#ছুয়ে_দিলে_মন❤
#লেখিকাঃ-তানজিনা আক্তার মিষ্টি ❤
#পর্বঃ- ১
ঘুমের ঘুরে মনে হচ্ছে আমার মুখে কিছু ঘষে দেওয়া হচ্ছে। মেঘ ঘুম ছুটিয়ে চোখ মেলল কিন্তু নাহ রুমে তো কেউ নেই কিন্তু মুখ কেমন জানি লাগছে উঠে আয়নার সামনে দাড়িয়ে চিৎকার করে উঠে ওকে মেয়ের মতো সাজিয়েছে। এতো জোরে চিৎকার করলো যে এদিকে কাজটা মিষ্টি করছে ওজানে এমন একটা চিৎকার কানে আসবে তাই দরজাটা ভালো করে বন্ধ করে খাটে বসে পরলো। এখন চেচামেচি হবে সেটা ওর জানা।
মালিহা বেগম রান্না করছিল ছেলে এমন চিৎকার শুনে ভয় পেয়ে তারাতারি রান্না রেখে ছুটে এলো দেখতে কি হয়েছে? তিনি নিজে ও রুমে এসে ছেলেকে দেখে চেচিয়ে উঠলো……
–একি মেঘ তুই মেয়ের মতো সেজেছিস কেন?
–আম্মু তুমি কি বললে আমি সেজেছি তোমার কিমনে হয় আমি নিজে এমন মেয়ের মতো সেজেছি? ( দাতে দাত চেপে)
–তা আমি কি করে বলবো সাত সকালে কে এই কাজ করবে তুই তো একাই আছিস রুমে?
–তুমি কি সত্যি বুঝতে পারছো না কে করেছে এমন কাজ নাকি বুঝতে চাইছো না !
এবার মালিহা বেগমের সব টা মাথায় ঢুকলো ওনি একটু বুঝে কম। কাজটা যে মিষ্টি করেছে এটা তার মাথায় এলো না কেন? এমন কাজ তো এক মাএ ওর ধারায় সম্ভব।
— মিষ্টি সকালে তারমানে এগুলো করেছে তাই তো বলে আম্মু ভাইয়াকে ডেকো না আমি ডেকে আনছি? কি পাজি হয়েছে মেয়েটা একটু ও কথা শুনে না সব সময় আকাম কুকাম করে চলে আমি আজকে ওকে দাড়া দেখাচ্ছি মজা।
মালিহা বেগম ঘুরে দরজার কাছে গেল। মিষ্টি কে বকতে? তোমার কিছু করতে হবে না আমি যা করার করবো তুমি এসবে মাথা ঘামিয়ু না? মালিহা বেগম জানতো এমন কিছুই বলবে? যত রাগী ঝারুক আর যত দুষ্টুমি করুক না কেন আমাকে কিছু বলতে দেবে না। নিজে বলে কিছু বলা তত দূর উল্টো নিজেই সরি বলে রাগ ভাঙাবে এজন্য মেয়েটা এতো দুষ্টু হয়েছে আমি শাসন করতে পারলে তো।
— জানতাম এটাই বলবি কখনো ত বকিস না রাগ টাগ যাই করিস শেষে ওর সামনে গিয়ে আর একটা কথা বলতে পারবি না উল্টো রাগ দেখাবে আর নিজে রাগ ভাঙাবি।
— সে সব তোমাকে দেখতে হবে না আমাদের ব্যাপার আমাকে দেখতে দাও।
— তাই তো আমি কে তোদের বাবা ভাই বোন কাউকে আমি কিছু বলতে পারব না। না বললাম যা খুশি কর বেশি আদর করে একটা বাদর তৈরি হচ্ছে টের পাবি।
— ফালতু কথা বাদ দাও তো আম্মু। আমি আমার মিষ্টিপরী কে চিনি ও কখনো খারাপ কিছু করবে না। যে টাতে আমরা কষ্ট পাবো তুমি দেখো।
মালিহা বেগম সামনে বললে ও এটাই চায় সব সময় তার পরিবারের সবাই এমন থাকুক তার ছেলেটা বোনটাকে এভাবে ভালোবাসুক। নিচে চলে এলো নিচে এসেই গেইট খুলে কেউ বেরিয়ে গেল চুপিচুপি। মালিহা বেগম ভ্রু কুচকে সেদিকে তাকিয়ে বুঝতে চাইছে কে এটা নিজে ও পেছনে গেল এগিয়ে গিয়ে দেখে আর কেউ না তার গুনধর মেয়ে পালিয়ে স্কুলে চলে যাচ্ছে। দরজা দিয়ে বেরিয়ে দৌড়ে গেটের বাইরে চলে গেল।
পেছনে থেকে ডাকতে লাগলো কিন্তু মিষ্টি সে কথা শুনলে তো বাইরে এসে অটো চেপে শো করে চলে গেল।
মেঘ বেরিয়ে মিষ্টির রুমে গেল আজকে কিছু করতেই হবে বেশি পাজি হয়ে গেছে। কিন্তু একি রুমে তো কেউ নেই বেরিয়ে নিচে ও খুজলো নেই বাইরে ও নেই ওমনি আম্মু বাইরে থেকে এলো।
— আম্মু মিষ্টি কই?
