জেদ পর্ব -১৬+১৭

#জেদ(A Conditional LoveStory)
#পার্ট১৬
#আফরিন_ইনায়াত_কায়া
.
.

গাড়ি জ্যামে আটকে আছে।আমি চোখ বুঝে কানে হেডফোন গুজে চুপচাপ বসে আছি।হঠাত ঠোটের মধ্যে একটা উষ্ণ ছোয়া পেয়ে চোখ খুললাম আমি। পাশ না ফিরিয়ে বললাম
-আজ দেরী হল যে?
-ভাবলাম তোমাকে বিরক্ত না করি। কিন্তু অভ্যাস তো আর পালটানো যায় না।মাথায় ব্যাথা বাধালে কিভাবে?স্ট্রেস কিসের এত?
-আরদ্ধ আমি ভেবেছিলাম আরাজ……
-তোমার আর ওর প্যারেন্টস কে মানিয়ে নেবে। বিয়ে ভেংগে দেবে। তাই তো?বাট হল কি?
Just the opposite.আরাজ হয়তো বা তোমার প্যারেন্টস এর সাথে কথা বলেছে বাট The thing is গার্জিয়ানরা মানে নি। এটা নিয়ে এত স্ট্রেসড হওয়ার কি আছে?
আরদ্ধর কথা শুনে আমি চোখ তুলে পাশ ফিরে তাকালাম।
-What do you mean by stressed হওয়ার কি আছে?
আরদ্ধ আমার বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে।তাও এমন এক জনের সাথে যার পুরো নামটাও মেবি ঠিকভাবে আমি জানি না।আমি এত চেস্টা সত্ত্বেও কোন ভাবে বিয়ে থানাতে পারছি না!
-তুমি নিজে বলেছ?
আরদ্ধের কথা শুনে থমকে গেলাম আমি।
ওর দিকে ফিরে তাকাতেই বলে উঠল
-ইনা ছোট থেকেই আমি অনেক খাই-ফরমেশ খাটিয়ে বড় হয়েছি।যা চেয়েছি তাই পেয়েছি। তোমাকে তুলে এনে নিজের করে নেওয়া আমার জন্যে বাম হাতের খেলা।
কথাটা বলে থামল আরদ্ধ। আমার দিকে তাকিয়ে বলল
-ইনা একবার চিন্তা করে দেখ তো সেদিন আমি যদি নিজে না এসে অন্য কাউকে দিয়ে তোমাকে তুলে নিয়ে যেতাম তবে আজ কি তুমি এত গভীর ভালোবাসায় আমার দিকে তাকিয়ে থাকতে?
আমি কিছু বলতে যাব তার আগেই আরদ্ধ আমার কপালে গাঢ় করে একটা চুমু খেল।বাম হাত দিয়ে আমার মাথাটা জড়িয়ে নিল ওর বুকের মধ্যে।
– ইনা কিছু কাজ নিজেকে করতে হয়৷ শুধু নিজেকে। অন্য কেউ সে কাজ করতে পারে না।কারন তখন প্রশ্ন থাকে অস্তিত্বের উপর।
.
.
ডায়নিং টেবিলে আমি আর বাবা মুখোমুখি হয়ে বসে আছি।বাবার মুখ আষাঢের কালো ছায়ায় ঢেকে আছে। চুপচাপ ভাতের দলা গিলছে বাবা। তাড়াহুড়ো করে খাওয়া শেষ করে উঠে গিয়ে গা এলিয়ে দিলেন সোফাতে।আমিও বাবার পিছু পিছু গিয়ে বসলাম।
-বাবা আমি…..
-বিয়ে মানুষের জীবনের এক অমোঘ সত্য।প্রতিটা মানুষের জীবনে এক জন সংগী দরকার। বাবা মা সারাজীবন থাকবে না। যখন আমি আর তোর মা থাকব না তখন তুই একা কীভাবে চলবি ভেবে দেখেছিস একবার?
আমি বাবার কাছে এগিয়ে গিয়ে বসে তার হাতদুটো চেপে ধরলাম।
-বাবা আমি বলছি না যে আমি বিয়ে করব না।বিয়ে করতে আমার কোন আপত্তি নেই।কিন্তু আমি আরাজকে বিয়ে করব না।
আমার কথা শুনে বাবা অবাক হয়ে ফিরে তাকাল আমার দিকে।
-আরাজকে বিয়ে করবি না তো কাকে করবি?
-আ..
আমি আরদ্ধের নাম নিতে গিয়েও থেমে গেলাম।একটা ছোট্ট নিশ্বাস ফেলে বললাম
