#ছুঁয়ে_দিলে_মন
#সাদিয়া_জাহান_উম্মি
#পার্টঃ১১
কাজে মগ্ন নিভৃত।পাশাপাশি নিঝুমের প্রতিটি মুভমেন্ট ও সিসি টিভি ফুটেজে চেক করছে।আর গার্ড’স রা তাদের কাজ ঠিকভাবে করছে কি-না খেয়াল রাখছে আজ এক সপ্তাহ পর কাজে আসায় দম ফেলবার সময় পাচ্ছে না নিভৃত।প্রচুর কাজ জমা পড়ে আছে।হঠাৎ ওর ফোনে একটা কল আসলো আননোন নাম্বার থেকে।প্রথমবার কল রিসিভ না করায় আবারো কল আসাতে কপাল কুচকে তাকায় নিভৃত ফোনটা রিসিভ করে গম্ভীর কন্ঠে বললো,
-” হ্যালো! ”
-” হ্যালো নিভৃত!”
এইভাবে একটা মেয়েলি কন্ঠে নিজের নাম শুনে কপালে চিন্তার ভাজ পড়লো নিভৃতের।
-” জ্বি বলুন! আপনি কে চিনতে পারলাম না তো?”
-” ভাবুন আপনার শুভাকাঙ্ক্ষী!!”
মেয়েটির এমন হোয়ালিপনা কথা শুনে রেগে যায় নিভৃত।বললো,
-” লিসেন! আই ডোন্ট কেয়ের হু আর ইউ?আ’ম জাস্ট ডিস্কানেক্টিং দ্যা ড্যাম ফোন কল।”
-” হেই হুয়াই আর ইউ গেটিং এংগ্রি ম্যান।জাস্ট লিসেন টু মি।আমার কাছে একটা ধামাকা নিউজ আছে।”
-” কি নিউজ?জলদি বলে ফোন রাখুন।”
-” এতো তাড়াহুড়ো কেন মিষ্টার।”
-” আমি ফোন রাখছি।”
নিভৃত ফোন রাখার আফ মুহূর্তে বললো,
-” আপনার প্রান প্রিয় স্ত্রী নিঝুম।।তার প্রাক্তন হবু স্বামির সাথে কথা বলছে সেদিকে কি আপনার খেয়াল আছে মি. নিভৃত রায়হান।”
মেয়েটির কথা শুনে চটজলদি ল্যাপটপের স্ক্রিনে তাকায় নিভৃত সেখানে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে নিঝুম কারো সাথে কথা বলছে।
মেয়েটি উচ্চস্বরে হাসলো।বললো,
-” কি দেখছেন তো?আপনার পিছনে আপনার স্ত্রী এখনো তার আগের প্রেমিকের সাথে যোগাযোগ করে।”
– জাস্ট সাট-আপ আমি বিলিভ করি আমার স্ত্রীকে। ”
বলেই রেগে খট করে ফোন কেটে দিলো নিভৃত গায়ে কোট জড়িয়ে বেড়িয়ে পড়লো সে।
এদিকে ফোনের অপাশে উচ্চস্বরে হেসে উঠলো এলিনা বাকা হেসে বললো,
-” আগুন তো লাগিয়ে দিয়েছি।এইবার এই আগুনে নিঝুম জ্বলবে শুধু সেই অপেক্ষা।”
এলিনার পাশেই আহান বসা যে আপাতত নিঝুমের সাথে কথা বলছে।।এলিনা আহানকে বেষ্ট ওফ লাক দেখালো।
🖤
আমি বেডে হেলাম দিয়ে বসে আছি এটা স্বয়ং নিভৃতের হুকুম আমি যেন বেড থেকে না নামি।অথচ এক্সিডেন্ট এর এক সপ্তাহ হয়ে গিয়েছে।আমি এখন সুস্থ্য শুধু মাথায় মাজে মাজে পেইন হয়।তবুও উনি এতোটা চাপে রাখেন আমাকে।আমি মুচকি হাসলাম,ভালোবাসেন বলেই তো এতো কেয়ের করেন।এই এক সপ্তাহে আমি নিভৃতের ভালোবাসাগুলো প্রচন্ডভাবে উপলব্দি করেছি।আমাকে এক মুহূর্তের জন্যে একা ছাড়েন নি উনি।