#ছুয়ে_দেখো_আমার_শহর
#লেখিকা_হৃদিতা_আহমেদ
পর্ব-২১
জরুরি মিটিং এ আটকে গেছিলেন মি. মাহবুব।রাত নয়টা বেজে গেছে দেখে দ্রুত পায়ে অফিস থেকে বের হচ্ছেন। বাইরে এসে দেখেন বাড়ির গাড়ি পার্কিং লটে দাঁড়িয়ে আছে।অফিসের গাড়ি করেই বাসায় যান তিনি।কিন্তু হঠাৎ কিবরিয়াকে গাড়ি নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে ভ্রু কুঁচকে ফেলেন মি. মাহবুব। গাড়িতে ড্রাইভিং সিটের পাশের সিটে উঠে বসে বললেন,
-” কি ব্যাপার কিবরিয়া, আজ তুমি আমাকে নিতে এলে যে? আমি তো আসতে বলিনি?”
-” স্যার একটু দরকারী কথা ছিল।”
-” তোমাকে কতদিন বলেছি আমাকে স্যার ডাকবে না, কল মি খালুজান।এই ডাকটা শুনতে ভালো লাগে।”
-” সরি খালুজান।”
বলেই চুপ হয়ে যায় কিবরিয়া।মি. মাহবুব কিবরিয়ার দিকে তাকিয়ে মৃদু হাসলেন।এই ছেলেটাকে ভীষণ পছন্দ করেন মি. মাহবুব।স্বপ্নাকে এরকম একটা ভালো ছেলের হাতে দিতে পেরে বেশ গর্ব অনুভব করেন।সূর্যর এক কথায় পুরো পৃথিবী হাজির করতে প্রস্তুত থাকে এই ছেলেটা।অবশ্য ছেলেটার কুল কিনারা সম্পর্কে কিছুই জানেন না, সূর্যই তিন বছর আগে বাড়িতে নিয়ে এসেছিল।ভাবনার বিচ্ছেদ ঘটে কিবরিয়ার ডাকে।
-” খালুজান!”
-” হ্যা বলো শুনছি।”
কিবরিয়া আমতা আমতা করে বলল,
-” পুতুল আপামনির ব্যাপারে একটা কথা বলার ছিল। সূর্য ভাই যাওয়ার আগে বলেছিলেন কোন সমস্যা হলে আপনাকে জানাতে।”
মি. মাহবুব উদ্বিগ্ন হয়ে বললেন,
-” পুতুলের জন্য সমস্যা হচ্ছে তোমার?”
-” না না খালুজান আমার সমস্যা নয় আপামনির কলেজে সমস্যা হচ্ছে তাই বলছি।”
-” কলেজে!! ছেলেটা কী আবার কিছু করেছে?”
-” তাতো জানিনা খালুজান।তবে আজ আপামনিকে আনতে গিয়ে দেখি কিছু লোকাল বখাটে ছেলে আপামনির হাত ধরে টানাটানি করছে।আর বলছিলো তোর হাত ধরায় আমাদের এমপির ছেলেকে মার খাইয়েছিস না? এখন থেকে রোজ তোর হাত ধরবো রে ফুলটুসি, দেখি কি করতে পারিস। আমাকে আর কলেজের দারোয়ান কে দেখেই ছেলে গুলো পালিয়ে যায়।”
মি. মাহবুব রেগে বললেন,
-” তুমি আমাকে তখনই ফোন করোনি কেন কিবরিয়া?”
-” আমি দুবার ফোন দিয়েছিলাম খালুজান আপনি মনে হয় ব্যস্ত ছিলেন তাই ধরতে পারেন নি।”
_________________________
” কেপ্টেন আপনি কবে ফিরবেন?”
” কেপ্টেন, আপনি আমার চেইন টা কোথায় পেয়েছেন বলেন তো!!”
