চন্দ্রাণী (১১)

#চন্দ্রাণী (১১)
ঝিরিঝিরি বৃষ্টি পড়ছে কিছুক্ষণ ধরে। চন্দ্র বের হয়ে কাচারি ঘর পার হতে পারলো না তার আগেই বৃষ্টি পেয়ে বসলো তাকে।শাহজাহান তালুকদার বাবুল দাশকে বললেন লেবু চা বানাতে তাদের বাপ মেয়ের জন্য। চেয়ারম্যানের কাচারি ঘরে তিনটি রুম। একটা তার নিজের রুম,একটি গেস্ট রুম আর একটা বিরাট হলরুম।
হলরুম জুড়ে মানুষ বসে আছে দশ জনের মতো। চন্দ্র ভাবলো, এই লোকগুলো কেমন সাতসকালে চলে এসেছে। এরা শুধু মাত্র ভালোবাসার জন্যই ছুটে আসে।একজন প্রতিনিধি হিসেবে তার বাবার কতটা সফল তার প্রমাণ এরাই। সবাই নির্বাচন নিয়ে আলোচনা করছে।

বাবুল দাশ চা বানাচ্ছে, চন্দ্র গিয়ে বললো, “কাকা,ভেতরের বাগানের ওই গন্ধরাজ লেবু গাছে লেবু আছে?”

বাবুল দাশ পান খাওয়া দাঁত বের করে বললো,”আপনে বসেন আম্মা।আমি এখনই যাইতেছি।”

সিরাজ হায়দার বললেন, “ভেতরের পুকুরের পাশের গাছটায় দেখিস এবার লেবু হলো কি-না। ”

বাবুল দাশ একটা ছাতা নিয়ে বের হলো লেবুগাছের দিকে। শাহজাহান তালুকদার মেয়েকে বললো,”খুব চিন্তা হচ্ছে রে মা।এবার চারদিকে যেই অবস্থা দেখছি,দিন দিন সব খারাপ হচ্ছে। ”

চন্দ্র বাবার কাঁধে হাত রেখে বললো, “চিন্তা করো না বাবা।সব ঠিক হয়ে যাবে।যা হবে ভালো হবে দেখিও।”

হঠাৎ করে বাহিরে বাবুল দাশের আর্তচিৎকার শোনা গেলো।হুড়মুড়িয়ে ঘরের সবাই বের হলো ঘর থেকে। বাবুল দাশ ছুটে এসে মাটিতে লুটিয়ে পড়লো। শাহজাহান তালুকদার বাবুল দাশের হাত চেপে ধরে ব্যতিব্যস্ত হয়ে জিজ্ঞেস করলো, “কি হয়েছে বাবুল?কি হয়েছে তোর?”

চন্দ্র এক গ্লাস পানি নিয়ে এলো। ভয়ে বাবুল দাশের মুখ দিয়ে কথা বের হচ্ছে না। পানি খেয়ে কাঁপা কাঁপা গলায় বললো, “স্যার,পুকুর পাড়ের আম গাছের ডালে একটা লাশ ঝুলতেছে।নীলির লাশ।”

উপস্থিত সবাই চমকে উঠলো। কি বলছে এসব?

সবাই দৌড়ে ছুটে গেলো পুকুরের দিকে।গিয়ে দেখে নীলির লাশ ঝুলছে গাছের ডালে।
মুহুর্তেই পুরো গ্রামে ছড়িয়ে গেলো এই খবর। ঝিরিঝিরি বৃষ্টিতে ভিজতে ভিজতে পুরো গ্রামের সবাই ছুটে এলো।নীলির মা এলেন আলুথালু বেশে।মেয়েকে এভাবে গাছের ডালে ঝুলতে দেখে নীলির মা সেখানেই জ্ঞান হারালেন।

শাহজাহান তালুকদারের মাথার রগ দপদপ করছে উত্তেজনায়। থানায় খবর চলে গেছে ইতোমধ্যে। টগর এসে কাচারি ঘরের সামনের পুকুর ঘাটে বসলো। চারদিকে কি হচ্ছে কিছুই তার মাথায় ঢুকছে না।গত পরশু রাতেই তো একটা খুন হলো,আজ আবার আরেকটা খুন।
এই মেয়েটাকে কে খুন করলো!