উপর দিয়ে বিরক্ত প্রকাশ করলেও ভীতরে মারাত্মক রকম ভালোলাগা কাজ করেছে।আমি এতোটুকু বুজেছি এই এক সপ্তাহে আমি নিভৃতের প্রতিটা কাজে প্রেমে পড়েছি,আমার প্রতি তার এতোটা পাগলামো করার প্রেমে পড়েছি।মানুষটাকে ছাড়া আমার এক মুহূর্ত চলবে না।এই যে আজ কাজে চলে গেছেন এতে আমি প্রচন্ড বিরক্ত।নতুন নতুন প্রেমে পড়েছি এখন শুধু উনাকে সামনে বসিয়ে রাখতে মন চায়।তবে এটা যদি ভালোবাসা হয় তবে আমি ভালোবেসেছি। হ্যা ভালোবেসেছি নিজের স্বামিকেই ভালোবেসেছি।
*ভালবাসা মানে আবেগ দ্বারা নিয়ন্ত্রিত
হৃদয়ের অভ্যন্তরীণ একটা অনুভুতি,
যা কেবল – শুধু মাত্র ভালবাসার মানুষের সামনে
ভাষায় অথবা আচরণে প্রকাশ হয় ।*
আর নিভৃতের প্রতিটা আচরনে আমি আমার প্রতি তার গভীর ভালোবাসা অনুভব করেছি।আর আমি তার এই ভালোবাসাগুলোর ওই প্রেমে পড়েছি।
পৃথিবীর সব সুখ তখনি নিজের মনে হয়,
যখন ভালোবাসার মানুষটি
ভালোবেসে পাশে থাকে..আর তখনি নিজেকে অনেক
ভাগ্যবান মনে হয় যখনভালোবাসার মানুষটি বিশ্বাস দিয়ে বিশ্বাস রাখে…জানিনা ভালোবাসার আলাদা
আলাদা নিয়ম আছে কিনা,
তবে আমি কোন নিয়মে নিভৃতকে
ভালবেসেছি তাও জানিনা,
শুধু এইটুকু জানি আমি
নিভৃতকে অনেক অনেক ভালোবাসি…
ভালোবাসা মানে আবেগের পাগলামি,,
ভালোবাসা মানে কিছুটা দুষ্টামি ।
ভালোবাসা মানে শুধু কল্পনাতে ডুবে থাকা,,
ভালোবাসা মানে অন্যের মাঝে নিজের ছায়া দেখা।
আর আমি আমাকে নিভৃতের মাজে দেখি।
তার ভালোবাসার মাজেই নিজের গুরুত্বটা বুজি।
আমি হয়তো অন্যের কাছে গুরুত্বপূর্ণ না হতে পারি।
তবে নিভৃতের কাছে আমি অনেকটা দামি তা আমি খব করে বুজি।
আর আমার কাছে আমার স্বামি আমার সব কিছু।
এখন তাকে ছাড়া আমার চলেই না।
এখন সেই আমার নিঃশ্বাস বিশ্বাস বেচে থাকার পন্থা সব কিছু।
আমার ধ্যান ভাঙ্গে ফোনের শব্দে। নাম্বারটা দেখেই কপাল কুচকে গেলো।এটা কে আবার আননোন নাম্বার।
ধরলাম না। আবার কল দেওয়াতে কেটে দিলাম পর পর তিনবার কেটে দিলাম আবারও কল আসাতে বিরক্ত সীমা ছাড়িয়ে গেলো।কল রিসিভ করে বললাম,
-” সমস্যা কি ফোন কেটে দিচ্ছি তাও কেন কল দিচ্ছেন? ”
-” নিঝুম!””
সেই চেনা ডাক শুনে থমকে গেলাম আমি।এটা তো আহান।আমার গলা শুকিয়ে আসছে।ও আমাকে আর হঠাৎ কল দিলো কেন?এই কয়দিনে আমার আহানের কথা মাথায় একবার ও আসেনি। আমি এখন কি বলবো ওকে?
-” কি কথা বলবে না?”
আমি কেপে উঠলাম।কি বলবো ভেবে পাচ্ছি না।আহান আবার নিজেই বলে উঠে,
-” ভালো আছো?”
আমি কাপা গলায় বললাম,
-” হ্যা ভালো আছি।আপনি?”
-” তোমায় ছাড়া আর কেমন থাকবো?”