” ধুর আপনি এরকম কেন? একটা মেসেজেরও রিপ্লাই দেন না।ঢং করে আবার মিস ইউ বলেন, হুহ্। বলি মিস করলে তো একটু ফোন করতে পারেন।”
” আমি আর আপনাকে কোনো মেসেজ দেব না,,,,,,,,, সত্যি সত্যি দেব না 😡।”
” আজ যদি আমার মেসেজের রিপ্লাই না দেন আমি আর কখনো মেসেজ করবো না বলে দিলাম।”
” কেপ্টেন, আপনার অফিসে কি ফোন ইউজ করতে দেয় না?”
” কেপ্টেন আপনি কী পৃথিবী থেকে উধাও হয়ে গেছেন? নাকি আপনার অফিসটা অন্য গ্রহে?
” আমি আপনাকে ভীষণ মিস করি কেপ্টেন।”
“ওই কেপ্টেন আপনাকে দেখতে ইচ্ছে করছে তো।”
“আপনার ফোন টা বন্ধ করে রাখেন কেন? ”
” ওই কেপ্টেন, আপনি আসলেই একটা বাজে কেপ্টেন, ইডিয়ট কেপ্টেন, স্টুপিড কেপ্টেন।আপনি একবার ফিরে আসেন শুধু তারপর আমার মেসেজের রিপ্লাই না দেয়ার শাস্তি দেব।কামড়ে দেব, একদম শেষ করে দেব।”
সবগুলো মেসেজ পড়ে মুচকি হাসছে সূর্য।পিচ্চি টা তাকে ভীষণ মিস করেছে।প্রত্যেকটা মেসেজই রাতে সেম টাইমে এসেছে দেখে ঠোঁটে হাসির রেখাটা আরো বড় হয়ে যায় সূর্যের।
কল্লোল সূর্যের কানের কাছে মুখ নিয়ে জোরে বলল,
-” কামড়ের শাস্তি পরে দেখিস, আগে ওই আবু তাহের খাটাশ টাকে রিপোর্ট দিয়ে আয় নইলে আজ সারারাত দুশো মিটারের চক্কর দেয়াবে খাটাশ টা।”
বলেই সবগুলো দাঁত বের করে হাসি দিল কল্লোল।সূর্য মাথা তুলে তাকাতেই দেখে সবগুলো তার ফোনের দিকে তাকিয়েই দাঁত কেলাচ্ছে।ডাফার গুলো সব মেসেজ পড়েছে ভেবেই সূর্য রাগে নাক ফুলিয়ে বলল,
-” দেব না রিপোর্ট, শালারা সারারাত চক্কর দিবি।আর কমান্ডারকে বলবো যে কীভাবে তাকে খাটাশ বলে অপমান করিস।”
পিয়াস ইনোসেন্ট ফেস করে বলল,
-” আমরা আর কী করবো বস, বলবো আমাদের বিগ বসের নির্দেশেই আমরা আপনাকে খাটাশ ডাকি কমান্ডার।তাই না কল্লোল?”
-” হ্যা বস, তাছাড়া আপনি যে তাকে ফাটা তাহের বলে ডাকেন এটাও জানাবেন।”
সূর্য সবগুলোর দিকে রাগে কটমট করে তাকিয়ে জিপ থেকে নেমে থপাসথপাস পা ফেলে হেড কোয়াটারের দিকে এগিয়ে যায়।
_________________
মি. মাহবুব পুতুলকে রুমে না পেয়ে ছন্দের রুমে যান।ছন্দ তখন বই সামনে ঝিম কাটছিল।বাবার গলা পেয়ে ফট করে চোখ তুলে তাকিয়ে দেখে দরজায় বাবা দাঁড়িয়ে আছে।ঘড়ির দিকে তাকিয়ে বলল,
-” কী হয়েছে আব্বু?”
মি. মাহবুব পুরো রুমে চোখ বুলিয়ে বললেন,
-” তোমার পুতুল আপু কোথায় আম্মু?”
-” কেন রুমেই তো ছিল আব্বু!”
