ছুয়ে দিলে মন পর্ব ১৮+১৯

#ছুঁয়ে_দিলে_মন
#সাদিয়া_জাহান_উম্মি
#পার্টঃ১৮
বলে না সময় কারো জন্যে স্থায়ী নয়।
আমরা চাইলেও সময়কে আকড়ে ধরে রাখতে পারি নাহ।
সময় ছুটে চলে আপন গতিতে।
আমার আর নিভৃতের সম্পর্ক খুনশুটি ভালোবাসায় দেখতে দেখতে ২ মাস চলে গেলো।
এই ২ মাসে আমি এটুকু খুব ভালোভাবেই উপলব্দি করেছি যে নিভৃত ছাড়া আমি অচঁল একেবারে অচঁল।
উনি আমাকে এতো এতো ভালোবাসা দেন যে মাজে মাজে আমার খুব ভয় করে।
আমাদের আবার আলাদা হয়ে যেতে হবে নাতো?
আমি পারবো না তাকে ছাড়া থাকতে।
উনি আমার অস্থিত্ব,আমার সত্তা,আমার রন্ধ্রে রন্ধ্রে উনি মিশে গেছেন।
উনাকে ছাড়া আমি একদন্ডও বাঁচতে পারবো নাহ।
ফোনের আওয়াজে আমি সেদিকে তাকাই।রিধি ফোন করেছে।

-” হ্যালো রিধি!”
-“হ্যা দোস্ত কখন আসবি?”
-“আমি এক্ষুনি বাহির হচ্ছি তুই ১২ নাম্বার রোডে দারা।”
-” ওকে জলদি আয়। ”
-“হুম!”

আজ হাসপাতালে যাবো।শরীরটা ইদানিং অনেক খারাপ যাচ্ছে।মুড সুইং হচ্ছে প্রচুর, সাথে বমি, শরীরটাও দূর্বল লাগছে।
আমার যেটা মনে হচ্ছে সেটা আমি কনফার্ম করতেই রিধিকে নিয়ে হাসপাতালে যাবো।
নিভৃতকে মিথ্যে বলেছি যে রিধি অসুস্থ আর তাই
ওকে আমি ডক্টর এর কাছে নিয়ে যাবো।
আমি বাহিরে এসে গাড়িতে উঠে বসলাম।
কিচ্ছুক্ষনের মাজেই ১২ নাম্বার রোডে পৌছাতেই
আমি গাড়ি থামিয়ে রিধিকে গাড়িতে নিয়ে
রওনা দিলাম।

-“কেন যাবি ডক্টর এর কাছে?তোর শরীরট ঠিক আছে তো?” জিজ্ঞেস করলো রিধি।
-” আমি ঠিক আছি তবে আমার মনে হচ্ছে যে মানে….!”
-” কি মনে হচ্ছে প্লিজ নিঝুম বল?”
-” মনে হচ্ছে যে আমি প্রেগনেন্ট।”

আমার কথায় রিধি চোখ বড় বড় করে তাকিয়েই রইলো কতোক্ষন তারপর এতো জোড়ে চিৎকার দিলো যে।
আমার কানের পর্দা ফেটে যাওয়ার উপক্রম।
আমি এক ধমক দিলাম।

-” কি সমস্যা কি এইভাবে চিল্লাচ্ছিস কেন?”
-” দোস্ত আমি খালামনি হবো!লাইক সিরিয়াসলি আই কান্ট বিলিভ দোস্ত।”
-” চুপ কর হারামী।আমি সিউর বলতে পারছি না তাইতো হাসপাতালে যাচ্ছি।”
-” ও মাই গোড! ও মাই গোড! আমি খালামনি হবো!”

আমি কপাল চেপে ধরলাম।এই মেয়ে পুরাই পাগল।
এখনি আমি সঠিকভাবে বলতে পারছি না।
এর এই মেয়ে তার আগেই ধুমধারাক্কা নাচা শুরু করে দিয়েছে।
আমি তীক্ষ্ন দৃষ্টিতে তাকালাম।রিধির ফোন বাজছে।
বললাম,

-” এই ফকিন্নি নাচ বন্ধ করে ফোন রিসিভ কর।”
-” দোস্ত এই একটা পাগল।বিগত দু-মাস ধরে আমাকে ডিস্টার্ব করছে।ফোন রিসিভ করলে কথা বলে না।বিরক্ত লাগে।” বিরক্ত নিয়ে কথাটা বলে ফোন কেটে দিলো রিধি।
-” তাহলে ব্লকলিস্টে ফেলে দে।”
-” দিয়েছি! ভিন্ন ভিন্ন নাম্বার দিয়ে আমাকে ফোন দেয়।আর এসএমএস এ থ্রেড দেয়।”
-” তোর জিজুকে বলবোনি দেখি উনি কিছু করে দিতে পারে কি-না।”
-” আচ্ছা! লাভ ইউ দোস্ত।”
-“লাভ ইউ টু।”

