ছুয়ে_দেখো_আমার_শহর পর্ব ২৩+২৪

#ছুয়ে_দেখো_আমার_শহর
#লেখিকা_হৃদিতা_আহমেদ

পর্ব-২৩

-” পুতুল! এই মেয়ে,এই! আরে কোথায় ভূত? কিসের ভূত?চোখ খোলো,দেখ কিছুই নেই।”
সূর্যর কন্ঠ শুনে পুতুল ফট করে চোখ খুলে তাকায়।সামনে সূর্যকে দেখেই চট করে বসেই জড়িয়ে ধরে তাকে।
-” উহহ মা গো, এই আস্তে।কী হয়েছে বলবে তো।”
পুতুলের সামনে একহাঁটু ভাজ করে বসেছিল সূর্য, পুতুল জড়িয়ে ধরায় ব্যাথায় কুকিয়ে উঠে পুতুলের পাশেই বসে পড়ে। আর পুতুল সূর্যকে ধরেই ভীত কন্ঠে বলল,
-” কেপ্টেন ভু ভূত,ওয়াশরুমে ভূত ঢুকেছে।”
ঘুম থেকে উঠে এতক্ষণ সবাই হ্যাং হয়ে বসেছিল পুতুলের দিকে তাকিয়ে, উদ্দেশ্য আসল কাহিনী কী জানার জন্য।কিন্তু পুতুলের কথা শুনে সবাই একসাথে হুহা করে হেসে উঠে।একগুচ্ছ হাসির শব্দ পেতেই পুতুল সূর্যকে ছেড়ে সামনে তাকায়।এতগুলো মুখ একসাথে তার দিকে তাকিয়ে আছে দেখে ভীষণ লজ্জা পেয়ে যায়।লজ্জায় মাথা নিচু করে বসে আড়চোখে আশেপাশে তাকিয়ে ভালো করে দেখে বোঝার চেষ্টা করছে কোথায় আছে।এটা তো তারই রুম কিন্তু এরা সবাই তার রুমে কেন? আর কেপ্টেন? সূর্যের কথা মনে হতেই দ্রুত চোখ তুলে সূর্যর দিকে তাকায় পুতুল।সূর্য ততক্ষণে উঠে দাড়িয়ে পুতুলের হাত ধরে দাড় করায়।ঠিক তখনই রক্তিম অবাক হয়ে প্রশ্ন করল,
-“এম আই লুক লাইক আ ঘোস্ট?? ”
সবাই জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে রক্তিমের দিকে তাকাতেই সে আসল কাহিনী বলে।সব শুনে সবাই আরেক দফা হাসাহাসি করে তারপর সূর্যের রুমে চলে যায়।আর পুতুল নিজের বোকামির জন্য তখনো লজ্জায় সূর্যের পিছনে ঘাপটি মেরে দাঁড়িয়ে আছে।

সবাই বেরিয়ে যেতেই সূর্য তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে পুতুলের দিকে তাকায়।এলোমেলো চুল,ঘুমে ফোলা ফোলা চোখ সাথে ফ্রকের উপর সূর্যের ঢোলা নীল টিশার্ট পড়ায় অদ্ভুত দেখাচ্ছে পুতুলকে।পুতুল বুঝতে পারছে সূর্য তার দিকে তাকিয়ে আছে কিন্তু লজ্জায় সে মাথা তুলে তাকাতে পারছে না।
-“রাতে আমার রুমে ঘুমিয়ে ছিলে কেন?”
সূর্যের প্রশ্নে পুতুল থতমত খেয়ে যায়।সূর্যের দিকে তাকাতেই সূর্য ঠোঁট কামড়ে হেসে আবারও প্রশ্ন করলো,
-” আর আমার টিশার্ট পড়ে আছো কেন?”
এখন সে কী বলবে?সে কী বলবে সিনেমায় দেখেছিল হিরোইন হিরোর রুমে গিয়ে তার টিশার্ট পড়ে ঘুমতে।তাই সেও ট্রায়াল দিয়েছিল।কিন্তু তার তো সত্যিই ব্যাপার টা ভীষণ ভালো লাগে, ভীষণ ভালবাসা ভালবাসা অনুভূতি হয়।পুতুলের এসব ভাবনার মাঝেই সূর্য পুতুলের নাক টেনে বলল,
-” কি হলো চুপ করে আছো কেন?”
পুতুল কী বলবে ভেবে পাচ্ছে না।সূর্য এখনো তার দিকে ঠোঁট কামড়ে হেসে তাকিয়ে আছে। কিছুক্ষণ এদিক ওদিক তাকিয়ে ফট করে ওয়াশরুমে ঢুকে দরজা বন্ধ করে দেয়।পুতুলের কাজে সূর্য কিছুক্ষণ হা করে তাকিয়ে থেকে শব্দ করে হেসে উঠে। তারপর একবার ওয়াশরুমের দরজা নক করে,শব্দ করে পা ফেলে ধড়াম করে দরজা বন্ধ করে তারপর চুপিচুপি আবার বিছানায় এসে বসে পড়ে সূর্য।

