#গল্পঃ_চুক্তির_বউ_যখন_প্রেগন্যান্ট_পর্ব_০৩
অজানা ভালোবাসার গল্প।
লেখকঃ আব্দুল্লাহ আল শাহ জালাল।
কিছুক্ষণ পরে নিজেকে সামলে নিয়ে রান্না ঘরের দিকে পা বাড়ালো। সকালের সব নাস্তা মেঘ নিজের হাতে রেডি করলো। তারপর আকাশের মায়ের রুমের কাছে গিয়ে দরজায় নক দিয়ে বলতে লাগলো…….
মেঘঃ-মা দরজাটা খুলবেন…??
আম্মুঃ-দাঁড়াও মা আসছি..??
উনি উইল চেয়ার ঠেলে দরজা খুলো দিলেন।। মেঘ কে দেখে উনি একেবারে অবাক হয়ে গেলেন। ঘরের লক্ষী
হাতে চায়ের কাপ, চুলে খোঁপা, শাড়ির আচল কোমরে গোঁজা। এরপর মেঘ বলে উঠলো…….
মেঘঃ-মা আপনার চা..??
আম্মুঃ-এত সকালে তুমি রান্না ঘরে গেলে কেনো মা। মিলি কোথায়.??
মেঘঃ-মিলি অন্য কাজ করছে তাই আমি রান্নাটা করে নিলাম.??
আম্মুঃ-ইশশ প্রথম দিনেই রান্না ঘরে কেনো গেলে মা।
মিলি করে দিতো.??
মেঘঃ-মা এতদিন সব কাজ মিলি করেছে,, আজ থেকে আমি করবো,আপনি কিন্তু আপত্তি করতে পারবেন না।
আর আপত্তি করলেও আমি শুনবো না। আমি কিন্তু
খুব বেয়াদব টাইপের মেয়ে কথা না শুনার অভ্যাস আছে আমার..??
আম্মুঃ-তোমার সাথে কথায় পারবো না মা। এখন দরজার সামনে দাঁড়িয়ে না থেকে ভিতরে আসো?
মেঘঃ-চা টা নিন আর কি খাবেন সেটা বলুন আমি রান্না করে নিয়ে আসছি??
আম্মুঃ-কিছু লাগবে না মা এতদিনে আমার ঘরে একটা লক্ষী এসেছে।। বাদর ছেলেটা এবার একটু হলেও ভালো থাকবে..??
মেঘঃ-কেনো মা উনি কি আগে ভালো থাকতেন না??
আম্মুঃ-না মা ঠিক তা নয়।। তুমি ওর স্ত্রী ওর সব কথা জানার অধিকার তোমার আছে। তবে সেটা আজকে
না অন্যদিন তোমাকে বলবো..??
মেঘঃ-মা আপনি কি কিছু লুকচ্ছেন আমার কাছ থেকে.??
আম্মুঃ-তোমার কাছ থেকে কোনো কিছু লুকানোর অধিকার আমার নেই মা। এখানে আসো বসো??
মেঘঃ-তাহলে এভাবে বলছেন কেনো মা। বলুন না মা কি হয়েছে আমি কি জানতে পারি না.??
আম্মুঃ-জানবে তবে সেটা আকাশের কাছ থেকে।।আমি যদি কিছু বলি তাহলে আকাশ কষ্ট পাবে। আমি চাই তুমি কথা গুলো আকাশের কাছ থেকে জানে। আর ওর ভিতরে একটা গিল্টিং ফিলিংস আছে যেটা তোমায়
দূর করতে হবে। বারবার নিজেকে দোষী ভাবছে..কিন্তু আমি তো মা আমি জানি আমার ছেলেটার কোনো অন্যায় নেই…ও অন্যায় করতে পারে না…??
মেঘঃ-আমি কি ভাবে জানবো মা…??
আম্মুঃ-বোকা মেয়ে তুমি ওর বিবাহিত স্ত্রী। এমন কিছু
ব্যাপার নেই যে আকাশ তোমার কাছ থেকে লুকাবে।
তবে কিছু একটা নিয়ে আকাশ খুব কষ্ট পাচ্ছে সেটা আজও আমার কাছে অজানা। শত চেষ্টা করেও
রহস্য জানতে পারছি না।। কিন্তু বুঝতে পারি আমার ছেলের কষ্ট..??
