গোধূলি বেলায় তুমি পর্ব -০৪

#গল্প_গোধূলি_বেলায়_তুমি
#Writer_Ritu_Bonna
#পর্ব_৪

দরজা খোলার আওয়াজে আমার ঘুম ভাঙলো। রাতে ফ্লোরে ওইভাবে শুয়ে ছিলাম কখন যে ঘুমিয়ে পড়েছি তার খেয়াল নেই। চোখ খোলার চেষ্টা করছি কিন্তু পারছি না। না খেয়ে আর কান্না করে মাথাটা অনেকটা ভারী ভারী লাগছে। তখন বুঝিনি এখন ভালো করেই বুঝতে পারছি পাও ব্যাথ্যায় ফোলে গেছে। উঠার বিন্দু পরিমাণ শক্তি পাচ্ছি না। তবুও অনেক কষ্ট করে উঠে বসলাম।

রুমে ঢুকেই আদ্রিজাকে এলোমেলো ভাবে ফ্লোরে শুয়ে থাকতে দেখে নিজের ভিতরে খারাপ লাগা কাজ করছে। আমি এক ধ্যানে তার দিকে তাকিয়ে আছি। কান্না করার ফলে চোখের কাজল পুরো লেপ্টে গেছে, মুখের মেকাপ নষ্ট হয়ে গেছে। চোখ পুরো লাল হয়ে আছে। এখন আমার নিজেকে অনেক অপরাধী বলে মনে হচ্ছে।

আভিয়ানকে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে আদ্রিজা কিছুটা অপ্রস্তুত হয়ে যায়। বসা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে অন্য দিকে মুখ ঘুরিয়ে নেয়।

,,,তোমার ক্ষিদে লেগেছে?? কিছু খাবে??

আমি কিছু না বলে চুপ করে রইলাম। আসলে এই মানুষটার সাথে কথা বলার আমার কোন ইচ্ছে নেই।

কি হলো?? কিছু বলছো না কেন???

আমি আগের মতোই কিছু না বলে চুপ করে রইলাম।
আমার আচরণে আভিয়ান হয়তো বিরক্ত হচ্ছে। বিরক্ত হলে হইক ততে আমার কি??

আভিয়ান বিরক্ত হয়ে বলে,,, আচ্ছা তুমি যখন চুপ করে থাকবে তবে তাই থাকো। এখন তোমার কথা না বললেও চলবে। আগে তো সেই কাজ করি যার জন্য তোমাকে এখানে নিয়ে এসেছি,,,,,,

আভিয়ানের কথা শুনে আমি কিছুই বুঝতে পারলাম না। আমি অবাক হয়ে তার দিকে তাকিয়ে বুঝার চেষ্টা করছি সে কি করতে চাইছে?? এই মুহূর্তে সে কি করতে পারে?? যাই -ই করুক আমি ভেঙে পরবো না। এর শেষটা আমি দেখে ছাড়বো।

আমাকে এভাবে তাকাতে দেখে আভিয়ান বাঁকা হেসে বলে, জানি আমি অনেক হ্যান্ডসাম তাই বলে এভাবে আমার দিকে এভাবে তাকিয়ে থাকবে, আমার বুঝি লজ্জা করে না।

আদ্রিজা রেগে বলে,,, একদম বাজে বকবেন না। আপনি যদি পৃথিবীর শেষ ছেলেও হন তবুও আমি আপনার দিকে তাকাবো না।

আমি বাজে কথা বলছি না।এতক্ষন তো আমার দিকে তাকিয়েই ছিলে। আচ্ছা তুমি আমাকে দেখো কোন সমস্যা নেই। এখন থেকে সারাজীবন তুমি শুধু আমাকেই দেখবে। আজকেই আমি তোমাকে বিয়ে করে একদম নিজের করে নিবো।তখন যত ইচ্ছে দেখো,,,,,

