#জীবনের_থেকেও_বেশি
#পর্বঃ০৪
#লেখাঃশুভ্রতা_শুভ্রা
ঐশীর চোখের নোনা পানি তামিমের চোখের পাতায় পরতেই তামিম পিটপিট করে তাকালো। তামিম যে চোখ খুলেছে সেটা আর ঐশী খেয়াল করেনি। সে তামিমের কপালে ঠোঁট লাগিয়ে চোখ বন্ধ করে আছে। তার চোখ থেকে অবিরাম পানি পরছে। ঐশীকে এমন ভাবে দেখে একটা মলিন মুচকি হাসি দিলো তামিম।
তামিম কিছুক্ষণ চোখ বন্ধ করে চুপ করে থেকে হুট করে চোখ খুলে ঐশীকে সরিয়ে দিলো নিজের কাছ থেকে। তামিমের এমন কাজে ঐশী চমকে উঠে। তামিমের চোখ কেমন জানি অতিরিক্ত লাল হয়ে গিয়েছে। ঐশী ছলছল নয়নে তামিমের দিকে তাকালো।
ঐশীর এমন দৃষ্টিতে তামিমের বুকে রক্তক্ষরণ শুরু হয়ে গিয়েছে। ও নিজেকে কিছুটা সামলিয়ে ঐশীকে উদ্দেশ্য করে বলল
“এই মেয়ে তুমি এই রুমে এসেছ কেন? কার অনুমতি নিয়ে এসেছ। বেশি সাহস হয়ে গিয়েছে না।”
তামিম বকাবকি করতেই আছে। ঐশী সেটা না শুনে তামিমের কাছে গিয়ে শক্ত করে জরিয়ে ধরে কান্না করতে লাগলো। তামিম ওকে সরিয়ে দিতে চাইলো। কিন্তু ঐশী ছাড়লো না। ও আরো জোরে জোরে কান্না করতে লাগলো।
তামিম আর সরানো চেষ্টা করলো না। ঐশী কান্না করতে করতে হেঁচকি তুলে ফেলেছে। তামিম আলতো করে ওকে নিজের বুক থেকে তুলে পানির গ্লাস ওর মুখে ধরে। ঐশী ঢকঢক করে পানি খেয়ে নিলো।
হঠাৎ করেই তামিম খেয়াল করলো মেঝেতে রক্ত। তারপরেই তার নজর পরলো ঐশীর পায়ের দিকে। ঐশীর পা থেকেই রক্ত বের হচ্ছে। তামিম তাড়াহুড়ো করে উঠে গিয়ে ব্যান্ডেজ নিয়ে এসে ঐশীর পা ওর কোলে তুলে নেয়। তার রাগী কন্ঠে বলল
“এই কেয়ারলেস মেয়ে পা কেটে গেছে আর তুমি। তোমাকে আর কি বলবো। নিজের প্রতি যত্ন নিতে পারো না। কতোটা কেটে গিয়েছে দেখছ।”
ঐশী মলিন মুচকি হেসে বলল “হৃদয়ে তো রক্তক্ষরণ হচ্ছে। ওটা তো আপনিই আটকাতে পারেন। কিন্তু সে যাইহোক ছাড়ুন আমাকে। নিজে আগে নিজের যত্ন নিতে শিখুন। তারপর অন্য কাউকে বলবেন।”
তামিম ঐশীর দিকে তাকায়। মেয়েটার মুখ চোখ ফুলে আছে। চুলগুলো এলোমেলো হয়ে গিয়েছে। তামিম আর পারলো তার জানটাকে কষ্ট দিতে। সে হুট করে শক্ত করে জরিয়ে ধরলো ঐশীকে। ঐশীও জরিয়ে ধরলো তামিমকে। দুইজনই কান্না করছে।
দরজায় টোকা পরতেই তামিম ঐশীকে জরিয়ে ধরে রেখেই বলল “আয় আর ঢং করতে হবে না।”
নিলয় আবুলের মতো একটা হাসি দিয়ে রুমে ঢুকলো। তামিম এখনো ঐশীকে তার বুকে জরিয়ে রেখেছে। ঐশী লজ্জায় লাল গিয়েছে। নিলয়ের সামনে এখনো জরিয়ে রেখেছে। ভাবতেই আরো লজ্জায় কুকরে যাচ্ছে ঐশী। নিলয় বলল
“আরে তুই যে নিলজ্জ সেটা আমি আগে থেকেই জানি। তাই বলে এমন করে নিজের বউকে জরিয়ে ধরে রাখবি সারাক্ষণ। আমার মতো সিঙ্গেল মানুষের তো বুকে লাগে ভাই।”
তামিম বলল “খালি জরিয়ে ধরে রাখবো না কিস ও করবো তোর সামনে। এতো যখন লাগে তাহলে বিয়ে করিস না কেন? ওহ আমি তো ভুলেই গিয়েছিল তোকে তো কোনো মেয়েই পছন্দ করবে না।”
