ছুয়ে দিলে মন পর্ব ২২+২৩

#ছুঁয়ে দিলে মন ❤️
#লেখিকা:- তানজিনা আক্তার মিষ্টি ❤️
#পর্ব:-২২

মেরুন কালারের একটা গাউন পরে হালকা সাজগোজ করতে লাগলো মিষ্টি। পাশে ভাবী আছে সে আমাকে সাজতে দিয়ে সাহায্য করল। ঠোটে লিপস্টিক চোখে মোটা কাজল চুলগুলো পরে খোঁপার মতো করে দিল।
সাজানো শেষে ভাবী বলল,,
খুব সুন্দর লাগছে তোমাকে।
থ্যাংক ইউ ভাবি।
সম্পূর্ণ রেডি হয়ে সবার থেকে বিদায় নিয়ে বেরিয়ে পড়লাম।

আজকে আরশির জন্মদিন।ও আমাকে সকালে যেতে বলেছিল কিন্তু তার যাওয়া হয়ে ওঠে নাই এজন্য দুপুরে সবার আগে চলে যাচ্ছি। এখন ঘরিতে একটা মতো বাজে। যেতে এক ঘন্টা সময় লাগবে। আব্বু আর ভাইয়া দুজনেঅফিসের কাজে প্রচুর ব্যস্ত হয়েছেন না তাহলে কি আমার সাথে যেতে পারবেনা।বাসার গাড়িটা নিয়ে যেতে বলেছে কিন্তু আমি ভাবছি অটো ঘরে চলে যাব।আম্মু তো যাবে না ভাবীকে নিয়ে যেতাম কিন্তু এসব হয় না যাওয়াটাই ভালো এমনিতেই শরীরটা খুব একটা ভালো নেই। কারণ সে তার এখন এখানে খুব শিগগিরই একটা পুঁচকো আসতে চলেছে।

চার মাসের উপরে চলে গেছে আর সেই সাথে আরশির সাথে ফ্রেন্ডশীপ এখনো ওআমার সবচেয়ে বেস্ট ফ্রেন্ড বলা চলে। আরশীর জন্য গিফট আমি আগেই কিনে রেখেছিলাম। ফায়ার ঝামেলা হল না ড্রাইভার আমাকে গাড়িতে উঠে যেতে বলেছিল তাকে বারণ করে অটো করে চলে যেতে লাগলাম। এ তো একটা কারণ আছে। আমার ইচ্ছা আসার সময় জয়ের সাথে আসবো।ড্রাইভারি গেলে তার আমাকে রেখে আসবে না নিয়ে আসবে তখন তার সাথে আমার আসা হবে না।

চলতে শুরু করেছে এর মাঝেই ফোন বেজে উঠল হাতে নিয়ে দেখি আরশির কল কতবার ফোন দিয়েছে এই পর্যন্ত হিসাব নেই।

হ্যালো হ্যাঁ বল।

কোথায় আছিস তুই?

এই তো এসে পরেছে আমি তো গাড়িতে আছি। বেশি সময় লাগবে না এসেই কথা হবে ফোন রাখ।

বলে ফোন কেটে দিলাম।
সেদিন রাতে কথা মনে পড়ে গেল। জয় কে আমি সেদিন ফেসবুকে এসএমএসে আন্স দিতে বলেছিলাম। রাত 12 টা ওবদি জেগে ছিলাম কিন্তু এসএমএস এর আন্সার পাই নাই রাগে আমার মনে যে কি চাই ছিল সেদিন। বলে দেওয়ার পরও রিপ্লে করলো না কত বড় বেয়াদব। মনে মনে ছক করছিলাম সামনে একবার পায় তার পরে যা করার করব।

পরদিন
ছুটির পর আরশির সাথেই ছিলাম জানি আজকে যদি আর ভাইয়াকে নিতে আসে তাহলে তো দেখা হবে। সে আশায় কিন্তু আমার আশায় জল ঢেলে দিল। জয় কে কোথাও দেখতে পেলাম না ছুটির পর!

—কিরে এভাবে কাউকে খুজছিস নাকি?

—কই না তো কাকে খুঁজবো তুই কি একা যাবি?

