গোধূলী_বেলার_স্মৃতি পর্ব ২৮+২৯

#গোধূলী_বেলার_স্মৃতি (Unexpected Story)
#পর্ব- ২৮
#Jannatul_ferdosi_rimi (লেখিকা)
–“রাফসিন শেখ রুদ্রিক শেষে কিনা বাড়ির সামান্য ড্রাইভারের মেয়েকে ভালোবাসে?যার জন্যে বড়লোকের মেয়েদের কোনো অভাব নেই। ছিহ রুদ্রিক তোমার রুচি এতোটা নিচে নেমে গেলো কীভাবে? “,
_____
খানিক্টা কটাক্ষ করে রুদ্রিককে বললো ইশানি।
রুদ্রিক দ্বিগুন চিৎকার করে বলল,

—“পিপি তুমি যা ইচ্ছে বলো,কিন্তু আমার কাজলকে নিয়ে মোটেও অপমানজনক কথা তুমি বলবে নাহ।
এইসব আমি এলাও করবো নাহ। এতোদিন যা বলার বলেছে, কিন্তু এখন থেকে আমার কাজলকে নিয়ে এইসব অপমনাজনক কথা আমি এলাও করবো নাহ।”

রুদ্রিকের ব্যবহারে অবাকের চরম সীমানায় পৌছে গেলেন ইশানি শেখ।

_______
এদিকে,

তনয় ভাই বেড়িয়ে যেতে-ই’ মা আমার দিকে এগিয়ে এসে বললেন,

—-“তনয়ের সাথে তো আজকে তোর দেখা করার কথা ছিলো,কিন্তু তনয়ের সাথে তো ছুটকি ফিরে এলো। তুই কোথায় ছিলি কাজল? ”

মায়ের প্রশ্নে আমি এখন কি উত্তর দিবো বুঝতে পারছি নাহ। তখনি ছুটকি এসে বলল,

—“মা আপু তো তনয় ভাইয়ার সাথে-ই’ ছিলো। কিন্তু আপুর নাকি কিসব নোটস জোগাড় করার জন্যে লাইব্রেরিতে যেতে হবে তাই আপু চলে গিয়েছিলো। তাইনা আপু?”

ছুটকির কথায় আমি সায় দিলাম। কেননা মাকে আপতত ম্যানেজ করার জন্যে মিথ্যে কথা বলার প্রয়োজন ছিলো।

ছুটকি আবারো বলে উঠে,
–“তারমধ্যে তনয় ভাই যে রাস্তা দিয়ে ফিরছিলো তখন আমিও বাড়ি ফিরছিলাম সেই রাস্তা দিয়ে, তাই তনয় ভাই আমাকে বাড়িতে ড্রপ করে দিয়েছিলো।”

মা হাঁসিমুখে বলল,

–“ওহ এই ব্যাপার? আচ্ছা আমি বরং যাই রান্নাটা শেষ করে আসি।”

মা চলে যেতে-ই’ ছুটকি তড়িঘড়ি এসে আমার হাত ধরে আমার ঘরে নিয়ে চলে আসে।

আমি বুঝতে পারছি ছুটকি আমাকে কিছু বলতে চায়। তাই আমি বলে উঠলাম,

—“কি বলতে চাস বল? ”

ছুটকি বলল,

—“জানালার পাশে দাঁড়িয়ে তনয় ভাইয়ের সাথে আমিও সব দেখে ফেলেছি। আজকে সারাদিন তুই রুদ্রিক ভাইয়ার সাথে ছিলি। তোদের এতোটা কাছে দেখে মনে হচ্ছে তোদের মধ্যে কিছু তো একটা আছে। ”

—–“আমরা একে-অপরকে ভালোবাসি। ”

ছুটকি আমার কথা শুনে চমকে উঠলো। সে হয়তো আমার সোজাসোজি কথাটি মেনে নিতে পারেনি।

—-“আপাই ভাবতে পারছিস বাবা জানলে কী হবে? রুদ্রিক ভাইয়ারা আমাদের মালিক। তাছাড়া এই সম্পর্ক কেউ মেনে নেবে নাহ। ”