ওয়াশরুম থেকে সূর্যর যাওয়ার শব্দ পেয়ে হাফ ছেড়ে বাঁচে পুতুল।বেসিনের সামনে দাড়িয়ে আয়নাতে গায়ের টিশার্ট টা দেখে গাল দুটো লাল হয়ে যায় পুতুলের।ইসস,,, কী লজ্জা!! ভেবেই মুখ হাত দিয়ে ফিক করে হেসে উঠে পুতুল। বেশ খানিকক্ষণ বাদে পুতুল ওয়াশরুম থেকে মুখ মুছতে মুছতে বেরিয়ে আসে।টাওয়েল টা বিছানায় রেখে সামনে তাকাতেই চোখ দুটো বড়ো বড়ো হয়ে যায় পুতুলের।সূর্য একই ভাবে ঠোঁট কামড়ে হেসে তার দিকে তাকিয়ে আছে।সে আবারও পালানোর জন্য পিছু ঘুরতেই সূর্য খপ করে তার কোমড় ধরে টেনে কোলে বসিয়ে নেয়।
-” ডোন্ট মুভ পুতুল। আরেক বার ছটফট করলে একদম ঠ্যাং ভেঙে দেব।”
সূর্যের হুমকিতে পুতুল কাঠকাঠ হয়ে বসে থাকে।সে এর আগেও অনেক বার সূর্যের কাছাকাছি এসেছে। কিন্তু আজকে সূর্যের কাছে আসায় তার অনুভূতিরা কেমন শিরশির করছে।ইসস,,,,এটা কি ভালবাসার শিরশিরানি!
সূর্য পুতুলকে চুপ করে বসে থাকা দেখে মৃদু হেসে পুতুলের বাম হাতটা নিজের বাম হাতের মুঠোয় নেয়।আঙুলে আঙুল পুড়ে পুতুলের হাতে শব্দ করে চুমু খেয়ে বলল,
-” তো আমাকে মিস করেছিলে?”
সূর্যের কাজ আর প্রশ্নে শুনে পুতুল ফট করে চোখ বন্ধ করে নেয়।লজ্জা পেলে যদি মানুষের কান দিয়ে ধোঁয়া বের হওয়ার কোন সিস্টেম থাকতো তাহলে পুতুল নিশ্চিত ছিল এতক্ষণ তার ঘর ধোঁয়ায় অন্ধকার হয়ে যেত।আর সেই ধোঁয়ার তোড়ে তারা কেশে অজ্ঞান হয়ে যেত।অবশ্য ভালোই হতো তাকে আর সূর্যের প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হতো না। কিন্তু দুঃখের ব্যাপার পৃথিবীতে এরকম কোনো সিস্টেমই নেই।পুতুলের আফসোসের মাঝেই সূর্য তার ধোঁয়া বের হওয়া দ্বিতীয় প্রশ্ন করলো,
-“আমাকে দেখতে ইচ্ছে করেছিল বুঝি?”
পুতুলের ডান কাঁধে থুতনি ঠেকিয়ে বললো সূর্য।পুতুলের এবার সত্যি সত্যিই কান থেকে গেলোন গেলোন ধোঁয়া বের করে রুম টা অন্ধকার করে দিতে ইচ্ছা করছে।
পুতুলকে চোখ চেপে ধরে বসে থাকা দেখে ঠোঁট কামড়ে হাসলো সূর্য।পুতুলকে বিছানায় তার সামনাসামনি বসিয়ে বেবি হেয়ার গুলো কানে গুজে দেওয়ার চেষ্টা করলো সূর্য।
-”তো কোথায় কামড়াবে বলে ঠিক করেছো?”
পুতুলের কোন প্রতিক্রিয়া না দেখে সূর্য ধমক দিয়ে বলল,
-“এই মেয়ে,এই!বোবা হয়ে গেছো? নাকি মনো ব্রত করেছো? উত্তর দাও।”
সূর্যের ধমকে পুতুল চট করে চোখ খুলে কোনরকম ফ্যাসফ্যাস করে বলল,
-” আ আমিতো এমনিতেই বলেছিলাম।”
-” কিন্তু আমিতো সিরিয়াসলি নিয়েছি।”
বলেই এক চোখ টিপ দিয়ে ফিক করে হেসে উঠে সূর্য।আর পুতুল ড্যাব ড্যাব করে সূর্যের মুখের দিকে তাকিয়ে আছে।সূর্য পুতুলের বোকা চাহনি দেখে নাক টিপে বলল,
-” এভাবে তাকাস না পিচ্চি, বুকে ব্যাথা করে।”
বলে পুতুলের কপালে টুপ করে টোকা দিয়ে রুম থেকে বের হয়ে যায়।