—একাই তো যাই প্রতিদিন আজ আবার দুকলা পাব কোথায়?

—-কেন তোর ভাই কাল না তোকে নিতে এল।

—আর ভাই কিভাবে আসবে সে তো বাসায় নাই কালকে রাতে তো সে লন্ডন গেছে।

—হোয়াট?

লন্ডন গেছে কথাটা শুনে যেন আমার মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়লো।

–আর এভাবে চিৎকার করছিস কেন তিন দিনের জন্য গেছে ভাইয়া একটা ইম্পর্টেন্ট কাজে অফিশিয়াল। আরে মেতো ভাইয়া কোনদিন আমার স্কুল-কলেজ আসেনা। ওই দিন যে কেন আসছিল আমি নিজেই বুঝতে পারতাছিনা।

—আচ্ছা আসি বাই।

বলে আরশির থেকে বিদায় নিয়ে চলে না মনটা খুব খারাপ হয়ে গেল। কেন জানিনা আমার খুব খারাপ লাগলো কোথায় কথা বলব ভেবে ছিলাম সেখানে সে এখন বিচি এখন তার কথা বলা যাবেনা দেশ আসা না পর্যন্ত। বিষন্ন মনে বাসায় ফিরে এলাম।সে আছে তার কাজে আর আমি কিনা তার মেসেজ এর অপেক্ষা করছিলাম সারারাত।

হঠাৎ আমি চমকে উঠলাম। এসব আমি কি করছি আমি তার মেসেজ অপেক্ষা বা কেন করছি? আমিতো নিছকই মজার ছলে তাকে মেসেজ করছিলাম। আমার এত খারাপ লাগছে কেন অস্থির লাগছে কেন? কেন মনে হচ্ছে সে আমাকে বলে না গিয়ে অপরাধ করেছে। একটা মেসেজ কি করা যেত না। এতোটাই কি বিজি। নিজের ভাবনা ভেবে নিয়েছি চমকে চমকে উঠছে মিষ্টি।

এমন থাকে কখনো হয়নি।এর আগে তোর সাথে কতো সময় কাটিয়েছি কিন্তু কখনও তাকে নিয়ে এতটা ভাবেনি। এখন তো তার সাথে আমার কথা হয়না দেখা হয়না প্রায় 9 মাসের পর আরশির মাধ্যমে দেখা হলো হঠাৎ একদিন আমাদের বাসায় গিয়ে দেখা হল। সেই দেখা হওয়ার পর থেকে আমার কেন জানি বারবার তার কথাই মনে পরেছে। তাকে নিয়ে ভেবেছি বেশি ফেসবুকে তার আইডি খোঁজা তখন থেকে আরও ভাবনা টা বেশি হয়ে গেল। সবাই কেমন নির্লজ্জের মাকে বললাম আমার মেসেজের রিপ্লে কইরেন।সি এখন আবার তার কথা আমি আরশিকে জিজ্ঞেস করলাম, আরোশী কি সব ভাববে আমাকে নিয়ে।

মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলে দিতে চাইলাম কিন্তু ব্যর্থ।

তিনদিন পর লন্ডন থেকে জয় আসবে বলেছিল আরশি দুই দিন পর
কিন্তু আমি অবাক হয়ে ফোনের দিকে তাকিয়ে আছি সকালবেলা। কারণ সকালে ঘুম থেকে উঠে আমি ম্যাসেজ পেয়েছি জয়ের।
জয়ের তো কালকের আসার কথা আজকে কিভাবে আমাকে মেসেজ করল।

ভাবতে ভাবতে আমি রিপ্লাই করলাম আপনি না লন্ডন গিয়েছেন ফিরে আসলেন কবে।

সে রিপ্লে তে বলল সে ফিরে আসে নাই লন্ডন থেকেই মেসেজ করেছে।

আমি বললাম না কিছু। কেন জানিনা আমার একটা চাপা অভিমান হল। কেন হল জানি না। অভিমানে আমি ফোনের দিকে তাকিয়ে র‌ইলাম কিন্তু কিছু লিখতে ইচ্ছে হলো না সত্যিই লিখলাম না সেও আর কিছু লিখলো না।অনেকক্ষণ আমি শুনে দিকে তাকিয়ে রইলাম তার দীপিকার মেসেজ না পেয়ে আমি একটিভ নেস চেক করে দেখি 2 মিনিটে আগে বের হয়ে গেছে।আমার এত মেজাজ গরম হয়ে গেল। বের হয়ে গিয়েছে আমি কিছু লিখলাম না বলে সেউ কিছু লিখলাম না ।

