জীবনের থেকেও বেশি পর্ব -০২+৩

#জীবনের_থেকেও_বেশি
#পর্বঃ০২
#লেখাঃশুভ্রতা_শুভ্রা

নিলয় কিছুক্ষণ ওখানেই দাড়িয়ে রইলো তারপর কি যেন ভেবে দৌড়ে বাসার ভেতরে চলে গেলো। উপর থেকে ভাঙ্গাভাঙ্গির আওয়াজ পেয়ে বুঝতে আর বাকি রইলো না নিলয়ের যে তামিম কতটা রেগে গিয়েছে। নিলয় গিয়ে অনেক চেষ্টা করছে তামিমকে থামানোর কিন্তু পারছেনা।

অন‍্যদিকে কান্নাকাটি করে ঐশীর চোখ মুখ লাল হয়ে গিয়েছে। ও অনেক চেষ্টা করে নিজেকে স্বাভাবিক করে বাসায় ঢুকলো। ঐশী সোফার রুমে গিয়ে দেখলো ওর আব্বু আম্মু আর বড় ভাই নোমান বসে আছে। ঐশীকে দেখতে পেয়ে ওর আম্মু ওর কাছে এসে বলল

“মামুনি কোথায় গিয়েছিলে আমার কতোটা টেনশন হচ্ছিল জানিস। তোর জন্য নাকি ছেলে দেখা হয়েছে।”

ঐশী তার আম্মুর কথা শুনে থমকে দাড়িয়ে গেলো। ঐশী তার হাত ওর আম্মুর হাত থেকে ছাড়িয়ে বলে উঠলো

“আম্মু তোমরা আমার বিয়ে ঠিক করে ফেলেছো মানে! আমাকে না জানিয়ে বিয়ে ঠিক করে ফেললে মানে।”

নোমান বসা থেকে উঠে এসে ঐশীর গালে সজোরে থাপ্পড় দিয়ে বলল

“তোকে জিঙ্গাসা করবো মানে। তুই একটা খারাপ মানুষের সঙ্গে মেলামেশা করে এসে এখন উঁচু গলায় কথা বলছিস। সাহস তো তোর কম না।”

ঐশী চেঁচিয়ে বলল “ওনি খারাপ না। ওনি আমাকে ভালোবাসেন। আর আমি ওনাকে অসম্ভব ভালোবাসি।” বলতে না বলতেই আরেকটা থাপ্পড় পরলো ঐশীর গালে। ঐশী তাকিয়ে দেখলো থাপ্পড়টা তার আব্বু মেরেছে।

ঐশীর আব্বু বলল “গুরুজনের সামনে ভালোবাসার কথা বলতে লজ্জা করে না তোমার। ভেবেছিলাম কিছুদিন পরে বিয়ে দিবো কিন্তু নাহ আজই তোমার বিয়ে হবে।”

ঐশী ছলছল নয়নে ওর আব্বুর দিকে তাকিয়ে বলল “আব্বু”

ওর আব্বু নোমানকে উদ্দেশ্য করে বলল “ওকে ওই পাশের রুমে আটকে রাখ। আর সন্ধ‍্যার মধ্যেই বিয়ের ব‍্যবস্থা কর।”

নোমান ঐশীকে টেনে পাশের রুমে আটকে রাখলো ওর ফোন ও কেড়ে নিয়েছে নোমান।

ঐশী অনেক ডাকাডাকি করেও কারো সারা পেলো না। ঐশী দরজায় পিঠ ঠেকিয়ে বসে পরলো। হাটুতে মুখ গুজে কান্না করতে লাগলো ঐশী। আচ্ছা তামিমকে কি হারিয়ে ফেলবে সে। তামিমকে সে কিভাবে অবিশ্বাস করলো। আচ্ছা তামিম কি জানতে পারবে ওর বিয়ে হয়ে যাচ্ছে অন‍্য কোনো ছেলের সঙ্গে।

সকালে হালকা খাওয়ার পর আর কিছু খাওয়া হয় নি ঐশীর। ঘড়িতে সন্ধ‍্যা ছয়টা বাজে। দরজা খোলার শব্দে কেঁপে উঠলো ঐশী। ওকে সাজিয়ে বসানো হলো বিয়ের আসনে।

