ছুয়ে_দেখো_আমার_শহর পর্ব ৩০+৩১

#ছুয়ে_দেখো_আমার_শহর
#লেখিকা_হৃদিতা_আহমেদ

পর্ব-৩০

[-“আই লাভ ইউ বলো, এখুনি বলো।”
সূর্যর কাঁধে মুখ গুজে বিড়বিড় করে বললো পুতুল।সূর্য পুতুলকে আস্তে করে বালিশে শুইয়ে ব্লাঙ্কেটটা টেনে দিয়ে কানের কাছে ফিসফিস করে বলল,
-“আই লাভ ইউ,আই লাভ ইউ পিচ্চি।”
বলে কপালে হাত দিয়ে তাপমাত্রা চেক করে জলপট্টি দেয়।পুতুল চোখ বন্ধ করেই আবারও বিড়বিড় করে বলল,
-” নাউ গিভ মি আ কিসি।”
সূর্য পুতুলের দিকে তাকিয়ে ফোঁত করে একটা নিশ্বাস ফেলে।জ্বরের ঘোরে মেয়েটা যে এতো পাগলামো করে জ্বরটা না হলে জানতেই পারতো না।ফোন টা নিয়ে শ্রেয়াকে মেসেজ করলো সূর্য।মেসেজ করার কিছুক্ষণ পরেই কল দেয় শ্রেয়া।শ্রেয়ার সাথে কথা বলে বেলকনি থেকে পুতুলের কাছে আসতেই দেখে পুতুল চোখ বন্ধ করেই বাচ্চাদের মতো ঠোঁট ফুলিয়ে কাঁদছে।
-“পুতুল,কী হয়েছে?কাঁদছো কেন, বেশি খারাপ লাগছে?”
পুতুল চোখ বন্ধ করেই বাচ্চাদের মতো বলল,
-“অবাক চুমু দেয়নি।কার্ল তো রোজকে আই লাভ ইউ বলেই চুমু খায়।কিন্তু ইডিয়ট অবাক টা আমাকে আই লাভ ইউ বলে না আবার চুমুও দেয়না।”]
গাড়িতে বসে কথাগুলো ভেবেই মৃদু হেসে উঠে সূর্য।জ্বরের ঘোরে পুতুলের পাগলামি গুলো ভীষণ কিউট ছিল।সে তো সিদ্ধান্ত নিয়েছে মাঝে মাঝেই সে পুতুলকে পিয়াসদের ওখানে নিয়ে চুবিয়ে জ্বর বানাবে।আইডিয়া টা বেশ দারুণ ভেবেই মুচকি হাসলো সূর্য।ভাবনা জগতে টোকা পড়ায় কাঁচ নামিয়ে বাইরে তাকায় সূর্য।
-“কেমন আছেন ভাইয়া?”
তিতিয়া হেসে প্রশ্ন করতেই সূর্যও হেসে বলল,
-” দারুণ আছি, তোমার কী খবর?”
বলতেই পুতুল ফ্রন্ট সিটে বসে দুম করে দরজা বন্ধ করে।সূর্য একবার পুতুলের দিকে তাকিয়ে আবারও তিতিয়ার সাথে হেসে কথা বলতে শুরু করে।