এভাবে দুই দিন কেটে গেল আমি ওর রাগে আর মেসেজ করলাম না সেও করল না কিন্তু আমার ভেতরে ভেতরে খুব অভিমান হতে হবে। আমি চাইলাম সে একবার মেসেজ করলে আমি রিপ্লে করবো কিন্তু সেও করল না।

তিনদিন পর
কলেজ আগে এসে বসে আছি।কালকে আরশি কলেজে আসে নাই এজন্য আজকে আসলে জিজ্ঞেস করবো আসছে কিনা জয়।

ক্লাস শুরু হতে আর বেশি সময় নেই কিন্তু আরশির দেখা মিলছে না। 15 মিনিট আগে হঠাৎ দৌঁড়ে আরশি আমার কাছে ছুটে এলো। আমি ক্যান্টিনে ছিলাম এখানে বসে থাকি সবাই আসলে একসাথে ক্লাসে ঢুকি। একপ্রকার ছুটে আসে আমার কাছে এসেই হাঁফাতে লাগলো।

আমি ওর দিকে তাকিয়ে হাপানো দেখছি।
ও একটু স্বাভাবিক হয়ে আমার হাত ধরে আবার দৌড়াতে লাগলো।
আমি জিজ্ঞেস করছি এভাবে দৌড়াচ্ছে কেন আমাকে নিয়ে আর বাইরে যাচ্ছে কেন কিছু না বলে গেটের বাইরে এসে থামল।
এবার আমি চেচিয়ে বললাম,
ঐ তুই এভাবে আমাকে টেনে এখানে আসলি কেন ক্লাস করবি না।

না আজকে ক্লাস করবে না আজকে বেড়াতে যাবে।

মানে কোথায় আর কে কে? ওরা তো সবাই ক্লাসে আগে বলল ওদের বলে রাখা যেত।

ওদের যেতে হবে না আমি তুই আয় ভাইয়া।

ভাইয়া মানে?

আরে ভাইয়া তো সকালে বলল আমাকে আর তোকে নিয়ে নাকি বেড়াতে যাবে। ভাইয়া যে কাজটা করতে গিয়েছিল সেই কাজটা নাকি এজন্য আমাদের ট্রিট দিবে। তোকে নাকি ভাই আগে থেকেই চিনে বলল তুইতো আমাকে বলিস নি।

ওই আসলে,

থাক বলতে হবে না চল ওই যে ভাইয়া গাড়িতে আছে।

সেদিন সারাদিন আমরা অনেক জায়গায় ঘোরাঘুরি করেছি খাওয়া দাওয়া। জয়ের প্রতি যে রাস্তা ছিল সব মাটি হয়ে গিয়েছিল সেদিন। ঘোরাঘুরি করে আমিও তো মনে মনে ক্ষমা করে দিয়েছিলাম।সামনাসামনি আমরা খুব একটা কথা বলি না আমি আর আরশি অনেক ইনজয় করি জয় ভাইয়া আমাদের সাথেই থাকে।

সেদিন রাতে একটা এসএমএস দেখে আমি চমকে ওঠে,
এসএমএসে লেখা ছিল,,

কি ম্যাডাম এবার আপনার রাগ কমেছে।

আমি অবাক হয়ে মেসেজটা দিকে তাকিয়ে রইলাম। এমএসএস কেন করেছে আমি যে তার ওপর রাগ করেছিলাম সেটা কি সে কোনভাবে বুঝতে পেরেছিল।

সঙ্গে সঙ্গে রিপ্লাই করলাম আপনি জানলেন কিভাবে আমি আপনার উপর রাগ করেছি।

সাথে সাথে রিপ্লে আসে আমি না জানলে জানবে কে।তোমার রাগ ভাঙ্গানোর জন্যই তো ঘোরাঘুরি প্ল্যান করলাম।

আমি অবাক হয়ে তাকিয়ে ছিলাম মেসেজ করার দিকে আমার রাগ ভাঙ্গানোর জন্য ঘোরাঘুরি প্ল্যান করেছিল। আমি রাগ করলেও উনা কি?