-” কই, আমি তো এইমাত্র দেখে আসলাম পেলাম না তো আম্মাজান।আমি ভাবলাম তোমার রুমে আছে তাই দেখতে এলাম।”
বাবার কথায় ছন্দ কিছুক্ষণ কিছু একটা ভেবে বলল,
-” তুমি বরং ভাইয়ার ঘরে দেখো ওখানেই আছে পুতুল আপু।”
-” অবাকের ঘরে!! ”
-” হ্যা ওখানেই আছে দেখো, কাল আমার ক্লাস টেস্ট আছে আব্বু। তুমি ভাইয়ার ঘরে গেলেই আপুকে পাবে।”
বলেই আবার বইয়ে মুখ ডুবিয়ে দেয় ছন্দ।মেয়েটার সামনে জেএসসি পরীক্ষা তাই আর কথা না বাড়িয়ে অবাকের রুমের দিকে যান মি. মাহবুব। কিন্তু এতো রাতে অবাকের রুমে কী করবে পুতুল।ভাবতে ভাবতেই ছেলের রুমের দরজা খুলে দেখেন সত্যিই অবাকের বেডে ঘুমিয়ে আছে পুতুল। কিন্তু মেয়েটা অবাকের রুমে ঘুমচ্ছে কেন ভেবে কিছুক্ষণ ভ্রু কুঁচকে দাঁড়িয়ে থাকেন মি. মাহবুব।মাথায় কিছু না আসায় নিরব পায়ে রুমে ঢুকে লাইট টা নিভিয়ে বেরিয়ে যান মি. মাহবুব।
_____________________
সূর্য রিপোর্ট জমা দিয়ে গাড়িতে বসতেই বাকি সকলে হুড়মুড় করে তার গাড়িতে উঠে বসে।সূর্য রেগে বলল,
-” সবগুলো নাম, নাম বলছি। একটাও আমার বাড়ি যাওয়ার কথা চিন্তা করাবি না।নাম বলছি নইলে কিন্তু সবগুলোকে গুলি করে লেঙরা করে দেব শালা।”
কল্লোল দিগুণ জোরে বলল,
-” আমরা মোটেও তোর বাড়ি যাচ্ছি না।আমরা তো মেজর সাহেব মানে মি. মাহবুব জামানের বাড়িতে যাচ্ছি, তাইনা?”
উত্তরে বাকি তিনজন জোরেসোরে মাথা নেড়ে সম্মতি জানালো।মিশনে যেয়ে কারো একটা কাটা ফুটলেও সবগুলো জোট বেধে তার বাড়ি অব্দি যায় সেখানে তার তো বেশ ইনজুরি হয়েছে।এদেরকে এখন সর্বোচ্চ অপমান করলেও তার পিছু ছাড়বে না এটা বেশ ভালো করেই জানে সূর্য।রেগে কটমট করে তাকিয়ে ড্রাইভার কে বলল,
-” আমার বাসায় চলো তপন।”
উত্তরে সবগুলো ক্লোজআপ মার্কা হাসি দিল। রিপোর্টে ঝুকে সাইন করাতে বুকে আর হাতে একটু ব্যাথা করছে সূর্যের।তাই চুপচাপ গাড়ির সিটে হেলান দিয়ে বসে আছে সূর্য।
গাড়ি কিছুদূর যেতেই কল্লোল ব্যাগ থেকে একটা প্যাকেট বের করে সূর্যের দিকে এগিয়ে দিয়ে বলল,
-” বস ওষুধ টা খেয়ে নিন।”