-” ন নতুন ক করে ব বাচুন।”
-” আমি যে তোমাকেই ভালোবেসেছি।”
আমি চোখ বন্ধ করে একটা দীর্ঘনিশ্বাস ফেললাম। মনের কথাটা বললাম,
-” কিন্তু আমি আমার স্বামি নিভৃতকে ভালোবাসি।”
-” বাহ! বিয়ের ১০ দিনেই নিভৃতকে ভালোবেসে ফেললে।
আর আমাদের বিয়ে ঠিক হয়েছিলো ৬ মাস। এই ৬ মাসে আমাকে কি ভালোবাসো নি?”
-” নাহ আপনার প্রতি আমার কোন অনুভূতি সৃষ্টি হয়নি।আর নিভৃত আমার স্বামি। এই স্বামি স্ত্রীর পবিত্র বন্ধনে আমরা আবদ্ধ হয়েছি।সেখানে আল্লাহু আকবার স্বয়ং নিজেই আমাদের মনে ভালোবাসার অনুভূতি সৃষ্টি করে দেন।”
-” আমাকে ভুলে গেছো?”
-” না ভুলতে পারলেও ভুলতে হবে।তবে একেবারেও ভুলতে পারবো না। আপনি এখন আমার স্বামির ছোট ভাই।আত্মীয়তার সম্পর্ক অবশ্যই থাকবে। এখন রাখি আমার স্বামি আমাকে পর পরুষের সাথে কথা বলার অনুমতি দেয়নি।”
-” নিঝুম একটা শেষ আবদার রাখবে।” আকুতিভরা গলায় বললো আহান।
আমার কথা বাড়াতে একটুকুও মন চাচ্ছে না তবুও বললাম,
-“বলুন?”
-” আমার সাথে একবার দেখা করবে?”
আমি শক্ত গলায় বললাম,
-” সম্ভব নাহ!”
-” প্লিজ নিঝুম।”
-” সরি আহান! আমি আমার স্বামির সাথে প্রতারনা করতে পারবো নাহ।”
বলেই ফোন কেটে দিয়ে ব্লক করে দিলাম।বিছানায় সুয়ে চোখ বন্ধ করে রইলাম।মাথাটা ব্যাথা করছে।এতো চাপ নিতে পারছি নাহ।আহান আমার অতীত ওকে নিয়ে আর এক মুহুর্ত আমি ভাবতে চাই নাহ একটুও নাহ।আমার এখন সকল ভাবনার মাজে আমার স্বামি নিভৃতকে রাখতে চাই।এইসব ভাবতে ভাবতে কখন যে ঘুমিয়ে পড়লাম জানি নাহ।
হঠাৎ ঘুমের মাজে আমি অনুভব করছি কেউ আমার জামা নিয়ে টানাটানি করছে। আবার আমার গলার মাজে অসংখ্য চুমু খাচ্ছে।আমি বিস্ফোরিত নয়নে তাকালাম তৎক্ষনাত।দেখলাম নিভৃত আমার উপর উঠে আছে।আর আমার জামা খোলার চেষ্টা করছে।আর আমার গলায় মুখ ডুবিয়ে চুমু খাচ্ছেন।আমি অবাক কি করছেন কি উনি?এরকম করছেন কেন উনি?উনি তো আমাকে প্রমিস করেছিলেন আমার অনুমতি ছাড়া উনি কিছু করবেন নাহ।তবে আজ এমন কেন করছেন উনি।উনার স্পর্শগুলো তীব্র থেকে ভীব্র হচ্ছে।আমি না চাইতেও উনাকে ধাক্কাতে লাগলাম।উনার চোখ গুলো লাল হয়ে আছে।আমাকে এভাবে ধাক্কাতে দেখে উনি রেগে গিয়ে আমার গাল চেপে ধরলেন। বললেন,
-” কিহহহ! কি হয়েছে?এভাবে ধাক্কাচ্ছো কেন?আমি তোমাকে আদর করছি ভালো লাগছে নাহ।”