ছুটকির কথা শুনে আমি মুঁচকি হেঁসে বললাম,

—“শোন ছুটকি! মানুষের মাঝে ভালোবাসা স্ট্যাটাস দেখে হয়না। ভালোবাসার মতো পবিত্র অনুভুতি যেকোনো মুহূর্তে যে কারোর মধ্যে চলে আসতে পারে।
বাকি রইলো বাবার জানার কথা? আমি নিজে-ই’ কালকে তনয় ভাইয়কে সবকিছু জানিয়ে দিবো। তারপর সবকিছু বাবাকে জানিয়ে দিবো। ”

ছুটকি ভিতু কন্ঠে বলল,

—“তুই বাবাকেও সব বলে দিবি? ভয় নেই তোর আপাই? ”

ছুটকির প্রশ্নে আমি উত্তর দিয়ে বললাম,

—“অবশ্যই জানাবো। ভালোবাসা তো কোনো ভূল নয়। ভূল সবসময় লুকিয়ে করা হয়,কিন্তু ভালোবাসাতে কোনোপ্রকার ভুল নেই। তাহলে আমার প্রকাশ করতে কিসের ভয়? ”

ছুটকি আমার কথা শুনে কিছুটা খুশি হয়ে-ই’ বলল,

—“একদম ঠিক বলেছিস আপাই। চালিয়ে যা আমি তোর এবং রুদ্রিক ভাইয়ার সাথে আছি। ”

ছুটকির কথা শুনে আমি হাঁসলাম।

________

ইশানি শেখ কিছুটা ব্যাথিত গলায় বললেন,

—“রুদ্রিক আমার মুখের উপর একটা কথাও তুমি কখনো বলোনি। কিন্তু আজ ওই মেয়েটার জন্যে তুমি আমার উপর চিৎকার চেচামেচি করছো? সত্যি আমি ভাবতে পারছি নাহ। আমি কি তোমার এতোটা-ই’ পর হয়ে গেলাম। ”

রুদ্রিক কিছুক্ষন কর্কষ গলায় বলল,

—-,”পিপি আমি একজন এডাল্ট। সুতরাং আমাকে না জানিয়ে এইরকম একটা সিদ্বান্ত নেওয়া তোমার ঠিক হয়নি।”

ইশানি শেখ আবারো বললেন,

—“তোমার ফুপিয়াম্মু মারা যাওয়ার পরে আমি তোমাকে সবসময় আগলে রেখেছিলাম।নিজের সন্তানের মতো। তাই ভেবেছিলাম তোমার জীবনের সবথেকে বড় সিদ্বান্ত নেওয়ার অধিকার টুকুও আমার আছে। আমি সত্যি দুঃখিত। আমি ভাবেনি তুমি এতোটা রিয়েক্ট করবে রুদ্রিক। ”

রুদ্রিক এগিয়ে এসে, ইশানির হাত ধরে সোফায় গিয়ে বসিয়ে দেয়। তারপর নিজের পিপির কোলে মাথা রেখে বলে,

—“পিপি আমার কথা শুনে তুমি হার্ট হয়ে থাকলে সরি। ফুপিয়াম্মু মারা যাওয়ার পরে, আমার জীবনের সবকিছুর সিদ্বান্ত নেওয়ার অধিকার আমি তোমাকে দিয়েছি,কিন্তু এই বিয়ের ব্যাপারটায়ে আমি তোমাকে সাপোর্ট করতে পারবো নাহ। ট্রাই টু আন্ডারস্ট্যান্ড পিপি আমি কাজলকে ভালোবাসি। কাজলের সাথে-ই’ আমি খুব ভালো থাকবো। কাজল খুব ভালো। কাজল আমাকে খুব ভালোভাবে বুঝতে পারে।”

কথাটি বলে-ই’ রুদ্রিক উঠে দাঁড়ায়।
ইশানি শেখ বলে উঠলেন,

—“এতোটা ভালোবেসে ফেললে কী করে? ”

রুদ্রিক মুগ্ধ গলায় বলল,

—“আমার জীবনে সকল শূন্যতা এক নিমিষে দূর করতে পারে আমার ‘শুভ্ররাঙাপরী ‘। কাজল নিঁখুতভাবে আমার প্রতিটা কষ্টগুলো ফুটিয়ে তুলতে পারে। যা সবাই পারেনা। তাই আমিও আমার কাজলকে নিজের অজান্তে নিজের বেখেয়ালে ভালোবেসে ফেলেছি। ”