বুকে অনেকক্ষণ যাবত ব্যাথা হচ্ছিল সূর্যের, ওষুধ কেনার কথা তো ভুলেই গেছিল।এই ডাফার টা কখন কিনলো কে জানে।এমুহূর্তে ব্যাথাটা বিশ্রী ভাবে আক্রমণ করছে, আগে একে থামাতে হবে ভেবেই ফটাফট ওষুধ গুলো খেয়ে নেয় সূর্য।
বাসার সামনে গাড়ি থামতেই সবাই একসাথে নেমে দাড়ায়।ঘড়িতে সাড়ে তিনটা বাজে দেখে চুপচাপ চাবি বের করে আগে মেইন গেট খুলে তারপর মেইন ডোর খুলে পা টিপে টিপে ভেতরের ঢোকে সবাই। এই বাড়ির প্রতিটা আনাচে-কানাচে তাদের চেনা।লিভিং রুমের সবুজ আলোয় রক্তিম আর সামির ব্যাগটা সোফায় রেখেই আগে ফ্রিজের কাছে গিয়ে পাঁচটা কোকের ক্যান নিয়ে আসে।তারপর সবার হাতে ক্যান পৌঁছে আবার চুপিচুপি হাঁটা শুরু করে।সূর্যের ব্যাগ কল্লোলের কাছে তাই সে বা হাতে ক্যান নিয়ে খেতে খেতে রুমে দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। পুতুলের রুমে আলো না দেখে কোকের থেকে এক চুমুক নিয়ে ভাবছে এই ভীতুর ডিম টা এতো সাহসী হলো কবে থেকে?
পিছন থেকে পিয়াস ফিসফিসিয়ে বলল,
-” ওই শালা থামলি কেন হাট নইলে পথ ছাড়।”
#ছুয়ে_দেখো_আমার_শহর
#লেখিকা_হৃদিতা_আহমেদ
পর্ব-২২
ঘরে ঢুকে সাবধানে লাইটটা অন করে পিছনের দিকে তাকাতেই দেখে পিয়াস ক্যান হাতে হা করে সামনের দিকে তাকিয়ে আছে।পিয়াসের দৃষ্টি অনুসরণ করে ক্যানে আবার চুমুক দিয়ে সামনে তাকাতেই চোখ ছানাবড়া হয়ে বিষম খাই সূর্য।একবার বিছানায় উপরে ঘুমিয়ে থাকা পুতুলের দিকে তো আরেকবার পিয়াসের দিকে তাকিয়ে সূর্য ঝটপট পিয়াসকে ঠেলে দরজার কাছে নিতেই পিয়াস কাঠকাঠ হয়ে দাড়িয়ে যায়।ততক্ষণে বাকি তিনজনও দরজার কাছে এসে দাঁড়িয়েছে।পিয়াস আর সূর্যকে দরজা ধরে টানাটানি করতে দেখে কল্লোল অবাক হয়ে নিচু গলায় বলল,
-” এই দুই বানর কলা রেখে দরজা নিয়ে টানাটানি করছিস কেন? ”
হাতে ব্যাথা থাকায় বাধ্য হয়ে দরজা ছেড়ে চট করে ভেতরে ঢুকে হুরপার করে ব্লাঙ্কেটটা পুতুলের গায়ে জড়িয়ে দেয় সূর্য।আবার পা বের করে ফ্রক পড়ছে বলদ কোথাকার। তাও আবার আমার রুমে এসে ঘুমিয়েছে, এটাকে পরে দেখছি ভেবেই পিছনে ঘুরতেই চার জোড়া কৌতুহলী চোখ দেখতে পায় সূর্য।রক্তিম দুঃখী মুখ করে বলল,
-” বস আমাদের কে না জানিয়েই আপনি বিয়ে করে নিলেন?”
