ছুয়ে দিলে মন পর্ব ১৩+১৪

#ছুঁয়ে_দিলে_মন
#সাদিয়া_জাহান_উম্মি
#পার্টঃ১৩
গেস্টরুমে নিজেকে লক করে,বিছানায় এলোমেলো হয়ে সুয়ে আছি আমি। দৃষ্টি স্থির হয়ে আছে আপাতত উপরের দেয়ালে।কি আছে জানি নাহ।শুধু তাকিয়ে থাকতে ইচ্ছে করছে।চোখের কণা বেয়ে অস্রু-কণা গুলো গড়িয়ে পড়ছে অনেক্ষন যাবত।
কিছু কিছু আঘাত ভোলার মতো হয় নাহ।আঘাতগুলো এতোটাই গভীর হয় যে চাইলেও আমরা সেই আঘাতগুলো সেরে উঠতে পারি নাহ।দেহের আঘাত মলম লাগিয়ে সারানো যায়।কিন্তু হৃদয়ের আঘাত কিভাবে সারাবো?হৃদয়ের আঘাত সারাতে যে ভালোপবাসা নামক মলম দরকার।কিন্তু আমার কাছে তো এই মলমটা নেই।
তাই আঘাতগুলোও শতো চেষ্টা করে সারাতে পারবো নাহ।এই আঘাত আমি কাকে দেখাবো আমার যে এই মুহূর্ত কেউ নেই।আজ বড্ড মার কথা মনে পড়ছে।কতোদিন হলো মার কাছে যাই নাহ; মার হাতে খাই নাহ,মায়ের কোলে চুপটি করে সুয়ে থাকি নাহ আর মায়ের সেই আদুড়ে স্পর্শ পাই নাহ।
আমার ভাগ্যটা তো এমন না হলেও পারতো।
ভালোবাসার পবিত্র গোলাপটা ফুটে উঠার আগেই
তা এক দমকা হাওয়ায় ঝড়ে গেলো।
বাহির থেকে দরজা ধাক্কানোর আওয়াজ পাচ্ছি।আর নিভৃতের অনবরত আমাকে ডেকে চলা।
কিন্তু এই মুহুর্তে আমার উনার সামনে যেতে একটুও ইচ্ছে করছে নাহ।
শুধু এই মুহূর্ত নাহ আমি কোন মুহূর্তেও উনাকে চাই নাহ।
যে মানুষটি নিজের ভালোবাসার মানুষটিকে নেশায় বুত হয়ে তার সবচেয়ে বড় সম্পদ তার সম্মান নিয়ে খেলার বিন্দুমাত্র ভাবে নাহ।তার সামনে এক মিনিট ও আমি থাকতে পারবো নাহ।
রাতের কথাগুলোও মনে পড়লে আমার দম বন্ধ হয়ে আসে।হৃদয় গভীরের দুঃখ নামক সমুদ্রে বিষাদময় উত্তাল ঢেউ উঠে।
উনি এখনো আমাকে ডাকছেন,,

-” নিঝুম! নিঝুম প্লিজ ওপেন দ্যা ডোর।প্লিজ!! লেট মি এক্সপ্লেইন ইট।ওপেন দ্যা ডোর।”