মেঘ কথা গুলো শুনতেছে,আর ভাবতেছে কি এমন কষ্ট উনার। যে তিলে তিলে ধ্বংস হয়ে যাচ্ছেন তিনি।
আমি কি পারবো সত্যি ঘটনা গুলো জানতে। নাকি আমাকে আবারো ব্যার্থ হতে হবে। কিছুক্ষণ পর আবার আম্মু বলে উঠলো……
আম্মুঃ-জানিস মা,আমি সব সময় একটা জিনিস ফলো করতাম। আকাশ রোজ রাতে একটা ডাইরীতে কি যেনো লিখে রাখে। কিন্তু এটা জানি আমার ছেলেটার মনে কি ঝড় বইছে। ও খুব কষ্ট পাচ্ছে। পারবি না ওকে তোর ভালোবাসা দিয়ে সুন্দর একটা জীবন গড়ে দিতে?
কি করবো মা….আমি যে একটা চুক্তির ভিতরে আটকে আছি। যেটা ১ বছর পর শেষ হয়ে যাবে। তারপর তো দুজনে দুই দিকে ছিটকে পড়বো…
এক বছরে কি ভাবে পারবো আমি উনার কষ্ট গুলো দুর করতে। জানিনা কি আছে উনার মনে। তবে যাই থাকুক না কেনো সেটা আমাকে জানতেই হবে….?[মনে মনে ভাবলো কথা গুলো] এরপর আম্মু বলে উঠলো……
আম্মুঃ-কিরে মা রাখবি না আমার এই অনুরোধ..??
মেঘঃ-ছিঃ ছিঃ মা আপনি এভাবে বলবেন না।আমি অবশ্যই চেষ্টা করবো উনার কষ্ট গুলো দুর করার?
আম্মুঃ-যা গিয়ে দেখ আকাশের কি লাগে। আমি একটু রান্না ঘরে গিয়ে দেখছি মিলি কি করে.??
মেঘঃ-মা আপনি বিশ্রাম নিন,তাছাড়া আমি তো আছি। আমি থাকতে আপনি রান্না ঘরে যাবেন সেটা কি হয় বলেন তো..??
আম্মুঃ-ঠিক আছে রান্না ঘরে যাবো না আমাকে একটু সোফার কাছে নিয়ে চল মা…একটু বসবো??
মেঘঃ-ঠিক আছে আসুন…??
এরপর মেঘ উইল চেয়ার ঠেলে উনাকে নিয়ে সোফায় বসিয়ে দিলো। তারপর নিজের রুমে গিয়ে দেখলো আকাশ চেয়ারে নেই। ওয়াশ রুম থেকে টেপ এর আওয়াজ আসতেছে…. তারমানে উনি ওয়াশ রুমে।
মেঘ অঘোচালো রুমটা ঠিকঠাক করে নিচে চলে যায়।
তারপর সব নাস্তা রেডি করে সবাইকে খাবার দিলো।
সকালের নাস্তা শেষ করে আকাশ রেডি হয় অফিসে যাবে বলে।। ঠিক সেই সময় মেঘ রুমে ডুকতে ডুকতে বললো……
মেঘঃ-একি আপনি রেডি..অনেক দেরি হয়ে গেলো তাইনা। ইশশ কখন অফিসে যাবো…??
আকাশঃ-কোথায় যাবে..??
মেঘঃ-কিনো অফিসে যাবো আজকে না একটা মিটিং আছে অফিসে….??
আকাশঃ-হুমম তো কি হয়েছে..??
মেঘঃ-কি হয়েছে মানে অফিসে যাবো রেডি হতে
হবে না…??
আকাশঃ-তুমি কোথাও যাচ্ছো না…??
মেঘঃ-মানে কি…..??
আকাশঃ-মানে খুব সহজ.. তুমি অফিসে যাচ্ছো না।
আমি একাই যাচ্ছি…??
মেঘঃ-কিন্তু কেনো…??
আকাশঃ-তোমার পোস্টে আজ থেকে অন্য একজন জয়িন করবে….??
মেঘঃ-মানে কি আমার জব….??
আকাশঃ-নেই…??
মেঘঃ-what…??
আকাশঃ-কি হলোটা কি তোমার..??
মেঘ এবার কান্না জড়িত কন্ঠে বলতে লাগলো……..
মেঘঃ-এখন আমি কি করবো মায়ের ট্রিটমেন্টের এত টাকা কোথায় পাবো। কি ভাবে মায়ের ঔষধের টাকা জোগাড় করবো। কি ভাবে মাকে বাসায় নিয়ে যাবো।তাছাড়া বাড়িওয়ালার অনেক দেনা বাকি। এখন কি করবো আমি…সবটা কি ভাবে ম্যানেজ করবো..??
আকাশঃ-মেঘ হয়েছে কান্না করছো কেনো…??
