#জেদ(A Conditional LoveStory)
#পার্ট১৪
#আফরিন_ইনায়াত_কায়া
.
.
একটা কফিসেন্টারে আমি আর আরাজ মুখোমুখি হয়ে বসে আছি।রাগে গা জ্বলছে আমার ।মন চাইছে আরাজের দুইই গালে কষে দুইটা চটকনা লাগিয়ে দিতে।গত ১০ মিনিট যাবত ফোনে কথা বলছে সে।কথা শেষ করে ফোন পকেটে গুজে আমার দিকে হাসি মুখে তাকাতেই গর্জে উঠলাম আমি
-তোমার কাছে আমি একটা ছোট হেল্প চেয়েছিলাম আর তুমি কিনা উলটো বিপদ বাড়ীয়ে দিলে?এটাকে তুমি ফ্রেন্ডশিপ বল?
আমার কথা শুনে আরাজ যেন আকাশ থেকে পড়ল।আমার দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে বলল
-কি বলছ ইনা তুমি? সরি ইনায়াত।তোমার কি মাথাটাথা গেছে নাকি! আমি আবার তোমার বিপদ বাড়াতে যাব কেন?
-বাবাকে কি বলেছ তুমি?
আমার প্রশ্নে আরাজ যেন দমে গেল একটু।কোন রকমে হাসিটা ধরে রাখার চেস্টা করে বলল
-তেমন কিছুই না ।আমি শুধু আংকেল কে বলেছি আংকেল ইনা এখন বিয়ে করতে চায় না।ও আগে নিজের ক্যারিয়ার সেটেল করতে চায়।ও নিজের ড্রীম প্রজেক্টে কাজ করতে চায় এখনযদি আমরা বিয়ে করি তাহলে…
আমি কথা শেষ কয়ার আগেই আংকেল বললেন
-আচ্ছা ভালো হলো আমাকে জানালে।তোমার ওসব নিয়ে চিন্তা করতে হবে না ।আমি দেখছি ব্যাপারটা ।আমি ইনার সাথে কথা বলব এই ব্যাপারে।
So I thought….
-You thought তুমি বাবাকে বলবা আর উনি মানে যাবেন?আরাজ যদি আমার মতামত জানানোর দরকার হত তাহলে আমি নিজেই সেটাকে বাবাকে বলতাম নাকি তোমার দ্বারা বলাতাম।তোমাকে আমি সেদিন স্পষ্ট করে বুঝিয়ে বলেছিলাম তোমার অমত জানা্তে।আর what do mean by যদি আমরা বিয়ে করি?
-ইনায়াত…ইনায়াত রিলাক্স ।আমার কথা শোন।আংকেল আব্বুকে তোমার ছবি পাঠিয়ে আমি তোমাকে প্রথম দেখাতেই এক বাক্যে বিয়ের জন্যে রাজী হয়ে গিয়ছিলাম।I mean আমি তো তখন এত কিছু জানতাম না ।মানে তুমি আর আরদ্ধ।এখন যদি হঠাত করে আমি বিয়েতে অমত জানাই তাহলে ব্যাপারটা কেমন সন্দেহভাজন হয়ে যায়।আর তাছাড়া সপ্তাহ খানেক আমি দেশে আছি ।তারপর আমি আবার আমেরিকা ব্যাক করে যাব ।কোন ভাবেই এই উইকটা বিয়েটা ডিলে করতে পারলেই…
আরাজ কথা শেষ না করতেই আমি চেচিয়ে উঠলাম
-আমি তোমাকে বিয়ে ডিলে করতে না ডিনাই করতে বলেছিলাম আরাজ ।আর বিয়ে ডিলে করবে কেন?দেখ আরাজ একটা কথা ভালো করে শুনে আর বুঝে রাখ আমি আরদ্ধকে ভালোবাসি আর বিয়ে করলে আমি শুধু মাত্র আরদ্ধকেই করব।যদি তোমার মনে হয় বিয়ে ডিলে করে বা অন্য কিছু করে তুমি আমাকে বিয়ের জন্যে রাজী করাতে পারবে তাহলে এই চিন্তা মাথা থেকে ঝেরে ফেল।
.
.
