ছুয়ে_দেখো_আমার_শহর পর্ব ৭

#ছুয়ে_দেখো_আমার_শহর
#লেখিকা_হৃদিতা_আহমেদ

পর্ব-৭

ভোরের দিকে হালকা ঠান্ডাতে ঘুমটাও হালকা হয়ে আসে পুতুলের।চোখ মেলতে যেয়ে মনে হচ্ছে চোখের উপর কেউ ভারী পাথর চাপা দিয়ে রেখেছে।তাই কিছুক্ষণ চোখ বন্ধ করেই পড়ে থাকে। চোখ বন্ধ থাকতেই বুঝতে পারে একটা নরম হাত পিছন থেকে তার কোমড় পেচিয়ে পিঠে মাথা ঠেকিয়ে শুয়ে আছে।কোনরকম পিটপিট করে চোখ খুলতেই সূর্যর মুখটা দেখতে পায় পুতুল।

সূর্য ঠিক তার মুখোমুখি হয়ে ডিভানে শুয়ে আছে। গায়ে সাদা কালারের টিশার্ট আর ধুসর কালারের থ্রি কোয়াটার প্যান্ট পড়ায় পায়ের লোম গুলো মারাত্মক মোহনীয় লাগছে।সূর্যের মুখের দিকে তাকাতেই পুতুলের বুকে অনুভূতিরা কেমন চিনচিন শুরু করে। ইসস,,,,ছেলেরা ঘুমলে কী এতো সুন্দর লাগে নাকি? আচ্ছা মেয়েরা ঘুমে সুন্দর লাগলে তাকে তো ঘুমপরী বলা হয়। তাহলে ছেলেদের কি বলা হয়, ঘুমপরা? তবে কি সে সূর্যকে ক্যাপ্টেন না বলে ঘুমপরা বলে ডাকবে? ভাবতেই ঠোঁটের কোণে এক চিলতে হাসি এসে জমা হয়।সেই হাসি নিয়েই পুতুল আবার সূর্যকে খুঁটিয়ে দেখা শুরু করে।সরু নাক,লালচে ঠোঁট,ফর্সা গালভর্তি ছোট ছোট দাড়ি, কালো ভ্রুর নিচে বন্ধ চোখ দেখে মনে হচ্ছে কোন শুভ্র সাদা বরফ দেশের রাজকুমার ঘুমিয়ে আছে।

সূর্যকে দেখতে দেখতে কখন যে আবার ঘুমিয়ে গেছে বুঝতে পারে নি পুতুল।হঠাৎ কারো ডাকে চোখ খুলে সামনে তাকাতেই দেখে সূর্য ভ্রু কুঁচকে তার দিকে তাকিয়ে আছে।পুতুল চোখ মেলতেই সূর্য তার ফোন টা পুতুলের হাতে দিয়ে বলল,
-” কথা বলো।”
হঠাৎ ঘুম থেকে উঠে ফোন হাতে নিয়ে কিছুক্ষণ ভাবলেশহীন ভাবে বসে থাকে পুতুল। সূর্য আবার কথা বলার তাগাদা দিতেই ফোন কানে লাগিয়ে ঘুম ঘুম কন্ঠে বলল,
-” হ্যালো!!”
-” পুতুল,,,,আমি মাম্মা বলছি।”
মায়ের কথা শুনে পুতুলের সব কান্না গলায় দলা পাকিয়ে আসতে শুরু করে।ফুপিয়ে বলে উঠে,
-” মাম্মা,,,মাম্মা তুমি ঠিক আছো?” বলে কেদে দেয় পুতুল।
-” আমি ঠিক আছি পুতুল।তুমি কান্না বন্ধ করো, এভাবে মরা কান্না শুরু করেছো কেন? আমি কি মারা গেছি? ”
মায়ের কথায় পুতুলের কান্নার বেগ বেড়ে যায়।সে কোনরকম বলল,
-” মাম্মা,,,,তুমি এখানে চলে আসো প্লিজ। আমার ভীষণ ভয় লাগছে মাম্মা।”
মিসেস প্রীতি রেগে কঠিন কন্ঠে বললেন
-” সেটা কোনদিন সম্ভব নয় পুতুল, তোমার বাবা তার কথা রাখেনি।আমিও তার কোন কথা রাখবো না।”
-” মাম্মা, আমি তোমাকে ছাড়া থাকতে পারবো না মাম্মা।” বলেই কাঁদতে শুরু করে পুতুল।
-” তোমাকে পারতে হবে, আমি যতোদিন অন্য কোথাও সেটেল্ড হতে পারি তোমাকে ওখানেই থাকতে হবে পুতুল। সো কথায় কথায় কান্নাকাটি বন্ধ করে ভালো থাকার চেষ্টা করো আর নিজের পড়াশোনার প্রতি মনোযোগ দাও।”
-” মাম্মা আমি সত্যি তোমাকে ছেড়ে থাকতে পারবো না।” বলে ফুপিয়ে কাঁদতে শুরু করে পুতুল।মিসেস প্রীতি একটু নরম কন্ঠে বললেন,
-” আমি তো বলিনি আমাকে ছেড়ে থাকতে হবে।আমাকে একটু সময় দাও তারপর সব ঠিক করে দিব আমি।এখন রাখছি।” বলে ফোন রেখে নিরবে কেঁদে দেন মিসেস প্রীতি।তার কলিজা টা এভাবে কাদলে সে কি করে থাকবে।সে তো কিছুতেই মিহিরের ওই ঘরে, ওই দেশে পা রাখবে না, কখনো না।

