#গোধূলি_বেলায়_তুমি_এসেছিলে
#আনিশা_সাবিহা
পর্ব ৯ (২য় খণ্ড)
রাত তখন প্রায় দুটো। জঙ্গলের ভেতরের গাছগুলোর পাতা অসম্ভব নড়াচড়া করছে। যেন এই কোনো হিং’স্র প’শু বেরিয়ে আসবে সেখান থেকে। কিন্তু তার পরিবর্তে হুট করেই সব ঠেলেঠুলে বেরিয়ে পাকা রাস্তায় এসে নামল এক রমনী। বিধ্বস্ত তার অবস্থা। গায়ে জোর নেই, পায়ে জুতোও নেই। হাতের কনুইয়ের কাছে ধারা’লো কোনো গাছের ডাল লেগে চামড়া উ’ঠে গিয়েছে। সেখান থেকে লাল তাজা র*ক্ত বেয়ে পড়ছে নিচে। সে থামল না তবুও। ঘনঘন শ্বাস নিয়ে এগোতে থাকল সামনে। রূপাঞ্জনার দুচোখে লাল রঙের লাইট জ্বলজ্বল করে উঠল। চোখ একহাতে ডলে ভালো করে পর্যবেক্ষণ করে দেখল ওটা ট্রাকের লাইট। সামনে একটা চায়ের দোকান। ট্রাক ড্রাইভারদের জন্য সচরাচর রাত করে খোলা থাকে। হয়ত ড্রাইভার সেখানে চা খাচ্ছে। এই সুযোগে যদি ট্রাকের পেছনে ওঠা যায়! রূপাঞ্জনা সেই উদ্দেশ্যেই অগ্রসর হয়।
কিছুক্ষণ আগেই সেই নর’কসম পরিত্যক্ত আস্তানা থেকে সকলের চোখের আড়ালে পালিয়েছে রূপাঞ্জনা। সেখানে থাকলে তার বোধহয় আর বাঁচা হবে না। কিন্তু সে ডানা মেলে উড়তে চায়। সেই বাসনা পূর্ণ করতে তার এই পদক্ষেপ! যদিও সে জানে না কতদূর সে এগোতে পারবে। কারণ ডার্ক ম্যাক্স নামক ভয়ানক সেই দা’নবের হাত বহুদূর! সে একটা মারা’ত্মক পেঁচিয়ে ধরার মতো জাল। যাকে পায় নিজের ইচ্ছেমতো চি’বিয়ে খায়।
ড্রাইভার চা খেতে ব্যস্ত হওয়ার সুযোগে রূপা লুকিয়ে লুকিয়ে কোনোরকমে ট্রাকে উঠে পড়ে। ভেতরে গিয়ে নীল রঙের পলিথিন দ্বারা নিজেকে আবৃত করে ফেলে নিজেকে। কিছুক্ষণ পর উপলব্ধি করে গাড়ি চলতে শুরু করেছে। রূপা চুপটি করে পুতুলের ন্যায় বসে থাকে।
ট্রাক বেশ কিছুদূর যাওয়ার পর মাঝরাতে দুই-তিনজন লোক ট্রাক দাঁড় করায়। ড্রাইভারকে বেশ অনুরোধ করে তাদের নিয়ে যেতে। এটা অস্বাভাবিক কিছু নয়। রাস্তায় হরহামেশাই হয়। ড্রাইভার বেশ ভালোই ভাড়া চেয়ে বসল। লোকগুলো রাজিও হলো। ড্রাইভার বলল দুজনকে পেছনে উঠতে। কথা অনুযায়ী সেই দুজন লোক পেছনে উঠতে গেলে বেশ শক্তপোক্ত কিছুর সঙ্গে ধাক্কা খেয়ে পড়তে নেয় তাদের মাঝে একজন। রূপা তখন ভেতরে লুকিয়ে মাথা লাগিয়ে দিয়েছে ট্রাকের এক কোণে। ধাক্কা খেয়ে হুঁশ ফিরল তার। অন্য লোকের উপস্থিতি ও সমাগম পেয়ে তৎক্ষনাৎ নিজের উপর থেকে পলিথিনের আস্তরণ সরিয়ে নিলো সে। তাকে দেখামাত্রই লোক দুটো ভূত দেখার মতো চমকে উঠল। একজন চিৎকার করে বলেই বসল,
“ও ড্রাইভার ভাই! ট্রাকে মাইয়া মানুষও তুলছ?”