চন্দ্র আর শর্মী এক কোণে দাঁড়িয়ে আছে। শর্মী কাঁপছে থরথরিয়ে।কিছুক্ষণ পরেই থানা থেকে পুলিশ এলো।নির্ঝর গাড়ি থেকে নেমে দেখে শর্মী দাঁড়িয়ে আছে। একটা মৃদু শিস দিয়ে নির্ঝর মনে মনে বললো, “মাই লাকী চার্ম!এতো সুইট কেনো?দেখলেই আমার সুগার বেড়ে যায়। ”

টগরের দিকে এগিয়ে গিয়ে বললো, “তো টগর সাহেব,আবারও দেখা হয়ে গেলো! ”

টগর কটাক্ষ করে বললো, “মাই ব্যাড লাক।”

নির্ঝর হেসে বললো, “বাট মাই গুড লাক।যাই হোক আপনি এখানে কেনো?”

টগর বিরক্ত হয়ে বললো, “আপনি মনে হয় ভুলে গেছেন কাকে কোন প্রশ্ন করতে হয়?আমার গ্রাম এটা,আমার গ্রামের একটা মেয়ে মারা গেছে আমি থাকবো না এখানে?”

নির্ঝর হেসে বললো, “প্রমাণ লোপাট করতে এসেছেন? ”

চন্দ্র কান খাড়া করে দূর থেকে ওদের কথা শোনার চেষ্টা করলো।

টগর যারপরনাই বিরক্ত। মুখ কালো করে বললো, “পুলিশের চাকরি করা লোকগুলো এমন ত্যাঁদড় টাইপ হয় কেনো?তাদের মাথায় মগজের বদলে কি গোবর?
প্রমাণ লোপাট করার মতো ব্যাপার থাকলে দিনের আলোয় না,রাতের অন্ধকারেই করতাম।”

নির্ঝর হেসে বললো, “তাহলে স্বীকার করছেন এরকম করেন আপনি? ”

টগর বিরক্ত হয়ে বললো, “৫ বছরের বাচ্চার ও এই কমনসেন্স আছে,আফসোস পুলিশের নেই।”

শাহজাহান তালুকদার এসে বললো, “স্যার আসছেন আপনি? দেখুন না কি হচ্ছে এসব?আমার তো মাথা কাজ করছে না স্যার। ”

নির্ঝর বললো, “চিন্তা করবেন না।আমি দেখছি।আপনাদের গ্রামের অনেক ঘটনা জানতে পারছি দিন দিন।
আপনাদের এই গ্রামে তো অনেক আগে থেকেই বিভিন্ন ক্রাইম হয়েই চলেছে। ড্রাগ,খুন,কিডন্যাপ,নারী পাচার সবকিছুর আখড়া আপনাদের গ্রাম।”

শাহজাহান তালুকদার বললো, “আপনি দেখুন তদন্ত করুন। অপরাধী যে-ই হোক যাতে ছাড় না পায়।সামনে ইলেকশন, এখনই এসব শুরু করে দিয়েছে ওরা।”

চন্দ্র আর শর্মী এগিয়ে এসে বাবার পাশে দাঁড়ালো।

নির্ঝর জিজ্ঞাসুক হয়ে তাকিয়ে রইলো। শাহজাহান তালুকদার বললো, “আমি কারো নাম নিতে চাই না।আপনি তদন্ত করুন,সব জানবেন।”

নির্ঝর টগরের দিকে তাকিয়ে বললো, “হ্যাঁ, অনেক কিছু জানার আছে বৈকি। যা জেনেছি তাতে এখনই আমার মাথা ভোঁভোঁ করে ঘুরছে।বিয়ে সাদী করি নি,এসব রহস্যের চক্করে পড়ে আমার বউকে না অগ্রীম বিধবা হয়ে যেতে হয়।”
নির্ঝর শর্মী দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসলো। শাহজাহান তালুকদার আরেকটা সিঁড়িতে গিয়ে বসলো।

চন্দ্র মৃদু সুরে বললো, “আপনার ফ্লার্টিং স্কেল খুবই নিম্নস্তরের। ”

টগর বিরক্ত হয়ে চন্দ্রর দিকে তাকালো। এই মেয়েটাকে বড়ই অদ্ভুত মনে হয়।
তার বোনের সাথে কেউ ফ্ল্যার্ট করছে আর সে কি-না তার স্তর হিসেব করছে।

লাশ নামানোর পর দেখা গেলো লাশের হাতে একটা কাগজ আছে।সবাই আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষা করতে লাগলো কি লিখা আছে এতে।নির্ঝর কাগজটা খুলে পড়লো। তারপর মুচকি হেসে কাগজটা পকেটে পুরে নিলো।

চলবে……

রাজিয়া রহমান

ছোট পর্ব জানি,আজ ও দিতে পারবো না ভাবছিলাম।তবুও এটুকু দিলাম।অন্নন্নন্ননেক সরি।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here