________________

মিসেস মধুমিতা তাড়াহুড়ো করে লুচি ভাজছেন আর স্বপ্না চটপট বেলছে।সকালে ডাইনিং এর হাল দেখেই বুঝে গেছেন বাঁদর গুলো এসেছে।আটটা বাজতে বেশি দেরি নেই, আটটা বাজলেই সবগুলো টেবিলে হামলে পড়বে।তাই তাড়াহুড়ো করছেন সবকিছুই হয়ে গেছে এই লুচি গুলো হলেই বাঁচেন।এসব ভাবনার মাঝেই নিজের নাম শুনতে পান মিসেস মধুমিতা।
-” মধু! মধু! ও হানি!”
মিসেস মধুমিতা পিছন ফিরে তাকাতেই দেখেন কিচেনের দরজায় পিয়াস দাঁত বের করে হাসছে।মিসেস মধুমিতা রেগে বললেন,
-“কী বললি?”
পিয়াস বুক টানটান করে বলল,
-” মধু, তাড়াতাড়ি খেতে দাও তো।”
মিসেস মধুমিতা খুন্তি হাতে তেড়ে বললেন,
-” তবে রে বাঁদর।”
মিসেস মধুমিতার তেড়ে আসা দেখে পিয়াস ভো দৌড় দেয়।পিয়াসের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে ফিক করে হেসে দেন মিসেস মধুমিতা।সামনে ঘুরে দাড়াতেই পিয়াস পিছন থেকে এসে গালে টুপ করে একটা চুমু দিয়ে বলল,
-” রাগ করে না মধু।”
বলেই আবার ফুড়ুৎ করে দৌড়।পিয়াসের কান্ড দেখে স্বপ্না চুপিচুপি হাসলেও এবার মিসেস মধুমিতার দিকে তাকিয়ে জোরে হাসতে শুরু করে সাথে মিসেস মধুমিতাও যোগ দেন।

♪ ও মাধু,ও মাধু, আই লাভ ইউ,আই লাভ ইউ ♪

ডাইনিং এর কাপ,প্লেট আর চামচ নিয়ে চার বাঁদর গান গাইছে আর টুকটুকি কল্লোলের ফোন নিয়ে ভিডিও করছে।মিসেস মধুমিতা লুচির পাত্র হাতে আসতেই কল্লোল দৌড়ে পাত্রটা হাত থেকে টেবিলে রেখে মিসেস মধুমিতাকে নিয়ে নাচতে শুরু করে।মিসেস মধুমিতাও হেসে যথাসাধ্য নাচের স্টেপ গুলো দিচ্ছেন। পুতুল বেশ মজা পাচ্ছে এদের কাজে। আর সূর্য হেসে নাচ দেখতে ব্যস্ত।নাচ শেষ মি. মাহবুব ভীষণ দুঃখী ভাব নিয়ে বললেন,
-” দিস ইজ নট ফেয়ার মধুমিতা, আজ একটু বয়স হয়ে গেছে বলে তুমি আমার ডান্স পার্টনার হও না।”
মি. মাহবুবের কথায় সকলে শব্দ করে হেসে উঠে।
#ছুয়ে_দেখো_আমার_শহর
#লেখিকা_হৃদিতা_আহমেদ

