#গোধূলি_বেলায়
#সমাপ্তি_পর্ব
– তুমি এখানে কি কর?
মনোয়ারা বেগম প্রশ্ন ছুরে দিলেন আনন্দির দিকে। আনন্দি মনোয়ারা বেগমের কাট কাট প্রশ্ন শুনে যেন ভয়ে আরও একটু কেপে উঠল। আমতা আমতা করে বলল, না মানে মা আনুসমির জন্য,,,
কে তোমার মা? -আনন্দিকে আর কথা বলতে না দিয়ে মনোয়ারা বেগম গর্জে উঠলেন। আনন্দির প্রচন্ড মন খারাপ হচ্ছে এবার। আনন্দি সবসময় মনে হতো পুরো পৃথিবী ওর বিপক্ষে চলে গেলেও এই মানুষটা কখনও ওর হাতটা ছাড়বে না। কিন্তু আজকের এই মনোয়ারা বেগমের সাথে আগের মনোয়ারা বেগমের কোন মিল নেই।
এই মনোয়ারা বেগমের মনে আনন্দির জন্য মায়া মমতার বদলে আছে একরাস রাগ আর ঘৃণার বসবাস। কিন্তু এই মনোয়ারা বেগমকে আনন্দির একদম ভালো লাগছে না। কেমন যেন মা মা গন্ধটা পাচ্ছে না এই মনোয়ারা বেগমের শরীর থেকে। হয়তো রাগ আর ঘৃণার আড়ালে মা টা চাপা পড়ে গেছে। আচ্ছা রাগ আর ঘৃণার ঘণ মেঘ সরে গেলে কি আবার মা মা গন্ধটা পাওয়া যাবে -মনে মনে ভাবে আনন্দি।
তুমি দেশে এসেছ কেন? আবারও গর্জে উঠল মনোয়ারা বেগম। এবার আনন্দি নিজেকে সামলে নিল। নিজেও সমান তেজ নিয়ে বলে উঠল, আমার মেয়ের সাথে দেখা করার জন্য। বলেই থেমে গেল আনন্দি। যতোটা তেজ নিয়ে বলতে শুরু করেছিল ততোটা তেজ নিয়ে আর শেষ করতে পারল না। কথা বলার মাঝে আবারও মিইয়ে গেল আনন্দি।
মনোয়ারা বেগম যেন একটু নিভল। তারপর আনন্দির দিকে তাকিয়ে বললেন, তোর মেয়ে মেয়ে আর আমার মেয়ে আমার কেউ না ! তুই মা তোর মমতা অনেক তোর নিজের মেয়ের সাথে দেখা করতে ইচ্ছা করে আর আমি! আমার বুঝি নিজের মেয়ের সাথে দেখা করতে ইচ্ছা করে না, আমার মমতা বুঝি তোর থেকে কম? কেন রে আমি নিজের মা ছিলাম না তাই?