সেদিন রাতে এসব নিয়ে অনেক কথাই বলি। এভাবে আমরা ফেইসবুকে অনেক কথাই বলা হয় মাঝে মাঝে বেড়াতে যাওয়া হয়। এরপর প্রায়‌ই জয় ছুটির পর কলেজে আসতো।কিন্তু আরশি আমাকে বলেছিল ওর ভাই না কি কখনো স্কুলে যায় নাই।

কয়েক দিনের মাঝেই যায় সেটা অনেকটা ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে উঠে,

সেই সম্পর্কটা আরও ঘনিষ্ঠ হয় এক মাস আগে।
দিনটার কথা আমার চোখের সামনে এখনো ভাসছে।
আরশি সেদিন কলেজে আসছিলনা এইজন্য আমার মন খারাপ। একে আরশি আসে নাই তারপর মানে আজকে জয় ও আসবে নাআমার কি হয়েছে জানি না একদিন জয়কে চোখে না দেখলে আমার অস্থিরতা বেড়ে যায়।কিন্তু অবাক করা বিষয় আমি মন খারাপ করে ক্লাসে এসে ফ্রেন্ডের সাথে বের হচ্ছিলাম গেটের বাইরে আসতেই জয়কে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখি গাড়িতে হেলান দিয়ে।বড় বড় চোখ করে আমার দিকে তাকিয়ে ছিলাম সেদিন।
আমি যেন স্বপ্ন দেখছি।আরশি আসেনাই তাহলে জয় কেন আসলো কলেজে আমার এই চিন্তা মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে।

ফ্রেন্ডের থেকে বিদায় নিয়ে আমি জয়ের দিকে এগিয়ে গেলাম সে আমাকে দেখে একটা মিষ্টি হাসি উপহার দিলো যে হাসি দেখে আমার চোখ আটকে গেল। ছেলেদের হাসি এত সুন্দর হয়। হা করে আমি তার হাসি দেখে তাকিয়ে আছি।

ও হ্যালো ম্যাডাম।
জয়ের কথায় ঘোর কাটে। চমকে আমি তাড়াতাড়ি চোখ সরিয়ে নেয়।

আমতা আমতা করে বলি আপনি আজকে কলেজে আরশি তো আজকে কলেজে আসে নাই।

হ্যাঁ আমি জানি আমি আরশির জন্য না তোমার জন্য এসেছি।

কথাটা শুনে বড় বড় চোখ করে তাকায় জয়ের দিকে আমার জন্য মানে?

তোমার জন্য মানে তোমার জন্য।

বলে আমার হাত ধরে গাড়িতে উঠে নিজের গাড়িতে বসে গাড়ি স্টার্ট দেয় আর আমি হা করে তার কর্মকাণ্ড থেকে থাকি।