পুতুলের হাতে ফোন দিয়ে ওয়াশরুমে চলে গেছিল সূর্য।ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে দেখে পুতুল ফোনের দিকে তাকিয়ে নাক টেনে টেনে কাঁদছে।কিছুক্ষণ ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে থেকে পুতুলের সামনে এসে দাঁড়ায় সূর্য।ঝাঁজালো গলায় বলল,
-” এই মেয়ে কাঁদছো কেন? এখন তো ছোট মা ঠিক আছে তারপরও কাঁদছো কেন, হ্যা?”
সূর্যের ধমকে পুতুল মাথা নিচু করেই বসে আছে। অন্য দিকে ছন্দ ধড়ফড় করে উঠে বসে সূর্যের দিকে তাকায়।ঘুম ঘুম কন্ঠে বলল,
-” উফফ, ভাইয়া সকাল সকাল চিল্লাচ্ছো কেন?”
-” আমি চিল্লাচ্ছি,আমি? ফাজিল কোথাকার কটা বাজে,হ্যা? স্কুল নাই তোর, আর আরেক জন তো কলেজ না যাওয়ার জন্য সকাল সকাল কান্না শুরু করেছে।”
বলে একটু দম নিয়ে চেচিয়ে বলল,
-” বের হ, আমার রুম থেকে এখনই বেরিয়ে যা।”
-” উফফ যাচ্ছি,যাচ্ছি।” বলে পুতুলের হাত ধরে বলল,
-” এই আপু চলতো এই জল্লাদের রুম থেকে চলো।” বলে পুতুলের হাত ধরে বের হয়ে যায় ছন্দ।

