#ছুঁয়ে_দিলে_মন
#সাদিয়া_জাহান_উম্মি
#পার্টঃ২৯
পিটপিট করে চোখ খুলে তাকায় রিধি।
চোখ খুলেই চোখের সামনে রাজকে দেখে বড়সড় করে তাকিয়ে যেই না চিৎকার দিতে যাবে ওমনি রাজ রিধি’র মুখ চেপে ধরে।
রিধি হাত-পা ছুড়াছুড়ি করতে লাগলো।
রাজ বলছে,
–” হুস! রিধি চিৎকার করো নাহ!
ডোন্ট সাউট রিধি।”
–“উম! উম!”
একপর্যায়ে দস্তাদস্তি করতে গিয়ে রিধি’র চোখ যায় ফ্লোরে রক্ত।
প্রাই অনেক ক্ষানিক জায়গায় রক্ত।
রক্ত দেখে রিধি শান্ত হয়ে যায়।
রিধিকে শান্ত হতে দেখে রাজ রিধি’কে ছেড়ে দিয়ে বললো,
–” ডোন্ট সাউট রিধি।
ইট্স মি রাজ।ওকে।”
–” আপনি এখানে কি করছেন?” হাঁপাতে হাঁপাতে বলে রিধি।
–” ওই আসলে মানে..” আমতা আমতা করছে রাজ।
–” আপনি আগে দারান! আপনার শরীরের কোথাও থেকে হয়তো ব্লিডিং হচ্ছে।”
–” ওহ! আসলে তোমাদের দেয়াল টপকিয়ে আসতে গিয়ে হালকা লেগেছে পায়ে।”
রাজের কথায় রিধি আর কিছু না বলে জলদি গিয়ে ফার্ট এইড বক্স নিয়ে আসলো।রাজের পায়ের কাছে বসতে নিলেই রাজ বললো,
–” এটা কি করছো তুমি?”
–” কিছু জিজ্ঞেস করবেন না! আপনার পা থেকে ব্লিডিং হচ্ছে।
আমাকে প্রাথমিক চিকিৎসা করতে দিন।” ধমকে বললো রিধি।
রাজ আর কিছু বললো না।
শুধু নিষ্পলক রিধিকে দেখতে লাগলো।
কতোই না সুন্দর লাগছে এই হলদেতে আলোতে।
তাকে এইখানে দেখে সে চেঁচামেচি না করে।
তার পায়ের ক্ষত নিয়ে সে উদ্বগ্রিব হয়ে উঠেছে।
কে বলেছে রিধি তাকে ভালোবাসে না?ক
যায় নাই সাফ
এইযে রাজ দেখছে রিধি’র চোখে তার জন্যে বেদনা স্পষ্ট।
যেখানে মনে হচ্ছে ব্যাথাটা রাজ না রিধি পেয়েছে।
রাজের পায়ে সাবধানে ব্যান্ডেজ করে দিয়ে রিধি তাকে একটা পেইনকিলার খাইয়ে দিলো।
–” পেইনকিলার খাইয়ে দিয়েছি এখন আর ব্যাথা করবে না।”
–” হুম!”
–” এইবার বলেন আসল কাহিনি কি?”
–” কি কাহিনি?”
–” এইযে এতো রাতে আপনি আমার বাসায় কি করছেন?”
–” দেখো আমি কোন ভণিতা পছন্দ করি না, আমার তোমাকে মনে পরছিলো তাই আমি তোমাকে দেখতে চলে আসছি।”
–” ওহ আচ্ছা! আসলেন কেন?এতোদিন তো দিব্যি ছিলেন তবে আজ কেন আসলেন? না আসলেই তো পারতেন? ‘ভালোবাসি’ বলে দিয়েছেন তো দ্বায়িত শেষ?ভালোবাসার মানুষটার খোজ খবর যে নেওয়া লাগে তা কি আপনি জানেন না?না-কি এক সপ্তাহে ভালোবাসা শেষ?”
রিধি’র কথায় রাজ রিধিকে হেচঁকা টানে নিজের কাছে টেনে এনে চেপে ধরে।
রিধি একটু ঘাবড়ে যায়।
বললো,
–” কি করছেন কি আপনি?”
–” আমার ভালোবাসা কে কি তোমার সস্তা মনে হয় যে এক সপ্তাহেই শেষ হয়ে যাবে?”