ইশানি কথাগুলো শুনে বুঝে গিয়েছেন। এখন ওই মেয়ের বিরুদ্ধে রুদ্রিককে কিছু বললে হিতে বিপরীত হবে। রুদ্রিক রাগের মাথায় এমন কিছু করে বসবে, যার কারনে ইকবাল শিকদার হাতছাড়া হয়ে যাবে। যা এই মুহুর্তে কিছুতে-ই’ চাইছে নাহ।
(লেখিকা-জান্নাতুল ফেরদৌসি রিমি)
ইকবাল শেখ-ই’ পারেন তাদের কম্পানিকে আবারো লাভের মুখ দেখাতে। এমন কিছু করতে হবে, যেনো এক ঢিলে দুই পাখি মরে যায়।

কথাটি ভেবে ইশানি শেখ রুদ্রিকের কাঁধে হাত রেখে বলে,

—“আমি বরাবরের মতো এইবারও তোমাকে সাপোর্ট করবো রুদ্রিক। আমি তোমাকে প্রতিবারের মতো এইবারও সাপোর্ট করবো এন্ড নীচে গিয়ে ইকবাল শিকদারকেও মানা করে দিবো। ”

নিজের পিপির কথা শুনে রুদ্রিক কিছুটা উৎফুল্ল হয়ে বলে,

—-“সত্যি?”

ইশানি পিপি মাথা নাড়ায়।

ইশানি রুদ্রিকের দিকে টাওয়াল এগিয়ে দিয়ে বলে,

—“আমার বাচ্ছাটা এইবার তুমি ফ্রেশ হয়ে নাও। আমি নীচে যাচ্ছি।”

রুদ্রিক মাথা নাড়িয়ে বলে,

—“ঠিক আছে,আমি যাচ্ছি। ”

কথাটি বলে ইশানি শেখ নীচে চলে যায়। রুদ্রিক প্রশান্তির হাঁসি দিয়ে ওয়াশরুমে চলে যায়।

ইশানি শেখ নীচে নেমে আসে। সকলে ইশানি শেখের
দিকে তাঁকিয়ে আছেন রুদ্রিকের উত্তরের আশায়।

ইশানি শেখ এগিয়ে এসে বললেন,

—“রুদ্রিক বিয়েতে রাজি।”

আফজাল শেখ ও জেসমিন শেখ চমকে উঠেন।

জেসমিন শেখ বললেন,

—“রুদ্রিক বিয়েতে রাজি হয়ে গেলো? ”

—-“অবশ্যই হয়েছে। রুদ্রিক আমার মুখের উপরে কখনো কথা বলেনা। ”

ইশানির কথা শুনে ইকবাল শিকদার খুশি হয়ে বলে,

—“আমার মেয়েটারও কোনো আপত্তি নেই। তাহলে ওদের দুজনের আলাদা কথা বলার ব্যবস্হা করলে কেমন হবে? ”

মিশু লজ্জায় মাথা নিচু করে ফেলে।

ইশানি শেখ কিছুটা ঘাবড়ে গিয়ে বললেন,

—“যখন দুজনের-ই’ বিয়েতে অমত নেই। তাহলে আপতত কথা বলা কী দরকার? আমি বলি কী আমরা বরং ওদের এন্গেজমেন্টের দিনটা ঠিক করি। তারপর এন্গেজমেন্টের পরে না হয় ওরা নিজেদের মতো আলাদা ভাবে কথা বলবে। ”

আফজাল শেখ সম্মতি দিয়ে বললেন,

—“হ্যা তা করা-ই’ যায়। তাহলে আমরা এখন আসি। ”

আফজা শেখ বললেন,

—“চলুন আমি না হয় এগিয়ে দিয়ে আসি। ”

ইশানি শেখ হাঁসিমুখে বললেন,

—“মিশু মা ভালো থেকো। ”

মিশু মাথা নাড়ায়।

_______________

ভার্সিটির করিডোরে দাঁড়িয়ে কিছু নিয়ে চিন্তা করে যাচ্ছি আমি। তখনি ছোট সাহেব আমাকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে।

—“কি করছেন কি সবাই দেখবে তো? ”

ছোট সাহেব আমার হাতে চুমু খেয়ে বললেন,

—-“কেউ আসবে নাহ বুঝেছিস। এতো বকবক করছিস কেন? দেখছিস নাহ রোমান্স করছি। ”

