যেখানে পথচলা শুরু পর্ব -০৬

#যেখানে_পথচলা_শুরু |০৬|
#সাদিয়া_মেহরুজ

রাত বাড়ছে। ঘড়িতে আটটা বেজে ত্রিশ মিনিট হলো কেবলমাত্র। ব্যাকুল তীরু ঘড়ি থেকে চোখ তুললো। তার চিন্তা এখন রাত বাড়া নিয়ে নয়। এই বাড়িটায় থাকতে তার ভাল লাগছে। বাসাটাকে বড্ড কাছের মনে হচ্ছে। আর এ বাড়ির মানুষ গুলো? যেনো কত আপন, কত কাছের মানুষ তার। অরোনের পরিবার চমৎকার! এটা নির্দ্বিধায় চোখ বন্ধ করে বলে দিতে পারবে তীরু। মা এবং সৃষ্টিকর্তার প্রতি কৃতজ্ঞতায় তার চোখ সজল হয়ে উঠল। আহ্! পৃথিবীর মানুষ এতো বুঝি ভাল হয়? তীরুর তা জানা ছিল না।

-” তীরু একাকী বসে যে? সবকটা গেল কই? ” নম্র গলা।

কোমল কন্ঠ শ্রবণ মাত্র তীরু মাথা তুলে তাকালো। আগন্তুককে দেখে একগাল হাসল ও। তারপর কিয়ৎ অভিযোগের সুরে বলল,

-” দেখো না অদিতি আপু। এতক্ষণ একদমই একা ছাড়ছিল না আর এখন আসছি বলে সব কয়টা হাওয়া। ওরা গেল কোথায় বলো তো? ”

অদিতি লম্বা পা ফেলে তীরুর নিকট এলো। বসল পাশে। খানিক রুক্ষ গলায় শুধাল,

-” কি জানি। বে য়া দ ব গুলো এতক্ষণ তোমার পাশ ঘেঁষতে দিলো না এখন একদম তোমাকে ফেলেই উধাও। বোর হচ্ছিলে না? ”

-” প্রচুর। ওদের ছাড়া ভালো লাগছিল না। ”

তীরুর ব্যাকুলতার কারণ ছিল এটাই। এ বাড়িতে আছে বলতে অদিতি, সাহেদা। অদিতির দুই জমজ বোন মাশা, তাশা আর রইল অদিতির দুই ছেলে মেয়ে,পাঁচ বছরের। এরা সকলে লিয়োঁতে থাকলেও আজ তীরুর আগমনে তাদের অরোনের বাসায় দল বেঁধে আসা।

ঘাড় বাঁকিয়ে তাকাল অদিতি। পেছনটায়। অতঃপর কি ভেবে যেন তীরুর হাত মুঠোয় পুরে উঠে দাঁড়িয়ে বলল,

-” চলো তোমাকে তোমার শশুরবাড়িটা ঘুরে দেখাই। আপত্তি নেই তো কোনো? ”

তীরুর জোরেশোরে মাথা নাড়িয়ে ‘ না ‘ বলল। হাঁটা ধরল সম্মুখে। ছোট্ট মতোন একটা ডুপ্লেক্স বাড়ি। অরোনের র ক্ত পানি করা টাকায় কেনা এই বাড়ি। এমনটাই বলছিল সাহেদা। বাসাটায় নিচ তলায় চার রুম। ওপর তলায় চার রুম আর সঙ্গে বিশাল করিডর। তীরুকে ওপর তলাই ঘুরেফিরে দেখানো হলো। নিচতলায় শুধু রুমের সংখ্যা উল্লেখ করে আর সেদিকে গেল না অদিতি। পদচারণ – কালীন অরোন সম্পর্কে, বাড়িটা সম্পর্কে, পরিবার সম্মন্ধে টুকিটাকি ধারণা দিচ্ছিল অদিতি। শেষে একদম কর্ণারের রুমটার সামনে এসে তীরুকে নিয়ে সেখানে ঢুকল ও। রুমের ভেতর তীরুকে বসিয়ে ক্লান্ত গলায় বলল,

-” আর এটা হচ্ছে তোমার স্বামীর রুম। এখন থেকে তোমারও রুম। ঘুরেফিরে দেখো। আমি একটু নিচে গিয়ে দেখছি ওরা গেল কোথায়। কিছু দরকার হলে ডাকবে। অরোন ওয়াশরুমে গিয়েছে ফ্রেশ হতে ও এক্ষুণি এসে পড়বে। ”