এক নাগাড়ে কথাগুলো বলে আমি উঠে চলে আসছিলাম আরাজ পেছন থেকে ডেকে বলল
-ইনা তুমি ভুল বুঝছ।আমি তোমাকে হেল্প করতে চেয়েছিলাম ব্যাস ।
আমি পেছনে ঘুরে হাত জোর করে বললাম
-তোমার যা করার অলরেডি করে ফেলেছ ।আর না।এখন যা করার আমি করব।আরেকটা কথা যদি আমার আর আরদ্ধের মাঝেভুল করেও আসার চেস্টা কর তাইলে ওটা তোমার লাইফের লাস্ট ভুল হবে ।
কথাগুলো বলেই আমি আরাজের জবাবের অপেক্ষা না করেই সেখান থেকে চলে আসলাম।
ফোনটা বাজছে।আরদ্ধ কল করছে ।কথা বলতে ইচ্ছে করছে বড্ড তার সাথে কিন্তু আমি চেস্টা করলেও আরদ্ধের কাছ থেকে কথা লুকাতে পাব না।ছেলেটা কোন না কোন ভাবে বুঝেই যাবে ঝামেলা হয়েছে কোন।আমি চাইনা ওকে অযথা চিন্তায় ফেলতে ।ফোনটা বের করে আরদ্ধকে টেক্সট করলাম
-রাস্তায় আছি।বাসায় গিয়ে ফোন করি?
ওপাশ থেকে ছোট করে রিপ্লাই এল
-সাবধানে যেও।
আমি ফোনটা ব্যাগে রেখে সিএনজিতে চড়ে বসলাম।
.
.
আরদ্ধ হয়তো এতক্ষনে বুঝে গেছে আমি কোন ঝামেলায় পরেছি তাই তার কল রিসিভ করিনি।কিন্তু সে জানে সময় মতো ঠিকই তাকে সব বলব আমি।আমি হাত উঠিয়ে ডান হাতের রিংটার দিকে তাকালাম। আমাকে প্রপোজ করার পর থেকে আরদ্ধরধর মধ্যে আমূল পরিবর্তন এসেছে।যান্ত্রিকতা ছাপিয়ে যেন নতুন এক প্রান পেয়েছিল ছেলেটি।আরদ্ধের প্রতি শুরু থেকেই দূর্বলতা ছিল আমার।ওকে প্রথম দেখাতেই অন্যরকম একটা অনুভূতি কাজ করেছিল।কিন্তু যেদিন আরদ্ধ আমাকে নিজের করে নেওয়ার কথা বলেছিল সেদিন সবকিছু যেন অগোছালো লাগছিল।চাওয়া সত্ত্বেও আমি তাকে বলতে পারিনি আপনাকেও আমার ভালো লাগে।
আরদ্ধ তার কথা রেখেছিল।সে আমাকে কোন ফোর্স করেনি।খুব স্বাভাবিকভাবেই চলছিল দিনগুলো।আরদ্ধর কোম্পানির সাথে প্রজেক্টের কাজও প্রায় শেষ হয়ে আসছিল আমি যেন ভুলেই গিয়েছিলাম সেদিনের কথা। আংটিটাও আমার কাছে খুব স্বাভাবিক মনে হতে লাগল।এদিকে আমার একটা হ্যা শুনার আশায় অধীর আগ্রহে দিন কাটাচ্ছিল আরদ্ধ।হয়তো তখনো আমার টনক নড়ত না যদিনা আরদ্ধ সেদিন পাগলামি না করত!
লাঞ্চ আওয়ারে আমি আর রাফাত ক্যান্টিনে বসে লাঞ্চ করছিলা।লাঞ্চ শেষে তখনো প্রায় ১০ মিনিট বাকি ছিল।রাফাত কিছু একটা দেখানোর ছলে আমার খুব কাছে এসে বসে ছিল।ঠিক সে সময়েই আগমন ঘটল আরদ্ধর।আরদ্ধকে দেখে আরাজ উঠে দাড়াল।
-আরে স্যার আপনি! বসুন প্লিজ।
আরদ্ধ বরফ শীতল চোখে কিছুক্ষন আমাদের দিকে তাকিয়ে কিড়মিড়িয়ে উঠল
-মিস ইনায়াত আমার সাথে একটু আমার কেবিনে আসবেন এক্ষুনি।একটা ফাইল নিয়ে জরুরি কাজ আছে।
আরদ্ধর কথামত আমি তার পিছনে পিছনে কেবিনে গিয়ে ঢুকলাম।দরজা লাগাতেই সে তেড়ে এসে আমাকে দেওয়ালের সাথে চেপে ধরল।রাগে আরদ্ধের চোখদুটো লাল হয়ে আছে।মনে হচ্ছে যেন এই মুহুর্তে পারলে আমাকে চিবিয়ে খাবে।আমি ভয়ে ভয়ে ঢক গিলে বললাম
-স্যা..স্যা…স্যার কি করছেন আপনি!