“কী কন? মাইয়া মানুষ তুলব ক্যান? ট্রাকে কেউ আছিল না।”
হতভম্ব হয়ে জবাব দেয় ড্রাইভার। তার জবাবে লোকটি বলে,
“তাইলে এখানে একটা মাইয়ারে দেখি ক্যান?”
“হায় হায়! তাইলে চুপ চুপ করে আমার ট্রাকে আইসা বসছে। ধরেন ওরে।”
রূপাঞ্জনা ধড়ফড়িয়ে উঠে দাঁড়াল। শরীরে অবিশিষ্ট শক্তি দিয়ে লোকগুলোর সঙ্গে যু’দ্ধ করার মতো অবস্থা তার নেই। ড্রাইভার আসার আগেই কৌশলে একজনের পায়ে ল্যাং মে’রে ফেলে দিয়ে ট্রাক থেকে লাফ দিয়ে নিচে নামে সে। সর্বশক্তি দিয়ে ছুট লাগায়। কিছুদূর এসে এক গলিতে ঢুকে পড়ে রূপা। এত ছোটাছুটি করা সম্ভব নয় এই বলহীন শরীর নিয়ে। বুকে হাত দিয়ে জোরে জোরে শ্বাস ফেলতে থাকে সে। মনে জমে থাকা সেই কালো মেঘগুলো উড়িয়ে দিতে চায় ঘুড়ির ন্যায়। ইচ্ছে করে কাঁদতে। তবে রূপা এত সহজে কাঁদতে শিখেনি। এ যেন পাথর! যেখান থেকে পানি গড়ায় না। গলিতে বিদঘুটে গন্ধেও বেশিক্ষণ থাকা গেল না। বেরিয়ে এলো সে। এলোমেলো পায়ে আশেপাশে হাঁটতে থাকল আর ঘোলা চোখে আশপাশ দেখতে থাকল। মেইন রাস্তা ছেড়ে অন্য এক রাস্তায় এসে পড়েছে সে। আশেপাশে বড়ো বড়ো বাড়িই বেশি দেখা যায়। সম্ভ্রান্ত এলাকা! হাঁটতে গিয়েও এবার জোর না পেয়ে পড়ে যায় মাঝরাস্তায়। পায়ে ভীষণ যন্ত্র’ণা হয়। ঠোঁট কামড়ে পায়ে হাত বুলাতে থাকে।
আজকাল রাতটা অন্যসব রাতগুলোর মতো আরামদায়ক হয় না অভিরূপের কাছে। আগের রাত্রীগুলোতে শুধু ছিল ঘুম। এখন তন্দ্রা নামক জিনিসটা রাতে তার কাছে আসে না। চোখের পাতা এক হয় না। বুকের ভেতরে এক দাবা’নলের জ্বা’লায় ছটফট করে। রজনি কাটে হাতে গিটার নিয়ে অগোছালো সুর তুলে অথবা ছাঁদে পায়চারি করে। আজও সে ছাঁদের রেলিংয়ে বসে আছে। তন্দ্রাচ্ছন্ন শহরটাকে বেশ সুন্দর করে দেখছে। দুচোখটা জ্বলছে তার। হাতে থাকা কালো রঙের দামী গিটারে অবিন্যস্ত সুর তোলার চেষ্টায় সে। গুনগুন করে গান মুখে এলো,
“আমি ভাবতে পারি নি,
তুমি বুকের ভেতর ফাটছো আমার
শরীর জুড়ে তোমার প্রেমের বীজ।
আমি থামতে পারিনি…”
গান থামল। অভিরূপের গিটারের সুর তোলা বন্ধ হলো। চোখজোড়ায় নিবদ্ধ হলো অযাচিত কিছু। রাস্তায় ওপাশে বসে থাকা এক মানবীকে তার নজরে আটকালো। পথে এভাবে কেউ বসে থাকে? মেয়েটি কি বিপদে রয়েছে? অভিরূপের মনটা নাড়া দিলো ভীষণভাবে। গিয়ে জানতে ইচ্ছে করল প্রবলভাবে। এত রাতে রাস্তায় কোনো একা মেয়ে তো থাকার কথা নয়। নিশ্চয় কোনো বিপদ ঘটেছে!
