#ছুয়ে_দেখো_আমার_শহর
#লেখিকা_হৃদিতা_আহমেদ
পর্ব-৩২
জ্যামের ভয়ে আধাঘন্টা আগেই বেরিয়ে ছিল পুতুল।কিন্তু আসল ভয়কে জয় করে পৌঁছালেও বৃষ্টি মহোদয় মনের সুখে নৃত্য শুরু করেছেন। বৃষ্টি কী ছেলে নাকি মেয়ে?সৌন্দর্য ব্যাপারটা মেয়েদের কে বেশি মানায় আর বৃষ্টি সৌন্দর্যে সকলে মুগ্ধ হয়।তাই বৃষ্টি অবশ্যই মেয়ে,সুতরাং বৃষ্টি মোটেও মহোদয় না বৃষ্টি মহোদয়া।কথাটা ভেবে বৃষ্টি ভেদ করে দূরে চায়ের দোকানে দাঁড়িয়ে সিগারেট ফুকতে থাকা কিবরিয়া ভাইয়ের দিকে তাকায় পুতুল।ঘুম কাতুরে মানুষের যেমন বৃষ্টি দেখলে ঘুমে জেঁকে ধরে এই সিগারেট খোরদের ও বৃষ্টিতে ধোঁয়া উড়ানোর ইচ্ছে জেঁকে ধরে বোধহয়।এসব ভাবতে ভাবতে গাড়ির কাচটা নামিয়ে বৃষ্টির দিকে হাত বাড়িয়ে দিল পুতুল।
হঠাৎই গাড়ির দরজা বন্ধ করার শব্দে অবচেতন মনে একবার পাশ ফিরে তাকিয়ে আবারও বৃষ্টি ছুঁতে শুরু করে।দু সেকেন্ডেই মস্তিষ্ক ঘটনার প্রতিফলন ঘটাতেই পুতুল বিস্মিত চোখে সূর্যর দিকে তাকায়।
আধা ভেজা হয়ে দু’হাতে ইউনিফর্ম টা ঝেরেঝুরে চুল গুলোর মধ্যে আঙুল চালিয়ে পানি সরানোর চেষ্টা করছে সূর্য।এই সবুজ কালো মিশেলে ইউনিফর্ম টা বোধহয় এই ছেলেটার জন্যই তৈরি হয়েছে। বৃষ্টির পানিতে সূর্যর মুখটাতে একমুঠো স্নিগ্ধতা ছড়িয়ে পড়েছে।গালের খোচাখোচা দাড়িগুলো তুলনামূলক একটু বড় দেখাচ্ছে।সূর্য চুল ঝারতে ঝারতে একবার পুতুলের দিকে তাকিয়ে এক টুকরো হাসি দিয়ে পকেট থেকে রুমাল বের করে মাথা মুছতে শুরু করে।আর পুতুল তার বহু প্রতিক্ষীত মানুষটার দিকে মুগ্ধতা নিয়ে পলকহীন ভাবে তাকিয়ে আছে। মুগ্ধতার রেশ কাটে সূর্য জাপটে ধরায়।
সূর্য পুতুলকে জাপটে ধরে মাথায় টপাটপ ভালবাসা দিয়ে অপরাধী কন্ঠে বলল,
-” সরি, সরি, সরি।”
সূর্যর কথা শুনে পুতুলের রাগেরা কোমড় বেধে উঠে দাড়ায়।মুহূর্তেই দুহাত দিয়ে ধাক্কাধাক্কি করে সূর্যকে সরানোর চেষ্টা শুরু করে অবিচল গতিতে।এতে যেন সূর্য দিগুণ শক্তিতে পুতুলকে জাপটে ধরে।পুতুল না পেরে রেগে সূর্যর বুকে জোরে কামড় বসিয়ে দেয়।
-” উফফ,,,,,,পুতুল মরে গেলাম।”
বলেই সূর্য ঝট করে নিজেকে সরিয়ে নেয়।বুকে হাত বোলাতে বোলাতে বলল,
-“এবার নিশ্চিত কেটে গেছে।”
পুতুল ছাড়া পেতেই দাঁতে দাঁত চেপে চুপচাপ সূর্যর থেকে সরে দরজার কাছাকাছি লেপ্টে বসে অন্যদিকে তাকিয়ে থাকে।সূর্য উপর দিকের দুটো বাটন খুলে করুন সুরে বলল,
-“দেখো, দেখো আমাকে তো হাফ মার্ডার করে ফেলেছো।ইসস,,,,আমার বুকটা রেপ করে দিয়েছে।”
সূর্যর কথায় পুতুল কটমট চোখে তাকায়।কামড় টা বেশি জোরেই দেওয়া হয়ে গেছে।রক্ত জমাট বেঁধে লালচে হয়ে আছে।কিন্তু পাশে কিসের দাগ? ভেবেই ফট করে সূর্য বুকে হাত দিয়ে দাগ দেখিয়ে বলল,
-” এটা কিসের দাগ?”