নিলয় বলে উঠলো “তামিম তোকে তো আমি…”
তামিম হাসতে লাগলো। নিলয় গাল ফুলিয়ে দাড়িয়ে আছে। ঐশী অপলক দৃষ্টিতে তামিমের হাসিমাখা মুখের দিকে তাকিয়ে আছে।
নিলয় গাল ফুলিয়েই বলে উঠলো “কয়টা বাজে খেয়াল আছে দুপুর পার হয়ে বিকেল হতে লাগলো। তোদের কি ক্ষুধা পায় না। আমার তো সেই ক্ষুধা পেয়েছে।”
নিলয়ের কথায় তামিম ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখলো চারটা বাজে। সে হুট করে ঐশীকে কোলে নিয়ে এগোতে এগোতে বলল “চল খাবো একসঙ্গে। আর রুমটা ক্লিন করে দিতে বল।”
নিলয় “হুম” বলে একটা সার্ভেন্টকে ডেকে রুমটা ক্লিন করতে বলে খেতে চলে গেলো।
খাবার টেবিলে নিলয় খাচ্ছে আর তামিম ঐশীকে খাইয়ে দিচ্ছে আর নিজেও খাচ্ছে। হঠাৎ করে নিলয়ের ফোনটা বেজে উঠলো। নিলয় তাড়াতাড়ি ফোনটা পকেট থেকে বের করে দেখলো তাহিয়া কল করেছে। নিলয় চোখ তুলে তামিমের দিকে তাকালো। তামিম ঐশীকে খাওয়াতে খাওয়াতেই বলে উঠলো
“রিসিভ কর আমার বোনটা তাছাড়া আবার রেগে যাবে। তখন আবার সমস্যা হয়ে যাবে। ওকে ভালো মতো করে নিয়ে আয়।”
নিলয় ফোন নিয়ে বাহিরে চলে গেলো।
পড়ন্ত বিকেলে ছাদের কিনারায় দাড়িয়ে আছে তামিম আর ঐশী। ঐশীর মুখে খুশির ঝলক। তামিমের মুখেও মুচকি হাসি রয়েছে। তামিম এক হাত দিয়ে ঐশীর কোমর জরিয়ে ধরে রয়েছে। ঐশী পরম আবেশে তামিমের বুকে মাথা রাখা। তামিম টুকিটাকি কথা বলছিল। হঠাৎ ফোপানো আওয়াজ আর তার বুকে উষ্ণ পরশে তাড়াহুড়ো করে ঐশীকে নিজের মুখে সামনাসামনি এনে দেখে মেয়েটা ফোপাচ্ছে।
তামিম আলতো করে ঐশীর দুইগালে হাত রাখলো। মৃদু কন্ঠে বলে উঠলো
“জান কান্না করো না প্লীজ। তোমার কান্না যে আমি সহ্য করতে পারিনা। দেখো তুমি তো আমাকে ভালোবাসো তাই না। বলো”
ঐশী মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁবোধক জবাব দিলো।
তামিম আবার বলা শুরু করলো “তোমাকে তুলে না আনা ছাড়া আমার কোনো উপায় ছিলো না। আমি বুঝতেছি তোমার মন খারাপ হচ্ছে তাদের জন্য। মন খারাপ করো না। আর আমি যদি তোমাকে তখন না নিয়ে আসতাম তাহলে তুমি তো অন্য..না আমি বেঁচে থাকতে কখনো তুমি আমাকে ছাড়া অন্যকারো কাছে যেতে পারবেনা। আর তোমার বাবা মা ভাই কখনোই আমাকে মেনে নিবে না।”
ঐশী জরিয়ে ধরলো তামিমকে। তামিমও জরিয়ে নিলো ঐশীকে। হঠাৎ কাশির শব্দে দুইজনই নিজেদের স্বাভাবিক করে ছাদের দরজার দিকে তাকিয়ে দেখলো তাহিয়া দাড়িয়ে মিটিমিটি হাসছে।
তামিম তাহিয়ার দিকে এগিয়ে গিয়ে ওর মাথায় একটা গাট্টা মেরে বলল “কি হয়েছে হাসছিস কেন এমন করে। ভুত ধরছে নাকি।”
তাহিয়া মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে বলল “ভাইয়া কথায় কথায় এমন করে মারো কেন। সে যাইহোক ভাবি কেমন আছো।” ঐশীকে উদ্দেশ্যে করে বলল