ঐশীর চোখ বেয়ে নোনাজল গড়িয়ে পরছে। তার শরীর অসার হয়ে আসছে। মাথা ঝিম ধরে রয়েছে। চোখের সামনে সব ঝাপসা হয়ে এলো তার। হঠাৎ করে সে মাথা ঘুরে পরে গেলো।

এশী বুঝতে পারলো কেউ তাকে শক্ত করে আকড়ে নিয়েছে। কিন্তু কে ধরেছে সেই ব‍্যক্তিকে দেখার মতো আর শক্তি পেলো না ঐশী। লুটিয়ে পরলো তার গায়ে।

———————

চোখ পিটপিট করে চারিপাশে তাকাতেই সে বুঝতে পারলো এটি একটি অপরিচিত জায়গা। সে একটা মস্ত বড় বেডের মাঝখানে শুয়ে ছিলো। ঐশীর মাথায় সন্ধ্যার ঘটনা আসতেই চোখ বেয়ে নোনা পানি গড়িয়ে পরতে লাগলো। তাহলে কি তার বিয়ে হয়ে গেলো। তার কি আর পাওয়া হবে না তামিমকে। সে যে তামিমকে অসম্ভব ভালোবেসে ফেলেছে।

হঠাৎ একটা গম্ভীর কন্ঠে মাথা তুলে তাকালো ঐশী। তামিমকে দরজার সামনে দাড়িয়ে থাকতে দেখে ঐশীর ঠোঁটে এক চিলতে হাসি ফুটে উঠলো। সে দৌড়ে গিয়ে তামিমের বুকে ঝাপিয়ে পরলো। হাউমাউ করে কান্না করতে লাগলো সে। অনেকক্ষণ পর কান্নাকাটি করার পর যখন কান্নার বেগ একটু কমে গেলো তখনই তামিম ধাক্কা দিলো ঐশীকে।

ঐশী অবাক হলো তামিমের এমন কান্ডে। ঐশী ছলছল দৃষ্টিতে তামিমের দিকে তাকালো।

তামিম বলে উঠলো “আমি যাকে একবার ভালোবাসি তার আর রেহায় নাই। যেটা আমার সেটা শুধুই আমার। তুই আমাকে ভালোবাসিস বা না বাসিস তুই শুধু আমার।”

ঐশীর চোখ তামিমের হাতের দিকে পরতেই ও অতকে উঠলো। রক্ত শুকিয়ে রয়েছে তামিমের হাতে। ঐশী উতলা হয়ে তামিমের হাত ধরে কাপাকাপা কন্ঠে বলল

“আপনার হাতে কি হয়েছে এতো রক্ত?

তামিম হাত ঝাড়ি দিয়ে বলল “আমার হাত থেকে রক্ত বের হক আর যাইহোক মরে গেলেই বা কার কি আসে যায়। আমার মতো খারাপ মানুষ বেঁচে না থাকলেও কারো কিছু হবে না। সে যাইহোক এই কাগজে সাইন করে দে।”

ঐশী বলল “কিসের কাগজ এটা!”

তামিম বলল “সেটা জানতে হবে না তোর এই নিলয় কাজি সাহেবকে ঘরে নিয়ে আয়।”

সঙ্গে সঙ্গে নিলয়ের সঙ্গে কাজি সাহেব ভিতরে ঢুকলেন। ঐশী কিছু বুঝতে পারছে না। ওরা যা যা বলছে শুধু তাই তাই করে যাচ্ছে। বিয়ে শেষে কাজি সাহেবকে নিয়ে চলে গেল নিলয়। তামিম ঐশীর কাছে এসে গাল চেপে ধরে বলল

“তুই শুধু আমার। মরণ ছাড়া তোকে কেউ আমার থেকে আলাদা করতে পারবেনা। তোকে মারবো কাটবো যা খুশি করবো। কারো ক্ষমতা নেই আমাকে আটকানোর।” বলেই হনহন করে রুম থেকে বেরিয়ে গেলো।