রাস্তায় নেমে ধীর পায়ে এগোয় অভিরূপ। খুব বেশি দূরে নেই মেয়েটি। সামনেই পড়ে আছে মাথা নিচু করে। চুলের উচ্চতা ছোটো। কাঁধ থেকে একটু নিচে। তাও এলোমেলো ভাবে চেহারায় ছড়িয়ে গিয়েছে। ভীষণ হাঁপাচ্ছে মেয়েটি। অভিরূপ কিছুটা লুকিয়েই এসেছে বলা যায়! গেটে থাকা গার্ডকে একটু ভুলিয়ে ভালিয়ে বেরিয়েছে বাড়ি থেকে। হয়ত এবার অভিরূপের পায়ের শব্দেই মুখ তুলে তাকায় মেয়েটি। অভিরূপ আঁতকে ওঠে। চলা থেমে যায়। বরং পিছিয়ে যায় কয়েকটি ধাপ। হৃৎস্পন্দনের বেগ দ্রুত হতে শুরু করে। র’ক্তপ্রবাহ যেন ছটফটিয়ে ওঠে। সেই চাহনির সাক্ষাৎ তবে এত প্রতীক্ষার পর হলো! নিজের গুছিয়ে রাখা সমস্ত প্রশ্ন মাথাচাড়া দিয়ে উঠল অভিরূপের। সব প্রশ্ন এই বহুরূপী মেয়েটার দিকে ছুঁড়ে দেবে বলে ঠিক করেছিল। কিন্তু এখন যে আর কথায় আসছে না। কণ্ঠস্বর যেন হারিয়েছে সে। চোখে আটকে গিয়েছে শুধুমাত্র মেয়েটির অসহায় এবং বিধ্বস্ত রূপ। আ’হত এই নারীকে দেখে আবারও মনটা উতলা হতে থাকল। মেয়েটা তার দিকে কাঁপা হাতটা বাড়িয়ে অনুরোধের সুরে বলল,
“সাহায্য করুন দয়া করে।”
অভিরূপের মনে সকল রাগ, জেদ, অভিমান একজোট হলো। আন্দো’লন করল প্রবলভাবে। তাদের একটাই দাবি এই বহুরূপীকে কোনোমতেই সাহায্য না করা। যে ভেতরটাকে ছিঁড়ে বিকৃত করে দিয়েছে তালে সাহায্য করার প্রশ্নই আসে না। বহু ক’ষ্টে পিছু ফিরে বাড়ির দিকে হাঁটা দিলো অভিরূপ। রূপাঞ্জনা নিভু নিভু চোখে চেয়ে রইল। ঘোলা চোখে দেখার সৌভাগ্য হয়নি মানুষটি কে! শুধুমাত্র সাহায্য চাইতে হাত বাড়িয়েছিল। পরক্ষণেই স্মরণ হলো সকলে তো অভিরূপ চৌধুরী নয়! যে মাঝরাতে অচেনা মেয়েকে বাঁচাতে বনে, জঙ্গলে, রাস্তা সবখানে ছুটে আসবে। মাথা নুইয়ে কাতরাতে থাকল সে। গা জ্বরে পুড়ে যাচ্ছে। কিছু মূহুর্ত অতিবাহিত হলো। আকস্মিক ঘটনা ঘটল তার সাথে। শূন্যে ভাসতে লাগল সে। শরীরের সঙ্গে পেল আরেকটা উষ্ণ স্পর্শ। অস্পষ্ট চোখে একটা মানুষকে বেশ নিকটে দেখতে পেল। কিছু বলার আগেই নিজের বাকি জ্ঞানটাও নিষ্পন্ন হয়ে এলো।
আজকে একটু বেশ আয়েশ করে ঘুমোচ্ছে কোহিনূর। কাজ থাকলেও আজ সকাল সকাল অফিসে দৌড়াতে হবে না তাকে। তাই উপুড় হয়ে গায়ে চাদর টেনে তন্দ্রাচ্ছন্ন সে। কিন্তু এই আরামটা বেশিক্ষণ টিকল না। কোহিনূরের ঘুমটা বেশ হালকা। ফলে জানালার থাই খুলে দেওয়ার শব্দ পেতেই নড়েচড়ে উঠল সে। ঘরে দিনের আলো প্রবেশ করা মাত্র চোখটা খিঁচে নিলো। অন্যদিক ফিরতেই তার হাতে হাত রাখতেই হকচকিয়ে ঘুম থেকে তাকাল সে। নয়নতাঁরার হাসিমাখা মুখশ্রী চোখে ভাসতেই কপালে পড়ল কয়েকটা প্রগাঢ় ভাঁজ। বড়ো একটা হাই তুলে কোহিনূর বলল,
“সারা বাড়িতে লাফিয়ে তোমার হয় না? আমার ঘরে কী কাজ তোমার?”