ঐশী নিজের মুখে একটা মুচকি হেসে বলল “হুম আলহামদুলিল্লাহ্ ভালো তুমি।”
তাহিয়া বলল “হুম আমি অনেক অনেক ভালো আছি। কতোদিন পর তোমাকে দেখলাম তাও আবার তুমি এখন আমার ভাবি। আর ভাইয়া যে হোস্টেল থেকে আমাকে বাড়িতে আসতে বলেছে। আমি জাস্ট অবাক হয়েছিলাম। কারণ আমি তিনবছর যাবত বাসায় আসি না। ভাইয়াকে কতো বলেছি বাসায় আসার জন্য কিন্তু ভাইয়া তো ভাইয়াই রাজিই হয় নি।”
তামিম বিরক্তিকর দৃষ্টিতে তাহিয়ার দিকে তাকিয়ে বলল “বোন তোর পায়ে পরি এখন থাম। সবকথা কি এখনই বলবি। কিছু কথা তো বাকি রাখ।”
তাহিয়া মুখ বাকিয়ে বলল “তুই চুপ থাক। ভাবি চলো তো আমার রুমে। আমার অনেক কথা আছে তোমার সঙ্গে।” বলেই হাত ধরে ঐশীকে নিয়ে যেতে লাগলে। তামিম ওদের আটকিয়ে বলল
“ওই ওই এটা আমার বউ তুই কেন নিয়ে গিয়ে গল্প করবি। আর তোর কথা শুনে যদি আমার বউটা মাথার সমস্যা হয়ে যায় তখন কি করবো আমি। আমার একটা মাত্র বউ আমার।”
তাহিয়া রাগী দৃষ্টিতে তার ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে বলল “কি আমার সঙ্গে থাকলে ভাবির মাথার সমস্যা হবে। তোর সঙ্গে থাকলে সমস্যা হবে।” বলেই ঠোঁট উল্টিয়ে ঐশীকে উদ্দেশ্য করে বলল
“দেখ না ভাবি আমি হয় তো একটু বেশি কথা বলি। তাই বলে ভাইয়া আমাকে এমন করে বলবে। তুমিই বলো এটা কি ঠিক।”
#জীবনের_থেকেও_বেশি
#পর্বঃ০৫
#লেখাঃশুভ্রতা_শুভ্রা
ঐশী কি বলবে বুঝতে পারলো না। এইদিকে দুইজনের মধ্যে কথা কাটাকাটি চলছে। তখনই নিলয়ের আগমন নিলয় বলে উঠলো
“তোরা আবার লাগছিস। তোরা যে বড় হয়েছিস সেটা ভুলে গিয়েছিস। এখনো টম এন্ড জেরির মতো ঝগড়া করছিস।”
তামিম বলল “পকপকিকে এখান থেকে নিয়ে যাহ তো।”
তাহিয়া বলল “তুই পকপকি তোর চৌদ্দগুষ্টি পকপকি।”
তামিম ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বলল “আমার চৌদ্দগুষ্টির মধ্যে কিন্তু তুই ও পরিস।”
তাহিয়া বলল “হ ভালো”
—————–
বিকেল পেরিয়ে সন্ধ্যা হয়ে গিয়েছে। নিলয় আর তামিম একটা কাজে বাহিরে গিয়েছে। ঐশী আর তাহিয়া সোফায় চিপস আর চকলেট নিয়ে বসে টিভি দেখছে মনোযোগ দিয়ে। টিভিতে টম এন্ড জেরি দেখছে ওরা।
রাত সাড়ে দশটা বাজে নিলয় আর তামিম বাড়ির ভিতর ঢুকতেই দেখলো চারিদিকে চিপস এন্ড চকলেটের পেকেট। আর দুইজনই মনোযোগ দিয়ে টিভি দেখছে। ওরা কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে হো হো করে হেসে দিলো। তামিম আর নিলয়ের হাসার শব্দে ঐশী আর তাহিয়া টিভি থেকে চোখ সরিয়ে দুইজনই চোখ ছোট ছোট করে তাকালো। অন্যদিকে ওরা দুইজন হাসতেই আছে। বলতে গেলে হেসে গড়াগড়ি খাচ্ছে। তাহিয়া ভ্রুযুগল কুচকে ওদের উদ্দেশ্য করে বলল
‘তোমাদের কি হয়েছে? এমন করে পাগলের মতো হাসতেছ কেন; আজব তো!”
