর। মেয়েটাকে কোনোমতেই দমিয়ে রাখা যায় না। সে ইশারায় এখন নিহানকে আসতে বলে মেহরাজকে বলে,
“ওকে আসতে বলো।”

মেহরাজ সম্মতি জানিয়ে চলে যাওয়ার কিছুক্ষণের মধ্যেই হনহনিয়ে পদার্পণ ঘটে রাগিনীর। প্রথমেই সামনে এসে এক টেবিলে এক থা/বা দিয়ে কোহিনূরের চোখে চোখ রেখে কাঠকাঠ গলায় বলে ওঠে,
“সমস্যা কী আপনার? কী পেয়েছেন আপনি আমায়? যখন যেভাবে পারছেন ব্যবহার করে যাচ্ছেন। আমাকে ব্যাটারি চালিত পুতুল মনে হচ্ছে আপনার?”

কোহিনূর আগেই কিছু বলল না। হকচকিয়ে উঠল কিছুটা। তার রাগের রানি ঝাঁঝালো তেজ দেখাতে শুরু করেছে। তবে এই তেজের সামনে তাকে হার মানলে আবারও সমস্যা হবে। তাই সে গাম্ভীর্য বজায় রেখে বলল,
“আমি কখন বললাম তুমি আমার ব্যাটারি চালিত পুতুল?”

“সব কথা মুখে বললেই বোঝা যায় নাকি? আপনার হাবভাব সেটাই বলে দিচ্ছে। আপনার ফোন তুলছিলেন না কেন?”

“ব্যস্ত আছি। আমার কাজটাই তো এমন। সব জেনেই তো আমার সঙ্গে সম্পর্ক রাখতে রাজি হয়েছ। রাইট?”

রাগিনী দাঁতে দাঁত চেপে বলল,
“রাখুন আপনার কাজ! কত কাজ করছেন জানা আছে।”

“কাজই করছি। আর তুমি সবসময় তাতে বাঁধা দিচ্ছো। এমন করলে তো সমস্যা রাগিনী!”

রাগিনীর মেজাজ তুঙ্গে ওঠে এবার। মিথ্যে সহ্য হচ্ছে না আর। টেবিলের ওপাশ থেকে এপাশ চলে এসে প্রথমেই অগ্নি দৃষ্টি নিক্ষেপ করে মানুষটির দিকে। রা/গটা কমতে না চাওয়ায় নিজেকে সামলাতে না পেরে এবার ডান হাত দিয়ে না চাইতেও একটা থা/প্পড় মে/রে দেয় রাগিনী। আকস্মিক ঘটনায় হতভম্ব কোহিনূর। সরাসরি নিজের গালে হাতটা চলে গেল তার। মুখটা হা করে গালে হাত দিয়েই উঠে দাঁড়াল সে। ব্যাপারটা কী হলো? তারই অফিসে তাকেই কোনো মেয়ে ইচ্ছে অনুযায়ী চ/ড় দিয়ে দিচ্ছে? কিছু বলতে গিয়েও পারল না কোহিনূর। তার আগেই রাগিনী আঙ্গুল উঁচিয়ে বলল,
“এর আগেও আপনি আমাকে বহুবার মিথ্যে কথা বলেছেন। নিজের মিথ্যে পরিচয় দিয়েছেন। একটার পর একটা কথা গোপন করেছেন। আমার সঙ্গে অভিনয় করেছেন। আমি সব মেনে নিয়েছি এবং আপনি কথা দিয়েছিলেন এরপর থেকে আপনি কখনো আমার থেকে কিছু লুকিয়ে যাবেন না। কিন্তু নিজের কথাটা বিন্দুমাত্র রাখার চেষ্টাও করছেন না আপনি।”

কোহিনূর গাল থেকে হাতটা নামায়। মাথাটা নিচু হয় আপনাআপনি। অনুতপ্ত হয় বেশ। রাগিনী থামে না। আবারও অনর্গল বলতে শুরু করে,
“আপনি দেশের জনগনের জন্য ভাবছেন। কেইস নিয়ে ব্যস্ত আছেন। সকলের জন্য আপনার চিন্তা। খুব কথা, কোহিনূর। এতে আমার কোনো আপত্তি নেই। কিন্তু আমারও আপনাকে দরকার হয়। আপনি আমার কথা চিন্তা করছেন না। আমার অনুভূতি বুঝতে চাইছেন না।”

