চাদোঁয়া মহল পর্ব -১৩

#চাঁদোয়া_মহল
পর্বঃ১৩
#অত্রি আকাঙ্ক্ষা

শারাফের চোয়াল শক্ত হয়ে গেল।মুখে গাম্ভীর্যের রেশ! রুক্ষ গলায় বলতে লাগলো,

—–“অপ্সরাকে এসবের মধ্যে একদম টেনে আনবেন না।আমি কেবল সত্যিটা জানতে চাই!”

—“কেমন সত্যি?এখানে মিথ্যারই বা কি দেখেছ তুমি!”

সুধা মির্জা অতি সন্তপর্ণে এড়িয়ে যেতে চাইলেন।শারাফ এগিয়ে এসে তার হাত আলতো করে চেঁপে ধরলো,টেনে নিয়ে সোফায় বসিয়ে দিলো। নিজেও হাঁটু গেড়ে বসে পরলো।

–‘আমার বুঝ হওয়ার পর থেকে লক্ষ্য করতাম আপনি প্রায় সময় একটা ছবি জড়িয়ে ধরে কান্না করতেন,নিজেকে আপাদমস্তক ঢেকে হুটহাট অজানা উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পরতেন।কোথায় যেতেন!কার কাছে যেতেন!এ নিয়ে কারো কোনো মাথাব্যথাও ছিলো না!দাদাজান সবকিছুর দায়িত্ব আপনার কাঁধে তুলে দেওয়ায়,কেউ আপনাকে কোনোকিছু জিজ্ঞেস করার সাহসও পেত না।আমি যখন নিজ থেকে জানার চেষ্টা করলাম,আপনি আমাকে দূরে পাঠিয়ে দিলেন।দু’বছর আগে আমি কানাডা থেকে গ্রাজুয়েশন শেষ করে যখন দেশে এলাম!আপনার নৃশংসতা দেখে তখন আমি দিশেহারা।আপনি মানুষটি কি আদোও আমার সেই ফুপুমা!

শারাফের কাতর কন্ঠ শুনে সুধা মির্জার অন্তর আত্মা কেঁপে উঠলো।গলায় আঁটকে থাকা কান্না দলা পাঁকিয়ে বের হতে চাইছে।তিনি নিজেকে শক্ত করতে চাইলেন!চোখ হতে কয়েক ফোঁটা পানি গড়িয়ে পরলো।

—“যে যতোই অন্যায় করুক তার জন্য আপনি আইন নিজ হাতে তুলে নিতে পারেন না।সব জেনেও আপনার করা অন্যায়কে আমি দুবছর যাবৎ প্রশ্রয় দিয়ে এসেছি।আপনার এই আমূলক পরিবর্তনের পেছনের কারণ জানার জন্য আমি আপনার অনুমতি ব্যতিত আপনার ঘরে তল্লাশি চালিয়েছিলাম।সেই বক্সটি তখন আমার হাতে এসেছিলো।”

সুধা বেগম শারাফের দিক ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে রইলেন।এর মানে তার ধারণাই ঠিক!দুটি ছবি নিশ্চয়ই শারাফের চোখে পরেছে!হয়ত শারাফ পুরো ব্যাপারটা কিছুটা হলেও আঁচ করতে পেরেছে।সুধা বেগম ঢোক গিলে গলা ভিজিয়ে নিলেন।

–‘চন্দ্ররেখাকে প্রথম আমি সেই ছবিতেই দেখেছি।বিশ্বাস করবেন ফুপুমা,আমার পুরো দুনিয়া থমকে গিয়েছিলো।চন্দ্ররেখার সেই মায়া জড়ানোর পবিত্র মুখশ্রী কিছু সময়েই আমার হৃদয় তোলপাড় করে দিয়েছিলো।আমি অস্থিরতা বেড়েই চলছিলো।আমি নিজেকে পুরোটাই হারিয়ে ফেলেছিলাম।আমি জানি ফুপুমা চন্দ্ররেখার সাথে আপনার খুব গভীর সম্পর্ক আছে। তাজওয়ার চৌধুরীর সাথে দাঁড়ানো আপনার সেই ছবিটিও আমি দেখেছি।প্লিজ ফুপুমা!চুপ করে থাকবেন না।আমি সব জানতে চাই।আপনার সাথে চন্দ্ররেখার কি সম্পর্ক রয়েছে।

সুধা মির্জা প্রসঙ্গ বদলাতে শারাফকে জিজ্ঞেস করলেন,

–‘মারকিউরির সেই পরিত্যক্ত গোডাউন ভেঙে ফেলার জন্য,তুমি নিজের লোক দিয়ে সরকার থেকে নোটিশ পাঠিয়েছো…. তাই না?