আভিয়ানের কথা শুনে আমি এক মুহূর্তের জন্য নিজের মধ্যে থেকে হারিয়ে যাই। আমি সব কিছু ভুলে যাই। তিন বছর আগে আমি কতোই বেকুল ছিলাম আভিয়ানকে বিয়ে করার জন্য।আজ তা ভাবতেই নিজের উপর ঘৃণা হচ্ছে। আজ যখন আমি এই কথাটা শুনছি তখন আমার কি রিয়েক্ট করার দরকার তাই বুঝতে পারছি না। সময়ের স্রোতে আজকে আমি এমন এক পরিস্থিতির মধ্যে পড়েছি যে সেখান থেকে বের হওয়ার কোন পথই আমি খুঁজে পাচ্ছি না। আমার জীবনটা আবারও তিন বছর আগেই সেই জায়গায় এসে দাঁড়িয়েছে। আমি ধীরে ধীরে আবারও সেই অন্ধকারে হারিয়ে যাচ্ছি, যেখান থেকে হয়তো আমি আর ফিরে আসতে পারবো না।

কি হলো এখনো চুপ করে আছো। দ্রুত ফ্রেস হয়ে এসো বাহিরে সবাই অপেক্ষা করছে।

আভিয়ানের কথা শুনে ভাবনা থেকে বেরিয়ে আসলাম। রাগে আমার সারাজীবন কাঁপছে। আমি রুক্ষ স্বরে বলি, আমি কখনোই আপনাকে বিয়ে করবো না। আমি সাফিনকে ভালোবাসি আর তাকেই বিয়ে করবো। আপনি কি করে ভাবলেন আমি আপনাকে বিয়ে করবো?? আমি যদি মরেও যাই তবুও আপনাকে বিয়ে করবো না।

আদ্রিজার মুখে মরার কথা শুনে আভিয়ানের রাগ উঠে গেলো তবুও যথাসম্ভব নিজেকে শান্ত রেখে বলে,, তুমি এখন এই মুহূর্তে আমাকে বিয়ে করবে। আমি তোমার অনুমতি নিতে আসি নি। আমি যখন বলছি তখন তোমাকে এই আমাকেই বিয়ে করতে হবে। এছাড়া তোমার হাতে অন্য কোন অপশন যে নেই। যদি ভালো ভাবে বিয়েটে রাজি হয়ে যাও তাতেই ভালো, নয়তো আমার খারাপ রুপটা দেখাতে হবে।

আপনার সব রুপ আমার দেখা আছে। আপনি ঠিক কতটা খারাপ তা আমার থেকে বেশি ভালো করে কেউ জানে না। আমি ভয় পাই না আপনাকে। আপনি যাই করেন না কেন আমি কখনোই আপনাকে বিয়ে করবো না। আমি শুধু ঘৃণা করি আপনাকে।

তুমি যাই বলো না কেন, এখন এই মুহূর্তে আমি তোমাকে বিয়ে করবো। তা যে কোন মূল্যেই হউক। আমি তোমাকে ভালো করে বলেছি কিন্তু তাতে কোন কাজ হয়নি এখন যা হবে তার জন্য শুধু তুমি নিজেই দায়ি থাকবে।

আদ্রিজা অবাক হয়ে বলে,,, মানে???

আভিয়ান কিছু না বলে ধীরে ধীরে আদ্রিজার একদম কাছে চলে আসে। আদ্রিজা পিছনে যেতে যেতে একদম দেয়ালের সাথে মিশে যায়। সে অন্য দিকে যেতে চাইলে আভিয়ান দুই হাত দিয়ে তাকে বন্দী করে নেয়। সে আরোও আদ্রিজার দিকে ঝুকে পরে। আদ্রিজা ভয়ে ভয়ে বলে,,, কি করতে চাইছেন আপনি?? একদম আমার কাছে আসবেন না তবে এর পরিণতি কিন্তু অনেক খারাপ হবে। আভিয়ান কিছু না বলে আদ্রিজার ছোট চুল গুলো তার কানের পিছে গুজে দিয়ে তার থেকে দূরে সরে আসে।