সূর্য চট করে পুতুলের হাত ধরে বুকে চেপে ধরে বলল,
-” তোমার বিরহের দাগ পিচ্চি।”
-” একদম নাটক করবেন না।বিরহ, বিরহ না ছাই।বিরহের জ্বালায় পৃথিবী থেকে গায়েব হয়ে গেছিলেন তাইনা? বলেছি না আমার সাথে কথা বলবেন না।কথা বলতে হলে এই পঁচা জব,এই ফালতু ড্রেস ছেড়ে রেজিগনেশন লেটার জমা করে তারপর আসবেন।”
-” এই ব্যাপার! কোন ব্যাপার না রেজিগনেশন পরে দিবো, আমি এখুনি এই ফালতু ড্রেস খুলে ফেলছি।”
বলেই সূর্য ইউনিফর্ম টা খুলতে গেলেই পুতুল দুমদাম কিল বসাতে শুরু করে।সূর্য হুহা করে হেসে আবারও পুতুলকে জড়িয়ে ধরে বলল,
-” সরি পিচ্চি পুতুল, আর না জানিয়ে যাবো না।”
-” আপনি এই পচা জবটা ছেড়ে দেবেন, আর কোথাও যাবেন না।”
সূর্য হেসে পুতুলের মাথাটা বুকের চেপে ধরে, তারপর পুতুলকে সোজা বসিয়ে বলল,
-“সবকিছু নিয়ে চলো নয়তো লেইট হয়ে যাবে।”
পুতুল ঘড়ি দেখে বলল,
-“বৃষ্টি হচ্ছে তো, আর ছাতাও নেই তো।”
-” ওয়েট”
বলেই ফোন হাতে কিবরিয়াকে ফোন করে।কিবরিয়া ছাতা নিয়ে আসতেই সূর্য হেসে বলল,
-” ভাই, কার থেকে আনলেন? ”
-” চা মামার থেকে আনছি সূর্য ভাই।”
কিবরিয়া গাড়িতে বসে সূর্যকে ছাতাটা এগিয়ে দিল।সূর্য নেমে পুতুলকে একহাতে জাপটে ধরে কলেজের ভেতরে এগিয়ে যায়।পুতুল একহাতে ফাইল নিয়ে অন্য হাতে সূর্যের ইউনিফর্মের পেটের কাছটা খামচে ধরে গুটিগুটি পায়ে এগিয়ে যাচ্ছে।আর হৃদয়ে একরাশ স্নিগ্ধ অনুভূতি নিয়ে বিড়বিড় করলো শহর, আমার ভালবাসার শহর।
_________________________
ব্যস্ত শহরে ব্যস্ত হয়ে ছুটছে ব্যস্ত জীবন।সেই ব্যস্ততায় মুড়ে আছে পুতুল আর সূর্যও। লাস্ট পরীক্ষাটা দিয়ে গেইট থেকে বের হতেই দেখে বড় আব্বু দাঁড়িয়ে আছে।হাসিমুখে চটপট পায়ে বড় আব্বুর সামনে যেয়ে দাড়ায়।মি. মাহবুব স্মিত হেসে বলল,
-” পরীক্ষা কেমন হলো মামনি?”