কথা বলার মাজেই উনার মুখ থেকে তীব্র এক বিচ্ছির গন্ধ নাকে এসে লাগলো বুজতে পারলাম উনি ড্রিংক করেছেন।কিন্তু কেন?বিয়ের এই ১০ দিনে আমি কখনো উনাকে একটা সিগারেট পর্যন্ত খেতে দেখনি।সেই জায়গায় উনি মদ খেয়ে এসেছেন।উনি আবার আমাকে জোর করে কিস করতে চাইছেন।আমি উনাকে দু-হাত দিয়ে বাধা দিতে দিতে কান্না করে দিলাম।বললাম,
-” কেন এমন করছেন?আপনি এখন হুসে নেই প্লিজ শান্ত হোন।”
-” কিসের শান্ত হ্যা?আ’ম এবসুলুটলি ফাইন।আমি এখন এই মুহূর্তে তোমাকে নিজের করে পেতে চাই।”
আমি শব্দ করে কেঁদে উঠলাম।কেন এমন করছেন উনি?আমিও তো চাই উনি আমাকে সম্পূর্ণ নিজের করে নিক।তবে ভালোবেসে সজ্ঞানে এইভাবে না যেখানে স্বয়ং উনি নিজেই হুসে নেই।আমি এইভাবে নিজের স্বামির হতে চাই নাহ।
-” প্লিজ থামুন আপনি হুসে নেই।আপনি সজ্ঞানে থাকলে আমি আপনাকে বাধা দিবো নাহ।থামুন এমনটা করবেন না প্লিজ।”
আমার কথা উনি রক্তচক্ষু নিয়ে তাকান আমার দিকে।আমি আবার কিছু বলতে নিবো।উনি আমার ঠোঁট জোড়া নিজের ঠোঁট দিয়ে আকড়ে ধরলেন।চুমু খাচ্ছেন না উনি আমার ঠোঁট গুলোতে রিতিমতো কামড় দিচ্ছেন।ঠোঁট ছেড়ে উনি আমার গলায় মুখ গুজে দিলেন।উনার তীব্র কামড়ের আঘাত আমার সয্য হচ্ছে নাহ।আমি শত চেষ্টা করেও উনাকে থামাতে পারছি নাহহ।কিছুক্ষন পর উনি আমার উঠে বসলেন।আমি কান্নাজড়িত চোখ উনার দিক তাকালাম।আমার ক্লান্ত হয়ে গিয়েছি তাই উঠে বসার মতোও শক্তি পাচ্ছি নাহ।নিভৃত নিজের শার্ট খুলে ছুড়ে ফেলে দিলেন।তারপর আমাকে হেচঁকা টানে নিজের বুকে টেনে নিলেন।আমি কিছুই বলছি না শুধু নিরবে কান্না করে যাচ্ছি। উনি আমার জামার চেইন খুলে জামাটা সম্পূর্ণ খুলে ছুড়ে ফেললেন।আমি চোখ খিচে বন্ধ করে নিলাম।কান্নাজড়িত গলায় বললাম,,
-” আপনি এটা ঠিক করছেন না নিভৃত।আমি আপনাকে বাধা দেবো নাহ।আপনি আমার স্বামি আপনার অধিকার আছে।তবে এটুকু জেনে রাখিয়েন আপনি আমার মন থেকে উঠে গেলেন। যেতোটুকু অনুভূতি সৃষ্ট হয়েছিলো হৃদয়ে তা আজ আমি আগুনে জ্বলছে দিলাম।”
আমার এই বাক্যগুলো উনার কানে পৌছালেও উনার হৃদয়ে পৌছালো নাহ।উনি উনার মতো আমাকে দু-হাতে আকড়ে ধরে আমার গলায় চুমু খেয়ে যাচ্ছেন।আমি চোখ খিচে বন্ধ করে উনার হাত খামছে ধরে আছি।এই মুহুর্তে উনার প্রতিটি ছোয়া আমার কাছে নরক যন্ত্রনার সমান মনে হচ্ছে।এতো কষ্ট লাগছে উনাকে আমি এইভাবে মেনে নিতে পারছি নাহ।উনার ছোয়ায় আমি কোন ভালোবাসা খুজে পাচ্ছি নাহ।পাচ্ছি শুধু রাগের আভাস কিন্তু কেন উনি এতো রেগে গেলেন?কেনই বা আমার সাথে জোড়জবরদস্তি করছেন?