আমি তোমার কোন ক্ষতি করবো না। কিন্তু এখন যদি তুমি আমার কথা না শুনো, আমাকে বিয়ে করতে না চাও তবে তোমার ভাইয়ের সাথে যা হবে তার জন্য তুমি নিজেই দায়ি থাকবে।

ছিঃ আপনি এতটা নিচে নেমে গেছেন। এতটা নিকৃষ্ট আপনি!! নিজের স্বার্থের জন্য এখন আমাকে ব্ল্যাকমেইল করছেন কিন্তু তাতে কোন লাভ নেই। আমি জানি আপনি তাদের কোন ক্ষতি করতে পারবেন না।

আদ্রিজার কথা শুনে আভিয়ান বাঁকা হাসলো। তুমি যদি মনে করো আমি শুধু তোমাকে ভয় দেখানোর জন্য বলছি তবে তুমি ভুল ভাবছো। তুমি নিজের চোখের সামনে যখন নিজের ভাইয়ের লাশ দেখবে তখন বিশ্বাস করবে।

ওকে ওয়েট, তুমি যখন তাই চাচ্ছো তবে তাই হবে। এই বলে আভিয়ান কাউকে ফোন করে। লোকটি ফোন রিসিভ করলে আভিয়ান তা স্পীকারে রেখে লোকটিকে বলে,, আয়ানের কানে ফোন দিতে।

লোকটি আয়ানের কানে ফোন দিলে আরেকজন লোক তার গায়ে আঘাত করতে থাকে। আয়ান ব্যাথ্যায় চিৎকার করে উঠে। আয়ানের কন্ঠ শুনেই সে তাকে চিনতে পারে। আয়ানকে ব্যাথ্যায় চিৎকার করতে শুনে সে কান্নায় ভেঙে পরে।

আয়ানের কান্নার আওয়াজে আদ্রিজা পুরো ভেঙে পরে। সে আর অন্য কিছু ভাবতে পারছে না। এখন সে যদি সব সত্যি সত্যি আয়ানের কোন ক্ষতি করে ফেলে তবে সে নিজেকে কখনো ক্ষমা করতে পারবে না। সে আভিয়ানের পায়ে ধরে বলে,, প্লিজ আমার ভাইয়ের কোন ক্ষতি করবেন না। আপনি তাকে ছেড়ে দেন।আপনি যা বলবেন আমি তাই করবো। আমি রাজি এই বিয়েটে৷

আভিয়ান শান্ত স্বরে বলে,, তোমরা ভাই বোন দুইজনেই এক।দুইজন দুইজনকে অনেক ভালোবাসো। ভাই তো তোমার কথা শুনে কোন কিছু না ভেবেই আমার ফাঁদে পা দিয়েছে। সকালে তোমাকে খোঁজছিল,তখন আমার এক বলেছে সে তোমাকে দেখেছে এবং জানে তুমি কোথায় আছো।সে তাকে সেখানে নিয়ে যেতে পারবে। তোমার ভাই কিছু না ভেবে তার সাথে চলে আসে।আমি ভাবিনি এত সহজে সে আমার ফাঁদে পা দিবে।

ছিঃ আপনার লজ্জা করছে না, এত ঘৃণিত করার পরে আবার তা নিজের মুখে স্বীকার করতে। আপনি মানুষ না জানোয়ার,,,,,

আভিয়ান ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বলে,, আমি জানোয়ার হলে তোমাকে এই জানোয়ারকেই বিয়ে করতে হবে। এছাড়া যে তোমার কাছে অন্য কোন পথ নেই। এখন কথা না বাড়িয়ে যাও রেডি হয়ে এসো।

.
.
.
চলবে,,,,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here