আমি রিধি কথা বলতে বলতে বের হয়ে আসলাম।
হাসপাতালের সামনে আসতেই রাজকে দেখে অবাক হলাম।
রাজ ও আমাদের দেখে এগিয়ে আসলো।

-” আসসালামু আলাইকুম ভাবি!”
-” ওলাইকুম আসসালাম রাজ কেমন আছো?”
-” আলহামদুলিল্লাহ ভাবি! আপনি কেমন আছেন?”
-” আলহামদুলিল্লাহ! ”
-” তা আপনাদের মাজে কে জানি অসুস্থ।”আড়চোখে রিধির দিকে তাকিয়ে দাঁতেদাঁত চেপে।
-” হ্যা রাজ ওই আসলে মানে ইয়ে রিধি একটু অসুস্থ।তাই ওকে নিয়েই আসলাম।”আমতা আমতা করে বললাম আমি।
-” চলুন আমি নিয়ে যাচ্ছি।”
-” আপনি নিয়ে যাবেন কেন?” মাজে বলে উঠে রিধি।
-” আমাকে ভাইয়া পাঠিয়েছে যাতে আমি আপনাদের ঠিকভাবে গার্ড দিতে পারি।”
-” আপনাকে প্রয়োজন নেই।” রিধি বললো।
-” ভাইয়ার কথা আমি অমান্য করতে পারবো না।” রাগি কন্ঠে বললো রাজ।
-” আহহ থাম তোরা।আচ্ছা রাজ।”
-“হ্যা ভাবি।”
-” আপনি এখানেই কোথাও ওয়েট করুন।আমাদের কোন প্রোবলেম হলে আমি আপনাকে ফোন করে নিবো।”
-” আচ্ছা ভাবি আমি ওয়েটিং রুমে ওয়ট করবো।”
-” আচ্ছা!”

কথা শেষে আমি ভীতরে চলে গেলাম।
কিন্তু দেখতে পেলাম রিধি রাজকে ভেংচি কেটে দিয়েছে।
আর রাজ রাগী চোখে তাকিয়ে আছে।
আমার ব্যাপারটা রহস্যজনক লাগছে।রাজের সাথে কথা বলা লাগবে এ ব্যাপারে।
আমি আর রিধি গিয়ে চেয়ারে বসলাম।বেশিক্ষন ওয়েট করত হয়নি।কিচ্ছুক্ষনের মাজেই আমার সিরিয়াল এসে পড়লো।
আমি ভীতরে গেলাম।ডক্টর এর সাথে কুশলাদি বিনিময় করলাম।

-” কি হয়েছে আপনার?” ডক্টর জিজ্ঞেস করলো।
-” ডক্টর আই থিংক আমি প্রেগনেন্ট।”
-” বাসায় টেস্ট করিয়েছিলেন?”
-” নাহ! তবে বমি বমি ভাব,মাথা ঘুরায়,মুড সুয়িং, শরীর ও দূর্বল লাগছে। আসলে আমি মেডিকেল স্টুডেন্ট তো আমি একটু একটু বলতে পারি।”
-” ওহ আচ্ছা বুজতে পারছি।আপনি ওই বেডটায় শুয়ে পড়ুন!”
-” আচ্ছা!”

আমি ডক্টর এর কথামতো সব করলাম উনি অনেকগুলো টেস্ট করলেন।আমাদের কিছুক্ষন ওয়েট করতে বললেন।প্রাই আধাঘন্টার পর উনি হাতে একটা রিপোর্ট নিয়ে আসলেন।আমার বুকটা ধুকধুক করছে।
কি হবে এই রিপোর্টে! আমার কেন জানি ভীষন ভয় লাগছে।
আমি ভয় পেয়ে রিধির হা খামছে ধরলাম।

-” নিঝুম ভয় পাস না। যা হবে ভালোর জন্যেই হবে।” রিধি আমাকে আশ্বাস দিলো।
-” হুম! কিন্তু যদি আমি প্রেগনেন্ট না হই।”
-” তাতে কি? তোকে ভাইয়া এর জন্যে মারবে বোকার মতো কথা বলিস না তো?”

