#ছুঁয়ে_দিলে_মন
#সাদিয়া_জাহান_উম্মি
#পার্টঃ২৮
–” মন থেকে আমাকে মেনে নিয়েছো তো নিঝুম।না-কি এখনো
আমাকে ঘৃনা করো?” নিভৃতের প্রশ্ন শুনে আমি অস্রুসিক্ত নয়নে তাকিয়ে বলে,
–” আপনি আমার স্বামি! আর আপনাকে আমি ভালোবাসি।
আর ভালোবাসার মানুষের সাত খুন মাফ।আর যেটা ঘটেছে আপনার দ্বারা সেটার জন্যে আপনি দ্বায়ী নন।
পরিস্থিতির শিকার আপনি!আর এইসবের মূখ্য দোশী হলো আহান।তাই আপনাকে শুধু দূরে ঠেলে দিলে তো আল্লাহ্ তায়ালাও আমার প্রতি নিরাশ হয়ে যাবেন।”
উনি আমাকে নিজের বুকে টেনে নিলেন।বিছানায় হেলাম দিয়ে বসে আমার কপালে চুমু একেঁ দিলেন।
বললেন,
–” আমি হয়তো তোমাকে এতোটা ভালোবাসতে পারবো নাহ।
তবে আমি আমার শেষ নিঃশ্বাস অব্দি তোমার হাতে হাত রেখে সুখে দুঃখে একে-অপরের সাথে থাকার ওয়াদা করলাম।”
–” আমি জানি আপনি আমাকে অনেক ভালোবাসেন।তাই এসব কথা না বললেও আমি মানি আপনি আমার সাথে সবসময় থাকবেন।”
–” আমার কপাল অনেক ভালো নিঝুম! যে তোমাকে নিজের স্ত্রী রূপে পেয়েছি।”
–” সেই স্ত্রী বা কেমন স্ত্রী যে নিজের স্বামিকে ঘৃনা করে! অবিশ্বাস করে।হয়তো মাজে মাজে রাগ অভীমান হবে তবে সেটা যেন ক্ষনিকের হয়।
নিজের স্বামিকে ভুল বুজে দূরে ঠেলে দেওয়া কোন আদর্শ স্রীর কাজ না! বরংচ নিজের স্বামির কথাগুলো শুনে তাকে বিশ্বাস করা।কারন পৃথিবীতে স্বামির ভালোবাসার উর্ধ্বে কিছু নেই।”,
–” তোমার প্রতিটা কথা আমার মনে ভালোবাসার এক অদ্ভূত শিহরণ বয়ে যায়।যদি তোমার মতো সব স্ত্রী তাদের স্বামিদের বুছতো।”
আমি কিছু বললাম নাহ চুপ করে রইলাম।আজ ঘুমোতে চাই আমি শান্তির ঘুম।
নিজের স্বামির বুকের মাজে শান্তিতে ঘুমোনের চেয়ে আর কিছুই নেই।
.________________.
বিছানায় সুয়ে একধ্যানে তাকিয়ে আছে রিধি।
একধ্যানে সিলিং এর দিকে তাকিয়ে আছে সে।
মনে রয়েছে একরাশ অভীমান।
হাস্পাতাল থেকে এসেছে সে একসপ্তাহ আগে।এখন অব্দি রাজ তাকে একটা ফোন ও করেনি।
আর রিধি ফোন করবে তাও পারছে না কারন তার কাছে নাম্বার নেই।নিঝুম আর নিভৃত থেকে যে নাম্বার এর কথা জিজ্ঞেস করবে তাও পারছে নাহ।কারন তারা যদি জিজ্ঞেস করে কেন চায় সে?তখন কি করবে সে?
তারা তো জানে রিধি আর রাজের মাজে সাপে নেউলে সম্পর্ক।
কি করবে ভেবে না পাচ্ছে নাহ রিধি।
কান্না চলে আসছে তার।
চোখের কোনে জল চিকচিক করছে তার।
_________________
ফোন সামনে নিয়ে বসে আছে রাজ।
ভীষন জড়তা কাজ করছে তার মাজে।
রিধির ফোন নাম্বার তার কাছে আছে।
তবে সে ফোন দিবে কি-না ভাবছে।
কারন হাস্পাতালে থাকতে রিধিকে ‘ভালোবাসি’ বলাতে রিধি দৌড়ে চলে যায়।
এতে তো মনে হয় রিধি তাকে ভালোবাসে নাহ!
তাই ওকে কল দিবে কি-না এই নিয়ে কেমন একটা অসস্তিবোধ হচ্ছে।
কিন্তু আজ এক-সপ্তাহ ধরে যে রিধিকে সে দেখতে পারছে নাহ।
একেতো নিঝুম অসুস্থ তাই নিভৃত ২৪ ঘন্টা তার কাছে তাকে।
এই কারনে সব রকম কাজের চাপ রাজের ঘাড়ে পড়েছে।
সব কাজ তাকে একা হাতে সামলাতে হচ্ছে।
অন্যদিকে আরাফাত দেশে আসছে জলদি।
তাকে ধরার জন্যে সকল ব্যবস্থা করা লাগছে।
আর কিছু ভাবতে পারছে না রাজ।নাহ! তাকে একবার রিধিকে দেখতেই হবে যে করেই হোক।
গড়ির দিকে তাকালো রাজ সেখানে এগারটা বেজে বিয়াল্লিশ মিনিট দেখাচ্ছে।
এতো রাতে কি রিধি জেগে আছে?