-তুমি কি করছিলে রাফিনের সাথে?
আরদ্ধর কথা শুনে অবাক হলাম আমি।ধাক্কা দিয়ে তাকে সরিয়ে দিয়ে বললাম
-কি করছিলাম সেটা আপনি নিজের চোখেই দেখে এসেছেন ।তারপরেও আপনার মনের শান্তির জন্যে বলে দেই রাফাত আমাকে তার ফ্যামিলি পিকচার দেখাচ্ছিল এটা যদি আপনার চোখে অপ্রতীকর হয়ে থাকে তাহলে নিজের মাইন্ডটাকে কন্ট্রোল করার চেস্টা করুন ।আমাকে নয়।
কথাগুলো বলেই পিছন চলে আসতে যাব তখনি আরদ্ধ পেছন থেকে আমাকে এক ঝটকায় টেনে বুকের সাথে মিশিয়ে নিল।আরদ্ধ আমার কপালের সাথে কপাল ঠেকিয়ে আছে।ওর গরম নিশ্বাস আমার মুখের উপর এসে পরছে।
-ইনা আমি কোন নেগেটিভ মিন করিনি।বাট তোমাকে অন্য কারও সাথে দেখলে সহ্য হয় না আমার ।রাগে জ্বলে যায় পুরো শরীর।তোমার হয়তো মনে হয় সব স্বাভাবিক আছে কিন্তু কিছ ঠিক নেই।আমি ঠিক নেই।তোমাকে ছাড়া প্রতিটা মুহুর্ত বিরক্ত লাগে আমার।তুমি যখন চোখের সামনে থাক I feel comfortable. Each and every moment I think about you. Ina I think I am in love with you.আমার #জেদ ধীরে ধীরে ভালোবাসায় রুপ নিচ্ছে।
.
.
আরদ্ধর কথাগুলোতে একটা অন্যরকম মাদকতা কাজ করছিল।আমি যেন ঘোরে হারিয়ে গিয়েছিলাম।আরদ্ধ আমাকে ছেড়ে দিয়ে সরে দাঁড়াল।
-Am sorry Ina.I didn’t mean to hurt you.
আরদ্ধ গিয়ে তার টেবিলের পাশে দাড়াল।তার দৃষ্টি গ্লাস ওয়াল ভেদ করে বাইরের বড় বড় অট্টালিকার উপর গিয়ে পরেছে।ছোট্ট একটা নিশ্বাস ফেলে বলল
-ইনা তোমার কোম্পানির সাথে আমার কনট্রাক্ট প্রায় শেষের পথে ।আর দুই সপ্তাহ পরেই দুই কোম্পানি আলাদা হয়ে যাবে।যদিও কনট্রাক্ট রিনিউ করার কথা বলা বলা হয়েছে তোমাদের পক্ষ থেকে কিন্তু I don’t think I would be able to work with you anymore.তাছাড়া তোমাকে চোখের সামনে সহ্য করাটা অনেক বেশি কঠিন হয়ে যাবে আমার জন্যে।সো আমি আমেরিকা চলে যাচ্ছি।নেক্সট উইক শেষে আমি একটা পার্টি এরেঞ্জ করেছি ।আশা করি তোমার উত্তর হ্যা বা না যাই হোকনা কেন তুমি নির্দ্বিধায় জানাবে ।শুধু এতটূকুই বলব Just Do as your heart say.I am gonna be okey with that.
তুমি আসতে পার এখন।……#জেদ(A Conditional LoveStory)
#পার্ট১৫
#আফরিন_ইনায়াত_কায়া
.
.
আরদ্ধ…..