উনি আমাকে ধাক্কা মেরে বেডে ফেলে দিলেন।আমি মাথায় ব্যাথা পেয়ে হালকা আর্তনাদ করে উঠলাম।গায়ে কিছু না থাকায় বহু কষ্টে পাশ থেকে চাদর নিয়ে নিজেকে ঢাকতে চাইলাম।কিন্তু উনি চাঁদর টা টেনে সরিয়ে দিলেন।আমি শেষবার আকুতি ভরা গলায় বললাম,
-“প্লিজ নিভৃত এমন করেন নাহ।ছেড়ে দিন আমায়।”
উনি আমার কথায় ভ্রুক্ষেপ না করে আমার ঠোঁটে চুমু খেতে লাগলেন আর একহাত দিয়ে আমার পেটে হাত বুলাতে লাগগেন।
আমিও আর কিছু বললাম না।আমি হাপিয়ে উঠেছি।নিজেকে বিলিয়ে দিলাম উনার মাজে।তবে আজকের পর থেকে আমি নিভৃতকে শুধু এবং শুধু ঘৃনা করি।উনাকে আমি কখনো ক্ষমা করবো নাহ।
উনার এই নির্মম শারিরীক অত্যাচার সয্য করতে না পেরে এক সময় জ্ঞান হারিয়ে ফেললাম।
#ছুঁয়ে_দিলে_মন
#সাদিয়া_জাহান_উম্মি
#পার্টঃ১২
কাচের জানালা ভেদ করে এক ছটাক আলো এসে পড়লো নিভৃতের মুখে। পিটপিট করে চোখ খুললো সে।মাথাটা বড্ড যন্ত্রনা করছে ওর।দুহাতে মাথা চেপে ধরে,মাথা উঠিয়ে তাকিয়ে দেখে সে নিঝুমের বুকে ঘুমিয়ে আছে। বড় বড় চোখ করে নিঝুমের দিক তাকালো আবার নিজের দিক তাকালো নিভৃত।নিঝুমের ঠোঁটের কোণে রক্ত জমাট বেধে আছে।ঘাড়ে,গলায় আরো খানিক জায়গায় কামড়ের দাগগুলো কালচে হয়ে আছে।ভয়ে চোখ মুখ শুকিয়ে গেছে ওর।নিভৃত ভয়ার্ত মুখে কাপা গলায় নিঝুমকে ডাকলো।নিঝুম এর কোন রেস্পন্স না পেয়ে এইবার নিভৃত আরো ভয় পেয়ে যায়।
-” নিঝুম এএ এই নি..নিঝুম চোখ খ..খুলো। হেই প্লিজ ওপেন ইউর আইস।প্লিজ নিঝুম।” কান্নারত গলা নিভৃতের।
মাথা চেপে ধরে সব মনে করার চেষ্টা করতেই সব মনে পড়লো নিভৃতের আস্তে আস্তে।এটা কি করলো সে?ওতো নিঝুমকে বিশ্বাস করে তাহলে এমন কিভাবে হয়ে গেলো? ওতো এমনটা চাইনি?ও তো চেয়েছিলো নিঝুমের সম্মতি নিয়ে নিঝুমকে আপন করে নিবে?ওই ফোন কলের কথা শুনে রেগে গিয়ে বারে ড্রিংক করে সে।তারপর নেশায় বুত হয়ে নিঝুমকে হারানোর ভয়ে কাল রাত নিঝুমের অনুমতি না নিয়ে এসব করে ফেলে।কিভাবে নিজেকে মাফ করবে সে?আর নিঝুমের সাথে চোখ মেলাবেই বা কিভাবে? চোখ থেকে দু ফোটা অস্ত্রু গড়িয়ে পড়লো । ছেলেরা না-কি সহজে কষ্ট পেলে কাঁদেনাহ।তবে এই কষ্ট নিভৃত নিজে এতো কষ্ট পাচ্ছে সেখানে নিঝুম কতোটা কষ্ট পেয়েছে ভাবতেই বুক ফেটে যাচ্ছে নিভৃতের।
-” এই নিঝুম প্লিজ উঠো নিঝুম।প্লিজ।”
নিঝুম চোখনা খুলায় নিভৃত তড়িঘড়ি করে উঠে দাড়ালো।জামাকাপড় পরিধান করে। দ্রুত ওয়াসরুম থেকে এক মগ পানি নিয়ে নিঝুমের পাশে বসলো।তারপর নিঝুমকে কাপড় পরিধান করিয়ে ওর চোখ মুখে পানির ছিটা দিতে লাগলো।আর নিঝুমকে অনাবরত ডাকতে লাগলো।
💜