আর নীরব থাকে না কোহিনূর। জবান খোলে তার।
“তোমার কথা চিন্তা করেই তোমায় এড়িয়ে চলছি, রাগিনী। তুমি আমায় বুঝতে পারছ না। আমার পরিস্থিতি সম্পর্কে তোমার ধারণা নেই। নয়নকে দেখেছ? ওই মেয়েটা যে কিনা এক সেকেন্ডও বসে থাকতে পারে না একভাবে। সেই মেয়েটা হসপিটালের বেডে আজ পাঁচদিন ধরে পড়ে আছে। আমি ভাই হিসেবে ব্যর্থ হয়ে গিয়েছি। চাই না আমি আর ব্যর্থ হতে। আমি চাই না তোমার স্বামী হয়ে ব্যর্থ হতে।”

কথাগুলো বলতে বলতে চোখ দুটো জ্বলজ্বল করল কোহিনূরের। রাগিনী স্পষ্ট খেয়াল করল মানুষটির চোখে সামান্যতম অশ্রু! পুরুষ মানুষের সামান্য অশ্রুপাত হওয়া মানে তার দাম অনেক। কোহিনূরের গালে হাত রাখে রাগিনী। নম্র হয় এবার।
“আপনি ভাবছেন আপনি ভাই হিসেবে ব্যর্থ। এটা আপনার ভাবনাতেই সীমাবদ্ধ। নয়নকে প্রশ্ন করে দেখবেন। তাহলেই বুঝতে পারবেন আপনি কতটা ভুল ধারণা নিয়ে বেঁচে আছেন। অফিসার কোহিনূর, একটা কথা শুনুন। সকল জীবের মৃ/ত্যু নির্ধারিত। এটা কেউ আটকাতে যেমন পারে না ঠিক তেমনই এটার জন্য কেউ দায়ী হতে পারে না। মৃ/ত্যু একটা বাহানা খোঁজে। যাতে সেই বাহানা দিয়ে মানুষের থেকে প্রা/ণ কেঁ/ড়ে নিতে পারে। তার জন্য কি জীবনে থেমে যাওয়া উচিত?”

কোহিনূর নীরব রইল। ফ্লোরের দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল সে। কিছুটা সময় নিয়ে বলল,
“ডেপুটি কমিশনার স্যার বলেছেন সামনে কোনো ভয়া/নক বিপদের আশঙ্কা রয়েছে। সকলকে তৈরি থাকতে বলেছে। এখন আ/তঙ্কবা/দী পুরোপুরি স্তব্ধ হয়েছে। এরমানে নিশ্চয় তারা পরিকল্পনা করছে বড়ো কিছুর। এতসব আশ/ঙ্কা নিয়ে আমি তোমার সঙ্গে নিজের জীবন জড়িয়ে ফেলতে পারব না।”

ক্রো/ধ নিভে যাওয়া রাগিনী আবারও জ্বলে ওঠে। কোহিনূর তো কোনোকিছুতেই বোঝার পাত্র নয়। সে এবার স্পষ্ট বলে,
“যা ইচ্ছে মিশন থাক। আপনি সময় চেয়েছিলেন আমি সময় দিয়েছি। তবে মনে রাখতে হবে আমার সময়ও বেশি নেই। রেজাল্ট বের হবে আমার। আপনি যেই মিশনেই যান না কেন আমার একটা শর্ত আপনাকে মানতে হবে। সেটা হচ্ছে বিয়ের শর্ত। বাবা অসুস্থ রয়েছেন। উনিও বারবার বিয়ের কথা তুলছেন।”

“বিয়ের কথা এখনি কেন রাগিনী? আমি বলছি তো… ”

রাগিনী কথায় বাগড়া দিলো এবার। নিজে থেকে বলল,
“আমি মিশনের ওতো কিছু বুঝি না। আপনি কালকের মধ্যে আপনার সিদ্ধান্ত জানাবেন নয়ত আমি কালকে বিকেলে চট্টগ্রামের উদ্দেশ্যে রওনা দেব। এতকিছুর মাঝে থাকার কোনো মানে নেই।”

রাগিনী আর দেরি করল না এক মূহুর্তও। একবার কোহিনূরের দিকে তাকিয়ে দ্রুত পায়ে বেরিয়ে এলো সেখান থেকে।

নোমানের নম্বরটা হাতে পাওয়ার পর থেকেই নম্বরটা ফোনে ডায়াল করা অবধিই সীমাবদ্ধ থাকছে উর্মিলা। কল দেওয়ার আগ্রহ জমলেও সেটা হয়ে উঠছে না। নোমান লোকটি যদি আবার ভাব নেয়? এই কাজটা সে ভালো পারে বলে জানে উর্মিলা। ফলে আরো কল করতে চেয়েও পারছে না সে। হাজারো দোটানায় ভুগতে ভুগতে শেষমেশ সন্ধ্যায় কলটা দিয়েই ফেলল সে। বেশ অনেকক্ষণ রিং হলো। মনে হলো নোমান কল ধরবে না। তবে কল রিসিভ হওয়ার পরেই চুপসে গেল উর্মিলা। অন্তর শুঁকিয়ে গেল ওপাশ থেকে নোমানের কণ্ঠ পাওয়ার পর।
“হ্যালো! কে বলছেন?”