অনবদ্য, অপার এক ভালোবাসার নাম।আরদ্ধকে প্রথম যেদিন দেখেছিলাম সেদিন থেকেই অজানা একটা ভালোলাগা মনকে দোলা দিয়ে গিয়েছিল।সবকিছু বুঝেও নিজেকে দমিয়ে রেখেছিলাম আমি। কিন্তু আরদ্ধ পারেনি। তার অনুভুতিগুলোকে নিজের অজান্তেই প্রকাশ করে ফেলেছে আমার কাছে।
আরদ্ধ নিজের অজান্তেই আমাকে ভালোবেসে ফেলেছিল।নিজের অজান্তেই তার জেদ আমার প্রতি আসক্তিতে রুপান্তরিত হয়েছিল।বুকের বাম পাশে হৃদয়ের অস্তিত্ব অস্বীকার করলেও আরদ্ধ নিজের মনের কথা অকপটে আমাকে জানিয়ে দিয়েছিল।লোকলজ্জা,সমাজ,স্ট্যাটাস সব কিছুর উপরে বেহে নিয়েছিল আমার সংগ।
.
.
-রেওয়াত স্যার আর পার্টি! সূর্য কোন দিকে উঠছে বল তো?
ডেস্কে বসে একটা ফাইল চেক করছিলাম ।রিতির কথায় মাথা না তুলে জিজ্ঞেস করলাম
-কেন?কি হয়েছে ?মানুষ পার্টি দিতেই পারে ।এটা স্বাধারন ব্যাপার ।এত অবাক হওয়ার কি আছে?
রিতি আমার সামনে থেকে ফাইল কেড়ে নিয়ে বলল
-ফাইলের অন্ধ এটা কোন সাধারন মানুষের কাজ না।দ্যা গ্রেট রেওয়াত স্যার এর পার্টি।যে ব্যক্তি আজ পর্যন্ত নিজের বার্থডে তো দূরে থাক ২০০ কোটী টাকার প্রোফিটেও কাউকে ডেকে চা খাওয়ান নি। আর উনি কিনা দিচ্ছেন পার্টি ।যদিও পার্টিটা উনার বার্থডে তে পরেছে কিন্তু উনি রিজন দেখিয়েন ডিল এর কাজ শেষ হওইয়ায় উনি এই পার্টি দিচ্ছেন।
এক নাগারে কথাগুলো বলে থামল রিতি।ভ্রু কুচকে বললাম
-উফফ…এত কথা বলতে পারিস তুই!সারাদিন বকবক করা ছাড়া তোর কোন কাজ নেই না?দে আমার ফাইল দে।
কথাটা বলে ফাইল নিতে হাত বাড়ালাম আমি।রিতি চোখ সরু সরু করে বলল
-এত তোর হাতের আংটিটা কিসের রে?এংগেজমেন্ট কবে করলি?
আমি চট করে হাত টা সরিয়ে নিয়ে বললাম
-ধুর কি যা তা বলিস! কিসের এংগেজমেন্ট!বার্থডে তে গিফট পেয়েছিলাম।এখন যা তুই ।কাজ করতে দে।
-বার্থডে তে এত বড় হীরার আংটি কে গিফট দেয় রে?
-তুই যাবি নাকি আমি যাবে এখান থেকে?
-যাচ্ছি যাচ্ছি।কারও সাথে দুদন্ড কথা বলে শান্তি নেই।সবাই খালি কাজ আর কাজ।হুহ।
আপন মনে বকতে বকতে রিতি আমার রুম থেকে বেরিয়ে গেল।
আমি আংটিটা সামনে নিয়ে আনমনে রিতির কথাগুলো চিন্তা করতে লাগলাম।তখন পাত্তা না দিলেও রিতির কথাগুলো এখন বেশ ভাবাচ্ছে আমাকে।আরদ্ধ কি সত্যিই এসব আমার জন্যে করছে?
.
.