–” আমার তো সেটাই মনে হয়!আজ আমার প্রতি ভালোবাসা তো কাল অন্য একজনের প্রতি!”প্রচন্ড অভীমান নিয়ে বললো কথাটা রিধি।
কিন্তু রিধির বলতে দেরি রাজের রিধি’র অধরজোড়া নিজের অধরে গ্রহন করে নিতে দেরি করেনি।
রিধি স্তব্ধ হয়ে রইলো। রিধি ঠিক ওইদিন কলেজের দিনের মতোই অনুভব করতে লাগলো।
একই অনুভূতি! রিধি আবেশে চোখ বুজে নিলো সে জেনে গেছে সেদিনের লোকটা রিধি ছাড়া আর কেউ না।
দীর্ঘ চুম্বনের পর সরে আসে রাজ।
রিধি এখনো চোখ বুজে আছে।
রাজ রিধির গলার খাজে ঠোঁট ছুয়ালো।
রিধি কেঁপে উঠে রাজের কাধ খামছে ধরলো।
রিধি যেন রাজের বুকের মাজে মিশে যেতে চাইছে।
রাজ বুজতে পেরে মুচকি হাসলো।
রিধিকে নিজের বুকের মাজে শক্ত করে চেপে ধরলো।
রিধিও চুপ করে রইলো। ওর কেন যেন কান্না পাচ্ছে ভীষন কান্না!
কিছু বললো না রিধি ওর চোখ দিয়ে আপনা-আপনি পানি পড়তে লাগলো।
–” কান্না করছো কেন?” রাজ প্রশ্ন করলো।
–” জানিনা!” নাক টেনে বললো রিধি।
–” তা কি জানো?” হেসে ফেললো রাজ।
রিধি চুপ করে রইলো।রাজ রিধি’র কানের কাছে ফিসফিসিয়ে বললো,
–” ভালোবাসি রিধি!”
রিধি চুপ করে রইলো।শুধু চোখ বুজে রাজের হৃদস্পন্দন অনুভব করছে সে।
রাজ আবারো বললো,
–” ভালোবাসো না আমায়?”
–” হুঁ!” একেবারে মিহি গলায় বলে রিধি।
–” আবার বলো?”
রিধি রাজকে আরো একটু শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো।
আস্তে আস্তে বলতে লাগলো,
–” ভালোবাসি অনেক আগে থেকে।”
–” তাই?” অবাক হয়ে বললো রাজ।
–” হুঁ! আমাদের প্রথম দেখার কথা মনে আছে আপনার?”
–” মনে থাকবে না কেন? তুমি যে ভয়টাই না পেয়েছিলে আমাকে!”
–” মোটেও ভয় পাই নি আমি!” কপট রাগ দেখিয়ে বললো রিধি।
–” হ্যা তো তো দেখতেই পাচ্ছিলাম।” দুষ্টু হেসে বললো রাজ।
–” আপনি কি আমাকে রাগাতে চাইছেন?তাহলে কিন্তু আমি বলবো না!” বললো রিধি।
–” আচ্ছা! আর বলবো না!”
–“শুনুন তাহলে! আমাদের প্রথম দেখার দিনই আপনাকে আমার ভালোলেগে যায়।এক্কেবারে পাক্কা ওয়ালা ক্রাশ।
সেখান থেকেই আপনার জন্যে মনে ভালোবাসার সৃষ্টি হয়ে যায় বুজতেই পারলাম নাহ।”
–” তাহলে আগে বলো নি কেন?”