আমি উনাকে নিজের থেকে ছাড়িয়ে বললাম,

—-“সত্যি আপনিও নাহ। বড্ড দুষ্টু। আমি আছি আমার চিন্তায়। ”

—“কিসের চিন্তা তোর? ”

উনার প্রশ্নে আমি বলে উঠলাম,

—“আজকে তনয় ভাইয়ার সাথে দেখা করতে যেতে হবে। ”

আমার কথায় উনি কিছুটা কড়া গলায় বললেন,

—“তুই একদম ওই লোকটার সাথে দেখা করবি নাহ হুহ। ”

আমি হেঁসে উনার শার্টের কলার ঠিক করতে করতে বললাম,

—“ডোন্ট বি জেলাস ওকে? আমার জাস্ট কিছু কথা ক্লিয়ার করার আছে। আশা করি আপনি বুঝবেন। ”

ছোট সাহেব ঘুমড়ো মুখ নিয়ে মাথা নাড়ায়। আমি হেঁসে দিলাম।

রেস্টুরেন্টের একটি টেবিলে বসে আছে তনয়। তখনি সেখানে কাজল চলে আসে। কাজলকে দেখে তনয় হাল্কা হেঁসে বলে উঠে,
—“কাজল বসো। তোমার জন্য-ই’ অপেক্ষা করছিলাম। ”
তনয় ভাইয়ের কথা শুনে আমি একটা চেয়ার টেনে বসি। তনয় ভাইয়া বললেন,
—“চা নাকি কফি? ”

—-“যেকোনো একটা হলেও চলবে। ”

আমার কথা শুনে তনয় ভাই ওয়েটারকে ডেকে দুকাপ কফি ওর্ডার করে দিলেন।
—-“আমি তোমাকে কিছু প্রশ্ন করবো কাজল। আশা করি সঠিক উত্তর পাবো। ”

—“ছোট সাহেবের সাথে আমার কিরকম সম্পর্ক এইসব কিছু নিয়ে-ই’ তো প্রশ্ন করবেন তাইনা? ”

আমার প্রশ্নে তনয় ভাই এইবার কিছুটা অস্বস্হি নিয়ে-ই’ বলল,

—“তুমি কী মিঃ রুদ্রিক শেখকে সত্যি ভালোবাসো?
সত্যি করে বলো। ”

—“হ্যা আমি ছোটসাহেবকে ভালোবাসি। ”

আমার উত্তরে তনয় ভাই কিছুটা ব্যাথিত গলায় বলল,
—“যদি তুমি রুদ্রিককে ভালোবেসে থাকো তাহলে আমার প্রতি তোমার কিসের এমন ভালোবাসা ছিলো? যা এতো সহজে মুছে গেলো।
আসলে আমার মনের সাথে আমি ঠিক পেরে উঠছি নাহ। তাই তোমাকে এইরকম একটা প্রশ্ন করে বসলাম। ”

আমি হেঁসে বললাম,

—“আপনি আমার প্রথম ভালোবাসা তনয় ভাই।
আপনার প্রতি আমার মনে যে সুপ্ত একটা অনুভুতি তা কেউ মুছে দিতে পারবে নাহ। প্রথম ভালোবাসার অনুভুতি আপনার মাধ্যমে আমি পেয়েছি। ”

আমি কিছুক্ষন থেমে আবারো বলে উঠলাম,
“দুই বছর অনেকটা সময়। এই দুই বছরে আমরা অনেককিছু নতুনভাবে শিখলাম। আপনি ভালোবাসায় ঠকে শিখেছেন এবং আমি নতুন করে
ভালোবেসে শিখেছি। ছোটসাহেব অন্যরকম করে হলেও আমাকে ভালোবাসার নতুন রুপ শিখেয়েছে। ভালোবাসার রুপ বদলায় তনয় ভাই।”

তনয় ভাইয়া কিছু বলবে তখনি ওয়েটার কফি নিয়ে আসে।

আমি কফির কাপে চুমুক দিলাম। তনয় ভাইয়া আমার দিকে তাঁকিয়ে অসহায় কন্ঠে বললেন,

—-“তুমি তো আমাকে ভালোবাসতে কাজল। আমি তো ফিরে এসেছি। তাহলে আমাকে মেনে নিতে এতো কেনো দ্বিদা তোমার? রুদ্রিকের মধ্যে এমন কী আছে? ”

