ছন্দহীন পদ্য পর্ব -০১ |সকল পর্বের লিংক

বয়সে ছোট্ট একটা ছেলের প্রেমে পড়েছে পদ্য। যে কি-না তাকে ছোটবেলা থেকেই আপু বলে ডাকে। বয়সের ব্যবধান প্রায় সাড়ে তিন বছর। এই অসমবয়সি প্রণয়ের পরিণতি সম্পর্কে পদ্য অবগত। প্রায়ই নিজের সামাজিক প্রেক্ষাপটে ব্যাপারটা দাঁড় করিয়ে ভয়ে গা শিউরে উঠে ওর। মাঝে মাঝে লজ্জা হয়, হীনম্মন্যতায়ও ভুগে। আবার কখনও মনে হয় এটা হবারই ছিল। অন্যকেউ হলেও হতো। অনিকের মতো ছেলের প্রেমে পড়ার থেকে স্বাভাবিক ঘটনা এই পৃথিবীতে আর দ্বিতীয়টি নেই। সবই নিজের সঙ্গে নিজের যুক্তি-তর্ক। আপন মনের সঙ্গে দ্বন্দ্ব। অন্য কাউকেই এসব বলা হয় না। এইতো খানিক আগে পদ্য স্কুলে যাওয়ার জন্য রেডি হচ্ছিল। ফুলহাতা কালো ব্লাউজের সঙ্গে শাড়ি পরে আয়নার সামনে দাঁড়িয়েছে চোখে খানিক কাজল লাগাবে। তখনই মনিরা বেগম এসে হাত ধরে টেনে বিছানায় বসালেন, তারপর কাতর গলায় বললেন, ‘মা’রে আর কত? কেন তুই এমন করিস বল আমারে? বিয়ে না করার কারণটা কি বল? তোর বয়সি সকল মেয়ে বিয়ে করে বাচ্চা-কাচ্চার মা হয়ে যাচ্ছে আর তুই..।’

পদ্য মা’কে থামিয়ে দিয়ে বললো, ‘সকালবেলাই শুরু করলে আম্মা? আমার স্কুলের দেরি হয়ে যাচ্ছে, এখন যাচ্ছি’ বলেই সে বেরিয়ে পড়ে। মা-বাবার দুশ্চিন্তা দিনকে দিন বাড়ছে। পদ্যের বয়সও দ্রুত ভদ্রসীমা ছাড়িয়ে যাচ্ছে। বয়সের বড়ো তাড়া। সে কেবল বিরামহীন ছুটছেই।
পদ্য উঠোন পেরিয়ে রাস্তায় এসে নীল ছাতা টাঙিয়ে পিছু ফিরে ডান পাশের লাল-সাদা বাড়িটির দিকে তাকায়। বুকটা কেমন ‘চনচন’ করে উঠে। অনিকদের বাড়ি। বাড়িটিকে কেমন নিষ্প্রাণ লাগে এখন। দোতলার দক্ষিণের এই ঘরটায় থাকতো ছেলেটা। খোলা জানালায় সারাক্ষণ বেগুনি রঙের পর্দা ঝুলতে দেখা যেত। রুমে একটুও আলো সহ্য করতে পারতো না সে। এখন পারে কি-না কে জানে। বয়সের সঙ্গে সঙ্গে কত অভ্যাস বদলে যায় মানুষের।
তাদের হাফওয়াল টিনের ঘরের পাশে এই উঁচু দালানটি না উঠলে হয়তো পদ্যের জীবনটা আজ এমন হতো না। স্পষ্ট মনে আছে ওর। তখন দুই হাজার সাল। বাবা মতিন মাস্টার পাশের জমি বিক্রি করবেন। অনিকের দাদা আজিজুল চৌধুরী কিনে নিলেন। তার কিছুদিন পরই পদ্যদের বাড়ির হাফওয়াল টিনের ঘরের পাশে গজিয়ে উঠতে শুরু করে এই দালানটি। ক্রমশই সেটা পরিপূর্ণ হয়। তখন দেখে মনে হতো বাড়িটি যেন তাদের বাড়িকে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করছে। কিন্তু বাড়ির মানুষেরা যখন বসবাস করতে শুরু করে। তখনই পালটে যায় চিত্র। দুই পরিবারের মানুষের মধ্যে সুন্দর সম্পর্ক গড়ে উঠে। যেন দু’টা বাড়িতে একই পরিবার। পদ্য তখন ক্লাস থ্রিতে পড়ে। অনিক ওয়ান। মিষ্টি একটা ছেলে। গোলগাল চেহারা। মাথাভর্তি চুল। ভাসা ভাসা চোখ। ঘন-কালো ভুরু। প্রাণচঞ্চল তবু প্রায়ই বিষণ্ণ দেখায় তাকে। পদ্য একটা খেলার সাথি পেয়ে যায়। তখনও ছোটবোন মনিসার জন্ম হয়নি। একা একটা বাড়িতে সে নিঃসঙ্গ বাচ্চা মেয়ে। তাকে সঙ্গ দিতেই যেন অনিকের আবির্ভাব হয়েছিল। পিছু থেকে ডাক দিল মনিসা, ‘পদ্য আপু দাঁড়াও।’
স্মৃতি রোমন্থন করতে করতে বিলের পাড়ে চলে এসেছে। মনিসার ডাক শুনে পদ্য দাঁড়ায়। স্কুল ড্রেস পরনে ওর। দুইহাতে বই বুকে চেপে ধরে আসছে। ওর এই এক স্বভাব। স্কুলব্যাগ কাঁধে নিতেই চায় না। কাছাকাছি এসে বললো,
– ‘আমি কি স্কুলে যাব না। আমাকে ফেলে চলে যাচ্ছ যে?’