উর্মিলা ঠোঁট ভিজিয়ে মিনমিন করে বলল,
“উ…উর্মিলা বলছি।”

“ওহ হো! সো মিস. শুঁকনো মরিচ! কী মনে করে হঠাৎ এই ভিনদেশী, বিরক্তিকর, জ্বালাতন করা মানুষটিকে কল দেওয়ার কথা মনে হলো?”

উর্মিলা আজ শান্ত। সে মোটেও রা/গল না। বরং কেন যেন ভীষণ আনন্দিত হলো। ইশশ…এমন ধরনের কথা সে কতই না মিস করেছে। বিগত কয়দিন শুধু এমন কথায় শোনার জন্য মনটা ছটফট করত। এ যেন কোনো খোঁচানো কথা নয়! অমৃত!
“আপনার মনে পড়ে না বলে কি আমারও মনে পড়বে না? সবাইকে আপনার মতো ভাবেন নাকি?”

নোমান হেসে বলে ওঠে,
“তাই তো! মিস. উর্মিলা তো খুব দয়াময়ী মেয়ে। তা কেমন আছো? পায়ের অবস্থা কেমন? হাঁটতে পারো?”

“আমার অবস্থা জেনে কী হবে আর? আপনার তো যোগাযোগ করে জানার ইচ্ছে হয়নি। তাই জানতে হবে না। আপনি কেমন আছেন?”

নোমান বুঝল উর্মিলার অভিমানের ধাঁচ। তবে তার প্রতি মেয়েটি অভিমানিনী হলো কেন সেটা বোধগম্য হলো না নোমানের। সে জানাল,
“সত্যি করে বলব? আমি খুব একটা ভালো নেই। বাংলাদেশে ফেলে আসা একটা ঝগড়ুটে মেয়ের ঝগড়া ভীষণ মিস করছি। বিলিভ মি! আমি এতটাই এখানে এসে ব্যস্ত হয়ে পড়েছিলাম যে তোমার সঙ্গে কথা বলতে চেয়েও হয়নি।”

উর্মিলার অভিমান নিভল কিছুটা। নরম গলায় বলল,
“থাক আর বাহানা দিতে হবে না।”

“আচ্ছা দিলাম না।”

নোমানের কথায় এবার উর্মিলা বেশ আগ্রহ নিয়ে জিজ্ঞাসা করে,
“আপনি এখানে আর আসবেন না?”

“গিয়ে কী হবে?”

“কী হবে মানে?”

নোমান আগের সুরেই খামখেয়ালী হয়ে বলে,
“হুমম। তুমিই বলো কী হবে? কিছু কি নেওয়ার আছে ওখান থেকে? আমার পারমানেন্ট বাড়ি এখানে। ওখানে গিয়ে করবটা কী?”

“তারমানে আর আসবেন না?”

নোমান উর্মিলার এমন হতাশ গলায় কিছুটা সন্দিহান হয়। সে বলে উঠল,
“গেলেই তো তোমার সঙ্গে ঝগড়া হবে। সেটা কি চাও তুমি?”

উর্মিলা কিছু না ভেবেই বিড়বিড়িয়ে বলল,
“হু চাই তো। আপনি আমায় আর বিরক্ত করছেন না বলে আমি বিরক্ত। ভীষণ বিরক্ত।”

নোমান উর্মিলার গলা সেভাবো শুনতে না পেয়ে আবার শুনতে চাইল,
“কী বললে?”

“না, কিছু না। আচ্ছা রাখি।”

উর্মিলা বিনা বেদবাক্যে এবার কল কাটে। ভারী শ্বাস নিয়ে ফোনে ভেসে থাকা নম্বরটার দিকে চেয়ে থাকে। কী হচ্ছে তার? কেমন এমন উদাস লাগছে? এই বিরক্তিকর মানুষটির জন্য?

হঠাৎ কল কেটে দেওয়ায় কিছুটা বিস্মিত হয় নোমান। সেও একমনে তাকিয়ে রইল ফোনের দিকে। ভালোই তো কথা বলছিল সে। হঠাৎ কেন কল কেটে দিলো! বলতে পারত কিছুক্ষণ কথা! ভালোই তো লাগছিল। পরক্ষণেই সে বুঝল তার শুঁকনো মরিচ হয়তবা আশা করছে, প্রতীক্ষা করছে তার দেশে যাওয়ার। কোনোভাবে কোনো সূক্ষ্ম মিলবন্ধন কি সৃষ্টি হয়েছে তাদের ভেতর?