আমি কিছু বললাম নাহ। ডক্টর রিপোর্টটা ভালোভাবে দেখলেন।তারপর আমার দিকে গম্ভীর চোখে তাকালেন।
ডক্টর এর চাহনী দেখে আমার ভয়ে গলা শুকিয়ে আসতে চাইছে।

-” মিসেস নিভৃত রায়হান!”
-” জ..জি।”
-” আপনার ধারনাই ঠিক আপনি মা হতে চলেছেন।”

খুশিতে আমি চোখ বুজে নিলাম।সারা শরীরে এক অদ্ভূত ভালোলাগার শিহরন বয়ে গেলো।
আমি মা হবো।আমারও একটা গুলোমুলো বেবি হবে।
যার ছোট ছোট হাত-পা থাকবে।
আধো আধো মুখে আমাকে মা আর নিভৃতকে বাবাই ডাকবে।
আমার চোখ দিয়ে সুখের অস্রু ধারা বইতে লাগলো।
হঠাৎ ডক্টরের কথায় চোখ তুলে তাকালাম।

-” মিসেস নিভৃত রায়হান। ”
-” জ্বি!”
-” আপনি প্রেগনেন্ট ঠিকি কিন্তু আপনার শরীর অনেক দূর্বল,আপনার শরীরে ক্যালসিয়াম কম,রক্তশূন্যতা। এমতাবস্থায় আপনার কন্সিভ না করাটাই ভালো ছিলো।”

আমি স্তব্ধ হয়ে রইলাম।যা হয়ে যাক আমি আমার বাচ্চার কিছু হতে দিবো নাহ।
আমি আমার পেটে হাত বুলালাম।

-” তাতে কি হয়েছে ডক্টর! আমি আমার বাচ্চার কিছু হতে দিবো নাহ।”
-” আপনার শরীর প্রচুর দূর্বল। ”
-” আমি ঠিকভাবে খাওয়া দাওয়া করবো। নিজের যত্ন নিবো ডক্টর।”
-” আচ্ছা আমি আপনার কথায় ভরসা রাখলাম।
যত্ন নিবেন নিজের ঠিকভাবে আর আমি কিছু মেডিসিন লিখে দিচ্ছি তা ভালোভাবে খাবেন।”
-” আচ্ছা!”

ডক্টর আমাকে মেডিসিন লিখে দিলো।
আমি মেডিসিন সবকিছু নিয়ে বেরিয়ে আসলাম।
আমাদের দূর থেকে দেখেই রাজ আসলো।

-” ভাবি ডক্টর কি বললো?” আকুলতা নিয়ে বললো রাজ।
-” ভালো ভাইয়া জাস্ট শরীর একটু দূর্বল ওর খাওয়া দাওয়া ঠিকভাবে করলেই ঠিক হয়ে যাবে রিধি।”
-” হ্যা নিজের যত্ন নিবে কেন?শুধু পারে ধৈ ধৈ করে লাফাতে।”
-” আপনার তাতে প্রোবলেম কি হ্যা।” রেগে বললো রিধি।”
-” আমার কি প্রোবলেম তা তোমাকে সময়মতো বুজাবো ইডিয়ট।”
-” আপনি ইডিয়ট।”
– ” এমন একটা চড় মারবো নাহ।দাত খুলে হাতে এসে পড়বে।”
-” আমি আপনার মাথা ফাটিয়ে দিবো হকিস্টিক দিয়ে।”

এরা ঝগড়া করেই যাচ্ছে করেই যাচ্ছে।
এদের ঝগড়া দেখে আমার মাথা ঘুরাচ্ছে।।

-” চুপওওওও। আর একটা আওয়াজ আসবে তো আমি দুটোকেই পিটাবো।”

আমার কথায় দুটো থামলো।
রিধিকে আমি গাড়িতে উঠিয়ে দিলাম।তারপর রাজকে বললাম,

-” নিভৃত কোথায় রাজ?”

আমার কথায় রাজ কেমন যেন গাবড়ে গেলো।

-” কেন ভাবি?”
-” বলো জলদি আমি নিভৃতের কাছে যাবো।”
-” নাহহহহ!”
-” কি হয়েছে চিৎকার করছো কেন রাজ?”
-” আপনি যেতে পারবেন নাহ!”
-” কেন?কেন পারবো নাহ?আমার অধিকার আছে।”
-” ভাইয়ার পার্মিশন নেই।”
-“রাজ এটা আমার আদেশ তুমি এক্ষুনি আমাকে নিভৃতের কাছে নিয়ে যাবে।”
-” আচ্ছা আমি ভাইয়ার থেকে জিজ্ঞেস করে নেই।”
-” নাহ উনাকে কিছু বলতে পারবে নাহ।উনার জন্যে সার্প্রাইজ আছে।”
-” ভাবি প্লিজ বুজুন।ভাইয়ার পার্মিশন ছাড়া আপনাকে নিয়ে গেলে ভাইয়া আমাকে রাগাবে।”
-” কিচ্ছু বলবে নাহ।আমি উনাকে বুজিয়ে নিবো।”