– ‘কেন তুই কি আমার স্কুলে যাবি? তুই তোর স্কুলে যাচ্ছিস আমাকে দিয়ে কি হবে?’

– ‘তবুও ডাকবে না আমায়?’

– ‘ঘুম থেকেই তো উঠেছিস মনে হয় নয়টায়। তোর স্কুলের টান আছে বুঝি! আমি তো ভেবেছি যাবিই না।’

– ‘অকারণ বকবে না তো আপু। আমি তোমার স্কুলের ছাত্রী না এখন আর।’

পদ্য হেঁসে ফেললো। তারপর ওর দিকে তাকিয়ে বললো, ‘আমি শুধু বকি তাই না? তুই বকার মতো কাজ করিস কেন?’

– ‘কি করেছি?’

– ‘এই যে ঘুম থেকে উঠেছিস নয়টায়।’

– ‘দেরিতে ঘুমিয়েছি তাই।’

– ‘দেরিতেই বা ঘুমাবি কেন? রাতে কি চু*রি করতে গিয়েছিলি?’

মনিসা ফিক করে হেঁসে বললো, ‘সত্যি কথা বলবো?’

– ‘বল, মিথ্যে বলবি কেন?’

– ‘তুমি ঘুমানোর পর তোমার মোবাইল দিয়ে ইউটিউবে ঢুকেছিলাম।’

– ‘কি! তুই ফোনের প্যাটার্ন জানলি কিভাবে?’

– ‘জানি আমি।’

হাত বাড়িয়ে কান টেনে ধরে বললো,

– ‘কি সাহস! আবার আমাকে বলছিস।’

– ‘আপু ছাড়ো, কেউ দেখে ফেলবে। এত বড়ো মেয়েকে কেউ রাস্তা-ঘাটে কান মলে দেয় না-কি?’

– ‘তুই বড়ো হয়ে গেছিস?’

– ‘তা নয় তো কি? সিক্সে পড়ি। খেয়া পেরিয়ে অনেক দূরে স্কুলে যাই।’

– ‘ও আচ্ছা, বুঝলাম, তা ইউটিউবে কি দেখেছিস?’

– ‘তোমার গল্প পাঠ শুনেছি।’

পদ্যের বুকটা “ধক” করে উঠে। নিজেকে সামলে নিয়ে বলে, ‘কেন? হঠাৎ করে কেন শোনার ইচ্ছা হলো?’