সূর্য গাড়ি স্টার্ট দিয়ে পুতুলের দিকে তাকিয়ে বলল,
-“কোথায় যাবে বলো ‘সঙ্গসুখ’ নাকি ‘আাহারে’?
-“বাসায় যাবো।”
পুতুলের রাগী ফেস দেখে সূর্য মুচকি হাসলো।
-“ঠিক আছে।”
সূর্যর উত্তর শুনে পুতুলের রাগে মাথার চান্দী গরম হয়ে চুল পুড়ে যাবার উপক্রম হচ্ছে।ঠিক আছে বলে দিল! একবার জিজ্ঞেসও করল না কেন যাবো না? আমাকে জিজ্ঞেস করবে কেন? সে তো তিতিয়াকে জিজ্ঞেস করবে।
-” তোমার ফ্রেন্ড কার্ল হোমস এর কী খবর?”
সূর্যর প্রশ্ন শুনে পুতুল অবাক চোখে তাকালো যার অর্থ কার্লকে কীভাবে চিনলো।সূর্য পুতুলের বিস্ময় বাড়াতে বলল,
-“আর ওর গার্লফ্রেন্ড, কী যেন নামটা?হ্যা রোজ, রোজের কী খবর?”
পুতুল বিস্মিত হয়ে বলল,
-“ওদের কথা কে বলেছে আপনাকে? আর আপনি কী করে জানলেন রোজ কার্লের গার্লফ্রেন্ড?”
-” কেন তুমিই তো বললে।”
-” আমি!! আমি কখন বললাম?”
পুতুল বিস্মিত হয়ে ভাবছে সে কখন বললো!তাছাড়া কার্ল আর রোজ তার বেস্ট ফ্রেন্ড হওয়ার সুবাদে তাদের সিক্রেট লাভ স্টোরি শুধু সেই জানে।এই ক্যাপ্টেন জানলো কী করে?
-” অন্যের চুমাচুমি দেখা ভেরি ব্যাড ম্যানারস পুতুল।”
বলেই এক চোখ টিপ দেয় সূর্য।সূর্যর কথা শুনে পুতুল চোখ গুলো রসগোল্লার সাইজ করে তাকায়।সূর্য নিচের ঠোঁট কামড়ে হেসে বলল,
-” অবশ্য একদম খারাপ না শিখে রাখা ভালো।”
সূর্যর কথা শুনে পুতুলের নাক,গাল লাল হয়ে গেছে।এই ছেলেটা এতো ঠোঁট কাটা কেন?কীসব বলেছে? কিন্তু এসব জানলো কী করে! তবে কী সে জ্বরের ঘোরে এসব উল্টাপাল্টা বকেছে আর এই অসভ্য টা শুনে তার মজা নিচ্ছে!!ইসস,,,,,হ্যারি পোটারের মতো ম্যাজিক করতে পারলে এখুনি এই অসভ্য টাকে ভেনিস করে দিতো।
হঠাৎ গাড়ি থামায় পুতুল চোখ তুলে তাকায়।সূর্য সিট বেল্ট খুলে ঝুকে বলল,
-” চুমু খাবে?ভয়ংকর চুমু?”
পুতুল হতবাক হয়ে তাকাতেই সূর্য হেসে চোখ টিপ দেয়।সূর্যের চোখ টিপে ঠোঁট কামড়ে হাসা দেখে পুতুল দুমদাম করে সূর্যর বুকে কিল বসিয়ে দেয়।সূর্য হাসতে হাসতে পুতুলের দুহাত আটকে চোখে চোখ রেখে বলল,
-” ভালোবাসি পিচ্চি,ভীষণ ভালোবাসি।”
বলেই পুতুলের কপালে অনেকটা সময় নিয়ে চুমু একে দেয় সূর্য। তারপর আবারও হেসে গাড়ি স্টার্ট দিয়ে পুতুলকে শুনিয়ে গুনগুন করে গাইলো,

“এখনতো সময় ভালোবাসার, এ দুটি হৃদয় কাছে আাসার।তুমিও একা, আমিও যে একা লাগে যে ভালো।
ও প্রিয় ও প্রিয়।”

পুতুল এখনো অপলকভাবে তাকিয়ে আছে সূর্যের মুখের দিকে।সূর্যর বলা ভালোবাসি শব্দটা বার বার কানে প্রতিধ্বনিত হচ্ছে।সারা শরীরে অনুভূতিরা শিরশির করে ভালোবাসার আন্দোলন গড়ছে।এই একটা শব্দই যথেষ্ট হৃদয়কে তোলপাড় করার জন্য। একটা শব্দ এতটা ভয়ংকর হতে পারে?পুতুলের বুকের ভেতর হৃৎপিণ্ডটা কাপছে,মনে হচ্ছে পৃথিবীটাও ঘুরছে।কলেজ ইউনিফর্ম টা দু’হাতে খামচে চোখ বন্ধ করে সিটে হেলান দিয়ে বসে থাকে পুতুল।মনে মনে হাজার বার বলল ভয়ংকর শব্দ, ভয়ংকর শব্দ, ভয়ংকর শব্দ।