–” আপনি তো আমাকে দেখলেই কেমন করে তাকান।
তাই বলতে পারতাম না।আমাকে তো সয্যই করতে পারতেন নাহ।”
–” আচ্ছা তার জন্যে আমি অনেকগুলো সরি।” রিধির কপালে চুমু খেয়ে বললো রাজ।
এইভাবেই গল্প করতে করতে কখন যে ভোর হয়ে গেলো দুজনের কারোরও খেয়াল নেই।
রিধির যখন বাহিরে চোখ যায় তখন সে রাজকে তাড়া দেয়।
রাজ ও দেখে অনেক সকাল হয়ে গিয়েছে।
এখন গিয়ে একটু না ঘুমালে তাহলে ও কাজ করতে পারবে নাহ।
রাজ রিধির কপালে চুমু খেয়ে যেভাবে এসেছিলো সেইভাবেই চলে গেলো।
রিধিও তাকিয়ে রইলো যতোক্ষন রাজকে দেখা যায়।
কিন্তু কিছু করার নেই যেতে তো দিতে হবে।
রাজ থেকে শুনেছে আরাফাত কে ধরতে হবে।
নিঝুমের যেই অবস্থা সেখানে নিভৃত সেখানে বেশি ধ্যান দিতে পারবে নাহ।
রাজকেই সব দেখতে হবে।
তাই বাধ্য হয়ে তাকে পাঠালো।
—————————
নিঝুমকে বুকে নিয়ে সুয়ে আছে নিভৃত।
কতোটা নিশ্চিন্তে ঘুমোচ্ছে তার প্রিয়তমা এক্কেবারে বাচ্চাদের মতো।
এই মেয়েটাকে এতোটাই ভালোবেসে ফেলেছে যে তাকে ছাড়া এখন থাকা অসম্ভব।
ভাগ্য করে এমন একটা স্ত্রী পেয়েছে সে।
যেখানে তার সকল প্রকার দোষ,ভুল মাথা পেতে নিয়ে নেয় কতো সহজে।
এইযে নিভৃত এতো বড় একটা পাপ করে ফেলেছে।
হোক সেটা নিজের অজান্তে তবুও কয়জন মেয়েই বা পারে এতো সহজে ক্ষমা করে দিতে।
না কখনই পারতো নাহ।
এই কারনেই নিঝুমকে আরো বেশি করে ভালোবেসে ফেলেছে।
এই মেয়েটা একদেখাই যে তার ছুঁয়ে দিয়েছে মন।
নিষ্পলক তাকিয়ে থেকে আরো গভীরভাবে নিঝুমকে নিজের সাথে ঝাপটে ধরলো।
আলতো করে মুখের উপর থেকে চুলগুলো সরিয়ে দিলো নিভৃত।
নিচু হয়ে নিঝুমের কপালে,গালে, ঠোঁটে উষ্ম স্পর্শে ভরিয়ে দিলো।
মুচকি হাসলো নিঝুম।
তা দেখে নিভৃত হালকা আওয়াজে তাকে ডাকলো,
–” নিঝুম! এই নিঝুম!”
–” উউউ!”
–” উঠো!নামাজ পড়বে না।আজান দিয়েছে তো।”
–“উউউ!”
–” কি উউ জলদি উঠো।”
——————–
নিভৃতের ডাকে হালকা পলক ঝাপটে চোখ খুললাম আমি।
তাকিয়ে নিভৃতের হাসি মাখা স্নিগ্ধ মুখটা ভেসে উঠলো আমার চোখের সামনে।
হাসি ফুটে উঠলো আমার ঠোঁটে।
আমি উচু হয়ে তার গলা জড়িয়ে ধরলাম।
উনি আমার মাথায় চুমু খেয়ে আমাকে কোলে তুলে নিলেন।
আমাকে নিয়ে ওয়াসরুমে গিয়ে আমাকে ফ্রেস করিয়ে দিলেন,ওযু করিয়ে দিলেন।
আমার মাথায় সুন্দর করে হিজাব বেধে দিয়ে।
আমাকে নামাজ পড়তে বলে আমার কপালে চুমু খেয়ে তিনিও মসজিদে চলে গেলেন।
আমিও নামাজ পড়লাম।
মোনাজাতে আল্লাহ্ তায়ালার দরবারে শুধু একটাই প্রার্থনা আমার স্বামিকে যেন আল্লাহ্ তায়ালা সব বিপদ-আপদ থেকে দূরে রাখেন।তাকে যেন দীর্ঘ আয়ু দান করেন।
আমাকে আয়ু যেন তাকে দিয়ে দেন।
উনাকে যে আমি বড্ড ভালোবাসি।
তাকে ছাড়া আমার বাচা অসম্ভব একেবারেই অসম্ভব।