ঐশী ছলছল দৃষ্টিতে তামিমের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে থেকে বলল “কে বলেছে আপনি খারাপ মানুষ। আমি জানি এই খারাপ মানুষ হওয়ার পিছনে কোনো না কোনো কারণ আছেই। আমি সেটা বের করবোই।”

ঐশী ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখলো রাত দুইটা বাজে। ঐশী চিন্তিত হয়ে বেডে বসে পরলো। দরজায় নক করার আওয়াজ শুনে সে দরজার দিকে তাকিয়ে বলল কে

দরজা ঠেলে নিলয় হাতে একটা প্লেট নিয়ে ঢুকলো।

নিলয়কে দেখে ঐশী মুখে একটা হাসি ফুটিয়ে তুলে বলল “একি নিলয় ভাইয়া আপনি আসুন আসুন বসুন।”

নিলয় মুচকি হাসি মুখে ঝুলিয়ে বলল “এই খাবার গুলো খেয়ে নেও। তাছাড়া কিন্তু তামিম আরও রেগে যাবে। এমনিতেও অনেক রেগে আছে আর অনেক কষ্টও পেয়েছে তোমার কথায়।”

ঐশী বলল “ভাইয়া আমি আসলে হুট করে ওমন কথা বলে ফেলেছি। আচ্ছা আমার বিয়ে হচ্ছিলো..!”

নিলয় বলে উঠলো “অনেক রাত হয়েছে খেয়ে নেও পরে বলবো নি। তাছাড়া তামিম আমাকে মেরেই ফেলবে যদি শুনে তোমাকে খেতে দেওয়া দিতে এসে আমি পেচাল শুরু করছি। যে রেগে আছে ও”

ঐশী হালকা হেসে খাবার প্লেট হাতে নিলো। এক লোকমা মুখের সামনে নিয়ে আবার নামিয়ে নিলয়ের দিকে তাকিয়ে বলল

“ওনি খেয়েছেন”

নিলয় বলল “না এখনো খায়নি আমি খাইয়ে দিবো নি তুমি খেয়ে নেও তারপর ঔষধ খেয়ে ঘুমিয়ে পরো। তোমার উপর দিয়ে যা গেলো। ডাক্তার তোমাকে রেস্ট নিতে বলছে। আমি তামিমকে সামলে নিবো নি। তুমি খাবার শেষ করলেই আমি তামিমের কাছে যাবো।”

ঐশী কোনো মতে অল্প কিছু খাবার খেয়ে নিয়ে ঔষধ খেয়ে নিলো। নিলয় সবকিছু নিয়ে চলে গেলো। ঐশীর শরীরটা বেশি একটা ভালো লাগছে না। মাথাটাও যেন এমন ধরে এসেছে। সে বেডে শুয়ে পরলো। তামিমের সাথে প্রথম দেখার কথা মনে গেলো হঠাৎ তার। সে ডুব দিলো অতীতে।

—————–
অতীত
——————

কলেজ শেষে ক্লান্ত মুখে রাস্তা দিয়ে হেঁটে বাসার পথে যাচ্ছে ঐশী। ভালো লাগছে না তার মাথা ধরেছে। হঠাৎ একটা আইসক্রিমের দোকানের সামনে গিয়ে ওর পা আটকে যায়। সে খুশি মনে দোকানের কাছে গিয়ে দুইটা আইসক্রিম কিনে এনে খেতে লাগলো। এমন সময় হঠাৎ করেই একটা আইসক্রিম হাত থেকে পরে যায় ওর। আইসক্রিম পরে যাওয়ায় ঐশী ছলছল দৃষ্টিতে একবার মাটিতে পরে থাকা আইসক্রিম আরেকবার নিজের হাতের দিকে তাকাছে। ব‍্যাগ খুলে দেখলো তার টাকা সব ফুরিয়ে গিয়েছে।