রাজ কিছুতেই রাজি হচ্ছিলো না। অবশেষে আমি অনেক জোড়াজোড়ি করায় রাজি হয়েছে।
আমার কেমন যেন সন্দেহ লাগছে।কি আছে ওখানে যে আমি যেতে পারবো নাহ।
রাজ কেমন যেন ঘামছে।কি এতো সমস্যা আমি গেলে।
রিধিকে আমি আমার গাড়ি দিয়ে বাড়িতে পাঠিয়ে দিয়েছি।
আর রাজের গাড়িতে আমি যাচ্ছি।
আমি সব কিছু সাইডে ফেলে দিলাম।
টেন্সন করা যাবে নাহ।
এতে আমার বেবির ক্ষতি হবে।আমাকে যথা সম্ভব হ্যাপি থাকা লাগবে।
ইসস আমার সারাশরীর এখনো কাপছে।
আমি মা হবো।
নিভৃত কতোটা খুশি হবে এটা জানলে।
উনি তো মনে হয় খুশিতে আত্মহারা হয়ে যাবে।
তাই তো হাসপাতাল থেকে ডিরেক্ট উনার কাছে যাচ্ছি আমি।।
উনাকে সার্প্রাইজ দিবো।
উত্তেজনায়, আর আনন্দে আমি রিতিমতো পাগল হয়ে যাচ্ছি।
মা হওয়ার কি এক অদ্ভূত অনুভূতি।
আমার চোখের কোণে আবারো জল জমলো।
আমি আমার পেটে হাত রাখে চোখ বুজে নিলাম।
বেবিকে ফিল করতে লাগলাম।
#ছুঁয়ে_দিলে_মন
#সাদিয়া_জাহান_উম্মি
#পার্টঃ১৯
আমি আর রাজ পৌছালাম নিভৃতের অফিসে।
এখানে এসেই আমার কপাল কুচকে গেলো।
এ কেমন জায়গা?একটা জঙ্গলের ভীতরে একটা দু-তলা ভবন।আমি সন্দিহান গলায় বললাম,

-” রাজ এটা কেমন জায়গা?”
-” আসলে ভাবী ভাইয়া’র এটা সিকরেট অফিস।” ঘাবড়ে গিয়ে বললো রাজ।
-” ওহ আচ্ছা চলো।”

আমি আর রাজ ভিতরে প্রবেশ করলাম।
সবাই আমাকে দেখে সালাম জানালো।আমিও সাদরে সবার সালাম গ্রহণ করলাম।
সবার চোখে মুখেই কেমন যেন একটা ভয়ের ছাপ।
রাজ আমাকে ওয়েটিং রুমে বসিয়ে দিয়ে বললো,

-” ভাবী আপনি এখানে অপেক্ষা করুন আমি ভাইয়াকে বলে আসছি।”
-” আচ্ছা।”

তারপর রাজ রনি নামে একজনকে ডাকলো। রনি ছেলেটি কিছুক্ষনের মাজেই আসলো।আমাকে দেখেই বললো,

-” আসসালামু আলাইকুম ভাবি! ”
-” ওয়ালাইকুম আসসালাম।”
-” কেমন আছেন?”
-” আলহামদুলিল্লাহ! আপনি?”
-” আমিও!”
-” রনি!” ডেকে উঠলো রাজ।
-” জ্বি ভাই।”
-” ভাবির খেয়াল রাখ। আর কিছু খাবারেত ব্যবস্থা কর।
আমি ভাইয়াকে ডেকে নিয়ে আসছি।”
-” আচ্ছা ভাইয়া।”

রাজ চলে গেলো।রনি তড়িৎ গতিতে গিয়ে আবার এক গাদা খাবার নিয়ে আসলো।
আমি অবাক এতোগুলো খাবার আমি খাবো কিভাবে?”আমি বললাম,

-” এতোগুলো খাবার আমি কিভাবে খাবো?”
-” আস্তে আস্তে খান ভাবি।”
-” নাহ আপনিও আসুন। আমার সাথে খান!”
-” নাহ ভাবি থাক।”
-” আরে আসুন না।”

আমার জোড়াজোড়িতে রনিও আমার সাথে খানিক খেলো।
হঠাৎ খেয়াল করলাম। রনির চোখ ছলছল করছে।আমি অবাক হয়ে বললাম,

-” আরে আপনি কাদঁছেন কেন?”
-” ভাবি একটা কথা বলবো রাখবেন?”
-“হ্যা বলুন।”
-” ভাবি আমার ভাইয়া না অনেক ভালো।
আপনাকে ভীষন ভালোবাসে।উনার আপনার প্রতি ভালোবাসার পাগলামো গুলো আমরা অফিসের প্রতিটা মানুষ দেখেছি।”
-” আমি জানি!” মুচকি হাসলাম আমি।
-” ভাবি ভাইয়াকে কখনো ছেড়ে যাবেন না। ভাই তাহলে মরে যাবে।”
-” আমি কেন তাকে ছেড়ে চলে যাবো?”
-” আপনি অনেক ভালো ভাবি।ভাইয়াও অনেক ভালো।”
-” আপনিও অনেক ভালো।”