আমি চুপ করে রইলাম।তার এতো ডাকাডাকির প্রতিত্তুরে আমার টু শব্দ পর্যন্ত ইচ্ছে করছে নাহ।
প্রাই একঘন্টা যাবত আমি এইভাবে সুয়ে আছি।আর উনি আমাকে ডেকে চলছেন।
জ্ঞানফিরে যখন নিজেকে উনার বুকে আবিষ্কার করেছিলাম।
একরাশ তিক্ততা এসে ভর করেছিলো আমার হৃদয়ে।
মন চাচ্ছিলো উনাকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দেই।উনার এক একটা সামান্যতম স্পর্শ ও আমার দেহে আগুন লাগানোর মতো জ্বলক ধরিয়ে দেয়।
কিন্তু পারিনি আমি।উনার সেই নিষ্পাপ মুখ দেখে থেমে যেতে হয়েছিলো আমার।
উনার মুখে স্পষ্ট আমি এক বেদনার ছোয়া পেয়েছিলাম,সাথে একরাশ অসহাত্ব।
যখন উনার চোখের কোণে মুক্ত’র ন্যায় অস্রু-বিন্দু জ্বলজ্বল করছিলো তখন আমি অবাক হয়ে তাকিয়েছিলাম।
উনি কাঁদছেন! আমার জন্যে কাঁদছেন আমি জানি।
অপরাধবোধ হয়তো উনার ভীতরটা কুড়েকুড়ে খাচ্ছে।তাই উনার চোখে জল।
কিন্তু এটা ভালোবাসা হতে পারে নাহ।
আমি মানি না উনি আমাকে ভালোবাসেন।
উনাকে সয্য করতে পারছিলাম বলেই নিজেকে উনার বাহুডোর থেকে উন্মুক্ত করে তৎক্ষনাত গেস্টরুমে এসে দরজা লক করে সেই কখন থেকে এইভাবেই সুয়ে আছি।
আর উনিও বোধহয় তার কিছুক্ষন পর জেগে গেছেন আর এখানে এসে আমাকে ডাকছেন।
হঠাৎ উনার হুংকারে কেঁপে উঠলাম আমি।

-” নিঝুম! কান্ট ইউ লিসেন টু মি ড্যাম ইট।লেট দ্যা ডোর ওপেন।”

আমি তবুও চুপ।উনি আমারবো রেরে বললেন,,

-” আমি মানছি আমি অনেক বড় অন্যায় করেছি।বাট এইভাবে তুমি নিজেকে কেন কষ্ট দিচ্ছো?তুমি আমাকে শাস্তি দেও যা মন চায় করো বাট এইভাবে নিজেকে রুমবন্ধি করে রেখোনাহ।দরজা খোল।”

আমি এইবারো টু শব্দ পর্যন্ত করলাম নাহ।যা হয়ে যাক আমি দরজা খুলবো নাহ।একদম নাহ! কিছুতেই নাহ!
আমি কিভাবে এতোটা কঠিন হচ্ছি শুধু আমি জানি। মনটা যে মানে নাহ এইযে উনি আমাকে ডেকে চলেছেন উনার এক একটা ডাকে আমার ইচ্ছে করে ছুটে গিয়ে উবাকে জড়িয়ে ধরি আর হৃদয়ের সব কথাগুলো বলে দেই। মন চায় ভালোবাসার প্রকাশ করি উনার কাছে।
ইচ্ছে করে মনের মানুষটাকে খুব বেশি আপন করে
কাছে পেতে। ইচ্ছে করে মন খুলে বলি তাকে
মনের গহিনে লুকিয়ে রাখা প্রতিটা অনুভূতি, ভালবাসার
মিষ্টি মধুর প্রলাপ যে কথাগুলো তাকে বলার জন্য সাজিয়েরেখেছি বুকের ভেতর অনেক যত্ন করে । যে অনুভূতি গুলো আমার স্বপ্ন দিয়ে রচনা করেছি শুধুই তার জন্য |কিন্তু আফসোস আজ শতো চেষ্টা করেও আমি পারবো নাহ বলতে তাকে আমি কতোটা ভালোবেসে ফেলেছি।
চোখ বুজলেই আমার কাল রাতের কথা মনে পড়ে যাচ্ছে।
হঠাৎ বিকট এক শব্দ কানে এলো আমার।মনে হচ্ছে কেউ দরজা ভেঙ্গে ফেলেছে।কিন্তু তবুও আমি একবিন্দু নরলাম নাহ।এখনো আগের মতোই সুয়ে আছি।
কারো পায়ের ধুপ-ধাপ শব্দ পেলাম।
হঠাৎ নিভৃত হেঁচকা টানে আমাকে উনার বুকে এনে ফেললেন।আমি সাথে সাথে চোখ বন্ধ করে ফেলি।উনার মুখটা দেখতে আমার বিন্দুমাত্র ইচ্ছে করছে নাহ।
আচমকা উনার ঠোঁটের ছোয়া পেলাম আমার চোখে।
কেপে উঠলাম আমি।তবুও চোখ বন্ধ রাখালাম।
কিছুক্ষন পর উনার ফিসফিস করে বলা একটা কথা ভীতর শুদ্ধু কাপিয়ে তুললো আমায়।

-” বউ চোখ খুলবি নাহ!”