মেঘঃ-আমার চাকরি টা কেনো কেড়ে নিলেন
জানতে পারি…??
আকাশঃ-তোমার চাকরির কি দরকার।। ঘরের বউ হয়ে অফিসে কাজ করবে এটা আমার কাছে বড্ড বেমানান তাইনা..??
মেঘঃ-ওহহ ভালো ঘরের বউ হয়ে মায়ের দায়িত্ব থেকে বঞ্চিত হলাম….??
আকাশঃ-মানে কি বলছো…??
মেঘঃ-কিছু না আপনি যান আপনার দেরি হয়ে যাচ্ছে। তাছাড়া আজ তো জরুরী মিটিং আছে…??
আকাশঃ-মিটিং কেন্সেল করে দিয়েছি….??
মেঘঃ-কেনো….??
আকাশঃ-অন্য একটা কাজ আছে…??
মেঘঃ-ওহহ তাহলে তাড়াতাড়ি যান দেরি হয়ে যাবে আবার…??
আকাশঃ-তুমি রেডি হও এক সাথে বের হবো দুজনে..?
মেঘঃ-কেনো? আর আমি কোথাও যাবো না…??
আকাশঃ-এতো প্রশ্ন করার অধিকার আমি তোমাকে দেইনি। তুমি আমার স্ত্রী তাই আমি যা বলবো তাই তোমাকে করতে হবে। যাও গিয়ে রেডি হয়ে
আসো….??[ধমক দিয়ে]
মেঘঃ-আমি তো ভুলেই গিয়েছিলাম..আমি আপনার #চুক্তির_বউ_ >>সুতারং আপনি যা বলবেন তাই
করতে হবে আমাকে।। সেই অধিকার থেকে একটা
কথা জানতে চাইবো বলবেন.??
আকাশঃ-কি জানতে চাও বলো…??
মেঘঃ-আপনি তো একজনকে ভালোবাসেন তাহলে আমাকে বিয়ে করলেন কেনো?তাও আবার একটা এগ্রিমেন্ট পেপারে সই করিয়ে। আমি কি খুব বড়
ক্ষতি করেছি আপনার। যার জন্য এত বড় শাস্তি
দিলেন আমায়??
আকাশ চুপ করে অবাক দৃষ্টি নিয়ে এক নজরে মেঘের দিকে তাকিয়ে রইলো। এক মুহুর্তের জন্য আকাশের চোখের পলক পড়েনি। মেঘের কন্ঠ গুলো এতটাই মায়াবী যা প্রকাশ করা অসম্ভব…….মেঘ আবার বলে উঠলো……
যারা কষ্ট করে গল্প পড়ে লাইক, কমেন্ট করে উৎসাহিত করেন তাদের প্রতি অন্তরের অন্তস্তল থেকে ভালোবাসা রইলো😍😍ভালো রিসপেন্স ফেলে পরের পর্ব আগামী
কালকে পাবেন ইনশাআল্লাহ।।
গল্পের মাঝে বিরক্ত করার জন্য আমি দুঃখীত। ইতিঃ আব্দুল্লাহ আল শাহজালাল।
মেঘঃ-বলতে পারেন আজ অব্দি কোন কথাটা শুনিনি আপনার। অফিসের সব কাজ সব সময় ঠিক করে দিয়ে নিজের মাকে নিয়ে যে দুনিয়া টা ছিলো এখন
তো সেটাও শেষ হয়ে গেলো। কেনো করলেন এমনটা আমার সাথে…??
আকাশঃ-আমি তোমার সব কথার জবাব দিতে বাধ্য নই। একটা কথা ভালো করে শুনে রাখো আকাশ আহমেদ আজ অব্দি যা চেয়েছে তার মা বাবা তাকে সেটাই এনে দিয়েছে। আর আজ তার মায়ের চাওয়ার কোনো গুরুত্ব দিবে না এটা তো হতে পারে না।
|||
আমি আমার মামনি কে সুখী দেখতে চাই…? আমার মামনি আমার সব চাওয়া পুরন করেছে। তাই আমি আমার মামনিকে একটু হলেও ফিরিয়ে দিতে চাই।
আর হ্যা আজ থেকে আমি ততটুকু জানার অধিকার দিবো ততটুকু জানবে। একদম বেশি জানার চেষ্টা করবে না..??