এইভাবে রনি আমি টুকিটাকি কথা বলতে লাগলাম।
রনির ডাক পড়ায় সে একটু বাহিরে চলে গেলো।আমাকে এখানেই বসতে বলেছে।
এদিকে আমি বোর হয়ে যাচ্ছি।
আধাঘন্টা ধরে বসে আছি। বোর হয়ে যাচ্ছি।নিভৃত
এখনো আসছে না কেন?
আমি উঠে দাড়ালাম নিজেই যাই। দেখে আসি জনাব
আমার থেকেও কি এতো ইম্পোর্টেন্ট কাজ করছেন।
আমার তর সইছে না উনাকে বলার জন্যে।
আমি আস্তে আস্তে উঠতে লাগলাম সিরি দিয়ে দো-তলায়।
সবাই সবার কাজে ব্যস্ত তাই আমাকে কেউ খেয়াল
করেনি।

———–

আহানকে মুখ, হাত-পা বাধা অবস্থায় নিচে ফেলে রাখা হয়েছে।
নিভৃতের হাতে হকিস্টিক যা দিয়ে আহানকে বেদরক পিটিয়েছে নিভৃত আহানকে।
নিভৃতের লোক অনেক কষ্টে আহানকে ধরে এনেছে।
এই ২ মাস জানপ্রান লাগিয়ে ওকে খুজেছে তারা।
অবশেষে ওকে ধরতে পেরেছে।

-” তুই কি মনে করিস?তোর সাথে কে আছে তার নাম না বললে তোকে বাচিঁয়ে রাখবো। নো,নেভার।
তুই যেহেতু বলবি না তোকে বাচিয়ে রেখেও কোন লাভ নেই।আমার নিঝুমকে যে আমার কাছ থেকে ছিনিয়ে নিতে চাইবে।তাকে নিভৃত রায়হান কখনোই বাচঁতে দিবে নাহ।”

নিভৃত আবার আহানকে মারতে লাগলো।
মুখ বাধাঁ তাই আওয়াজ আসছে নাহ।শুধু
গোঙ্গানির আওয়াজ আসছে।
হঠাৎ জোড়ে চিৎকারের আওয়াজে পিছনে ফিরে
তাকায় নিভৃত। আর যা দেখলো তাতে ওর মাথায়
রাগ যেন আরো বেড়ে গেলো।
এমনিতেই আহানের জন্যে প্রচুর রাগ ছিলো।
এখন আবার নিঝুমকে এখানে কেন আসলো?
নিভৃত রাগী গলায় রাজ কে বলে,

-” ও এখানে কেন? তোকে না ওকে নিচে রেখে আসতে বলেছিলাম!”
-” ভাই আমি তো রেখেই এসেছি।কিন্তু ভাবি যে উপরে এসে পড়বে ভাবি নাই।”

নিঝুম এখনো কান্না করছে।নিভৃতের এই রূপ নিঝুম
মেনে নিতে পারছে নাহ।
ওর স্বামি! ওর স্বামি এতোটা ভয়ানক তা ও ভাবতেই পারছে নাহ।
নিভৃত তেড়ে গেলো নিঝুমের দিকে।
নিভৃতকে এইভাবে কাছে আসতে দেখে ভড়কে গেলো।
নিঝুম পিছাতে লাগলো।

———–

আমি মানতে পারছি না নিভৃত। এরকম করতে পারে।
আমার পৃথিবীটা মনে হয় থমকে যাচ্ছে।
আমার নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে আসছে।
এ কোন নিভৃতকে দেখছি আমি।
আমার নিভৃত তো এরকম করতে পারে নাহ।
নিভৃত রাগী চোখে তাকিয়ে আমার দিকে।
হুংকার দিয়ে বললো,

-” কেন এসেছো এখানে?কেন?”