-” ভালো না, ফেইল হয়ে যাবে মনে হচ্ছে।”
মুখ গোমড়া করে বলল পুতুল।মি. মাহবুব পুতুলের হাত ধরে গাড়িতে বসিয়ে হেসে বলল,
-” দারুণ ব্যাপার, ফেইল করাটাও ওয়ান টাইপ অফ ক্রিটিভিটি মামনি।সো নো টেনশন জাস্ট চিল ওকে।”
পুতুল চোখ গোল গোল করে বলল,
-” বড় আব্বু তুমি কী আমাকে ডাব্বা খেতে উৎসাহ দিচ্ছো?”
-” অবশ্যই, পৃথিবীতে ডাব্বা খেতেও কোয়ালিটি লাগে মামনি যা সবার থাকে না।আর সেটা যদি কারো থাকে সে অবশ্যই স্পেশাল ওয়ান।”
বলেই হাসলেন মি. মাহবুব।পুতুল তখনো গোল গোল চোখে তাকিয়ে আছে তার বড় আব্বুর দিকে।
-”চলো আজ বাবা-মেয়ে মিলে জম্পেশ একটা লাঞ্চ পার্টি হয় যাক।”
-“সত্যি! ইসস,,,, কতদিন বাইরে যায়না বড় আব্বু।চলো, চলো।”
খাবার টেবিলে বসে দুজনে তুমুল গল্পের সাথে খাবার মুখে পুড়ে নিচ্ছে।পুতুল পুরোপুরি খাবার সাথে গল্পে মনযোগ দিলেও মি. মাহবুব বেশ অন্যমনস্কো হয়ে আছেন।বার বার আশেপাশে তাকাচ্ছেন, কেন যেন মনে হচ্ছে কেউ তাদেরকে অনুসরণ করছে।পুতুল বড় আব্বুর দিকে তাকিয়ে বলল,
-” বড় আব্বু কাউকে খুজছো? ”
-” না না কাকে খুজবো? মামনি একটু জলদি করো আমাকে একটা কাজে যেতে হবে।
বাসায় ফিরে বেশ ফাঁকা ফাঁকা লাগছে পুতুলের।এ কদিন সূর্য বাসায় থাকলে ততটা কথা হয়নি পুতুলের সাথে।সকাল আর রাতে নিয়মমাফিক খাবার টেবিলে আর মাঝে মাঝে ফোন আলাপ ছাড়া তেমন কথা হয়নি তাদের।পুতুলের পরীক্ষা থাকায় পড়াশোনাতে ডুবে ছিল আর সূর্য তো সকালে নাস্তা করেই অফিসে চলে যায় আর ফিরে রাতে।মাঝে মাঝে তো ডিনারেও দেখা মেলে না তার।পুতুল গুটিগুটি পায়ে এগিয়ে একবার বড় আম্মুর রুমে উঁকি দেয়।বর আম্মু বই জাপটে ধরে ঘুমিয়ে আছে দেখে চুপচাপ চলে যায়।রুমে যেয়ে নিজের ফোনটা হাতে বাগানের দিকে চলে যায়।দোলনায় বসে সূর্যকে কল দেয় পুতুল।দুবার বেজে কেটে গেলেও ফোনটা রিসিভ হলো না দেখে ভ্রু কুঁচকে ফেলে পুতুল।রাগ করার পর থেকে পুতুল ফোন করলে সাথে সাথে ব্যাক করে সূর্য।কিন্তু আজ আবার কী হলো? ভাবতে ভাবতে আবার কল দিতেই ফোনটা রিসিভ হয়।
ওপাশ থেকে চটাচট কোনো শব্দের সাথে সূর্য রাগী কন্ঠে বলল,
– ব্যস্ত আছি, ফ্রী হয়ে ফোন দিচ্ছি।