আনন্দি হঠাৎ করে ফুফিয়ে কেঁদে উঠল। মনোয়ারা বেগম এগিয়ে গিয়ে আনন্দিকে জড়িয়ে ধরলেন। তারপর নিজেও কেঁদে উঠলেন। আনন্দি এখন আবার মনোয়ারা বেগমের গা থেকে সেই মা মা গন্ধটা পাচ্ছে।
আচ্ছা এই গন্ধটা কি সময়ের সাথে পরির্বতিত হয় নাকি মানুষের মনের সাথে। জানে না আনন্দি তবে আবারও সেই পুরোনো গন্ধটা পেয়ে ওর মনটা খুশিতে ভরে গেল। যেন কতদিন পর পুরোনো রুক্ষ শুস্ক জমিতে একফালি বৃষ্টির আগমন।
– এই আমি তোকে ভালবাসলাম। এই তোকে এতো আদর যত্ন দিয়ে বড় করলাম। কোন দিন ছেলের বউয়ের চোখে দেখি নি সবসময় নিজের মেয়ে মনে করতাম। আর তুই! এতোগুলো দিন একবারও আমার কথা মনে পড়ে নি আমার সাথে দেখা করতে মনে হয় নি। কই আমি তো থাকতে পারি নি সবসময় ছটপট করেছি তোর সাথে একটু কথা বলার জন্য কিন্তু তুই সেটার কোন সুযোগ রাখিস নি। কিভাবে পারলি রে তুই? আমি মনে হয় নিজের মা ছিলাম না দেখে কষ্ট হয় নি তোর তাই না।
– না মা অনেক কষ্ট হয়েছে। তুমিই আমার নিজের মা, আমি মা বলতে শুধু তোমাকেই বুঝি মা। আমি মায়ের সব আদর ভালবাসা তোমার থেকেই পেয়েছি। নিজের মায়ের কথা আমার খুব একটা মনে পড়ে না। অনেক ছোটতে মাকে হাড়িয়েছি তারপর মায়ের আদর ভালবাসা বলতে শুধু মার আর গালিকে জানতাম। কিন্তু তোমার মধ্যে আমি অন্য এক মাকে দেখেছি, তোমাকে দেখে আমার মায়ের সেই গন্ধটা পায় মা। আমার জন্মদাত্রী মায়ের পর তুমিই আমার একমাত্র মা।
কিছুক্ষণ সবার দিকে ফ্যালফ্যান করে তাকিয়ে দেখল। একটু থেমে আবার বলল, আমার প্রত্যেকদিন বার বার তোমাদের কথা মনে পড়েছে। কিন্তু আমি যে বাধা পড়ে ছিলাম তাই আসতে পারি নি।
কাঁদতে কাঁদতে কথাগুলো বলল আনন্দি।
– কিসের বাধা ছিল তোর? সমাপ্তর সাথে তোর যাই হয়ে থাকুক না কেন আমি তোর মা ছিলাম আছি আর তুই ও আমার মেয়ে ছিলি এবং সারাজীবন থাকবি। তোদের বিচ্ছেদ হয়ে গেছে বলে আমাদের সম্পর্কের কোন পরির্বতন হওয়ার তো কথা ছিল না। তবে কেন এতো দুরত্ব,,,
– সরি মা আমার ভুল হয়ে গেছে। আর কথা বলতে পারল না আনন্দি।
ততক্ষণে আরফা, সাহিল আর আনিসুর হকও এসে দাড়িয়েছে ওদের পাশে। হাসপাতালের সকল মানুষ ওদের দিকে তাকিয়ে আছে। এমনিতে হাসপাতালে এসব নিত্য নতুন ঘটনা। কেউ নিজের মানুষ হারিয়ে কেঁদে বুক ভাসায় আবার কেউ নতুন প্রাণের আগমনে খুশিতে আত্মহারা হয়। কিন্তু আজকের এই ঘটনাটা কেন যেন একটু নতুন লাগছে সবার কাছে। সবাই বেশ কৌতুহল নিয়ে তাকিয়ে আছে যেন কোন সার্কাস শো চলছে।
তাই মনোয়ারা বেগম আর ভীড় ভাট্টা না বাড়িয়ে আনন্দিকে নিয়ে বাইরে বেড়িয়ে আসল। শুধু সাহিল থেকে গেল সমাপ্তর সাথে। রাতে সাহিল সমাপ্তর সাথেই থাকবে তাই।