চলবে,,,,,,,,,,,
ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।
১০ জন কাজিন একসাথে🥴।
বুজেন তো কি অবস্থা।
দীর্ঘ অনেকদিন পর সবাই একসাথে হওয়ায় একপ্রকার বড় বিয়ে বাড়ির অনুষ্ঠানের মতো লাগে।
হৈচৈ ভরপুর।।আমাকে লিখতেই দিবে না।
বজ্জাতগুলা ফোন নিয়ে লুকিয়ে রাখে।🙂
ছুঁয়ে_দিলে_মন
#সাদিয়া_জাহান_উম্মি
#পার্টঃ৩০
নিভৃত হন্তদন্ত হয়ে তৈরি হচ্ছে।
আমরা নাস্তা করার মাজে নিভৃতের কল আসে।
আর তিনি নাস্তা কোনরকম করেই উপরে উঠে আসেন।
আমি টেবিল ঘুছিয়ে রেখে এসে দেখি।
উনি এরকম কেন করছেন আমি বুজতে পারছি না।
উনি টাই বাধঁতে নিলে।
আমি উনার সামনে গিয়ে দাড়াই। উনার হাত থেকে টাই টা নিয়ে নিজে বেধেঁ দিতে লাগলাম।
উনি আমার থেকে লম্বা তাই উনাকে টাই বাধঁতে আমার অসুবিধে হচ্ছে।
আমি উনার পায়ের উপর দাড়ালাম।
টাই বাধঁতে নিলাম আবার কিন্তু পরে যেতে নিতেই উনি আমার কোমড় জড়িয়ে ধরলেন।
উনার ছোয়ায় আমি কেঁপে উঠলাম।
উনি আমার দিকে তাকিয়ে আছেন।
উনার দৃষ্টিতে আমি কিছু একটার দুশ্চিন্তা দেখতে পাচ্ছি।
আমি সুন্দর করে টাই টা বেধেঁ দিলাম।
উনি আমাকে নিজের বুকে চেপে ধরলেন।
অনেক্ষন এইভাবে রাখলেন।আমি বুজিলাম না উনি কি নিয়ে এতো অস্থির।
আমি জিজ্ঞেস করলাম,
–” কি হয়েছে আপনার?কিছু নিয়ে দুশ্চিন্তা করছেন?আমাকে বলুন হালকা লাগবে।”
–” তুমি কখনো ভেঙ্গে পড়বে না নিঝুম! নিজেকে শক্ত করতে হবে তোমাকে।ঠিক আছে? বি আ স্ট্রোং লেডি।” হঠাৎ উনার এই কথা শুনে আমি থমকে গেলাম।বললাম,
–” কি হয়েছে আপনার?কিসব বলছেন?”
–” নিঝুম! আমার কথাটা বুজবে প্লিজ! তোমায় নিজেকে শক্ত করতে হবে।”
–” কিসব বলছেন আপনি? মাথা খারাপ আপনার?আর আপনি থাকতে আমায় কেন শক্ত হতে হবে?আপনি আছেন তো আমার জন্যে।”
–” যদি আমি না থাকি?আমার যদি কিছু হয়ে যায়?” উনার এই দুই লাইনের কথাটা যেন আমার বুকে কাটার মতো বিধঁলো।
কেন এসব বলছেন উনি?উনি জানেন না যে আমার এইসব কথা শুনলে কষ্ট হয়।প্রচন্ড কষ্ট হয়!এইযে এখন আমার বুকটা কষ্টে ফেটে যাচ্ছে উনি কি বুজতে পারছেন না?মুহূর্তেই চোখ ভিজে উঠলো আমার।
জল গড়িয়ে পড়তে লাগলো গাল বেয়ে।আমি ফুফিঁয়ে ফুফিঁয়ে কাঁদছি।আমাকে কান্না করতে দেখে উনি আমার মুখটা দুহাতের আজঁলে তুলে নিলেন।
পরম যত্নে আমার চোখের পানি মুছে দিলেন।
আমি তাকাচ্ছি না উনার দিকে।উনি কেন বলবেন এইসব কথা?
উনি আমার দুচোখের পাতায় চুমু খেলেন,আমার কপালে ঠোঁট ছোয়ালেন,গালে, ঠোঁটে অসংখ্য চুমু খেলেন।
আমি উনার প্রতিটা ছোঁয়ায় কেপে কেপে উঠছি।
–” তাকাও আমার দিক!” উনার করূনগলা শুনে গেলো।
আমি তবুও চোখ খুললাম না।এখনো হিচঁকে দিয়ে যাচ্ছি আমি।
উনি আবার বললেন,
–” অভীমান করেছো?