আমি কেপে উঠলাম তার কথায়।
মাথাটা ভন ভন করে ঘুরছে।শরীর থরথর করে কাপঁছে।

-” আপ..আপনি এইসব! এইগুলো! কি করছেন?”
-” কেন জানবে না আমি কে? জানবে না?”
-” কেন করছেন?” কান্না করতে করতে বললাম আমি।
-” আমি একজন গ্যাংস্টার। The Hidden Lion Mafia group এর লিডার আমি।নিভৃত রায়হান বুজেছো?”
-” আপনি এতোটা জগন্য কিভাবে হতে পারেন?” বলেই শব্দ করে কেঁদে উঠলাম আমি।

নিভৃত তেড়ে এসে শক্ত করে আমার গাল চেপে ধরলো।
ব্যাথায় আমি কুকিয়ে উঠলাম।
আমাকে এইভাবে কষ্ট পেতে দেখে রাজ বলে,

-” ভাই ভাবিকে ছেড়ে দিন ভাই।শান্ত মাথায় ভাবিকে বুজান ভাবি বুজবে।”
-” ডোন্ট ইন্টার্ফিয়ার ইন আওয়ার ম্যাটার্স।” চিৎকার করে বললো নিভৃত।তারপর আবার আমাকে বলে,
– কি?কি এমন দরকার যে আমি মানা করা সত্তেও এখানে আসলে কেন?”

আমি কান্না করছি কথা বলার শক্তিটুকুও নেই।
পাশে নজর যেতেই আমার চোখ আহানের উপর পড়লো।
তবে কি নিভৃত এখনো আমাকে বিশ্বাস করতে পারছে নাহ যে আমি উনাকে ভালোবাসি।
তাহলে কেন উনি আহানকে এইভাবে মারছেন?
আহানের তো কোন দোষ নেই।
তাহলে?একজন নিস্পাপ ব্যাক্তিকে কেন মারছেন উনি?
এতোটা নির্দয় উনি কিভাবে হতে পারেন?
আমি এক ঝটকায় উনার কাছ থেকে সরে গেলাম।
তারপর দ্রুত ছুটে গিয়ে আহানের কাছে বসলাম।
আহানের মুখের কাপড় সরিয়ে দিলাম।
আহান জোড়ে জোড়ে নিঃশ্বাস নিলো কতোক্ষন
তারপর বললো,

-” নিঝুম! আমি বলেছিলাম না নিভৃত ভালো মানুষ না।।
ও একজন গ্যাংস্টার।তুমি এর জন্যে আমাকে ঠকালে।
নিঝুম ও অনেক খারাপ নিঝুম।”

আমি কিছু বলছি নাহ।শুধু একনাগাড়ে আহানের হাত ছুটাবার চেষ্টা করতে লাগলাম।
হঠাৎ নিভৃত হেচকা টানে আমাকে দার করালো।
তারপর দাঁতেদাত চেপে বলে,

-“বাহ বাহ! পুরানো প্রেমিকের জন্যে দেখি ভালোবাসা উতলিয়ে পড়ছে।ওকে বাচাঁতে চাইছো।
কিন্তু মনে রেখো ওকে আমি মেরে ফেলবোই।”

ঘৃনায় চোখ বন্ধ করে নিলাম।এতোটা নিকৃষ্ট চিন্তাভাবনা কি করে করতে পারেন উনি।
উনি কি এই ২ মাসে বুজতে পারেন নি আমি উনাকে কতোটা ভালোবাসি।
উনি আমাকে এতোটা খারাপ ভাবেন।
ভাবতেই কান্নাগুলো আরো জোড়ে বেড়িয়ে আসতে চাইছে।আমি রাগে দুঃখে জোড়ে চিৎকার করে বললাম,

-” হ্যা পড়ছে তাতে আপনার কি?
এটলিস্ট ও তো আপনার মতো এতোটা জঘন্য না।
আপনি একজনকে বিনাদোষে কেন মারছেন?
একজন মানুষকে যে বিনাদোষে মারে সে তো জানোয়ার থেকেও খারাপ।”

আমার মুখে ‘জানোয়ার ‘ শব্দ শুনে মনে হয় উনাকে আরো রাগিয়ে দিলো।
উনার ফর্সা মুখ এতোটা লাল হয়েছে যে বলে বুজানো যাবে নাহ।
উনি আমাকে ছেড়ে দিয়ে শরীরের সব শক্তি দিয়ে প্রচন্ড জোড়ে একটা চড় মেরে দিলো।
তাল সামলাতে না পেরে আমি পড়ে গেলাম।