সেদিন একটা নিরিবিলি স্থানে নিয়ে আসে যায় জয় আমাকে।জায়গাটা খুব সুন্দর কিন্তু আমার মনে প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে। আমি প্রশ্ন করার আগে যে আমাকে আচমকা ভালোবাসি বলে ওঠে,
সে আমাকে ভালোবাসি বলা যতটা না অবাক হয়েছি তার থেকে বেশি অবাক হয়েছে সে আমাকে নাকি সেই প্রথম দিন দেখার পর থেকে ভালবাসে সেই বৃষ্টির মাঝে আমার ঝগড়ায় নাকি তার মনে আমার জন্য একটা অনুভূতি তৈরি করেছিল আমি হাঁ করে তার বিবরণ শুনতে লাগি সে প্রথম দিন থেকে আমার দিকে খেয়াল রাখতো অথচ আমি কিছুই বুঝতে পারিনাই। সবকিছু বলে সে আমার মতামত জানতে চাই আমি কিছুই বলি না সেদিন আমার মুখ দিয়ে কোন কথা বের হয় না। জয় আর কিছু বলে না।
দুই দিন আমি আর কলেজে যেতে পারি না কি হয় আমার কে জানে। আমি অতিরিক্ত শক পেয়েছিলাম।একদিন ভাবি আমাকে নিজের পাশে বসে জিজ্ঞেস কর আমার কি হয়েছে?
আমি শুধু তাকে একটা কথাই জিজ্ঞেস করি কাউকে ভালবাসলে আমি সেটা কিভাবে বুঝব।
তখন ভাবি আমাকে আবার একটা ইয়াং বড় ভালোবাসার সংজ্ঞা দেয়।
তুমি যদি কাউকে ভালোবাসো তাহলে তাকে তোমার সব সময় মনে পড়বে তার সাথে কথা বলতে মন চাইবে তাকে দেখতে মন চাইবে তাকে ছাড়া তোমার কিছুই ভালো লাগবে না সে তোমার সাথে কথা না বললে বা সে তোমাকে ইগনোর করলে তোমার খুব কষ্ট হবে তার সাথে একদিন কথা বলতে না পারলে তুমি ছটফট করবে তাকে দেখার জন্য তোমার চোখ ব্যাকুল হয়ে থাকবে।তাকে ছাড়া আশেপাশে কে কিছুই তোমার ভালো লাগবে না সবসময় চাইবে যে তোমার পাশে থাকুক। একটুতেই তারপর তোমার অভিমান হবে।
আরো কত কি যে ভাবি বলতে থাকলো সবকিছু বলার পরভাবী চলে গেল আর আমি বসে ভাবতে থাকলাম এই সবকিছু তো আমার জয়ের জন্যই হয় তাহলে কি আমি ওজয় কে ভালবাসি।তিনদিন পর আমি কলেজে যাই নি সেইদিন কলেজে গিয়ে আমি জয় কে দেখতে পায়।তার কি অবস্থা চুল গুলো উস্কখুস্ক চোখের নিচে কালি পড়ে গেছে কেমন বিধ্বস্ত অবস্থা দেখা যাচ্ছে আমি কথা বলিনি দেখি এমন হয়েছে। আমার খুব খারাপ লাগল তার মুখের দিকে তাকিয়ে। কিন্তু কথা বললাম না আমার সাথে আরশি ছিল সেদিন তার হাতে একটা চিঠি ধরিয়ে দিয়ে বাসায় চলে যায় ছুটির পর। চিঠিতে শুধু একটা কথাই লিখেছিলাম আমি আপনাকে ভালোবাসি।

ড্রাইভার কাকার ডাকে আমার ধ্যান ভাঙল,

নেমে তাকে ভাড়া মিটিয়ে বাড়িটার দিকে তাকালাম। বাসায় আগেও এসেছি অনেকবার আসা হয়েছে এসে আমরা সবার সাথে আমার অনেক ভালো সম্পর্ক তৈরি হয়েছে। আলিয়া আপু তার মেয়ে আন্টি আঙ্কেল সবাই খুব ভালো। কথা মজা করেছি আজকে সবাই আমাকে সকালে আসতে বলেছিল কিন্তু আসতে পারি নাই। বাসায় এখন আমার আত্মীয়-স্বজন আছে না খুব ঘনিষ্ঠ যারা তার আছে শুধু। বাইরে থেকে একবারে গেটে থেকে সাজানো হয়েছে সুন্দর করে।সব দেখিতে ভেতরে যেতে লাগলাম দু হাত দিয়ে গ্রাউন্ড তুলে হাঁটছি গাউনটা বেশি লম্বা।ভেতরে আসতে আন্টির সাথে দেখা সে আমার দিকে অভিমান গলায় কথা বলতে লাগল সকালে কেন আসে নাই।আমি থেকে কান ধরে সরি বললাম আমার কান ধরা দেখে সে হেসে আমার থুতনিতে হাত দিয়ে বলল মাশাল্লাহ।
তারপর আন্টি কাজ চলে গেলো আমাকে উপরে আরশির রুমে যেতে বলে।

উপরে আরশির রুমের পাশের রুম জয়ের। আমি আরশির রুমে না গিয়ে জয়ের রুমে গেলাম।
#ছুঁয়ে দিলে মন ❤️
#লেখিকা:- তানজিনা আক্তার মিষ্টি ❤️
#পর্ব:-২৩