আমার সব প্রশ্নের জবাব পেয়েছিলাম আরদ্ধের বার্থডে পার্টির দিনে।আরদ্ধকে আগেই জানিয়েছিলাম কোন নাইট ওকেশনে বাসা থেকে এলাও করবে না।তাই যদি আমাকে উপস্থিত দেখতে চায় তবে যেন দিনে পার্টি এরেঞ্জ করা হয়।আরদ্ধ আমার কথা শুনে কিছু একটা বলতে গিয়েও দমে গিয়েছিল।হয়তো অধিকারের জায়গাটা খুজে পাচ্ছিল না।
যথাসময়ে একটা কালো শাড়ি পড়ে হাজির হলাম।সাজগোজ ছোট থেকেই আমার পছন্দ না। ঠোটে হালকা লিপস্টিক,চোখে গাঢ় কাজল আর কানে হালকা ভারী দুল আমার সাজের সজ্ঞা পূরন করে দেয়।কলিগরা সবাই ওয়েস্টার্ন ড্রেস পরেছে ।আমি বেশ কয়েকবার এদিক ওদিক তাকিয়ে আরদ্ধকে খুজার চেস্টা করলাম।কিন্তু তার কোন চিহ্ন দেখা পেলাম না।আমি নিজের মত পার্টি এঞ্জয় করতে লাগলাম।কিছুক্ষন পর রাফাত এসে আমার পাশে দাঁড়াল।
-সুন্দর লাগে বেশ তোমাকে ।
-থ্যাংকিউ ।তুমিও তো কম সাজোনি ।কি ব্যাপার কার জন্যে এত সাজ?
আমার কথা শুনে রাফাত লজ্জা পেয়ে গেল।মাথা চুলকাতে চুলকাতে বলল
-আসলে বেশ কয়েক দিন ধরেই তোমাকে একটা কথা বলব বলব ভাবছি কিন্তু কাজের ব্যস্ততার কারনে বলা হচ্ছে না।আমি আসলে রিতিকে লাইক করি খুব.আজ পার্টি শেষে I’m gonna propose her.
-What!!!Really??Congratulations man.
লাফায় বলে উঠলাম আমি।
_শশশশহহহ…।প্লান বিগড়াবা না কি তুমি?
আমি গলা নামিয়ে বললাম
-তা বলেন মহাশয় প্লান কি !
রাফাত এদিক ওদিক তাকিয়ে পকেট থেকে একটা ছোট্ট রিং এর বক্স বের করে আমাকে দেখল। চকচকে সোনার একটা আংটী।বক্সটা খুলতেই রাফাতের চোখদুটো যেন ভালোবাসায় উজ্জ্বল হয়ে উঠল।
আমরা দুজনেই বেশ এক্সাইটেড ।আমি ঘূর্নাক্ষরেও টের পাইনি কোন ভয়ংকর পরিস্থির সম্মূখীন হতে যাচ্ছি আমি।হঠাত করেই রাফাত কাউকে দেখে চুপ হয়ে গেল।রিং বক্সটা পকেটে ঢুকিয়ে বলল
-Good evening Sir.Thank you for inviting us in this party.
আমি ফিরে তাকাতেই যেন চমকে উঠলাম।আরদ্ধ হিংস্র পশুর মত আমার দিকে তাকিয়ে আছে।ওর চোখে রাগ স্পষ্ট ফুটে উঠেছে।রাফাতের কথার জবাবে কোন রকমে ঠোটে একটা হালকা হাসি টেনে বলল
-Mr.Rafat Would you mind if I steal Miss Inayat for a few minutes?
রাফাত হালকা ইতস্তত করে বলল
-Sure Sir.All yours.
কথাটা বলেই রাফাত অন্যদিকে হাটা ধরল।আরদ্ধ এখনো মূর্তির মত আমার দিকে তাকিয়ে আছে।
আমি ঢোক গিলে বললাম
-Good Evening Sir.
আমি আর কিছু বলার আগেই আরদ্ধ আমার হাত ধরে টেনে নিয়ে গেল।ছাদের এনে আমার হাত ছাড়ে দিয়ে রেলিং ঘেষে দাঁড়াল আরদ্ধ।
.
.
বেশ কিছুক্ষন কেটে গেল নিরিবতায় ।আরদ্ধ খুব শক্ত করে আমার হাতটা ধরেছিল।হাতে দাগ বসে লাল হয়ে আছে।আমি মনযোগ দিয়ে হাত ঘষছি সেই মুহুর্তেই আরদ্ধ ভার গলায় বলে উঠল
-ইনায়াত তোমাকে যেদিন প্রথম দেখেছিলাম সেদিন থেকেই তোমাকে দেখলে অজানা একটা ভালোলাগা কাজ করত।সব সময় তোমার আশেপাশে থাকতে চাইতাম।আমি একজন্যেই ডিল সাইন করার সময় কন্ডিশন এপ্লাই করেছিলাম যাতে কোম্পানি থেকে তোমাকে পাঠানো হয় যাতে আমি আরও বেশি সময় তোমার সাথে কাটাতে পারি।আমি জানি না এটাকে তুমি কি বলবে!ভালো লাগা না ভালো বাসা।But All I want is your happiness.Just want to see a smile on your face always.Till the last day of my life.