শারাফের মুখের নমনীয়তা হারিয়ে গেল।সে তার দীর্ঘকায় দেহ নিয়ে উঠে দাঁড়ালো।শক্ত গলায় জবাব দিলো,

—“হে আমিই করেছি সব!আপনার করা অন্যায় কাজ দেখার ধৈর্য্য যে আমার নেই! বহু আগেই ধৈর্য হারিয়ে ফেলেছি।আশা করি অন্তত চন্দ্ররেখার সামনে আপনি নিজের ইমেজ খারাপ করতে চাইবেন না!”

সুধা মির্জার বুক ধড়ফড় করছে।এটা সত্যি তিনি চন্দ্ররেখার চোখে নিজের জন্য ঘৃণা সহ্য করতে পারবেন না।রেখা যদি সব সত্যি জেনে যায়!কিছুসময় থেমে শারাফ পুনরায় বলল,

–“আপনি কিন্তু এখনোও আমার আগের প্রশ্নের জবাব দেন নি!আপনার সাথে চন্দ্ররেখার সম্পর্ক কি?সম্পর্কের বিষয়টি বা আড়ালে রাখা কারণ কি।ফর গড সেইক,ফুপুমা!সে সামথিং,আ’ম লুসিং মাই কন্সটেনসি।”

শারাফ এক প্রকার ফোর্স করা শুরু করলো।সুধা মির্জার কপাল বেয়ে ঘাম ঝরছে।এতো কিছু কি তিনি আদোও বুঝিয়ে বলতে পারবেন!উপায়ন্তর না পেয়ে নিজেকে প্রস্তুত করলেন।শারাফকে আজই সব জানিয়ে দিবেন।কম্পিত গলায় বলতে লাগলেন,

–“চন্দ্ররেখার সাথে আমার এক অদৃশ্য অটুট বন্ধন আছে।সকলের অজ্ঞাতসারে আমি সংযোগ তৈরি করেছি।আমি চন্দ্ররেখার…..…

সম্পূর্ণ কথা শেষ হওয়ার আগেই,তড়িঘড়ি করে আরিফ কেবিনে প্রবেশ করলো।শারাফ কপাল কুঁচকে তাকালো,সেই সাথে বিতৃষ্ণা বোধ করলো।হঠাৎ আরিফের দিকে পূর্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে বুকটা কামড়ে উঠলো।কিছু বলবে তার পূর্বে আরিফ মাথা নিচু করে নিজ থেকে বলতে শুরু করলো,

—‘ভাবীকে কোথাও পাওয়া যাচ্ছে না।’

সুধা মির্জা বসা থেকে উঠে দাঁড়ালেন।মনে হচ্ছে পায়ের নিচ থেকে মাটি সরে যাচ্ছে! শারাফ তেড়েফুঁড়ে এগিয়ে গেল আরিফের দিকে।শার্টের কলার চেপে ধরলো।ইতিমধ্যে শারাফের কপালের শিরা ফুলে উঠেছে।চিৎকার করে বললো,

—‘ওয়াট ডু ইউ মিন বাই,পাওয়া যাচ্ছে না! তুই কোথায় ছিলি!তোকে না আমি কেবিনের সামনে দাঁড় করিয়ে রেখে এসেছিলাম!’

—‘সরি স্যার!আমি পি করতে গিয়েছিলাম।সত্যি বলছি স্যার!বেশি সময় নেই নি।অনলি ফাইভ মিনিটস!এসে দেখে ভাবী নি।একজন সুইপার জানালো সে নাকি ভাবীকে বিল্ডিং এর বাহিরে যেতে দেখেছে।’

শারাফ দাঁত কিড়মিড় দিয়ে উঠলো।তার মুখ থেকে ভয়ানক এক গালি বের হলো।

–“ফা* ইউর পি।অপ্সরার কিছু হলে না,তোকে আমি ছাড়বো না।”

সুধা মির্জা নিজেকে সামলে এগিয়ে এলেন।শারাফকে টেনে সরিয়ে আনলেন।পর পর ধমকে উঠলেন।

–‘মাথা ঠান্ডা করো,শারাফ।কি হবে চন্দ্ররেখার?বাউন্ডারির ভিতরেই আছে রেখা। বাহিরে কোথাও যায় নি!হয়ত,সম্পূর্ণ জায়গা ঘুরে ঘুরে দেখছে।সবাই মিলে খুঁজলেই পাওয়া যাবে।’

শারাফ কিছু বললো না।চটপট করে কেবিন ছেড়ে বেড়িয়ে গেল।এই মূহুর্তে রেখাকে খুঁজে বের করা তার জন্য বেশি জরুরি।এতো বড় জায়গা কোন পাশে আগে খুঁজবে সে!শারাফের মাথায় হুট করে একটা আইডিয়া এলো।সে তড়িঘড়ি করে তার সেক্টরের সেই বিল্ডিং এ ঢুকে পরলো।তার কেবিন সাথে থাকা এ্যাটাচড ট্যারেস থেকে তো আশেপাশের সবই দেখা যায়!