– ‘কাল সন্ধ্যায় অনিক ভাইয়ের আম্মুর কাছে কত গল্প শুনেছি। ইস তোমাদের ছোটবেলা কত সুন্দর ছিল। তুমি আর অনিক ভাই না-কি সারাক্ষণ এক সঙ্গে থাকতে?’

– ‘হ্যাঁ।’

– ‘আচ্ছা আপু অনিক ভাই বাড়িতে আসে না কেন?’

দীর্ঘশ্বাস গোপন করে পদ্য। কেন আসে না তার অজানা নয়। কোনো কিছুই ভোলেনি পদ্য। সবকিছুই পরিষ্কার মনে আছে। এই স্মৃতিগুলোতে কখনও ধুলো জমে না। বোনকে ধমক দিয়ে বললো,

– ‘তা দিয়ে তোর কি? চুপ থাক। সারাক্ষণ শুধু বকবক। ওই দেখ খেয়া ছেড়ে দিবে, তাড়াতাড়ি যা।’

– ‘ওমা খেয়া ঘাটে দেখি কেউ নাই। মিনা, অহনা ওরা যাবে না না-কি আজ।’

– ‘ওরা হয়তো চলে গেছে। তোর মতো রাতে ইউটিউব দেখে না।’

– ‘অকারণ শুধু ধমকাবে না তো আপু। শিক্ষিকা হলে মনে হয় এই এক বদ অভ্যাস হয়। মানুষকে সুযোগ পেলেই শাসন। পারলে এখানে থাকো। ওদের জন্য অপেক্ষা করবো আমি।’

– ‘আমি তোর সঙ্গে থেকে কি করবো?’

– ‘আমি শিওর ওরা এখনো যায়নি। আমি ওদের অপেক্ষা করবো, তুমি থাকো।’

– ‘এই রোদের মধ্যে অপেক্ষা করবি?’

‘চলো ওই তাল গাছের ছায়ায় গিয়ে দাঁড়াই’ বলে মনিসা দুইহাতে বই বুকে চেপে রেখে বেণি দুলাতে দুলাতে দৌড়ে সেদিকে যায়।
পদ্য দাঁত কটমট করে তাকিয়ে বললো, ‘তোর জানটায় কি শান্তি নাইরে মনিসা? দৌড়ে রাস্তার ধূলাবালি উড়াচ্ছিস কেন!’

মনিসা ততক্ষণে তাল গাছের নিচে চলে গেল। ছায়ার ছিটেফোঁটা নেই। তবুও গাছের নিচে আশ্রয় নেয়া। পদ্য পাশে যেতেই বললো, ‘আচ্ছা আপু খেয়াঘাট এতদূরে কেন? ওইদিকে দিলে কি হতো।’

– ‘তখন ওইদিকে তোর মতো কোনো রাজরাণী ছিল না তাই৷ এখন হলে তোর সুবিধার জন্য খাল কেটে গিয়ে আমাদের উঠানে খেয়া নিয়ে বসে থাকতো।’

– ‘ধ্যাৎ, তুমি কি সোজা কোনো কথাই বলতে পারো না?’

পদ্য কোনো জবাব না দিয়ে ভ্যানিটিব্যাগ থেকে মোবাইল বের করে সময় দেখে। নয়টা পয়তাল্লিশ। মনিসা পুনরায় বললো,

– ‘আপু তুমি না-কি আগে অনেক ভালো ছিলে।’

– ‘আমি কি এখন খারাপ?’

– ‘তা না, আগে না-কি সবাই তোমাকে অনেক পছন্দ করতো..।’

– ‘এখন কি অপছন্দ করে?’

– ‘আগে তো শুনবে আমার কথা। অনিক ভাইয়ের আম্মু বলছে আগে আব্বার কাছে সবাই পড়তে এলে তুমি পড়াতে। আর ছোট ছোট বাচ্চাদের অনেক আদর করতে। কাউকে তুই করেও বলতে না। সকল বাচ্চারা তোমার জন্য পাগল ছিল। এখন তো তুমি সারাক্ষণ মেজাজ খিটখিটে করে রাখো।’

– ‘তোর কি কোনো কাজ নাই ওদের বাড়ি গিয়ে শুধু আজাইরা গল্প শুনিস।’

– ‘আপু ওই দেখো ওরা আসছে। বলছিলাম না যায়নি। আমার কথাই ঠিক হলো।’

পদ্য দাঁত কটমট করে দাঁড়িয়ে আছে। ওরা হাসিহাসি মুখে এগিয়ে এসে সালাম দিয়ে তাড়াতাড়ি চলে যাচ্ছিল৷ পদ্য দাঁড় করিয়ে বললো, ‘এই তোমরা এত দেরিতে বের হও কেন? আর রকিব তোর স্কুল ড্রেস কি বাড়িতে কেউ ধুয়ে দেয় না?’