-আমি এখন বিয়ে করতে চাই না বাবা।আমার হাতে অনেক কাজ পরে আছে।আমি মাত্র আমার ড্রিম প্রোজেক্ট নিয়ে কাজ করা শুরু করেছি।এখন বিয়ে মানে ডিসট্রাকশন।
আমার কথায় বাবা মুখখানা আরও এক শেড কালো করে বলল
-অনেক কাজ করেছ। এবার নিজের লাইফে সময় দেও।আমরা আজ আছি কাল নেই।আমাদের কিছু হয়ে যায় তখন তোকে কে দেখবে?
-বাবা আমি নিজের দেখাশোনা নিজেই করতে পারব।
আমার কথা শুনে বাবা মুখ বাকিয়ে বলল
-ওসব সবাই বলে।কিন্তু সময় আসলে সবাই হাহাকার করে।
বাবার কথার কোন জবাব খুজে পেলাম না।কারন আসলেই নিজেকে সামলানো কোন সোজা কাজ না।আরদ্ধকে ছাড়া আমি কিভাবে কী করতাম তা ভাবতেও পারিনা।ছেলেটা আমার অগোছালো জীবনটাকে নিজের মত করে সাজিয়ে দিয়েছে।
আমি নিজেকে সামলে নিয়ে বললাম
-দেখ বাবা হুট করে যাকে জানি না চিনি না তার সাথে আমি সারাজীবন কাটানোর সিদ্ধান্ত নিতে পারব না।যাকে আমি কখনো কাছ থেকে দেখিনি যার মানসিকতার সাথে আমি পরিচিত নই আমি তার হাতে আমার জীবনের দায়ভার দিতে পারব না।
-মানে?কি বলতে চাচ্ছিস তুই?
বাবা রাগী গলায় জিজ্ঞেস করলেন।আমি একটা নিশ্বাস নিয়ে সাহস সঞ্চার করে বললাম
-মানে বিয়ে করতে আমার কোন সমস্যা নেই।কিন্তু আমি আরাজকে বিয়ে করতে পারব না।
আমার কথা শুনে বাবা যেন আকাশ থেকে পড়লেন।চোখে মুখে বিষ্ময় ফুটিয়ে বললেন
-আরাজকে বিয়ে করতে পারবি না কেন?আরাজের মধ্যে কী সমস্যা?ছেলে দেখতে শুনতে ভালো।উচ্চ শিক্ষিত।বিদেশে থাকে।হাই কালচারড।মাস গেলে ভালো বেতন পায় ।কমতি কোথায় ?
আমি বাবার কথায় তাচ্ছিলের হাসি দিয়ে বললাম
-ব্যাস এই টুকুই?দেখতে শুনতে ভালো হলেই কি তার মনটা ভালো বাবা?উচ্চ শিক্ষিত মানে কি সে সবাইকে যথাযথভাবে সম্মান করতে জানে?হাই কালচারড মানে আবার সো কলড পুরুষ না তো! যে কিনা কথায় কথায় পুরুষত্ব আর আধিপত্য ফলাতে আসবে?মাস গেলে ভালো বেতন হাতে তুলে দিবে কিন্তু মাসের শুরুতে সংসারটাকে গুছিয়ে দেবে তো?আমি মানিয়ে নিতে পারলেও আমার দোষ ত্রুটীগুলোকে সে মানিয়ে নিতে পারবে তো?আমার ভালোলাগা মন্দ লাগাকে প্রাধান্য দিবে?আমাকে যথাযথ সম্মান দিবে তো?
এক নাগাড়ে কথাগুলো বলে থামলাম আমি।বাবা হা হয়ে আমার দিকে তাকিয়ে আছেন।ছোট একটা দম ফেলে বললাম
-বাবা ছোট থেকে আমার যাবতীয় সব সিদ্ধান্ত তুমি নিয়েছ। আমার ভালোমন্দ সব কিছু তুমি যাচাই বাছাই করেছ।কিন্তু এবার না।এবার লাইফ আমার এবার সিদ্ধান্ত তুমি নিবে ।কারন বাকিটা পথ তুমি আমার সাথে থাকবে না। আমাকে একাই চলতে হবে।তাই অজানা কারও সাথে আমি বিয়ে করব না।এতদিন আমি তোমার সব সিদ্ধান্তকে সম্মান করে এসেছি।আশা করি মেয়ে হিসেবে আমার এই সিদ্ধন্তটাকে তুমি রেস্পেক্ট করবে।
কথাগুলো বলে বাবার উত্তরের অপেক্ষা না করেই আমি রুমে চলে আসলাম।পেছনে ফিরলে হয়তো দেখতে পেতাম বাবা রাগী চোখে আমার দিকে তাকিয়ে আছেন। তার পর মায়ের দিকে ফিরে বেশ খানিকটা কথা শুনিয়ে রাগে গজরাতে গজরাতে রুমে চলে যাবেন।
.
.