আমি কাপছি ভীষনভাবে কাপছি।উনার মুখে এই ভয়ংকর ডাক আমি সয্য করতে পারছি নাহ।
কান্নাগুলো দলা পাকিয়ে আসছে তবুও আমি কাঁদতে চাই নাহ।
ঠোঁট কামড়ে ধরে কান্না থামানোর ব্যর্থ চেষ্টা চালাতে লাগলাম।

উনি আমার কপালে ঠোঁট ছুইয়ে দিয়ে বলে উঠেন,

-” ‍‍≈ আঁখিদুটো খুলে দেখ নাহ বউ;
কতোটা অস্থিরতা নিয়ে
আমি বসে আছি তোর পানে;
ওই মায়াবি চোখ দুটো খুলে
আমার চোখের তৃষ্ণা মিটিয়ে দে না বউ।
আমি যে অপেক্ষায় বসে
তোর ওই গভীর নীল চোখের মাজে
নিজেকে হারানোর জন্যে।”≈

এতোটা মায়া নিয়ে ভালোবাসা নিয়ে এই আদুড়ে ডাকে সারা না দিয়ে পারা যায়।কিন্তু আমি পারছি নিজেকে এতোটাই শক্ত করেছি যে উনার এই হৃদয়ের গভীর থেকে ব্যক্ত করা কথাগুলো আমার মন গলাচ্ছে নাহ।
নিজের গালে এক দু ফোটা জলের ন্যায় ভেজা অনুভব করলাম।বুজতে পারলাম উনি কাঁদছেন।
কাঁদুক উনি আজ উনার কান্না করার ফলে আমার গালে
পড়া এই এক দু ফোটা অস্রুজল গুলোও আমার সয্য হচ্ছে নাহ।।
চোখ বন্ধ রেখেই অতন্ত ঠান্ডা গলায় বললাম,

-” আপনি আমাকে ছেড়ে দিন।
আপনার ছোয়া আমি নিতে পারছি নাহ।
বুজতে পারছেন আপনি? ছাড়ুন আমায়।
একা রেখে চলে যান আমাকে।আমি একা থাকতে চাই।”

আমার কথাr পরিপ্রেক্ষিতে উনার কোনরকম নরচড় বা শব্দ পেলাম নাহ।
আশ্চর্যজনক ভাবে আমি হঠাৎ টের পেলাম আমি শূন্যে ভাসছি।নিশ্চয়ই উনি কোলে তুলে নিয়েছেন আমাকে।
আমি আতকে উঠে জলদি উনার গলা জরিয়ে ধরলাম।কিন্তু তবুও চোখ খুলে উনার দিকে তাকালাম নাহ।উনি কাতরগলায় বললেন,,

-” চোখ খুলো নিঝুম!”

আমি কাঠকাঠ গলায় জবাব দিলাম,

-” নাহ!”

-” প্লিজ!”

-” আপনি আমাকে নিচে নামান প্লিজ! আমার এইসব সয্য হচ্ছে নাহ।”

উনি আমাকে নিয়ে সামনে হাটতে হাটতে শুরু করেছেন আমি অনুভব করছি।আমি চিৎকার করে বললাম,

-” আমাকে নামাবেন আপনি?আমি ওই রুমে কিছুতেই যাবো নাহ।আমি আজ থেকে এই গেস্টরুমেই থাকবো।”

-” তুমি চাইলেও তা হবে নাহ।আমি তা কখনো হতে দিবো নাহ।তুমি আমার কাছেই থাকবে।”

উনার কথায় আমি চোখ খুলে তাকালাম, তীক্ষন দৃষ্টি নিক্ষেপ করে তাচ্ছিল্যের স্বরে বললাম,