– ‘শুক্রবারে ধুয়ে দেয় ম্যাডাম।’

– ‘শুক্রবার ছাড়াও ধুয়ে দিলে শুকাবে। আর আরও আগে বের হলে কি হয়।’

সবাই মাথা নীচু করে দাঁড়িয়ে আছে। পদ্য আবার ফোনে টাইম দেখে বললো, ‘যাও, তাড়াতাড়ি।’

সবাই ধুলো উড়িয়ে চলে গেল খেয়া ঘাটের দিকে। পদ্য তাল গাছের নিচ থেকে এসে রাস্তায় উঠে। আকাশের দিকে তাকায়। এই সময়টায় আকাশ তার স্বকীয়তা ফিরে পায়। মেঘ থাকে না৷ ফলে ঝকঝকে নীল আকাশ দেখা যায়। একটা চিল ডানা না ঝাপটে চক্রাকারে ঘুরছে। কি আশ্চর্য! চিল যে দীর্ঘ সময় এভাবে ঘুরতে পারে তা কখনও খেয়াল করে দেখেনি পদ্য। রোদের জন্য আকাশের দিকে বেশিক্ষণ তাকিয়ে থাকা গেল না। একা একা হাঁটতে শুরু করলো। যেদিকে তাকায়। চারদিকে কেবল স্মৃতি। কত-শত স্মৃতি। যেদিকে তাকায় অনিককেই যেন দেখতে পায়। এই পথ ধরেই তো তারা রোজ স্কুলে যেত। প্রাইমারি শেষ করে। এই খেয়া পাড় হয়েই তো তারা এক সঙ্গে হাইস্কুলে যেত। পদ্যের চোখ ছলছল করে উঠে। ভাবনায় ডুবেই হাঁটছিল। খানিকদূর যেতেই একটা বাইক এসে সামনে থামে। পদ্য চারদিকে তাকায়। আশেপাশে কেউ নেই। ডান পাশে বিল, বাঁ পাশে সবুজ ধানক্ষেত। চেয়ারম্যানের ছেলে লিটন তার বাইকের পেছনে বসা ছেলেটিকে বললো, ‘শা*লা তুই নাম। ম্যাডামরে আগে স্কুলে দিয়া আসি।’

পদ্য তাদের দিকে না তাকিয়ে পাশ কাটিয়ে চলে যাচ্ছিল। লিটন এগিয়ে এলো। কুচকুচে কালো চেহারা, খাটো টাইট গেঞ্জিকে ঠেলে পেট গোল হয়ে সামনের দিকে ঝুলে আছে, গলায় আর হাতে মোটা চেইন। কপালে সানগ্লাস। রক্তের মতো লাল টকটকে সুপারির পিক রাস্তায় ফেলে সে বললো, ‘আরে চলে যাচ্ছ কেন, চলো বাইকে করে দিয়া আসি।’

– ‘লাগবে না আমি হেঁটে হেঁটেই যেতে পারব।’

– ‘তা তো পারবাই৷ তাও দিয়া আসি। আমরা কিন্তু ক্লাসমেট আছিলাম পইদ্য। এইটা তুমি ভুইলা যাইতাছো।’

– ‘ভুলিনি লিটন। তুমি ক্লাস ফাইভে ফেইল করে পড়ালেখা ছেড়ে দিয়েছিলে। তাই ক্লাসমেট হিসাবে একটা কথা বলি?’