অদিতি চটজলদি চলে গেল। তীরু থম মে রে বসে! ওয়াশরুম থেকে ঝপাঝপ পানি পড়ার শব্দ তার কানে এসে বাড়ি খাচ্ছে। কামড়া দেখার প্রবল আগ্রহ থাকলেও অরোন রুমে উপস্থিত জানতেই ও স্থির হয়ে রইল। ডানে – বামে তাকাল না অব্দি। তার অস্বস্তি হচ্ছে। অরোন আশপাশে থাকলেই তার এই অস্বস্তির পরিমাণটা দ্বিগুণাকার ধারণ করে। কে জানে কি আছে লোকটার মাঝে? সর্বদা সবার চোখে দৃষ্টি ফেলে চটাস চটাস কথা বলে তীরু আর তাকাতে পারে না এই মানবের চক্ষুদ্বয়ের মাঝে। দৃষ্টি মেলাতে পারেই না!

ক্যাটক্যাট একটা শব্দ হলো! সোফাতে সটান হয়ে বসে থাকা তীরু মাথা তুলল। তৎক্ষনাৎ দৃষ্টি বিনিময় হয় অরোনের সাথে। অপ্রতিভ দু’জনেই। তীরু চট করে উঠে দাঁড়াল। স্বীকারোক্তি দেয়ার ভঙ্গিতে আমতা আমতা করে বলল,

-” আমি একচুয়েলি অদিতি আপু এখানে বসতে বলে, ”

তীরুকে থামাল অরোন। কাঁধ থেকে তোয়ালে হাতে নিয়ে এগিয়ে এলো সন্নিকটে। শীতল গলায় শুধাল,

-” আমি তোমার কাছে জানতে চাইনি তুমি কেন এই রুমে এসেছো। এটা এখন তোমারও রুম। আসতেই পারো তীরু। কোনো বাঁধা নেই। এমন নার্ভাস হওয়ার কিছু নেই। ওকে? ”

-” হুহ্। ”

অস্বস্তিতে বুদঁ হয়ে থাকা তীরুকে সেখানে ফেলেই অরোন এগোল করিডরে। ভেজা তোয়ালে মেলে দিতে। সুযোগ পেয়ে তীরু ছুটে বেরুতে নিতেই ধাক্কা খায় অদিতির সাথে। তীরুকে ছুটতে দেখে ছটফটে গলায় অদিতি প্রশ্ন ছুড়ল,

-” কি হয়েছে তীরু? ছুটছো কেন? ”

তীরু নত মস্তকে দাঁড়িয়ে। কণ্ঠের খাদ নামিয়ে ও শুধায়,

-” রুম থেকে বের হচ্ছিলাম আপু। ছুটছি না। ”

-” অরোন বেড়িয়েছে?”

-” জি। উনি ব্যালকনিতে। ”

দু’জনের কথার মাঝেই অরোন এলো। অদিতি তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকায় তৎক্ষনাৎ। অরোনের মুখোশ্রী পরখ করা মাত্রই হতাশা ছেপে এলো মুখোবয়বে। অদিতি চিন্তিত হলো! বিড়বিড়ালো,

-” ছেলেটা নিজের মনের ভাব প্রকাশ করতে কবে শিখবে। কবে পেছনে ভুলে সামনে আগাবে। কাওকে একটুখানি ভরসা করবে। ”

ঘাড় বাঁকাল তীরু। তাকাল অরোনের পানে। মূলত অন্তরালে তার কৌতূহলের সৃষ্টি হয়েছে। অরোনকে দেখে এভাবে অদিতির মুখোবয়ব রেখা পরিবর্তনের কারণটা জানতেই পিছে ফেরা। তবে পিছু তাকাতেই ও খানিক চমকাল! কি আশ্চর্য! অরোনের চোখটা অমন লাল হয়ে? কাঁদলে যেমন মানব চক্ষুদ্বয় অশ্রু ত্যাগ করতে করতে চোখের সাদাটে অংশ লাল করে তোলে ঠিক তেমনি লাল হয়ে অরোনের দুই চোখ। তীরু ভাবল, অরোন কেঁদেছে কি? কেন কেঁদেছে? পরক্ষণেই অরোনের মুখোশ্রীভাব দেখে নিজ ধারণা বদলাল সে। এমন লোকের পক্ষেও কাঁদা সম্ভব কি? উঁহু!