———-

অনেকেই এমন আছেন যে খুব সাধারণ কথায়ও খুব বেশি রেগে যায়। এই স্বভাবের কারণে খুব কাছের মানুষের সাথেও অনেক ভুল বোঝাবুঝি তৈরি হয়ে যায়। একটি নির্দিষ্ট মাত্রা পর্যন্ত রাগ মেনে নেয়া গেলেও মাত্রাবিহীন রাগারাগি কারও কাম্য নয়
রেগে গেলে আমার যে কী হয়…মাথার কিছু ঠিক থাকে না’—এমনটা বলতে শোনা যায় অনেককে। সামান্য বিষয়ে রেগে গিয়ে জিনিসপত্র ভাঙচুর, গালাগালি, চিৎকার-চেঁচামেচি, এমনকি নিজেকে বা অপরকে আঘাত করেন।
অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনায় রাগ একটি স্বাভাবিক আবেগ হলেও এর প্রকাশ যদি অনিয়ন্ত্রিত বা অন্যের জন্য ক্ষতিকারক অথবা অপ্রীতিকর হয়, তখন এটি নিঃসন্দেহে অগ্রহণযোগ্য। রাগের কারণে সম্পর্কের বিচ্ছেদ, বড় ধরনের শারীরিক ক্ষতি, অঙ্গহানি বা এমনকি কারও মৃত্যুর খবরও উঠে আসে সংবাদমাধ্যমে। তবে রাগের কারণে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয় কিন্তু ব্যক্তি নিজেই। দূরত্ব তৈরি হয় তার পারস্পরিক সম্পর্কে, কমে যায় এর গুণগত মান অথবা তার প্রতি অন্যদের সম্মানবোধ, আগ্রহ। বিষণ্নতা, হীনম্মন্যতা বা অপরাধবোধে আক্রান্ত হয় ব্যক্তি। শুধু তা-ই না, অতিরিক্ত রাগ কমিয়ে দিতে পারে আমাদের দৈনন্দিন জীবনযাপনের স্বাভাবিক দক্ষতা অথবা উৎপাদনশীলতা। বিঘ্ন ঘটায় সার্বিক জীবনছন্দে।
তেমন আজ নিভৃতের অতিরিক্ত রাগের কারনেই
তার জীবনের সব চেয়ে বড় ভুল সে করে বসলো।
যেটার দ্বায় সে সারাজীবন দিলেও কম পড়বে?

রক্তে ফ্লোর ভেসে যাচ্ছে।চোখ দিয়ে অনাবরত পানি পড়ছে নিঝুমের।নিজের স্বামির হাতেই যে নিজের অনাগত সন্তানের মৃত্যু হবে তা কখনো কামনা করেনি নিঝুম।পেটে হাত দিয়ে অসয্য যন্ত্রনা সয্য করে যাচ্ছে।
এদিকে স্তব্ধ হয়ে আছে নিভৃত নিজের হাতে এমন একটা কাজ হবে ভাবতে পারি নি সে।হাত-পা অসার হয়ে আসছে।রাগের মাথায় এমনটা কি করে হয়ে গেলো?
দৌড়ে গিয়ে নিঝুমের পাশে বসে পড়লো সে।নিঝুমের মাথাটা নিজের কোলে নিয়ে ওর গালে হালকা চাপড় মেরে ডাকতে লাগলো।

-” এই নিঝুম নিঝুম চোখ খুলে রাখো নিঝুম কিছু হবে না।কিছু হতে দিবো না তোমাকে!(চিৎকার করে)রাজ কল দ্যা এম্বুল্যান্স ফাস্ট।”

আবার নিঝুমের দিকে তাকালো,

-” এই নিঝুম! আ..আমি এ.এমনটা ক..করতে চা..চাই নি…”

নিভৃতকে থামিয়ে নিঝুম বহু কষ্টে নিজের কাপাকাপা হাতটি স্পর্শ করালো নিভৃতের গালে। তারপর ধীর আওয়াজে বললো,

-” তু..তুমি মস্ত ব..বড় কষ্ট দিয়ে ফে..ফেললে আমায় নি..নিভৃত।আমার স..সন্তানকে ম..মেরে ফেললে তুমি।”
-” সন্তান?সন্তান মানে? কি বলছো নিঝুম?”
-” আ..আমি মা হতে যা..যাচ্ছিলাম নিভৃত।
কিন্তু তু..তুমি তা হ..হতে দিলে না নি.. নিভৃত।”

কি করে ফেললো আ সে।নিজ হাতে নিজের সন্তানকে মেরে ফেললো।
ছি কিভাবে পারলো।
কি করে নিজেকে ক্ষমা করবে ও।ওর সন্তনকে পৃথিবীতে আসার আগেই অন্ধকারে পাঠিয়ে দিলো।
আর নিঝুমকে! নিঝুমের সাথে কি করে পারলো।
জোড়ে চিৎকার করে কাদঁছে।কিন্তু আজ ওর কান্না নিঝুমের হাহাকার থেকেও ফিকে।

-” আমি জানতাম না নিঝুম কেন বলোনি আমায়?”জোড়ে কান্না করতে করতে বলছে নিভৃত।
-” জানাতেই তো এ..এসেছিলাম।ক..কিন্তু বু..বুজতে পা..পারি নি যে তো..তোমার জীবনে আ..আমার কোন অস্তিত্ব নেই।তো..তোমার ক..কিছু যায় আসে না।আমি বা..বাঁচি বা মরি।”