চোখে মুখে কিছুর আভাস পেয়ে আস্তে আস্তে চোখ খুললাম আমি। সব কিছু ঝাপসা লাগছে।আস্তে করে উঠতে নিলেই শরীরে অসয্য যন্ত্রনা অনুভব হলো পরে যেতে নিতেই এক জোড়া হাত আমাকে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে ধরে নিজের বাহুতে আবদ্ধ করে নিলো।মাথা উঠিয়ে তাকালাম নিভৃত আমার দিকে কাতর চোখ তাকিয়ে আছে।মাথাটা ঘুরছে প্রচন্ডভাবে । নিভৃতের মুখের দিকে তাকিয়ে কাল রাতের সেই পাষবিক হিংস্রতার কথা মনে পড়ে গেলো। প্রচন্ড ঘৃনায় নিভৃতকে এক ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিলাম।কিন্তু আমার শরীর প্রচন্ড দূর্বল থাকায় নিজেই খাটের কর্নারের সাথে বারি খেতে নিতেই নিভৃত আমাকে আবার ধরে।রাগ আর ঘৃনা মিশ্রিত চোখে তাকালাম আমি। দূর্বল গলায় বললাম,
-” ছে.. ছেড়ে দিন আ..আমায় আপনার এ এই স্পর্শ আ..আমি সয্য ক..করতে পারছি নাহ।আ..আমার না ঘ..ঘৃনা লাগছে প্র..প্রচুর।প্লিজ ডো..ডোন্ট টাচ মি।”
আমার কথায় উনি অসহায় দৃষ্টিতে তাকালেন।ধরা গলায় বললেন,
-” প্লিজ নিঝুম এইভাবে বলো নাহ প্লিজ।আমি জানি আমি তোমার সাথে অনেক বড় অন্যায় করে ফেলেছি। প্লিজ ক্ষমা করে দেও।”
তারপর আবার কিছু একটা ভেবে বললো,
-” নাহ নাহ!! এইভাবে ক্ষমা করা যাবে নাহ তুমি আমাকে শাস্তি দেও প্লিজ তবুও আমার থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়ে নাহ।তোমার এই ঘৃন্য দৃষ্টি আমি সয্য করতে পারছি নাহ!”
আমি তাচ্ছিল্য হাসলাম।ভাঙ্গা গলায় বললাম,
-” আপ..আপনি ক্ষমা চা..চাইছেন কেন? আপনি যা ক..করেছেন আ…আপনার অধিকার আছে।কি..কিন্তু দোষ আমারি আমি কে..কেন মেনে নিতে পা..পারছি নাহ।আপনার এই স্পর্শ গুলো আ..আমার শরীরে এসিডের জলসানির মতো লাগছে।আমার ম..মরে যেতে ইচ্ছে কর..করছে।আ..আমাকে মেরে ফেলুন। আ..আপনার স্পর্শগুলো ভালোবাসার ছিলো নাহ।আ..আপনি প্রচন্ড অসস্তিকরভাবে স্পর্শ ক..করেছিলেন।আপনি সজ্ঞানে থাকলে আ..আমি মানা করতাম না নিভৃত।কি..কিন্তু আ..আপনি আমাকে নেশায় কাতর হয়ে হুশ জ্ঞান হা..হারিয়ে স্পর্শ করেছিলেন।যেটা আমি মে..মেনে নিতে পারছি নাহ।একদম পারছি নাহ।আমার শরীর জ্বালা করছে।বু..বুকের মাজে তীব্র ব্যাথা হচ্ছে।আপ..আপনার সেই রূপ আমি এখনো মা..মানতে পারছি নাহ।”
আমি মেনে নিতে পারছি নাহ এসব তাই মনের সব কষ্টগুলো থেকে এইসব বলতে বাধ্য হলাম।হ্যা আমি ভালোবাসি নিভৃতকে কিন্তু কাল রাতের পর থেকে তা আমি ঘৃনার মোড়াকে মুড়িয়ে দিলাম।
ভালোবাসাটা দুদিনের হোক বা দু বছরের ভালোবাসা ভালোবাসাই।আর যাকে ভালোবাসি তার কাছ থেকে এরকম আচড়ন স্বাভাবিক কেউ মেনে নিতে পারবে নাহ?আমিও পারছি নাহ।
ভালোবাসা ব্যাপারটি দীর্ঘস্থায়ী হলেও ভালোবাসার পাত্র-পাত্রীরা সবসময় দীর্ঘস্থাযী হয় না। চলার পথে আজকে যে মানুষটিকে অনেক বেশি ভালোবাসছেন আপনি, দুদিন পরে সেই হয়তো হয়ে উঠবে আপনার কষ্টের কারণ। এটা কেবল প্রেমিক-প্রেমিকার ক্ষেত্রেই নয়, সত্যি জাগতিক আর সব সম্পর্কের বেলায়ও। কিন্তু কারো দেওয়া কষ্টকে নিয়ে পড়ে থাকলে তো জীবন চলবেনা। আর তাই আর সবার মতন কাছের মানুষের দেওয়া কষ্টকে ভুলতে হবে আপনাকেও। এগিয়ে যেতে হবে সামনে। কিন্তু কী করে ভুলে যাবেন আপনি এতদিন ভালোবেসে আসা খুব আপন আর প্রিয় মানুষটিকে?