পর্ব-২৪

হোয়াইট বোর্ডে মোস্তাক স্যার হাইয়ার ম্যাথের এফোড় ওফোড় একে চলেছেন।আর পুতুল কিঞ্চিৎ ভ্রু কুঁচকে স্থির দৃষ্টিতে বোর্ডের দিকে তাকিয়ে আছে।দেখে মনে হচ্ছে ভয়ংকর মনোযোগ দিয়ে ম্যাথ বোঝার চেষ্টা করছে।কিন্তু দৃষ্টি আর মনোযোগ দুটোই দু রাস্তায় হেটে চলছে পুতুলের।আজ কলেজ আসার বিন্দু মাত্র ইচ্ছে না থাকলেও অনেকটা বাধ্য হয়ে এসেছে পুতুল।অবশ্য ওই বখাটে গুলোর জন্য নয় অন্য কারণে আসার ইচ্ছে হয়নি।সকালে নাস্তার সময়ই সূর্যের শ্রেয়া নামক বান্ধবী টা বাসায় এসে উপস্থিত হয়েছে।মেয়েটা যেমন সুন্দরী তেমনি উঁচু আর ভয়ংকর সুন্দর ফিগার।হলিউডে যেকোন মুভির নায়িকা হিসেবে অনায়াসে সেটিং করে দেওয়া যাবে।মেয়েটাকে তার অনেক পছন্দ, কিন্তু মেয়ে টাকে আজ সূর্যের সাথে ফুসুর ফুসুর করতে দেখে তার কেমন অস্বস্তি হচ্ছে।অবশ্য প্রথম যেদিন দেখেছিল সেদিনও ওদেরকে চুপিচুপি কথা বলতে দেখেছে।কিন্তু আজ কেমন রাগ লাগছে,ধুর খারাপ রাগ লাগছে তার।

রাগ লাগার কারণ হিসেবে অনেক গুলো কারণ দাঁড় করিয়েছে পুতুল।তবে তার ভেতর সবথেকে শক্ত কারণ হলো সে সূর্যকে ভালবাসে,সো ভালবাসার মানুষের পাশে অন্য কাউকে দেখলে রাগ হওয়াটাই স্বাভাবিক, অবশ্যই স্বাভাবিক।শুধু রাগ কেন তার মতে পৃথিবীতে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ হয়ে সবকিছু নিঃশেষ হয়ে যাওয়া টাও স্বাভাবিক।মেয়ে টা যে সূর্যের জাস্ট ফ্রেন্ড সে বুঝতে পারছে কিন্তু তারপরও অসভ্য মনটাকে কিছুতেই দমিয়ে রাখতে পারছে না।পুতুল যদি মনটাকে হাতে পেত তবে ঠাটিয়ে কয়েক দফা থাপ্পড় দিয়ে সাইজ করতো।কিন্তু তা সম্ভব নয়, তাই অসভ্য মনটা আকুপাকু করছে কখন ছুটি পাবে।এসব ভাবনার মাঝেই কারো ডাকে পাশে তাকায় পুতুল।
-” কিরে এভাবে বসে আছিস কেন? চল কেন্টিনে চল টিফিন শেষ হয়ে যাবে তো।”
তিতিয়ার কথায় পুতুল কাঁদো কাঁদো হয়ে বলল,
-“তিতি রে আজ কী কলেজ ছুটি হবে না?”
-” হ্যা?”
-” তিতি চল আজ পালিয়ে যায়?”
-“তোর মাথা ঠিক আছে আর একমাস পরে টেস্ট এক্সাম,এখন ক্লাস মিস মানে পরীক্ষায় ফেল মারা।”
তিতিয়ার কথায় পুতুল ফোঁত করে একটা নিশ্বাস নিয়ে উঠে কেন্টিনের দিকে হাঁটা শুরু করে।এই বিদ্যাসাগরিকা ঘূর্ণিঝড়ে কলেজ উড়ে গেলেও ক্লাস মিস দেবে না সে খুব ভালো করেই জানে।

পিয়াস দাঁতে দাঁত চেপে রক্তিম আর সামিরের দিকে তাকিয়ে আছে।আর রক্তিম আর সামির ইনোসেন্ট ফেস বানিয়ে পিয়াসের দিকে তাকিয়ে আছে।একেতো কিছুক্ষণ আগে হাঙ্গামা শেষে এমনিতেই মেজাজ খারাপ হয়ে আছে তার উপর সামনে দাড়ানো মানুষ নামক এই সাপ আর বেজি দুই প্রাণীর কামড়াকামড়ি।উফফ,,,, এই কলেজ টাও কী ছুটি হবে না।আর কতক্ষণ লাগবে কী জানে ভেবে ঘড়ি দেখলো পিয়াস।