– ‘তা কইবাই তো। একটা কথা কেন, হাজারটা কও। বন্ধু-বান্ধবরেই তো কইবা।’

– ‘কথাটা হলো তুমি আমাকে অকারণ রোজ রোজ বিরক্ত করো না। আমি স্কুলে যাব আমার মতো।’

– ‘কি যে কও পইদ্য। আমি বিরক্ত করি তোমারে? এইটা কি কইলা! রাস্তাঘাটে দেখা হইলে মাইনষে ভালোমন্দ কথা কয় না?’

– ‘আমি বলতে আগ্রহী নই। রাস্তা ছাড়ো আমার স্কুলের সময় হয়ে গেছে।’

– ‘আচ্ছা তোমার নাম্বারটা দিয়া যাও।’

– ‘নাম্বার দিয়ে কি কাজ?’

– ‘তুমি কি বুঝো না এইগুলা? নাম্বার দিয়া ইয়াং পোলা-মাইয়ারা কি করে? না-কি তোমার কথা কওনের মানুষ আছে আরো।’

– ‘আমার কথা বলার মানুষ নেই। বলারও ইচ্ছা নেই। পথটা ছাড়ো। আমি এখন যাব।’

– ‘ইচ্ছা নাই এইটা আবার কেমন কথা। চোখের সামনে ভরা নদী শুকিয়ে যাইতেছে আমার আফসোস লাগে পইদ্য।’

‘বাজে কথা বলবে না লিটন। আমি শেষে তোমার বাবার কাছে নালিশ দিতে বাধ্য হবো’ কথাটা বলে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে পদ্য হাঁটতে শুরু করে।

বাইকে বসা ছেলেটি বললো, ‘এতদিন শুইনা আইলাম, ছোট মরিচে ঝাল বেশি, এখন দেখি বুইড়া মরিচেও আছে।’

পদ্য পিছু ফিরে বললো, ‘লিটন এগুলো কিন্তু বেশি বাড়াবাড়ি হচ্ছে।’

লিটন বাইকের বসা ছেলেটিকে ধমক দেয়, ‘এই শা*লা তুই বেশি কথা বলিস কেন? পইদ্য তোর বয়সে বড়ো হইব বেয়াদব কোথাকার’ তারপর আবার পদ্যের দিকে ফিরে বললো, ‘তুমিও না পইদ্য, আল্লাহ তায়ালা রূপ যৌবন দিছে এইগুলা এভাবে নষ্ট করার লাইগা না। কারো হাতে তুলে দিতে হয়। আজকের সুন্দর ফুল দুইদিন পর এমনিতেই শুকাইয়া যায়, ঝইড়া পড়ে। সময় থাকতে কাজে লাগাইতে হয়। আমাদের সেম বয়সই তো। তুমি ব্যাপারটা বুঝতেই চাও না পইদ্য।’

‘তোমার এত জ্ঞান দিতে হবে না লিটন। তুমি আমার অভিভাবক না। আমার বিষয় আমি ভালোই বুঝি। আমার যৌবন শুকিয়ে গেলে, ফুরিয়ে গেলে আমার যাবে।’

– ‘তো ব্যাপারটা বেহুদা নষ্ট হইল না? যৌবন উপভোগ করো।’

– ‘আমার উপভোগ করার ইচ্ছা নাই, এখানে তুমি কথা বলার কে?’

বাইক থেকে ছেলেটি আবার বললো, ‘উপভোগ না করলে দান কইরা দেন।’

লিটন হাসতে হাসতে বললো, ‘এইবার কিন্তু সে ভালো কথা কইছে পইদ্য। আল্লাহর দেওয়া মূল্যবান যৌবন বেহুদা নষ্ট করার থাইকা দান কইরা দাও।’

পদ্যের রাগে ঠোঁট কাপছে। কথা বাড়ানোটাই বোকামি হয়েছে। আবার হাঁটতে শুরু করে সে। রাগে গজগজ করে মাথা নিচের দিকে দিয়ে হাঁটছে। মিনিট দুয়েক হাঁটার পর বাঁ দিকের রাস্তা থেকে কেউ ডাকলো, ‘আরে পদ্য না, দাঁড়া।’

পদ্য ঘাড় ঘুরিয়ে তাকিয়ে বললো, ‘আরে ফারজানা, কি খবর তোর। কতদিন পর দেখলাম তোকে।’

ফারজানা এগিয়ে এসে জড়িয়ে ধরে বললো, ‘কিরে স্কুলে যাচ্ছিস না-কি? কিছু না বলে পাশ দিয়ে চলে যাচ্ছিলি।’

– ‘দেখিনি তোকে। কোথায় যাচ্ছিস?’