আমি মুচঁকি হেঁসে বললাম,

—“ওইযে বললাম ভালোবাসার রুপ বদলায়।
ছোটসাহেব মানুষটা-ই’ অন্যরকম। তাছাড়া আপনি যদি তানিয়া আপুর কাছে না ঠকতেন। তাহলে কখনো-ই’ ফিরে আসতেন নাহ। ঠকেছিলেন বলে-ই কাজলরেখার কথা আপনার মনে পড়েছিলো তনয় ভাই। নাহলে আপনার কিন্তু এই কাজলরেখার কথা মনে পড়তোও নাহ। “,

আমার কথা শুনে তনয় ভাই দমে যায়।

—-” আশা করি আপনি আপনার সব প্রশ্নের উত্তর পেয়ে গেছেন। ”

কথাটি বলে আমি বেড়িয়ে এলাম।

চোখ বন্ধ করলে শুধু ‘ছোট সাহেবের ‘মুখখানা ভেসে উঠে। আমার মনের আকাশে ‘ছোট সাহেবের ‘ ভালোবাসার রং ধরা দিয়েছে। #গোধূলী_বেলার_স্মৃতি (Unexpected Story)
#পর্ব- ২৯
#Jannatul_ferdosi_rimi (লেখিকা)
লাইব্রেরিতে ঢুকতে-ই’ ছোট সাহেব আমাকে কোলে তুলে নেয়। এতে আমি খানিক্টা ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে যাই। ছোট সাহেব খুশি হয়ে বলে,
–“আমি আজকে কতটা খুশি তোকে বলে বুঝাতে পারবো নাহ রে কাজল। ”
ছোট সাহেবের খুশি দেখে আমিও হেঁসে বললাম,
—“কি এমন খুশির কথা? আমাকে বলুন, কিন্তু তার আগে আমাকে নামিয়ে তো দিন। যে কেউ যখন তখন চলে আসবে। ”
ছোট সাহেব বাঁকা হেঁসে বলে,

—“যে কেউ দেখুক তাতে আমার কী? এই রাফসিন শেখ রুদ্রিক কাউকে পরোয়া করেনা ওকে? ”

আমি মাথা নাড়িয়ে বললাম,

—-“হুম তা তো বুঝলাম। কিন্তু আমাকে নামিয়ে দিন প্লিয প্নিয। ”

ছোট সাহেব আমার অনুরোধ শুনে আমাকে নামিয়ে দিলেন। আমি উনার দিকে তাঁকিয়ে বললাম,

—“এইবার তো বলুন? খুশির এতো কারন? ”

ছোট সাহেব আমার দিকে ঝুঁকে বললেন,

—“ম্যাম ইশানি পিপি আমাদের বিষয়টা মেনে নিয়েছে এন্ড ইশানি পিপি তোর বাবার কাছে আমাদের বিয়ের প্রস্তাব নিয়েও চলে যাবে। ”
(লেখিকা ঃ জান্নাতুল ফেরদৌসি রিমি)

ছোট সাহেবের কথা শুনে বিরাট বড় ঝটকা খেলাম।
ইশানি ম্যাম সবকিছু মেনে নিয়েছে? এতো সহজে?
উনার মতো অহংকারী মহিলা বাড়ির সামান্য ড্রাইভারের মেয়েকে নিজের বাড়ির বউ করতে এতো সহজে মেনে নিলো? কেনো যেনো আমার সবকিছু মেনে নিতে কিছুটা কষ্ট হচ্ছে। আমার ভাবনার মাঝে-ই’ ছোট সাহেব আমাকে মৃদ্যু ধাক্কা দিয়ে বলল,
—“কি হলো কাজল তুই কী হ্যাপি নাহ? ”

ছোটসাহেবের কথা শুনে আমি সায় দিয়ে বললাম,

—-“হ্যাপি হবো কেনো ছোটসাহেব? খুব খুশি আমি।”

ছোট সাহেবের আমার কথা শুনে আমার কপালে চুমু খেয়ে বললেন,

–“তোকে ঠিক বলে বুঝাতে পারবো নাহ। কতটা খুশি আমি। কাজল তোকে নিজের করে পাবো আমি। ”

আমি উনার দিকে তাঁকিয়ে বললাম,
—“এতোটা ভালোবাসেন আমাকে ছোটসাহেব আমাকে? ”