রক্তিমের প্রশ্নে সূর্য বাকরুদ্ধ হয়ে কল্লোল আর পিয়াসের দিকে তাকাতেই একটা ঢোক গিলে।কল্লোল আর পিয়াস কান দিয়ে লাভা বের করছে এমন ভাবে তাকিয়ে আছে।কিছু মুহূর্ত যেতেই দুজনে সূর্যের উপর ঝাপিয়ে পড়ে।ফ্লোরে পড়ে আহ করতেই কল্লোল সূর্যের মুখ চেপে ধরে পুতুলের দিকে তাকায়।পুতুল একটু নড়েচড়ে ব্লাঙ্কেটটা আরেকটু জড়িয়ে নিয়ে ঘুমচ্ছে দেখে কল্লোল আর পিয়াস নিঃশব্দে সূর্যকে টেনে হিঁচড়ে রুমে বাইরে বের করে আনে।পিয়াস সামিরের দিকে তাকিয়ে বলল,
-” দরজা বন্ধ কর।”
-” ইয়েস স্যার।” বলেই দরজা বন্ধ করে রক্তিমের কাঁধ ধরে দাড়ায় সামির। তার দিকে তাকিয়ে বিজয়ী হাসি দিল রক্তিম।
টিমে রক্তিম আর সামির বাকি তিনজনের থেকে দুই বছরের জুনিয়র।তাই সিনিয়র তিনজন তাদের দিয়ে মাঝে মাঝে বলদের লাঙ্গল টানানোর মতো চক্কর কাটায়।তারাও কম যায় না সুযোগের সৎ ব্যবহার করে তাদের চক্কর ফিরিয়ে নেয়। যেমন এখন দুজন সিনিয়র মিলে বসের রস বের করবে ভেবেই দুজন দুজনের কাঁধ ধরে দাড়িয়ে ক্যানে চুমুক দিয়ে সামনের সো দেখতে লাগে।
কল্লোল সূর্যকে পিছন থেকে মুখ চেপে ধরে রেখেছে।পিয়াস সূর্যের পা দুটো ছেড়ে নাকটা চেপে ধরে বলল,
-” শালা গিরগিটি তুই বিয়ে করছিস জানলে আমরা কী তোর বৌ নিয়ে পালাতাম? ”
সূর্য অসহায় ভাবে কোনরকম মাথা নেড়ে না বোঝালো।এমনভাবে ধরে আছে যে কিছু বলা বা করার উপায় নেই।হঠাৎই সূর্য নিজের শরীরের ভর ছেড়ে চোখ বন্ধ করে নেয়।সূর্যের অবস্থা দেখে সবাই হুরপার করে ছুটে আসে।কল্লোল কাঁদো কাঁদো হয়ে বলল,
-” তাড়াতাড়ি এম্বুলেন্সে ফোন কর পিয়াস।এমনিতেই এতো ব্লাড লস হয়েছে তার উপর আমাদের অত্যাচারে ওর যদি কিছু হয়ে যায়?”
সূর্য কোনরকম একচোখ পিটপিট করে খুলে আশেপাশে দেখেই ফট করে উঠে দৌড়ে নিজের রুমে ঢুকে দরজা বন্ধ করে দেয়।উপস্থিত সবাই কিছুক্ষণ হতবাক হয়ে সূর্যের রুমের দরজার দিকে তাকিয়ে থাকে।তারপর কল্লোল রেগে ফোন বের করে সূর্যকে কল দেয়।সূর্য কলটা কেটে একটা মেসেজ দিয়ে ফোন টা সাইলেন্ট করে দেয়।