বলে পুতুলকে কিছু না বলার সুযোগ দিয়ে ফোন টা রেখে দেয় সূর্য।
সূর্যর রাগী কন্ঠ আর ফোন রেখে দেওয়ায় চোখ ছলছল করে উঠে পুতুলের।একগাদা অভিযোগ আর অভিমানেরা দলা পাকিয়ে কয়েক ফোঁটা গাল বেয়ে ঝরে পড়ে।
রাত দেড়টা নাগাদ সূর্য কয়েকগুচ্ছ ক্লান্তি নিয়ে বাড়ি ফেরে।পুতুলের রুমের সামনে দাড়িয়ে ফোনে পুতুলের পাঠানো অভিমানের ইনবক্সটা ওপেন করে দেখে নিলো আরেক বার।দরজা ঠেলে ভেতরে যেতেই ক্লান্তিরা উবে গিয়ে একরাশ জাদুমাখা ভালবাসারা হাজির হয়।পুতুল সূর্যের দেয়া শাড়ি টা পড়ে আদুরে আদলে ঘুমিয়ে আছে।পিয়াসের বিয়েতে বমি করে শাড়িটার বারোটা বেজে গেছিল।তাই দেখে সূর্য মজা করে বলেছিল আমার সাত হাজার টাকায় বমি করে দিলে!!এতো টাকা খরচা করে শাড়ি কিনে দিলাম। কোথায় শাড়ি পড়ে বউ বউ ঢঙে আশেপাশে ঘুরঘুর করবে, দু চারটে ছবি তুলবে তা না খনেখনে আছাড় খাচ্ছো আর বমি করছো!! সূর্যের কথায় পুতুলের বোকা বোকা চাহনির কথা মনে করে মৃদু হেসে উঠে সূর্য।
পুতুলের পায়ের এলোমেলো শাড়িটুকু ঠিক করে পাশে বসে সূর্য।শাড়ী পড়ে একটু বড়ো বড়ো লাগছে পুতুলকে।সামনের চুলগুলো আগের থেকে অনেকটা বড়ো হয়ে গেছে, গালে লেপ্টে আছে চুলগুলো।সূর্য কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে পুতুলের হাত নিয়ে টুপ করে একটা চুমু দিয়ে ফিসফিস করে বলল,
-” গুড নাইট নীলপরী”
পুতুল সিড়ি বেয়ে নিচে নামতেই টেবিলে বসা সকলে একযোগে তাকায় তার দিকে।সবাইকে তাকাতে দেখে পুতুল ভ্রু কুঁচকে নিজের দিকে তাকায়, সবকিছু তো ঠিকই আছে তাহলে,,,,,, ভেবে সামনে তাকাতেই টুকটুকি বলল,
-” আপু, আমার সামনে এসে একটু লাফাও তো,,,,উমম আই লাভ দিস সাউন্ড।”
পুতুল একপা সামনে ফেলতেই টনক নড়ে, স্কার্টটা উঁচু করে নুপুর দুটো দেখে ভ্রু কুঁচকে ফেলে পুতুল।চোখ তুলে সূর্যর দিকে তাকাতেই দেখে হেসে ভ্রু নাচাচ্ছে।পুতুল ভ্রু দুটো আরো কুঞ্চিত করে টুকটুকির পাশে এসে বসে।
#ছুয়ে_দেখো_আমার_শহর
#লেখিকা_হৃদিতা_আহমেদ
পর্ব-৩৩
– মি.ক্যাপ্টেন ডোন্ট ডিসটার্ব মি।আ’ম বিজি,ডিপলি বিজি।সো উইল ইউ প্লিজ স্টপ ইরিটেইটিং মি।ডোন্ট কল মি এগেইন।ডোন্ট ইউ ডেয়ার টু ইরিটেইট মি আ লিটল বিট,ওকে?