-” কেন আবারও আমার সাথে নেশা করে এসে জোর করে ফিসিক্যালি ইন্টিমেট হতে পারেন তাই।”।

আমার কথায় উনি থেমে গেলেন।উনার শরীরটা হঠাৎ কেপে উঠলো আমি স্পষ্ট টের পেয়েছি।
উনার ঠোঁট জোড়াও কাপছে।
আমার দিকে মায়াভরা দৃষ্টি নিক্ষেপ করে
আবারো সামনে হাটতে লাগলেন।
আমি মুখ ঘুড়িয়ে নিলাম উনার দিক থেকে।
জোড়া জোড়ি করে লাভ নেই কারন আমি জানি
উনি আমাকে ছাড়বেন নাহ।
তাই সেরকম কিছু করলাম ও নাহ।
চুপ করে রইলাম।উনি আমাকে রুমে নিয়ে এসে বিছানায় বসিয়ে দিলেন।
আমি এইবার সুযোগ পেয়ে যেই না উঠতে নিবো।
উনি আমার হাত চেপে ধরে দাঁতে দাঁত চেপে বললেন,,

-” ডোন্ট ইউর ডেয়ার।”

আমি ঘৃন্য দৃষ্টিতে তাকালাম উনার দিকে।এক ঝটকায়
আমার হাত ছাড়িয়ে নিলাম উনার কাছ থেকে।

-” এতোটা ঘৃনা করো না নিঝুম। তোমার চোখে নিজের জন্যে এতো ঘৃনা সইতে পারছি নাহ।”

-” যে ব্যাক্তি ঘৃনা করার মতো জঘন্য কাজ করে তাকে ঘৃনা করাও মানায় নাহ!”

উনি সাথে চোখ বন্ধ করে নিলেন।আমার কথাটা বোধ হয় উনার হৃদয়ে আঘাত করেছে।তবে টা আমার
হৃদয়ের আঘাত থেকে বেশি নাহ।

-” তোমাকে হারানোর ভয় আজ আমাকে তোমার ঘৃনা দেখার ও সুযোগ করে দিলো।তোমাকে হারানোর ভয়ে
আমি এখন প্রতিদিন গুমড়ে গুমড়ে মরবো।
এর থেকে ভালো আমায় মেরে ফেলো।”

আমি কাঠিন্য গলায় বললাম,

-” আমি খুনি না যে আপনাকে মেরে ফেলবো। আর হারানোর ভয় নিজের মাজে এতো তীব্রভাবে বহন করাও ভালো না যে যাকে হারানোর ভয়ে এতো কিছু করছিলেন দেখুন আজ তাকেই এতো বড় আঘাত করে বসলেন।”