” ডাফারের দল আমাকে কি এতোটা তার-ছিড়া ভাবিস? এই নাবালিকা বিয়ে করে জেল খাটবো আমি? শালা কতবার বলেছি পুতুল আমার ছোট বাবার মেয়ে, ও এখানেই থাকে।কিন্তু আমার রুমে কেন ঘুমচ্ছে জানিনা।যাইহোক হাংকি পাংকি ছেড়ে গেস্ট রুমে যা।গুড নাইট।”
সবাই ওত পেতে মেসেজ টা পড়ে যার যার ব্যাগ হাতে গেস্ট রুমে চলে যায়।
সূর্য ফোন টা সাইড টেবিলে রাখতে গেলে আবার হাতের ব্যাথায় কুকিয়ে উঠে।কোনরকম ইউনিফর্মের শার্টটা খুলতেই দেখে হাতের বেন্ডেজ লাল হয়ে গেছে।আয়নার মধ্যে দিয়ে পুতুলের দিকে একবার তাকিয়ে ড্রয়ার থেকে ফ্রাস্ট এইড বক্স বের করে ওয়াশরুমে ঢুকে যায় সূর্য।হাতে কোনরকমে নতুন বেন্ডেজ নিয়ে ফ্রেশ হয়ে একটা গোল গলার হাপ হাতা সাদা টিশার্ট আর কালো টাওজার পড়ে বের হয় সূর্য।টাওয়েলটা বা হাত দিয়ে ডিভানে ছুড়ে সোজা পুতুলের পাশে যেয়ে বসে।
দীর্ঘ পনেরো দিন পরে এই প্রিয় মুখটা দেখছে সূর্য।সেই একইভাবে বাচ্চাদের মতো ঠোঁট ফুলিয়ে ভীষণ আদুরে স্টাইলে ঘুমিয়ে আছে পুতুল।কিছু না ভেবেই ফট করে গালে একটা পাপ্পি খেয়ে নেয় সূর্য। বব কাটের বেবি হেয়ার গুলো কপাল জুড়ে পড়ে আছে।সূর্য আলতো করে চুল গুলো সরাতেই কপালের ডান পাশে কপাল আর চুলের সংযোগ স্থানে একটা গভীর কাটা দাগ দেখতে পায়। ভালো করে দেখে বুঝতে পারে দাগটা বেশ পুরাতন।সূর্য ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে ভাবছে এই দাগটা লুকানোর জন্যই কী এরকম বাচ্চাদের মতো চুল কেটে রাখে পিচ্চিটা।পুতুলের মুখের দিকে ভালো করে তাকাতেই আরো ভ্রু কুঁচকে ফেলে সূর্য। পুতুল কী কেঁদেছে? গালে নোনা পানির সাদা দাগের উপর আলতো করে স্লাইড করতেই পুতুল নড়েচড়ে সূর্যের হাতটা ধরে।পুতুলের হাতের দিকে তাকাতেই কিবরিয়ার মেসেজের কথা মনে পড়ে যায় সূর্যের।রাগে গা শিরশির করছে তার, রাগটাকে দমিয়ে পুতুলের হাতটা ধরে কাছে নিয়ে আসে।ফর্সা চামড়াতে শক্ত ভাবে আঙুলের ছাপ পড়ে গেছে। হাতটা ধরায় ঘুমের মাঝেই ভ্রু কুঁচকে ফেলে পুতুল।সূর্য উঠে গিয়ে মুভ নিয়ে পুতুলের হাতে লাগিয়ে দিতে দিতে ভাবছে পুতুল কেন তার রুমে ঘুমিয়ে আছে?আবার গায়ে তার টিশার্ট পড়ে আছেই বা কেন?