“তোমার সাথে আমার ইম্পর্ট্যান্ট কথা আছে বিগ ব্রাদার! ওঠো না!”
কোহিনূর ভালো করে তাকিয়ে খেয়াল করে নয়নতাঁরা কোথাও যাওয়ার জন্য রেডি হয়ে তার ঘরে এসেছে। ভ্রু কুঁচকায় সে তা দেখে। আর বলে,
“সকাল সকাল কোথায় যাওয়া হচ্ছে?”
“তোমার সঙ্গে আগে কথা বলব। তারপর যাব। উঠে বসো।”
কোহিনূর আলসেমি ধরে বিছানার চাদর মুখের উপর টেনে ধরে এক রাশ বি’রক্তি নিয় বলল,
“ডোন্ট ডিস্টার্ব, নয়ন! দুদিন ধরে দৌড়াদৌড়ি করতে হয়েছে। এতটা রাস্তা জার্নি। আর ভালো লাগছে না।”
নয়নতাঁরা এবার নাক ফুলিয়ে কোমড়ে হাত রাখে। গড়গড়িয়ে বলে,
“এখনি যদি রাগিনী ভাবিজান এসে আদুরে গলায় ডেকে বলে, ‘ওগো শুনছ? তোমার সাথে প্রয়োজনীয় কথা আছে।’ তখনি তো ঘুমটা দৌড়ে পালাবে। নিজের বোনের বেলায় যত আলসেমি ধরে তোমায়?”
নয়নের কথা যেন কোহিনূরের কান অবধি পৌঁছায় না। সে একভাবে শুয়ে আছে। নয়নতাঁরাও হার মানার পাত্রী নয়। সে জোর করেই হাত ধরে টেনে তার ভাইকে উঠে বসাতেই কোহিনূর বাজখাঁই গলায় বলল,
“কী এমন কথা শুনি?”
নয়ন এবার তার ভাইয়ের পাশে সুন্দর করে বসল। বেশ কৌতূহলী হয়ে শুধাল,
“সবার জীবনে তো একটা করে বেস্টফ্রেন্ড থাকে। তোমার বেস্টফ্রেন্ড ছিল কি কখনো? স্কুল লাইফে?”
অসময়ে বোনের এমন প্রশ্নে কোহিনূর কিছুক্ষণ স্তব্ধ, বিমূঢ় হয়ে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল ফ্লোরে। না চাইতেও ভেসে উঠল অতীত। কিছু দুষ্টু মিষ্টি স্মৃতি। রায়ান এবং সে! ঝগড়া, মা’রামা’রি পরক্ষণেই কাঁধে কাঁধ ধরে ঘোরা। তাকে এমন ভবঘুরে হতে দেখে নয়ন তার হাত ধরে হালকা ঝাঁকাল। বলল,
“আরে কোথায় হারাও? উত্তর দাও।”
“এমন প্রশ্ন কেন হঠাৎ? আমার কোনো বেস্টফ্রেন্ড ছিল না।”
“মিথ্যুক! বন্ধু ছাড়া কেউ চলতে পারে?”