অদিতি দীর্ঘশ্বাস ফেলল, ” থাক তুই। তীরুকে নিয়ে নিচে গেলাম। ”

জায়গাটা ছেড়ে আসার পূর্বে ওরা দু’জন অরোনের ভারী কন্ঠের জবাব শুনতে পেল।

-” আমি এখনি আসছি। রাত হয়ে যাচ্ছে। তীরুকে হোস্টেলে দিয়ে আসবো। ”

লহমায় অরোন তোড়জোড় শুরু করল তীরুকে হোস্টেলে রেখে আসার জন্য। সাহেদা রাগারাগি করলেও বিষয়টা পাত্তা দিল না অরোন। তীরু বিদায় নিল সকলের থেকে। অরোন তার বন্ধুর গাড়ি নিয়ে এসেছে তাকে হোস্টেলে রেখে আসতে। মেট্রো তে তীরু কমফোর্টেবল ফিল করবে না এই ভেবে অরোনের বন্ধুর হতে গাড়ি আনা।

তীরু সিটবেল্ট লাগাতে লাগাতে প্রশ্ন করল,

-” গাড়িটা আমায় নিতে যাওয়ার সময় আনলেন না কেন? ”

অরোন তাকায় বামে। বলে,

-” কারণ গাড়িটা আমার নয় আমার বন্ধুর। ”

তীরু অবাক হলো! ” ওমা, আপনার ফ্রেন্ডের গাড়ি আনলেন কেন? মেট্রোতেই তো যেতে পারতাম। ”

-” আমার মনে হয়েছে তুমি মেট্রোতে আনইজি ফিল করবে তাই এই ব্যাবস্থা। ”

তীরু চমকাল! চট করে তাকাল পাশে। তাদের মাত্র কয়েক ঘন্টার পরিচয়। এতটুকু পরিচয়ে ছেলেটা এতোটা ভাবা শুরু করেছে তাকে নিয়ে? এতোটা যত্ন নিচ্ছে!

-” প্রায় তো একবছর হতে চলল এখানে আসার। এখানে আসার পর হতে মেট্রোতে নয়ত বাসেই চলাচল। আনইজি ফিল করব কেন? ”

অরোন এ পর্যায়ে কোনো জবাব দিল না। ফিরে গেল নিজের রূপে। বরাবরের মতো এবারও গায়ে লাগল তীরুর! লোকটাকে প্রশ্ন করলেই এক পর্যায়ে এসে চুপ হয়ে যায়। আর কোনো প্রতিত্তুর নেই। কেন এমন অরোন? অদিতি তো বলেছিল বড্ড চঞ্চল, এক্সট্রোভার্ট টাইপের ছেলে অরোন। তবে তীরুর নিকট এলেই কেন এমন নিশ্চুপতা?

কাঙ্ক্ষিত স্থানে আসতেই তীরু গম্ভীর গলায় জবাব দিল,

-” থামুন এখানেই নেমে যাব। ”

অরোন প্রশ্ন করলো, ” কিন্তু তোমার হোস্টেল তো আরো সামনে। ”

-” কিন্তু আমি এখানেই নামতে চাই। ”

গাড়ি থামল। সিটবেল্ট চটজলদি খুলে নেমে পড়ে তীরু। পা বাড়ায় দ্রুত গতীতে। পেছন থেকে হুট করেই ডাক পরে তার।

-” তীরু একটু দাঁড়াও। ”

তীরু দাঁড়াল। ভাবল এই হয়ত অরোন তাকে ‘ সরি ‘ বলে দুঃখ প্রকাশ করে তার জিজ্ঞেস করা সকল প্রশ্নের উত্তরের জবাব দেবে। কিন্তু না! তীরুকে হতাশ করে অরোন বলল,

-” তীরু, তুমি এখন আমার স্ত্রী। তোমার প্রতি একটা দায়িত্ব আছে আমার। আমি চাই স্বামী হিসেবে সেই দায়িত্বটা পালন করতে। তুমি রেস্টুরেন্টের চাকরিটা ছেড়ে দাও। আমি আলিশান জীবনযাপন করবো আর আমার স্ত্রী কষ্ট করে রেস্টুরেন্টে জব করে নিজের ভরনপোষণ চালাবে এটা আমার জন্য কষ্টদায়ক। আমি এখন থেকে তোমার ভরনপোষণ এর দায়িত্ব নিতে চাই। ”

চলবে~

| জ্বর নিয়ে লিখেছি। তাহলে চিন্তা করুন কতোটা বা জে হয়েছে গল্পটা! কতোটা বানান ভুল হয়েছে। ক্ষমাপ্রার্থী আমি। এখন থেকে তিনদিন পরপরই গল্প পাবেন। রাত ১০-১১ টার মধ্যে |

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here