ছোটসাহেব আমার কথাশুনে কিছুটা ঘোরলাগা কন্ঠে বললেন,

—“ম্যাম আপনার ভাবনার বাইরেও অধিক ভালোবাসি আপনি আমি। আমি তোকে তোর মায়াবীর মুখখানার মায়ায় পড়ে গিয়েছিলাম। কে জানতো বল? আমি তোকে এতোটা ভালোবাসবো? ”

আমি চুপ হয়ে পড়লাম।

ছোট সাহেবের কথার মাঝে-ই’ ছোট সাহেবের ফোন বেজে উঠে।

ছোট সাহেব ‘জাস্ট আ মিনিট ‘ বলে একটু আড়ালে চলে যায়।

লাইব্রেরি থেকে সবকিছু-ই’ দেখছে সাদি এবং সিথি। তারা এইটা ভেবে নিশ্চিন্ত কাজল ও রুদ্রিকের মধ্যে সবকিছু ঠিক হয়ে আছে।

সিথি সাদির কানের কাছে গিয়ে ফিসফিস করে বলে,
—“সব কিছু-ই’ ঠিক মনে হচ্ছে,কিন্তু আমার ভয় শুধু পিপিকে নিয়ে। পিপি এতো সহজে সব কিছু মেনে নিলো? ”

সাদি নিজের চশমাটা ঠিক করতে করতে বলল,

—“যদি কোনো ঝামালা হলেও আমি আর তুমি আছি কি করতে? আমাদের সেই সমস্যার সমাধান করতে হবে। ”

—-“হুম একদম ঠিক বলেছো সাদি ভাইয়া। ”

—-“তো এখন চলো আমরা এখন যাই। ওদের মতো ওরা থাকুক। ”

সাদির কথা শুনে সিথি বিড়বিড় করে বলে,

—“দিব্যি তো ছিলাম। এখন এই পড়ুয়া মাস্টার নিয়ে গিয়ে পড়তে৷ বসাবে দূর জীবনটা তেজপাতা করে ছাড়লো। ”

সাদি কড়া গলায় বলল,

—“কি হলো এখনো দাঁড়িয়ে আছো কেনো? চলো। ”

সিথি বিরক্তি মুখে ‘যাচ্ছি তো ‘ বলে পা বাড়ালো।
তা দেখে সাদি হাঁসলো। আজ-কাল সিথিকে পড়া দিয়ে জ্বালাতে তার ভালো-ই’ লাগে।

এদিকে,
লাজুক কেবিনে ঢুকতে-ই’ দিয়া হন্তদন্ত হয়ে ছুটে এসে বলে,
—” নাকবোঁচা এ্যাসিস্টেন্ট আপনার মায়ের ফোন নাম্বার টা দিন। ”
দিয়ার কথায় লাজুক কিছুটা অবাক হয়ে বলে,
—“কিন্তু কেনো? ”
দিয়া কোমড়ে হাত দিয়ে বলে,

—“দিতে যখন বলেছি তখন দিন। “,

দিয়ার ধমকে লাজুক নিজের ফোনটা এগিয়ে দেয়।
লাজুকের ফোন নিয়ে দিয়া লাজুকের মাকে ফোন দেয়। লাজুকের মা কিছু বলার আগে-ই’
দিয়া তাড়াহুড়া করে বলে,
–“আআসসালামু আলাইকুম আন্টি। আপনি কিছু বলবেন তার আগে আমি কিছু বলতে চাই। আপনি আপনার ছেলের বিয়ে একজন নিশ্পাপ বাচ্ছা মেয়ের সাথে দিতে চাইছেন তা মোটেও ঠিক নয়। যাকে বলে একদম অন্যায়। আপনার ছেলের সাথে এতো পিচ্ছি মেয়েকে মানাবে নাহ। আপনার ছেলের মতো হ্যান্ডসাম নাকবোচার সাথে আমার মতো মেয়েকে-ই’ মানাবে। আন্টি আপনি কিন্তু আবার ভাববেন নাহ আমি আপনার ছেলেকে পছন্দ করি। জাস্ট বলে দিলাম আপনার ছেলের সাথে ওই পুচকি মেয়েকে একদম বিয়ে দিবেন নাহ হুহ। দিবেন না মানে দিবেন নাহ। ”