__________________

বাগাডোরা বিমানবন্দর থেকে সাইঁ করে প্লেইন উড়তেই ফোঁত করে নিশ্বাস ফেলে পিয়াস।দিশিকাকে নিয়ে দার্জিলিং এ পনেরো দিনের জন্য হানিমুনে এসেছিল।দশ দিন পার হতেই ফাটা তাহেরের হানিমুন ফাটা আদেশ এসেছে।আজকে রাতের মধ্যেই ভারত- বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী রাজ্য ত্রিপুরা যেতে হবে।টিমের বাকিরা তার আগেই পৌঁছে গেছে।একটু আগেই একরাশ অভিমান নিয়ে দেশে উড়াল দিল দিশিকা।আর পিয়াস ত্রিপুরার ছোট্ট এলাকা মেলাঘরে যাবার জন্য শিলিগুড়ি স্টেশনের উদ্দেশ্যে হেলেদুলে হেটে এয়ারপোর্ট থেকে বের হয়।হাঁটার তালে তালে থলিতে জমা সবগুলো খিস্তি ফাটা তাহেরকে উৎসর্গ করে দিল পিয়াস।

ভালোবাসার বসন্ত যখন পুতুলের হৃদয়ের অলিগলি রাঙাতে ব্যস্ত ঠিক তখনই সূর্য ব্যস্ত তার মাতৃভূমিকে আপন রঙে সাজাতে।পুতুল আর টুকটুকিকে পৌঁছে দিয়ে বাসায় আসতেই কমান্ডারের ওর্ডার পেয়ে হুরপার করে বেরিয়ে যায় সূর্য।

ছুটির ঘন্টা বাজতেই পুতুল তিতিয়াকে ফেলেই ছুট লাগায় বাইরে।আজকে সে সুখতারাকে দেখতে যাবে।সূর্যকে যে করেই হোক রাজি করাতে হবে।পনেরো দিন পরেই টেস্ট পরীক্ষা, শুরু হলে আর যাওয়া হবে না।ভেবে দ্রুত পা ফেলে গাড়ির কাছে এসে দাঁড়ায়।
কিবরিয়া পুতুলকে দেখতেই এক টুকরো হাসি দিয়ে গাড়ির দরজা খুলে দেয়।কিবরিয়াকে দেখে মুহূর্তেই মনে একঝাঁক বিষন্নতা উপস্থিত হয় পুতুলের।পুতুল গাড়িতে বসতে বসতে বলল,
-” আপনি এলেন যে ভাইয়া? আপনার সূর্য ভাইজান কোথায়?”
কিবরিয়া গাড়িতে উঠে বসে বলল,
-” জানিনা ম্যাডাম,সকালে ফোন করে জানালো দুপুরে আপনাকে নিয়ে যেতে তাই,,,,,”
-” কিবরিয়া ভাইয়া আপনাকে কতবার বলেছি আমার নাম ধরে ডাকবেন।আর যদি ম্যাডাম বলেছেন বড় আব্বুকে বলে আপনার চাকরি নট করে দিব আমি।”
পুতুলের কথায় জোরে হেসে উঠে কিবরিয়া।মাথা নেড়ে বলল,
-” ঠিক আছে বড় আপা।”
পুতুল এবার আরো রেগে বলল,
-” দাড়ান বাসায় যেয়ে আমি স্বপ্না আপুকে বলবো।”
পুতুলের কথায় কিবরিয়া আবারও হেসে ড্রাইভিং এ মনোযোগ দিল।

__________

ত্রিপুরার রাজ্যের ছোট্ট এলাকা মেলাঘরে টিম হিমালয় সিক্রেট মিশনে এসেছে।সকলেই মেলাঘরে অপরিচিত হয়ে ঘুরাঘুরি করছে।সূর্য রাস্তার পাশে দাড়িয়ে মাটির কাপে চা খেতে খেতে দুরের ফুটপাতে একটা শাড়ির দোকানে দাড়ানো পিয়াসকে একপলক দেখে নিল।কিছু একটা ভেবে পকেট হাতড়ে ফোনটা বের করলো।আজ নয়দিন যাবত ফোনটা অফ, সিক্রেট মিশনের রুলস অনুযায়ী মিশন শেষ হবার আগে কারো সাথেই যোগাযোগ করতে পারবে না।তাদের কে আলাদা ফোন অফিস থেকে দেওয়া হয় সেটাই ব্যবহার করতে হবে।আসার দিন তাড়াহুড়ায় পুতুলকে একটা মেসেজও দিতে পারেনি। পিচ্চিটা হয়তো তাকে ফোন করার চেষ্টা করছে।আগের বারের মতো মেসেজও দিয়েছে হয়তো।ফোনের দিকে তাকিয়ে এসব ভেবে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে সূর্য।মনে মনে উচ্চারণ করলো মিস ইউ পিচ্চি পুতুল, মিস ইউ।
হৃদয় থেকে যদি হৃদয়ে শব্দ পৌছানো যেতো তবে সূর্যও হয়তো তার উচ্চারিত বাক্যের কাঙ্খিত উত্তর মুহূর্তেই শুনতে পেতো।
#ছুয়ে_দেখো_আমার_শহর
#লেখিকা_হৃদিতা_আহমেদ

