ঝরাপাতার দিনগুলি পর্ব ২১

#ঝরা পাতার দিনগুলো
#পান্না হাবিব

পর্ব- ২১

আম্মু ঠিকই বলতো, আমি সত্যিই মরার ঘুম ঘুমাই। ঘুমের মধ্যে কেউ সেক্স করলেও মনে হয় বুঝতে পারবো না। না হলে কি আর কেউ ড্রেস চ্যাঞ্জ করেছে আর আমি টের পাইনি, এটা তো গল্প ছাড়া পসিবল না!!!!
আমি কি এখানেও ঘুমের মধ্যে কান্নাকাটি, চিৎকার কিংবা রুম থেকে বের হওয়ার চেষ্টা করি!!! সর্বনাশের ডিব্বা !!!
মাঝরাতে কেউ আমার চিৎকার আর ফুপিয়ে ফুপিয়ে কান্না শুনলে কি ভাববে!!??? আমি তো এইগুলোর কথা ভুলেই গিয়েছিলাম!!! তার থেকে তো ড্রেস চ্যাঞ্জ নরমাল জিনিস!!!
কারোও কাছে তো এসব জিগ্যেসও করা যাবে না!!!
একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে আরও কিছুক্ষন বিরবির করে ফ্রেশ হয়ে নিচে গেলাম।

এলোমেলো ভেজা চুল গুলো ওর কপালের একপাশের অর্ধেকটা ঢেকে দিয়েছে, সাথে নেভি ব্লু টি শার্ট আর চেক ট্রাওজারে এতো স্নিগ্ধ লাগছে!!!!
একটা হার্টবিট মিস করলাম মনে হলো!!
আমি না রাতে ফয়সালের কথা মনে করে কান্নাকাটি করেছি!!! ছি!!!!
মানুষের মন এমন কেন?? যে কস্ট দেয় তাকেই বেশি মনে চায়?
আচ্ছা সাব্বির কি আমার থেকে ফর্সা নাকি সেইম হবে, বোধহয় সেইমই হবে। ধুর, কি সব ভাবছি আমি। ও আমার থেকে ফর্সা হলে কি হবে, আমার যা যা আছে ওর কি তাই তাই আছে নাকি!!
হুমহ্, কয়টা মেয়ের কোমড় অব্দি স্ট্রেইট, লম্বা আর হালকা ব্রাউনিশ কালার চুল আছে? তাও আবার উইদাউট এনি হেয়ার কালার?
যদিও এই প্রথম চুল এতো লম্বা হলো!!! আমার চুল তো থাকে পিঠ অব্দি। লাস্ট প্রায় ৮ মাস ধরে চুল কাটি না!!!

ইয়া মাবুদ!!! সাব্বির গোসল করেছে কেন? তাহলে কি সব হয়েই গেলো!!!
ধুর, কি ভাবছি আমি, এতোটা গাধি তো আর না যে কিচ্ছুটি টের পাবোনা। রাতে কিছুই হয়নি আমাদের মাঝে এই বলে নিজের মনকে বুঝ দিলাম। কিন্তু ড্রেস চ্যাঞ্জ নিয়ে একটা খুতখুতানি মনে থেকেই গেলো।
সাব্বিরের ফেস টু ফেস না হওয়ার জন্যে ইচ্ছে করেই ওর পাশের চেয়ারে বসে পরলাম।