(লেখিকা ঃ জান্নাতুল ফেরদৌসি রিমি)
দিয়া যেনো শান্ত কন্ঠে বড়সড় হুমকি দিয়ে দিলো লাজুকের মাকে।

কথাটি বলে-ই’ দিয়া লাজুকের হাতে ফোন ধরিয়ে দিয়ে গটগট করে বেড়িয়ে গেলো।

লাজুক ফোন কানে নিলো।
লাজুকের মা ফোনের ওইপাশ থেকে বলে উঠে,
—“কে ছিলো রে বাবা? বাবাগো মনে হচ্ছিলো খুব রেগে আছে। ”

লাজুক মুঁচকি হেঁসে বলল,
—“তোমার হবু বউমা ছিলো। তোমার হবু বউমাকে একটু-আকটু জ্বালিয়েছিলাম তাই সে রেগে আছে। ”

লাজুকের মা হেঁসে বললাম,

—“সত্যি তুই খুব দুষ্টু হয়েছিস লাজুক। তাড়াতাড়ি আমার হবু বউমাকে আমার ঘরের বউ করে নিয়ে আয় তো। ”

লাজুক হেঁসে বলে,

—“খুব তাড়াতাড়ি নিয়ে আসবো। ”

কথাটি বলে লাজুক এগিয়ে গেলো অফিসের কফি কেন্টিনের দিকে। সে জানে এখন দিয়া সেখানে-ই’ আছে।

দিয়া কফি মুখে নিতে যাবে তখনি লাজুকের কথা তার কানে ভেসে উঠে।

—-“ম্যাম এখনো কী নিজের ভালোবাসাটা অপ্রকাশিত রাখবেন? মন খুলে যদি নিজের অনুভুতিগুলো-ই’ যদি প্রকাশ করতে না পারেন তাহলে দিনশেষে শুধু আফসোস করে যেতে-ই’ হয়।”

দিয়া কফির কাপ টা রেখে উঠে দাঁড়িয়ে বললো,

—“ভালোবাসাকে বাস্তবতার ভীরে হারিয়ে যেতে দেখেছি। দেখেছি কীভাবে নিজের সবটুকু ভালোবাসা অন্য কারো মাঝে বিলিয়ে দিয়ে, নিজের অস্হিত্ব কীভাবে বিলিন হয়ে যায়। ”

লাজুক খানিক্টা অবাক হয়ে বলে,

—“আপনার কথা ঠিক বুঝলাম নাহ। ”

—-“আমার মেঝ আপাই ভালোবাসার কাছে হেরে গিয়ে আত্বহত্যার পথ বেঁছে নিয়েছিলো। তাই আমারোও ভালোবাসতে বড্ড ভয় করে নাঁকবোচা
এসিস্টেন্ট। ”

লাজুক দিয়ার হাত শক্ত করে ধরে বলে,

—“জীবন সঠিক কারো হাত ধরলে দেখবেন ভালোবাসা খুব সুন্দর। ভালোবাসাকে একটিবার ভরসা করে-ই’ দেখুন দিয়া ম্যাম। ”

দিয়া অজান্তেই লাজুককে জড়িয়ে ধরে ফুপিয়ে কেঁদে উঠে। লাজুক হাঁসে।

অন্যদিকে,

রুদ্রিক ফোনের স্ক্রিনে তাঁকিয়ে দেখে তাদের অফিসের বস মিঃ আশিয়াক রাইজাদার ফোন। রুদ্রিক ফোন রিসিভ করে বলে,

—-“জ্বী স্যার বলুন। ”

আশিয়াক রাইজাদা বললেন,

—-“আগামী সপ্তাহে আমাদের কম্পানির একটা ইম্পর্টেন্ট প্রযেক্ট আছে। আমি সেই প্রযেক্টের দায়িত্ব তোমাকে দিতে চাই। আমি জানি তুমি মানা করবে নাহ। ”

—-“তাহলে তো স্যার আমাকে এক সপ্তাহের জন্যে
ঢাকার বাইরে যেতে হবে। ”

রুদ্রিকের কথা শুনে আশিয়াক বললেন,

—“তা তো যেতে হবে। রুদ্রিক অনেক ভরসা করে তোমাকে এই প্রযেক্টের দায়িত্ব দিতে চাচ্ছি। আশা করি তুমি আমাকে নিরাশ করবে নাহ। ”