পর্ব-৩১

♪♪♪কেন মেঘ আসে হৃদয়ও আকাশে,
কেন মেঘ আসে হৃদয়ও আকাশে।
তোমারে দেখিতে দেয়না
মোহ মেঘে তোমারে দেখিতে দেয়না
মোহ মেঘে তোমারে অন্ধ করে রাখে
তোমারে দেখিতে দেয় না
মাঝে মাঝে তব দেখা পায় চিরদিন কেন পায়না,
মাঝে মাঝে তব দেখা পায় চিরদিন কেন পায়না।♪♪♪

ফোন টা হাতে নিয়ে প্রশমিতা পালের কন্ঠ টা পজ করে কল লিস্টে মি. ক্যাপ্টেন কন্টাক্ট টাই কল দেয় পুতুল। বরাবর এর মতো সুইচ অফ জানিয়ে বিনীত ভঙ্গিতে ধন্যবাদ দিয়ে টু টু শব্দ করে বিদায় নিলো যন্ত্রমানবী।পুতুল পুনরায় প্লে লিস্টে গিয়ে প্লে অপশন ক্লিক করে আবারও বেতের সোফা টায় গুটিশুটি হয়ে বসে বাইরে তাকালো।
সকাল থেকে প্রকৃতি তার বিষন্নতা জানাতে আকাশ চিরে কাঁদছে।প্রকৃতির বিষন্নতার সাথে নিজের বিষন্ন হৃদয় নিয়ে বৃষ্টিকণার দিকে শূন্য দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে পুতুল।কাল থেকে টেস্ট শুরু।প্রথমটাই বাংলা,যেটাতে পুতুলের ভয়ংকর ঘাটতি রয়েছে।কিন্তু বিন্দুমাত্র পড়তে ইচ্ছে করছে না।সামনের টেবিলে বাংলা বইটা হা করে তাকিয়ে আছে।বাতাসের দাপটে মাঝে মাঝে কয়েক ফোঁটা বৃষ্টিকণারাও বইটার সাথে সখ্যতা করে নিয়েছে।কিন্তু যার সখ্যতা করার কথা সেই উদাস চোখে গভীর ভাবনায় মত্ত।
ভাবনার বিচ্ছেদ ঘটে কারো ডাকে।পাশ ফিরে তাকাতেই দেখে স্বপ্না খাবার ট্রে হাতে দরজায় দাঁড়িয়ে আছে।পুতুল সোজা হয়ে বসে বলল,
-“স্বপ্না আপু,ভেতরে রেখে যাও,আমি একটু পরে খেয়ে নিবো।”
-” দুধের গ্লাস অবশ্যই শেষ করবেন।নইলে বড় মা শাস্তি দিবেন কইছে।”
পুতুল হেসে মাথা নেড়ে বলল,
-“ঠিক আছে।”