ভুলা এতো সহজ না।আমিও পারবো নাহ উনাকে ভুলতে।কিন্তু আমি ভুলতে চাই।উনার থেকেও দূরে চলে যেতে চাই।কারন উনি যতোক্ষন আমার সামনে থাকবেন আমার কাল রাতের কথা মনে পড়ে যাবে।উনি আমাকে আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরলেন কান্নারত গলায় বললেন,
-” প্লিজ এমনটা বলো নাহ।তোমার মুখ থেকে এইসব কথা শুনে আমার ভীতরটা কষ্টে ফেটে যাচ্ছে।আমি মেনে নিতে পারছি নাহ নিঝুম।পারছি নাহ।”
-” আ..আমি কি মে..মেনে নিতে পারছি?” আমার কান্নামাখা গলায় এই কথাবশুনে থম মেরে গেলেন উনি।
কিছুক্ষন পর বলেন,,
-” আমি জানি তোমার পক্ষে মেনে নেওয়া সম্ভব নাহ।কিন্তু আমিও ইচ্ছে করে করেনি নিঝুম।জানি নাহ আমার কি হয়েছিলো আমি ড্রিংক করে ফেলি।আর সেখান থেকেই তোমার সাথে এই নোংরা আচড়ন করে ফেলি।আমি তো তোমায় ভালোবেসে কাছে টানতে চেয়েছিলাম।আমার এই ছ’মাসের দীর্ঘ অপেক্ষার ফল তো আমি এইভাবে চাইনি নিঝুম।হ্যা তোমাকে আজ থেকে নয় বরং আরো ছ’মাস আগে থেকে ভালোবাসি।তোমার থেকে এই ঘৃন্যনান কথাগুলো এখন আমি কিছুতেই সয্য করতে পারছি নাহ।”
থেমে থেকে আবারো বলতে শুরু করলো,,,,
-” আমি তোমাকে ভালোবাসি” কথাটা খুব হালকা নয়।
কিছুদিন চোখে চোখ রেখে, হাত ধরে, স্বপ্ন দেখেই বলে ফেলা যায়না – আমি তোমাকে ভালোবাসি।
প্রথম ভালো লাগা, প্রথম দেখা, প্রথম স্পর্শ
এসব ভালোবাসার দিকে চলে যাওয়া বিভিন্ন রাস্তা ছাড়া আর কিছুই নয়।
একদিন সব রাস্তা মিলে গেলো, যোগ হলে একখানে।
সেইখানে দাঁড়িয়ে যদি কাউকে বলা হয়- আমি তোমাকে ভালোবাসি।
ঐ ভালোবাসা ফেরানোর শক্তি কোন মানুষের নেই।
এমনও হয়, কখনো খুব চেষ্টা করেও মুখ ফুটে বলতে যায় না ভালোবাসার কথা,
অথচ ভেতরে একটা পাখি প্রচন্ড অস্থিরতায় ছটফট করে।এই পাখিটা কোন পাখি? এই পাখিটা মনপাখি।
একটা মনপাখি পোষার জন্য যথেষ্ট আকাশ আমাদের বুকে নেই, তাই এত কষ্ট,তাই তো তোমার কাছ থেকে এই কথাগুলোর সয্য করার মতো শক্তি আমার কাছে নেই।”
(কিছু কথা কালেক্টেড)
আমি উনার কথায় অবাক হয়ে তাকালাম।উনি ভালোবাসেন আমায়।কিন্তু আজ কেন জানি উনার মুখে এই ভালোনাসি কথাটাও আমি মেনে নিতে পারছি নাহ।উনার এই ভালোবাসি কথাটাও আমার অসয্য লাগছে।আমি মুখ ফিরিয়ে নিলাম।আর নিজেকে উনার কাছ থেকে ছাড়াতে চেষ্টা করতে লাগলাম।উনি আমাকে থামাতে থামাতে বলছেন,
-” প্লিজ নিঝুম পাগলামি করো নাহ।তোমার শরীর প্রচন্ড দূর্বল এরকম করো নাহ প্লিজ থামো।”
আমি হাত-পা ছুরছি।আর জোড়ে চিৎকার করে কাঁদছি।