মিষ্টি সোজা জয়ের রুমে গিয়ে থামল। ভেতরে ঢুকেই চারপাশে চোখ ভুলার কিন্তু রুমে জয় নাই।

ওয়াশ রুমের দরজা আটকানো ভেতর থেকে পানি পড়ার আওয়াজ পাওয়া যাচ্ছে।তারমানে ওয়াশরুমে আছে আমি আয়নার সামনে আরেক বার গিয়ে নিজেকে দেখতে লাগলাম। 5 মিনিট হতে চলল বেরোচ্ছে না। তাই বাথরুমের দরজায় কাছে গিয়ে দুইটা ঢোকা দিলাম। সাথে সাথে ঔ পাশ থেকে আওয়াজ এলো,

কে?

আমি কিছু বললাম না আমার ধাক্কা দিলাম। এবার একটু রেগে বলল,, আমি জানি তুই আরশি।আমি বের হলে কিন্তু তোর কপালে মার আছে।আজকে তোর দুষ্টুমি গেল না আজকেওকি তুই আমার হাতে মার খেতে চাস।

আলসি নাম শুনে আমি হেসে উঠলাম। তার মানে বুঝতে পারে না আমি। আরেকবার জোরে ধাক্কা মেরে দৌড়ে দরজা খুলে বেরিয়ে এলাম।

সোজা আছি আরশির রুমে গিয়ে থামলাম। আরশির বোন ও তার মেয়ে আরও কিছু মেয়ে দেখলাম। আমি যেতেই আরশি দৌড়ে এসে আমাকে জড়িয়ে ধরলো।

তারপর আবার রাগী মুখ করে অন্যদিকে ফিরে রইল। আসলে খুব লেট হয়ে গেছে দুটো বেজে গেছে। পার্টি সন্ধ্যার পর তবু আমি দুটোর মধ্যে এসেছি। আর ও আমাকে সকাল থেকে থাকতে বলেছিল।

সেই নিয়ে কিছুক্ষণ মান অভিমান চলল।

আলিয়া আপুর সাথে কথা বললাম। তার ছোট মেয়ে সায়রা। সে আমাকে দেখেই দুগাল ধরে টেনে টেনে কথা বলতে লাগল। তারপর আরশীকে রেডি হতে বলল আর এখনো রেডি হয়নি আমার জন্য নাকি বসে ছিল। অনুষ্ঠান শুরু হবে চারটায় গেষ্টরা আসা শুরু করবে এখনি রেডি হ‌‌ওয়ার বেটার সময়।

আরশিকে রেডি করে দিতে লাগলো আরশির খালাতো বোন কাঞ্চি আপু। আরশি আজকের রেট কালারে গ্রাউন্ড পড়বে আমারটা আর ওরটা সেম অনেক টা আমরা একসাথে মার্কেট করতে গেছিলাম।

আমি বসে বসে ওর সাজানো দেখছি আর ফেসবুকিং করছি।
দেখছি জয় লাইন আছে কিনা। নাই লাইনে তাই নিজের ডাটা অফ করতে যাবে এমন সময় জয়ের চিৎকার কানে ভেসে এলো।

জয় চিৎকার করে আরশি নাম ধরে ডাকতে ডাকতে রুমের এলো।

এসেই সে কি বকা সে দরজা ধাক্কা নিয়ে আরুশিকে। আমি তো হা করে ওদের দুজনের ঝগড়া দেখছি। জয় এখনো আমাকে দেখেনি আমি অন্য দিকে মুখ করে বসে ছিলাম। এখন ওদের দিকে তাকিয়ে আছে।আরশি বলেই যাচ্ছে ও ধাক্কা দেয় নেয়। আর জয় বলেই যাচ্ছে ও ধাক্কা দিয়েছে। এই নিয়ে দুজনের মধ্যে তুমুল ঝগড়া শুরু হলো । কেউ কারো থেকে কম যায় না। এরা দুজন তো আমার আর ভাইয়া কেও হার মানাবে ঝগড়া। আমি ঝগরা শুরু করলে তো সবসময় ভাইয়ার চুপ করে থাকে। আমার দোষ এখন আরশির ঘাড়ে চাপলো কিন্তু এদের সামনে তো আমি বলতেও পারছি না।