তামিম আর নিলয় একে অপরের দিকে তাকিয়ে আবার হাসতে লাগলো। আর ঐশী মুগ্ধ নয়নে তাকিয়ে আছে তার প্রিয়তমের দিকে। উজ্জ্বল শ্যামলা বর্ণের ছেলেটির মুখে চাপ দাড়ি। গালের টোল ইশ। ছেলেটা যে হাসতেও পারে সেটা তো জানাই ছিলো না ঐশীর। ছেলেটাকে গভীর অবস্থা থেকে কখনো হাসতে দেখেনি। ঐশীর ভাবনায় ছেদ ঘটলো আছিয়া খালার কন্ঠে।
আছিয়া খালা অনেক আগে থেকে রান্নার কাজ করছে এই বাড়িতে। তামিমের নিজের খালার মতোই দেখে তাকে। আপন বলতে এই মানুষটা আর নিলয় ছিলো তার পাশে। তাছাড়া যে সে তার ছোট্ট বোনটাকে নিয়ে ছন্নছাড়া হয়ে যেত। আছিয়া খালা শাড়ির আচলে হাত মুছতে মুছতে মিনমিনে গলায় ঐশীকে বলল
“ভাবি রাতে খাবার খাইবেন না।”
ঐশী ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখলো এগারোটা বাজতে দশমিনিট বাকি আছে। সে সবাইকে নিয়ে খাবার টেবিলে বসালো। অনেকক্ষণ ধরে তামিম খাবারের দিকে তাকিয়ে হাত গুটিয়ে বসে আছে। আর নিজেই নিজেকে গালি দিচ্ছে কেন যে রাগের জন্য জিনিস পত্র ভাঙাচোরা করতে গেলো। আর হাতটাই বা কেন কাটলো। দুপুরে বিরিয়ানি হওয়ায় চামচ দিয়ে খেয়েছে। আর ঐশীকেও খাইয়ে দিয়েছে। কিন্তু এখন কিভাবে খাবে। এই দিকে পেটে ইদুর দৌড়াছে। ধীরে ধীরে হাতটা প্লেটের দিকে নিবে তার আগেই একটা লোকমা ভাত কেউ তার মুখের সামনে ধরলো। তামিম চোখ তুলে তাকিয়ে দেখলো ঐশী। মুখে তার লাজুক হাসি ফুটে উঠেছে। তামিম ও ঠোঁট কামড়ে হেসে হা করলো। ঐশীও খাইয়ে দিতে লাগলো। তাহিয়া আর নিলয় খাচ্ছে আর মিটিমিটি হাসছে।
রাতের ঠান্ডা বাতাস গায়ে এসে লাগছে ঐশী আর তামিমের। ওরা বারান্দায় বসে আছে। ঐশী দোলনায় বসে আছে আর তামিম তার কোলে মাথা রেখে শুয়ে আছে। ঐশীর একটা হাত শক্ত করে জরিয়ে ধরে তামিম তার বুকের বাম পাশে ধরলো। চোখ বন্ধ করে তামিম বলতে লাগলো
“জানো তো ভালোবাসা কখনো কাউকে হাসায় আবার কাঁদায়ও। সত্যিই ভালোবাসা খুব অদ্ভুত। ভালোবাসার মূল একটা ভিত্তি আছে জানো সেটা কি?”