“এই সব দাগ টাগ বানাই এখনকার পোলাপান যে কি ভালোবাসা বুঝাইতে চায় আল্লাহ তায়ালা ভালো জানে। এই দাগের মধ্যে কিসের এতো ভালোবাসা?”
বিরক্ত মুখে কথা গুলো বলে ফুপি কিচেনে চলে গেলো।
খাবার মুখে তোলার আগেই খাওয়া স্টপ হয়ে গেলো আমার।
কি বলে গেলো ফুপি!!! কোথায় দাগ! কিসের দাগ!!!
এর মধ্যেই ফুপা এসে আবার বেসিনে হাত ধুচ্ছে।
ভালোভাবে ওড়না দিয়ে ঢাকতে গিয়ে আবার ছেড়ে দিলাম।
সাব্বির ছেলেটা এমন কেনো?!!!!
একপাশের পুরো অর্ধেক ওড়না হাতের সাথে পেচিয়ে বসে আছে!!!
বাকি অর্ধেক মাথায় দিতে গেলে গায়ে থাকে না গায়ে দিতে গেলে মাথায়।
আর গলায় ভালো ভাবে দিতে গেলে ও হালকা টান দিয়ে বেসামাল করে দিচ্ছে।
নিচু স্বরে কঠিন কয়েকটা গালি দিলাম।
গালি শুনে কিছুক্ষণের জন্য ওর খাওয়া বন্ধ হলেও ওড়না ছাড়েনি।
“তোর তো লজ্জা শরম সত্যিই চলে গেছে। বলার পরেও বের করে বসে আছিস!!! ” চাপা গলায় ফুপি আবার আমাকে বললো।
তুমি নজর না দিলেই তো পারো, শুনে ফুপি রসগোল্লার মতো চোখ পাকিয়ে কিচ্ছুক্ষন তাকিয়ে ফুপাকে বললো
-এইখানে খেতে হবে না। কিছুক্ষণ পর এইখানে বাংলা সিনেমা শুরু হবে।
“কিসের বাংলা সিনেমা? ঐটা তো সব চ্যানেলে ১০টা থেকে শুরু হবে। আজকে সালমান শাহ এর একটা মুভি হবে এনটিভিতে। সবাই মিলে দেখবো।” হাস্যজ্বল মুখে ফুপা বললো।
-এই সিনেমা সবসময়ই দেখতে পাবা, রুমে চলো।
খাদিজার মা, রুমে নাস্তা পাঠিয়ে দে। এদের জন্য এখন থেকে রুমেই নাস্তা করতে হবে। যত্তসব আকামের ঢেকি।
“রুমে কেনো নাস্তা করতে হবে? একসাথে সবাই মিলে করি, বাংলা সিনেমা কই হবে… “, আরো নানা রকম প্রশ্ন করতে করতে ফুপা ফুপির পিছন পিছন রুমে চলে গেলো।
গলা দিয়ে খাবার আর নামছে না। কি সব বলে গেলো ফুপি!! তাহলে কি কালকে রাতে সত্যিই কিছু….
সমস্ত শরীরে কেমন একটা শীতল স্রোত বয়ে গেলো।
কান্না পাচ্ছে খুব। বাম হাত দিয়ে চোখ মুছতে মুছতে টেবিল ছেড়ে উঠে গেলাম। এবার আর সাব্বির আটকানোর চেষ্টা করলো না।
সবার সামনে আমাকে ছোট করার ভালোই খেলা চলছে!!! এতো কিছুর পর যখন আমাদের ডিভোর্স হওয়ার কথা সবাই জানবে, দোষটা সরাসরি আমার দিকেই তো আসবে!!! কারণ ফয়সালের ব্যাপারটাও ততোদিনে সবাই জেনে যাবে।

ফয়সালের পাগলামি গুলো শুরু হয়ে গিয়েছে। এখন শুধু ওর এই বাসায় আসার অপেক্ষা। সব দিক থেকেই আমাকে ঝামেলায় ফেলার ভালোই চেষ্টা চলছে!!!
ঝামেলায় পরি আর যাই করি, আমি তো সারাজীবনের জন্য তোমার থেকে দূরেই চলে যাচ্ছি!! এই দুইটা মাস কি সহ্য করতে পারলে না!!
ভার্সিটিতে ফয়সাল সবার কাছে উল্টো পালটা কথা বলে আর এই দিকে তুমি এসব করছো, আমি কস্ট পেলে তোমাদের কি লাভ যাওয়ার আগে এই উত্তরটাই আমি জেনে যাবো।
আমি কাউকেই কিছু বলবো না। তোমাদের ভুল গুলো যখন বুঝতে পারবে তখন সরি বলার জন্যেও আমাকে খুজে পাবে না। আজীবনের জন্যে এই শাস্তিটাই তোমাদেরকে দিয়ে যাবো।