— পালিয়ে ছে
–মানে……
— ভয়ে পালিয়েছে স্কুলে চলে গেছে আমি ডাকলাম শুনলো না ভেবেছে বকবো।
— কি চলে গেল তুমি দাড়িয়ে দেখলে আমাকে ডাকবে না। ইস একাই চলে গেল যদি যেতে প্রবলেম হ য় একা তো কখনো যায় না কেন যে রাগতে গেলাম চিৎকার শুনে ভয় পেয়েছে নিশ্চিত।
— এতো চিন্তা করতে হবে ঠিক যেতে পারবে।
মিষ্টি অটোতে উঠে হাফ ছেড়ে বাচলো ওফ আর একটু হলে আম্মু আমাকে ধরে ফেলছিল। আজ অনেক বকা খেতাম মনে হয় দুষ্টুমিটা বেশি হয়ে গেছে না হলে এতো জোর চিৎকার ভাইয়া কখনো করে না। কেন যে করলাম কিন্তু আমি তো মজা করেই করেছি ভাইয়া আমার উপর খুব রেগে গেছে। রাতে ক্ষমা চেয়ে নেব এমন আর করবো না।
ক্লাসে বসে আছি আগেই চলে এসেছি আজ। প্রাইভেট ও নাই আজ তেমন কেউ আসে নি কিছু আসছে কিন্তু আমার ফ্রেন্ড রা আসে নি। কান্টিনে বসে একটার একটার কিছু খেয়ে যাচ্ছি আর ভাইয়ার কাছে সরি বলবো। হঠাৎ পেছনে চাপর মেরে উঠলো আলিম।
— কি রে আজ এতত আগেই আসছিস আবার খেয়ে যাচ্ছি। চিন্তা না উঠলে তো এতত খাস না ব্যাপার কি?
ওকে কিছু বললাম না।
— কিহলো বল?
— সব আসুক তারপর কমু এখন চুপ করে তুই ও খা?
— বড় সমস্যা তাহলে আচ্ছা।
দীপা, কনা, রুনা, শান্ত, আলিম, হাসিব, জুনায়েদ, আকাশ আমি আমার ফ্রেন্ড সারকেল। রুনা আর জুনায়েদ বাদে সবাই একে একে এসে বসে পরলো। সবাই এক কথা কি হয়েছে সব খুলে বললাম……
— এতো চিন্তার কি আছে মিষ্ঠু তোর ভাই তোকে যা ভালোবাসে না তোকে কিছু বলবে না দেখিস যদিও বলতে চায় একটুকাদোকাদো হয়ে সরি বলে দিবি শেষ আর কিছু বলবে না।
— হুম দীফা ঠিক বলেছে কিন্তু তুই কাজটা ভুলই করেছিস শেষে কিনা মেয়ে সাজালি এই বুদ্ধি টা তোর মাথায় আসলে কিভাবে বল তো?