উনি কিছু বলনেন নাহ।শুধু মাথা নিচু করে আমার জন্যে খাবার প্লেট হাতে নিয়ে আমার মুখের সামনে খাবার ধরতেই আমি উনার হাত থেকে প্লেট নিয়ে নিজেই খাওয়া শুরু করে দিলাম।
কারন আমি জানি আমি না করলে উনি শুনবেন নাহ।জোর করে আমাকে খাওয়াবেন তাই নিজেই খেতে লাগলাম।
উনিও বুজুক কষ্ট কাকে বলে?
নিজের মাজে হারানোর ভয় কে এতোটা প্রশয় দেওয়াও ভালো নাহ।
হারানোর ভয়ের ও একটা সীমা থাকা উচিত। হারানোর ভয় কেন এত বেশি? অনেক সময় আমরা হারানোর ভয় পেতে পেতে নিজেই হারিয়ে যাই।মন থেকে হেরে যাই। ইচ্ছে কে ভুলে যাই। যার ফলে যাকে হারানোর ভয়ে মন খারাপ থাকে সে বিশ্বাস হারিয়ে ফেলে।
হারানোর ভয় তো থাকবেই তবে সেটা যতটা পারা যায় অপ্রকাশিত রাখতে হবে। শুধু প্রিয় কে বলতে হবে “আমি তোমার পাশেই আছি, তুমিও থেকো, চলে যেও না”। তাকে বলবেন “আমি আছি। বিশ্বাস রেখো শেষ এ যা হবে সব ভালোর জন্যেই ঠিক হবে। হার মেনে নিও না প্রিয়।” এভাবেই নিজের এবং তার মন কে শক্ত রাখবেন।
তবে যদি দেখেন যে কোনোভাবেই সম্ভব হচ্ছে না তাকে বুঝিয়ে রাখা তবে নিজের প্রতি বিশ্বাস রেখে ধৈর্য ধরুন। যিনি সব কিছু দেন তিনি সেরা তাই দেন। শেষ এ সব ভালো হয়ে যায়।
তখন ধৈর্য রেখে যদি আপনি তার হয়ে যান তাহলে আপনি তো খুশি হবেন ই আর সে অনেক বেশি খুশি হবে। সে তখন আপনাকে আরো বেশি ভরসা করতে পারবে জীবনে।
তাই মন খারাপ করবেন না একদম। হারানোর ভয় তো থাকবেই তবে হারানোর ভয়ের একটা সীমা থাকা উচিত এটি মনে রাখবেন। যিনি সব কিছুর নিয়ন্ত্রক তিনি শেষ পর্যন্ত আপনাকে যোগ্য স্থানেই পাঠাবেন যেই স্থানের আপনি উপযুক্ত।
#ছুঁয়ে_দিলে_মন
#সাদিয়া_জাহান_উম্মি
#পার্টঃ১৪
নিভৃত আর রাজের সামনে কাচুমাচু হয়ে বসে আছে রিধিরা।রিতিমতে সে ভয়ে আছে।রাজের দিকে আড়চোখে তাকাচ্ছে সে।
রিধিরা মনে মনে বললো,

–” কি ভাই আমাকে আবার গুলি করে উড়িয়ে দিবে নাহ তো?হাহ্ আমিও ভয় পাই নাহ।আমাকে ভয় দেখাতে আসলে আমিও বোম মেরে উড়িয়ে দিবো।মেডিকেল ল্যাবে ক্যামিকেল লোচা করে কতো বোম ফুটিয়েছি তেমনি এদের মাথাও বোম ফুটাবো।হাহ্ এই রিধি কে চিনেনাহ।”

রাজের কথায় ধ্যান ভাঙ্গে রিধিরা’র।

-” শুনো তোমাকে এখানে আনার জন্যে কারন আছে।”

রিধি বিরক্ত হয়ে বললো,

-” আমি সেই আধাঘন্টা যাবত আপনাকে এইটাই জিজ্ঞেস করছিলাম যে আমাকে এখানে কেন আনা হয়েছে।”

রাজ দাঁতেদাঁত চেপে বললো,

-” সাট ইউর স্টুপিড মাউথ।”

রিধি ভেংচি কাটলো রাজকে। তারপর নিভৃতকে উদ্দেশ্য করে আমতা আমতা করে বললো,

-” ভা..ভাইয়া কোন দ..দরকার ছিলো যে আমাকে ভার্সিটি থেকে তুলে আনা হয়েছে।”

নিভৃত শীতল কন্ঠেই জবাব দিলো,

-” বি কুল রিধিরা।ডোন্ট বি সো হাইপার।জাস্ট কুল ডাউন।আমি বাঘ বা ভাল্লুক নই যে আমাকে এতো ভয় পাওয়া লাগবে।সো বি নরমাল ওকে। আমাকে নিজের বড় ভাই মনে করতে পারো।”

নিভৃতের কথায় মাথা দুলালো রিধিরা।তারপর সস্থির নিশ্বাস ফেললো।আসলে ওহ নিভৃত আর রাজ কে অনেক ভয় পায়।আপাততো নিভৃতের কথায় ওর ভয়টা কমে গেছে।

-” বলুন জিজু হাউ কেন আই হেল্প ইউ!!”