ঐশী আগ্রহের সঙ্গে জিঙ্গাসা করলো “কি”
তামিম চোখ বন্ধ করেই মুচকি হেসে বলল ” ‘বিশ্বাস’ যখন কেউ কাউকে ভালোবাসে তখন তাকে ছাড়া পৃথিবীর সবকিছু অসহ্য লাগে। উল্টাপাল্টা লাগে তাকে পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দর মানুষ লাগে। মনে হয় তার থেকে সুন্দর হয় তো এই পৃথিবীতে একটা মানুষও হয় না। ভালোবাসার মানুষের প্রতি একটা মায়া কাজ করে। যেই মায়া ত্যাগ করা অনেক কঠিন।”
তামিম কথা বলতে বলতে খেয়াল করলো ঐশীর কোনো সাড়াশব্দ নেই। তামিম এবার চোখ খুলে উপরের দিকে তাকিয়ে দেখলো মেয়েটা ঘুমিয়ে পরেছে। তামিম একটা মুচকি হাসি দিলো।
তামিম ঐশীকে কোলে নিয়ে রুমে চলে গেলো। ঐশীকে আলতো করে একটা ভালোবাসার পরশ দিয়ে ওকে শক্ত করে জরিয়ে ধরে ঘুমিয়ে পরলো। মুখে তার প্রাপ্তির হাসি। হয় তো ভালোবাসার মানুষকে নিজের করে পাওয়ার আনন্দ এটা।
সকালের কুয়াশা মাখা রোদে বাগানে থাকা বেঞ্চে বসে আছে ঐশী আর তামিম। গরম ঠান্ডার মাঝামাঝি সময় চলছে এখন। সকালে একটু ঠান্ডাই অনুভূত হয়। একটা চাদরে মুড়ে বসে আছে দুইজন। হাতে গরম চায়ের মগ। তামিমের কথামতো একটা মগেই দুইজন চা খাচ্ছে। চা খাওয়া শেষে তামিম মগটা পাশের টেবিলে রেখে ঐশীকে শক্ত করে জরিয়ে ধরলো।
ঐশী তামিমের থেকে নিজেকে ছাড়ানো চেষ্টা করতে করতে বলল “ছাড়ুন কেউ চলে আসবে।”
তামিম তার ঠান্ডা হাত ঐশীর জামার ভেতর দিয়ে উন্মুক্ত কোমর আকড়ে ধরলো। ঐশী কেঁপে উঠলো। তামিম নিজের মুখ ঐশীর কানের কাছে নিয়ে গিয়ে নেশাভরা কন্ঠে বলল
“কেউ আসবেনা জান। আর আসলেই বা কি হবে তুমি তো আমার বিয়ে করা বউ তাই না।”
ঐশী চোখ বন্ধ করে ফেলেছে। গা কাঁপছে তার। ঠোঁট দুটো কেঁপে চলছে অনবরত। তামিম আর কিছু না ভেবে ঐশীর ঠোঁটে ঠোঁট ডুবিয়ে দিলো। ঠোঁট ছেড়ে গলায় নেমে এসেছে তামিম। ছোট ছোট ভালোবাসার পরশ দিচ্ছে সে। ঐশী তামিমের পিঠের অংশে থাকা টিশার্টটি আকড়ে ধরলো। তামিমের ফোনটা বেজে ওঠায় তামিম বিরক্তিকর ভাব নিয়ে ঐশীকে ছেড়ে দিয়ে ফোনটা নিয়ে একটু দুরে সরে গেল।
—————
ঐশী বসে বিরক্তিকর সময় পার করছে। সকালে পেরিয়ে বিকেল হয়ে গিয়েছে। সেই যে সকালে তামিম বের হয়েছে। আর কোনো খবর নেই তার। অনেকবার কল করেছে তামিমকে। কিন্তু কল ধরেনি তামিম। ভালো লাগছে না তার। তাহিয়াকে জোর করে দুপুরের খাবার খাইয়ে দিয়েছে। ঐশী এখনো খায় নি। তামিমের সঙ্গে খাবে বলে বসে আছে সে। শরীর টা কেমন যেন লাগছে। সে আর কিছু না ভেবে বেডে শুয়ে পরলো।
শরীরটা কিছু দুর্বল থাকায় ঘুমিয়ে গেলো সে। তাহিয়া এসে দেখে গেছে ঐশীকে। কিন্তু ঐশী ঘুমিয়ে আছে দেখে আর ডাক দেয়নি।
ঐশীর ঘুম ভাঙলো সন্ধ্যা সাতটায়। ঐশী ঘুম থেকে উঠে দেখলো তামিম এখনো বাসায় আসেনি। ফোনটা হাতে নিয়ে দেখলো একটা মেসেজ ও দেয়নি তামিম। এক পাহাড় সমান অভিমান জমে গেলো তামিমের উপর। ঐশীর চোখ টলমল করছে। তাহিয়ার সঙ্গে টুকিটাকি কথা বলছে ঐশী। কিন্তু মনটা তো পরে আছে তামিমের কাছে। ঐশী একবার ঘড়ির দিকে আরেকবার দরজার দিকে তাকাচ্ছে। তাহিয়া বিষয়টা খেয়াল করে বলল
“টেনশন করো না ভাবি ভাইয়া হয় তো কোনো গুরুত্বপূর্ণ কাজ পরে গেছে। তুমি কিছু একটা খেয়ে নেও। সারাদিন তো কিছু খাও নি। এমন করলে তো শরীর খারাপ হয়ে যাবে তোমার। আর ভাইয়া শুনলে রেগে যাবে খুব। আর তুমি তো জানো ভাইয়ার রাগ কিরকম ভয়ংকর।”
(চলবে)
(