আমি এক সেকেন্ডের জন্যে থমকে গেলাম।নিজের কানকে অবিশ্বাস্য মনে হতে লাগল।ছোট থেকেই আমার পছন্দ অপছন্দকে খুব একটা গুরুত্ব দেওইয়া হয় নি।সব কিছুই হত বাবা মায়ের ইচ্ছা অনুযায়ী।
আরদ্ধ পিছন ফিরে এসে আমার সামনে দারাল।অন্ধকারে খুব ভালো করে আরদ্ধের চেহারা দেখা যাচ্ছে না ।আবছা আলোয় দেখলাম আরদ্ধের রাগ উবে গিয়ে একরাশ বিষন্নতা ছেয়ে আছে।আরদ্ধ আমার ডান হাতটা টেনে বলল
-ইনা doesn’t matter তুমি কার সাথে আছ।Only matters কার সাথে তুমি খুশি আছ।হোক সেটা আমি বা হোক সেটা রাফাত ।If you’re happy with him তাহলে আমি কখনোই তোমাদের মাঝে বাধা হয়ে দাড়াব না।
আরদ্ধ কথা শেষ করে আমার দিকে তাকিয়ে অনেক কষ্টে হাসার চেস্টার করে আমার হাত থেকে আংটিটা খুলার চেস্টা করতে লাগল।
-ইনায়াত আজকে থেকে তুমি ফ্রি ।তুমি চাইলে…
আরদ্ধ আংটীটা খোলার চেস্টা করছে কিন্তু খুলছে না। হাতের মধ্যে আটকে বসে আছে।
আমি হাতটা এক ঝটকায় টেনে বললাম
-Mr, Aroddho আমি আপনার খেলার পুতুল না যে যখন মন চাইবেন খেল্বেন আর যখন মন চাইবেন ছূরে ফেলে দিবেন।আংটি আপনি পরিয়েছেন নিজের মর্জিতে কিন্তু খুলবে আমার মর্জিতে ।
আরদ্ধ অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করল
-মানে?
কোটী টাকার মালিক,The youngest বিজনেস আইকন Aroddho Reowyat এই সিম্পিল একটা কথাটা বুঝতে এত সময় লাগবে ব্যাপারটা ভাবতেই যেন রাগ উঠে গেল।চোখ দুটো সরু করে এক বার আরদ্ধের দিকে তাকিয়ে ওর ঠোটে ঠোট ডুবালাম।আরদ্ধ যেন আকাশ থেকে পড়ল।কোণ রেস্পন্স না করে চুপচাপ নিজেকে ধরে রাখল।ঠোট ছাড়তেই বলে উঠল
-ইনা তুমি কি পাগল হয়ে গেছ?কি ছিল এটা?
আমি হেসে বললাম
-তোমার বার্থডে গিফট ।
বিষ্ময় উপচে পরছে আরদ্ধের চোখ মুখ জুড়ে ।
-রাফাতের রিংটা আমার জন্যে ছিল না রিতির জন্যে ছিল।রাফাত রিতিকে লাইক করে ।আজকে প্রোপোজ করবে তাই সে আমাকে বলছিল যাতে আমি তাকে গুড লাক উইশ করি।
-মানে তুমি……?
-তোমাকে ভালোবাসি।
কথাটা শুনেই যেন আরদ্ধ খুশি হয়ে গেল।যেন কেউ ওকে তার জীবনের সবচেয়ে দামী কিছু দিয়েছে।অন্ধকারের মধ্যেও খুশিতে ওর চেহারা উজ্জ্বল হয়ে উঠল।
-প্রমিস কর কখনো ছেড়ে যাবে না?
আমার কথা শুনে আরদ্ধ দুহাতে আমাকে জাপটে নিল।খুব শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বাহুডোরে বন্দি করে নিল।………
চলবে
চলবে