ক্যান্টনমেন্ট স্টেশনে মৈত্রী এক্সপ্রেস থামাতেই একে একে টিম হিমালয় এর সদস্যরা নেমে দাড়ায়।ভারী ভারী ব্যাগগুলো কাঁধে এগিয়ে যায় হেড কোয়াটারের দিকে।হেড কোয়াটারে পৌঁছে সোজা হাটা দেয় কমান্ডারের অফিস রুমে।রুমে ঢুকে পাঁচজনই একযোগে স্যালুট দেয়।প্রতিত্তোরে কমান্ডার হাসিমুখে বললেন,
-” সিট ডাউন বয়েস।”
-” থ্যাঙ্কিউ স্যার।”
বলে সকলে স্বাভাবিক হয়ে দাড়িয়ে থাকে।কমান্ডার সূর্যর দিকে তাকিয়ে বললেন,
-” সূর্য, রাত এগারোটার মধ্যে রিপোর্ট জমা দিবে এবং আজ রাতেই সেকেন্ড ল্যাপ্টেন্যান্ট মেসবাহ উদ্দিন স্যার জরুরি ভিত্তিতে মিটিং এ বসবেন।এন্ড ইউর টিম মাস্ট বি এটেন্ড দ্যা মিটিং।”
-“ইয়েস স্যার।”
-“এন্ড আ’ম এক্সট্রিমলি সরি।”
কমান্ডারের কথায় সকলে একসাথে অবিশ্বাস্য চোখে তাকায়।স্পেশাল ফোর্সের কমান্ডার আবু তাহের খাটাশ সরি বলছে!! ব্যাপার টা ঠিক বোধগম্য না হওয়ায় সূর্য অবাক হয়ে বলল,
-” সরি স্যার?”
-“নয়-দশ ঘন্টা জার্নি করে রিপোর্ট,মিটিং এর বোঝা চাপানোর জন্য সরি।আসলে উপর মহল থেকে প্রেসার দেওয়ায় বাধ্য হয়েই তোমাদেরকে এতো খাটাতে হচ্ছে।”
-“ইটস ওকে স্যার।”

——————————

এলার্মের টিং টিং শব্দে উঠে বসে পুতুল।কিছুক্ষণ ঝিম ধরে বসে থেকে এলার্ম বন্ধ করে পাশ ফিরে ফ্রেমের কাচ ভেদ করে সূর্যর ঝলমলে হাসিমাখা মুখের দিকে তাকালো।ফোন হাতে প্রথমে সূর্যর নাম্বারে কল দিলো,তারপর ভ্রু কুঁচকে রাগী চোখ নিয়ে মেসেজ অপশনে গিয়ে ফটাফট কিছু টাইপ করে সেন্ড বাটনে ক্লিক করে। ফটো ফ্রেমের দিকে তাকিয়েই ফট করে উঠে দাড়ায়।গায়ের থেকে সূর্যর হালকা নীলাভ শার্টটা টান মেরে খুলে ফ্লোরে ছুড়ে ফেলে।সাইড টেবিলে রাখা ফটো ফ্রেমটা দুম করে উল্টে রেখে নিজের রুমে চলে যায় পুতুল।

পৃথিবীর সকল পরীক্ষার্থীই পরীক্ষার সকালে দুর্দান্ত শিক্ষার্থী হয়ে উঠে।পুতুলও তার ব্যতিক্রম নই,পড়ার টেবিলে বসে দুলে দুলে সাইক্লোন গতিতে রিভিশন করছে।আর মিসেস মধুমিতা খাবার প্লেট হাতে দাঁড়িয়ে আছেন পুতুলের পাশে।দশটায় পরীক্ষা, ঘড়িতে সাড়ে আটটা বেজে গেছে দেখে পুতুলকে জোর করেই ঠেসেঠুসে খাওয়াতে শুরু করেন মিসেস মধুমিতা।খাওয়া শেষে তৈরি হয়ে বেড়িয়ে পড়ে পুতুল।গাড়িতে বসে বইয়ের দিকে তাকিয়ে মনে হচ্ছে কিছুই মনে নেই, কিছুই লিখতে পারবে না।গতকাল আরেকটু ভালো করে পড়লেই পারতো।সবকিছু মিলিয়ে সূর্যর উপর আরেক দফা রাগ হচ্ছে পুতুলের।রেগে থপ করে বইটা বন্ধ করে দেয় পুতুল।সূর্যকে কয়েকটা কড়া কথা শুনাতে হবে।কিন্তু শুনাবে কী করে?শুনাতে না পারুক মেসেজ করবে ভেবেই বইটা রেখে ব্যাগ থেকে ফোন বের করার জন্য উদ্যত হয়।কিন্তু প্রকৃতি পুতুলকে দিগুণ রাগিয়ে জানান দেয় ফোনটা ব্যাগে নেই।নিশ্চয় তাড়াহুড়োয় বাসায় ফেলে এসেছে।রাগে, দুঃখে কান্না পাচ্ছে পুতুলের।তাই না রাগবার আপ্রান চেষ্টা করে চোখ বন্ধ করে সিটে হেলান দিয়ে বসে থাকে পুতুল।