মনোয়ারা বেগম জোর করে আনন্দিকে নিজের বাসায় নিয়ে আসে। আনন্দি আসতে চায় নি কিন্তু নানা ব্লাকমেইল করে মনোয়ারা বেগম ওকে আনতে সক্ষম হন। আনুসমি তো বেজায় খুশি ওর মাকে পেয়ে। সারাটা সময় ও আনন্দির পাশে পাশে ঘুরে চলেছে।
আজ এতোগুলো দিন পর মায়ের আদর পাচ্ছে বাচ্চা মেয়েটা। ছোটবেলার কথা ওর মনে পড়ে না কিন্তু জ্ঞান হওয়ার পর থেকে মাকে শুধু ঘৃণায় করে গেছে। যাকে সর্থপর ভেবে এতোগুলো দিন কাটিয়ে দিল আজ তার মমতাময়ী রুপটা যেন আনুসমির চোখ থেকেই সরছে না। আনুসমি পারে না গত দশ বছরের ভালবাসা একদিনেই আদায় নেয়। তবে গত দশ বছর নিয়ে ওর জীবনে আর কোন অাক্ষেপ নেই। যা হওয়ার হয়েছে তবে এই সময়টা আর আনুসমি হারাতে চায় না। খুব শক্ত করে আকড়ে ধরতে চায় বাবা আর মা কে। তবে সেটা কি সম্ভব হবে, জানে না আনুসমি।
সাত দিন পর সমাপ্তকে হসপিটাল থেকে বাসায় আনা হয়। তবে বাসায় বেশ কয়েকদিন রেস্টে থাকতে হবে। আর প্রোপার কেয়ারের প্রয়োজন। হসপিটাল থেকে একজন নার্স দিতে চেয়েছিল সমাপ্তর সবসময়কার দেখাশোনার জন্য কিন্তু সমাপ্ত রাজী হয় নি নিতে।
আনন্দি এই কয়েকদিন সমাপ্তদের বাড়িতেই ছিল কিন্তু সমাপ্ত আসার পর ও আর এখানে থাকতে রাজি হয় না। মনের দিক দিয়ে হয়তো এখনও একটা দুরত্ব রয়ে গেছে। তাই আর সমাপ্তর মুখোমুখি হতে চায় না আনন্দি। আনন্দি যাওয়ার জন্য ব্যাগ গোছাচ্ছিল। কেউ পারে নি আনন্দিকে আটকাতে।
এমন সময় সমাপ্ত টলতে টলতে আনন্দির ঘরে আসল। আনুসমি বিছানার একপাশে চুপটি করে বসে আছে আর মায়ের চলে যাওয়া দেখছে। সমাপ্ত চোখের ইশারায় আনুসমিকে যেতে বলল। আনুসমিও বুঝে, বাবা মাকে আলাদা কথা বলার সুযোগ দিয়ে ঘর থেকে বেড়িয়ে যায়। আনন্দি এতোক্ষন বিষয়টা দেখলেও কোন কথা বলে নি। আনুসমি বেড়িয়ে যেতেই সমাপ্ত আনন্দির বেডে বেশ আয়েশ করে বসে হাসতে হাসতে বলল, এখনও ভালবাস আমাকে?
আনন্দি চমকে তাকালো। কিছুক্ষণ সমাপ্তর চোখের দিকে তাকিয়ে থেকে চোখ সরিয়ে নিয়ে বলল, তোমার এই ভুল ধারনা হল কিভাবে?
– ভুল ধারনা না সঠিক ধারনা।
– কে বলল তোমাকে?
– তুমি?
– আমি?
– হুম তুমি।
– আমি তোমাকে কখন বললাম?
– বলো নি?
– না, তবে এখন বলছি ভালবাসি না তোমায়। তোমার জন্য আমার মনে কোন ভালবাসা নেয়।
– আচ্ছা তবে চোখের দিকে তাকিয়ে কথা বলতে পারছ না কেন? শুনেছি মানুষ যখন মিথ্যা কথা বলে তখন চোখের দিকে তাকাতে পারে না কারন মুখ মিথ্যে বললেও চোখ কখনও মিথ্যে বলে না। তুমি আমার চোখের দিকে তাকিয়ে কথা বলছ না তবে কি আমি ধরে নেব তুমি মিথ্যে বলছ।
আনন্দি এবার সমাপ্তর চোখের দিকে তাকাল তারপর কড়া ভাবে বলল, ভালবাসি না তোমায়।
কিন্তু কথাগুলো বলার সময় আনন্দির চোখটা কেপে উঠল।
সমাপ্ত একটু মৃদু হাসল তারপর বলল, তাহলে চলে যাচ্ছ যে!