মেসেজ টা সেন্ট করে সাইলেন্ট মুড অন করে ফোনটা বিছানায় ছুড়ে ফেলে পুতুল।সূর্যের পছন্দের রংয়ের সাদা জামাটা পড়ে সুন্দর করে চুল গুলো বাধার চেষ্টা চালালো পুতুল।কিন্তু ব্যার্থ হয়ে সূর্যের দেওয়া সাদা পাথরের ঝলমলে নুপুরটায় রিনিঝিনি শব্দ তুলে ছুটলো বড় আম্মুর রুমে।
মিসেস মধুমিতা বুক সেল্ফে বইগুলো সাজাচ্ছিলেন।নুপুরের শব্দে পিছনে ফিরে পুতুলের দিকে তাকালেন।শুভ্রতায় মোড়ানো সাথে ঝলমলে নুপুরটা ঢেউ তুলে হেঁটে এগিয়ে আসা পুতুলকে দেখে তার মনে হলো রূপকথা থেকে সত্যি সত্যিই রাজকন্যা উঠে এসেছে।অবশ্য সে তো রাজকন্যায়,মিহিরের রাজকন্যা।কিন্তু রাজকন্যার মুখটা এমন গোমড়া হয়ে আছে কেন?
-” কি ব্যাপার পুতুল, মন খারাপ কেন?তিতিয়া এখনো আসেনি?নাকি বেড়াতে যাওয়া ক্যান্সেল হয়ে গেছে?”
-” বড় আম্মু শাড়ির সাথে যেভাবে চুল গুলো বেধেছিলে সেভাবে বেধে দাও তো।আমি একটুও পারছি না।”
-” এই ব্যাপার,আয় এখানে বস।”
বলে পুতুলকে ড্রেসিং টেবিলের সামনে বসিয়ে দেন মিসেস মধুমিতা।
ইনবক্স ওপেন করে পুতুলের মেসেজ টা পড়ে মৃদু হেসে উঠে সূর্য।গতকাল ফোন কেটেঁ দেওয়ার প্রতিশোধ নিচ্ছে পিচ্চিটা।পুতুলকে আরেক বার কল দিয়ে ব্যার্থ হয়ে ফোনটা পকেটে রেখে রিমান্ড রুমে ঢুকে সূর্য।কল্লোল নওয়াজ মারওয়ার নখের গোড়ায় পিন ঢোকাতেই গগনবিদারী চিৎকার করে উঠে নওয়াজ মারওয়া।কল্লোল আরেকটু চেপে ধরে বলল,
-” বল মেয়ে গুলোকে কোথায় রেখেছিস,বল?”
নওয়াজ মারওয়া কিছু না বলেই দাঁতে দাঁত চেপে বসে থাকে।নওয়াজের চুপ থাকা দেখে সূর্য রক্তিমকে বলল,
-” একটা রড গরম কর, এ যখন চুপ থাকতে চায় একে একেবারে চুপ করিয়ে দিই।জনাব মারওয়া, জিভেতে গরম রড নেওয়ার প্রস্তুতি নিন।”
নওয়াজ মারওয়া ফুঁসতে ফুঁসতে বলল,
-” ফয়সাল মারওয়ার ভাইকে তুলে এনেছিস, এর ফল ভয়াবহ হবে।”
নওয়াজের কথা শুনে সূর্য দুমদাম ঘুষি দিতে দিতে বলল,
-“আমার দেশের মেয়েদের নিয়ে ব্যবস্যা করা বুঝাচ্ছি তোকে।”
নওয়াজের হাতের পাতায় ব্লেড দিয়ে খচাখচ কয়েকটা পোচ দিয়ে বলল,
-” বল,কোথায় রেখেছিস মেয়েগুলোকে?”
নওয়াজ দাঁতে দাঁত চেপে কোনরকম বলল,
-” আগে নিজেদের ঘরের মেয়েকে তো বাঁচা, তারপর দেশের গুলো বাঁচাস।”
বলে পিয়াসের দিকে তাকিয়ে বাঁকা হেসে বলল,
-” ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ছাত্রী মিসেস দিশিকা রহমান তাইনা?”