রাত তখন নয়টা পার হয়েছে। রাগিনী সবে খাওয়াদাওয়া সেরে রিওকে খাইয়ে তার গায়ে হাত বুলিয়ে আদর করছে। রিও আগের থেকে বেশ বড়ো হয়েছে। গায়ের গঠন পাল্টেছে তার। খানিকটা প্রশস্ত হয়েছে। আর আজকাল ভীষণ আদুরে হয়েছে। রাতে তার গায়ে হাত বুলিয়ে না দিলে ঘুমাতেই পারে না যেন সে! রিও-এর সঙ্গে ব্যস্ত সময় কাটানোর মাঝে দরজায় টোকা পড়ে। তাও আবার ভীষণ প্রবলভাবে। অসময়ে কারোর এমন আগমনে কিছুটা ব্যতিব্যস্ত হয় রাগিনী। রিওকে কোলে নিয়েই হন্তদন্ত হয়ে দরজা খুলে দিয়ে অভিরূপকে কিছুটা অপ্রসন্ন দেখে চিন্তিত হয়ে প্রশ্ন করে উঠল,
“কোনো সমস্যা হয়েছে নাকি?”

অভিরূপ বিনা বাক্যে শুধু মাথা নাড়ায়। মুখ দেখে মনে হচ্ছে সমস্যা খুব জটিল! রাগিনীর কপালে চিন্তার ভাঁজ পড়ে। উদ্বেগ নিয়ে বলে,
“কী হয়েছে?”

“তোমার নিজে দেখতে হবে সমস্যাটা কী। আমি বলতে পারব না।”

রাগিনী আর কিছুই বলবার সুযোগটাও পেল না। তার চোখ দুটো আচমকা চেপে ধরল অভিরূপ। রাগিনী বিস্ময়ে তখন কিংকর্তব্যবিমূঢ়। হচ্ছেটা কী? সে কিছুটা চেঁচিয়ে উঠল।
“আরে! কী করছেন?”

“আরে চলো আমার সাথে। ভরসা রাখো।”

অভিরূপ রাগিনীকে ঠেলেই নিয়ে যায় এবার। রাগিনী বুঝতেও পারে না অভিরূপের কাণ্ডকারখানা। সে অন্ধের মতো চলেছে আস্তে হেঁটে। রিও যেন ইতিমধ্যে রেগেমেগে আ;গুন। রাগিনীকে যেন এভাবে ধরা মোটেও পছন্দ হচ্ছে না তার। দুয়েকবার অভিরূপকে খাঁ’মচে দেওয়ার চেষ্টায় থেকেও লাভ হয়নি তার। বেশ কিছুটা হেঁটে গিয়ে বাহিরের খোলা হাওয়া অনুভব করে রাগিনী। অভিরূপ এবার তার চোখ থেকে হাত সরায়। আশপাশটা দেখে বুঝতে পারে এটা তাদেরই বাড়িতে করিডর পেরিয়ে শেষ প্রান্তের ঝুলবারান্দায় দাঁড়িয়ে। অভিরূপকে আশেপাশে খুঁজতে গিয়ে পায় না রাগিনী। অতঃপর নজর গিয়ে পড়ে ওপাশে থাকা গাড়ির সামনে একটা পুরুষের দিকে। কালো রঙা কোট পড়া পুরুষ তার অতি প্রিয়! হম্বিতম্বি করে রিওকে নিয়ে রেলিং চেপে দাঁড়ায় রাগিনী। হ্যাঁ, ওটা তো কোহিনূরই। কী সুন্দর হাসছে মানুষটি। ভালো করে পর্যবেক্ষণ করলে দেখা যায় তার হাতে যত্ন করে ধরে রাখা একটা কৃষ্ণবর্ণের বিড়াল। ফ্যালফ্যাল করে তাকায় রাগিনী। তৎক্ষনাৎ কোহিনূর আরো প্রশস্ত হেঁসে এগিয়ে এসে কালো বিড়ালটি উপরে ধরে গলা ফাটিয়ে চিল্লিয়ে বলে ওঠে,
“বিয়ে করার জন্য কিন্তু আমি একা আসিনি বউরানি! আমি এবং এই বিড়াল রানি দুজনেই আজ একই পথের পথিক। তুমি এবং তোমার রিও তোমরা কি আমাদের দুজনকে গ্রহণ করতে রাজি আছো?”

এ যেন জেগে জেগে স্বপ্ন। মাথাটা টনটন করছে রাগিনীর। হাসবে না কাঁদবে বুঝেই উঠতে পারছে না। এরই মাঝে কোহিনূর চিল্লিয়ে বলে বসল,
“উইল ইউ ম্যারি মি, রাগিনী তাজরীন? এই পা/গলটাকে বিয়ে করে উদ্ধার করো প্লিজ! নয়ত সে বিবাহ বিরহে নি/হ/ত হয়ে যাবে আজ।”

চলবে…

[

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here