– মানে?
– মানে হচ্ছে এখন ভাল না বাসলেও আমার সাথে একই ছাদের নিচে থাকলে যে তুমি আবারও আমার প্রেমে পড়ে যাবে তা জানো তাই পালিয়ে যেতে চাইছ।
– তুমি নিজেকে কি মনে কর বলোতো। সব মেয়েরাই তোমার প্রেমে পড়বে। নিজেকে নিয়ে এতো অহংকার ভাল না। আমি কখনও তোমার প্রেমে পড়ব না।
– আমি সব মেয়ের কথা জানি না তবে একটা মেয়ে আছে যে বারবার আমার প্রেমে পড়ে কোন কারন ছাড়ায় । আর তাই মেয়েটা আমার থেকে পালাতে চাইছে যেন আবারও আমার প্রেমে না পড়ে যায় ।
– মোটেও মেয়েটা পালাতে চাইছে না। মেয়েটা তোমার সাথে একই ছাদের তলায় থাকলেও তোমার প্রেমে আর কখনও পড়বে না।
– আমার তো বিশ্বাস হয় না। হবে কি করে তোমার তো নিজের মনের উপর কনট্রোল নেই তাহলে আমি আর কি বলব।
– আমার মনে উপর যথেষ্ট কনট্রোল আছে।
– প্রামান কি?
– কি সের প্রমাণ?
– এই যে তুমি আর আমার প্রেমে পড়বে না।
– কি করতে হবে আমাকে যে তুমি বিশ্বাস করবে?
– তো থাক এখানে। আমার সাথে এক ছাদের তলায়। তারপরও যদি প্রেমে না পড় তাহলে বুঝব আমার আনন্দি বদলে গেছে। আর যদি তুমি ব্যাপ পোটরা গুটিয়ে রণক্ষেত্র থেকে পালিয়ে যাও তাহলে বুঝব তুমি পরাজিত।
সমাপ্ত কথায় রাগে উত্তেজিত হয়ে আনন্দি বলে ফেলল, আচ্ছা থাকব আমি এখানে আর প্রামান করে দিব আমি আর তোমার প্রেমে পড়ব না।
কথাগুলো বলার পরক্ষনেই আনন্দি বুঝল ও কি ভুল করেছে। সমাপ্ত ওর কথার জালে আবারও আনন্দিকে আটকে দিয়েছে হারিয়ে দিল। এমনটা সমাপ্ত সবসময় করে যখন ওকে যুক্তি দিয়ে হারাতে পারে না তখন কথার জালে ফেলে হারিয়ে দেয়।
কিন্তু মুখ থেকে বের হওয়া বুলি তো আর ফেরানো যায় না। অবশেষে হতাশ গলায় আনন্দি নিজের কাপড়গুলো আবার আলমারিতে তুলতে লাগল।
সমাপ্ত গলা ছেড়ে আনুসমিকে ডাকল। আনুসমি কাঠেপিঠেই ছিল। সমাপ্তর ডাক শুনে ও দৌড়ে আসল।
সমাপ্ত আনুসমিকে বলল, তোমার মায়ের কাপড়গুলো গুছিয়ে রাখতে হেল্প কর মামুনি আমি আসছি।বলেই বেড়িয়ে গেল ঘর থেকে।
আনুসমি যেন খুশিতে আত্মহারা। ও আনন্দিকে জড়িয়ে ধরে খুশিতে লাফাতে লাগল। আনন্দির মনে হল সব ভুল সিধান্তে সবসময় খারাপ হয় না। আজ এই ভুল সিধান্তটা না নিলে ওর মেয়ের মুখে এই হাসিটা দেখতে পেত না। আজ মনে হচ্ছে ভুল থেকে ভাল কিছু হলে ভুলেই ভরা থাক না জীবনটা।