———-

গোডাউন ও ভাঙা প্রাচীরের মাঝামাঝি চওড়া গলির ন্যায় ফাঁকা জায়গায় দাঁড়িয়ে আছে চন্দ্ররেখা।এখানে সেখানে স্তুপ আকারে আবর্জনা জমে আছে!চারপাশে কাঁচের বোতলের ছড়াছড়ি।রেখা তার হাত থাকা ভাঙা ফুলদানিটি ছুঁড়ে দূরে ফেলে দিলো।গুন্ডা গোছের একজন লোক বেহুঁশ হয়ে পরে আছে।কিছুটা দূরে একজন মহিলা জড়োসড়ো হয়ে দাঁড়িয়ে!সন্ধ্যার হতে বেশি সময় নেই,চারদিকে গুমোট পরিবেশ।আশেপাশে কেউই নেই!রেখা মহিলাটির দিকে ভালো করে দৃষ্টিপাত করলো।বয়স অনুমানিক ত্রিশ বত্রিশ হবে!পরনের কামিজের নিচের কিছু অংশ ছিঁড়ে গেছে,আতংকিত দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।কান্না করার দরুন চোখ ভিজে আছে!সেই সাথে সারা শরীর ঘামে ভেজা।মহিলাটির আচরণ কিছুটা অপ্রকৃতস্থদের মতো!চন্দ্ররেখা মহিলাটির দিকে কিছুটা এগিয়ে গেল।মহিলার মুখের ভয়ের ছাপ দৃঢ় হয়ে উঠলো,সে কিছুটা পিছিয়ে গেল।চন্দ্ররেখা মহিলাটিকে আশ্বস্ত করলো,

–‘আপনি প্লিজ ভয় পাবেন না!আমি আপনার কোনো ক্ষতি করবো না।আমি আমাকে বলুন এখানে আপনি কি করছেন?আর এই লোক কে!আপনাকে এভাবে টেনে হিঁচড়ে এখানে কেন এনেছে?’

মহিলাটি ডান হাত তুলে আঙুল দিয়ে রেখার পিছনে থাকা গোডাউনের দিকে ইশারা করলো।তারপর কাঁপা কাঁপা গলায় বললো,

–‘টর্চার সেল’।

মহিলাটির কথা শুনে চন্দ্ররেখা পেছনে ফিরে তাকালো।খেয়াল করলো গোডাউনটির সামনের অংশটি বেশ পুরনো হলেও পেছনের দিকের দেয়ালটি একদম নতুন।রেখা খানিকটা অবাক হলো।মহিলাটির কথার বিপরীতে জিজ্ঞেস করলো,

–‘মানে?কি বলতে চাইছেন আপনি!’

মহিলাটি বিড়বিড় করে কিছু আওড়ালো।চন্দ্ররেখা বুঝতে পারলো না।মহিলার নিকটে যেয়ে দাঁড়াতে তার কথা শুনতে পেল।

—‘সবাইকে শাস্তি দেয় এরা,চাঁদোয়া মহলের সবাই পাপী !আমিও পাপী,আমার পাপের শাস্তি পেয়েছি।তুইও পাবি!’