আমি রুমে এসে ব্যালকনিতে দাড়ালাম।এক রাশ ঠান্ডা হাওয়া এসে ছুয়ে গেল।চোখ বন্ধ করে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললাম আমি।আমি জানি বাবাকে রাজী করানো সহজ হবে না। অথচ শুরুতে আমি কি নিশ্চিত ভাবেই বলেছিলাম আমি বাবাকে রাজী করাতে পারব।আরদ্ধর মত ছেলেকে কোন বাবাই তার মেয়ের জন্যে জীবন্সংগী হিসেবে মেনে নিতে অস্বীকার করবে না।বিয়ে ভাংগার এখন একটা উপায়ই হাতে আছে।সময় এসে গেছে সেই Trump card ব্যবহার করার।….#জেদ(A Conditional Love Story)
#পার্ট১৭
#আফরিন_ইনায়াত_কায়া

.
.

পার্কের ধারে দাঁড়িয়ে আছি আমি আর আরদ্ধ।তার সম্পূর্ন মনযোগ ফোনে।সব টুকু এটেনশন দিয়ে কোন একটা কাজ করছে সে।আমি দৃষ্টি দিয়ে রেখেছি দূর আকাশের পানে।মাঝে মাঝে চোখ ঘোলা হয়ে আসছে।কান্না দলা পাকিয়ে গলাইয় এসে ঠেকছে।খুব করে ইচ্ছে করছে আরদ্ধকে জড়িয়ে ধরে কাদতে।
আমি অন্য দিকে ফিরে চোখের জল ফেললাম ।মাথা ঘুরাইতেই নিজেকে আবিষ্কার করলাম আরদ্ধের বাহুডোরে ।আরদ্ধ আমার মাথাটা আলতো করে বুকের মধ্যে আগলে নিল।আমি দুই হাতে শক্ত করে তাকে জড়িয়ে ধরলাম ।আরদ্ধ আমার মাথায় ছোট্ট করে একটা চুমু খেয়ে বলল
-তোমাকে নিয়ে বড্ড জ্বালায় পরেছি আমি ।কোথায় একটু অধিকার খাটাবে তা নয় তার অনুমতি দরকার সব কিছু তে ।
আরদ্ধের কথায় বেশ লজ্জা পেলাম আমি।শক্ত করে জড়িয়ে নিলাম তাকে ।আরদ্ধ আমাকে আগলে নিল তার উষ্ম বাহুডোরে।
.
.
কাল থেকে বাবার সাথে কোন কথা হয় নি আমার।এক প্রকার ইচ্ছে করেই তার সাথে কথা বলিনি।এমনটা অবশ্য না যে বাবা খুব একটা চেস্টা করেছিল আমার সাথে কথা বলার।হাবভাব দেখে মনে হল যেন তার কোন ভ্রুক্ষেপ নেই।আমার কোন কথাই যেন তিনি কানে তোলেন নি ।কাজের ফাকে ফাকে এসব চিন্তা ভাবনা করতে করতে কখন যে সময় কেটে গেল টেরই পাইনি।কাজ শেষ করে ব্যাগ গোছাচ্ছি তখনই টুং করে ফোনে একটা ম্যাসেজ এল।
-আজকে দেখা করবে একটু?Please it’s important.
আমি একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে ফোনটা পকেটে গুজে রাখলাম।
.
.
রেস্টুরেন্টে মুখোমুখি বসে আছি আমি আর আরাজ ।ওর চোখে মুখে স্পষ্ট বিষন্নতার ছাপ।কিন্তু ঠোটে হাসির রেখা টেনে তা আটকানোর চেস্টা করছে।আমার পাশে বসে আরদ্ধ ফোনে মাথা গুজে আছে।ছেলেটা আজকাল বড্ড ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছে।ব্যস্ততার আড়ালে সব চিন্তাকে লুকিয়ে রাখে সে।
আরাজ একবার আরদ্ধর দিকে তাকিয়ে আমার দিকে ফিরে বলল