হঠাৎ করেই একটা আইসক্রিম তার সামনে কেউ এগিয়ে দিলো। ঐশী কপাল কুচকে সামনের দিকে তাকাতেই দেখলো একটা সুদর্শন ছেলে মুচকি হাসি দিয়ে তার সামনে দাড়িয়ে আছে। কিন্তু পাশে বডিগাড দেখে ভয় পেয়ে যায় ঐশী। ঐশী

(#জীবনের_থেকেও_বেশি
#পর্বঃ০৩
#লেখাঃশুভ্রতা_শুভ্রা

ঐশী কিছুটা ভয় পেয়ে পিছিয়ে যায়। তামিম বিষয়টি বুঝতে পেরে হাত দিয়ে ইশারা দিতেই পাশ থেকে সব লোক চলে যায়। তারপর দুইজন মিলে টুকিটাকি কথা বলে। এভাবেই কথা বলা শুরু হয় তাদের মধ্যে। প্রায় প্রতিদিনই তামিম দেখা করতে আসতো। যেইদিন তামিম ঐশীকে বলেছিলো যে সে তাকে ভালোবাসে। সেইদিন ঐশী কি বলবে কিছুই বুঝতে পারছিলো না। ওইদিনই কোনো এক লোক ওদের দুইজনকে একসঙ্গে দেখে নোমানের কাছে গিয়ে বলে। তারপর বাসায় গিয়ে অনেক মারও খায়। প্রায় দুইদিন সে আর বাহিরে যেতে পারেনা। রাতে হঠাৎ করেই তার রুমের বারান্দায় তামিমকে দেখে অনেকটা অবাক হয়। ওইদিন তামিমের অস্থিরতা দেখে অনেক অবাক হয় ঐশী। দুইদিনেই নাজেহাল অবস্থা হয়েছিল তামিমের। এমন করেই চলছি ওদের সম্পর্ক। তামিমের বিভিন্ন কেয়ার ভালোবাসায় ঐশীও ভালোবেসে ফেলে তামিমকে।

——————

হঠাৎ দরজা খোলার আওয়াজে অতীত থেকে বেরিয়ে আসে ঐশী। ঘাপটি মেরে শুয়ে রইলো ঐশী। তামিম ধীরগতিতে ঐশীর দিকে এগিয়ে এলো। তামিম গুটিশুটি মেরে ঐশীর মাথার পাশে বসে পরলো। ঐশীর কপালে একটা গভীর ভালোবাসার পরশ দিয়ে ঐশীকে আলতো করে জরিয়ে ধরলো। ঐশী কিছুটা কেঁপে উঠলো। তার মুখে মুচকি হাসি ফুটে উঠলো। যা অন্ধকারে তামিম বুঝতে পারলো না।

সকালের মিষ্টি রোদ এসে ঐশীর মুখে পরতেই ওর কপাল কুচকে গেলো। বিরক্তি মাখা কন্ঠে বলল

“আম্মু আরেকটু ঘুমাতে দেও প্লীজ। এখন তুমি বলবে শশুর বাড়ি গিয়ে কি করবো। আম্মু পরে কি হবে দেখা যাবে। আর আমার কিউট সুইট ঘুম আমি কখনো ছাড়তে পারবো না। আম্মু পর্দাটা টেনে দেও প্লীজ।”

ঐশীর এমন কথা শুনে তামিম হেসে দিলো। দুষ্টামি একটা হাসি দিয়ে ঐশীর কাছে এগিয়ে গেলো। ঐশীর বিয়ের শাড়ি এখনো খোলা হয় নি। ওর পেটের কাছ থেকে শাড়িটা সরে গিয়েছে। আর ওর পেটের অনেকটা অংশই দেখা যাচ্ছে। তামিম আলতো করে ওর পেটে হাত দিলো। নেশা লেগে যাচ্ছে তার। ঘুমন্ত ঐশীকে অনেক সুন্দর লাগছে। তামিম আরও একটু কাছে এসে ওর চোখে ভালোবাসার পরশ এঁকে দিলো।