এই কথা বলবে না?তাকাও আমার দিকে?
আচ্ছা আমি চলে যাচ্ছি! সারাজীবনের জন্যে চলে যাবো বললেও চোখ খুলবে না?”
কলিজা ধক করে উঠলো আমার।আমি চট করে চোখ খুললাম।
উনার মুখের দিকে তাকালাম।
হঠাৎ কেঁদে দিয়ে উনার বুকে ঝাপিয়ে পড়লাম।
জোড়ে জোড়ে কাঁদতে লাগলাম।
আর উনাকে কিল ঘুশি দিতে লাগলাম।
–” আপনি খুব খারাপ। খুব খুব খারাপ।
এতো কেনো কষ্ট দেন আমাকে?
আমাকে কষ্ট দিয়ে বুজি আপনি শান্তি পান।
অনেক শান্তি পান।
আমার সন্তান হারিয়ে আমি অনেক কষ্টে নিজেকে সামলিয়েছি।
কিন্তু আপনাকে আমি কোনমতে হারাতে পারবো না।
কখনো নাহ?আপনি আমার সব। এইসব কথা বলে আমাকে কষ্ট না দিয়ে আমাকে একবারে গলা টিপে মেরে ফেলুন।মেরে ফেলুন!”
আমাকে এইভাবে পাগলের মতো কান্না করতে দেখে উনি ভরকে গেলেন।আমি যে এতোটাও হাইপার হয়ে যাবো উনি ভাবেন নি বোধহয়।
কিন্তু আমি কি করবো?
সন্তান হারানোর বেদনা টা আবারও নাড়া দিয়ে উঠেছে।
সেই সাথে উনার কথায় এক তীব্র ভয়।
উনি আমাকে কোলে তুলে নিলেন।
সাবধানে আমাকে নিয়ে বিছানায় বসলেন।
আমি এখনো উনার কোলে।
–” হুস! থামো থামো আর কাঁদে না।
আমি কোথাও যাবো না!, আমি কি আমার নিঝুমকে ছেড়ে যেতে পারি?
আমি তো তোমাকে ভালোবাসি।
আমি কোথাও যাবো না।”
আমি তবুও শান্ত হলাম না।
আসলে আমি নিজেকে শান্ত করতে পারছি না।
উনি আমার দুগালে হাত দিয়ে উনার মুখোমুখি টেনে নিলেন।
কিছুক্ষন আমার মুখের দিকে তাকিয়ে থেকে হঠাৎ আমার ঠোঁটে ঠোট ডুবালেন উনি।
আমি কিছুক্ষন স্তব্ধ হয়ে বসে থেকে।
দু-হাতে উনার গলা জড়িয়ে ধরলাম।আমিও উনার সাথে তাল মিলাতে লাগলাম।
কিছুক্ষন পর উনি সরে আসতে চাইলেন।
কিন্তু আমি দিলাম না।
আমি উনাকে কিস করতে লাগলাম।
উনি একহাতে আমার কোমড় জড়িয়ে ধরলেন।
আর হাত আমার মাথার পিছনে দিলেন।
থেমে যাক সময়,থেমে যাক সবকিছু! আমি যেন উনার সাথেই সারাজীবন থাকতে পারি।
কিছুক্ষন পর সরে আসলাম,উনার বুকে মাথা রাখলাম,দুহাতে আকড়ে ধরলাম উনাকে,জোড়ে জোড়ে নিশ্বাস নিচ্ছি।
এইভাবে অনেকসময় কেটে গেলো।
হঠাৎ উনার ফোনের আওয়াজে ধ্যান ভাঙ্গলো।
উনি আমাকে একহাতে ধরে রেখে ফোন রিসিভ করলেন।
কথা বলতে লাগলেন,
–” হ্যালো! হ্যা হ্যা ! আমি আসছি।
এইতো আর কিছুক্ষন। আচ্ছা তুই দেখে রাখ।”
ফোন রেখে উনি আমার দিকে তাকালেন।
অসহায়ভাবে বললেন,
–” আমাকে যেতে হবে নিঝুম!”
–“কেন? কোথায় যাবেন?”
–” আজ অনেক বড় একটা কাজে যাচ্ছি।
তুমি আল্লাহ্ তায়ালার কাছে দোয়া করো নিঝুম আমাদের জন্যে।”
–“কি কাজ?আমাকে বলুন?”