উফফ! এতো কিছু ভাববার সময় নেই।
তাই ঝটপট গাড়ি নিয়ে বেড়িয়ে পড়লো রাজ।
রিধিদের বাড়ির থেকে একটু দূরে গাড়ি থামায় রাজ।গাড়ি থেকে নেমে দাড়ায় রাজ।তারপর রিধিদের বাড়ির কাছে এসে দেখে বাড়ির গেটে দারোয়ান পাহারা দিচ্ছে।উপায় পাচ্ছে না রাজ কোন।দেয়াল টপকিয়ে যাবে কি?
দেয়ালের সাথে ঘেসে একটা মেহগনি গাছ দেখতে পেয়ে মুখে হাসি ফুটে উঠলো রাজের।
সাত পাঁচ না ভেবে সে গাছে চরে যায় তারপর সাবধানে দেয়াল টপকিয়ে নেমে যায়।
তবে নামার সময় দেয়ালে তারকাটা দেওয়া ছিলো সেখানে লেগে পাটা কেটে যায় রাজের।
সেদিকে ভ্রু-ক্ষেপ না করে।
বাড়ির আশেপাশে নজর বুলাতে লাগে।
মুহূর্তেই যা দরকার তা সে পেয়ে যায়।মই! হ্যা মই টা নিয়ে রিধির বারান্দার সাথে এটাচ্ড করে নেয়।
সাবধানে বারান্দায় উঠে যায় সে।উঠেই রাজের মেজাজ খারাপ হয়ে যায়।এতোটা কেয়ারল্যাস কেন মেয়েটা?
বারান্দার দরজা খোলা রেখে দিয়েছে।যে কেউ এখানে প্রবেশ করতে পারবে।
___________
বারান্দায় খানিক শব্দ অনুভূত হতেই সেদিকে তাকায় রিধি।
রিধি এখনো ঘুমোয়নি।
বারান্দায় আবছা কারো ছায়া দেখে ভয় পেয়ে যায় সে।
বারান্দার দরজাটাও খুলে রেখেছে সে।কতোটা কেয়ারল্যাস সে।
এখন কি করবে ও?যদি লোকটা চোর বা ডাকাত হয়।
তাহলে কি হবে?
যদি ওর সাথে উল্টাপাল্টা কিছু করে? ভাবতেই গা শিউরে উঠলো রিধির।
পাশ থেকে ফ্লাওয়ার ব্যাস টা হাতে তুলে নেয় রিধি।
ভয়ে ভয়ে বিছানা থেকে নেমে দাঁড়ায় ও।
গুটিগুটি পায়ে বারান্দার দরজার সামনে আসতেই পর্দা সরিয়ে যেই না বাড়ি দিতে যাবে এমন সময়েই কে যেন তাকে একহাতে তার হাত আর আরেক হাতে তার মুখ চেপে ধরে।
দেয়ালের সাথে মিশিয়ে ফেলে।
চোখ বড়বড় হয়ে আসে রিধির।অন্ধাকার থাকায় কিছু দেখা যাচ্ছে না।সব আবছা লাগছে শুধু বাহিরের ল্যামপোস্টের থেকে আলো আসছে তা দিয়েই কোনরকম দেখা যাচ্ছে।
ভয়ে আর উত্তেজনায় থরথর করে কাঁপছে রিধি।
একসময় জ্ঞান হারিয়ে ঢলে পড়ে সে।
—————-
রিধিকে জ্ঞান হারাতে দেখে সাথে সাথে নিজের বাহুডোরে নিয়ে নেয় রাজ।
প্রচন্ড ভয় পেয়েছে মেয়েটা এখনো তার শরীর মৃদ্যু কাঁপছে।
রিধির গালে হালকা চাপড় মেরে ডাকলো রাজ।কিন্তু রিধির কোন সারাশব্দ নেই।
তাই রিধিকে কোলে তুলে এনে বিছানায় সুইয়ে দেয়।
টেবিল ল্যামটা জ্বালিয়ে রিধির দিকে তাকাতেই সব থমকে যায় রাজের।
ল্যামের হলদেটে আলোয় রিধির মুখটা স্নিগ্ধ দেখাচ্ছে।
এলোমেলো চুল,কাঁপাকাঁপা ঠোঁট! শ্যাম বর্নের এই মেয়েটার মধ্যে যেন রাজ্যের সব মায়া সৃষ্টিকর্তা দিয়ে দিয়েছেন।
রিধির ঘাড়ের দিক নজর যায় রাজের।
জামার হাতাটা খানিক সরে যাওয়ায় কাধের তিলটা স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে।
শুকনো ঢোক গিলে নিজেকে নিয়ন্ত্রনে আনে রাজ।
জামাটা ঠিক করে দিয়ে রিধির জ্ঞান ফিরানোর চেষ্টা করতে লাগে।
চলবে,,,,,,
ভূল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।
কাল গল্প পাবেন নাহ।আর একদিন পর পর দিবো।
দীর্ঘ দেড় বছর পর ঢাকা নানুবাড়ি বেড়াতে যাচ্ছি।
কাজিনদের সাথে একটু হৈ-হুল্লোড় করবো স্বাভাবিক লিখার টাইম পেলেও বজ্জাত কাজিনগুলো লিখতে দিবে নাহ।
বজ্জাতগুলো।ভালোবাসা নিও সবাই।😘