বেশ কিছুদিন কেটে যায় আনন্দির ওই বাড়িতে। আনুসমি মনে মনে একটা প্লান করেছে। আর ওর প্লানে বাড়ির সবাইকে সামিলও করে ফেলেছে এই কয়েকদিনে । ওর প্লান হচ্ছে ওর বাবা মার আবারও বিয়ে দেওয়া। বাবা মার ডিভোর্সটা হওয়ার পর যে কেউ ভাল নেই তা আনুসমি ভাল করেই জানে। বাবা মা দুজনেকেই খুব কাছ থেকে দেখে এটা অনুধাবন করেছে ও। বাড়ির সবাই রাজি তবে আনন্দিকে কে রাজি করাবে তা নিয়ে সবাই বেশ চিন্তিত।
সমাপ্ত এটা শোনার পর একটু গাইগুই করে রাজি হয়ে যায়। প্রথমত ও ওর ভুল আগেই বুঝতে পেরেছিল তাই সবসময় চাইত আনন্দি ওর জীবনে ফিরে আসুক কিন্তু এতোগুলো দিন সেই সুযোগ টা হয়ে ওঠে নি। আর দ্বিতীয়ত আনুসমি এতে খুশি হবে, সমাপ্ত দেখেছে আনুসমি কি উৎসাহের সাথে নিজের বাবার মায়ের বিয়ে এরেন্জমেন্ট করছে তাই মেয়ের মুখের দিকে তাকিয়ে রাজি হয়ে যায়।
কিন্তু বিপত্তি বাধে আনন্দিকে নিয়ে। এখন আর আগের আনন্দি নেই। এই কথাগুলোর শোনার পর আনন্দি কেমন রিয়াক্ট করবে তা কেউ জানে না। তাই ভয় পাচ্ছে।
শেষে সমাপ্ত নিজেই দ্বায়িত্ব নেয় আনন্দিকে রাজি করানোর। সবাই যেন সস্তির নিশ্বাস ফেলে।
আনন্দি সবটা শোনার পর কিছু সময় চুপ করে থাকে। তারপর বলল, সবার সাথে তুমিও কেন এই পাগলামিতে যোগ দিয়েছ বলত। আনুসমি বাচ্চা মেয়ে তাই ও বাস্তবতাটা বুঝছে না।
আনন্দি কিছুটা সময় চুপ থেকে আবার বলল, কেন তুমি আমাকে বিয়ে করতে চাইছ। আমাকে বিয়ে করে তুমি কিছুই পাবে না। আমার হাতে আর আছেই বা কয়দিন? এই ধোয়াশাময় ক্ষণেকের জীবনে আমি আর কাউকে জড়িয়ে কষ্ট দিতে চাই না। বোঝার চেষ্টা কর।
– তোমার জীবনটা ধোয়াশাময় নয় আনন্দি। আমি আর আনুসমি মিলে সেটাকে ভোরের শুভ্র আলোয় পরিণত করব কথা দিলাম।
আর একটা কথা আমি তোমার রিপোটগুলো আনুসমির মাধ্যমে নিজের কাছে নিয়েছিলাম। আমার এক বন্ধু ডাক্তার, ওকে দেখিয়েছি। ও বড় বড় ডাক্তারদের সাথে কলসাল্ট করে জানিয়েছে তোমার টিউমারটা এমন পজিশনে আছে যেটা সত্যি অপারেট করা যাবে না তবে এর মানে এই নয় যে তোমার দিন শেষ। তোমার টিউমারটা এখনও খুব ছোট আর ঔষধের মাধ্যমে সেটার একটা শেষ চিকিৎসা করা যেতে পারে। একটা রিস্ক তো নেওয়ায় যায় বলো।
আমি ওকে এটা নিয়ে আরও বড় ডাক্তারদের সাথে কথা বলতে বলেছি। খুব তাততাড়ি তোমার আবার চিকিৎসা শুরু হবে। আর ইনশাল্লাহ্ তুমি আবার সুস্থ জীবন ফিরে পাবে।
– তুমি আমার জন্য এসব কেন করেছ?