“আমি পারি।”
কোহিনূরের এমন অগোছালো উত্তরে সন্তুষ্ট হলো না নয়নতাঁরা। কথা জানার স্বার্থে মুখ ফসকে বলে ফেলল,
“তাহলে তোমার আর ইন্সপেক্টর রায়ানের কাঁধে কাঁধ ধরা ছবি দেখলাম কেন ইন্সপেক্টরের ফোনে কাল সন্ধ্যায়?”
নিজেই হুড়মুড়িয়ে কথাটা বলে ফেলে নিজেই থতমত খেয়ে যায় নয়ন। ভাইয়ের তীক্ষ্ণ নজর এখন তার দিকে। ঢক গিলে অন্য প্রসঙ্গ তোলারও কোনো বিষয়বস্তু খুঁজে পাচ্ছে না। কোহিনূর থমথমে সুরে জিজ্ঞেস করল,
“তুমি তো আমায় বললে কাল তুমি শপিং করতে গিয়েছিলে। তাহলে ইন্সপেক্টর রায়ান এখানে কোথা থেকে এলো?”
নয়নতাঁরা এতক্ষণ ভাবছিল উত্তর। মাথায় সুন্দর করে উত্তর সাজিয়ে নিতেই ফট করে বলল,
“উনি কি এলিয়েন নাকি? শপিংমলে সব মানুষই তো যায়। বিগ ব্রাদার! তুমি সন্দেহ করবে ক্রি’মিনা’লদের, চো’র, ডা’কাতদের। ঘরের লোকদের কেউ এভাবে সন্দেহ করে?”
কোহিনূর আর কিছু বলল না। তবে নয়নের পুরো কথাটা বিশ্বাসও হলো না। তবে ব্যগ্র মনটা ভীষণ জানতে চাইল তার আর রায়ানের পুরোনো ছবি রায়ান এখনো রেখেছে কেন? রাখা কি উচিত? না পেরে নিজের মনটাকে শান্ত করতে বলল,
“আমার আর তার ছবি দেখেছ তুমি তার ফোনে?”
“হ্যাঁ। তাও লক স্ক্রিনে। যেন মনে হচ্ছিল দুজন ভাই ভাই।”
বেশ আবেগ মিশিয়ে কথাটা কোহিনূরের প্রতিক্রিয়া বেশ মনোযোগের সহিত দেখে নিলো নয়নতাঁরা। এরপর তার হাত জোরে চেপে ধরে বলল,
“তোমরা অনেক ছোটোবেলা থেকে একে অপরকে চিনতে তাই না?”
“হুমম চিনতাম। বেস্টফ্রেন্ডও ছিলাম। এক স্কুলে পড়েছি, একসাথে চলেছি, একই সাথে খেয়েছি। তো কী হয়েছে?”
কোহিনূরের নির্লিপ্ত স্বীকারোক্তিতে ফ্যালফ্যাল করে চেয়ে থাকে নয়নতাঁরা। কিছুক্ষণ নীরব থেকে উৎসুক হয়ে প্রশ্ন করল,
“তাহলে কী এমন হলো যে এত সুন্দর বন্ধুত্ব এমন বা’জে রূপ নিলো?”
“ওর বাবা। রায়ান ওর বাবাকে বেশ ভালোবাসত। কিন্তু তিনি একটা ইলি’গ্যা’ল কাজের সঙ্গে যুক্ত হন। আমাদের বাবা সেটা ধরতে পেরে ধরিয়ে দেয়। ওর বাবাকে পুলিশ থেকে সাসপেন্ড করে। রায়ান তখন ছোটো। বাবা ভক্ত ছিল। বিশ্বাস করেনি নিজের বাবার কর্মের কথা। সেখান থেকে আমাদের মাঝে ঝগড়া হয়। ফ্যামিলি থেকে দূরত্ব সৃষ্টি হয়। তুমি তখন খুব ছোটো। ভালো করে কথাও বলতে জানতে না। সেখান থেকেই সম্পর্ক ভিন্ন আর বিচিত্র রূপ ধারণ করেছে।”
কোহিনূর একটা বড়ো শ্বাস নিলো। চোখ বন্ধ করল। বুকের ভারটা কম লাগছে এবার। নয়নতাঁরা কী বলবে সেটা ভেবে উঠতে পারল না। তার কণ্ঠস্বর কাঁপছে এবার। তবুও বলে উঠল,
“হতে পারে এখন উনি উপলব্ধি করেছেন উনার বাবা আসলেই ভুল ছিলেন। তোমরা তো আগের কথা মিটিয়ে নিতে পারো।”
কোহিনূর ক্ষুদ্ধ হলো এবার। পা থেকে চাদর সরিয়ে উঠে দাঁড়াল সে। চাদর গুছিয়ে নিতে নিতে বলল,
“যদি সে রিয়েলাইজ করত তাহলে সে-ই আমার কাছে আসত। সে আসেনি। আমি কেন আগে তার সাথে এসব নিয়ে কথা বলতে যাব?”