গলায় আর ঘাড়ের একটু নিচে মিলিয়ে মোট ৬টা কালচে হয়ে যাওয়া দাগ আছে। গত বিশ মিনিট ধরে ওয়াশরুমে একবার গরম পানি আবার ঠান্ডা পানি দিয়ে এগুলোর উপর ভালো করে ডলা দিচ্ছি। যদি একটু হালকা হয়। হলের মেয়েগুলো দেখলে কি ভাববে!! সেটা আর ফয়সালের কানে যেতে এক মিনিটও লাগবে না। এর পর কি হবে ভাবতেই গা টা শিউরে ওঠলো!!
লাগেজে একটাও আগের জিনিস নেই।
সব নতুন নতুন ড্রেস, মেকাপ টুকিটাকি জিনিস কতগুলো। সবগুলো মেকাপ বিডি বাজেট বিউটি থেকে নেয়া!!!
আমার একটা কাজল আর দুইটা লিপস্টিক ছাড়া আর কিছুই ছিলো না।
মেকাপ দেখেই বুঝা যাচ্ছে সব কিছু রিতু আপু কিনেছে।
আচ্ছা অন্তর্বাসের সাইজ জানলো কিভাবে!! আমি তো কিছুই বলিনি।
ড্রেস চ্যাঞ্জের ঘটনা মনে পরতেই বিরবির করে উঠলাম, আগে ঘুমের মধ্যে যে এই ছেলে কিছু করেনি তার গ্যারান্টি কে দেবে!!!
হঠাৎ করেই সাব্বিরের প্রতি প্রচন্ড ঘৃণা মিশ্রিত রাগ জন্মাতে শুরু করলো। এই কাজ গুলো করে ও কি প্রমান করতে চায়?

একটা মোটা খাম দেখে খুলতেই দেখলাম অনেক গুলো একহাজার আর পাচশত টাকার বান্ডিল।
কাবিন কত ছিল কে জানে!! টাকা গুনার লোভটা বহু কস্টে দূর করলাম।
শুধুমাএ ফুপিকে বলে দুপুর ২টার দিকে সাইড ব্যাগ আর টাকাগুলো নিয়ে বেরিয়ে এলাম। সাব্বিরের একটা জিনিসও সাথে নেয়নি শুধু মাএ টাকাগুলো ছাড়া। এই টাকাগুলোর বিনিময়েই তো আমার জীবনটা শেষ হয়ে গেলো!!
ব্যাংকে রাখতে গিয়ে দেখলাম মোট দশ লাখ আছে।
দশ হাজার নিজের কাছে রেখে বাকিটা ব্যাংকে আমার একাউন্টে রেখে দিলাম।
এই টাকা দিয়ে অনেক কিছু করা বাকি।
৩.৩০ মিনিটে কমলাপুর রেলস্টেশন থেকে সুবর্ন এক্সপ্রেস ছাড়তেই সাব্বিরের ফোন এলো!!
-তোর আরোও বেইজ্জতি হইতে মনে চায় তাই না?? যা চিটাগং, তোর জন্য সব ব্যবস্থা করে রাখতেছি।
বলেই ফোনটা কেটে দিলো!!
এই প্রথমবার ওর দেয়া হুমকিতে ভয় পেলাম না। ভয় পেয়ে আর কি হবে, আমিই তো থাকবো না আর এইখানে। যদি ভালোবেসে থাকো, তাহলে আমাকে হারানোর ভয় পাওয়ার জন্যে প্রস্তুত হও,মি.সাব্বির আহমেদ!!

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here