হুট করে মহিলাটি চন্দ্ররেখাকে ধাক্কা দিলো।প্রাণপণে দৌড়ে প্রাচীরের ভাঙা অংশ দিয়ে বাহিরে বের হয়ে গেল।ধাক্কাটি বেশ জোরালো না হওয়ায়,চন্দ্ররেখা নিজেকে পরে যাওয়া থেকে সামলে নিলো।তারপর পা মচকে গেছে।বহু কষ্টে সে সোজা হয়ে দাঁড়ালো।মহিলার কথাগুলো তার মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে! পাশে তাকিয়ে দেখলো সেই লোকটি এখনো নিচে পরে আছে।রেখা ঘাবড়ে গেল।মারা যায় নি তো আবার!সে তো কেবল লোকটিকে অজ্ঞান করার জন্য ফুলদানির সামনের অংশ দিয়ে মাথার পেছনে মেরেছিল।আশেপাশে তাকিয়ে কাউকে খোঁজার চেষ্টা করলো।সে সময় এভাবে চলে আসা একদম উচিত হয়।ফোনটাও রেখে এসেছে।নিজের বোকামিতে বেশ বিরক্ত হলো! এভাবে লোকটিকে ফেলে রেখে যেতেও বিবেকে বাঁধছে! কিছুর শব্দ পেয়ে ঘুরে দাঁড়ালো!আকস্মাৎ গোডাউনের দেয়াল একপাশ থেকে সরে গেল।ভিতর থেকে দুজন মানুষকে বেরিয়ে আসতে দেখে, রেখা বিস্ফোরিত দৃষ্টি তাকিয়ে রইল।গোডাউনের পেছনে গুপ্ত দরজা!এ যেন কল্পনাতীত।দুইজনের মুখে মাক্স লাগানো ছিলো,দরজার বাহিরে আসতে উভয়েই মাক্স খুলে ফেলল।দুইজনের মধ্যে একজনকে সে চিনে।মেয়েটির নাম নওশিন,মাসুকের মামাতো বোন সে।এই মেয়ে এমন জায়গায় কি করছে!পাশের পালোয়ান গোছের লোকটিকেও তো চেনা চেনা লাগছে।কোথায় যেন দেখেছে?রেখা মনে করার চেষ্টা করলো!আজ সকালেই তো দেখেছে,হসপিটালের সামনে।দেখে মনে হচ্ছিল কারো জন্য অপেক্ষা করছে।

চন্দ্ররেখার উপস্থিতি মানুষ দুইজনের কাছেও বেশ অপ্রত্যাশিত!নওশিন বেশ ঘাবড়ে গেল।পাশে থাকা মানুষটিকে চোখ দিয়ে কিছু ইশারা করলো।মানুষটি হয়ত বুঝতে পারলো!গুপ্ত দরজাটি বন্ধ করবে এমন সময়,ভেতর থেকে একসাথে অনেকের চিৎকার বেড়িয়ে এলো।নারী পুরুষ উভয়ের সম্মিলিত চিৎকার।চন্দ্ররেখার বুক কেঁপে উঠলো!মনে হলো এই আহাজারি,চিৎকার কেবল তার আপনজনের।অনেকে মিলে যেন তাকে ডাকছে!সে এগিয়ে গেল।ভাপসা গন্ধের সাথে ঝাঁঝালো একটা গন্ধ নাকে ধাক্কা মারলো।নওশিনকে টপকে ভিতরে প্রবেশ করতে চাইলো।নওশিন বাঁধ সাধলো।

—–

শারাফ যখন ট্যারেসে পৌঁছল,চন্দ্ররেখা ততক্ষণে গোডাউনের ভিতরে ঢোকার চেষ্টা করছে। দৃশ্যটি দেখে শারাফের মাথা নষ্ট হওয়ার উপক্রম।চন্দ্ররেখা তাকে ভুল বুঝবে না তো!সে যখন গোডাউনের ব্যাপারে সুধা মির্জার সাথে প্রথম কথা বলেছিলো,তাকে এক প্রকার দমিয়ে দেওয়া হয়েছে।এমন কি বাবা চাচাকেও এ ব্যাপারে কোনোদিন কথা বলতে দেখে নি সে!কঠোর নিষেধ থাকায় নিজেও কোনোদিন সেই জায়গায় যাওয়া চেষ্টা করে নি।চন্দ্ররেখা সেখানে গেলে নির্ঘাত তাদের পুরো পরিবারকে ভুল বুঝবে।শারাফ তড়িঘড়ি করে লিফটে চড়লো।তার অপ্সরাকে যে থামাতে হবে!

——

-‘দুঃখিত ভাবী,বড়মার অনুমতি ব্যতিত এখানে প্রবেশ নিষেধ।বজলু দরজা লাগাও।’

শেষ কথাটি নওশিন ধমকের সুরে বললো।বজলু নামের লোকটি ইতিমধ্যে দরজা লাগিয়ে দিয়েছে।দরজা লাগানোর সাথে সাথে,সব চিৎকার যেন হওয়ায় মিলিয়ে গেছে।