-” প্লিজ নিঝুম চুপ করো চলো তোমাকে হস্পিটাল নিয়ে যেতে হবে।”

বলেই নিভৃত নিঝুমকে কোলে তুলে নিলো।তারপর দৌড়ে যেতে লাগলো।নিঝুম নিভৃতের শার্টটা আকড়ে ধরে নির্লিপ্ত চাহনী নিয়ে তাকালো নিভৃতের দিকে।
নিভৃত নিঝুমকে নিয়ে এম্বুল্যান্স এ উঠে বসে।ওকে সুইয়ে দিয়ে ওর হাত দুটো আকড়ে ধরলো।

-” নিভৃত আ..আমাকে বাঁচিয়ে রে..রেখে লাভ নেই।আ..আমি যদি বে.বেঁচে যাই তাহলে তোমাকে কখনো মা..মাফ করতে পারবো না।তারচেয়ে ভা..ভালো আ..আমাকে মরে যে..যেতে দেও।তু..তুমি আমার সন্তানকে মে..মেরে ফেলেছো। একজন নাড়ীর স..সবচেয়ে বড় প্রাপ্তিকে ত..তুমি একনিমিষে শেষ ক..করে দিলে।”

-” নিঝুম চুপ করো কিছু হবে না তোমার আল্লাহ্’র দোহাই লাগে চুপ করো।আমি মরে যাবো নিঝুম এইসব কথা সয্য করতে পারবো নাহ।” নিঝুমের হাত দুটো আকড়ে ধরে ধুকড়ে কেদে উঠলো নিভৃত।

নিঝুম বার কয়েক জোড়ে জোড়ে নিশ্বাস নিলো,নিস্তেজ গলায় আস্তে করে বললো,

-” জা..জানতাম না নিভৃত তোমাকে ভা..ভালোবাসার প্রতিদান আ..আমাকে আমার সন্তানকে বি..বিসর্জন দিয়ে করতে হবে।আমাকে ম..মরে যেতে দেও নিভৃত বেচে থাকতে এই কষ্ট নিতে পারবো না।আমাকে ম..মরে যেতে দেও।”

থেমে আবারো আকুতি ভরা স্বরে বললো,

-” আমাকে শে..শেষ বারের মতো তোমার বু..বুকে জড়িয়ে নিবে নি..নিভৃত।তোমার বু..বুকে মাথা রেখেই আমার নিশ্বাস ত..ত্যাগ করতে চাই।”

নিঝুমের কথাটা শুনে বাচ্চাদের মতো করে কেদে উঠলো নিভৃত।তারপর নিঝুমকে নিজের বুকের মাজে চেপে ধরলো।পাগলের মতো চিৎকার করে কাদতে লাগলো।

-” তোমার কিছু হবে না।আমি ব্যর্থ নিঝুম আমি ব্যর্থ না পারলাম নিজের স্ত্রীকে ভালো রাখতে না পারলাম নিজের অনাগত সন্তানকে বাচাতে।আজ তোমার কিছু হলে এই নিভৃত ও এই পৃথিবীতে থাকবে না।আমিও চলে যাবো তোমার মাঝে।”

বলেই নিঝুমের দিকে তাকালো নিভৃত।নিঝুমের চোখ দুটো বুজে আছে।চোখের কোণা দিয়ে এখনো অস্রু গড়িয়ে পড়ছে।কিন্তু নিঝুম যে নিস্তেজ হয়ে গিয়েছে। এই নিঝুম কি আর চোখ খুলবে না।আর কি একটু ভালোবাসার জন্যে নিভৃতের কাছে আবদার করবে না।নিভৃতের যে অনেক কথা বলার আছে ওর নিঝুমকে।
ভেবেই জোড়ে চিৎকার করলো নিঝুমের নাম নিয়ে নিভৃত।

-” নিঝুমমমমমমমমমমমমমমমমমমমম”

চলবে,,,,,

ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।এই পার্ট টা লিখতে গিয়ে আমি নিজেই কান্না করেছি।
আমাকে কেউ বকা দিবে নাহ।
এটা আমি আগে থেকেই ভেবে রেখেছি।
সো! সাথেও থেকো।
আর আজ সবার মনের অবস্থা জানতে চাই।
প্লিজ সবাই আজ অন্তত নিজের মনোভাব টা প্রকাশ করে আমাকে জানাবেন।মন্তব্য করে।
চলবে,,,,
ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।
আগামী পর্বে ঝাটকা আছে ঝাটকাটা সামলাতে পারবেন তো আপনারা।
আর সবাই আমাকে জানান কি হতে পারে আগামী পর্বে।
জানতে সুন্দর সুন্দর মন্তব্য করে সাথেই থাকুন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here