নিভৃত বাকা হাসলো তারপর একে একে রিধিরাকে সব প্লান বুজিয়ে দিলো।
সব শুনে রিধিরা লাফ দিয়ে উঠে সুপারম্যান এর মতো দারানোর স্টাইল করে বলে,

-” ডোন্ট ওয়ারি জিজু আই উইল হ্যান্ডেল এব্রিথিং।”

তারপর আড়চোখে নিভৃত আর রাজের দিক তাকালো দেখে দুজনি ওর দিকে ভ্রু-কুচকে তাকিয়ে আছে।তা দেখে রিধিরা থতমত খেয়ে সোজা হয়ে দারালো তারপর জোড়পূর্বক হেসে দিয়ে বলে,

-” ইয়ে মানে আসলে…”

ও কিছু বলার আগেই নিভৃত হেসে দিলো তারপর উঠে এসে রিধিরার’র চুলগুলো এলোমেলো করে দিয়ে বলে,

-” পাগলি একটা! ভাইকে কখনো ভয় পাবি নাহ।ওকে! ”

রিধিরা’র ঠোঁটে হাসি ফুটে উঠলো।পর হয়েও কেউ এতোটা মায়াভরা গলায় ওকে এই কথা বলতে পারে।আনন্দে ওর চোখের কোণে জল এসে পড়লো।মুচকি হেসে মাথা নাড়ালো পাশে তাকাতেই রাজের দিকে চোখ যায়। রাজ ওর দিকে ছোট ছোট চোখ করে তাকিয়ে
আছে।রিধিরা রাজ থেকে চোখ সরিয়ে ঠোঁট উল্টালো।তারপর নিভৃতকে বললো,

-” আমার কোন কিছুতেই প্রোবলেম নেই শুধু আপনার এই উগান্ডার পোলা, শয়তানের নানা, পেত্নির জামাই পেত্না একে আমায় ভয় দেখাতে মানা করুন।দেখেন কিভাবে তাকিয়ে আছে আমার দিকে।”

রিধিরা’র কথায় রাজ হা হয়ে গেছে।এই মেয়ে কি বললো এসব।মাথা ঘুরছে ওর এইগুলা কি ধরনের গালি। নিভৃত মিথ্যে রাগ দেখিয়ে বলে,

-” রাজ ডোন্ট বি রুড ইউথ রিধি।সি ইজ সাচ আ কিউট গার্ল।এন্ড নাউ ওলসো মাই সিস্টার।তাই এখন থেকে ওর সাথে সুন্দর করে কথা বলবে।”

রাজ রিধিরা’র দিকে খেয়ে ফেলবো লুক দিলো। তারপর নিভৃতকে বলে,

-” ওকে ভাই আমি আর এখনো ওর সাথে রুড হবো নাহ!”

নিভৃত চলে গেলো। নিভৃত যাওয়ার পর রাজ চোখ রাঙ্গিয়ে বলে,

-” আই উইল সি ইউ লেটার।আমার নামে ভাইয়ের কাছে নালিশ। হারে হারে টের পাবে।”

রাজ চলে যেতে রিধিরা ঢুক গিললো।এইবার কি করবে সে রাজ কেতো খেপিয়ে দিলো। ভয়ে ভয়ে ছোট ছোট পা ফেলে আগাচ্ছে ও।হঠাৎ ধরাম করে রাজ এসে গম্ভীর গলায় বলে,

-” যাবে না-কি এখন কোলে করে নিয়ে যেতে হবে।জলদি চলো অনেক কাজ বাকি।”

রাজের হঠাৎ আগমনে রিধি পড়িমড়ি করে দৌড় লাগালো।রিধি’র এমন দৌড় দেখে রাজ হেসে ফেললো।বিরবির করে বললো,

-” পুরাই পিচ্চি! আমাকে ভয় পায় আবার আমার নামেই নালিশ দেয়।হাহাহা কিউটের ডিব্বা।”