এমনটা করায় ঐশী ধড়ফড় করে উঠে বসলো। ভেবলার মতো কতক্ষণ বসে থেকে বোঝার চেষ্টা করলো কি হচ্ছে তার সঙ্গে। রুমের চারপাশে তাকিয়ে তামিমকে খুঁজতে লাগলো। বারান্দার পর্দা উড়ছে। পর্দার ফাক থেকে তামিমকে দেখতে পেলো ঐশী।

ঐশী তামিমকে দেখে বিছানা থেকে উঠে বারান্দায় গিয়ে দেখলো তামিম সিগারেট খাচ্ছে। সিগারেটের গন্ধে বমি আসছে ওর। ঐশী এগিয়ে গিয়ে তামিমের হাত থেকে সিগারেট টা ফেলে দিতে নিলেই তামিম খপ করে ঐশীর হাত ধরে ফেলে।

ঐশী তামিমের দিকে তাকালো। তামিমের দৃষ্টি সেই আগের মতোই সামনের দিকে। ঐশী বলল

“প্লীজ এগুলো ফেলে দেন। আমি এগুলোর গন্ধ সহ‍্য করতে পারিনা। আর এগুলো তো শরীর পক্ষে খারাপ। প্লীজ এগুলো আপনি খাইয়েন না।” বলে আবার সিগারেট টা কেড়ে নিতে হাত বাড়ালো।

তামিম এবার শক্ত করে ঐশীর হাত চেপে ধরে বলল “কষ্ট দিবি অবিশ্বাসের চাদরে আকরে ধরে রাখবি। আবার আমাকে কষ্ট কমাতেও দিবি না। তুই কি চাস আমি মরে যাই। মারতে যখন চাস একবারে মেরে ফেল।”

ঐশী ছলছল নয়নে তামিমের দিকে তাকালো। তামিম সিগারেটের ধোয়া মুখে নিয়েই ঐশীর ঠোঁট আকরে ধরে সব ধোয়া ওর মুখে ছেড়ে দিলো। কিছুক্ষণ পর ঐশীর ঠোঁট ছেড়ে দিয়ে বলল “আমি যা খুশি তাই করবো তুই কিছু বলতে পারবি না।”

ঐশীর কাশি উঠে গিয়েছে। ও দৌড়ে বাথরুমে গিয়ে হরহর করে বমি করে দিলো। ক্লান্ত হয়ে গিয়েছে বমি করে মেয়েটা। ধীর পায়ে রুমে এসে দেখলো তামিম সোফায় বসে আছে। আর জ্বলন্ত সিগারেট হাত চেপে ধরে রেখেছে। এমনটা দেখে ঐশী তামিমের কাছে যেতেই তামিম হনহনিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে গেলো। তামিমের এমন ব‍্যবহারে অনেক কষ্ট পেলো ঐশী। কিছু ভালো লাগছে না তার। বুক ফেটে কান্না আসছে তার। ভালোবাসার মানুষের থেকে এমন ব‍্যবহার সহ‍্য হচ্ছে না তার। ঐশী রুমে চারপাশে তাকিয়ে পাশে থাকা একটা কাচের ফুলদানি ভেঙে দিলো। কাঁচের টুকরোটা ওর হাতের শিরা কাটতে নিবে তার আগেই একটা থাপ্পড় পরলো তার গালে। থাপ্পড়টা তামিম দিয়েছে ঐশীর গালে। ঐশীর হাত থেকে কাচের টুকরোটা কেড়ে নিয়ে মুখ চেপে ধরে চেঁচিয়ে বলে উঠলো