হঠাৎ যা আমার দিকে তাকালো। সাথে সাথে মনে হয় আমি একটু সুযোগ পেয়ে গেলাম। ইশারায় বুঝলাম কিন্তু বুঝলো না। এবার ফোন চেক করতে বললাম। আমি তাকে ফোনে মেসেজ করলাম সব খুলে বললাম,
জয় মেসেজটা পড়ে একবার আমার দিকে রাগী চোখে তাকিয়ে হন হন করে বেরিয়ে গেল। আর আরশি সে তো পেছন থেকে বকেই যাচ্ছে।

উফ আরশি চুপ মা তো এখন চল চল সাজবি না।

দেখলি ভাই আমাকে কেমন বকে গেল বললাম আমি ধাক্কা দিইনি তো আমাকে বকে গেলও।

আজকে আমার জন্মদিন আজকে দিনেও আমাকে কত বকল দেখলি।

বলে কাঁদো কাঁদো মুখ করল।

আমি ওকে স্বান্তনা দিতে দিতে ডেসিন টেবিলের সামনে বসিয়ে দিলাম। আর বললাম এখন কাঁদলে তোকে একটু সুন্দর দেখা যাবে না । হেনতেন আস্তে আস্তে কান্না করে স্বাভাবিক হলো।

আরশি রেডি হতে লাগল আমি একবার বের হয়েজয় সাথে কথা বলতে চেয়েছিলাম কিন্তু বের হতে পারলাম না আরশি সে আমাকে কিছুতেই যেতে দেবে না কোথাও। বাধ্য হয়ে ওর পাশে বসলাম। আরশিকে খুব সুন্দর লাগছে ও দেখতে এমনিতেই খুব সুন্দর। তার ওপর রেট কালারে গ্রাউন্ড গর্জিয়াস সাজ আর ও সুন্দর লাগছে।

সাজ শেষ হতে হতে 4:15 বাজলো ততক্ষণে বাইরে মানুষের আনাগোনা বেড়ে চলেছে।কারন চারটা অনুষ্ঠান শুরু হবে 4 টা 15 বাজে সবাই সারে চারটার ভেতরে চলে এসেছে। আমাদের অন্য সব ফ্রেন্ডরা চলে এসেছে। সবার সাথে কিছুক্ষণ আড্ডা দিলাম রুমেই। পাঁচটায় সবাইকে নিয়ে একসাথে আরশি নিচে নেমে এলো। নিজে এসেছে যার মত আছে এবার আমি কি জয়কে খুঁজতে লাগলাম।

চারপাশে জয় কে খুঁজছি।

চারপাশের না পেয়ে আরশিদের কাছে গিয়ে দাঁড়ালাম।
হঠাৎ একটা ওয়েটার আমার সামনে এসে জোর করে কিছু খাবার নিতে বলে। আমি বারবার বলতেছি খাব না সে বাধ্য করে দেবে। বিরক্ত হয়ে জুসের গ্লাস টা নিলাম এটাই নিলে সমস্যা নাই। যেই গ্লাসটা থেকে জুস খেতে যাব অমনি কোথায় থেকে জানে ঝড়ের গতিতে জয় এসে আমার হাত থেকে টেনে নিয়ে নেয় গ্লাসটা। আমি হা করে ওর দিকে তাকিয়ে আছি এটা কি হলো।

কি হলো জোশটা নিলেন কেন দেন আমি খাব।

না তুমি এটা হবে না।

কে আজব তো খাবা না কেন?

আমি বলছি তাই চলো আমার সাথে।

বলে আমাকে টেনে নিয়ে যেতে লাগল।

একটা নিরিবিলি জায়গায় এসে থামল।

এটা কি হলো আপনি আমাকে এখানে নিয়ে আসলেন কেন। আর খেতে বা দিলেন না কেন?

ওইটাই প্রবলেম ছিল তাই খেতে দেইনাই।

কি প্রবলেম ছিল?