-ইনা…উম সরি ইনায়াত ।I’ve tried a lot but তোমার বা আমার প্যারেন্টস কাউকেই কোন ভ্যালিড রিজন দিতে পারিনি ।তাই হয়তো বিয়ের ইস্যুটা এত দূর গড়াচ্ছে।But as I promised I’ll help you.এই সমস্যা থেকে বাচার একটাই উপায় আছে।যদি আমি ব্যাক করে চলে যাই।যদি আমিই না থাকি তাহলে আংকেল তোমাকে আমার সাথে বিয়ের জন্যে ফোর্স করবে না।দেন তুমি যাকে ইচ্ছা I mean আরদ্ধকে বিয়ে করতে পারবে।That’s why I’ve decided আমি এই উইকেই ব্যাক করব।তাছড়া অফিসের কিছু কাজে আমাকে সিংগাপুর যেতে হবে।যত তাড়াতাড়ি যেতে পারব It will be helpful.
কথাগুলো শেষ করে হালকা হাসল আরাজ ।
আরাজের কথাগুলোতে হালকা কষ্ট লুকিয়ে আছে।আমি পরিস্থিতি সামাল দিতে বললাম
-আরাজ ব্যাপারটা এমন না যে আমি আরদ্ধের জন্যে তোমাকে রিজেক্ট করছি।হ্যা এটা সত্যি আমি আরদ্ধকে অনেক বেশি ভালোবাসি ।কিন্তু এটাও সত্যি যে তোমার জায়গায় যদি আজকে আরদ্ধ থাকত তবুও আমি এই বিয়ে করতাম না।
এবার আমার কথা শুনে আরাজ বেশ অবাক হল।চোখ মুখ কুচকে জিজ্ঞেস করল
-মানে?
-দেখ আরাজ ছোট থেকেই বিয়ে সম্পর্কে একটা নেগেটিভ ধারনা নিয়ে বড় হয়েছি।Marriage is a compromise .Marriage means killing your dreams .এই ধারনাটা আমার মধ্যে খুব করে গেথে বসেছিল।অজানা কারও সাথে সারাজীবন কাটানো তো দূরের কথা চিন্তা করলেই শিউরে উঠতাম আমি ।আরদ্ধ আমার এই ধারনাটাকে পালটে দিয়েছে।He has taught me how to dream.He gave me all my freedom .অথচ না জেনে অজানা কারও হাতে কিভাবে নিজেকে তুলে দিব যদি সে আগলে রাখতে না জানে?
আরাজ বেশ অবাক হয়ে আমার কথাগুলো শুনছে ।আমার কথা শেষ করেওতেই বলে উঠল
-Yeah I completely understand.সেজন্যেই আমি চলে যাচ্ছি।So you both can be live together.
কথাটা বলে ঘড়ির দিকে তাকাল আরাজ।
-I gotta go.আরো কিছু ফ্রেন্ড এর সাথে মিটা আপ করতে আছে।It’s farewell then .Bye.
আরাজের কথার প্রতিউত্তরে আমি হেসে বিদায় জানালাম।
আরাজ চলে যাওয়ায় আমি যেন স্বস্তির নিশ্বাস ফেললাম।আরদ্ধর দিকে তাকাতেই ফোন থেকে মাথা না উঠিয়ে বলল
-ও ফিরে আসবে ।
আরদ্ধর কথা শুনে আমি যেন হা হয়ে গেলাম।চোখ মুখ কুচকে জিজ্ঞেস করলাম
-মানে?
আরদ্ধ আমার কথার জবাব না দিয়ে বলল
-সন্ধ্যা নেমে আসছে ।চল তোমাকে বাসায় পৌছে দেই।

.
.
আরাজ যাওয়ার সপ্তাহখানেক পার হয়ে গেছে প্রায় ।বাবা এখন আর বিয়ে নিয়ে তেমন মাথা ঘামায় না।কিন্তু চোখে মুখে আমার প্রতি রাগ আর একটা চাপা কষ্ট বেশ বুঝতে পারি আমি ।বাবা আমার বিয়ে নিয়ে বড্ড চিন্তায় আছেন।মেয়েকে কিভাবে কখন কার হাতে হস্তানর করবেন এই নিয়ে তার ভাবনার জুড়ি নেই।আরাজ চলে গেলেও বাবা থেমে থাকবেন না।কই না কই থেকে আবার কাউকে ধরে আনবেন আমাকে তার গলায় ঝুলানোর জন্যে।কিন্তু এটা হতে দেওয়া যাবে না।এর একটা বিহিত করতে হবে।
ফোনটা হাতে নিয়ে ডায়াল লিস্টের প্রথম নাম্বারটাতে কল দিলাম।ওপাশ থেকে হ্যালো বললেই জবাব দিলাম
-আজকে রাতে ফ্রি আছ?আসতে পারবে একটু?…..
চলবে.

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here