কাজলের থেকে এক সপ্তাহ দূরে যেতে হবে বলে রুদ্রিকের মন খারাপ হলেও, কাজের জন্যে তার সেক্রিফাইজড করলো।

রুদ্রিক হাঁসিমুখে বলল,

—-“ওকে স্যার আপনি চিন্তা করবেন নাহ।

কথাটি বলে রুদ্রিজ ফোন কেটে দিলো।

ছোটসাহেবকে শুকনো মুখে এগিয়ে আসতে দেখে,
আমি বলে উঠলাম,
–“কি হলো ছোটসাহেব? আপনার মুখটা হঠাৎ শুকনো লাগছে কেনো? ”

আমার কথা শুনে ছোটসাহেব বলে উঠলো,

—“কাজল তুই তো জানিস। আমি রাইজাদা গ্রুপ অফ কম্পনিতে চাকরী করি। স্যার আমাকে খুব ভরসা করে একটি প্রযেক্ট হ্যান্ডেল করতে দিয়েছেন। তাই আমাকে এক সপ্তাহের জন্যে ঢাকার বাহিরে যেতে হবে। ”

ছোট সাহেবের সাথে কয়েকদিন দেখা হবে নাহ। ভেবে-ই’ মনটা খারাপ হয়ে গেলো। তবুও মুখে হাঁসি ফুটিয়ে বললাম,

—“এতো আরো খুশির খবর। এই প্রযেক্টে আপনি সফল হলে, আপনার কত নাম হবে তাইনা ছোটসাহেব? ”

—-“তা তো হবে,কিন্তু তোকে অনেক মিস করবো রে ‘শুভ্ররাঙাপরী’.। ”

আমি শুকনো হাঁসি দিলাম।

রুদ্রিক বুঝলো কাজলের মন খারাপ হয়েছে। তাই সে

বলে উঠে,

—-“চল আজকে আমি তোকে একটা জায়গায় নিয়ে যাই। ”

—-“কোথায় যাবো? ”

—-“গেলে-ই’ দেখতে পাবি। আপাতত চল তো।”

কথাটি বলে-ই’ ছোট সাহেব আমার হাত ধরে উনার গাড়ির দিকে নিয়ে গেলেন। ছোট সাহেব বললেন,

—“উঠে পড়। ”

আমিও প্রশ্ন না করে গাড়িতে উঠে পড়লাম। ছোটসাহেব গাড়িতে উঠে পড়লো।

গাড়ি একটি আইস্ক্রিম পার্লারের সামনে রাখা হলো।

আইস্ক্রিম পার্লার দেখে আমি কিছুটা এক্সাইটেড হয়ে বললাম,

—“আইস্ক্রিম পার্লার? ”

ছোট সাহেব আমার কথা শুনে বললেন,

—“হুম আইস্ক্রিম পার্লার। তোর পছন্দ না আইস্ক্রিম? আজকে তুই যত খুশি আইস্ক্রিম খেতে পারিস।”

আমি খুশি হয়ে বলি,

—-“সত্যি? ”

উনি মাথা নাড়িয়ে বলেন,

—“একদম সত্যি। ”

আমরা দুজনে আইস্ক্রিম পার্লারের ভিতরে ঢুকে পড়লাম।

ছোটসাহেব বলার সাথে সাথে-ই’

ভিন্ন ধরনের অনেকগুলো আইস্ক্রিম চলে আসলো।

আমি ভ্যানেলা আইস্ক্রিম হাতে নিয়ে খাওয়া শুরু করলাম।

রুদ্রিক মুগ্ধ দৃষ্টিতে তাঁকিয়ে আছে তার কাজলের দিকে। হঠাৎ করে-ই’ কাজলের মধ্যে শয়তানী বুদ্ধি চলে আসলো।

সে আইস্ক্রিম দিয়ে রুদ্রিকের গালের খানিক্টা অংশে লাগিয়ে দেয়।

কাজলের এমন কান্ডে রুদ্রিক কিছুটা রাগ দেখিয়ে বলল,

—“এইসব কি কাজল কি করলি তুই? পুরো মুখে ভরিয়ে দিলি। ”

কাজল খিলখিল করে হেঁসে উঠে। কাজলকে হাঁসতে দেখে রুদ্রিক ও হেঁসে উঠে।

(নীচের কথাগুলো পড়বেন)

বাকীটা আগামী পর্বে….

চলবে কী?

(

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here