বলেই একটা পৈশাচিক হাসি দেয় নওয়াজ।
নওয়াজের কথা শুনে পিয়াস হামলে পড়ে, নিজের সর্বশক্তি দিয়ে নওয়াজকে মারতে শুরু করে।
পিয়াস,সামির আর সূর্য গাড়ি থেকে নেমেই হুরপার করে দৌড়াচ্ছে।দুপুরে লাঞ্চ টাইমে পিয়াসের ফোনে আননোন নাম্বার থেকে দিশিকাকে কিডন্যাপ করার হুমকি বার্তা এসেছে।এদিকে বিগত একঘন্টা যাবত দিশিকার ফোন রিসিভ হচ্ছে না। আইন বিভাগের অফিস রুমে ঢুকেই কোনরকমে তথ্য নিয়েই আবার দৌড় লাগায় তিনজন।অন গোয়িং ক্লাসে তিনজন আর্মি অফিসার কে দেখে প্রফেসরসহ সকলে অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে।পিয়াস আগেই দিশিকাকে খুঁজে হাফ ছেড়ে জোরে নিশ্বাস নেয়। সূর্য প্রফেসরকে কোনরকম বুঝিয়ে দিশিকাকে সাথে নিয়ে আসে।দিশিকাকে বের করে নিয়ে আসতেই পিয়াস চট করে দিশিকাকে একটা থাপ্পড় দিয়ে বলল,
-” ফোন কোথায় তোর? বের কর,,,,,,ফাস্ট। ”
দিশিকা হতভম্ব হয়ে ঝটপট ফোন টা বের করে পিয়াসের দিকে এগিয়ে দিতেই পিয়াস মুহূর্তেই ফোন টাকে আল্লাহ মালিকের পিয়ারা করে দেয়।ঘটনা এতো দ্রুত ঘটেছে যে বাকি দুইজন বিস্ময়ে না কিছু বলতে পেরেছে না কিছু করতে পেরেছে।
গাড়িতে উঠতেই কল্লোলের ফোন কল পায় সূর্য।রিসিভ করতেই শুনতে পায়।
-” গরম রড এপ্লাই কাজ করেছে,নওয়াজ মারওয়া জানিয়েছে মেয়েগুলো ভারতে আছে। ওরা আজ রাতে মেয়ে গুলোকে পাকিস্তান চালান করবে।”
-” এখুনি রিপোর্ট তৈরি করে কমান্ডারকে জমা দে। আই থিংক টিম প্রলয় এখনো ইন্ডিয়াই আছে ওরা মেয়ে গুলোকে উদ্ধার করতে পারবে।তুই ঝটপট রিপোর্ট জমা দিয়ে দে।”
-” ওকে”
ফোন রেখে সূর্য জোরে একটা নিশ্বাস নিয়ে পিছনে তাকিয়ে পিয়াস আর দিশিকা কে একপলক দেখে নেয়।বেচারা বউকে মেরে এখন করুন চোখে বউয়ের দিকে তাকিয়ে আছে।দেখে মৃদু হেসে সিটে আরাম করে বসে পুতুলকে ফোন করে। কিন্তু রাগিনীর ফোন আনরিচেবল দেখাচ্ছে।পিচ্চিটা কী বেশি রেগে গেলো? ঘড়ি দেখে ফোন নিয়ে মাকে কল দিলো।মার থেকে নিশ্চয় তার বৌমার খবর পাওয়া যাবে।
মিসেস মধুমিতা কিচেনে থেকে স্নাকস নিয়ে ড্রয়িং এর সোফায় হাত-পা ছুড়ে শুয়ে থাকা ছন্দর কাছে এসে দাড়াতেই ফোন বেজে উঠে।ছন্দ মহাবিরক্তি নিয়ে নাক-চোখ কুঁচকে ফোনের দিকে তাকায়।কত তেলবাজি করে মায়ের ফোন টা নিলো গেমস খেলতে কিন্তু ভাই সব ভেস্তে দিলো।মুখ টা গোমড়া করে মায়ের দিকে ফোন এগিয়ে বলল,
-” ভাইয়া ফোন করেছে।”
মিসেস মধুমিতা ফোন টা রিসিভ করলেন।
-” হ্যা বল।”
-” মা তোমার বৌমা কোথায়?”