চিকেন মিক্স রিংটোনের মুরগির ভয়ানক ডাক শুনে ঘুম ভেঙে যায় সূর্যর।কোনরকম ধাক্কাধাক্কি করে উঠে বসে সূর্য।সূর্যর ধাক্কায় পিয়াস বাদে সকলের ঘুম ভেঙে যায়।রাতে মিটিং শেষ হতে তিনটা বেজে গেছিল।কল্লোলের বাসা কাছে হওয়ায় আর সকলে ক্লান্ত থাকায় রাতে সবাই কল্লোলের বাসায় থেকে গেছে।সূর্য রাগে কটমট করে কল্লোলকে এক লাথি দিয়ে বলল,
-” শালা এই বালের রিংটোন আবার দিয়েছিস?”
-” আমি আবার কখন দিলাম?”
বলে কল্লোল হামি তুলে উঠে ফোন নিয়ে দেখে স্ক্রিনে পিয়াস আর দিশিকার ফটোর উপর ইনকামিং কল সন্দেহ বোম লেখা।ফোন থেকে চোখ সরিয়ে যেয়ে পিয়াসের মাথায় থাপ্পড় দেয়।পিয়াস ঘুম ঘুম চোখে তাকিয়ে কল্লোলকে দেখে বিরক্ত নিয়ে বলল,
-” ঘুমাতে দে বাল।”
-” শালা ঘুমো বেশি করে ঘুমো।আর এদিকে তোর সন্দেহ বোম ব্লাস্ট হয়ে যাক।”
বলে ফোনটা পিয়াসের মুখের সামনে ছুড়ে ফেলে দেয়।সকল কাহিনী দেখে রক্তিম আর সামির আবারও উল্ট শুয়ে পড়ে। সূর্য বিরক্তি নিয়ে উঠে নিজের ব্যাগ ঘেটে ফোনটা বের করে।এতো ব্যস্ততায় ফোনের কথা একদম ভুলে গেছিল। ক্লান্ত থাকায় সকলে ইউনিফর্ম গায়েই ঘুমিয়েছিল, কল্লোল পিয়াসের ফোন দিয়ে ইউনিফর্ম এর শার্ট খুলে ওয়াশরুমের দিকে এগিয়ে যাচ্ছিল।কিন্তু তার আগে পিয়াস ঝড়ের বেগে ওয়াশরুমে ঢুকে যায়।পিয়াসের কাজে কল্লোল আর সূর্য ভ্রু কুঁচকে তাকায়, একে অপরের দিকে তাকিয়ে হেসে যে যার কাজে মনযোগ দেয়।

পিয়াস ওয়াশরুম থেকে বের হয়েই ফোন হাতে হন্তদন্ত হয়ে দরজা পর্যন্ত যেতেই কল্লোল অবাক হয়ে বলল,
-” কিরে কোথায় যাচ্ছিস?”
-” টাইম নাই, সাড়ে নয়টার মধ্যে না পৌঁছালে দিশিকা আজ আমাকে খুন করবে।”
-” আরে ইউনিফর্ম টা তো চেঞ্জ করে যা।”
-” চেঞ্জ করা যাবে না, দেরি হলে এটাই বাঁচাবে আমাকে।”
বলে বেরিয়ে যায় পিয়াস।কল্লোল হেসে সূর্যর দিকে তাকাতেই সূর্য পিয়াসের থেকেও দিগুণ ঝড়ের বেগে রুম থেকে বের হয়ে যায়।কল্লোল বৃহৎ আকৃতির বিস্ময় নিয়ে বলল,
-” যাহ শালা এর আবার কী হলো?”
বলে নিজেও সূর্যর পিছু এগিয়ে যায়।কিন্তু বের হবার আগেই সূর্য হাঁপাতে হাঁপাতে এসে বলল,
-” চাবি দে,গাড়ির চাবি। ”
-” কী হয়েছে বলবি তো।”
-” পরে বলছি আগে চাবি দে।”
কল্লোল আর কিছু না বলে ড্রয়ার ঘেটে চাবি বের করতেই সূর্য চট করে চাবি নিয়েই দৌড়ে বেরিয়ে যায়।

চলবে

পুতুলকে মেরে দেবো😈😈।
চলবে

আজ থেকে গল্পটা নিয়মিত দিবো।আর আজকে রাতে আরেকটা পার্ট দিবো ইনশাআল্লাহ।হ্যাপি রিডিং……..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here