– একটা সময় তোমার জীবনটাকে নিয়ে অনেক বেশী খেলেছিলাম। তোমার জীবনের সুখ গুলোকে কেড়ে নিয়ে নিজে সুখি হতে চেয়েছিলাম কিন্তু দিন শেষে আমিও সুখি হতে পারি নি। প্রকৃতি হয়তো অসমতা মেনে নেয় না, নিউটনের সুত্রের সেই প্রত্যেক ক্রিয়ার সেই সমান ও বীপরিত প্রতিক্রিয়া বলটা হয়তো আমাকে সুখি হতে দেয় নি। তাই আজ আবার তোমার জীবনটা রাঙ্গাতে চাই যদি তোমার সাথে আমার জীবনটাও রঙ্গীন হয়ে ওঠে সেই আশায়।
আনন্দি হতাশ গলায় বলল, কিন্তু এটা আর হয় না সমাপ্ত।
– কেন হয় না?
– জানি না তবে আমি তোমাকে আর বিয়ের কথা ভাবতে পারছি না।
– কোনদিনই কি ভাবতে পারবে না?
– মনে তো হয় না।
– আমার মনে হয়। আমার মনে হয় একদিন ঠিক তুমি আমাকে বিয়ে করতে চাইবে।
– হুম তোমার তো এটাও মনে হয় আমি তোমার প্রেমে পড়ে যাব।
– হ্যা আমি সেই দিনটার অপেক্ষা করব। আমি জানি তুমি আমাকে ভালও বাসবে আর বিয়েও করবে। আর আমি সেই দিনের জন্য অপেক্ষা করে থাকব। জীবনে একটা সময় আমি তোমাকে অনেক কষ্ট দিয়েছি। নিজের ইচ্ছাগুলো তোমার উপর চাপিয়ে দিয়েছি বারংবার।
কিন্তু আজ আর নয় আজ আমি তোমাকে আর কোন জোর করব না। আজ সম্পূর্ণ তোমার ইচ্ছেতে সব হবে। এখন বিয়ে করতে না চাইলে তোমাকে কেউ জোর করবে না। আমি সবাইকে বোঝাব তবে আমি অপেক্ষা করে থাকব। যতদিন না তুমি রাজি হবে ততদিন আমি তোমার অপেক্ষায় থাকব । আর তুমি এই বাড়িতেই থাক প্লিজ চলে যাওয়া ডিসিশন নিও না।
বলে সমাপ্ত চলে গেল। সত্যি আজ সমাপ্ত একবারের জন্যও কোন জোর করে নি, না তার কথার জালে ফাসিয়েছে। আজ সমাপ্ত সম্পূর্ণ অনেস্ট থেকে ওর মতের জন্য অপেক্ষা করবে বলেছে। আনন্দি সমাপ্তর যাওয়ার পথের দিকে তাকিয়ে ভাবতে লাগল,,,
এলেই যদি তবে কেন এই গোধূলি বেলায়,
রাতের আধার যে পুরোটাই ঘিরে ফেলেছে আমায়
আর তো কিছুই নেই তোমাকে দেবার মতো
শুধু এই পুড়ে আঙ্গার হওয়া হৃদয়টা ছাড়া
নেবে কি তুমি?
জানো এই গোধূলি বেলাটা বড় সুন্দর
আপন লালিমায় রাঙ্গিয়ে দেয় এই পথঘাট
সবুজ প্রকৃতি সিগ্ধ শীতল বায়ু, কিন্তু তারপর
তারপর এক নিকষ কালো আধার
আর একমুঠো হাহাকার তোমার আমার,,
“সমাপ্ত ”
জাকিয়া সুলতানা