সূর্য বিছানা আর ডিভানের মাঝখানে দাঁড়িয়ে ভাবছে কোথায় ঘুমবে? মন বলছে বিছানায় মাথা বলছে ডিভানে।মন আর মাথার দন্দ মিটিয়ে মন মাথাকে বোঝালো পুতুল তো তারই, শুধুই তার।অতএব এতো হেজিটেট করার কিছু নেই ভেবে থ্রি ইডিয়টস সিনেমার ‘আল ইজ ওয়েল’ ডায়ালগ জপে বুকে ফু দিয়ে বিছানায় শুয়ে পুতুলকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে মাথায় একটা ভালবাসার পরশ দিয়ে শুয়ে পড়ে সূর্য।কিন্তু ষাট সেকেন্ড পরেই তার মনে হলো এরকম জলন্ত আগ্নেয়গিরির পাশে সে এক সেকেন্ডও ঘুমতে পারবে না, একমুহূর্তও না।
_____________
ভোরের হালকা আলো ফুটে উঠেছে চারপাশে। ভোরের ঘুমটা মাত্রাতিরিক্ত শক্ত হয় পুতুলের, একটুও উঠতে ইচ্ছে করে না।বার বার এলার্ম বাজায় বাধ্য হয়ে ঘুম ঘুম চোখে এলার্ম বন্ধ করে হেলেদুলে নিজের রুমের দিকে যাচ্ছে।ঘুমে টলতে টলতেই যাচ্ছে নইলে আবার টুকটুকি দেখে নিলে প্রশ্নের ছড়াছড়ি শুরু করবে তাই বাধ্য হয়ে নিজের রুমে যাচ্ছে।রুমে এখনো হালকা অন্ধকার ছেয়ে আছে,পুতুল ঘুম ঘুম চোখেই রুমে ঢুকে সোজা ওয়াশরুমের দিকে চলে যায়।
সারারাত তুষ্টির সাথে ব্রেকআপ পেচআপ করতে করতে ভোরের দিকে ফোন কেটে রাগে মাথা গরম হয়ে গেছিল রক্তিমের।তাই মাথায় পানি দিচ্ছে, মাথায় পানি দিয়ে ওয়াশরুম থেকে বের হতেই ধড়াম করে কারো সাথে ধাক্কা খায়।
পুতুল ধাক্কা খেয়ে নিচে পড়ে চোখ ডলে সামনে তাকাতেই হালকা অন্ধকারে একটা মানুষের অবয়ব দেখেই চিৎকার করে উঠে।
-” ভূ ভূত! ভূত! মাম্মা ভূত,,,,, মাম্মা।”
রক্তিম চিৎকার শুনে কোনরকমে দৌড়ে রুমের লাইটটা অন করে।ততক্ষণে বাকি চারজন ধড়ফড় করে উঠে বসেছে।পুতুলকে ফ্লোরে বসে চোখ বন্ধ করে ভূত ভূত করে চিৎকার করতে দেখে সূর্য হুরপার করে তার কাছে উঠে যায়।
রাতে সবাই গেস্ট রুমে যেয়ে দেখে নোংরা হয়ে আছে।এমনিতেই এবাড়িতে এসে ওরা কখনো গেস্ট রুমে থাকে না। আইলা,নার্গিস,ফনি যাইহোক না কেন পাঁচজন একঘরে ঠেসেঠুসে থাকে।কিন্তু গেস্টরুমের বেহাল অবস্থা দেখে সূর্যকে বেশ কয়েকবার ফোন দেয় পিয়াস।কিন্তু মহাশয় ফোন রিসিভ না করায় বাধ্য হয়ে নিজেরাই এঘর ফাঁকা পেয়ে এটাই ঢুকে পড়ে সবাই।তারপর ফ্রেশ হয়ে নিচে ডাইনিং এ সবাই খেতে বসার পরে সেখানে সূর্যর আবির্ভাব ঘটে।সূর্য ওদের সাথে খাবার খেয়ে রুমে এসে ইনোসেন্ট ফেস করে বলল,
-” দোস্ত তোদের ছেড়ে থাকতে পারলাম না তাই চলে এসেছি।”
বলেই তাদের চিরচেনা ক্লোজআপ হাসি দেয়। বাকিরা শয়তানি হাসি দিলো,কল্লোল এক চোখ টিপে বলল,
-” জানি তো দোস্ত তুই আমাদের ছেড়ে থাকতেই পারিস না।টেনশন করিস না তোর বিয়েতেও তো আমরা এখানে থাকবো বাসর রাতেও তুই আমাদের সাথেই থাকবি দোস্ত।”
কল্লোলের কথায় সবাই একসাথে হেসে উঠে।
চলবে
নেন গো নেন আরেক পার্ট☺।খায়ে না খেয়ে লিকখা দিলাম,জানি ধন্যবাদ দিবেন তাই আগেই ওয়েলকাম😉
(কার্টেসী ছাড়া গল্পের এককুণাও কপি করবেন না👿)
চলবে