ছুটির ঘন্টা পরতেই পুতুল ব্যাগ টা নিয়ে ছুট লাগায়।পুতুলের দিকে তাকিয়ে তিতিয়া অবাক হয়ে ভাবছে কাহিনী কী? অন্য দিন তো ভয়ে গেট থেকে বের হতেই চায় না আর আজ বান্দা সবার আগে ছুটছে।তার ভাবনার আগেই পুতুল উধাও।
সবার আগে ছুটলেও গেইটের কাছে এসে থেমে যায় পুতুল। যদি ছেলে গুলো আবার তাকে আটকে রাখে?ভেবেই গেইট থেকে উঁকি দিয়ে বাইরে তাকিয়ে সূর্যকে খোঁজার চেষ্টা করে।সকালে অবশ্য বড় আব্বু পৌঁছে দিয়ে গেছে কিন্তু তার মনে হচ্ছে এখন ঠিকই সূর্য আসবে।কলেজ গেইটের ঠিক সামনে রাস্তার ওপাশে পিয়াসকে দেখতে পায় পুতুল।দেখেই মুখে হাসি ফুটে ওঠে নিশ্চয় সূর্যও এসেছে।ভেবেই গেইট এর বাইরে পা ফেলে এগিয়ে যায় পুতুল।আশেপাশে না তাকিয়েই ফটাফট পা ফেলে পিয়াসের সামনে এসে দাঁড়ায়।তারপর পিছনে ঘুরে দেখার চেষ্টা করে ওই বাজে ছেলে গুলো কোথায়? কিন্তু কই আজ তো বেয়াদব গুলোকে দুর দুর পর্যন্ত দেখা যাচ্ছে না, দেখেই মনটা ভীষণ ফুরফুরে হয়ে যায় পুতুলের।
-“অতঃপর তোমার কলেজ ছুটি হলো পুতুল? চলো, চলো দ্রুত বাসায় যায় ভীষণ ভীষণ ক্ষুধা পেয়েছে আমার।”
পিয়াসের কথায় মিষ্টি হাসে পুতুল।তারপর আশেপাশে তাকিয়ে সূর্যকে খোজা শুরু করে।কোথাও না দেখে ভাবছে সূর্য হয়তো গাড়িতে আছে। কিন্তু তার ভাবনার মাথায় এক বারি দিয়ে ভাবনাগুলো অজ্ঞান করে পিয়াস হেসে বলল,
-” লাভ নেই ভাবিজান, কেপ্টেন সাহেব বাসায়।আমরা তিন অধম এসেছি আপনাকে উদ্ধার করতে।”
বলেই হেসে গাড়ির একটা দরজা খুলে দেয় পিয়াস। আর রক্তিম ও সামির গাড়ির ব্যাক সিটে বসে পুতুলের দিকে তাকিয়ে হাত নেড়ে হেসে বলল,
-” আসুন ভাবিজান।”
পিয়াসের কথায় মন খারাপ হবার কথা হলেও পুতুল ভাবিজান ডাক শুনে হতবাক হয়ে সবার দিকে তাকায়।পুতুলের তাকানো দেখে সবাই আরেক দফা হাসাহাসি করলো।