মেঘঃ-আপনি কেনো অামার সাথে এমন করছেন যেটা জানতে চাইলাম সেটার উত্তর দিন না প্লিজ। কেনো আমার জীবন টা নিয়ে খেলতেছেন, কি অধিকারে..??
|||
অন্যায় আপনি করেছেন, আর অপরাধী অমি বাহ মিঃ আকাশ আহমেদ বাহ কি সুন্দর কথা বললেন আপনি।
যাইহোক আমি একাই যেতে পারবো,,আপনাকে আর
আমার জন্য কষ্ট করতে হবে না। আপনি অফিসে যান…??
আকাশঃ-চুপচাপ গিয়ে রেডি হয়ে আসো মাকে দেখতে যাবো। তারপর তোমাকে নামিয়ে দিয়ে আমি আবার অফিসে যেতে হবে.??
আকাশ আর কোনো কথা বলার সুযোগ না দিয়ে রুম থেকে বাহিরে চলে গেলো। মেঘ রেডি হয়ে নিচে নেমে কোনো কথা না বলে সোজা গাড়িতে গিয়ে বসলো।
আকাশ ড্রাইভ করছে। মেঘ বারবার আকাশের দিকে তাকায়। আকাশ একটা কথাও বললো না শুধু ড্রাইভ করছে।
আকাশের চোখে জলের চিহ্ন স্পষ্ট বুঝা যাচ্ছে। দু চোখ নোনা জলে টলমল করছে যা বুঝতে বাকি রইলো না মেঘের।
আকাশের এমন অবস্থা দেখে মেঘ ভাবতে থাকে…..কি এমন কষ্ট উনার। যার জন্য উনি এখনো এতো কষ্ট পান। আমার সাথেই বা এমন এগ্রিমেন্ট কেনো করলো। কি ভাবে জানবো আমি,, কি ভাবে বুঝবো আমি সকল সত্য ঘটনা….
কি এমন গোপন তথ্য লুকিয়ে আছে যার জন্য আমাকে উনার #চুক্তির_বউ হতে হয়েছে।এত কিসের কষ্ট উনার সব কিছু জানতে হবে আমাকে সব জানতে হবে?
যেই ভাবেই হোক মায়ের কথা আমাকে রাখতেই হবে।।আমি মাকে কথা দিয়েছি উনার সব কষ্ট দূর করে উনার মুখে হাসিটা আবার ফিরিয়ে আনবো…আমাকে যে পারতেই হবে পারতেই হবে আমাকে। শত হলেও আমি উনার এগ্রিমেন্ট করা বউ। আর ১ বছর তো অনেক সময়। এই একটা বছর আমাকে কাজে লাগাতেই হবে।
পর্ব০৪ এর লিংক 👇
https://m.facebook.com/story.php?story_fbid=134813905064990&id=111134014099646
হসপিটালের সামনে এসে আকাশ গাড়ি ব্রেক করতেই
মেঘ ধাক্কা খায়। সাথে সাথে মেঘের ঘোর কাটে। গাড়ি ব্রেক করে আকাশ বললো…….
আকাশঃ-নামো..?
মেঘঃ-আপনি ভিতরে যাবেন না…?
আকাশঃ-না আমার অফিসে কাজ আছে।তুমি অপেক্ষা করো আমি বিকেলে এসে তোমাকে নিয়ে যাবো..?
মেঘঃ-আপনি না বললেন মিটিং কেন্সেল করেছেন..?
আকাশঃ-হ্যা করেছি…?
মেঘঃ-তাহলে কিসের কাজ অফিসে..?
আকাশঃ-নতুন যে আসবে তাকে সব বুঝিয়ে দিতে হবে..?
মেঘঃ-সেটা তো ম্যানেজার কে বলে দিলে হয়। আপনার যাওয়ার কি দরকার…?
আকাশঃ-জয়িন যে করবে সে একজন মেয়ে আর আমার খুব কাছের কেউ…??
আকাশের এমন কথায় আকাশ একটু কষ্ট পেলেও পরে আবার নিজেকে সামলে নিয়ে জিজ্ঞেস করলো…………
মেঘঃ-স্পেশাল কেউ হয়..??
আকাশঃ-হুমম স্পেশাল..??
মেঘ এবার আর কিছু না বলে গাড়ি থেকে নেমে গেলো।
একটি বারের জন্য পিছনে পিরে তাকায়নি। একরকম দৌড় দিয়ে হসপিটালের ভিতর চলে যায়।আকাশ গাড়ি স্টার্ড দিয়ে অফিসে চলে গেলো। মেঘ সারাদিন তার মায়ের সেবা যত্ন করেছে।। মায়ের সাথে অনেক আড্ডা দিলো। এক সময় মেঘের মা বলে উঠলো……
চলবে কি….??