প্রশ্নটা মিসেস মধুমিতা বুঝতে পারলেও ভীষণ পরিমাণ বিস্মিত হবার ভঙ্গিতে বলল,
-” কীহ, বৌমা!! আমার বৌমা!! অবাক তুই কবে বিয়ে করলি? আবার আমাকে জিজ্ঞেস করছিস তোর বউ কোথায়?”
-” মা এসব মেগা সিরিয়াল বন্ধ করে বলো পুতুল কোথায়? ওর ফোন বন্ধ কেন? ওকে ডেকে দাও আমার কথা আছে।”
-” পুতুলের কথা পরে হবে অবাক, আগে তুই বৌমা কোথায় পেলি সেটা বল।”
-” মা, বাবা আমাকে সব বলেছে আর তুমি যে ঝগড়া করে বাবার সাথে একদিন কথা হরতাল করেছিলে তাও বলেছে।তুমি প্লিজ এসব হতবাক হওয়া বন্ধ করে পুতুলকে ডেকে দাও।”
ছেলের থেকে হতাশাজনক উত্তর পেয়ে স্বামীর প্রতি চরম বিরক্ত হলেন মিসেস মধুমিতা।স্বাভাবিক কন্ঠে বললেন,
-“পুতুল বাসায় নেই, তিতিয়ার সাথে ঘুরতে গেছে।”
-” ঘুরতে গেছে মানে! কোথায়?”
-” প্রতীকের বোনের বার্থডে ওখানে গেছে।”
-” ওহ, কখন বেরিয়েছে?”
-” ঘন্টা দুই হবে। ”
কমান্ডারের সাথে দেখা করে ছোট খাটো আলোচনা সভার পরে হেড কোয়াটার থেকে বেরিয়ে আসে টিম হিমালয়।সকলে মিলে ‘ওর্ডারস-আপে’ বসে টি টা খাচ্ছে আর খোশগল্পে মেতে উঠেছে।তাদের থেকে দুই টা টেবিল বাদে ডান সাইডে দশ-বারো টা ছেলে-মেয়ে কেক নিয়ে মাখামাখি করছে।সূর্য সেদিকে একপলক তাকিয়ে মৃদু হেসে ফোন হাতে আবারও কল দেয় পুতুলকে।এবারও ফোন বন্ধ পেয়ে মেজাজ টা হাত-পা নেড়ে উঠে।বাসায় যেয়ে আজ এটাকে দেখে নেবে, ফোন বন্ধ করে রেখে প্রতিশোধ নেওয়া!! ওর প্রতিশোধ নেওয়াবে।
আটটা নাগাদ বাসায় ফেরে সূর্য।লিভিং রুমে এসে মায়ের কোলে মাথা রেখে বলল,
-” বাবা ফিরেছে?”
মিসেস মধুমিতা ছেলের মোলায়েম চুল গুলোতে আঙুল চালিয়ে বললেন,
-” নাহ দেরি হবে আসতে।”
-” টুকটুকি কই?”
-” ওর রুমে, পড়ছে।”
মায়ের হাত টেনে চুমু দিয়ে বলল,
-” আর তোমার পুত্রবধূ?
মিসেস মধুমিতা ছেলের চুল গুলো টেনে বললেন,
-” হনুমান, আমার পুত্রবধূ?”
সূর্য হেসে বলল,
-” হ্যা, এই আমি তোমার অবাক পুত্র আর তার পুতুল বধু মিলে পুত্রবধূ।বুঝলে?”
-” বাঁদর,,,,,,এখনো ফেরেনি পুতুল, মনে হয় ডিনার করে ফিরবে।কিবরিয়া গেছে পুতুলকে আনতে।”
-” হুম, আসুক তোমার পুত্রবধূ ফোন বন্ধ করে বার্থডে পার্টি করা বের করবো আমি।”
চলবে
নায়ক নায়িকার সাদি মোবারক টা দিয়ে দিই??🤔🤔
নাহ,,,,,বাল্যবিবাহ দিলে যদি কেচ খেয়ে যায়😧
চলবে