সূর্যের রুমে ডিভানে শ্রেয়ার কোলে মাথা রেখে ফোন স্ক্রোল করছে কল্লোল।শ্রেয়া বিছানায় সূর্যের দিকে তাকিয়ে কল্লোলের মাথার বেন্ডেজের উপর হাত স্লাইড করছে।গ্রুপে সামিরের পাঠানো ভিডিও দেখেই কল্লোল সূর্য বলে চিৎকার করতেই শ্রেয়া ফট করে তার মুখ চেপে আস্তে করে বলল,
-” একদম ডাকবে না ওকে,মাত্র ঘুমিয়েছে।”
কল্লোল শ্রেয়ার হাতে চুমু দিয়ে হাত সরিয়ে শ্রেয়ার মতো করেই ফিসফিসিয়ে বলল,
-” ওকে, ডাক্তারপাখি।”
বলেই হালকা ভলিউম দিয়ে ভিডিও টা দেখতে শুরু করে।ভিডিও দেখে কল্লোল গড়াগড়ি দিয়ে হাসি দিতেই শ্রেয়ার মেজাজ মোটামুটি আকাশে উঠে দাড়ায়।বুকের ক্ষতটার জন্য বেশ কষ্ট হচ্ছে সূর্যর,নাস্তার পরে শ্রেয়া চেক-আপ করেই বুঝতে পারে বেশ জ্বর গায়ে।কিন্তু বান্দা বিশেষ কাজে জ্বর নিয়েই হুরপার করে বের হচ্ছিল।পিয়াসরা বিশেষ কাজের দায়িত্ব নিয়ে বের হলেই তাকে আটকানো সম্ভব হয়।পরিপূর্ণ বিশ্রাম প্রয়োজন সূর্যর,সেজন্য জোর করে ঘরে আটকে রেখেছে শ্রেয়া।কিছুক্ষণ আগেই ঘুমিয়েছে বেচারা, কিন্তু এই গাধাটার কী সে খেয়াল আছে, আহাম্মক একটা।ভেবেই ফট করে কল্লোলের ফোনটা নিয়ে ওকে টেনে রুম থেকে বের করে দেয়।দরজায় দাঁড়িয়ে দাঁত কটমট করে বলল,
-” দরজায় একটা টোকা পড়লে খুন করবো তোমাকে।”
-” সরি ডক্টর পাখি আর,,,,”
বলার আগেই দরজা টা বন্ধ করে দেয় শ্রেয়া।কল্লোল মুখ টা অন্ধকার করে কিছুক্ষণ দরজার সামনে দাড়িয়ে থেকে ফিক করে হেসে হেলতে দুলতে কিচেনের দিকে পা বাড়ায়।কিছুক্ষণ বাদে শ্রেয়া খুট করে দরজা খুলে বাইরে এসে দেখে কল্লোল নেই।

সারাপথ হাসতে হাসতে পেটে ব্যাথা হয়ে গেছে পুতুলের।এরা এতো ফানি আগে বুঝতে পারে নি পুতুল, বিশেষ করে রক্তিম আর সামির ভাইয়াকে ভীষণ ভালো লেগেছে পুতুলের।এরা দুজন জাস্ট লাইক টম এন্ড জেরি।লিভিং রুমে ঢুকেই পুতুল আশেপাশে তাকিয়ে সূর্যকে দেখার চেষ্টা করে।কিন্তু সূর্য কী লিভিং রুমে মানুষের টিকি টাও নেই।আগত্য হতাশ মনে নিজের রুমে চলে যায় পুতুল। ফ্রেশ হয়ে লাঞ্চ করতে এসেও সূর্য, শ্রেয়া,কল্লোল কাউকে দেখতে পায়না পুতুল।এবার তার কান্না পাচ্ছে,সারা ক্লাসে ছটফট করে বাসায় এসেও কাঙ্ক্ষিত মুখ টা দেখতে না পেয়ে গলা দিয়ে খাবার নামতে চাইছে না পুতুলের।সবাইকে দেখাতে কোনরকম খেয়ে উপরে উঠে আসে পুতুল। রুমে ঢুকতে গিয়েও সূর্যর রুমের দিকে পা বাড়ায় পুতুল।সূর্যের রুমের সামনে আসতেই দেখে শ্রেয়া রুমের সামনে হেটে হেটে ফোনে কথা বলছে।পুতুলকে দেখতেই কথা বলতে বলতেই একটা হাসি দেয়। উত্তরে পুতুলও হাসি দিল কিন্তু এখন কী করবে সেকি ভেতরে যাবে নাকি চলে যাবে।এসব ভাবনার মাঝেই কল্লোল সূর্যের রুম থেকে বের হয়ে পুতুলকে দেখে হেসে বলল,
-” কী ব্যাপার পুতুল এভাবে দাঁড়িয়ে আছো কেন?”
কল্লোলের কথায় পুতুল দ্রুত মুখ থেকে হাত নামিয়ে আমতা আমতা করে বলল,
-” কিছু না ভাইয়া এমনিতেই।”
বলেই একটা বোকা হাসি দিল।কল্লোল হেসে পুতুলের চুল গুলো এলোমেলো করে বলল,
-” সূর্য ঘুমচ্ছে।”
কল্লোলের কথায় পুতুল অবাক হয়ে ভাবছে এরা সবাই কী এমন!! মানুষের মুখ দেখলেই সব বুঝে যায়!!