–” আল্লাহ্ তায়ালা বাঁচিয়ে রাখলে এসে বলবো তোমায়।
সব বলবো।ধৈর্য রাখো!”
–” নাহ! আপনি কোথাও যাবেন না।”
–” পাগলামি করো না নিঝুম!
আমি আসবো তোমার কাছে ভরসা রাখো।”
আমি উনাকে আকড়ে ধরে রাখলাম।কিছুতেই যেতে দিবো না উনাকে।
–” তুমি আমাকে যেতে দিবে না?”
আমি মাথা নাড়ালাম।উনি আবার বললো,
–” আমি আজ তোমার জন্যে ন্যায় বিচার করতে যাচ্ছি।
ওই আরাফাতকে মারতে যাবো আজকে।”
আমি অবাক চোখে তাকালাম।উনি তাহলে এটার জন্যে এতো তাড়া দিচ্ছেন।
–” আপনি আপনি….” আমার গলা দিয়ে স্বর বের হচ্ছে নাহ।
–” হ্যা! আজ আমাকে যেতে হবে নিঝুম! শুধু তোমার জন্যে নয়।
আরো অনেক মেয়ের জীবন বাচাঁতে যেতে হবে।
আজ ওরা মেয়ে পাচার করবে।
শত মেয়ে আছে ওখানে।আজ ওকে ধরার মুখ্যম সুযোগ।
ওকে ওর শাস্তি দিতে হবে।”
আমি কাঁদছি,আমার যে প্রচুর ভয় করছে।
কিন্তু ওই অসহায় মেয়েদের কথাগুলাও ভাবতে হবে।
ওদের মা,বাবা হয়তো মেয়েদের জন্যে ছটফট করছে।
নাহ! শুধু আমার কথা চিন্তা করলেও হবে না।
ওদের কথাও চিন্তা করতে হবে।
আর আমি জানি আমার নিভৃতের কিছু হবে নাহ্।
বলে না ‘রাখে আল্লাহ্ মারে কে?’
আমিও আল্লাহ্ তায়ালার উপর ভরসা করে উনাকে যেতে দিতে হবে।
আমি উনার বুকে মাথা রাখলাম।ঠান্ডা স্বরে বললাম,
–” আমি আপনাকে বাধা দেবো নাহ।
কারন আপনি ভালো কাজে যাবেন।
আর ওই আরাফাত এর শাস্তি পাওয়া উচিত।
কিন্তু আপনাকেও আমায় প্রমিস করতে হবে।”
–” কি প্রমিস?” উনার ভেজাকন্ঠ।
–” আমার নিভৃতের যেন কিছু না হয়?” অস্রুসিক্ত নয়নে তাকালাম।
–” আমি প্রমিস করলাম।আমি আমার সর্বোচ্চ চেষ্টা করলাম যাতে নিভৃতের নিঝুমের কিছু না হয়।”
আমি উচু হয়ে উনার ঠোঁটে একটা গাঢ় চুমু একে দিলাম।
তারপর উঠে দাড়ালাম।
উনি আমার হাত আকড়ে ধরলেন।
তারপর আমাকে নিয়ে নিচে নেমে আসলেন।
আমি উনাকে গাড়ি পর্যন্ত এগিয়ে দিয়ে আসলাম।
উনি গাড়িতে উঠার আগে আমার কপালে চুমু খেয়ে নিলেন।
তারপর গাড়ি স্টার্ট দিলেন। একবার গাড়ির জানালা দিয়ে আমার দিকে তাকালেন।
আমি মলিন হাসি দিলাম।
উনি চলে গেলেন, উনাকে যতোক্ষন দেখা যাচ্ছিলেন আমি তাকিয়ে ছিলাম।
উনি যাওয়ার পর আমি সোজা রূমে চলে আসলাম।
তারপর ওজু করে এসে নামাজ পড়তে লাগলাম।
আর উনার জন্যে দোয়া করতে লাগলাম।
চলবে,,,,,,,,,
নানুবাড়িতে লিখার টাইমই পাচ্ছি না।সরি সবাইকে।
ঘুরাঘুরি,পার্টি, বিয়ে সাদি এইসব নিয়েই দিন ব্যস্ততায় কাটছে।
তবে আর বেশি পার্ট হবে না।শীঘ্রই শেষ হবে।