– ‘বেড়াতে এসেছিলাম। ননদ আসছে, তাই চলে যাচ্ছি।’

– ‘ওরা তোর বাচ্চা না-কি?’

– ‘হ্যাঁ তিনটা বাচ্চা, এই যে বড়ো মেয়ে। সে এবার টু’তে উঠবে।’

মেয়েটি সালাম দেয়, ‘আসসালামু আলাইকুম আন্টি।’

মুচকি হেঁসে পদ্য সালামের জবাব দিয়ে বললো, ‘ভালো আছো তোমরা?’

ভালো আছে জানায়। পদ্য ফারজানাকে বললো, ‘দুলাভাই সঙ্গে নেই?’

– ‘সে সিএনজি স্টেশনে আছে। এখানে এলে দেরি হয়ে যাবে তো তাই। আচ্ছা তুই বিয়ে-শাদি করিসনি না-কি শুনলাম…।’

– ‘হ্যাঁ করিনি, আচ্ছা যাইরে স্কুলের দেরি হয়ে যাচ্ছে আমার।’

– ‘একি এতদিন পরে দেখা..।’

– ‘তো এখন কি করবি?’

– ‘দে তোর নাম্বার দিয়ে যা। একসাথে পড়েছি৷ কত কথা মনে হয়রে পদ্য।’

পদ্য নাম্বার দিয়ে আবার হাঁটতে শুরু করে। ক্লান্ত লাগছে ভীষণ। স্কুলে যাওয়ার জন্য সামনে দু’টা পথ আছে। সে মূল রাস্তা ছেড়ে শিমুল গাছের নিচ দিয়ে মাঠের দিকে নেমে গেল।
.
কলিংবেল বাজছে। অফিস থেকে এসে অলস শরীরে বিছানায় শুয়ে টিভি দেখছে আফরা। ইভা বালিশ কোলে নিয়ে তার পাশেই বসা। দু’জন মুখ চাওয়া-চাওয়ি করার পর আফরা হাই তুলে বললো, ‘অনিক এসেছে মনে হয়, দরজাটা খুলে দিয়ে আয়।’

– ‘তুমি যাও, তোমার দেবর আমাকে হয়তো চিনেই না, আমি খুলে দেবো কেন।’

– ‘যা না বইন, আমার শরীর নড়াতে ইচ্ছা করছে না।’

– ‘বাইরে থাকুক, একটু রাগাই, তালতো ভাইই তো।।’

– ‘তোর দুলাভাইও হতে পারে।’

– ‘সমস্যা নেই, তালতো ভাই আর দুলাভাই। দু’জনকেই জ্বালানোর অধিকার আমার আছে।’

আফরা ধাক্কা দিয়ে বললো, ‘যা প্লিজ, বকবে শেষে।’

ইভা যাওয়ার সময় বিছানা থেকে নেমে ওর নিতম্বে চিমটি দিয়ে বললো, ‘আমাকে চিনবেই না, পাঠিয়ে দিচ্ছে দরজা খুলে দিতে।’

– ‘তোর কত ঢং, দরজা খুলতে হলে চেনা-অচেনার কি আছে।’

ইভা ওড়না ঠিক করতে করতে এসে দরজা খুলে দিতেই কেউ খানিকটা এগিয়ে এলো শুধু। তারপর হুড়মুড় করে নাকে-মুখে এসে ধোঁয়া ঢুকলো, কাশতে কাশতে চোখ বন্ধ হয়ে গেল ইভার।
____চলবে….
ছন্দহীন পদ্য
লেখা: জবরুল ইসলাম

বি:দ্র: যারা গল্প পড়ছেন, চেষ্টা করবেন প্রতিটি পর্বে কমেন্ট করার।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here