—————

পুতুলের হোম টিউটর মিস নিহিতা পুতুলের দিকে তাকিয়ে বলল,
-” আর ইউ ওকে প্রিয়ন্তি? তুমি কি কোন কিছু নিয়ে চিন্তিত? এসে থেকে তোমাকে অন্যমনস্ক লাগছে?”
মিসের প্রশ্নে পুতুলের চিৎকার করে বলতে ইচ্ছে করছে হ্যা চিন্তিত, ভীষণ চিন্তিত।ওই ইডিয়ট কেপ্টেন টার জন্য তার মাথায় চিন্তারা চেচামেচি করছে তাইতো সে অন্যমনস্ক হয়ে যাচ্ছে।ইডিয়ট কেপ্টেন টা কী আজকেই সব ঘুম ঘুমিয়ে শেষ করবে বলে পণ করছে?সারা বিকেল তো সে বাইরে ঘুরঘুর করলো ইডিয়ট টাকে দেখার জন্য, কিন্তু তার আতা-পাতা পাওয়া গেলে না দেখবে।
-” প্রিয়ন্তি কোন সমস্যা?”
মিসের কথায় পুতুল কলমটা মুখ থেকে সরিয়ে মন খারাপ করে বলল,
-” আমার ভীষণ মাথা ব্যাথা করছে মিস, আজকে আর পড়তে ইচ্ছে করছে না।আজকের মতো ছুটি দিন, প্লিজ প্লিজ প্লিজ।”
পুতুলের কথায় মিস নিহিতা কিছুক্ষণ তার দিকে তাকিয়ে থেকে বলল,
-“ঠিক আছে ছুটি দিব কিন্তু আগামীকাল সবগুলো পড়ে দিবে ঠিক আছে?”
-” ওকে মিস।”

মিস যাওয়ার কিছুক্ষণ পরেই রুম থেকে বের হয়ে আসে পুতুল।লিভিং রুমে চেচামেচি শুনে উপরে দাড়িয়েই কী হচ্ছে দেখার চেষ্টা করে পুতুল।
কল্লোল পিয়াসকে টানাটানি করে মিসেস মধুমিতার পাশ থেকে তুলে বলল,
-“আন্টি আমি সারাদিন তোমার ছেলের সেবা করে সুস্থ করেছি সুতরাং তুমি আমার মাথায় বিলি কেটে দেবে।”
-“একদম নয় আন্টি, তুমি আমাকে দেবে।”
বলেই কল্লোলকে টানতে শুরু করে পিয়াস।ওদের টানাটানির ফাঁকে সামির চুপচাপ মিসেস মধুমিতার কোলে মাথা রেখে ইনোসেন্ট ফেস বানিয়ে বলল,
-”আন্টি ওদের দিকে না তাকিয়ে তুমি আমার মাথায় বিলি কেটে দাও।দেখো তো তোমার ছেলের ওর্ডার শুনতে শুনতে আমি একদম শুকিয়ে গেছি।তুমি মাথায় হাত বুলিয়ে দিলেই আমি আবার ফিট হয়ে যাব।”
সামিরের কথা শুনে রক্তিম তার দিকে একবার মুখ ভেংচি কেটে টুকটুকির সাথে ফোন নিয়ে ব্যস্ত হয়ে যায়।মিসেস মধুমিতা হেসে সামিরের চুল গুলো হালকা টেনে বলল,
-” বাঁদরের দল।”
।আর অন্য দিকে সূর্য আর শ্রেয়া টু সিটেড সোফায় বসে ফোনে কোন ভিডিও দেখে গড়াগড়ি দিয়ে হাসছে।
সূর্য আর শ্রেয়াকে একসাথে দেখে পুতুলের এবার ভীষণ রাগ লাগছে সাথে কান্নাও পাচ্ছে।সে আর কখনো সূর্যের সাথে কথা বলবে না, একদম না।

চলবে
চলবে

জানি ছোট হয়েছে, বাট নাথিং টু ডু। বহুদিন পরে শৈশবের এক টুকরো ভালবাসা দেখা করতে এসেছিল বাসায়।সেই ভালবাসা উপেক্ষা করে গল্প লিখাটা আমার কাছে একটুও ইমপোর্টেন্ট নই, এক চুলও নই।তাই এখন এটুকুই লিখে দিলাম।হ্যাপি রিডিং 😍

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here