চন্দ্ররেখার চোখ রক্তিম বর্ণ ধারণ করেছে।শাড়ির আঁচল মাটিতে গড়াগড়ি খাচ্ছে।মাথার হিজাব ইতিমধ্যে খুলে গেছে,চুলগুলো উড়ছে!সে স্পষ্ট চিৎকারের শব্দ পেয়েছে।একজন দুইজন না অনেকজনের চিৎকারের শব্দ!চন্দ্ররেখা লক্ষ্য করলো নওশিনের পরনে থাকা হোয়াইট পাফ স্লিভের টপসের এক কোনায় রক্ত লেগে আছে।সে কিছুটা নিশ্চিত হলো।শান্ত অথচ শক্ত গলায় বলল,

-‘আমাকে ভেতরে যেতে দিন।আপনার বড়মার সাথে দরকার হলে,আমি পরে কথা বলে নিবো।’

বেহুশ হয়ে পরে থাকা লোকটির ততক্ষণে জ্ঞান এসেছে পরেছে,সে উঠে দাঁড়াল!হেলেদুলে চন্দ্ররেখার দিকে এগিয়ে আসতে লাগলো।রেখা ঘুরে দাঁড়িয়ে থাকায় লোকটিকে দেখতে পেল না।বজলুর নজরে পরলো।সেই লোকটি থামানোর জন্য এগিয়ে গেল।এদিকে চন্দ্ররেখার গুপ্ত দরজাটি খোলার জন্য পাশের দেয়ালে হাত দিতে চাইলো।নওশিন খপ করে সেই হাত ধরে ফেললো। চন্দ্ররেখা ক্ষেপা বাঘিনীর ন্যায় নওশিনের হাত ঝাঁড়া দিয়ে ফেলে দিলো।

-‘হাউ ডেয়ার ইউ! আমার গায়ে হাত দেওয়ার সাহস কি করে হয় আপনার?আমাকে ভেতরে যেতে দিন,ভেতরে কি আছে আমি দেখতে চাই।’

একে তো রেখার জন্য তার সাথে শারাফের বিয়ে হয়নি,এখন আবার এসব!নওশিনের মেজাজ চটে গেল।চন্দ্ররেখা পুনরায় দেয়ালে হাত রাখতে গেলে,নওশিন তাকে শরীরের সমস্ত শক্তি দিয়ে ধাক্কা মারলো।তাল সামলাতে না পেরে চন্দ্ররেখা ছিঁটকে পরলো।আতর্নাদের শব্দ উপস্থিত সকলের কানে বেজে উঠলো।বজলুর শরীর কাঁপছে।জীবনে সে বহুত অন্যায় করেছে,কিন্তু কোনোদিন সে ভয় পায় নি আজ কেন জানি,তার খুব ভয় লাগছে।

মাটিতে পরে থাকা ভাঙা বোতলের এক কোণা রেখার কপালে গেঁথে গেছে।গলগল করে রক্ত ঝরছে।মূহুর্তেই শাড়ির সাদা পাড় লাল হয়ে উঠলো।টপটপ করে কিছু রক্ত মাটিতে পরছে।রেখা উঠে বসার চেষ্টা করলো।ব্যর্থ হলো।তার চোখের সামনে সব ঝাপসা হতে লাগলো।সংজ্ঞা হারানোর পূর্বে তার বাবার ও শারাফের মুখটি ভেসে উঠলো।

থমথমে অস্বস্তিকর নিশ্চুপতা।আচমকা কেউ নওশিনকে চড় মারলো।চড়ের তোড়ে নওশিন মাটিতে পরে গেলো।চোখ তুলে তাকাতেই তার অন্তর আত্মা কেঁপে উঠলো। সুধা মির্জা রক্তচক্ষু নিয়ে তাকিয়ে আছে।চোখ থেকে পানি ঝরছে।নওশিনের মনে হলো,এগুলো চোখের পানি,নয় হৃদয়ে ক্ষরিত হওয়া রক্ত।সুধা মির্জা চন্দ্ররেখার মাথার কাছে হাঁটু গেড়ে বসে পরলো।মাথাটা সযত্নে নিজের কোলের ওপর তুলে নিলো।চন্দ্ররেখার গালে চাদোঁয়া মহল পর্ব -১হাত দিয়ে বিকারগ্রস্তের ন্যায় আহাজারি করে ডাকতে লাগলো,

—-‘আম্মা,আম্মা!আমার মা!চোখ খোল সোনা মানিক আমার,কোথায় কষ্ট হচ্ছে?এই দেখ,মা এখানে।’

চলবে

আমি একটু ব্যস্ত তাই,এখন থেকে দুদিন পর পর গল্প দিবো।লেখায় কোথায়ও ভুল থাকলে ধরিয়ে দিবেন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here