নয়নতাঁরা দ্বিধান্বিত চোখে তাকিয়ে থাকে তার গম্ভীর ভাইয়ের দিকে। বিরাট ইগোর বস্তা নিয়ে বসে আছে তার বিগ ব্রাদার। আর রায়ানকে যতদূর নয়ন চিনেছে সেই লোকটাও ইগোর প্রতিযোগিতায় কম যায় না। তবে রায়ান আজ নয়নকে অবাক করে দিয়ে সকালেই কল করেছিল। বলেছে, কাল তার জন্মদিন। যেন সন্ধ্যাবেলা নয়ন উপস্থিত থাকে আর এটাও কোহিনূরকে নিয়ে যেতে পারলে আরো ভালো হয় সেটাও ঘুরিয়ে পেঁচিয়ে বলেছে।
নয়নতাঁরা আর কথা বাড়ায় না কোহিনূরের সাথে। উঠে উচ্ছ্বাসের সাথে বাহিরের পা বাড়াতেই কোহিনূর পেছন থেকে বলে,
“ভালো কথা! কোথায় যাচ্ছো এখন?”
“ভাবিজানের বাড়ি!”
কোহিনূর ভালো করে না বুঝে ও শুনেই ব্যস্ত গলায় বলে দিলো,
“তাড়াতাড়ি ফিরে এসো।”
চাদর ঠিক করে রেখে ওয়াশরুমে অগ্রসর হতে থাকা কোহিনূরের হঠাৎ করেই নয়নতাঁরার বলা ‘ভাবিজানের বাড়ি’ কথাটি স্মরণে ভালো করে এলো। বুঝতে সময় লাগল। ততক্ষণে দেরি হয়েছে। নয়নতাঁরা বেরিয়ে গিয়েছে। কী বলে গেল মেয়েটা? ভেবেই মাথা ঘুরে উঠল কোহিনূরের। সে কি রাগিনীর বাড়িতে গেল? সর্বনাশ! কোহিনূর দ্রুত পায়ে জানালার কাছে গেল। দেখা গেল নয়ন গাড়ি গিয়ে ইতিমধ্যে বেরিয়ে পড়েছে। তার কান্ড দেখে ক্লান্তিতে শ্বাস নিলো কোহিনূর। এই মেয়েটা তাকে কখনই শান্তি দেবে না। দেবে না মানে একদমই দেবে না। তাড়াহুড়ো করে বিছানার কাছে এসে বালিশের নিচে হাত দিয়ে ফোন হাতিয়ে হাতে নিলো কোহিনূর। রাগিনীর নম্বর ডায়াল করে কল লাগাল। বেশ কিছুক্ষণ রিং হওয়ার পর আপনাআপনি কেটে গেল কল। আবারও একই কাজ করল সে। কিন্তু ফলাফল শূন্য। রাগিনী মেয়েটাও যে কী করে! না জানি আজ তার বোন কী অঘটন ঘটিয়ে ফিরবে! বিপদ, মহা বিপদ!
চলবে…
[বি.দ্র.কালকেই গল্প দেওয়ার কথা ছিল। তবে কাল ব্যক্তিগত কারণে বাহিরে দৌড়াদৌড়ি করতে হয়েছে। ক্লান্ত ছিলাম। লিখার মন ছিল না। তার জন্য দুঃখিত। ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। গল্পটি সম্পূর্ণ কাল্পনিক।]