“তুই মরবি এতো শখ তোর। তোর সাহস তো কম না তুই আমার জানকে মেরে ফেলতে চাস। তোর সবকিছুর উপর আমার অধিকার। এমনকি মরতে হলেও আমার পারমিশন লাগবে বুঝলি তুই।” বলেই ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিলো। তামিম আবার চলে গেলো। ঐশী কান্না করতে লাগলো। আচ্ছা সবকিছু আর কোনো দিন কি ঠিক হবে না। হাউমাউ করে কান্না করতে লাগলো ঐশী। ভালোবাসার মানুষের অবহেলা সহ‍্য করা সত্যিই খুব কঠিন। দুইজনই কষ্টের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে। মনের কষ্টগুলো একত্র হয়ে আন্দোলন শুরু করেছে। ঐশী বারান্দায় বসে আসে বেতের দোলনায় চোখ বন্ধ করে রয়েছে। চোখের কার্ণিশ বেয়ে নোনা জল গড়িয়ে পরছে। কিছু ভালো লাগছে না তার। মাথাটা খুব ধরেছে। হয় তো সকালের পর থেকে কান্না করার কারণে। হঠাৎ সামনে কারো উপস্থিতি টের পেয়ে ঐশী বাম হাতের পিঠ দিয়ে চোখ মুছে চোখ খুলে সামনের দিকে তাকিয়ে দেখলো নিলয়। হাতে একটা কফির মগ। ঐশী একটা মুচকি হাসি দিয়ে কফির মগটা হাতে নিয়ে এক চুমুক দিয়ে বলল

“আচ্ছা ওনি কোথায়?”

নিলয় ফুস করে নিশ্বাস ছেড়ে বলল “পাশের রুমে ড্রিংকস করছে হয় তো”

ঐশী কপাল কুচকে বলল “ড্রিংকস করছে মানে আচ্ছা যাইহোক আমি যাবো ওনার কাছে।”

নিলয় বলল “না না যেও না। ও কিন্তু এখন হুশে নেই আবার রুমও লক করে রেখেছে।”

ঐশী তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে বলল “হুশে থাক বা না থাক আমি তো ওনাকে কষ্ট দিয়েছি। সেটাতে তো আমাকেই মলম দিতে হবে। আচ্ছা ভাইয়া আমাকে ওই রুমের ডুবলিকেট চবিটা দেও তো।”

নিলয় বলল “কিন্তু”

ঐশীর করুণ দৃষ্টি দেখে নিলয় আর কিছু না বলে চাবিটা দিয়ে দিলো। ঐশী কফির মগটা রেখে দৌড়ে বাহিরে চলে গেলো। নিলয় ঐশীর যাওয়ার দিকে তাকিয়ে বিরবির করে বলতে লাগলো

“আল্লাহ ওদের সম্পর্কটা ঠিক করে দেও। ওদের কোনোদিনও আলাদা করে দিও না। ওরা যে একজন আরেকজনকে ছাড়া থাকতেই পারবে না।”

ঐশী দৌড়ে গিয়ে পাশের রুমের দরজা খুলে ঢুকে থমকে গেলো। সারারুমে ঐশীর বিভিন্ন ছবি। কোথাও ফাকা নেই। এমনকি ওর কনে সাজা অজ্ঞান হওয়া আর তামিমের কোলে নেওয়া পিক ও দেখলো ঐশী। পুরো রুম ড্রিংকসের বোতল ছড়ানো। সোফার দিকে তাকাতেই আঁতকে উঠলো ঐশী। মেঝেতে সিগারেটের অবশিষ্ট অংশ পড়ে রয়েছে।

তামিমের হাতে রক্ত শুকিয়ে আছে। ঐশী দৌড়ে গিয়ে তামিমের কাছে যেতেই পায়ে কাঁচ দিয়ে পা কেটে গেলো। সে সেইটা পাত্তা না দিয়ে তামিমের কাছে গিয়ে হাটু গেড়ে বসে পরলো। ওর হাত ধরে ধীরে ধীরে তার ঠোঁট এগিয়ে নিয়ে গেলো। আলতো করে একটা কিস করতেই তার চোখের পানি টুপ করে তামিমের হাতে পরলো। ঐশী পরম যত্নে ব‍্যান্ডেজ করে দিলো তামিমকে। ঐশী এবার তামিমের ঘুমন্ত মুখের দিকে তাকিয়ে রইলো। কিছুক্ষণ এমন করেই একদৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকে আলতো করে কিস করলো তার কপালে। কপালে কিস করায় ঐশীর চোখে পানি তামিমের চোখের পাতায় পরতেই

(চলবে)

(আসসালামু আলাইকুম ভুলত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন)চলবে)

[ আসসালামু আলাইকুম সবাইকে। ভুলত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। ]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here