আপন মনে হেসে রাজ ও চলে গেলো।

_____
বারান্দার রেলিং ঘেসে দাঁড়িয়ে আছি আমি।দৃষ্টি স্থির আপাতত নিচে গার্ডেনে কিছু প্রজাপতিদের উপর।
কতো সুন্দর রঙ বেরঙের প্রজাপ্রতি।
আচ্ছা তারা কি পারে নাহ তাদের এই রং গুলো দিয়ে আমার জীবনটা রাঙ্গিয়ে দিতে।
ভাবতেই হেসে ফেললাম আমি।প্রজাপতি কিভাবে রঙ্গিন করবে। যাকে নিয়ে জীবনটাকে রাঙ্গাতে চেয়েছিলাম।
সেই তো আমাকে আরো বিষাদময় করে দিলো।
আমি নিজের সাথে অনেক লড়াই করেছি নিভৃতকে ক্ষনা করে দেওয়ার জন্যে।বার বার ওর সেই অসহায়ত্ব, করুন চাহনী আমার হৃদয়টা ক্ষতবিক্ষত করে দেয়।তখন মন চায় সব ভুলে গিয়ে ওর কাছে ছুটে যাই। কিন্তু যতোবার এই কথাটা ভাবি ততোবার সেই রাতের কথা মনে পড়ে যায়।
তবে আমি জানি নিভৃত ইচ্ছে করে করেনি আমার সাথে এসব।উনার চোখে আমি ভালোবাসা দেখেছি।আজ দুদিন হয়ে গেছে সেই ঘটানার প্রতিটা মুহূর্তে নিভৃত আমার আশেপাশে থেকেছে আমার থেকে বার বার ক্ষমা চেয়েছে।আমি ভাবছি মাফ করে দিবো উনাকে।
চোখ থেকে আপনা আপনি জল গড়িয়ে পড়ছে।।
মন আর মস্তিষ্কের যুদ্ধে না-কি মনের কথা শুনতে হয়।
তবে কি আমি মনের কথা শুনবো। মন যে বলছে
নিভৃতকে ক্ষমা করে নিজেকে তার ভালোবাসার চাঁদরে জড়িয়ে নিতে। সে তো আমার স্বামি অধিকার আছে তার।
আর সে তো বহুবার অনুতপ্ত হয়েছে এর জন্যে।
আর আমিও ও তো ভালোবাসি তাকে।
ভালোবাসার মানুষটাকে বোধহয় এতোটা কষ্ট দেওয়া আমার ঠিক হয়নি! কিন্তু আমারও তো কিছু সময়ের প্র‍য়োজন ছিলো।আমার তো মানতে কষ্ট হচ্ছিলো এসব।
সেই রাত টা আমার মনে অনেক বড় একটা আঘাত করেছিলো।
তবে আর নাহ আমি আর উনাকে কষ্ট দিবো নাহ একদম নাহ।
ঘড়ির কাটার দিক চোখ গেলো চারটা বেজে ছাপান্ন মিনিট এতো সময়ে তো উনার এখানে থাকার কথা?সকাল থেকে উনাকে দেখছি নাহ।সেই যে গেছে আসার নাম নেই।
হঠাৎ ফোনের শব্দে সেদিকে তাকাই ফোনে মেসেজ এসেছে।মেসেজ টা রিধি দিয়েছে।

” Dost plzzz amar sathe dekha korte ashte parbi..plzzz onek important phone e bola jabe nah..plzz dost important na hole ami boltam nah..plzz dost.. ei je thikana ****** ei thikanay eshe por joldi plzzzzzz… Taratari kor..onek joruri…”

মেসেজটা দেখে অন্তর আত্মা কেঁপে উঠলো আমার। রিধির কিছু হলো না তো?গুরুতর না হলে তো ও এইভাবে বলে নাহ।
আমাকে জলদি যেতে হবে।
আমি জলদি করে জামা পরে কোনরকম হিজাবটা বেধে নিলাম।।তারপর একদৌড়ে গেটের সামনে গেলাম।আশ্চর্য হলাম যখন গার্ড’রা আমাকে বাধা দিলো নাহ। অন্য সময় হলে আমাকে কখনো যেতে দিতো নাহ।কিন্তু আজ উলটো আমাকে গাড়িতে উঠিয়ে দিয়ে সামনে পিছনে দুটো করে চারটে গাড়ি ভরা গার্ড’স আর মাজের গাডিতে আমাকে বসিয়ে দিলো।
আমি অবাক আমার থেকে ঠিকানাও জিজ্ঞেস করছে না এরা।
আমি অবাকের চরম পর্যায়ে গিয়ে প্রশ্ন করলাম,