-” ছাড়ুন আমায়! কেন ধরে রেখেছেন?দরদ দেখাচ্ছেন আমাকে?দরদ দেখাচ্ছেন?আপনার এই সো কল্ড ভালোবাসা আমার লাগবে নাহ।বুজেছেন লাগবে নাহহহহ! কেন করলেন আপনি এমন?কেন?মেনে নিয়েছিলাম তো আমি আপনাকে স্বামির স্থান দিয়েছিলাম।তবে কেন আমার বিশ্বাস এইভাবে ভেংগে দিলেন।কেন? কেন? ”
-” প্লিজ থামো নিঝুম এইরকম পাগলামো করো নাহ।আমি তোমার এই কষ্টগুলো মেনে নিতে পারছি নাহ।নিজেকে নিজের কাছেই ঘৃনা লাগছে।
এমন করো নাহ প্লিজ।আমি আর কখনো এরকম করবো নাহ প্লিজ নিঝুম।”
আমার কানে উনার কোন কথাই কানে আসছে নাহ। আমার কাছে শুধু উনার কাল রাত্রের করা সেই আচড়ণগুলো মনে পড়ছে।নিজেকে পাগল পাগল লাগছে।আমি পাগলের মতো আচড়ণ করতে লাগলাম।নিজের হাত পা নিজেই খামচাতে লাগলাম।এতোটা কষ্ট এতোটা যন্ত্রনা কখনো হয়নি।
নিজের চুল দুহাতে টানতে লাগলাম।উনি আমাকে থামাতে চাইছেন কিন্তু আমি চিৎকার করে কান্না করছি।বুকের মাজে এতো কষ্ট বহন করা আমার পক্ষে সম্ভব নাহ।সম্ভব নাহ!
একসময় দূর্বল হয়ে নেতিয়ে পড়লাম উনার বুকে।
💜
নিঝুমকে এরকম পাগলামি করতে দেখে কান্নায় ভেঙ্গে পড়লো নিভৃত নিজেই।একসময় নিঝুম জ্ঞান হারালে নিঝুমকে নিজের বাহুডোরে আবদ্ধ করে নেয়।
-” আমি জানি আমি যেটা করেছি আমি পাপ করেছি।
আমার এই পাপের ক্ষমা নেই নিঝুম ক্ষমা নেই।
আমি এর শাস্তি পাবো নিঝুম।তোমাকে দেওয়া প্রতিটা আঘাত আমি নিজেকে দেবো। তোমার কষ্টগুলো আমার হৃদয় গভীরের অসয্য যন্ত্রনার সৃষ্টি করছে।আমি নিঃশ্বাস নিতে পারছি নাহ।তোমার এই চিৎকার গুলো মনে হচ্ছে যেন আমার গলা চেপে ধরে আছে।আমায় ক্ষমা করো নিঝুম।”
নিঝুমকে সুইয়ে দিয়ে ডক্টর কে কল করে আসতে বললো নিভৃত।ডক্টর নিঝুমকে চেক-আপ করে কিছু মেডিসিন আর ঘুমের ইঞ্জেকশন দিয়ে যায়।ডক্টর যাওয়ার পর নিভৃত নিজেই নিঝুমকে নিজের বুকের মাজে আকড়ে ধরলো আর নিঝুমের মাথায় হাত বুলাতে লাগলো।
নিভৃতের চোখ থেকে এক ফোটা দু ফোটা অস্রুকোনা গড়িয়ে পড়লো।।।
#চলবে,,,,,,,,
ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।কাল থেকে প্রচন্ড মাথা ব্যাথা করছে।একটুও থামার নাম নেই।মেডিসিন নিয়েছি তাও কমছে নাহ।ব্যাথার কারনে কিছু লিখতেও ভাল্লাগছে নাহ।দুঃক্ষিত।
চলবে,,,,,,,,,,
ভূল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।কেমন হয়েছে জানাবেন।আসলে ভালো হইনি জানি।কিন্তু শরীর ভালো না লাগার কারনে লিখতেও মন চাচ্ছে না একটুও। গল্পের প্লট পুরো সেট করা তবুও আমি গুছিয়ে লিখতে পারছি নাহ।