ওইটাই ড্রিঙ্ক মেশানো ছিল

হোয়াট কিভাবে হঠাৎ জুস।

জানিনা আমি ওই ওয়েটার কে ড্রিঙ্ক মেশাতে দেখেছিলাম।এসব একদম খেওনা লোকটার মতলব আমার ভালো লাগে নাই। আর তোমাকে কেমন জোর করে দিল আর কেউ কিছু জোর করে দিলে সেটা অবশ্যই সন্দেহজনক কিছু আছে। আর তুমিওকি সুন্দর নিয়ে খেতে যাচ্ছি আমি না দেখলে কি এত? এত মানুষের মাঝে ঝামেলা করতে চাই না তাই কাউকে কিছু বললাম না। একটু সাবধানে থাকবে।

না থাকবো না।

জয় ভ্রু কুঁচকে ওর দিকে তাকিয়ে আছে।

এভাবে তাকাচ্ছেন কেন আপনি আছেন না আমার খেয়াল রাখার জন্য আপনি খেয়াল রাখবেন।

ওরে দুষ্টু রে।
তখন তুমি আমাকেডিস্টার্ব করেছিল আর আমি শুধু শুধু আরশিকে বকলাম।

হ্যাঁ আমি তো আর কে দিবে। এতবার ধাক্কা দিলাম তবু তো খুললেন না। আর দশ মিনিট ওয়েট করেছি তাও বের হন নাই কি করব তাই ধাক্কা দিয়েছি। তবুও বের হন নাই এত সময় ধরে তো আমিও গোসল করিনা। এজন্যই তো আপনাকে এত সুন্দর দেখা যায় দেখুন আজকে ও বেশি সুন্দর লাগছে।

সুন্দর না হলে কি তোমার নজরে পরবো।

আপনার আর আমার ড্রেসটা তো একদম মিলেছে আপনি কি ইচ্ছে করে মিলিয়ে পরেছেন।

হ্যাঁ যাতে সবাই বুঝতে পারে।

কি বুঝতে পারবে?

কিছু না।

আরশির চিৎকার কানের এলো।
ছারুন আরশি ডাকছে আমাকে।
ছাড়তে তো মন চাইছে না। তোমাকে আজকে এত সুন্দর লাগছে তোমাকে পাশে বসে মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে থাকি তোমার দিকে।

ঢং।

ঢং না বুঝছো এটা হচ্ছে ভালোবাসা।

বুঝলাম।

জয় আমার কপালে একটা কিস করে আমাকে রেখে চলে যায়। তারপর আমিও আরলির কাছে চলে আসি।

আরশি কেটে আঙ্কেল-আন্টি জয় আপু আমাদের ফ্রেন্ড সবাইকেই খাইয়ে দেয় কেক। আমিও আরলি একটু কেক খাইয়ে দিয়ে আরেকটা টুকরা নিয়ে জয়ের কাছে যায়।
জয় কেক খাইয়ে দেই। ও আমাকে কেক খাইয়ে দেয়।
তারপর নাচ গানের অনুষ্ঠান হয়। অনুষ্ঠান শেষ হতে হতে এগারোটা বেজে যায়। এর মাঝে বাসা থেকে ভাই আমাকে কল দেয়। আমাকে নিতে আসতে চায় আমি বলে আসতে হবে না।

ভাইয়া শুনতে নারাজ পরে আরশির মাকে দিয়ে কথা বলাই। তারপর ভাইয়ের শান্ত হয়।

প্লিজ মিষ্টি আজকে থেকে যা না।

সরি রে ভাইয়া কিছুতেই থাকতে রাজি হবে না। এজন্য আমি কখনোই কোনো বান্ধবীর বাসায় থাকতে পারিনা। সারাদিন তো ছিলাম আবার আরেক দিন এসে সারা দিন থেকে যাব। এখন আর থাকতে বলিস না তাহলে আর আসতে দেবে না।

আচ্ছা আমি চিন্তায় থাকব বাসায় গিয়ে আমাকে একটা কল দিবি। ভাই আছে জানি তোর কিছু হবে না।

ডোন্ট ওয়ারি এত চিন্তার কিছু নাই আমি একদম ঠিক থাকব।

সবার থেকে বিদায় নিয়ে বেরিয়ে পড়লাম।

চলবে♥️

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here