______________________

পুতুল আজ প্রথম ক্লাস করতে যাচ্ছে বড় আব্বু আর ছন্দর সাথে।কলেজ গেইটে গাড়ি থামিয়ে নেমে দাড়ান মি. মাহবুব। ছন্দ আর পুতুল নামতেই ভেতরের দিকে হাটা শুরু করেন।ছন্দকে তার ক্লাসরুমের সামনে ছেড়ে পুতুলের হাত ধরে এগিয়ে যান প্রিন্সিপালের রুমের দিকে।প্রিন্সিপাল মি. মাহবুব কে দেখেই হাসিমুখে উঠে এসে জড়িয়ে ধরে বললেন,
-” কেমন আছেন মেজর সাহেব ? ইদানীং দেখাই পাওয়া যায় না।”
-” ভালো আছি, একটু ব্যস্ত ছিলাম রে। তোর কি খবর বল?”
-“এইতো এজ ইউজুয়াল বাচ্চা কাচ্চা সামলাচ্ছি।” বলেই হো হো করে হেসে দেন তৌফিক সাহেব।তারপর পুতুলের দিকে তাকিয়ে বলল,
-” কেমন আছো প্রিয়ন্তিকা?”
-” জি স্যার ভালো আছি।” মৃদু হেসে জবাব দেয় পুতুল।মি. মাহবুব বসে বললেন,
-” প্রথম দিন তো তাই পৌঁছে দিতে এসেছি।তৌফিক তুই নিজে ওকে ক্লাসে দিয়ে আসিস।” বলে আরো কিছুক্ষণ কথা বলে উঠে দাড়ায় মি.মাহবুব।তারপর পুতুলের দিকে তাকিয়ে বললেন,
-” ওকে মামনি বড় আব্বু এখন আসি, তুমি তোমার স্যারের সাথে একটু বসো ক্লাস শুরু হলে পৌঁছে দেবে, কেমন?”
পুতুল মাথা নেড়ে আচ্ছা জানায়।মি. মাহবুব বেস্ট অফ লাক জানিয়ে পুতুলের মাথায় চুমু একে বের হয়ে যায়।
বড় আব্বুর এতো স্নেহ পেলে তো পুতুলের বাবার প্রতি আরো বেশি অভিমান হয়।সেও মায়ের মতো বাবাকে কখনো ক্ষমা করবে না।বাবা থাকলে তো তার জীবন টা এতো এলোমেলো হতো না। আর পাঁচটা মেয়ের মতো সেও বাবার ভালবাসা পেত, একটা সুন্দর পরিবার পেত।ভেবেই ভীষণ মন খারাপ হয়ে যায় পুতুলের।

টানা পাঁচ সাতটা মিশন করায় সূর্যের টিমের সবাই দুমাসের ছুটিতে আছে। তাই আজ সবাই একসাথে লাঞ্চ করার প্ল্যান করেছে।সূর্য বেশ সেজেগুজে চকলেট বয় হয়ে বের হয়েছে।রেস্টুরেন্টে ঢুকে ডান সাইডের দুই টা টেবিল পরে পাঁচ জনকে দেখে হেসে এগিয়ে যায়।টেবিলের কাছে এসে দুম করে কল্লোল আর শ্রেয়ার মাঝখানে বসে বলল,
-” কিরে শালা লেজ নিয়েই এসেছিস?” বলে শ্রেয়ার মাথা চাটি দেয়।শ্রেয়া রেগে কিরমির করে বলল,
-” এই কী বললি তুই, আমি লেজ?” বলেই সূর্যকে কিল দিল।
-” উফফ, এই কল্লোল তোকে কতবার বলেছি তোর খেপা লেজটা সাথে নিয়ে আসবি না।”
সূর্যের কথায় বাকি সবাই হো হো করে হেসে উঠে।শ্রেয়া রেগে তাকাতেই সবাই একসাথে হাসি থামিয়ে দেয়। শ্রেয়া রেগে কল্লোলের দিকে তাকিয়ে বলল,
-” কল্লোল, তোমার বন্ধুকে থামাও নইলে কিন্তু আমি আজ একটা খুন করে ফেলবো।”
কল্লোল হতাশ হয়ে বলল,
-” শ্রেয়া ইনি আমার বন্ধু নন, আমার বস।আর তুমি তাকে খুন করতে চাইছো!! ভাবোতো এরপরের কোনো মিশনে যদি আমাকে সামনে দিয়ে মেরে দেন তখন তোমার কি হবে!!”
পিয়াস চিন্তিত ভাবে বলল,
-” হ্যা ম্যাডাম, আমাদের ক্যাপ্টন চাইলে কিন্তু সত্যি মেরে দিতে পারে।
পিয়াসের কথায় রক্তিম আর সামির গম্ভীর মুখে একসাথে মাথা নেড়ে হুম বললো।
সবার দিকে তাকিয়ে শ্রেয়ার রাগে কাঁদতে ইচ্ছে করছে। সবগুলো বাঁদর একসাথে তার পিছনে লাগে ভেবেই টেবিলের উপর থেকে একটা কাঁটাচামচ নিয়ে সূর্যর দিকে তাক করতেই ফোন বেজে উঠে।

চলবে
আপনাদের কমেন্ট পরতে ভীষণ ভালো লাগে রিডার্স।থ্যাংকস টু অল এন্ড লটস অফ লাভ😍😍

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here