-” হ্যালো ড্রাইভার কাকা! আপনাকে তো আমি ঠিকানা বলি নাই আপনি আমার থেকে ঠিকানা না জেনেই কিভাবে আমাকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন।”

আমার কথা শুনে ড্রাইভার কাকা আমতা আমতা করতে লাগলেন,

-” ম্যাম আসলে ওইযে আপনার ফ্রেন্ড বলে আপনার সাথে দেখা করতে চায় তাই আপনি যেখানে যেতে চাইছেন স্যার আপনাকে সেইখানেই নিয়ে যেতে বলেছেন আমাকে ফোন দিয়ে।”

আমি হা হয়ে রইলাম।এই মেয়ে এতো চালু আমার বরকে দিয়ে সব ব্যাবস্থা করে রেখেছে।
আমার কেমন জানি সবকিছুতে সন্দেহ সন্দেহ লাগছে।
তবুও কিছু বললাম নাহ।চুপচাপ জানালা দিয়ে বাহিরে তাকিয়ে রইলাম।
নিভৃতকে দেখতে ইচ্ছে করছে সেই সকালে বের হয়েছে তাও আমি যখন ঘুমোচ্ছিলাম। এমন কেন উনি? আমাকে একটু বলে গেলে কি হতো?
এইযে এখন তাকে মনের কথাটা বলার জন্যে আমি ছটফট করছি।
সারা রাস্তা নিভৃতকে নিয়েই ভাবতে ভাবতে পার করে দিলাম।।
প্রাই আধাঘন্টা জার্নির পর হঠাৎ গাড়ি থামাতে ভাবনা থেকে বেড়িয়ে এলাম সামনে রিসোর্ট ।আমি হা হয়েব রইলাম এরা এখানে কেন এনেছে।গার্ডরা গাড়ি থেকে নামতে বললে আমি গাড়ি থেকে নেমে দাড়ালাম।
গাড়ি থেকে নামতেই গার্ডরা আমাকে সাদরে রিসোর্ট এর ভীতরে নিয়ে গেলো।রিসোর্টে প্রবেশ করতেই অনেকগুলো গোলাপের পাপড়ি আমার উপরে এসে পড়লো। আমি অবাক হয়ে আছি। মনটা আনন্দে ভড়ে উঠলো দু-হাত ভরে গোলাপের পাপড়িগুলো মুঠোয় নিলাম।

-” ম্যাম সামনে চলুন!”

হঠাৎ একটা মেয়ের ডাকে তাকালাম।মেয়েটা একগাল হেসে আমাকে একটা ফুলের তোড়া ধরিয়ে দিলো।আমিও হাতে নিলাম।

-” আসুন ম্যাম আমার সাথে। ”

মেয়েটা আমাকে ওর সাথে যেতে বলছে।আমি বিষ্ময় নিয়ে সব দেখছি হচ্ছেটাকি আমার সাথে আমার মাথায় কিছু ডুকছে নাহ।সাত পাঁঁচ ভাবতে ভাবতে আমিও মেয়েটার পিছন পিছন গেলাম।মেয়েটা একটা রুমের সামনে আমাকে দার করালো।
আমাকে চোখের ইশারায় ভীতরে প্রবেশ করতে বললো।
আমিও মাথা ঝাকিয়ে দরজা খুলতেই গোল গোল চোখে তাকিয়ে রইলাম।ইয়া বড় হা করে আমি স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে রইলাম স্রেফ।

#চলবে,,,,,,,,

ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।কাজিনের বিয়ে তোর জোর চলছে। সময় হয়ে উঠছে নাহ লিখার।এক বালতি সরি সবার জন্যে।
#চলবে,,,,

কেমন হয়েছে জানাবেন।ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।আপনাদের রেস্পন্স কমে যাচ্ছে।
তাই ভাবছি গল্প তাড়াতাড়ি শেষ করে দিবো।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here