— কাল টিভিতে এই বুদ্ধি টা পেয়েছি আর রাগ ও করেছিলাম ভাইয়াকে চকলেট বক্ম আনতে বলেছ সে আনেনি তাই বুদ্ধি টা কাজে লাগিয়ে দিলাম।
সব গুলো ছাগলের মতো হাসতে লাগলো আমি কিনা চিন্তা করছি আর ওরা আমাকে নিয়ে মজা নিচ্ছে। আমি রেগে উঠে ক্লাসে চলে এলাম টাকা টা দিয়ে আসি নি খেয়েছি মিনিমাম ছয়সর উপরে হয়েছে সব গুলো আলা টাকা দাও আমাকে নিয়ে মজা করা?
ক্লাসে আরাম করে বসে আছি সব গুলো মুখ বাঘের মতো করে ক্লাসে ঢুকলো আমাকে খেয়ে ফেলবে এমন।
— এভাবে তাকিয়ে আছিস কেন?
কিছু না বলে টান মেরে ব্যাগ নিয়ে নিলো।
— ব্যাগ নিয়ে লাভ নাই টাকা নাই একটাও।
— তোর জন্য আমাদের পাচশ পনেরো টাকা গেছে এখন টাকা দে। কি মেয়েরে বাবা নিজে খেয়ে আমাদের ফাসিয়ে এলি রাগ দেখিয়ে। আর তোর কাছে টাকা নেই বললেই আমরা বিশ্বাস করবো পাগল নাকি। প্রতি দিন তিনশ টাকা নিয়ে আসিস।
— আজ নেই রে দোস্ত রা পালিয়ে এসেছি ব্যাগে দশটাকা আছে।
— কি দশটাকা দিয়ে কি করুম?
মাঝে থেকে আকাশ আমার দশটাকায় নিয়ে নিলো।
— আকাশ টাকা দে এটা যাওয়ার ভারা ন য়তো হেটে যেতে হবে।
দিল না অসভ্য গুলো আমাকে টাকা দিল না।
আকাশ টিফিনে চলে গেছে। চারটার দিকে স্কুল ছুটি হয় আজ আমি ইচ্ছা করা ছুটির পরে প্রাইভেট পরলাম না। হেটে গেলে আধা ঘন্টা লাগে আর অটোতে পাচ দশ মিনিট। সবগুলো কে বকে হেটে যেতে লাগলাম আমার বাসা আলাদা তাই একাই যেতে হচ্ছে। কিন্তু মাঝ রাস্তা সেই মাপের বৃষ্টি শুরু হয়ে গেল কোন দোকান নেই যে দাড়াবো। বৃষ্টি তে ভিজে একাকার হয়ে গেলাম সাদা নীল ড্রেস যায় সাদা সেলোয়ার ভিজে গেলে পা দেখা যাবে না সেলোয়ার ভেজানো যাবে না। ছুটে লাগালাম আমার থেকে দূরের চায়ের দোকানে এসেই বেঞ্চে বসলাম। মাথা ভিজে গেছে। ঝাকিয়ে পানি ফেললাম…….
তারপর ব্যাগ খুলে রুমাল বের করতে গিয়ে দেখলাম আমার ব্যাগে ছাতা। আমি এতো বড় হা করে তাকিয়ে আছি ব্যাগে আমার ছাতা আছে আর আমি কিনা ছার্ত বিনে ভিজে এলাম এত মন ভুলা আমি নিজের মাথা নিজেকেই ফাটাতে ইচ্ছে হচ্ছে। ছাতা বের করতেই পাশের লোকজন বলতে লাগল….. পাগল নাকি ছাতা থাকতে ও ভিজে এসেছে?
আমি আগুন চোখে তাকালাম…. আমার যা খুশি করবো আপনার কি যতসব? আমি ভিজবো বলে ছাতা বের করিনি?
— তাহলে বসে আছেন কেন ভিজে যান?
লোকটার সাথে রেগে ভিজে বেরিয়ে এলাম ছাতা ব্যাগে রেখে।
চলবে❤